ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Thursday, December 27, 2018

ইসির যুগান্তকারী পদক্ষেপ! নির্বাচনের দিন সকল যান চলালচ বন্ধ!


নির্বাচনের সময়ে নানান বিধিনিষেধ আরোপ করে নির্বাচন কমিশন। এবারও করছে, তাতে কোন মাথাব্যাথা নেই। তবে এবার নির্বাচনের দিন বেশ কিছু বিধিনিষেধ যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসাবে জাতির কাছে বিবেচিত হবে বলে আমার মনে হয়। এমন সিদ্ধান্ত কি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে না কাউকে সন্তুষ্ট করতে তা কিছুটা হলেও অনুমেয়। পানি নিচের দিকে গড়ায় এটাই বাস্তবতা। কিন্তু এবার পানি মনে হয় একটু বেশি গড়গড়িয়ে গড়াচ্ছে।

গত ২০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের যু্গ্ম সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২) এর এক পত্রের আলোকে ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিআরটিএ সংস্থাপন শাখার সহকারী সচিব মোঃ লিয়াকত আলী যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধের বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে বেশি নাখোশ মটর সাইকেলের উপর। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ২৮ ডিসেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১ জানুয়ারি মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত (চারদিন) মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এবং যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ২৯ ডিসেম্বর (শনিবার) দিনগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর (রোববার) মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত সড়কপথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এর আওতায় রয়েছে-বেবি ট্যাক্সি, অটো রিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পু, স্থানীয় পর্যায়ে যন্ত্রচালিত বিভিন্ন যানবাহন। তবে, রিটার্নিং অফিসার অনুমিত সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিলযোগ্য। এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র থাকতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচনে বৈধ পরিদর্শক এবং জরুরি কাজে বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শুধুযে স্থলের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তা নয়, ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্য রাত হতে ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাত ১২ টা পর্যন্ত চলবে না লঞ্চ, ইঞ্জিন চালিত সকল ধরনের নৌ-যান (ইঞ্জিন চালিত ক্ষুদ্র নৌযান বা জনগণ তথা ভোটারদের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত ক্ষুদ্র নৌযান ব্যতীত), স্পীড বোটও।

যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও আরো কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সমন্বয় সভায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী নির্দেশনায় জানায়, নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ছাড়া কেউ মোবাইল নিয়ে ঢুকতে পারবেন না নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছাড়া কেউ মোবাইল নিয়ে ঢুকতে পারবেন না অ্যান্ড্রয়েড তো দূরের কথা ৪০০ গজের মধ্যে কেউ বাটন (ফিচার) মোবাইল নিয়েও ঢুকতে পারবেন না তবে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই বলে তিনি জানান

নির্বাচনের দিন যেভাবে যান চলাচলের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তাতে মনে কিছু প্রশ্ন জাগে। বর্তমানে মানুষ মোবাইলের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। ভোট দিতে যাওয়া ব্যক্তির স্বজনরা প্রয়োজনে তার কোন খোজ নিতে পারবে না এটা কেমন কথা? ভোট কেন্দ্রে যদি মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে না দেয় তবে বাইরে মোবাইল রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করুক। ডিজিটাল বাংলাদেশে এ কেমন টাল সিদ্ধান্ত বুঝলাম না! আর যান চলাচলে যে ধরনের বিধি নিষেধ জারি করা হয়েছে তাতে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে কিভাবে? সবার বাড়িতো আর কেন্দ্রের পাশে না। নির্বাচনকে বলা হয় ভোট উৎসব। উৎসবের দিন যদি যান চলাচল বন্ধ থাকে তবে মানুষ পায়ে হেটে কতক্ষণ উৎসব উপভোগ করতে পারবে? আমার মত স্থুলকায় মানুষ দশ মিনিট হাটলে পায়ের গোড়ালী ফুলে যায় সেখানে দূর দূরান্ত থেকে কিভাবে পায়ে হেটে ভোট দিতে যাবে ভোটাররা? কমিশনের সিদ্ধান্ত কি ভোটারদের জন্য না অন্য কারো জন্য? অতি উৎসাহী সিদ্ধান্ত সাধারণ জনগণকে কতটা ঝামেলায় ফেলবে সেটা কি একবারও ভেবে দেখেছে? উৎসবের দিন নির্বাচন কমিশন পরিবহন সুবিধা চালু করুক! সহিংসতার অযুহাতে এসব কি? তাহলে নিরাপত্তা প্রশাসন কি করবে, আঙ্গুল চুষবে বসে বসে?

একটি দুষ্ট ছেলের গল্পঃ ছাত্রজীবনে ক্লাশ শুরুর আগে এসেম্বেলী করতে হতো। শিক্ষক বললো-আরামে দাড়াও!
সকল ছাত্র সোজা হয়ে দাড়ালো। এবার শিক্ষক বললো-ডান পা তোলো!
ছাত্ররা ডান পা শুন্যে তুলে বাম পায়ে দাড়ালো। এবার শিক্ষক বললো-বাম পা তোলো!
এক দুষ্ট ছাত্র জিজ্ঞেস করলো-স্যার ডান পা না নামিয়ে বাম পা তুললে দাড়াবো কিসে ভর দিয়ে? আমার চ্যাংগের উপড় ভর দিব?!

আমারও প্রশ্ন-যান চলাচল বন্ধ রাখলে চলবো কি দিয়ে, মোবাইল ফোন বাসায় রেখে আসলে যোগাযোগ করবো কি দিয়ে?

Tuesday, December 25, 2018

তরুনরা বলছি, সত্যি, আমরাই বাংলাদেশ

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ‘আপনারাই বাংলাদেশ’ শিরোনামে ৩ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে তরুণদেরকে স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

সাধারণ বিবেচনায় যাদের বয়স ত্রিশের কোঠায় তাদেরকে আমরা ‘তরুণ’ বা ‘যুবক’ বলতে পছন্দ করতাম। চল্লিশের উপর বয়স গেলেই তাদের নাম ‘বয়স্কদের’ খাতায় তুলে দিতাম আগে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)’র মতে এখন তারুণ্যের মেয়াদ ৬৫ বছর পর্যন্ত। ফলে শুধু ত্রিশের কোঠায় অবস্থানকারীরা নিজেদের ‘তরুণ’ বলে জাহির করার সুযোগ হারিয়েছেন। সময়ের বিবর্তনে মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। উন্নত হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। ফলে বাড়ছে গড় আয়ু। তাই বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে আমাদের মানসিক শক্তি। এখন মানুষের চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ছে আগের চেয়ে ধীরে ধীরে। বর্তমানের ৪০ বছর বয়সী নারী কিংবা পুরুষরা আগের ৩০ বছর বয়সীদের মতো শারিরীক ও মানসিক শক্তি ধারণ করছে। ১৮৭৫ সালে পাস করা ব্রিটিশ প্রশাসনের ফ্রেন্ডলি সোসাইটিস অ্যাক্টে ছিল ৫০ বছর বয়সের পর থেকেই একজন মানুষ ‘বার্ধক্যে’ প্রবেশ করল। আর জাতিসংঘের খাতায় বার্ধক্যে প্রবেশের সীমান দেয়াল হচ্ছে ৬০ বছর। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মানুষকে তারুণ্যের শক্তি প্রদর্শনের জন্য ৬৫ বছর পর্যন্ত সময় দেয়ার পক্ষপাতি। এ ব্যাপারে তারা নতুন একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। বর্তমানের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের সুযোগ, জীবনমান, গড় আয়ু ইত্যাদি বিবেচনায় জীবনচক্রের নতুন বিভাজন তৈরী করেছে। এগুলো হচ্ছে: (ক) ০ থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু। (খ) ১৮ থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত তরুণ। (গ) ৬৬ থেকে ৭৯ বছর পর্যন্ত মধ্যবয়সী। (ঘ) ৮০ থেকে ৯৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধ। (ঙ) ১০০ বছরের উপরে গেল দীর্ঘজীবী।
আমার বয়স এখন চল্লিশ চলমান। উপরের তথ্য অনুযায় আমি বলতেই পারি ‘আমি তরুন বা যুবক’। তাই একজন তরুন বা যুবক হিসাবে জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর ভিডিও বার্তার উপর কিছু কথা বলতে চাই। পাঠকদের জন্য ভিডিও বার্তায় কি আহ্বান করা হয়েছে তুলে ধরছি এবং জবাবে কিছু কথা বলছি-
“আপনারা যারা এবারই প্রথম ভোট দেবেন, তাদেরকে আমি কিছু বলতে চাই। আমার বয়স যখন আপনাদের মতো, তখন আমরা একটা যুদ্ধে গিয়েছিলাম দেশটাকে মুক্ত করবো বলে। তখন আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ ছিল, যারা বলতো যে,পাঞ্জাবীদের সাথে যুদ্ধে আমরা কোনো দিনও পারব না। মেরে-কেটে ওরা শেষ করে দেবে। ওদের ট্রেইনড মিলিটারিদের বিপরীতে আমরা হলাম বাচ্চা ছেলেপেলে। তারা আসলে ভয় পেত। যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার অনুতাপে কাতর ছিল তারা। আমরা সেদিন তাদের কথা শুনিনি। বড় বড় পাকা পাকা বিশ্লেষণে কান দেইনি। আমরা শুধু আমাদের মনের কথাটা শুনেছিলাম। শুধু একটা স্বপ্নকে তাড়া করেছিলাম। দেশটা মুক্ত হবে। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে বাংলাদেশ।”
খুবই ভালো কথা। আপনি সেদিন আপনার মনের কথাটা শুনেছিলেন। আমাদের উপর আস্থা রাখুন, আমরাও আমাদের মনের কথা শুনবো। মনে যদি আপনাদেরকে সমর্থন না দেয় তবে আশাহত বা মর্মাহত হবেন না।

“আমার বয়স এখন সত্তর। আমি এই বয়সেও সেই একই স্বপ্ন তাড়া করছি। আমি তো আশায় ভরপুর! আপনারা কী স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছেন? আমাকে বহু মানুষ বলে, ভোটে তো স্যার আপনারাই জিতবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আপনাদের রেজাল্ট খেয়ে ফেলবে। তার কারণ হলো, আওয়ামী লীগের সমীকরণে আপনারা (তরুণরা) নেই। তারা আপনাদের (তরুণদের) তাচ্ছিল্য করে। টু দেম ইউ ডোন্ট ম্যাটার। তাদের পরিকল্পনা, এমন সন্ত্রাস করো ২৯ তারিখ পর্যন্ত, যেন আপনারা (তরুণরা) পোলিং সেন্টারে যাওয়ার আগ্রহটাই হারিয়ে ফেলেন।”
না স্যার, আমরা স্বপ্ন দেখতে ভুলিনি। এখনও আমরা স্বপ্ন দেখি। তবে হারলে রেজাল্ট খেয়ে ফেলার অভিযোগের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের তাচ্ছিল্য করার ধৃষ্টতা কেউ দেখাতে সাহস পায় না, যেমন আপনারাও পান না। বেশিক্ষণ স্বপ্নে বিভোর না থেকে বাস্তবতা হাতড়িয়ে দেখুন। কেন মানুষ বর্জন করছে, কেন ফেল করছেন, কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তরুন-যুবক-জনতা।

“এমন এক ন্যারেটিভ তারা বাংলাদেশে দাঁড় করিয়েছে যে, আপনি যাকেই ভোট দেন, আপনার রাজনৈতিক জাজমেন্ট যাই হোক না কেন, সেই ভোটকে, আপনার বিশ্বাসকে, তারা চুরি করে পাল্টে দেবে। আমি বলি কী,আপনারা ওদের দেখিয়ে দিন যে, আপনারাই বাংলাদেশ। দেখিয়ে দিন যে, ইউ ম্যাটার। আপনারা এই দেশের মালিক এবং আপনার ভোটেই ঠিক হবে এদেশের ভবিষ্যৎ।”
স্যার, এমন ভাবে বলছেন যেন ভোট চুরি এই প্রথম দেখলেন! পূর্বে ভোট চুরি দেখেননি? নিজেরা করেননি? অতীতে ক্ষমতায় থাকাবস্থায় ফেরেস্তা দিয়ে কি নির্বাচন পরিচালনা করতেন? তরুন-যুবকরা ভোলে না, আমরা ভুলিনি। সত্যিই বলেছেন, আমরাই দেশের মালিক। তাই মালিকের সমর্থন আপনাদের পক্ষে না গেলে কষ্ট পাবেন না। সমর্থন কিসে আসবে তা খতিয়ে দেখে নিজেরা সংশোধন হন।

“আপনার বিবেচনায় যাকে বলে তাকেই ভোট দিন। আমি সেই সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ভোট আপনারা অবশ্যই দেবেন। সকাল সকাল দেবেন। দেখিয়ে দিন যে, আপনারাই বাংলাদেশ। যৌবনে আমরা এই দেশটার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। বার্ধক্যে এসে আপনাদের কাছে আমি শুধু একটা দিন চাইছি। ৩০ ডিসেম্বর, শুধু একটা দিন বাংলাদেশের জন্য। ৩০ ডিসেম্বর সকাল সকাল ভোট দিন। দেখিয়ে দিন যে, আপনারা শুধু ভোট দিতেও জানেন না, ভোট ডাকাতিও আটকাতে পারেন। গণতন্ত্রটা বাঁচাতে হবে। একটা আলো আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম আমাদের যৌবনে। যেটা আমরা আপনাদেরকে দিতে চাই। এই আলোটা আপনারা শুধু আপনাদের সন্তানদের কাছে পৌঁছে দেবেন, তাহলেই হবে। আলোটাকে নিভতে দেবেন না।”
আপনার এই কথাগুলো ভালো লেগেছে। আমার বিবেচনা যাকে বলে তাকেই ভোট দিব। ৩০ ডিসেম্বর ভোট দেবো গণতন্ত্র বাঁচাতে, গরীবের হক নষ্ট যেন না হয় সেই জন্য, কেউ যেন আর ১০% কমিশন খেতে না পারে সেই জন্য, দেশে যেন জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া না দেয় সেই জন্য, দুর্নীতিতে যেন দেশ বার বার শীর্ষে না যায় সেই জন্য, আরো আলোকিত বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতে তা দেখার জন্য।

নিজের আশেপাশের তরুন-যুবকদের দেখে সারা বাংলার তরুন-যুবকদের নিজের মনে করা ঠিক হবে বলে মনে হয় না। এর বাইরেও তরুন আছে, এর বাইরেও জগত আছে। নিজের বিবেচনা সকল তরুন-যুবকের উপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে দিন। আমাদের সিদ্ধান্তের উপর আস্থা রাখুন। আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিব। গণতান্ত্রিকভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত বিপক্ষে গেলে তরুনদের দোষ দিবেন না।   

Sunday, December 23, 2018

এইতো জীবন

আমিতো নই পরম পূজ্য, ধরম ধুরন্ধর
নিজের দাড়ি নিজেই কামাই, 
তাই বলতে পারো, আমি সু-শীল-নরসুন্দর।
আমিতো নই জননেতা, মাঠের রাজনীতিবিদ
কাম করি খাই-দাই ঘুমাই,
তাই ভাবতে পারো, আমার নাই জ্ঞান হিতাহিত।
আমিতো নই জ্ঞানের সাগর, ব্যক্তি বিজ্ঞ-পন্ডিত
নিজের মত ভাবনা ভাবি,
তাই ভাবতে পারো, নড়বড়ে আমার জ্ঞানের ভীত।
আমিতো নই সাধু-সাধক, আধ্যাতিক মহা গুরু
আমজনতা-কৃষক আমি, এলেম যে কম,
তাই বলতে পারো, চাষা-ভূষা আমি মাঠে চড়াই গরু।
আমিতো নই সুদর্শন, অভিনেতা, কিংবা মহানায়ক
নিজের মনে গুনগুনিয়ে গান গাই,
তাই ভেবো না যে, আমি মস্ত সুর সম্রাট-গায়ক।
আমিতো নই সুশিল মানুষ, মধ্যপন্থী কেউ
মন যা বলে, করছি প্রকাশ আমি,
জেনে রেখো, আমারও আছে মনে ক্ষোভের ঢেউ।
অধম জুয়েল বলে, কি হলি তুই এসে এই ভবেতে?
খালি-দালি, দিন কাটালি আসলে ভাবে,
তাই বলতে পারো, কাটা্ই জীবণ আনন্দেতে মেতে।

Friday, December 21, 2018

নির্বাচনী প্রচারণা ও সেলফি মুডঃ নেতারা সাবধান!

সারা দেশে চলছে এখন নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। নেতা-নেত্রীরা চষে বেরাচ্ছেন গ্রাম থেকে গ্রাম, বাড়ি থেকে বাড়ি। আরতো মাত্র কয়েকটা দিন। এর পরই শান্তি আর শান্তি। শুধু যে নেতা-নেত্রীরাই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তা কিন্তু নয়। কর্মীরাও চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারের উর্বর ভূমি বিশ্বাসের চাষ করার জন্য! কিন্তু এর মাঝে আছে অনেক সুযোগ সন্ধানী কর্মী। তারা এলাকায় নেতার পক্ষে কাজ করার চেয়ে নেতাকে দেখাতেই বেশি ব্যস্ত। সুযোগ সন্ধানী দুষ্ট কর্মিরা ঘুর ঘুর করছে নেতার আশে পাশে আর সেলফি তোলাতে। এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে নেতাদের।
আসলে সেলফি শব্দটা আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বেই নতুন একটা ভাবনা। সেলফির রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বহু পুরনো ইতিহাস। নেট ঘাটলে সেলফি সম্পর্কে যে ধারনা পাওয়া যায় তা হলো-সেলফি শব্দটির প্রাথমিক ব্যবহার ২০০২ এর আগে পাওয়া গেলেও, ২০০২ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ান এক অনলাইন ফোরামে (এবিসি অনলাইন) প্রথম ব্যবহৃত হয়। নিজস্বী বা সেলফি (সেল্ফি) হলো আত্ম-প্রতিকৃতি আলোকচিত্র বা দল আলোকচিত্র, যা সাধারণত হাতে-ধরা ডিজিটাল ক্যামেরা বা ক্যামেরা ফোন ব্যবহার করে নেয়া হয়। সেলফি প্রায়ই ফেসবুক, গুগল+, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, টাম্বলার এবং টুইটারে ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করা হয়ে থাকে। সেলফি শব্দটি প্রথম এসেছে ইংরেজি সেলফিশ থেকে। সেলফি অর্থ প্রতিকৃতি। অক্সফোর্ড অভিধানের মতে, সেলফি হল একটি ছবি (আলোকচিত্র) যা নিজের তোলা নিজের প্রতিকৃতি, যা সাধারণত স্মার্টফোন বা ওয়েবক্যামে ধারণকৃত এবং যে কোনো সামাজিক মাধ্যমে আপলোড (তুলে দেয়া) করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সেলফি হাত সামনে তুলে বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, কখনো-কখনো সেল্ফ টাইমার ব্যবহার করেও নেয়া হয়। রবার্ট কর্ণিলিয়াস, একজন মার্কিন অগ্রণী আলোকচিত্রী, যিনি ১৮৩৯ সালে নিজের একটি দাগেররোতীপ্ বা আত্ম-প্রতিকৃতি ক্যামেরায় ধারণ করেন, যা ছিল প্রথম কোন একজন ব্যক্তির আলোকচিত্র। ১৯০০ সালে পোর্টেবল কোডাক ব্রাউনি বক্স ক্যামেরা বাজারে আসার পর ফোটোপ্রাফিক আত্ম-প্রতিকৃতি তোলা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। বহনে সহজ এই ক্যামেরার সাহায্যে আয়নার মাধ্যমে সেলফি তোলার প্রচলন শুরু হয় তখন থকেই।
১৮৩৯ সালে তোলা প্রথম সেলফি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে নির্বাচনী প্রচারণায় এসেছে নতুন মাত্রা। প্রার্থীরা এখন কোথায় গেলেন, কি করলেন, কি বললেন সবই আমাদের মত ভোটাররা জানতে পারেন মূহুর্তের মধ্যে। সেই সুযোগটা নেয় অনেক সুবিধাবাদী কর্মীরা। তারা কাজের চেয়ে সেলফি তোলে বেশি এবং আপলোড দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেক সুবিধাবাদী আছেন তারা নিজ এলাকায় না গিয়ে, নেতার জন্য কাজ না করে নেতা কোথায় আছে সে খবর রাখে বেশি। তাদের ধান্দা থাকে নেতা চোখ খুললেই যেন তাদের চাঁদ বদনখানা যেন দেখতে পায়। এধরনের সুবিধাবাদীর কারনে আপনার প্রয়োজনেও আপনি নেতার কাছে ভিরতে পারবেন না। পায়ে পায়ে, গায়ে গায়ে বাড়ি খাবেন এমন সুবিধাবাদীর সাথে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ করে ফেসবুকে কোনটা কার আইডি বুঝা বড় দায়। সবাই নেতাকে তেলাতে নেতার ছবি প্রোফাইল পিকচার হিসাবে ব্যবহার করে। বুঝার উপায় নাই কোনটা নেতার আইডি আর কোনটা কর্মীর আইডি। হতে পারে এটা নেতার প্রতি ভক্তির কারনে করছেন। কিন্তু একটা প্রবাদ ভুলে গেলে যে চলবে না-‘অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ’। এসব চোরদের কারনে নেতাদের বিপথগামী হতে হয় অনেক সময়। সুবিধাবাদীদের সুবিধা দিতে গিয়ে নেতারা হন দেউলিয়া, বিবেক ভ্রষ্ট, নীতিহীন, দুর্নীতি পরায়ন।
সুবিধাবাদীদের এমন কাজের উদ্দেশ্যটা কি সেটা আমরা সবাই বুঝি, বোঝেন নেতারাও! আসলে সুবিধাবাদীদের মূল উদ্দেশ্য থাকে নিজেকে নেতার কাছের লোক হিসাবে পরিচিত করা, নেতার দ্বারা অনৈতিক সুবিধা হাতিয়ে নেয়া, নিজেদের আখের গোছানো। এ সুবিধাবাদী লোকগুলো পরগাছার মত, পরজীবীর মত যারা অন্যের আশ্রয়ে বাড়তে থাকে এবং একসময় দৈত্যাকার রূপ ধারন করে। এদের থেকে নেতাদের সাবধান হওয়া উচিত যা অনেক নেতা সাবধান হতে পারেন, অনেক নেতা পারেন না।
আমাদের একটা বহুল জনপ্রিয় সংলাপ আছে-‘আমি কিন্তু সব বুঝি, কে আমার বুকের দিকে তাকায় আর কে পিঠের দিকে’। রাজনৈতিক নেতারা দেশের এক অমূল্য সম্পদ। যুগে যুগে প্রতিটি দেশে দেশে ভালো যা কিছু হয়েছে তা নেতাদের নেতৃত্বের কারনে, নেতাদের হাত ধরেই হয়েছে। নেতারাই পারেন গণমানুষের কথা চিন্তা করতে, গণমানুষের কল্যানে কাজ করতে, গণমানুষের কল্যানে কাজ করতে সরকারকে বাধ্য করতে। নেতারা ঘাস খেয়ে নেতা হয়না। বহু কাঠ খর পুড়িয়ে নেতা হন একজন ব্যক্তি। বিপথগামী হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন নেতা পুড়ে পুড়ে খাটি সোনা হন। তাইতো নেতারা পরম পূজ্য। তারা সব বোঝেন। আগামীতেও তারা সব বুঝেই সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আমার আশা ও বিশ্বাস। একজন নেতা যতক্ষণ সুবিধাবাদীদের মন বুঝতে পারবেন, সুবিধাবাদীদের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন ততদিনই সে নেতা থাকবেন। সুবিধাবাদীদের জালে আটকে গেলে ভ্রষ্ট হবেন, নেতা থাকবেন না। তাই সাবধান! সুবিধাবাদীদের মিষ্টি হাসি থেকে, সেলফি থেকে, দর্শন থেকে।
ছবিঃ ১৮৩৯ সালে তোলা প্রথম সেলফি, নেট থেকে নেয়া।

Wednesday, December 12, 2018

মহিলার হাতে রিক্সা চালক নির্যাতন ও ভাইরাল ভাবনা


ভাইরাল। কথাটার মধ্যেই কেমন যেন একটা ভাইরাস ভাইরাস গন্ধ আছে। ভাইরাস (Virus) সম্পর্কে যদি একটু খোজ খবর নেন তবে জানবেন, ভাইরাস হলো এক প্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা বা অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভিতরেই বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এরা অতি-আণুবীক্ষণিক এবং অকোষীয়। ভাইরাসকে জীব হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দ্বিমত আছে। ভাইরাস মানুষ, পশু-পাখি, উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। এমনকি, কিছু ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে-এদের ব্যাক্টেরিওফাজ (Bacteriophage) বলা হয়। ভাইরাস ল্যাটিন ভাষা হতে গৃহীত একটি শব্দ। এর অর্থ হল বিষ। আদিকালে রোগ সৃষ্টিকারী যে কোন বিষাক্ত পদার্থকে ভাইরাস বলা হত। বর্তমান কালে ভাইরাস বলতে এক প্রকার অতি আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুকে বোঝায়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর বহু রোগ সৃষ্টির কারণ হল ভাইরাস। ভাইরাস কে জীবাণু না বলে 'বস্তু' বলা হয়। কারণ, জীবদেহ কোষ দিয়ে গঠিত , কিন্তু ভাইরাস অকোষীয়। ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে সক্ষম। 

আর বর্তমানে ফেসবুক ভাইরালও দ্রুত ছড়িয়ে যায়। সম্প্রতি ঢাকায় এক রিক্সা চালককে এক মহিলা দ্রুত রিক্সা চালাতে না পারার অভিযোগে মারধর করে। এক পর্যায়ে পথচারিরা বিতর্কে জড়ালে তাদের সাথেও মহিলা খারাপ আচরণ করে। একজন মহিলার এমন আচরন আমাদের সবাইকে হতবাক করেছে। একজন মহিলার কাছ থেকে এমন আচরণ কারোরই কাম্য নয়, যেমনটি নয় আমার।

একজন প্রায় স্থুলকায় মহিলাকে রোগা পাতলা রিক্সা চালক কতটুকু দ্রুতইবা টেনে নিতে পারে? মহিলার হয়তো জরুরী কোন কাজ ছিলো। কিন্তু জরুরী কাজের জন্য দ্রুত যেতে হলে তাকে অন্য বাহন বেছে নেয়া উচিত ছিলো, রিক্সা দিয়ে কি টেক্সির দ্রুততা আশা করা যায়? অথচ মহিলা সেটাই আশা করেছেন। তার চেয়ে বড় কথা হলো একজন ভদ্র মহিলার যে আচরণ থাকার কথা ঐ মহিলার মধ্যে সেই আচরণ দেখা যায়নি। সে যেভাবে রিক্সা চালককে মারধর করেছে, উচ্চ স্বরে গালাগাল দিয়েছে, প্রতিবাদী পথচারিদের সাথে যে আচরণ করেছে তা দেখলে কেউই মহিলাকে ভদ্র মহিলা সম্বোধন করবে বলে মনে হয় না, তাই আমিও বার বার মহিলাই লিখছি ভদ্র মহিলা লিখলাম না। 
ঘটনাটা ঘটার পর ফেসবুকে আসলে মূহুর্তেই হয়ে যায় ভাইরাল। বড় বড় মিডিয়াও ভিডিও সহ সংবাদ প্রচার করতে থাকে। প্রশ্ন উঠে কে এই মহিলা, কি তার পরিচয়, কোন দল করে, শুধুই মহিলা না গণিকা? কারন হচ্ছে, আমাদের দেশের জল-হাওয়ায় বেড়ে উঠা ভদ্র মহিলারা এভাবে প্রতিবাদ করতে অভ্যস্ত নয়। প্রতিবাদ করলেই নারীর জাগরণ ঘটেছে বলা যাবে না, প্রতিবাদ হতে হবে যৌক্তিক, শালীন, ভদ্রচিত, মার্জিত, আচরন হতে হবে রুচিশীল যার ছিটেফোটাও মহিলার মধ্যে আছে বলে মনে হয়নি। 
ফেসবুকে প্রচারের সাথে সাথে সুযোগ সন্ধানী মানুষ মহিলার ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি, পেইজ খুলে প্রোফাইলে বিএনপির নেত্রী, আওয়ামীলীগ নেত্রী বানিয়ে ফেলেন। সেই আইডি থেকে পোষ্টও দেয়া হয়, ‘আমি বিএনপি নেত্রী, বিএনপি নেতার ভাগ্নে,’ ‘আমি আওয়ামীলীগ নেত্রী, আমার বিষয়ে পোষ্ট দিলে মামলা করবো।’ বাস্তবে খোজ নিয়ে দেখা যায় আইডিগুলো সবই ঘটনা প্রচার পাওয়ার পর পরই ওপেন করা হয়ে। যা ভাইরাসের মত ছড়িয়েছে। 
সবচেয়ে বড় কথা হলো, সে আওয়ামীলীগ করুক বা বিএনপি করুক, মহিলা হোক বা পুরুষ তাতে তার কর্মের সাথে কি সম্পর্ক? একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে, ‘আগুন খাইলে আঙ্গার ত্যাগ করতে হয়।’ সে অপকর্ম করেছে, মানুষকে হেয় করেছে, অপমান করেছে তার মানে সে ভদ্রতা শিখেনি। এই কারনে যদি কিছুটা দোষ হয়ে থাকে তবে সেটা তার পিতা-মাতার দোষ। কারন প্রথমত এমন কন্যা পয়দা করে তারা ভুল করেছে, দ্বিতীয়ত পয়দা করার পর নৈতিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সবকিছুর মধ্যেই আমরা দলকে টেনে আনি। আওয়ামীলীগ-বিএনপি আমাদের দেশের বিশাল দুই দল। এতবড় দলে লুচ্চা, বদমাইশ, পাজি, সুবিধাবাদী যেমন আছে, তেমনি দেশ প্রেমিক, নিবেদিতপ্রাণ, হাজি, ইমাম, শিক্ষাবীদও আছে। 
তাই, ভাইরাল ভাবনায় আমরা দলকে না টেনে ব্যক্তি যদি কোন অপরাধ করে থাকে সেই বিষয়টা বিবেচনায় আনলে মহিলা হয়তো ভবিষ্যতের জন্য সংশোধন হতে পারে। 

Thursday, December 6, 2018

ভাব

ভাবের ভবে, নিলাম কত ভাব
জানি, এতে নেই যে কোন লাভ
তবুও মানুষ, ভাব’ই দেখে চেয়ে
দেখেনা কেউ, কি এসেছি খেয়ে।
ভাবের ভবে, পাল্টাই কত রং
রং-মেখে, সং-সেজে করি ঢং
আনন্দ পাও, তোমরা সবে দেখে
হেসে’ই চলি, দুঃখ পাছে রেখে।
ফকির তবুও, ধরি রাজার বেশ
হীন স্বার্থে, দেশ করলাম শেষ
প্রেমনেই মনে, তবুও দেশপ্রেমিক
সাধারণে যত, বলুক ধিক! ধিক!
রাজনীতিকের, নেই যে কোন নীতি
জনগণে, নেই যে কোন ভীতি
দেশের প্রতি, নেই যে কোন মায়া
মানুষ কেন, হচ্ছে আজ বেহায়া?
অধম জুয়েল বলে, ভাব নিয়ে কি লাভ
ভাবের ধোকায়, বাড়ছে যে তোর পাপ
ভাব না ধরে, ভজ আসল মানুষ
উড়াসনে আর, মিথ্যে ভাবের ফানুস।

Wednesday, November 21, 2018

মাল একই, শুধু পাত্র পরিবর্তন

সময় এখন নির্বাচনের। তাই নেতা-নেত্রী, রাজনৈতিক বিষয় সংশ্লিষ্ট গল্প হলেই বুঝতে সহজ হবে। আমরা কথায় কথায় বলি নতুন বোতলে পুরনো মদ। এর যে মানে কি তা বুঝতে রকেট সাইন্স বুঝার জ্ঞান লাগে না। তবে আমি যেভাবে বুঝি সেটা বলি। আমার কাছে কথাটার মানে হচ্ছে, স্থান, কাল, পাত্র, ঘটনা, চরিত্র সবই ঠিক থাকবে। শুধুমাত্র চিন্তাধারার পরিবর্তন হবে, সেটাই মাল একই, শুধু পাত্র পরিবর্তন।
অনেক দিন আগের কথা। আমার মামা জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচন করতেন। আমরা সবাই মামার নির্বাচনে শ্রম দিতাম। কোন কিছুর লোভে না। মামা নির্বাচন করবে আর ভাগ্নেরা শ্রম দেবে না তা কি হয়? আমাদের কাজ ছিলো, মিছিল শেষে মামার বাড়ির মাঠে জড়ো হওয়া লোকদের চা-বিড়ি খাওয়ানো। চা মানে বোঝেন তো? বড় পাতিল ভরে আখের গুর, ছেচা বা থেতলালো আদাল আর অল্প চা পাতা দিয়ে গরম করা পানি। সাথে যারা একটু মুরুব্বি গোছের মানুষ তাদের জন্য বরাদ্দ থাকতো বিড়ি। জগ ভরে চা নিতাম, আর হাতে থাকতো বড় জাম বাটি। জাম বাটি ভরে কম করে হলেও গ্রাম্য ভাষায় আজ্জের (আধা লিটার) পরিমান চা দিতাম! কেউ কেউ সেই আজ্জের চা খেয়ে আরেকবার নিতো! সেই মামার নির্বাচনের সময় এক নেতাকে দেখতাম সবসময় তখনকার আমলের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ট্রিপল ফাইভ সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে প্যাকেটটা ফেলে দিতেন এবং সিগারেটটা ঠোটে নিয়ে মুখাগ্নি করতেন। তখন মুরব্বিজনরা সমালোচনা করতেন, ট্রিপল ফাইভ সিগারেটের প্যাকেটে ক্যাপাস্টেন সিগারেট রেখে কত ভাব নেয়! নতুন প্যাকেটে পুরনো মাল ভরে দেখায় তিনি কি খায়! তখন নির্বাচনী খরচ বলতে মিছিল শেষে চা-বিড়ি খাওয়া, বেশি হলে নেতার বাড়িতে এক বা দু বেলা ভাত খাওয়া। আর ভাত খাওয়া মানে বিশাল আয়োজনের কিছু নয়। ভাত, লাউর সাথে শোল, টাকি অথবা ওসব না পেলে শিং মাছ দিয়ে লাউ ঘন্ট, সাথে ডাল। মানুষ তাই তৃপ্তি ভরে খেয়ে দারুন ঢেকুর তুলতো। আর এখন নাকি নির্বাচন করতে প্রচুর টাকা লাগে! কেন লাগে সেটা অবশ্য গবেষণার বিষয়। নেতা-নেত্রী বা জনপ্রতিনিধিদের খাই খাই স্বভাবের কারনে হয়তো আম জনতা বা কর্মীদের স্বভাবও পরিবর্তন হয়েছে কিছুটা। পরিবর্তনশীল বিশ্বে সাধারণ জনগন যদি একটু পরিবর্তন হয় তাতে ক্ষতি কি?
এতোক্ষণ বললাম বহু আগেকার কথা। এবার হালনাগাদ কিছু কথা বলি। দেশে এখন নির্বাচনের ভরা মৌসুম চলছে। সকল রাজনৈতিক দলে এখন উপচে পড়া ভীর! ভীর সামলাতে আমাদের পুলিশ ভাইদের পায়ের ঘাম মাথায় উঠার জোগার! আর এ সবই হচ্ছে মনোনয়নের প্রতিযোগিতা। কেউ মনোনয়ন চায় জিততে, ভাবনাটা এমন যে মনোনয়নটাই চুড়ান্ত নির্বাচন! মনোনয়ন পেলে আর ঠেকায় কে? কেউ মনোনয়ন চায় হারতে! কারন, দলের মনোনয়ন পেয়ে এলাকায় নিজেকে একটু জানান দেয়া যে সে একজন প্রতিযোগি, একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি!
আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যে কথা বলে তা সবাই বুঝে শুধু নেতারা ছাড়া! কোন কোন দলের মুখপাত্র বলেন, জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরনে আমরা কাজ করছি, দেশকে রাহু-কেতুর গ্রাস থেকে মুক্ত করতে হবে, বুকের রক্ত দিয়ে (নিজের রক্ত দিবে না) হলেও ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে! আমরা যাদের মনোনয়ন দিবো তাদের পক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, আমরা বিতর্কিত লোকদের মনোনয়ন দিব না। আবার কোন কোন মুখপাত্র বলেন, আমরা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য, দেশ ও জাতির কল্যানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যাদের জনপ্রিয়তা নেই, যারা বিতর্কিত, যারা স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি তাদের মনোনয়ন দেবো না। জাতির কাছে আমাদের আবেদন আপনারাও তাদের বর্জন করুন। কোন কোন জোট বলছেন তারা স্বাধীনতার পক্ষে এবং স্বাধীনতার বিরোধিদের সাথে কোন আপোষ নেই তারাই আবার স্বাধীনতা বিরোধিদের সাথে জোট করে গলায় গলায় ভাব রেখে নির্বাচন করছে। কত স্ববিরোধিতা!
মাদক বাংলাদেশের একটি ভয়াবহ রোগ। আর এই মাদক নিয়ে যার উপর বিশাল অভিযোগ তাকে মনোনয়ন না দিয়ে দেয়া হচ্ছে তার স্ত্রীকে! কথিত সম্রাটকে বাদ দিয়ে এবার মনোনয়ন দেয়া হবে সম্রাজ্ঞীকে। এক হত্যা মামলার আসামীকে মনোনয়ন না দিয়ে দেয়া হবে তার বাবাকে। গডকে বাদ দিয়ে দেয়া হবে গডের ফাদারকে! আদালত কর্তৃক স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলের অনেক নেতা এবার ধান গাছ নিয়ে ভোটের মাঠে দাড়াচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এখানে মাল একই থাকছে, শুধু কোথাও মার্কা বদলাচ্ছে কোথাও ব্যক্তি বদলাচ্ছে। সেই নতুন বোতলে পুরনো মদ!
মাদক সম্রাট বিতর্কিত তাই তার স্ত্রী ভালো! সম্রাটের স্ত্রীকে ধরে জোড়ে ঝুল দিলে তার পেটের ভিতরে মাদক ব্যবসায় অর্জিত অর্থের বিনিময়ে কেনা চালের ভাত ঝনঝন করবে, গায়ে মাদক ব্যবসায় অর্জিত টাকায় কেনা গয়নায় সুর ছন্দ বাজবে। আবার বাপ, ভাই, স্বজনদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে শক্তিবান অপকর্মকারীকে বাদ দিলেই কি অভিযোগ মিথ্যা হয়ে যাবে? স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে যারা নিজেদের প্রচার করেন, তারা কিভাবে স্বাধীনতার বিরোধিদের সাথে কাধে কাধ মিলাবেন? কেউ কেউ বলে, ব্যক্তি দোষী কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরাতো দোষী নয়! তাই যদি হয়, তবে স্বাধীনতা বিরোধিদের সন্তানদের বিষয়ে আপনারা নাক সিটকান কেন? আসলে প্রশ্ন করলে নেতাদের এমন কোন কথা নেই যে কথার উপর সম্পূরক প্রশ্ন আসবে না! সময় এসেছে, বোতল বদলানি থামান। মদকে মদ বলুন, বর্জন করতে চাইলে বর্জন করুন। বর্জন করার কথা বলে আলো আধারিতে চিয়ার্স বলা থেকে বিরত থাকাই ভালো। আম জনতা সবই বুঝে! তারা যে সব বুঝে সেটা শুধু আপনারাই বুঝেন না!

Friday, November 9, 2018

বইছে এখন নির্বাচনী হাওয়া, চাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান

নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করে তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে। আর তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এখন দেশে জোড়ে শোরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। বাড়িতে, অফিসে, চায়ের দোকানে বসে গেছে টকশো। আলাপ হচ্ছে শুধুই নির্বাচন নিয়ে। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে চুল চেরা বিশ্লেষণ। একে অপরের প্রতি যুক্তি তুলে ধরছে নিজের দল ও প্রার্থীকে সেরা প্রমান করতে। তবে, তর্ক-বিতর্ক সবই চলুক শান্তিপূর্ণ ভাবে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হোক সকল দল, মতের মানুষের।

একাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচনে এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন ও নারী ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র হবে ৪০ হাজার ১৯৯টি। এতে ভোট কক্ষ থাকবে ২ লাখ ৬ হাজারেরও বেশি। প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ৫টি করে ভোট কক্ষ থাকে। ভোটের অন্তত ১৫দিন আগে কেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশনার। 

পরিসংখ্যান দেখলেই অনুমান করা যায়, কি বিশাল জনগোষ্ঠী একটি অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে জনগণকে তার রায় দেয়ার সুযোগ দেয়ার। আর ইচ্ছা থাকলেই কেবল তা সম্ভব বলেই মনে হয়। বিশাল জনগোষ্ঠীর সবাই রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয়। কিন্তুু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কথায় কথায় বলে ‘জনগণের আশা আকাঙ্খা’ পূরনে তারা কাজ করছে। জনগণ সেটা ভালো ভাবেই জানে কি আশা আকাঙ্খা পূরনে তারা কাজ করে। দেশের জনগণ এখন অনেক সচেতন। রাজনৈতিক বক্তব্য বুঝার যথেষ্ট জ্ঞাণ জনগণের আছে, কিন্তু জনগণ যে সব বুঝে সেই বিষয়টা আমাদের নেতাদের বুঝার জ্ঞান আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। আর থাকলেও তারা সাধারণ জনগণের ধুয়া তুলে নিজেদের আখের গোছাতেই বক্তব্য দিয়ে থাকে বলে মনে হয়। সরকার যা করে সবই জনগণের জন্য, বিরোধী দলেরা যা করে সব জনগণের জন্যই। এসব বক্তব্য পরিহার করে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তাদের প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরা। 

রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা যে কথাই বুলক না কেন, জনগণ হিসাবে ‘জনগণের আশা আকাঙ্খা’র কিছু কথা তুলে ধরি। ১) বেশিরভাগ জনগণেরই প্রত্যাশা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরাপদ, নিরপেক্ষ, সংবিধান সম্মত নির্বাচন পাওয়া, ২) দেশে সকল রাজনৈতি দলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সুযোগ, ৩) অহিংস ভাবে সকল দলের সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দেয়া, ৪) রাজনৈতিক কারনে হানাহানি-ধরপাকর বন্ধ করা, ৫) যার যার ভোট তা প্রয়োগের সুযোগ তৈরী করা, ৫) অর্থ পাচারকারী, আত্মসাতকারী, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া ব্যক্তিদের ভোট না দেয়া বা তাদের বর্জন করাও জনগণের আশা আকাঙ্খার একটা বিষয়। এমন হাজারো আশা আকাঙ্খার কথা তুলে ধরা যায়। আসলে জনগণ কি চায় সেটা সরকারী কর্মকর্তারা যেমন জানেন, তেমনি জানেন সরকারী দলের কর্তাব্যক্তিরা, বিরোধী জোটের কর্তাব্যক্তিরাও। তাই জনগণের ধুয়া না তুলে নিজেদের অবস্থানটা পরিস্কার করুন। জনগণের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিন। জনগণকে বোকা ভাববেন না। 

Tuesday, November 6, 2018

ভাবুন, কার হাতে তুলে দিচ্ছেন মটর সাইকেলের চাবি


সম্প্রতি শরীয়তপুরে ঘটে গেলো এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। বেপরোয়া গতিতে মটর সাইকেল চালিয়ে এক যুবক কেড়ে নেয় এক মায়ের দুটি সন্তান। প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন স্থানে ঘটছে দুর্ঘটনা। মৃত্যু হচ্ছে মানুষের। যারা বেঁচে যাচ্ছে তারা মরার চাইতেও খারাপ অবস্থায় বেঁচে থাকে। হাত হারিয়ে, পা হারিয়ে, কেউ কেউ হাত পা দু’টোই হারিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে আছে। কারো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি হারিয়ে পুরো পরিবারটি পথে বসে পড়ে। কারো প্রাণের স্বজন হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। আমরা নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করছি। মাঝে মাঝেই আমাদের বিবেক জাগ্রত হয়ে উঠে। আবার ঝিমিয়ে যায়। কিন্তু কেন এমন হয় তা কি আমরা একবারের জন্যও ভেবে দেখি? ভাবার সময় এখনই।
যে ঘটনাটা না ঘটলে হয়তো আজকের এই লেখাটা লিখার তাগিদ অনুভব করতাম না, সেই ঘটনাটা সংক্ষেপে একটু না বললেই নয়। গত ৫ নভেম্বর সোমবার শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নে মটর সাইকেল চাপায় জুনায়েদ (৫) এবং আব্দুর রহমান (৩) নামের দুই শিশু নিহত হয়। এ ঘটনায় নিহত জুনায়েদ-আব্দুর রহমানের মা রহিমা বেগম (৩২) ও আত্মীয় হাসান বেপারী (১৮) গুরুতর আহত হয়। আহত হাসান বেপারীর ভাষ্যমতে সোমবার দুপুর ১টার দিকে বাবু বেপারীর স্ত্রী রহিমা বেগম তাদের দুই ছেলেকে নিয়ে নয়ন শরীফ সরকার কান্দি বাবার বাড়ি থেকে নৈমুদ্দিন সরকার কান্দি তার শ্বশুর বাড়ির দিকে আসছিল। নিমতলা এলাকায় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে হাসান বেপারীর সাথে কথা বলার সময় মুন্সী কান্দির বাসিন্দা রহমত উল্যাহ সরকারের ছেলে সখিপুর হাবিবউল্যাহ কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র বরকত আলী (১৮) বেপরোয়া গতিতে একটি পালসার মটর সাইকেল নিয়ে তাদের উপর উঠিয়ে দেয়। আহতদের ভেদরগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জুনায়েদকে মৃত ঘোষণা করে এবং অন্যান্যদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার পর বিকেলে আব্দুর রহমানের মৃত্যু হয়। ঘাতক বরকত আলী ভগ্নিপতির মটর সাইকেলটি নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল।
এবার আসি মূল কথায়। শরীয়তপুর জেলা হচ্ছে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স প্রেরণে অন্যতম একটি জেলা। এখানকার বহু প্রবাসী স্বজনদের দেশে রেখে প্রবাসে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে অর্থ উপার্যন করে দেশে পাঠায়। আর প্রবাসীদের সেই টাকায় যুবক বয়সী ছেলেরা নিত্য নতুন মটর সাইকেল কিনে ফুটানি করে। আর ফুটানির তালিকায় বেশিরভাগই ১৮ বছরের নিচে যাদের কিশোর বলা যায়। তাদের হাতে আমরা মটর সাইকেলের চাবি তুলে দিতে বাধ্য হই অনেক সময়। মটর সাইকেল পাওয়ার পর শুরু হয় বেপরোয়া ছোটাছুটি, মাদক সেবন, ইভটিজিং করা সহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অনেকে মটর সাইকেল কিনে না দিলেও বড় ভাই, বাবার মটর সাইকেল আব্দার করলেই তাদের হাতে চাবি তুলে দেই। যেমনটি দিয়েছিলো ঘাতক বরকত আলীর ভগ্নিপতি নিজের মটর সাইকেলটি। আইন প্রয়োগের দুর্বলতার সুযোগে এরা ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চলাচল করতে, হেলমেড ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে এবং অতি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে সাহস ও সুযোগ পায়। আমাদের একটু সচেতনতাই এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে। তাই প্রবাসীদের এবং দেশের অভিভাবকদের উচিত একবার হলেও ভেবে দেখা কার হাতে তুলে দিচ্ছেন মটর সাইকেলের চাবি? যার হাতে তুলে দিচ্ছেন সেই প্রিয় স্বজন হারিয়ে যেতে পারে দুর্ঘটনায়, মাদকের মরন থাবায়, অপরাধে জড়িয়ে। আর হারাতে পারে অন্য কারো অমূল্য জীবনও।
দুর্ঘটনায় আমরা শুধু চালককে আর সড়কের বেহাল দশার জন্য সরকারকে দায়ী করি। দায়ী করাটাও অমুলক নয়। তবে তাদেরই কি সব দায়? আমাদেরও কি কোন দায় নেই? আমরা সড়কে চলাচলের সময় সচেতন থাকি না, রাস্তা পারাপারের সময় ডানে বামে খেয়াল করি না, নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হই না, ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহারে আমাদের ব্যাপক অনিহা, চালকদের মত আমরা পথিকরাও ট্রাফিক আইন মানি না, এমন হাজারো উদাহরণ দিতে পারবো। কিন্তু উদাহরণ না টেনে আমাদেরও উচিত একটু সচেতন হওয়া। আমরা সবাই মিলে পারি একটি নিরাপদ জীবন যাপনের পরিবেশ তৈরী করতে।

Sunday, November 4, 2018

তেঁতুল, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে স্বাদ বদলায়


তেঁতুল বা তিন্তিড়ীর বৈজ্ঞানিক নামঃ Tamarindus indica, ইংরেজি নামঃ Melanesian papeda এটি Fabaceae পরিবারের Tamarindus গণের অন্তর্ভূক্ত টক স্বাদযুক্ত ফলের গাছ। এটি এক প্রকার টক ফল বিশেষ। আলঙ্কারিক অর্থে পাজি, দুষ্ট, বদমাশ মানুষকে তেঁতুলে লোক বলা হয়ে থাকে। 

তেঁতুলে টারটারিক এসিড থাকায় খাবার হজমে সহায়তা করে। পেটের বায়ু, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী। রক্তে কোলস্টেরল কমানোর কাজে আধুনিককালে তেঁতুল ব্যবহার হচ্ছে। জরে ভোগা রোগীর জর কমানোর জন্য এ ফল ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও স্কেলিটাল ফ্রুরোসিস(skeletal fluorosis) রোগের প্রকোপ হ্রাস করতেও এটি ব্যবহৃত হয়। পাকা তেঁতুল ভিজিয়ে রেখে সকালে শুধু পানি খেলে হাত-পায়ের জ্বালা কমে। তেতুল দেখলে শুধু ছেলেদেরই নয়, মেয়েদেরও লালা ঝরে। চটপটি, ফুসকায় মেয়েদের পছন্দের তালিকায় তেতুল গোলা টকই পছন্দের শীর্ষে । তেঁতুলের ফলই শুধু উপকারী নয়, তেঁতুল গাছেরও আছে অনেক ব্যবহার। মাংস কাটাকুটিতে কষাইরা, কোরবানীর সময় আম জনতা তেঁতুল গাছের ছোট ছোট টুকরা ব্যবহার করে। তবে তেঁতুল গাছের মুগুর মানুষকে সায়েস্তা করতে বেশ ওস্তাদ। তাই তেঁতুলের মুগুর হতে সাবধান থাকতে হবে।

কিন্তু আমাদের দেশে গোত্র ভেদে এর স্বাদ বদলায়। তেঁতুল যদি শত্রুর ঘড়ে ওঠে তবে তা টক আর নিজের ঘরে ওঠে তবে তা অতিশয় মিঠা হয়ে থাকে। আমাদের রাজনীতিতে তেঁতুলের অবস্থান বেশ মজবুত।

দেশে তেঁতুল ফলের সাথে আরেকটি নামও বেশ পরিচিত। তা হলো তেঁতুল হুজুর। এক হুজুর মেয়েদের তেঁতুলের সাথে তুলনা করেছিলেন। মেয়েরা নাকি তেঁতুলের মত, দেখলে লালা ঝড়ে! সেই তেঁতুল হুজুর যখন ১৩ দফা দাবি নিয়ে মাঠে নামেন তখন অনেকেই সমর্থন দিয়েছিলেন, অনেকে করেছিলেন বিরোধীতা।

যখন তেঁতুল হুজুর আন্দোলনে ব্যস্ত তখন এক নেত্রী সমাবেশে বলেছিলেন, “আলেমারা দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নেমেছেন। মহানবী (সা.) এর বিরুদ্ধে যারা বাজে কথা বলেছেন, তাদের শাস্তির দাবিতে আলেম-উলামারা এই আন্দোলন করছেন। তার জন্য আমি তাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাই।” তিনি আরো বলেন, “দেশের আলেম-উলামারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েছেন। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশে সবারই গণতান্ত্রিক কর্মসূচি করার অধিকার রয়েছে। সরকারকে বলব, তাদের কর্মসূচিতে বাঁধার সৃষ্টি করবেন না।”



আর অপর নেত্রী তখন তেঁতুল হুজুর সম্পর্কে বলেছিলেন “মহিলাদের সম্পর্কে এই যে নোংরা কথা বলা- উনি কি মায়ের পেট থেকে জন্মান নাই? তো মায়ের সম্মানটুকু উনি রাখবেন না? ওঁনার কি বোন নেই? নিজের স্ত্রী নেই? তাঁদের সম্মান রাখবেন না? এরকম নোংরা জঘন্য কথা বলবেন!”

২০১৩ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত ঢাকা অবরোধে অনেক নেতা পানি, জুস, রুটি, হালুয়া নিয়ে সেবা করেছিলেন হুজুরদের। কেউ কেউ এই অবরোধ অয়েকদিন চালিয়ে সরকার পতনের খোয়াবও দেখেছিলেন। আবার অনেক নেতা হুজুরের বিষদগার করতেও ছাড়েননি। তারা হুজুরের বিভিন্ন দফা নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ করে কিভাবে ঘায়েল করা যায় সেই পথে হেটেছেন।

এর পর জিভের পানি গড়িয়ে অনেক দূর চলে গেছে। আস্তে আস্তে কিছু দাবি দাওয়া মানার পর তেঁতুল হুজুরের সাথে অনেকের সম্পর্ক গাড় হয়েছে। এখন তেঁতুল বড় মিঠা। আর যারা এতদিন তেঁতুলের মুগুর দিয়ে পিটিয়ে সরকার পতনের খোয়াব দেখেছেন, তাদের কাছে আজ তেঁতুল বড়ই টক। তাই স্থান, কাল, পাত্র ভেদে তেঁতুলের স্বাদ নির্ভর করে।

তবে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তেঁতুল গাছে ফল ধরে অনেক বেশি, কিন্তু পাকা পর্যন্ত টিকে কম। তেঁতুল গাছে ইন্দুরের আক্রমন হয়। ইন্দুরে কাচা তেঁতুল কেটে ফেলে। তাই অনেক ফল সহ তেঁতুল গাছ নিজ ভূমিতে আবাদ করলেও খেয়াল রাখতে হবে যেন ইন্দুরে কেটে বিনাশ না করে। তবেই তেঁতুলের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন।

শিক্ষার চেয়েও মাহফিল গুরুত্বপূর্ণ!

২০১৮ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা গত ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। এবছর দুই পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ জন। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬০১ জন ছাত্রী, ১২ লাখ ২৩ হাজার ৭৩২ জন ছাত্র। সারা দেশে মোট ২৯ হাজার ৬৭৭টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই দুই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এটা হলো পরিসংখ্যান, আর সবকিছুতো পরিসংখ্যানে মাপলে হবে না! এত বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পূর্ব ঘোষিত পরীক্ষা ‘অনিবার্য’ কারনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করে নতুন সময় সূচী নির্ধারণ করে দিয়েছে। 

‘অনিবার্য’ শব্দের জুতসই অর্থ খুজলাম। যা বেরিয়ে এলো তা হলো “আবশ্যক, জরুরি, প্রয়োজনীয়, অত্যাবশ্যক, অধিকতর আবশ্যক, অবশ্যম্ভাবী, আবশ্যকীয়, দরকারী, অপরিহার্য, বাধ্যতামূলক, যথাকর্তব্য, অনিবার্য, পূর্বকারণ-নিয়ন্ত্রিত, অবশ্যকরণীয়”। কিন্তু প্রকৃত কারনটা কি সেটার অর্থ ডিকশনারীতে পেলাম না। কিন্তু বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় ডিকশনারী যে আর্ন্তজাল। একটু ঘাটলেই বেরিয়ে আসে তাজা-পচা কোটি তথ্য। সেখান থেকেই জানলাম আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি শিক্ষার্থীদের শোকরানা মাহফিল থাকায় পরীক্ষা পিছিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিডিয়াকে জানান, রোববার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের শোকরানা মাহফিল থাকায় পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতগুলো শিক্ষার্থীর পরীক্ষা পিছিয়ে একটা শুকরানা আদায় বা সংবর্ধনা কতটা জরুরী ছিলো সেই উত্তর কেউ দিলো না। আর শিক্ষার্থীদের জন্য এতটা চিন্তা মাথায় থাকলে পরীক্ষা না পিছিয়ে কি শুকরানা মাহফিল পেছানো যেতো না? শুকরানা মাহফিল কয়েকদিন পিছিয়ে দিলে বা শুকরানাটা শুক্রবার বন্ধের দিন দিলে কি এমন ক্ষতি হতো, তা মাথায় আসে না। 

আমাদের দেশে যারা সবচেয়ে বেশি মেধাবী তারাই ভর্তি হয় প্রকৌশল বিভাগে। এর পর যারা আছে তারা ভর্তি হয় চিকিৎসা বিভাগে। অবশ্য পছন্দ ভেদে অনেকে প্রকৌশলে না গিয়ে চিকিৎসায় বা চিকিৎসায় না গিয়ে প্রকৌশলেও যায়। মূলকথা হলো সবচেয়ে ভালো যারা তারাই যায় প্রকৌশল ও চিকিৎসায়। ওখানে যারা চান্স পায় না তারা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিষয়ে। এর চেয়ে নিচের স্কেলে যারা তারা সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করে। এর পরের ধাপ ছিটকে পড়ে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায় কর্মসংস্থান খুজে নেয়। আর যাদের কোন কোয়ালিটিই নেই তারাই সাধারণত শুরুর দিক থেকেই পড়াশুনা বাদ দিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেয় (অবশ্য সবাই না)। এর পরের কাহিনীটা এমন, প্রকৌশল থেকে পাস করে বিসিএস দিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্ব নিলে শিক্ষার আলোহীন ঐ রাজনীতি করা পোলাপান দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী প্রকৌশলীকে মারধর করতে একটুও চিন্তা ভাবনা করে না। একই ঘটনা ঘটে চিকিৎসকের সাথেও। একটু যদি দেরি হয় নেতার বা তার কোন স্বজনের চিকিৎসা দিতে বা চিকিৎসা পছন্দ না হলে মেধাবী চিকিৎসককে মারধর করতে মূহুর্ত সময়ও নেয় না। কারন, সে রাজনীতি করে, সে রাজার সমান। সে নেতা, বড় নেতার চামচা সে। রাজ্যটাই তারা চালায়, তারা রাজা, বাকী সব তাদের প্রজা, গোলাম। মেধাবীদের কাজ ঐ রাজাদের সেবা করা মাত্র। 

তাই শিক্ষার চেয়ে রাজনীতিটাই এখন মনোযোগ দিয়ে করা উচিত। তা না হলে প্রায় ২৭ লাখ শিক্ষার্থীকে বাসায় বসিয়ে রেখে কয়েক হাজার মানুষের শুকরানার জন্য পরীক্ষা স্থগিত করতো না সরকার। একটা শুকরানা মাহফিল ও সংবর্ধনার এতটাই গুরুত্ব যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাও সেখানে গৌন বলে বিবেচিত হচ্ছে। আর হবেইনা বা কেন? তাদের শুকরিয়া আদায় ও মাহফিলের দোয়ায় কারো বৈতরনী পার হয়ে যেতে পারে! বেহেস্তের লোভ কার নেই? তাদের দোয়ায় জুটে যেতে পারে কাঙ্খিত বেহেস্ত, নিভে যেতে পারে দোযখের আগুন! তারাইতো আমাদের ভবিষ্যতে ফতোয়া দিবে! তারাইতো ফতোয়া দিয়ে নৈতিক-অনৈতিক বিচার করে দিবে! এমন একটি মাহফিলের জন্য লক্ষ কেন, কোটি শিক্ষার্থীর পরীক্ষা পিছালে এমন কি ক্ষতি হবে! তাই শিক্ষার চেয়ে রাজনীতি বড়, শিক্ষার চেয়ে মাহফিল বড়, আসেন আমরা শুকরিয়া আদায় করি!

Wednesday, October 31, 2018

বিরোধ ও সংলাপঃ চাচা-ভাতিজির কাল্পনিক কথোপকথন

একটা কথা আগেই বলে রাখা ভালো। কথপোকথন অবাস্তব ঘটনা অবলম্বনে রচিত। বাস্তবের সাথে মিল পেলে আমি কিন্তু দায়ী নই। একদা এক দেশে ছিলো এক বিজ্ঞ চাচা ও এক জাদরেল ভাতিজি। চাচা ছিলো বিধান প্রণেতা। দীর্ঘদিন ভাতিজির বাবার সাথে লড়াই সংগ্রাম, রাজনীতি করেছে চাচা। একসাথে পথ চলে গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করেছে। বাবার মৃত্যুর পরও আষ্টেপিষ্টে ছিলেন একসাথেই। হঠাৎ কিযে হয়ে গেলো, চাচা চলে গেলেন স্রোতের বিপরীতে। আর স্রোতের বিপরীতে যাওয়া মানে তো বুঝেনই। ভাসতে ভাসতে অনেক দূরে চলে গেলেন চাচা। চাচার কাছে মনে হলো সংকট চলছে তাই আলোচনা, সংলাপ প্রয়োজন। অতঃপর চাচা ভাতিজিকে চিঠি দিলেন আলোচনায় বসার জন্য। ভাতিজিও সাথে সাথে তাতে সাড়া দিয়ে চিঠি পাঠালেন স্বগত জানিয়ে। চিঠিতে লিখে দিলেন ‘বিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।’ পত্র বাহককে বলে দিলেন চাচা কি খাবে জেনে আসতে। অতঃপর চাচা তার দলবল নিয়ে চলে আসলেন আলোচনায়, সংলাপে।
প্রথমেই শুরু করলেন চাচা। বললেন, তুমিতো জানোই কি কথা বলতে বসেছি আমি দলবল নিয়ে। সামনে নির্বাচন। আমাদের কিছু দাবী আছে। বেশি দাবী করবো না। মাত্র সাতটা দাবী নিয়েই আলোচনা করতে চাই।
আমাদের প্রথম দাবী হলো-অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে তোমাকে পদ থেকে সড়ে দাড়াতে হবে, সংসদ বাতিল, সকলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন একং সাবেক নেত্রীসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-চাচা আপনিতো জানেন। বিধানের বাইরে আমি কিছুই করবো না। আর বিধানের প্রতি আপনারও শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত এবং আছে বলেই আমি জানি। আপনি যাদের ফুসলানিতে এসেছেন আমি তাদের মনবাঞ্চা পূর্ন করতেতো বসিনি। সংসদ বাতিল, নির্দলীয় সরকার গঠন, চুরির দায়ে জেলে যাওয়া ব্যক্তিকে তো ছাড়া বিধান সম্মত হবে না! আর মামলা বিচার না হতে বা তদন্ত না হতেতো বুঝার উপায় নাই সত্য না মিথ্যা কাকা?
আমাদের দ্বিতীয় দাবি হলো-গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকাযে কি বলেন! গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি কোথায় পাবেন? যার মুক্তির আব্দার করছেন সেই নেত্রীই একদিন বলেছিলেন-‘একমাত্র পাগল ও শিশু ছাড়া কোন মানুষের পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়।’ তাহলে আপনিই বলেন কাকে দেব। যাকেই দায়িত্ব দেবো তাকেই আপনাদের কাছে মনে হবে হয় পাগল নয় শিশু। আর গঠন, পূনর্গঠন, বাক্স না মেশিন সে সবইতো বিধান মতে। আমার হাত কোথায় বলেন কাকা?
আমাদের তৃতীয় আব্দার হলো-বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-এতদিন যাবত কাজ করছি, আমি কি বুঝিনা কি করা ঠিক আর কি করা ঠিক নয়? সব স্বাধীনতাই দেয়া আছে। শুধু অপপ্রচার, হানাহানি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির স্বাধীনতা আমি দিতে পারি না, ওটা বিধানেও নাই কাকা।
আমাদের চতুর্থ দাবী হলো-কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল ‘কালো আইন’ বাতিল করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-হয়রানিমূলক মামলা হলে আমি রাখি না। কাকার কি মনে নাই, আমার লোকজনের বিরুদ্ধে যেসব হয়রানি মূলক মামলা করেছিলো স্বাধীনতার সত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে, আমি দায়িত্ব নিয়ে সব মামলা থেকে জনগণকে মুক্তি দিয়েছি। আর কালো আইন যদি হয়ে থাকে তা বাতিল করার বিষয়ে আমি খুব সিরিয়াস। বাবার খুনিদের বাঁচাতে কালো আইন হয়েছিলো, তা বাতিল করেছি না কাকা?
আমাদের পঞ্চম দাবীর কথা এবার বলি-নির্বাচনের ১০ দিন পূর্ব থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকা, আমি নির্বাচন কমিশনের উপর পূর্ণ আস্থাশীল। কমিশন যদি মনে করে দরকার তবে করবে। আমি এতে বাধা দিব কেন। কি করা দরকার আর কি করা দরকার নাই তাতো ঐ বিধানেই বলা আছে। আপনি ওনিয়ে চিন্তা করবেন না কাকা।
প্রশ্নতো মা শেষ করেই ফেলেছি। এবার আমাদের ষষ্ঠ দাবীর কথা বলি-নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পুলিং বুথ, ভোট গণনাস্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশের ওপর কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনকালীন গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকা, গত নির্বাচনেও পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। তারা ভালো রিপোর্টই দিয়েছিলো। তারপরওতো আপনাদের পছন্দ হয়নি। আর দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমিতো না করিনি, কিন্তু ডেকে ডেকে আনতেতো পারবো না কাকা। আর গণমাধ্যম কর্মীরাতো স্বাধীন ভাবেই কাজ করছে। তবে সব বিধানের বাইরে কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেয়া কি ঠিক হবে। আপনি বিধান রচয়িতা, আপনিই বলুন!
আমাদের শেষ প্রশ্নটা করেই ফেলি। সাত হলো লাকী নাম্বার। সপ্তম দাবী হলো-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোনো ধরনের নতুন মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকা, নতুন করে বিশৃঙ্খলা করলে কি করতে হবে তাতো বললেন না! আমি আপনার এই বিধানবহির্ভূত কথা রেখে কি আউল কাইজ্জা বাধামু? মামলা চলবে মামলার গতিতে। বিচার আচারের উপর আমি কোন নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না! আপনিও বিধানের বাইরে কিছু করতে চাওয়ার মানুষ নয়। তাই সব কিছু হবে বিধানের মধ্যে থেকে। আর কারো আব্দারেতো হঠাৎ করে বিধান বদলানো যায় না। বিধান বদলাতে সময় লাগে, সেই সময়ও কিন্তু হাতে নাই। ভবিষ্যতে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা যাবে। এখন আসেন খাওয়া দাওয়া করি।

Tuesday, October 30, 2018

রোগের নাম ‘আস্থা সংকট’ ‘সংলাপ’ ঔষধে কি সারবে?

দেশে এখন এক ভয়াবহ রোগের প্রকপ চলছে। রোগের নাম হলো ‘আস্থার সংকট’। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না, কারো প্রতি কারো আস্থা নেই। এ অবস্থায় সংলাপ নামের ঔষধে কি অসুখ সারবে? আমার মনে হয় না সারবে।
বেশি পুরনো ইতিহাস ঘেটে লাভ নেই। পুরাতন কাসুন্ধি ঘাটা অনেকেই পছন্দ করে না। এরশাদ সাহেব দীর্ঘদিন স্বৈর শাসন চালিয়েছিলেন। তার শাসনামল কেমন ছিলো তার বিচার জনগন করবে এবং করছে। এরশাদ সাহেবের শাসন অনেকে এখনও পছন্দ করেন, অনেকে করেন না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রধান দুটি দলের একটি দলও তার শাসন পছন্দ করেননি। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যপক আন্দোলন করে এরশাদ সাহেবের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা কায়েম করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দ্বারা নির্বাচন পরিচালনা করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হলো। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় স্লোগান দিত ‘এই মূহুর্তে দরকার, কেয়ার টেকার সরকার, এই মূহুর্তে দরকার, তত্বাবধায়ক সরকার’। কেয়ার টেকার বা তত্বাবধায়ক সরকার হিসাবে প্রথম চালকের আসনে বসলেন তৎকালীন সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করলে আওয়ামীলীগ এই নির্বাচনে সুক্ষ কারচুপির অভিযোগ তোলে। মেয়াদ শেষে নিয়ম রক্ষার ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর অল্প সময় টিকেছিলো বিএনপি সরকার। ক্ষমতা ছাড়ার পূর্বে বিএনপি সরকার তত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত আইনগত বেশ কিছু অসঙ্গতি সংশোধন করে যায়। ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের সর্ব প্রথম সংবিধান সম্মত তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সপ্তম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করলে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান অষ্টম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় ঐক্য জোট সরকার গঠন করে। আওয়ামীলীগ এই নির্বাচনে স্থুল কারচুপির অভিযোগ তোলে। ২০০৬ সালে চতুর্থ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। প্রথমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। চার জন উপদেষ্টার সাথে প্রধান উপদেষ্টার মতনৈক্যর কারনে পদত্যাগ করলে নতুন চার উপদেষ্ঠার নিয়োগ দিলেও নির্বাচন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন এবং এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি তখন দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে নতুন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে তিনি ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সরকার পরিচালনা করে নবম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করলে আওয়ামীলীগ জোট সরকার গঠন করেন। ১০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হয় ক্ষমতায় থেকেই। এ নির্বাচনে নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসা, গণতান্ত্রীক সরকার গঠন ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিতর্ক পিছু ছাড়বে না বলেই মনে হচ্ছে। সরকারী দল বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখতে নানা কৌশল, অপকৌশল ব্যবহার করে থাকে যা হয়তো রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু কোন দলই কোন দলকে বিশ্বাস করে না। এমনকি তত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিও কারো বিশ্বাস নেই। আওয়ামীলীগ-বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলো একসময় তত্ববধায়ক সরকার চেয়ে আন্দোলন করেছিলো। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তাদের কাছে মনে হলো তত্বাবধায়ক সরকারও নিরপেক্ষ নয়। বিএনপি নেত্রীর ভাষায় ‘একমাত্র পাগল ও শিশু ছাড়া কোন মানুষের পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়।’ আওয়ামীলীগও কম যায় না, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর বলে বসলো সুক্ষ কারচুপি হয়েছে আর ২০০১ সালের নির্বাচনে স্থুল কারচুপি হয়েছে। নির্বাচনে একদল জিতবে, আরেক দল হারবে এটাই বাস্তবতা। কিন্তু কোন দলই তত্বাবধায়ক সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারেনি। ঘটনা চক্রে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করলে বিএনপি জোট আবার তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে মাঠে নামে। বিএনপি জোট এখন বলছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। যারাই একসময় তত্বাবধায়ক সরকারকে নিরপেক্ষ ভেবেছিলেন তারাই ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টে ফেলছেন। দেশে নিরপেক্ষ ব্যক্তি নেই তা নয়। আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একে অপরের প্রতি আস্থাই নেই। রাজনৈতিক নেতাদের ‘আস্থার সংকট’ নামক রোগে ধরেছে।
দশম জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামীলীগ সরকার বিএনপিকে সংলাপে ডেকেছিলো। কিন্তু সেই সময় বিএনপি দলীয় নেত্রী সংলাপে যায়নি। সময় বিএনপির জন্য যেমন বসে থাকেনি আওয়ামীলীগের জন্যও নয়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যেমন বিএনপি নির্বাচন করে ফেলেছিলো তেমনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামীলীগও নির্বাচন করে ফেলেছে। বিএনপি তখন টিকে থাকতে পারেনি, আওয়ামীলীগ টিকে গেছে এই যা পার্থক্য। এখন একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জোট সংলাপের জন্য আকুতি মিনতি করায় আওয়ামীলীগ সংলাপের আয়োজন করেছে। কিন্তু সংলাপে কি আদৌ কিছু হবে। একটা গল্প শুনেছিলাম, একজন বলেছে আমাকে যে বুঝাতে পারবে তাকে পালের বড় গরুটা দিয়ে দিব। পাশ থেকে ঐ লোকের চামচা বললো, আপনি এতবড় গরুটা দিয়ে দিবেন? তখন বলেছিলো, আরো বোকা, আমি বুঝলেতো আমায় বুঝাবে! আমি বুঝবোও না আমার গরুও দিব না। তেমনি সংলাপে আলোচনা হবে, খাওয়া দাওয়া হবে, কুশলাদি বিনিময় হবে। রেজাল্ট যা হবে তা বিএনপি জোটেরও পছন্দ হবে আর তাদের দাবি আওয়ামীলীগেরও পছন্দ হবে না। যা হবে তা কয়েকদিনের ভিতরই মানুষ দেখতে পাবে। তাই ‘সংলাপ’ নামের ঔষধে ‘আস্থার সংকট’ রোগ সারবে না।

Monday, October 29, 2018

কার মুখে কালি মাখছি আমরা, দেশের মুখে না সরকারের মুখে?

কোন দাবিই আন্দোলন ছাড়া কোন কালেই আদায় হয় নাই। না কাদলে মা’ও অনেক সময় দুধ দিতে ভুলে যায়। তাই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন একটা অধিকার ও দায়িত্ব। কিন্তু সেই আন্দোলন হতে হয় শান্তিপূর্ণ, যৌক্তিক ও সমর্থনযোগ্য। অন্যায়-অন্যায্য দাবিতে আন্দোলন কোন অধিকারের মধ্যে পড়ে না। আন্দোলনে যেন অন্যের অধিকার খর্ব না হয় সেদিকেও কড়া নজর রাখা উচিত। নিজের অধিকার, দাবি আদায় করতে গিয়ে যেন অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে কজনই নজর রাখে।
সম্প্রতি ঢাকায় একটা দুর্ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থী মারা গেলে সড়ক পরিবহন আইন পাশের দাবি জোড়ালো ভাবে সামনে চলে আসে। শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে একজন শ্রমিকবান্ধব মন্ত্রী দাত কেলিয়ে হেসে আন্দোলন চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই আন্দোলনে অবশ্য বিএনপি জোট ঘি ঢালতে চেষ্টা করেও নিজেদের মনবাঞ্চা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে কিছু বিপথগামী শিক্ষার্থী অশ্লীল ভাষায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় দাড়ালে আমরা সমালোচনা করি, কিছু শিক্ষার্থী গাড়িতে মার্কার পেন দিয়ে আঁকিবুকি করে সমালোচনার পাত্র হয়। আবার সেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ এ্যাম্বুলেন্সকে নির্বিঘ্নে যেতে দিয়ে, সাড়িবদ্ধভাবে রিক্সাসহ যানবাহন চলতে বাধ্য করে, সিটবেল্ট পড়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গাড়ি চালাতে বাধ্য করে, ঝাড়ু হাতে নিজেরা রাস্তা পরিস্কার করে সকলের প্রশংসার দাবিদার হন। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস করে সরকার।
সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস করলে নাখোশ হন পরিবহন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সংগঠন। শ্রমিকরা তাদের নাটের গুরুদের নির্দেশে মামার বাড়ির আবদার নিয়ে মাঠে নামে। শ্রমিকদের সকল দাবিই অযৌক্তিক তা কিন্তু নয়। তাদের দাবিতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত আছে যা আমাদের অনেকেরই দাবি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের ভাষাটা। তারা যে ভাষায় আন্দোলন করে সে ভাষা তারা কোথা থেকে শিখেছে আল্লাহ মালুম! তাদের গুরুজনদের ভাষাও যে মধুর তা কিন্তু নয়। শ্রমিকদের আন্দোলনের ভাষা তাদের শিক্ষারই পরিচয় বহন করে বলেই মনে হয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের আট দফা দাবিগুলো হচ্ছে ১) সড়ক দুর্ঘটনায় সকল মামলা জামিনযোগ্য করা, ২) শ্রমিকের অর্থদন্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না, ৩) সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, ৪) শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫ম শ্রেণি করা, ৫) ওয়েস্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল, ৬) সড়কে পুলিশ হয়রানি বন্ধ করা, ৭) শ্রমিকের নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত থাকার ব্যবস্থা রাখা ও ৮) শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধ করা। শ্রমিক ফেডারেশনের আটটি দাবির অধিকাংশই সমর্থ যোগ্য। শুধু মামলা জামিনযোগ্য করা, অর্থদন্ড মৌকুফ, শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা মামার বাড়ির আবদারের মতই শোনায়। আবার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা, প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক ও সময়োপযোগী।
শ্রমিকরা তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছে। তারা গাড়ি চালাবে না, ভালো কথা। কিন্তু অন্যের গাড়ি বের করলে, এমনকি মটর সাইকেলে বের করলে তাদের কেন আতে ঘা লাগে। গাড়ি না চালানো শ্রমিকদের অধিকার, গাড়ি চালানোওতো নাগরিকদের অধিকার। শ্রমিকরা আন্দোলন করছে তাদের নিজস্ব ভাষায়। গাড়িতে কালি মাখছে, পোড়া মবিল দিয়ে মুখ কালো করছে, বাদ যাচ্ছে না কলেজ ছাত্রী, মটর সাইকেল আরোহিও। ইজিবাইক থেকে শ্রমিকরা যাত্রী নামতে বাধ্য করছে। এই যে কালিমা লেপন, এটা কার মুখে? দেশের মুখে মাখছে না সরকারের মুখে। সরকারের খুটিতে ভর করে শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা শ্রমিকদের দিয়ে আজ যে কাজগুলো করছে এর দায় সরকারও এড়াতে পারবে না। স্বেচ্ছাচারিতার একটা সীমা থাকা উচিত। শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের উচিত তাদের শ্রমিকদের গাড়ি চালনায় প্রশিক্ষণ দেয়া, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া, রাষ্ট্রের নিয়ম কানুন সম্পর্কে অবহিত করে তা মানার মানসিকতা গড়ে তোলা এবং নিজেরাও কিছুটা শিক্ষা নেয়া। নইলে দেশের মুখে কালি মাখতে মাখতে একসময় দেশ আরো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। দেশের মুখ উজ্জল হলেই আপনাদের মত উচু তলার মানুষের মুখ জ্বলজ্বল করবে, সম্মান পাবেন।