ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Monday, October 14, 2019

আব্বার নদ ও স্বাস্থ্যচারণ!

কয়েকদিন যাবৎ শারীরিক অসুস্থতায় ভূগছিলাম। ঋতু বৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। কিছুদিন আগেও প্রচন্ড গরমে ঘেমেছি, বৃষ্টিতে ভিজেছি। হঠাৎ করেই সেই গরম, সেই বৃষ্টি উধাও। রাত হলেই কুয়াশা নেমে আসে। ঘন কুয়াশা না হলেও একেবারে কম নয়। চারদিকে তাকালেই বুঝাযায় কুয়াশার হালহকিকত। বিশেষ করে দূরে তাকালে লাইটগুলোর চারদিকে কুয়াশার একটা আভা ফুটে ওঠে। চমৎকার একটা সময় যাচ্ছে। না গরম, না শীত। জীবনযাপনের জন্য এমন একটা আবহাওয়া কতটা উপভোগ্য তা বলে বুঝানো যাবে না। কিন্তু রাতের বেলা মটর সাইকেল চালালে শীতের আগমনী টের পাওয়ার মত। যারা হেলমেট না পড়ে মোটর সাইকেল চালায় তারা হাড়ে হাড়ে টের পায়। যদিও হেলমেট না পড়ে মটর বাইক চালানো ঠিক নয় সেটা ভুলে গেলে চলবে না!

প্রায় সপ্তাহখানেক অসুস্থতায় ভূগায় চেম্বারে শুধু আসা যাওয়া ছাড়া কোন কাজই করিনি। ঠান্ডায় মাথা ভার হয়ে ছিলো। নাক থেকে কখনো তরল নিস্কাশিত হয়েছে কখনোবা ঝড়েছে শ্লেষ্মা! এরই মাঝে দেশ থেকে ঝড়ে গেছে অদম্য মেধাবী আবরার। এতদিন ফেনী নদীর পানি ভারতের পাইপ দিয়ে গড়িয়েছে কত কিউসেক তার কোন হিসাব না থাকলেও এখন গড়াবে এক দশমিক বিরাশি কিউসেক বৈধভাবে এটা নিশ্চিত হয়েছে! তার মাঝে আমাদের রাজনীতিবীদরাও দিয়ে যাচ্ছে চরম বিনোদন! কেউ কেউ দাবী তুলছে ফেনী নদীকে ‘আবরার নদ বলে ডাকতে আর পাবলিক সেটাকে বুঝছে আব্বার নদ ডাকবে!

সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বুয়েটে ঘটে গেলো এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। এক মেধাবী ছাত্রকে ছাত্র নামের কলঙ্ক কিছু ছাত্র পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আমাদের দেশে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্ররাই সাধারণত বুয়েটে পড়ার সুযোগ পায়। ব্যতিক্রম নেই সেটা বলবো না। অনেকেরই কলকব্জা নিয়ে ঘাটাঘাটির অরুচি থাকে। যারা শরীর নিয়ে চর্চায় আগ্রহী হয়, তারা মেডিকেলে ভর্তি হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে বলাই যায়, দেশের সবচেয়ে মেধাবী যারা তারা বুয়েট বা মেডিকেলে পড়েন। অথচ বাস্তবতা এমন যে সেই বুয়েট বা মেডিকেল থেকে পাস করা দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরা যখন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কাজ করতে আসেন তখন দেশের সর্বনিম্ন মেধাবীরা সেই সর্বোচ্চ মেধাবীদের চোখ রাঙ্গায়, কখনোবা গায়ে হাত তুলে, সোজা কথা মারধর করে, নাজেহাল করে। সেই তথাকথিত সর্বনিম্ন মেধাবী আর কেউ নয়, তারা রাজনীতির সাথে যুক্ত কিছু কুলাঙ্গার।

যাহোক, লালন সাঁইজীর স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়া থেকে উঠে আসা অদম্য এক মেধাবী আবরার ফাহাদ। ছাত্র রাজনীতির পরশ পাওয়া কিছু বিশাক্ত কীট আবরারকে বেধরক পিটিয়ে মৃত্যুর কোলে শুইয়ে দেয়। আবরারের অপরাধ সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন এবং সে একটি ধর্মীয় উন্মাদনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত। যদিও তার বন্ধুরা নিশ্চিত করেছে আবরার সেই কথিত রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। ছাত্র রাজনীতিতে প্রতিটি দলের কর্মকান্ডই আলোচিত-সমালোচিত। ধর্মীয় উন্মাদনায় বিশ্বাসী রগকাটা ছাত্র সংগঠনটি কতটা ভয়ংকর তা আমরা সবাই জানি। সময় বড় খারাপ যাচ্ছে তাদের, তাই সংগঠনটি মাথা চাড়া দিয়ে দাড়াতে পারছে না। যদি পারতো তবে এমন অনেক আবরার মাঝে মাঝেই সিড়ির উপর শুয়ে থাকতো গলা বা রগ কাটা অবস্থায়। ছাত্র রাজনীতির নামে এখন যা হচ্ছে তাও যে খুব ভালো কিছু হচ্ছে তা কিন্তু নয়, যা হচ্ছে সেটাও চরম খারাপ একটা পর্যায়ে পৌছে গেছে। একেকজন ছাত্রনেতা দানব আকার ধারন করছে। এখন দানবরা একপাক্ষিক ক্ষমতার মহড়া দিচ্ছে, সুযোগ পেলে অন্য ছাত্রনেতারাও ক্ষমতা দেখাবে। এতে খালি হবে মায়ের কোল, এর চেয়ে বেশি কিছু হবে বলে আমি মনে করি না। লেখাটা পড়ে হয়তো অনেকেই বলবেন, কোন দলের ছেলেরা মারছে তা উল্লেখ করছি না কেন! ভাসুরের নাম সবাই জানে, লয়না সরমে! আমিও জানি। নামটা বললে যারা খুশি হবেন তাদের অতীত ইতিহাসও বেশ সুখকর নয়, বললে তাদের মুখেও হাসি থাকবে না। তাই আমি দলের নাম না উল্লেখ করেই লিখলাম। যরা বুঝার তারা বুঝে গেছেন, যারা বুঝতে চান না তারা বুঝবেনও না।

অতি মেধাবীদের কিছু খেয়ালী উন্মাদনা আছে। সিনিয়ররা জুনিয়রদের নানান ভাবে নাজেহাল করে আনন্দ উপভোগ করে। অনেকটা পেয়ারের আরব শেখদের মতো, উটের পিঠে শিশু জকি বসিয়ে উন্মাদ আনন্দ উপভোগ করার মত। এটাকে নাকি র‌্যাগিং বলে! শিক্ষকরা কখনো জানে, কখনো জানে না। শিক্ষকরা একটু কঠোর হলে এধরনের আচরন থেকে দানবদের নিবৃত্ত করতে পারেন। সেটা তারা কখনোই করেন না। আর না করার কারনও আছে। শিক্ষকরা লাল-নীল-সাদায় জড়িয়ে তাদের বিবেকের খাতা সাদা করে রেখেছেন, শুন্য করে রেখেছেন বুকের সাহসও। তাই জেনে শুনেও তারা র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেন না অথবা করেন না! আর সবাইতো থ্রি-ইডিয়ট মুভির র‌্যাঞ্চোদাস শ্যামলদাস চ্যাঞ্চাদ হতে পারেন না! তাই সিনিয়দের কথামত বিনোদন না দিলে সারা মাস নিরীহ ছাত্রটির গায়ে বা বিছানায় মুত্র বিসর্জন করে চলে তথাকথিত সিনিয়র দানবরা! কখনো কখনো নিরীহ ছাত্রদের উপর চলে ক্রিকেট ব্যাট, স্ট্যাম্প, বেইসবল ব্যাট আর হকিতো এখন মাঠে থেকে বেশি ব্যবহার করেন ছাত্রনেতারা তাদের হল নিয়ন্ত্রণে। এদের আচরনে পরিবর্তন আনা এখন সময়ের দাবী হয়ে দাড়িয়েছে। রাজনীতি বন্ধ করে, না অন্য কোন পদ্ধতিতে দানবের ক্রিয়াকর্ম রোধ করবে সেটা নীতি নির্ধারকদের বিষয়। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, একটি সুন্দর পরিবেশ, যেখানে কোন হৈচৈ থাকবে না। যেখানে তৃষ্ণার্ত ছাত্রকে আরেক ছাত্র ঢেলে দেবে পানি!

ভারত আমাদের অতি পুরাতন মিত্র। এই বিষয়ে কারো কোন ভিন্ন মত নেই। অবশ্য ধর্মান্ধ-পাকিস্তানপ্রেমীদের কথা আলাদা। যারা ধর্মের ভিত্তিতে বন্ধু নির্বাচন করেন তাদের কথা আলাদা। কিন্তু সেই পুরাতন মিত্ররা মাঝে মাঝে এমন কাজ করে যা জাতিকে হতবাক করে দেয়। তিস্তা নিয়ে ধস্তাধস্তি চলছে বহুকাল থেকে। সেই তিস্তা চুক্তি সই করার জন্য কলম রেডি, চুক্তি রেডি এমনকি কলমের মুখও খোলা থাকে কিন্তু সই হয় না অজানা কারনে! কখনো দরকষাকষিতে মিলে না, কখনো দিদির সম্মতি মিলে না! আমরা এমনিতেই পানি সংকটে ভূগছি। তিস্তা তিস্তা করে আমাদের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে দেশের কোন কোন অংশও, হয়ে যাচ্ছে মরুভূমি। অথচ আমাদেরই ফেনী নদী থেকে সেই মিত্ররা তাদের দেশের তৃষ্ণার্তদের খাবার পানির যোগান দিতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে, নীতিবহির্ভূত পদ্ধতিতে, গায়ের জোরে পাম্প বসিয়ে পানি তুলে নেয়। সম্প্রতি বিষয়টা সামনে আসলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার মানবিক চিন্তা থেকে হোক বা সমালোচকদের ভাষায় অন্য কোন কারনেই হোক পানি নেয়ার জন্য অনুমোদন দিয়ে আসেন, যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। আমাদের সল্প সম্পদ নিয়ে আমরা মানবিকতার পরিচয় দিয়ে তৃষ্ণার্তের মুখে পানের পানি দিতে পারি দেখিয়ে আসলাম আর বিশাল পানি নিয়েও তারা আমাদের তিস্তা চুক্তিতে সই করতে পারে না! অথচ চুক্তিটি যৌক্তিক ও ন্যাহ্য দাবী। আসলে আমাদের মন কতটা বড় এতেই বুঝা যায়! তিস্তা চুক্তি না হওয়া, ফেনী নদীর পানি নেয়ায় সম্মতি দেয়া, এসব বিষয়ে কতটুকু লাভ হলো-কতটুকু ক্ষতি হলো সেটা আমাদের দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমার মতামতের কোন গুরুত্ব নেই এটাই বাস্তবতা।

আমাদের রাজনীতিবিদরা বেশ রসিক। এরা কথায়-কাজে, আচার-আচরণে মাঝে মাঝেই তার পরিচয় দেন। বিভিন্ন ইস্যূ নিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদরা বেশ রস সঞ্চার করে দেখে মজাই লাগে! মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা নিয়েও নেতারা রস করতে থামেনি। কোন এক নেতা নাকি দাবী তুলেছেন, ফেনী নদীর নাম পরিবর্তন করে ‘আবরার নদ রাখা হোক! আমাদের দেশে সবাই নেতা, সবাই বক্তা, সবাই সঞ্চালক। চায়ের দোকানে বসলে বুঝাযায় দেশে কত বুদ্ধিজীবী আছে। দেশের সবচেয়ে বড় টকশো অনুষ্ঠিত হয় চায়ের দোকানেই। আর প্রযুক্তির কল্যানে এখন প্রতিটি চায়ের দোকানে একটি করে টেলিভিশন থাকে, সাথে থাকে ডিশের লাইনও। চায়ের দোকানের টকশো থেকে বেরিয়ে এক লোক বলছে-নেতারা কীযে কন বুঝি না! এতকালের ফেনী নদীকে এখন নাকি ‘আব্বার নদ বলতে হবে! কথা শুনে বুঝতে বাকী থাকে না, সে ‘আবরার নদ বুঝাতে চাইছে। রাজনীতিকরা সকল বিষয়েই রাজনীতি করবে এটাই সাভাবিক। তবে ঘর পোড়ার পর আলুপোড়া বা খৈ খাওয়ার অভ্যাসটা ছাড়তে হবে। দেশে ছাত্রহত্যা, দেশ বিরোধী চুক্তি যে যাই বলেন না কেন তা কী শুধু এখনই হচ্ছে? নিজেদের সময়কার ভূমিকা নেতারা বেমালুম ভুলে যান। অতীতকে মনে রাখেন না। সামনে তাকিয়ে কথা বলেন, পিছনে তাকালে দেখবেন সমালোচনার কাজগুলো করে এসেছেন আপনিও। আমরা বিনোদন চাই না, আমরা ছাত্র রাজনীতির আড়ালে দানবের উত্থান চাই না, আমরা দেশবিরোধী চুক্তি চাই না। আমরা আসলে কী চাই? আমরা চাই সুস্থ্য ও সাভাবিক ভাবে বাঁচতে, সাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। এই চাওয়াটা কী খুব বেশি চাওয়া?