ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Tuesday, December 25, 2018

তরুনরা বলছি, সত্যি, আমরাই বাংলাদেশ

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ‘আপনারাই বাংলাদেশ’ শিরোনামে ৩ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে তরুণদেরকে স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

সাধারণ বিবেচনায় যাদের বয়স ত্রিশের কোঠায় তাদেরকে আমরা ‘তরুণ’ বা ‘যুবক’ বলতে পছন্দ করতাম। চল্লিশের উপর বয়স গেলেই তাদের নাম ‘বয়স্কদের’ খাতায় তুলে দিতাম আগে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)’র মতে এখন তারুণ্যের মেয়াদ ৬৫ বছর পর্যন্ত। ফলে শুধু ত্রিশের কোঠায় অবস্থানকারীরা নিজেদের ‘তরুণ’ বলে জাহির করার সুযোগ হারিয়েছেন। সময়ের বিবর্তনে মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। উন্নত হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। ফলে বাড়ছে গড় আয়ু। তাই বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে আমাদের মানসিক শক্তি। এখন মানুষের চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ছে আগের চেয়ে ধীরে ধীরে। বর্তমানের ৪০ বছর বয়সী নারী কিংবা পুরুষরা আগের ৩০ বছর বয়সীদের মতো শারিরীক ও মানসিক শক্তি ধারণ করছে। ১৮৭৫ সালে পাস করা ব্রিটিশ প্রশাসনের ফ্রেন্ডলি সোসাইটিস অ্যাক্টে ছিল ৫০ বছর বয়সের পর থেকেই একজন মানুষ ‘বার্ধক্যে’ প্রবেশ করল। আর জাতিসংঘের খাতায় বার্ধক্যে প্রবেশের সীমান দেয়াল হচ্ছে ৬০ বছর। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মানুষকে তারুণ্যের শক্তি প্রদর্শনের জন্য ৬৫ বছর পর্যন্ত সময় দেয়ার পক্ষপাতি। এ ব্যাপারে তারা নতুন একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। বর্তমানের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের সুযোগ, জীবনমান, গড় আয়ু ইত্যাদি বিবেচনায় জীবনচক্রের নতুন বিভাজন তৈরী করেছে। এগুলো হচ্ছে: (ক) ০ থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু। (খ) ১৮ থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত তরুণ। (গ) ৬৬ থেকে ৭৯ বছর পর্যন্ত মধ্যবয়সী। (ঘ) ৮০ থেকে ৯৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধ। (ঙ) ১০০ বছরের উপরে গেল দীর্ঘজীবী।
আমার বয়স এখন চল্লিশ চলমান। উপরের তথ্য অনুযায় আমি বলতেই পারি ‘আমি তরুন বা যুবক’। তাই একজন তরুন বা যুবক হিসাবে জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর ভিডিও বার্তার উপর কিছু কথা বলতে চাই। পাঠকদের জন্য ভিডিও বার্তায় কি আহ্বান করা হয়েছে তুলে ধরছি এবং জবাবে কিছু কথা বলছি-
“আপনারা যারা এবারই প্রথম ভোট দেবেন, তাদেরকে আমি কিছু বলতে চাই। আমার বয়স যখন আপনাদের মতো, তখন আমরা একটা যুদ্ধে গিয়েছিলাম দেশটাকে মুক্ত করবো বলে। তখন আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ ছিল, যারা বলতো যে,পাঞ্জাবীদের সাথে যুদ্ধে আমরা কোনো দিনও পারব না। মেরে-কেটে ওরা শেষ করে দেবে। ওদের ট্রেইনড মিলিটারিদের বিপরীতে আমরা হলাম বাচ্চা ছেলেপেলে। তারা আসলে ভয় পেত। যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার অনুতাপে কাতর ছিল তারা। আমরা সেদিন তাদের কথা শুনিনি। বড় বড় পাকা পাকা বিশ্লেষণে কান দেইনি। আমরা শুধু আমাদের মনের কথাটা শুনেছিলাম। শুধু একটা স্বপ্নকে তাড়া করেছিলাম। দেশটা মুক্ত হবে। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে বাংলাদেশ।”
খুবই ভালো কথা। আপনি সেদিন আপনার মনের কথাটা শুনেছিলেন। আমাদের উপর আস্থা রাখুন, আমরাও আমাদের মনের কথা শুনবো। মনে যদি আপনাদেরকে সমর্থন না দেয় তবে আশাহত বা মর্মাহত হবেন না।

“আমার বয়স এখন সত্তর। আমি এই বয়সেও সেই একই স্বপ্ন তাড়া করছি। আমি তো আশায় ভরপুর! আপনারা কী স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছেন? আমাকে বহু মানুষ বলে, ভোটে তো স্যার আপনারাই জিতবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ আপনাদের রেজাল্ট খেয়ে ফেলবে। তার কারণ হলো, আওয়ামী লীগের সমীকরণে আপনারা (তরুণরা) নেই। তারা আপনাদের (তরুণদের) তাচ্ছিল্য করে। টু দেম ইউ ডোন্ট ম্যাটার। তাদের পরিকল্পনা, এমন সন্ত্রাস করো ২৯ তারিখ পর্যন্ত, যেন আপনারা (তরুণরা) পোলিং সেন্টারে যাওয়ার আগ্রহটাই হারিয়ে ফেলেন।”
না স্যার, আমরা স্বপ্ন দেখতে ভুলিনি। এখনও আমরা স্বপ্ন দেখি। তবে হারলে রেজাল্ট খেয়ে ফেলার অভিযোগের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের তাচ্ছিল্য করার ধৃষ্টতা কেউ দেখাতে সাহস পায় না, যেমন আপনারাও পান না। বেশিক্ষণ স্বপ্নে বিভোর না থেকে বাস্তবতা হাতড়িয়ে দেখুন। কেন মানুষ বর্জন করছে, কেন ফেল করছেন, কেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তরুন-যুবক-জনতা।

“এমন এক ন্যারেটিভ তারা বাংলাদেশে দাঁড় করিয়েছে যে, আপনি যাকেই ভোট দেন, আপনার রাজনৈতিক জাজমেন্ট যাই হোক না কেন, সেই ভোটকে, আপনার বিশ্বাসকে, তারা চুরি করে পাল্টে দেবে। আমি বলি কী,আপনারা ওদের দেখিয়ে দিন যে, আপনারাই বাংলাদেশ। দেখিয়ে দিন যে, ইউ ম্যাটার। আপনারা এই দেশের মালিক এবং আপনার ভোটেই ঠিক হবে এদেশের ভবিষ্যৎ।”
স্যার, এমন ভাবে বলছেন যেন ভোট চুরি এই প্রথম দেখলেন! পূর্বে ভোট চুরি দেখেননি? নিজেরা করেননি? অতীতে ক্ষমতায় থাকাবস্থায় ফেরেস্তা দিয়ে কি নির্বাচন পরিচালনা করতেন? তরুন-যুবকরা ভোলে না, আমরা ভুলিনি। সত্যিই বলেছেন, আমরাই দেশের মালিক। তাই মালিকের সমর্থন আপনাদের পক্ষে না গেলে কষ্ট পাবেন না। সমর্থন কিসে আসবে তা খতিয়ে দেখে নিজেরা সংশোধন হন।

“আপনার বিবেচনায় যাকে বলে তাকেই ভোট দিন। আমি সেই সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ভোট আপনারা অবশ্যই দেবেন। সকাল সকাল দেবেন। দেখিয়ে দিন যে, আপনারাই বাংলাদেশ। যৌবনে আমরা এই দেশটার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। বার্ধক্যে এসে আপনাদের কাছে আমি শুধু একটা দিন চাইছি। ৩০ ডিসেম্বর, শুধু একটা দিন বাংলাদেশের জন্য। ৩০ ডিসেম্বর সকাল সকাল ভোট দিন। দেখিয়ে দিন যে, আপনারা শুধু ভোট দিতেও জানেন না, ভোট ডাকাতিও আটকাতে পারেন। গণতন্ত্রটা বাঁচাতে হবে। একটা আলো আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম আমাদের যৌবনে। যেটা আমরা আপনাদেরকে দিতে চাই। এই আলোটা আপনারা শুধু আপনাদের সন্তানদের কাছে পৌঁছে দেবেন, তাহলেই হবে। আলোটাকে নিভতে দেবেন না।”
আপনার এই কথাগুলো ভালো লেগেছে। আমার বিবেচনা যাকে বলে তাকেই ভোট দিব। ৩০ ডিসেম্বর ভোট দেবো গণতন্ত্র বাঁচাতে, গরীবের হক নষ্ট যেন না হয় সেই জন্য, কেউ যেন আর ১০% কমিশন খেতে না পারে সেই জন্য, দেশে যেন জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া না দেয় সেই জন্য, দুর্নীতিতে যেন দেশ বার বার শীর্ষে না যায় সেই জন্য, আরো আলোকিত বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে ভবিষ্যতে তা দেখার জন্য।

নিজের আশেপাশের তরুন-যুবকদের দেখে সারা বাংলার তরুন-যুবকদের নিজের মনে করা ঠিক হবে বলে মনে হয় না। এর বাইরেও তরুন আছে, এর বাইরেও জগত আছে। নিজের বিবেচনা সকল তরুন-যুবকের উপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে দিন। আমাদের সিদ্ধান্তের উপর আস্থা রাখুন। আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিব। গণতান্ত্রিকভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত বিপক্ষে গেলে তরুনদের দোষ দিবেন না।   

No comments:

Post a Comment