ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Wednesday, November 21, 2018

মাল একই, শুধু পাত্র পরিবর্তন

সময় এখন নির্বাচনের। তাই নেতা-নেত্রী, রাজনৈতিক বিষয় সংশ্লিষ্ট গল্প হলেই বুঝতে সহজ হবে। আমরা কথায় কথায় বলি নতুন বোতলে পুরনো মদ। এর যে মানে কি তা বুঝতে রকেট সাইন্স বুঝার জ্ঞান লাগে না। তবে আমি যেভাবে বুঝি সেটা বলি। আমার কাছে কথাটার মানে হচ্ছে, স্থান, কাল, পাত্র, ঘটনা, চরিত্র সবই ঠিক থাকবে। শুধুমাত্র চিন্তাধারার পরিবর্তন হবে, সেটাই মাল একই, শুধু পাত্র পরিবর্তন।
অনেক দিন আগের কথা। আমার মামা জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচন করতেন। আমরা সবাই মামার নির্বাচনে শ্রম দিতাম। কোন কিছুর লোভে না। মামা নির্বাচন করবে আর ভাগ্নেরা শ্রম দেবে না তা কি হয়? আমাদের কাজ ছিলো, মিছিল শেষে মামার বাড়ির মাঠে জড়ো হওয়া লোকদের চা-বিড়ি খাওয়ানো। চা মানে বোঝেন তো? বড় পাতিল ভরে আখের গুর, ছেচা বা থেতলালো আদাল আর অল্প চা পাতা দিয়ে গরম করা পানি। সাথে যারা একটু মুরুব্বি গোছের মানুষ তাদের জন্য বরাদ্দ থাকতো বিড়ি। জগ ভরে চা নিতাম, আর হাতে থাকতো বড় জাম বাটি। জাম বাটি ভরে কম করে হলেও গ্রাম্য ভাষায় আজ্জের (আধা লিটার) পরিমান চা দিতাম! কেউ কেউ সেই আজ্জের চা খেয়ে আরেকবার নিতো! সেই মামার নির্বাচনের সময় এক নেতাকে দেখতাম সবসময় তখনকার আমলের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ট্রিপল ফাইভ সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে প্যাকেটটা ফেলে দিতেন এবং সিগারেটটা ঠোটে নিয়ে মুখাগ্নি করতেন। তখন মুরব্বিজনরা সমালোচনা করতেন, ট্রিপল ফাইভ সিগারেটের প্যাকেটে ক্যাপাস্টেন সিগারেট রেখে কত ভাব নেয়! নতুন প্যাকেটে পুরনো মাল ভরে দেখায় তিনি কি খায়! তখন নির্বাচনী খরচ বলতে মিছিল শেষে চা-বিড়ি খাওয়া, বেশি হলে নেতার বাড়িতে এক বা দু বেলা ভাত খাওয়া। আর ভাত খাওয়া মানে বিশাল আয়োজনের কিছু নয়। ভাত, লাউর সাথে শোল, টাকি অথবা ওসব না পেলে শিং মাছ দিয়ে লাউ ঘন্ট, সাথে ডাল। মানুষ তাই তৃপ্তি ভরে খেয়ে দারুন ঢেকুর তুলতো। আর এখন নাকি নির্বাচন করতে প্রচুর টাকা লাগে! কেন লাগে সেটা অবশ্য গবেষণার বিষয়। নেতা-নেত্রী বা জনপ্রতিনিধিদের খাই খাই স্বভাবের কারনে হয়তো আম জনতা বা কর্মীদের স্বভাবও পরিবর্তন হয়েছে কিছুটা। পরিবর্তনশীল বিশ্বে সাধারণ জনগন যদি একটু পরিবর্তন হয় তাতে ক্ষতি কি?
এতোক্ষণ বললাম বহু আগেকার কথা। এবার হালনাগাদ কিছু কথা বলি। দেশে এখন নির্বাচনের ভরা মৌসুম চলছে। সকল রাজনৈতিক দলে এখন উপচে পড়া ভীর! ভীর সামলাতে আমাদের পুলিশ ভাইদের পায়ের ঘাম মাথায় উঠার জোগার! আর এ সবই হচ্ছে মনোনয়নের প্রতিযোগিতা। কেউ মনোনয়ন চায় জিততে, ভাবনাটা এমন যে মনোনয়নটাই চুড়ান্ত নির্বাচন! মনোনয়ন পেলে আর ঠেকায় কে? কেউ মনোনয়ন চায় হারতে! কারন, দলের মনোনয়ন পেয়ে এলাকায় নিজেকে একটু জানান দেয়া যে সে একজন প্রতিযোগি, একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি!
আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যে কথা বলে তা সবাই বুঝে শুধু নেতারা ছাড়া! কোন কোন দলের মুখপাত্র বলেন, জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরনে আমরা কাজ করছি, দেশকে রাহু-কেতুর গ্রাস থেকে মুক্ত করতে হবে, বুকের রক্ত দিয়ে (নিজের রক্ত দিবে না) হলেও ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে! আমরা যাদের মনোনয়ন দিবো তাদের পক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, আমরা বিতর্কিত লোকদের মনোনয়ন দিব না। আবার কোন কোন মুখপাত্র বলেন, আমরা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য, দেশ ও জাতির কল্যানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যাদের জনপ্রিয়তা নেই, যারা বিতর্কিত, যারা স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি তাদের মনোনয়ন দেবো না। জাতির কাছে আমাদের আবেদন আপনারাও তাদের বর্জন করুন। কোন কোন জোট বলছেন তারা স্বাধীনতার পক্ষে এবং স্বাধীনতার বিরোধিদের সাথে কোন আপোষ নেই তারাই আবার স্বাধীনতা বিরোধিদের সাথে জোট করে গলায় গলায় ভাব রেখে নির্বাচন করছে। কত স্ববিরোধিতা!
মাদক বাংলাদেশের একটি ভয়াবহ রোগ। আর এই মাদক নিয়ে যার উপর বিশাল অভিযোগ তাকে মনোনয়ন না দিয়ে দেয়া হচ্ছে তার স্ত্রীকে! কথিত সম্রাটকে বাদ দিয়ে এবার মনোনয়ন দেয়া হবে সম্রাজ্ঞীকে। এক হত্যা মামলার আসামীকে মনোনয়ন না দিয়ে দেয়া হবে তার বাবাকে। গডকে বাদ দিয়ে দেয়া হবে গডের ফাদারকে! আদালত কর্তৃক স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলের অনেক নেতা এবার ধান গাছ নিয়ে ভোটের মাঠে দাড়াচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এখানে মাল একই থাকছে, শুধু কোথাও মার্কা বদলাচ্ছে কোথাও ব্যক্তি বদলাচ্ছে। সেই নতুন বোতলে পুরনো মদ!
মাদক সম্রাট বিতর্কিত তাই তার স্ত্রী ভালো! সম্রাটের স্ত্রীকে ধরে জোড়ে ঝুল দিলে তার পেটের ভিতরে মাদক ব্যবসায় অর্জিত অর্থের বিনিময়ে কেনা চালের ভাত ঝনঝন করবে, গায়ে মাদক ব্যবসায় অর্জিত টাকায় কেনা গয়নায় সুর ছন্দ বাজবে। আবার বাপ, ভাই, স্বজনদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে শক্তিবান অপকর্মকারীকে বাদ দিলেই কি অভিযোগ মিথ্যা হয়ে যাবে? স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে যারা নিজেদের প্রচার করেন, তারা কিভাবে স্বাধীনতার বিরোধিদের সাথে কাধে কাধ মিলাবেন? কেউ কেউ বলে, ব্যক্তি দোষী কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরাতো দোষী নয়! তাই যদি হয়, তবে স্বাধীনতা বিরোধিদের সন্তানদের বিষয়ে আপনারা নাক সিটকান কেন? আসলে প্রশ্ন করলে নেতাদের এমন কোন কথা নেই যে কথার উপর সম্পূরক প্রশ্ন আসবে না! সময় এসেছে, বোতল বদলানি থামান। মদকে মদ বলুন, বর্জন করতে চাইলে বর্জন করুন। বর্জন করার কথা বলে আলো আধারিতে চিয়ার্স বলা থেকে বিরত থাকাই ভালো। আম জনতা সবই বুঝে! তারা যে সব বুঝে সেটা শুধু আপনারাই বুঝেন না!

Friday, November 9, 2018

বইছে এখন নির্বাচনী হাওয়া, চাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান

নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করে তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে। আর তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এখন দেশে জোড়ে শোরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। বাড়িতে, অফিসে, চায়ের দোকানে বসে গেছে টকশো। আলাপ হচ্ছে শুধুই নির্বাচন নিয়ে। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে চুল চেরা বিশ্লেষণ। একে অপরের প্রতি যুক্তি তুলে ধরছে নিজের দল ও প্রার্থীকে সেরা প্রমান করতে। তবে, তর্ক-বিতর্ক সবই চলুক শান্তিপূর্ণ ভাবে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হোক সকল দল, মতের মানুষের।

একাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচনে এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন ও নারী ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র হবে ৪০ হাজার ১৯৯টি। এতে ভোট কক্ষ থাকবে ২ লাখ ৬ হাজারেরও বেশি। প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ৫টি করে ভোট কক্ষ থাকে। ভোটের অন্তত ১৫দিন আগে কেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশনার। 

পরিসংখ্যান দেখলেই অনুমান করা যায়, কি বিশাল জনগোষ্ঠী একটি অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষায় আছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে জনগণকে তার রায় দেয়ার সুযোগ দেয়ার। আর ইচ্ছা থাকলেই কেবল তা সম্ভব বলেই মনে হয়। বিশাল জনগোষ্ঠীর সবাই রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয়। কিন্তুু আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কথায় কথায় বলে ‘জনগণের আশা আকাঙ্খা’ পূরনে তারা কাজ করছে। জনগণ সেটা ভালো ভাবেই জানে কি আশা আকাঙ্খা পূরনে তারা কাজ করে। দেশের জনগণ এখন অনেক সচেতন। রাজনৈতিক বক্তব্য বুঝার যথেষ্ট জ্ঞাণ জনগণের আছে, কিন্তু জনগণ যে সব বুঝে সেই বিষয়টা আমাদের নেতাদের বুঝার জ্ঞান আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। আর থাকলেও তারা সাধারণ জনগণের ধুয়া তুলে নিজেদের আখের গোছাতেই বক্তব্য দিয়ে থাকে বলে মনে হয়। সরকার যা করে সবই জনগণের জন্য, বিরোধী দলেরা যা করে সব জনগণের জন্যই। এসব বক্তব্য পরিহার করে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তাদের প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরা। 

রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা যে কথাই বুলক না কেন, জনগণ হিসাবে ‘জনগণের আশা আকাঙ্খা’র কিছু কথা তুলে ধরি। ১) বেশিরভাগ জনগণেরই প্রত্যাশা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরাপদ, নিরপেক্ষ, সংবিধান সম্মত নির্বাচন পাওয়া, ২) দেশে সকল রাজনৈতি দলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সুযোগ, ৩) অহিংস ভাবে সকল দলের সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দেয়া, ৪) রাজনৈতিক কারনে হানাহানি-ধরপাকর বন্ধ করা, ৫) যার যার ভোট তা প্রয়োগের সুযোগ তৈরী করা, ৫) অর্থ পাচারকারী, আত্মসাতকারী, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া ব্যক্তিদের ভোট না দেয়া বা তাদের বর্জন করাও জনগণের আশা আকাঙ্খার একটা বিষয়। এমন হাজারো আশা আকাঙ্খার কথা তুলে ধরা যায়। আসলে জনগণ কি চায় সেটা সরকারী কর্মকর্তারা যেমন জানেন, তেমনি জানেন সরকারী দলের কর্তাব্যক্তিরা, বিরোধী জোটের কর্তাব্যক্তিরাও। তাই জনগণের ধুয়া না তুলে নিজেদের অবস্থানটা পরিস্কার করুন। জনগণের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিন। জনগণকে বোকা ভাববেন না। 

Tuesday, November 6, 2018

ভাবুন, কার হাতে তুলে দিচ্ছেন মটর সাইকেলের চাবি


সম্প্রতি শরীয়তপুরে ঘটে গেলো এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। বেপরোয়া গতিতে মটর সাইকেল চালিয়ে এক যুবক কেড়ে নেয় এক মায়ের দুটি সন্তান। প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন স্থানে ঘটছে দুর্ঘটনা। মৃত্যু হচ্ছে মানুষের। যারা বেঁচে যাচ্ছে তারা মরার চাইতেও খারাপ অবস্থায় বেঁচে থাকে। হাত হারিয়ে, পা হারিয়ে, কেউ কেউ হাত পা দু’টোই হারিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে আছে। কারো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি হারিয়ে পুরো পরিবারটি পথে বসে পড়ে। কারো প্রাণের স্বজন হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। আমরা নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করছি। মাঝে মাঝেই আমাদের বিবেক জাগ্রত হয়ে উঠে। আবার ঝিমিয়ে যায়। কিন্তু কেন এমন হয় তা কি আমরা একবারের জন্যও ভেবে দেখি? ভাবার সময় এখনই।
যে ঘটনাটা না ঘটলে হয়তো আজকের এই লেখাটা লিখার তাগিদ অনুভব করতাম না, সেই ঘটনাটা সংক্ষেপে একটু না বললেই নয়। গত ৫ নভেম্বর সোমবার শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নে মটর সাইকেল চাপায় জুনায়েদ (৫) এবং আব্দুর রহমান (৩) নামের দুই শিশু নিহত হয়। এ ঘটনায় নিহত জুনায়েদ-আব্দুর রহমানের মা রহিমা বেগম (৩২) ও আত্মীয় হাসান বেপারী (১৮) গুরুতর আহত হয়। আহত হাসান বেপারীর ভাষ্যমতে সোমবার দুপুর ১টার দিকে বাবু বেপারীর স্ত্রী রহিমা বেগম তাদের দুই ছেলেকে নিয়ে নয়ন শরীফ সরকার কান্দি বাবার বাড়ি থেকে নৈমুদ্দিন সরকার কান্দি তার শ্বশুর বাড়ির দিকে আসছিল। নিমতলা এলাকায় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে হাসান বেপারীর সাথে কথা বলার সময় মুন্সী কান্দির বাসিন্দা রহমত উল্যাহ সরকারের ছেলে সখিপুর হাবিবউল্যাহ কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র বরকত আলী (১৮) বেপরোয়া গতিতে একটি পালসার মটর সাইকেল নিয়ে তাদের উপর উঠিয়ে দেয়। আহতদের ভেদরগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জুনায়েদকে মৃত ঘোষণা করে এবং অন্যান্যদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার পর বিকেলে আব্দুর রহমানের মৃত্যু হয়। ঘাতক বরকত আলী ভগ্নিপতির মটর সাইকেলটি নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল।
এবার আসি মূল কথায়। শরীয়তপুর জেলা হচ্ছে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স প্রেরণে অন্যতম একটি জেলা। এখানকার বহু প্রবাসী স্বজনদের দেশে রেখে প্রবাসে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে অর্থ উপার্যন করে দেশে পাঠায়। আর প্রবাসীদের সেই টাকায় যুবক বয়সী ছেলেরা নিত্য নতুন মটর সাইকেল কিনে ফুটানি করে। আর ফুটানির তালিকায় বেশিরভাগই ১৮ বছরের নিচে যাদের কিশোর বলা যায়। তাদের হাতে আমরা মটর সাইকেলের চাবি তুলে দিতে বাধ্য হই অনেক সময়। মটর সাইকেল পাওয়ার পর শুরু হয় বেপরোয়া ছোটাছুটি, মাদক সেবন, ইভটিজিং করা সহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অনেকে মটর সাইকেল কিনে না দিলেও বড় ভাই, বাবার মটর সাইকেল আব্দার করলেই তাদের হাতে চাবি তুলে দেই। যেমনটি দিয়েছিলো ঘাতক বরকত আলীর ভগ্নিপতি নিজের মটর সাইকেলটি। আইন প্রয়োগের দুর্বলতার সুযোগে এরা ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন চলাচল করতে, হেলমেড ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে এবং অতি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে সাহস ও সুযোগ পায়। আমাদের একটু সচেতনতাই এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে। তাই প্রবাসীদের এবং দেশের অভিভাবকদের উচিত একবার হলেও ভেবে দেখা কার হাতে তুলে দিচ্ছেন মটর সাইকেলের চাবি? যার হাতে তুলে দিচ্ছেন সেই প্রিয় স্বজন হারিয়ে যেতে পারে দুর্ঘটনায়, মাদকের মরন থাবায়, অপরাধে জড়িয়ে। আর হারাতে পারে অন্য কারো অমূল্য জীবনও।
দুর্ঘটনায় আমরা শুধু চালককে আর সড়কের বেহাল দশার জন্য সরকারকে দায়ী করি। দায়ী করাটাও অমুলক নয়। তবে তাদেরই কি সব দায়? আমাদেরও কি কোন দায় নেই? আমরা সড়কে চলাচলের সময় সচেতন থাকি না, রাস্তা পারাপারের সময় ডানে বামে খেয়াল করি না, নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হই না, ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহারে আমাদের ব্যাপক অনিহা, চালকদের মত আমরা পথিকরাও ট্রাফিক আইন মানি না, এমন হাজারো উদাহরণ দিতে পারবো। কিন্তু উদাহরণ না টেনে আমাদেরও উচিত একটু সচেতন হওয়া। আমরা সবাই মিলে পারি একটি নিরাপদ জীবন যাপনের পরিবেশ তৈরী করতে।

Sunday, November 4, 2018

তেঁতুল, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে স্বাদ বদলায়


তেঁতুল বা তিন্তিড়ীর বৈজ্ঞানিক নামঃ Tamarindus indica, ইংরেজি নামঃ Melanesian papeda এটি Fabaceae পরিবারের Tamarindus গণের অন্তর্ভূক্ত টক স্বাদযুক্ত ফলের গাছ। এটি এক প্রকার টক ফল বিশেষ। আলঙ্কারিক অর্থে পাজি, দুষ্ট, বদমাশ মানুষকে তেঁতুলে লোক বলা হয়ে থাকে। 

তেঁতুলে টারটারিক এসিড থাকায় খাবার হজমে সহায়তা করে। পেটের বায়ু, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী। রক্তে কোলস্টেরল কমানোর কাজে আধুনিককালে তেঁতুল ব্যবহার হচ্ছে। জরে ভোগা রোগীর জর কমানোর জন্য এ ফল ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও স্কেলিটাল ফ্রুরোসিস(skeletal fluorosis) রোগের প্রকোপ হ্রাস করতেও এটি ব্যবহৃত হয়। পাকা তেঁতুল ভিজিয়ে রেখে সকালে শুধু পানি খেলে হাত-পায়ের জ্বালা কমে। তেতুল দেখলে শুধু ছেলেদেরই নয়, মেয়েদেরও লালা ঝরে। চটপটি, ফুসকায় মেয়েদের পছন্দের তালিকায় তেতুল গোলা টকই পছন্দের শীর্ষে । তেঁতুলের ফলই শুধু উপকারী নয়, তেঁতুল গাছেরও আছে অনেক ব্যবহার। মাংস কাটাকুটিতে কষাইরা, কোরবানীর সময় আম জনতা তেঁতুল গাছের ছোট ছোট টুকরা ব্যবহার করে। তবে তেঁতুল গাছের মুগুর মানুষকে সায়েস্তা করতে বেশ ওস্তাদ। তাই তেঁতুলের মুগুর হতে সাবধান থাকতে হবে।

কিন্তু আমাদের দেশে গোত্র ভেদে এর স্বাদ বদলায়। তেঁতুল যদি শত্রুর ঘড়ে ওঠে তবে তা টক আর নিজের ঘরে ওঠে তবে তা অতিশয় মিঠা হয়ে থাকে। আমাদের রাজনীতিতে তেঁতুলের অবস্থান বেশ মজবুত।

দেশে তেঁতুল ফলের সাথে আরেকটি নামও বেশ পরিচিত। তা হলো তেঁতুল হুজুর। এক হুজুর মেয়েদের তেঁতুলের সাথে তুলনা করেছিলেন। মেয়েরা নাকি তেঁতুলের মত, দেখলে লালা ঝড়ে! সেই তেঁতুল হুজুর যখন ১৩ দফা দাবি নিয়ে মাঠে নামেন তখন অনেকেই সমর্থন দিয়েছিলেন, অনেকে করেছিলেন বিরোধীতা।

যখন তেঁতুল হুজুর আন্দোলনে ব্যস্ত তখন এক নেত্রী সমাবেশে বলেছিলেন, “আলেমারা দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নেমেছেন। মহানবী (সা.) এর বিরুদ্ধে যারা বাজে কথা বলেছেন, তাদের শাস্তির দাবিতে আলেম-উলামারা এই আন্দোলন করছেন। তার জন্য আমি তাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাই।” তিনি আরো বলেন, “দেশের আলেম-উলামারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েছেন। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশে সবারই গণতান্ত্রিক কর্মসূচি করার অধিকার রয়েছে। সরকারকে বলব, তাদের কর্মসূচিতে বাঁধার সৃষ্টি করবেন না।”



আর অপর নেত্রী তখন তেঁতুল হুজুর সম্পর্কে বলেছিলেন “মহিলাদের সম্পর্কে এই যে নোংরা কথা বলা- উনি কি মায়ের পেট থেকে জন্মান নাই? তো মায়ের সম্মানটুকু উনি রাখবেন না? ওঁনার কি বোন নেই? নিজের স্ত্রী নেই? তাঁদের সম্মান রাখবেন না? এরকম নোংরা জঘন্য কথা বলবেন!”

২০১৩ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত ঢাকা অবরোধে অনেক নেতা পানি, জুস, রুটি, হালুয়া নিয়ে সেবা করেছিলেন হুজুরদের। কেউ কেউ এই অবরোধ অয়েকদিন চালিয়ে সরকার পতনের খোয়াবও দেখেছিলেন। আবার অনেক নেতা হুজুরের বিষদগার করতেও ছাড়েননি। তারা হুজুরের বিভিন্ন দফা নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ করে কিভাবে ঘায়েল করা যায় সেই পথে হেটেছেন।

এর পর জিভের পানি গড়িয়ে অনেক দূর চলে গেছে। আস্তে আস্তে কিছু দাবি দাওয়া মানার পর তেঁতুল হুজুরের সাথে অনেকের সম্পর্ক গাড় হয়েছে। এখন তেঁতুল বড় মিঠা। আর যারা এতদিন তেঁতুলের মুগুর দিয়ে পিটিয়ে সরকার পতনের খোয়াব দেখেছেন, তাদের কাছে আজ তেঁতুল বড়ই টক। তাই স্থান, কাল, পাত্র ভেদে তেঁতুলের স্বাদ নির্ভর করে।

তবে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তেঁতুল গাছে ফল ধরে অনেক বেশি, কিন্তু পাকা পর্যন্ত টিকে কম। তেঁতুল গাছে ইন্দুরের আক্রমন হয়। ইন্দুরে কাচা তেঁতুল কেটে ফেলে। তাই অনেক ফল সহ তেঁতুল গাছ নিজ ভূমিতে আবাদ করলেও খেয়াল রাখতে হবে যেন ইন্দুরে কেটে বিনাশ না করে। তবেই তেঁতুলের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন।

শিক্ষার চেয়েও মাহফিল গুরুত্বপূর্ণ!

২০১৮ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা গত ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। এবছর দুই পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ জন। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬০১ জন ছাত্রী, ১২ লাখ ২৩ হাজার ৭৩২ জন ছাত্র। সারা দেশে মোট ২৯ হাজার ৬৭৭টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই দুই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এটা হলো পরিসংখ্যান, আর সবকিছুতো পরিসংখ্যানে মাপলে হবে না! এত বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পূর্ব ঘোষিত পরীক্ষা ‘অনিবার্য’ কারনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করে নতুন সময় সূচী নির্ধারণ করে দিয়েছে। 

‘অনিবার্য’ শব্দের জুতসই অর্থ খুজলাম। যা বেরিয়ে এলো তা হলো “আবশ্যক, জরুরি, প্রয়োজনীয়, অত্যাবশ্যক, অধিকতর আবশ্যক, অবশ্যম্ভাবী, আবশ্যকীয়, দরকারী, অপরিহার্য, বাধ্যতামূলক, যথাকর্তব্য, অনিবার্য, পূর্বকারণ-নিয়ন্ত্রিত, অবশ্যকরণীয়”। কিন্তু প্রকৃত কারনটা কি সেটার অর্থ ডিকশনারীতে পেলাম না। কিন্তু বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় ডিকশনারী যে আর্ন্তজাল। একটু ঘাটলেই বেরিয়ে আসে তাজা-পচা কোটি তথ্য। সেখান থেকেই জানলাম আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি শিক্ষার্থীদের শোকরানা মাহফিল থাকায় পরীক্ষা পিছিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিডিয়াকে জানান, রোববার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের শোকরানা মাহফিল থাকায় পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতগুলো শিক্ষার্থীর পরীক্ষা পিছিয়ে একটা শুকরানা আদায় বা সংবর্ধনা কতটা জরুরী ছিলো সেই উত্তর কেউ দিলো না। আর শিক্ষার্থীদের জন্য এতটা চিন্তা মাথায় থাকলে পরীক্ষা না পিছিয়ে কি শুকরানা মাহফিল পেছানো যেতো না? শুকরানা মাহফিল কয়েকদিন পিছিয়ে দিলে বা শুকরানাটা শুক্রবার বন্ধের দিন দিলে কি এমন ক্ষতি হতো, তা মাথায় আসে না। 

আমাদের দেশে যারা সবচেয়ে বেশি মেধাবী তারাই ভর্তি হয় প্রকৌশল বিভাগে। এর পর যারা আছে তারা ভর্তি হয় চিকিৎসা বিভাগে। অবশ্য পছন্দ ভেদে অনেকে প্রকৌশলে না গিয়ে চিকিৎসায় বা চিকিৎসায় না গিয়ে প্রকৌশলেও যায়। মূলকথা হলো সবচেয়ে ভালো যারা তারাই যায় প্রকৌশল ও চিকিৎসায়। ওখানে যারা চান্স পায় না তারা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিষয়ে। এর চেয়ে নিচের স্কেলে যারা তারা সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করে। এর পরের ধাপ ছিটকে পড়ে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায় কর্মসংস্থান খুজে নেয়। আর যাদের কোন কোয়ালিটিই নেই তারাই সাধারণত শুরুর দিক থেকেই পড়াশুনা বাদ দিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেয় (অবশ্য সবাই না)। এর পরের কাহিনীটা এমন, প্রকৌশল থেকে পাস করে বিসিএস দিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্ব নিলে শিক্ষার আলোহীন ঐ রাজনীতি করা পোলাপান দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী প্রকৌশলীকে মারধর করতে একটুও চিন্তা ভাবনা করে না। একই ঘটনা ঘটে চিকিৎসকের সাথেও। একটু যদি দেরি হয় নেতার বা তার কোন স্বজনের চিকিৎসা দিতে বা চিকিৎসা পছন্দ না হলে মেধাবী চিকিৎসককে মারধর করতে মূহুর্ত সময়ও নেয় না। কারন, সে রাজনীতি করে, সে রাজার সমান। সে নেতা, বড় নেতার চামচা সে। রাজ্যটাই তারা চালায়, তারা রাজা, বাকী সব তাদের প্রজা, গোলাম। মেধাবীদের কাজ ঐ রাজাদের সেবা করা মাত্র। 

তাই শিক্ষার চেয়ে রাজনীতিটাই এখন মনোযোগ দিয়ে করা উচিত। তা না হলে প্রায় ২৭ লাখ শিক্ষার্থীকে বাসায় বসিয়ে রেখে কয়েক হাজার মানুষের শুকরানার জন্য পরীক্ষা স্থগিত করতো না সরকার। একটা শুকরানা মাহফিল ও সংবর্ধনার এতটাই গুরুত্ব যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাও সেখানে গৌন বলে বিবেচিত হচ্ছে। আর হবেইনা বা কেন? তাদের শুকরিয়া আদায় ও মাহফিলের দোয়ায় কারো বৈতরনী পার হয়ে যেতে পারে! বেহেস্তের লোভ কার নেই? তাদের দোয়ায় জুটে যেতে পারে কাঙ্খিত বেহেস্ত, নিভে যেতে পারে দোযখের আগুন! তারাইতো আমাদের ভবিষ্যতে ফতোয়া দিবে! তারাইতো ফতোয়া দিয়ে নৈতিক-অনৈতিক বিচার করে দিবে! এমন একটি মাহফিলের জন্য লক্ষ কেন, কোটি শিক্ষার্থীর পরীক্ষা পিছালে এমন কি ক্ষতি হবে! তাই শিক্ষার চেয়ে রাজনীতি বড়, শিক্ষার চেয়ে মাহফিল বড়, আসেন আমরা শুকরিয়া আদায় করি!