ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Wednesday, November 21, 2018

মাল একই, শুধু পাত্র পরিবর্তন

সময় এখন নির্বাচনের। তাই নেতা-নেত্রী, রাজনৈতিক বিষয় সংশ্লিষ্ট গল্প হলেই বুঝতে সহজ হবে। আমরা কথায় কথায় বলি নতুন বোতলে পুরনো মদ। এর যে মানে কি তা বুঝতে রকেট সাইন্স বুঝার জ্ঞান লাগে না। তবে আমি যেভাবে বুঝি সেটা বলি। আমার কাছে কথাটার মানে হচ্ছে, স্থান, কাল, পাত্র, ঘটনা, চরিত্র সবই ঠিক থাকবে। শুধুমাত্র চিন্তাধারার পরিবর্তন হবে, সেটাই মাল একই, শুধু পাত্র পরিবর্তন।
অনেক দিন আগের কথা। আমার মামা জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচন করতেন। আমরা সবাই মামার নির্বাচনে শ্রম দিতাম। কোন কিছুর লোভে না। মামা নির্বাচন করবে আর ভাগ্নেরা শ্রম দেবে না তা কি হয়? আমাদের কাজ ছিলো, মিছিল শেষে মামার বাড়ির মাঠে জড়ো হওয়া লোকদের চা-বিড়ি খাওয়ানো। চা মানে বোঝেন তো? বড় পাতিল ভরে আখের গুর, ছেচা বা থেতলালো আদাল আর অল্প চা পাতা দিয়ে গরম করা পানি। সাথে যারা একটু মুরুব্বি গোছের মানুষ তাদের জন্য বরাদ্দ থাকতো বিড়ি। জগ ভরে চা নিতাম, আর হাতে থাকতো বড় জাম বাটি। জাম বাটি ভরে কম করে হলেও গ্রাম্য ভাষায় আজ্জের (আধা লিটার) পরিমান চা দিতাম! কেউ কেউ সেই আজ্জের চা খেয়ে আরেকবার নিতো! সেই মামার নির্বাচনের সময় এক নেতাকে দেখতাম সবসময় তখনকার আমলের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ট্রিপল ফাইভ সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে প্যাকেটটা ফেলে দিতেন এবং সিগারেটটা ঠোটে নিয়ে মুখাগ্নি করতেন। তখন মুরব্বিজনরা সমালোচনা করতেন, ট্রিপল ফাইভ সিগারেটের প্যাকেটে ক্যাপাস্টেন সিগারেট রেখে কত ভাব নেয়! নতুন প্যাকেটে পুরনো মাল ভরে দেখায় তিনি কি খায়! তখন নির্বাচনী খরচ বলতে মিছিল শেষে চা-বিড়ি খাওয়া, বেশি হলে নেতার বাড়িতে এক বা দু বেলা ভাত খাওয়া। আর ভাত খাওয়া মানে বিশাল আয়োজনের কিছু নয়। ভাত, লাউর সাথে শোল, টাকি অথবা ওসব না পেলে শিং মাছ দিয়ে লাউ ঘন্ট, সাথে ডাল। মানুষ তাই তৃপ্তি ভরে খেয়ে দারুন ঢেকুর তুলতো। আর এখন নাকি নির্বাচন করতে প্রচুর টাকা লাগে! কেন লাগে সেটা অবশ্য গবেষণার বিষয়। নেতা-নেত্রী বা জনপ্রতিনিধিদের খাই খাই স্বভাবের কারনে হয়তো আম জনতা বা কর্মীদের স্বভাবও পরিবর্তন হয়েছে কিছুটা। পরিবর্তনশীল বিশ্বে সাধারণ জনগন যদি একটু পরিবর্তন হয় তাতে ক্ষতি কি?
এতোক্ষণ বললাম বহু আগেকার কথা। এবার হালনাগাদ কিছু কথা বলি। দেশে এখন নির্বাচনের ভরা মৌসুম চলছে। সকল রাজনৈতিক দলে এখন উপচে পড়া ভীর! ভীর সামলাতে আমাদের পুলিশ ভাইদের পায়ের ঘাম মাথায় উঠার জোগার! আর এ সবই হচ্ছে মনোনয়নের প্রতিযোগিতা। কেউ মনোনয়ন চায় জিততে, ভাবনাটা এমন যে মনোনয়নটাই চুড়ান্ত নির্বাচন! মনোনয়ন পেলে আর ঠেকায় কে? কেউ মনোনয়ন চায় হারতে! কারন, দলের মনোনয়ন পেয়ে এলাকায় নিজেকে একটু জানান দেয়া যে সে একজন প্রতিযোগি, একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি!
আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যে কথা বলে তা সবাই বুঝে শুধু নেতারা ছাড়া! কোন কোন দলের মুখপাত্র বলেন, জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরনে আমরা কাজ করছি, দেশকে রাহু-কেতুর গ্রাস থেকে মুক্ত করতে হবে, বুকের রক্ত দিয়ে (নিজের রক্ত দিবে না) হলেও ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে! আমরা যাদের মনোনয়ন দিবো তাদের পক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, আমরা বিতর্কিত লোকদের মনোনয়ন দিব না। আবার কোন কোন মুখপাত্র বলেন, আমরা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য, দেশ ও জাতির কল্যানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যাদের জনপ্রিয়তা নেই, যারা বিতর্কিত, যারা স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি তাদের মনোনয়ন দেবো না। জাতির কাছে আমাদের আবেদন আপনারাও তাদের বর্জন করুন। কোন কোন জোট বলছেন তারা স্বাধীনতার পক্ষে এবং স্বাধীনতার বিরোধিদের সাথে কোন আপোষ নেই তারাই আবার স্বাধীনতা বিরোধিদের সাথে জোট করে গলায় গলায় ভাব রেখে নির্বাচন করছে। কত স্ববিরোধিতা!
মাদক বাংলাদেশের একটি ভয়াবহ রোগ। আর এই মাদক নিয়ে যার উপর বিশাল অভিযোগ তাকে মনোনয়ন না দিয়ে দেয়া হচ্ছে তার স্ত্রীকে! কথিত সম্রাটকে বাদ দিয়ে এবার মনোনয়ন দেয়া হবে সম্রাজ্ঞীকে। এক হত্যা মামলার আসামীকে মনোনয়ন না দিয়ে দেয়া হবে তার বাবাকে। গডকে বাদ দিয়ে দেয়া হবে গডের ফাদারকে! আদালত কর্তৃক স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলের অনেক নেতা এবার ধান গাছ নিয়ে ভোটের মাঠে দাড়াচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এখানে মাল একই থাকছে, শুধু কোথাও মার্কা বদলাচ্ছে কোথাও ব্যক্তি বদলাচ্ছে। সেই নতুন বোতলে পুরনো মদ!
মাদক সম্রাট বিতর্কিত তাই তার স্ত্রী ভালো! সম্রাটের স্ত্রীকে ধরে জোড়ে ঝুল দিলে তার পেটের ভিতরে মাদক ব্যবসায় অর্জিত অর্থের বিনিময়ে কেনা চালের ভাত ঝনঝন করবে, গায়ে মাদক ব্যবসায় অর্জিত টাকায় কেনা গয়নায় সুর ছন্দ বাজবে। আবার বাপ, ভাই, স্বজনদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে শক্তিবান অপকর্মকারীকে বাদ দিলেই কি অভিযোগ মিথ্যা হয়ে যাবে? স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে যারা নিজেদের প্রচার করেন, তারা কিভাবে স্বাধীনতার বিরোধিদের সাথে কাধে কাধ মিলাবেন? কেউ কেউ বলে, ব্যক্তি দোষী কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরাতো দোষী নয়! তাই যদি হয়, তবে স্বাধীনতা বিরোধিদের সন্তানদের বিষয়ে আপনারা নাক সিটকান কেন? আসলে প্রশ্ন করলে নেতাদের এমন কোন কথা নেই যে কথার উপর সম্পূরক প্রশ্ন আসবে না! সময় এসেছে, বোতল বদলানি থামান। মদকে মদ বলুন, বর্জন করতে চাইলে বর্জন করুন। বর্জন করার কথা বলে আলো আধারিতে চিয়ার্স বলা থেকে বিরত থাকাই ভালো। আম জনতা সবই বুঝে! তারা যে সব বুঝে সেটা শুধু আপনারাই বুঝেন না!

No comments:

Post a Comment