ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Thursday, December 27, 2018

ইসির যুগান্তকারী পদক্ষেপ! নির্বাচনের দিন সকল যান চলালচ বন্ধ!


নির্বাচনের সময়ে নানান বিধিনিষেধ আরোপ করে নির্বাচন কমিশন। এবারও করছে, তাতে কোন মাথাব্যাথা নেই। তবে এবার নির্বাচনের দিন বেশ কিছু বিধিনিষেধ যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসাবে জাতির কাছে বিবেচিত হবে বলে আমার মনে হয়। এমন সিদ্ধান্ত কি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে না কাউকে সন্তুষ্ট করতে তা কিছুটা হলেও অনুমেয়। পানি নিচের দিকে গড়ায় এটাই বাস্তবতা। কিন্তু এবার পানি মনে হয় একটু বেশি গড়গড়িয়ে গড়াচ্ছে।

গত ২০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের যু্গ্ম সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২) এর এক পত্রের আলোকে ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিআরটিএ সংস্থাপন শাখার সহকারী সচিব মোঃ লিয়াকত আলী যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধের বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে বেশি নাখোশ মটর সাইকেলের উপর। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ২৮ ডিসেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১ জানুয়ারি মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত (চারদিন) মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এবং যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ২৯ ডিসেম্বর (শনিবার) দিনগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর (রোববার) মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত সড়কপথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এর আওতায় রয়েছে-বেবি ট্যাক্সি, অটো রিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পু, স্থানীয় পর্যায়ে যন্ত্রচালিত বিভিন্ন যানবাহন। তবে, রিটার্নিং অফিসার অনুমিত সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিলযোগ্য। এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র থাকতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচনে বৈধ পরিদর্শক এবং জরুরি কাজে বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শুধুযে স্থলের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তা নয়, ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্য রাত হতে ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাত ১২ টা পর্যন্ত চলবে না লঞ্চ, ইঞ্জিন চালিত সকল ধরনের নৌ-যান (ইঞ্জিন চালিত ক্ষুদ্র নৌযান বা জনগণ তথা ভোটারদের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত ক্ষুদ্র নৌযান ব্যতীত), স্পীড বোটও।

যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও আরো কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সমন্বয় সভায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী নির্দেশনায় জানায়, নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ছাড়া কেউ মোবাইল নিয়ে ঢুকতে পারবেন না নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছাড়া কেউ মোবাইল নিয়ে ঢুকতে পারবেন না অ্যান্ড্রয়েড তো দূরের কথা ৪০০ গজের মধ্যে কেউ বাটন (ফিচার) মোবাইল নিয়েও ঢুকতে পারবেন না তবে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই বলে তিনি জানান

নির্বাচনের দিন যেভাবে যান চলাচলের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে তাতে মনে কিছু প্রশ্ন জাগে। বর্তমানে মানুষ মোবাইলের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। ভোট দিতে যাওয়া ব্যক্তির স্বজনরা প্রয়োজনে তার কোন খোজ নিতে পারবে না এটা কেমন কথা? ভোট কেন্দ্রে যদি মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে না দেয় তবে বাইরে মোবাইল রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করুক। ডিজিটাল বাংলাদেশে এ কেমন টাল সিদ্ধান্ত বুঝলাম না! আর যান চলাচলে যে ধরনের বিধি নিষেধ জারি করা হয়েছে তাতে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে কিভাবে? সবার বাড়িতো আর কেন্দ্রের পাশে না। নির্বাচনকে বলা হয় ভোট উৎসব। উৎসবের দিন যদি যান চলাচল বন্ধ থাকে তবে মানুষ পায়ে হেটে কতক্ষণ উৎসব উপভোগ করতে পারবে? আমার মত স্থুলকায় মানুষ দশ মিনিট হাটলে পায়ের গোড়ালী ফুলে যায় সেখানে দূর দূরান্ত থেকে কিভাবে পায়ে হেটে ভোট দিতে যাবে ভোটাররা? কমিশনের সিদ্ধান্ত কি ভোটারদের জন্য না অন্য কারো জন্য? অতি উৎসাহী সিদ্ধান্ত সাধারণ জনগণকে কতটা ঝামেলায় ফেলবে সেটা কি একবারও ভেবে দেখেছে? উৎসবের দিন নির্বাচন কমিশন পরিবহন সুবিধা চালু করুক! সহিংসতার অযুহাতে এসব কি? তাহলে নিরাপত্তা প্রশাসন কি করবে, আঙ্গুল চুষবে বসে বসে?

একটি দুষ্ট ছেলের গল্পঃ ছাত্রজীবনে ক্লাশ শুরুর আগে এসেম্বেলী করতে হতো। শিক্ষক বললো-আরামে দাড়াও!
সকল ছাত্র সোজা হয়ে দাড়ালো। এবার শিক্ষক বললো-ডান পা তোলো!
ছাত্ররা ডান পা শুন্যে তুলে বাম পায়ে দাড়ালো। এবার শিক্ষক বললো-বাম পা তোলো!
এক দুষ্ট ছাত্র জিজ্ঞেস করলো-স্যার ডান পা না নামিয়ে বাম পা তুললে দাড়াবো কিসে ভর দিয়ে? আমার চ্যাংগের উপড় ভর দিব?!

আমারও প্রশ্ন-যান চলাচল বন্ধ রাখলে চলবো কি দিয়ে, মোবাইল ফোন বাসায় রেখে আসলে যোগাযোগ করবো কি দিয়ে?

No comments:

Post a Comment