ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Thursday, December 1, 2016

উপলব্ধি

উপলব্ধি
-আসাদুজ্জামান জুয়েল
(বাবা মা হারা সকলকে উৎসর্গ করে)
যার যায় সে-ই বুঝে, বাবা কি মা
তাদের সমান ভবে, কিছু হয় না।
সব কিছু পাওয়া যায়, টাকা আর চেষ্টায়
পিতা-মাতা’র দান যায়না পাওয়া
বুঝা যায় একেবারে শেষটায়।

শাসনের আড়ালে ঢাকা পরে ভালবাসা
ব্যস্ততার অযুহাতে হয়না কাছে আসা।
কেন আসে কেন যায় বিধাতাই জানে
মমতার বাঁধনে বেঁধে, কেন কাছে টানে!
আজ তুমি সন্তান, কাল তুমি বাবা-মা
কাল তুমি চলে যাবে, সেকথা কি ভাবো না?
আজ তুমি হাসো খেলো, কাল তুমি কাদবে
মমতার মায়াজালে ক’জনাকে বাঁধলে?
এ জীবণ চিরদিন এভাবে যাবে না
ভালবাসো এখনই সময় যে পাবে না।
২৫/১১/২০১৬

Thursday, November 10, 2016

জঙ্গি-মঙ্গি কিছুই নয় ইসরাইল শান্তিকামী বিশ্বের জন্য আজরাইল

দেশ এখন আতঙ্কের এক জনপদ। আর আতঙ্কের নাম জঙ্গি। দেশে বিদেশে জঙ্গি মানেই ইসলামিক জঙ্গি! এমন ভাবে মিডিয়া প্রচার করে যেন বিশ্বে আর অন্য কোন ধর্মীয় উগ্রবাদী বা জঙ্গী নাই। আর আমাদেরও দুর্ভাগ্য যেই উগ্রবাদী ধরা পরে, তার নামের আগে থাকে মোহাম্মদ শব্দটা। আবার হামলা শেষে আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে বীর দর্পে চলে যায় বা যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে জঙ্গি মানেই ইসলাম ধর্মের লোক! অথচ সমস্ত বিশ্বেই উগ্রবাদ এখন একটি বিষ ফোড়ার মত যন্ত্রনাদায়ক ব্যধি যা অন্য দেশের মত আমাদের দেশেও আছে। রাজনৈতিক কারনে হোক বা রাষ্ট্রীয় কারনে হোক নাশকতার ঘটনা ঘটার সাথে সাথে কৌশলগত কারনে সরকার তা অস্বীকার করে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে বেশ কিছু অঘটনের জন্ম দেয় জঙ্গিরা। আরো অঘটন ঘরার হুমকি মাথায় নিয়ে ঘুরছি আমরা। হুমকিগুলো সত্যিও হতে পারে আবার এক শ্রেণীর লোকের উড়ো চিঠিও হতে পারে। কিন্তু হুমকিকে তো আর সাধারণ ভাবে নেয়া যায় না। অঘটন না ঘটলেই ভাল, সতর্ক না থাকলে ঘটেওতো যেতে পারে!

সারা বিশ্বে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে হত্যাযজ্ঞ। কেউ গাড়ি চালিয়ে শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। আবার কেউবা গ্রেনেড ফাটিয়ে, কেউবা গুলি ফুটিয়ে, কেউ কেউ আবার ছুড়ি-চাকু-ধারালো অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়ছে নাশকতায়। ঘটনা ঘটিয়ে কেউ পালিয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী পরিবারের-দরিদ্র পরিবারের, আলেম বেশে-জালেম বেশে, শিক্ষক হয়ে-শিক্ষার্থী হয়ে নাশকতাকারীর খাতায় নাম লিখিয়ে চালাচ্ছে হত্যাযজ্ঞ। বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবার মাদ্রাসা থেকে প্যাগোডার সব স্থানেই বিরাজ করছে নাশকতাকারীরা। শুধু দোষ পড়ে ধর্মীয় লেবাসের উপর। সব যায়গায়ই চলে ধর্মের অপ ব্যাখ্যা। নাশকতাকারীরা কেবলই জঙ্গি তাদের কোন ধর্ম নেই। ধর্ম কখনো সাধারণ মানুষ হত্যার অনুমতি দেয় না। এক শ্রেণীর লোভি ধর্মান্ধরা নাশকতার পথ বেছে নিয়ে নিজেদের ধর্মীয় উগ্রবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কলকাঠি নাড়ছে পিছনে বসে ধর্মীয় নেতার বেশে মুখোশধারী কিছু কুচক্রী। তারা বিশ্বের বিশেষ কোন এস্যাইনমেন্ট কার্যকর করছে মাত্র। যে বেশে নিজেদের জাহির করলে কার্য সিদ্ধি করা যাবে সেই বেশই ধারণ করছে। আসলে তারা ধর্মের কেউ না। শান্তি প্রিয় বিশ্ববাসীর শান্তি দেখলে তাদের গা জলে। বিশ্ব বাণিজ্যের বড় পরিবেশক এই মুখোশধারীরা। সাধারণ মানুষ সাধারণ চোখে দেখে, সাধারণ জ্ঞানে তাদের চিনতে পারে না। ফলে তাদের মিঠা কথায় ভিটা খালি করে জড়িয়ে যাচ্ছে উগ্রপন্থায়।  

আমাদের দেশে সম্প্রতি দুজন সমকামী জঙ্গিদের হামলায় নিহত হয়। সাথে সাথে পশ্চিমা বিশ্বের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বিশ্ব মোড়ল তেতে উঠে। ঘটনার নিন্দা, তদন্তের আগ্রহ, নিজের দেশের নাগরিকদের সতর্ক করা সহ নানান পদক্ষেপ নেয়। আমাদের দেশের ঘটনার কিছু দিন পর আমেরিকায় এক সমকামি জঙ্গি সমকামিদের ক্লাবে হামলা চালিয়ে অর্ধশত সমকামীকে গুলি করে মেরে ফেলে। এবার আর ঐ মোড়লদের মুকে কথা ফোটে না। আমাদের দেশের অঘটনের পর সবাই বলে গোয়েন্দারা কি করেছে? তারা কেন আগাম তথ্য পেল না ইত্যাদি। মোড়লদের দেশে এতবড় ঘটনা ঘটলেও তাদের নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে কোন কথা হয় না। তাদের তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান, অস্ত্র-শস্ত্র, সুযোগ-সুবিধা কোন কমতি না থাকলেও নাশকতার কোন পূর্বাভাষ তারা জানতে পারে না, আমাদের দেশের নিরাপত্তা বাহিনী কিভাবে জানবে? আসলে নাশকতাকারীরা মনে মনে যা চিন্তা করে তা কোন প্রযুক্তিতেই ধরা পরে না। আর নাশকতাকারীরা ধর্মীয় লেবাশ নেয়। ভারতে উগ্র হিন্দুবাদীরা যে চিন্তা চেতনা নিয়ে হঠাৎ অঘটন ঘটায় সেটা দেখে কেউ কি ধারনা করতে পারে তাদের মনে এত ঘৃন্য চিন্তা বিরাজ করছে? আমাদের দেশে যাদের আমরা ইসলামীক জঙ্গি বলে আখ্যা দেই তাদের দেখলে কি বোঝার উপায় আছে তাদের মনে এমন ঘৃন্য চিন্তা বিরাজ করছে? করার পর বোঝা যায় তারা কতটা ঘৃন্য মানব রুপি ঘাতক।  

সারা বিশ্বে এত নাশকতা এত হানাহানি এত প্রাণহানী কিন্তু বিশেষ একটা দেশে কোন অঘটন ঘটে না তাহলো ইসরাইল। ইসরাইলের মানুষ কি এতই ধোয়া তুলসি পাতা! তারা কি এতই সতর্ক যে তাদের দেশে কোন অঘটন ঘটার আগেই সতর্ক হয়ে যায়!! আমার তো তা মনে হয় না। ইসরাইলের মত বর্বর জাতি শান্তিকামি বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমাদের জানা নেই। ইসরাইলীরা ফিলিস্তিনের মাটিতে যে পরিমান বোমা ও গুলি বর্ষণ করেছে, যদি না করতো তবে অস্ত্র উৎপাদনকারীদের অস্ত্র নিয়ে কান্না করা ছাড়া কোন উপায় থাকতো না এবং ইসরাইল আজ আর ধরনীর উপর থাকতো না, অস্ত্রের ভারে দেবে সাগরের তলদেশে দিয়ে ঠেকতো। ইসরাইলীরা ফিলিস্তিনের যে পরিমানের নারী-শিশু-সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে এর বিচার হলে সমগ্র ইসরাইল জাতিকে একাধিকবার ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে হবে। যে জাতি নারী-শিশু কাউকেই বাদ দেয় না তারা এত সাধু আর সতর্ক হয় কি করে? ইসরাইলের মত ছোট্ট একটি রাষ্ট্র কিভাবে এত সাহস পায়? 

বিশ্বে বড় বড় অঘটন যা হয়েছে তা জানে না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। বলদেও জানে আমেরিকায় দুইটা জোড়া বিল্ডিং বিমান দিয়া ভাইঙ্গা দিছে জঙ্গিরা। আমেরিকার ঐ টুইন টাওয়ারে হামলা হলো। হাজার হাজার মানুষ মারা গেল। বিশ্বের এমন কোন দেশ নাই যেই দেশের দুই চার দশ জন করে নাগরিক মারা যায় নাই। সব দেশের মানুষই মারা গেছে শুধু ইসরাইলের কোন নাগরিক মারা গেছে তা শোনা যায় নাই। লাদেনকে জ্ঞানীগুনিরাই কিছুটা চেনতো আর চেনতো আমেরিকা। টুইন টাওয়ার ভাঙ্গা হলো বিমান দিয়ে, নাম হলো লাদেনের! ঘোষণাও দিল লাদেন যে সেই ভাঙ্গিয়েছে। গোপন জায়গা থেকে টেপ আসে, দাড়ি পাগড়িওয়ালা একজন ঘোষণা দেয়, বাহবা জানায়, আর আমেরিকার সুরসুরি বাড়ে! এবার শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। নিরপরাধ মানুষ মেরে জঙ্গি দমনের নামে একের পর এক দেশ ধ্বংশ করে নিজেদের মানবতা প্রতিষ্ঠা করে আমেরিকা। দীর্ঘ দিন পরে আবার স্বীকারও করে যুদ্ধ করাটা ভুল ছিল। কিন্তু ভুলের মাসুল দেয় না। ভুলের মাসুল গুনতে হয় সাধারণ জনগনকে। টুইন টাওয়ার হামলার পর যা ঘটেছে সবারই জানা আছে, আফগানের সুন্দরী বউ আমেরিকার ভাবি!! আফগানে যত সম্পদ আছে সব লুন্ঠন করা শেষে লাদেন গেল পাকিস্তানে। এর পরও আমেরিকা নিজেদের মানবতার প্রতীক হিসাবে নিজেদের জাহির করে, সাধু সাজে। একটি গল্প বলি, এক ব্যক্তি সারা জীবন মানুষের বাড়ি বাড়ি চুরি করেছে। চুরিই ছিল তার পেশা। সেই চোর মৃত্যুশয্যায়। শয্যাপাশে তার সন্তানেরা। চোর তার সন্তানদের ডেকে বললো, বাবারা, আমিতো সারা জীবন মানুষের বাড়ি বাড়ি চুরি করেছি যা তোমরা জান এবং তোমরা আমাকে সব সময় সহযোগীতাও করেছো। আমি আর বেশিক্ষণ মনে হয় তোমাদের মাঝে নাই। সময় হয়ে গেছে। তোমরা দুনিয়ায় এমন কাজ করবে যাতে সবাই আমায় ভাল বলে। এই বলে কিছুক্ষণ পর চোর মারা গেল। শোক কাটিয়ে উঠে চোরের সন্তানেরা চিন্তা করে কি এমন কাজ আমরা করতে পারি যাতে বাবাকে মানুষ ভাল বলবে! তারা এতদিন বাবার সাথে চুরিতে সহযোগীতা করত। বাবা মারা যাওয়ার পর এখন তারাও চুরি করা শুরু করেছে। একদিন ভাইয়েরা মিলে আলোচনায় বসল। সবাই মিলে চিন্তা ভাবনা করলো, কি কাজ করলে মানুষ বাবাকে ভাল বলতে পারে। চিন্তা ভাবনা শেসে এবার তারা চুরি ছেড়ে ডাকাতি শুরু করলো। কয়েক দিন ডাকাতি করার পর মানুষের মুখে বাবা সম্পর্কে ভাল কথা শুনতে না পেয়ে এবার কাজের ধরণ পরিবর্তন করলো। সবাই মিলে ডাকাতি করা শেষে বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে দেয় এবং ঘরে যুবতী মেয়ে, বাড়ির বউদের পালাক্রমে ধর্ষণ শুরু করলো। এবার ফল পেল নগদে! সবাই বলাবলি করছে, আহারে! ওদের বাবা কত ভাল মানুষ ছিল! শুধু চুরি করতো! আর তার ঘরে কি কুলাঙ্গার হয়েছে, ডাকাতি করে, ডাকাতি শেষে ঘরে আগুন দেয়, জুয়ান বুড়া মানে না, ধর্ষন করে। ওদের চাইতে ওদের বাবা অনেক ভাল ছিল। আমেরিকাকে আমরা ভাল বলি। কিন্তু আমেরিকা সেই চোর যার সন্তান ইসরাইল ডাকাতি শেষে ঘরে আগুন দেয় এবং গুরা-বুড়া মানে না ধর্ষন করে। 

যা হোক, আমেরিকা পাকিস্তানের যেখানেই হামলা করা দরকার লাদেন সেখানেই যায়! পাকিস্তানিরাতো এক বিচি ফেলে দেয়া বলদের মত। ওটা না আবাল না দামড়া। আমেরিকাকে সুযোগ দিয়ে নিজেদেরই অস্তিস্ব সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। নিজেরাই এখন একটি জঙ্গি রাষ্ট হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। আর জঙ্গি দমনের নামে সাধারণ মানুষ মেরে আমেরিকা হয়েছে মানবতার দেশ! 

আমেরিকা হলো সেই দেশ যে, ইসরাইলকে দিয়ে কার্য সিদ্ধি করে নিজেই আবার মলম নিয়ে দৌড়ায়। ইসরাইলকে দিয়ে বিশেষ এসাইনমেন্ট এক্সিকিউট করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে নিজের দেশেও দু’একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যা নিরবে সহ্য করছে। কিন্তু ইসরাইল থাকছে ধরাছোয়ার বাইরে। ফেসবুকের কারনে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। সমর্থিত, অসমর্থিত নানা উৎস হতে তথ্য ভেষে বেড়ায় অনলাইনে। এমন অনেক তথ্যের মধ্যে যে তথ্য ভেষে বেড়াচ্ছে তা হলো আজকের এই আইএসআইএস আমেরিকারই সৃষ্টি! আইএসআইএস এর অন্যতম শ্রষ্টাদের মধ্যে ইসরাইলের প্রাধান্যই বেশি। তবে তারা পানির মত। পাত্রে স্থান নেয়ার সাথে সাথে সেই পাত্রের রূপ নেয়। আইএসআইএস যেহেতু ইসলাম এর নাম ব্যবহার করে, তাই ইসরাইলীরা ইসলাম পন্থির রূপ ধারণ করে থাকতে পারে। বাংলাদেশেও অনেক জঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে বা যাদের খোজা হচ্ছে তাদের তালিকায় নব্য ইসলাম গ্রহণকারীর আধিক্য বেশি। মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী, হুরের জন্য মরতে রাজী। জঙ্গিদের কাছে এমন এক মস্তিস্ক প্রক্ষালন যন্ত্র আছে যা দিয়ে মাথা এমন ভাবে ওয়াশ করা হয় যে, যা শেখানো হয় তাই বলে। তাদের মাথায় জেহাদ, জেহাদ আর জেহাদ!! কারন জেহাদে মরলে শহীদ, শহীদ বিনা হিসাবে বেহেস্তে, আর বেহেস্তে হুরের ব্যবস্থা!! তাহলে দুনিয়ায় থেকে কি লাভ, জেহাদে জাব (নাশকতায়), শহীদ হব (অপারেশন থান্ডার বোল্টে গুলি খেয়ে মরব) এই হলো তাদের দর্শণ। পবিত্র কোরআন এসব তথাকথিত শহীদরা পড়ে বা বুঝে বলে মনে হয় না। পড়লে বা বুঝলে এমন কাজে পা বাড়াতো না।

ইসলামের লেবাসে নাকি অনেক ইসরাইলী মোসাদের সদস্য জঙ্গি সদস্য হিসাবে নাম লিখিয়েছে! জঙ্গি মরে কিন্তু ইসরাইলী বাংশোদ্ভুত কোন জঙ্গি মরেছে শোনা যায় নাই। তাই জঙ্গি-মঙ্গি কিছ্ইু না। আমেরিকার ইশারায় ইসরাইলীরা বিশেষ এসাইনমেন্ট এক্সিকিউট করছে এমনটাই ধারনা পাওয়া যাচ্ছে ইন্টারনেট বিশ্বে! ইসরাইলই আজরাইল শান্তিকামী বিশ্বের জন্য!!
২৬-০৭-২০১৬

Tuesday, October 11, 2016

ভাল ঋণ-মন্দ ঋণ ব্যাংকার ও আইনজীবীর দায়

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান পন্য হলো ঋণ আপনি-আমি বিশ্বাসের সাথে টাকা জমা রাখি ব্যাংকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমাদের জমানো সেই আমানতের বিনিময়ে সুদ বা মুনাফা যে নামেই ডাকি না কেন পেয়ে থাকি সেই সুদ বা মুনাফাটা দেয় কোথা থেকে? আমাদের আমানতের টাকা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে বিনিয়োগ থেকে আসা লভ্যাংশ বা সুদ বা মুনাফার একটা অংশ আমাদের দেয় আর বাকীটা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটায় যেহেতু আমানতের টাকা বিনিয়োগ করে মানে ঋণ দেয় সেক্ষেত্রে ব্যাংক ঝুকি নেয় এই ঝুকির প্রকৃয়ায় কে কে জড়িত, কার কতটুকু দায় সেটাই বিবেচ্য বিষয়
ঋণের সাথে জড়িত জামানত, জামানত হিসাবে সবচেয়ে ভাল বস্তু জমি, জমির সঠিকতা যাচাইয়ে দরকার আইন জানা লোক মানে আইনজীবী, আর সেই কাজটা করেন ব্যাংকের মনোনিত প্যানেল আইনজীবী বা আইন উপদেষ্টা আমি যেহেতু একজন আইনজীবী, সাথে বিভিন্ন ব্যাংকের মনোনিত প্যানেল আইনজীবী বা আইন উপদেষ্টা, তাই ভাল ঋণ-মন্দ ঋণের বিষয়ে আমার নিজস্ব কিছু মতামত সকলের সাথে শেয়ার করতে চাই
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পন্য ঋণ বা লোন আর ঋণ বিক্রি অন্য সকল পন্য বিক্রির মত নয় অন্য সকল পন্য ক্রেতাকে দিতে বা গছিয়ে দিতে পারলেই বিক্রেতার দায়িত্ব অনেকাংশে শেষ কিন্তু ঋণ এমন পন্য যা বিক্রয়ের পরে বিক্রয়োত্তর সেবা-সুশ্রসা করতে হয় ঋণ গ্রহীতা বা লোনের ক্রেতা ভাল থাকলে ঋণ ভাল ঋণের ক্রেতা যদি ভাল না থাকে তবে ঋণ ভাল থাকবে না মন্দ ঋণে বা ক্লাসিফাইড লোন হয়ে যাবে
একটি ঋণ বা লোন বিক্রয় করার পূর্বে ক্রেতা সম্পর্কে অর্থাৎ ঋণ গ্রহীতা সম্পর্কে ব্যাংকের ভাল ধারনা থাকতে হবে ব্যাংক অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি সম্পর্কে ভাল ভাবে খোজ নিয়ে একটা সুন্দর মধুর সম্পর্ক তৈরী করে ঋণ নিতে আগ্রহী ব্যক্তির একটি হিসাব খুলে লেনদেন করতে বলা বা পূর্বের খোলা হিসাবের হিসাব বিবরণী (স্টেটমেন্ট) বা লেনদেন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা আমার বন্ধু বিশিষ্ট ব্যাংকার মোঃ কামরুজ্জামান মিন্টু সবসময় বলতেন, একটি ভাল ঋণ হলো সুখি মানুষের জামার মত সারা রাজ্য ঘুরে যেমন সহজে সুখি মানুষের জামা মেলে না তেমনি ভাল ঋণ গ্রহীতাও মেলা ভার বন্ধু সবসময় বলতো, লেনদেন প্রতিবেদন দেখে ব্যাংক সন্তুষ্ট হলে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তির ( সি) ) (1) Character, (2) Capital, (3) Condition, (4) Collateral (5) Capacity অর্থাৎ ) চরিত্র, ) মূলধন, ) অবস্থা, ) জামানত ) সক্ষমতা এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা খুবই জরুরী একটা মানুষ চরিত্রবান না হলে তার বাকী পাঁচটি গুণ থেকেও লাভ নেই আর ঋণ গ্রহীতার মূলধন কেমন আছে, তার বর্তমান অবস্থা কেমন, ঋণ গ্রহণ করে সে তা সুদাসলে ফেরত দিতে পারবে কিনা, তার জামানত কেমন, তার সক্ষমতা আছে কিনা এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা শেষে যদি মনে হয় ভাল হবে তবেই ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে জামানত হিসাবে বন্ধক রাখার জন্য মূল্যবান জমির কাগজপত্র সংগ্রহ করে ব্যাংক মনোনিত একজন প্যানেল আইনজীবীকে দেন প্যানেল আইনজীবী কাগজপত্র ভালভাবে দেখে চেইন ডকুমেন্টস (জেনোলজি) মিলিয়ে জমির মালিকানা স্বত্ব নির্ধারণ করে একটি আইনগত মতামত প্রস্তত করে ব্যাংক বরাবর প্রেরণ করেন পর্যায়ে আইনজীবী সাহেবের প্রাথমিক কাজ শেষ এর পর ব্যাংক আইনজীবী সাহেবের দেয়া মতামতের কাগজ নিয়ে নিজেরা এবং থার্ড পার্টি (কোন সার্ভে প্রতিষ্ঠান) দিয়ে জমির মূল্যায়ন (ভ্যালুয়েশন) করেন অনেক ব্যাংক একজন প্রকৌশলী দ্বারা মূল্যায়ন করে থাকেন জমির মূল্য নির্ধারন করে দুই ভাবে একটি হলো জমির বাজার মূল্য জমির তৎক্ষণি বিক্রয় মূল্যমান (ফোর্স সেল ভ্যালু) নির্ধারণ করা অর্থাৎ জমির স্বাভাবিক বাজার মূল্য কত এবং তাৎক্ষণিক ভাবে বিক্রি করতে চাইলে কত টাকা বিক্রি করা যাবে তা নির্ধারণ করা তাৎক্ষণিক বিক্রয় মূল্যমান (ফোর্স সেল ভ্যালু) যা নির্ধারণ করা হয় তা থেকে অনেক কম অর্থাৎ নিরাপদ দুরত্বে থেকে ঋণ গ্রহনে আগ্রহী ব্যক্তিকে ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকেন
গ্রাহক এর নিকট থেকে সংগৃহীত কাগজপত্র ব্যাংক আইনজীবীর কাছে সরবরাহ করে, সেই সরবরাহকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করেই একজন আইনজীবী তার আইনগত মতামত দিয়ে থাকেন গ্রাহক যে কাগজপত্র সরবরাহ করলো (যেমন-বিভিন্ন খতিয়ানের পর্চা, মূল দলিল, মূল দলিল না থাকলে সইমোহরকৃত দলিল, খাজনার দাখিলা, ডিসিআর এর কপি, নির্দায় সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, জাতীয় পরিচয় পত্র, ওয়ারিশ সনদ ইত্যাদি) সেই কাগজপত্র সঠিক আছে কিনা বা জাল কিনা তা যাচাই-বাছাই করার জন্য ব্যাংকের লোনস এন্ড এডভান্স এর অফিসার ভেটিং সার্চিং এর কাজ সম্পন্ন করে ভেটিং সার্চিংয়ের কাজ ব্যাংক নিজেই তার অফিসার দিয়ে বা কোন থার্ড পার্টি দিয়ে বা আইনজীবীর মাধ্যমে বা অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দিয়ে করতে পারেন বা করেন সার্চিংয়ের কাজটি করার জন্য জেলা রেকর্ড শাখা, জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস, সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস, স্থানীয় ভূমি অফিস, ইউনিয়ন বা পৌরসভা, আয়কর অফিস, নির্বাচন অফিস সহ সংশ্লিষ্ট অফিস সমূহে যোগাযোগ করে তল্লাশির মাধ্যমে নিজ চোখে দেখে মূল্যায়ন দলিলপত্রের সঠিকতা যাচাই করে থাকেন 
ব্যাংকে অনেকেই জাল টাকা নিয়ে আসেন, ব্যাংকাররা সেই জাল নোট অনেক সময় ধরতে পারেন না, দিন শেষে হয় টাকা বান্ডিলে ঢুকে গ্রাহকের কাছে চলে যায় আর ধরা পরলে জমা দিতে আসা ব্যক্তির কাধে বা পরে ধরা পরলে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার ঘারে দায় চাপে ঠিক তেমনি, দলিল সঠিক না জাল, মিউটেশন ঠিক আছে কি নাই, খতিয়ানের পর্চা সঠিক না টেম্পারিং করা, খাজনা দাখিলা, ডিসিআর কপি, নির্দায় সনদ, ওয়ারিশ সনদ ইত্যাদি ইত্যাদি কাগজপত্র যাচাই করার জন্য বেশিরভাগ সময়ই আইনজীবীর পক্ষে তহশিল অফিস, এসিল্যান্ড অফিস, জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস বা সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস, ইউনিয়ন বা পৌরসভা কোথাও যাওয়া সম্ভব হয় না এবং যাওয়ার কথাও না
একটা আইনগত মতামত এর জন্য আইনজীবীকে ব্যাংক (লোন গ্রহীতার কাছ থেকে নিয়ে) দুইশত টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে এই সামান্য টাকার বিনিময়ে আইনজীবীকে পাঁচ থেকে দশ পাতার (ক্ষেত্র বিশেষ আরো বেশি) একটি আইনগত মতামত দিতে হয় এই সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আইনগত মতামতের সাথে সার্চিং ভেটিং কেউ আশা করে না এবং কেউ দেয়ও না সার্চিং ভেটিং এর কাজ আইনগত মতামতের সাথে সংযুক্ত নয় এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়
একটা ঋণের ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক ব্যাংকে আসলো, কাগজপত্র দিল, আইনজীবী আইনগত মতামত দিয়ে দিল আর ব্যাংক গ্রাহককে শত কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দিলো এমনটা নয় ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি ব্যাংকে হিসাব খোলেন, লেনদেন করেন, লেনদেনের মাধ্যমে তার বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যাংক তার নৈতিক চরিত্র, তার ব্যবহার, তার ব্যবসা, তার প্রয়োজন, তার লেনদেন তার ঋণ ধারণ পরিশোধের ক্ষমতা ইত্যাদী নানান বিষয় ব্যাংক পরীক্ষা করে তাকে ঋণ দেয়ার কথা চিন্তা করে গ্রাহকের নিকট থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করেন দীর্ঘ লেনদেন করার পরেও যে ব্যাংকার প্রতারক গ্রাহককে চিনতে পারলো না সেই গ্রাহককে কয়েকটি কাগজ দিয়ে কিভাবে চিনবে আইনজীবী? একটি নকল দলিল তো আসল ষ্ট্যাম্পে তৈরী করে, একটা নকল মিউটেশন তো আসল সিল মোহর দিয়েই তৈরী করে হাজার হাজার কর্মকর্তার স্বাক্ষর কি আইনজীবী সাহেবের চেনা? আর কাগজ জাল হোক আর আসল হোক উকিলের কাজ চেইন ডকুমেন্টস মিলিয়ে দেখা কাগজের সঠিকতা প্রমান করবে যার উপর সার্চিং ভেটিং এর দায়িত্ব সেই কর্মকর্তার বা ব্যক্তির
এবার বলি ঋণ কিভাবে খারাপ হয় সে বিষয়ে আমার ধারনা আমার সামান্য অভিজ্ঞতায় দেখেছি গ্রহীতাকে ঋণ দিয়ে অনেক ব্যাংক আর কোন খবর রাখে না ঋণ পাস হওয়ার পর সেই ঋণ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সে নিয়মিত লেনদেন করবে, কিন্তু অর্থঋণ মামলা করার সময় ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখেছি ঋণ পাস হওয়ার পর চেকের এক পাতা খরচ করে পুরো টাকা তুলে নিয়ে আর কোন যোগাযোগ করেনি এবং লেনদেনও করেনি ঋণ দেয়ার পর ঋণের কোন পরিচর্যা করেনি পরিচর্যা ছাড়া কোন কিছু কি ভাল হয়? পরিচর্যা ছাড়া কি কোন ভাল ফল পাওয়া যায়? পরিচর্যা ছাড়া বাগানে তো আগাছাই জন্মাবে তাই না? গ্রাহক কেন ব্যাংকে আসছে না, কেন লেনদেন করছে না, সেকি নিঃশেষ হয়ে গেছে? গেলে তাকে কিভাবে সহযোগীতা করে আবার দাড় করিয়ে টাকাটা আদায় করা যায়? সেই বিষয়ে ব্যাংকের অনেক দায়িত্ব আছে যা ব্যাংকারগণ করে না তারাতো অনেক ক্ষেত্রে ঋণ দিয়েই খালাস!!! ফলে ঋণ আর আদায় হয় না, ব্যাংকের গুনতে হয় শতকোটি টাকার লোকসান
অনেকে ব্যাংকের সেই লোকসানের দায় দিতে চান আইনজীবীর উপর যে কিনা মাত্র দুইশত পঞ্চাশ টাক থেকে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে আইনগত মতামত দিয়েছেন মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে যে ব্যাংকারদের রাখা হয়েছে তদারকির জন্য তারা কি দায়ী নয় এই লোকসানের জন্য? কেন একজন বাজে লোককে ঋণ দেয়া হলো? কেন ঋণ দেয়ার পর তদারকি করা হলো না? ঋণের বন্ধকি দলিলে অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিলে তো লিখে নিলেন আইনজীবীর মাধ্যমে যে, যে কোন সময় তদারকির জন্য ব্যাংককে তার ব্যবসা বাণিজ্য, গোডাউন, প্রকল্প পরিদর্ন করতে দিতে বাধ্য থাকিবেন আইনজীবী শত টাকার পারিশ্রমিক নিয়ে শত কোটি টাকার দায় কিভাবে নেবে? আসলে অন্যের ঘারে দায় চাপানোটা আমাদের অভ্যাষে পরিনত হয়ে গেছে
আবার অনাদায়ী ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংক অর্থঋণ আদালতে মামলার মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয় অনেকে মনে করেন, আইনজীবী মামলায় সময় নিয়ে ঘুরায় এবং সময় ক্ষেপণ করেন আসলে কথাটা সত্যি নয় আমি বেশ কিছু মামলা পরিচালনা করেছি এবং এখনও করছি আমার যে ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে তা থেকে বলছি, প্রত্যেক ব্যাংকই আইনজীবীকে ব্যাংকের নির্ধারিত সিডিউল দেখে বিল প্রদান করেন একটা মামলার জন্য বিভিন্ন বিষয় মিলে একটা বিল হয়ে উদাহরণ হিসাবে বলি, একটা মামলা পরিচালনার জন্য একশত টাকা বিল হলো পচিশ টাকা মামলাটা দায়ের করার পর আইনজীবীকে দেয়া হবে এর পর চুড়ান্ত শুনানীর আগে আরো পচিশ টাকা দিবে বাকী পঞ্চাশ টাকা দিবে রায় পাওয়ার পর এই মামলাটা যদি দশটা তারিখ ঘুরে নিষ্পত্তি হয় তাতে আইনজীবীকে একশত টাকাই দেবে দশটা টাকাও বেশি দেয়া হবে না আর যদি একশতটা তারিখ ঘুরে মামলাটি নিষ্পত্তি হয় তাতেও দশটা টাকা বাড়াবে বা কমাবে না টাইম পিটিশন বা হাজিরার জন্য কোন ফি ধার্য নাই মামলা দায়েরের সময়ই বিলের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায় দশ দিনে মামলা শেষ হলে একশত টাকা আবার দশ বছর ঘুরে নিস্পত্তি হলেও একশত টাকা তাই মামলাটা ঘুরিয়ে আইনজীবীর কোন লাভ নাই বরং লস, দ্রুত নিস্পত্তি করতে পারলে পকেটে অবশিষ্ট টাকাটা আসবে, নিস্পত্তি যত দেরিতে বিল তত দেরিতে আর নিষ্পত্তি হলে বরং জারি মোকদ্দমার উদ্ভব হবে, আইনজীবী আবার নির্ধারিত ফি পাবে, নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জারি মোকদ্দমার উদ্ভব হবে না এবার বুঝুন এখানে আইনজীবীর কি কোন লাভ আছে? তাই অহেতুক দোষারোপ করে আইনজীবীকে হেয় করে কি লাভ?
আমি কিছু ব্যাংকের ঋণের বিষয় জানি ব্যাংকিং ব্যবসায় প্রধান প্রোডাক্ট কি, সবাই জানে ঋণ বা লোন, যা আগেও আলোচনা করেছি ব্যাংক লোন সেল করে এক সময় কিছু ব্যাংকের লোন সেল করতো ব্যাংকটির একটি ব্রাঞ্চের সামনের কয়েকজন দোকানদার কারো দুই লাখ টাকা ঋণ চাই, দোকানদার বললো, দুই লাখ নিবি কিরে! তোকে দশ লাখ তুলে দেই!! ব্যবসায়ী দুই লাখ খরচ করে দশ লাখ টাকা ব্যাংকের কাছ থেকে কিনে নিলো!! সেই যে গেল আর ফিরে এলো না!! ব্যবসায়ীর কথা, কে টাকা ফেরত দেব? আমিতো লোন কিনছি? কিন্তু তার অনৈতিক কথা কি আইন শুনবে? পরবর্তীতে কি হলো, সেই বিক্রয়কৃত ঋণের গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলো অতঃপর জমি বিক্রয় করে, জেল খেটে বিভিন্ন ভাবে ঋণ পরিশোধ করলো, আবারও সহযোগীতা করলো সেই আইনজীবী!!
আইনজীবীদের কাজের উপর মহামান্য হাইকোর্ট বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আইনজীবীগণ যেহেতু প্রদত্ত কাগজের উপর মূল্যায়ন করেন তাই একজন আইন উপদেষ্টা তার আইনগত অভিমতের জন্য দায়ী নয়
প্রসঙ্গে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হক এবং বিচারপতি মোঃ নুরুল ইসলাম কর্তৃক আব্দুস সামাদ বনাম রাষ্ট মামলার [BLC (1996) page 63] জাজমেন্টে বলেছেন, “A Legal Adviser cannot be made liable for the offence of forgery and criminal breach of trust for giving his legal opinion.”
অনেকতো বললাম, এবার বাস্তবতায় আসি বাস্তবকে অস্বীকার করার ক্ষমতা কারো নেই, আমারতো নেই- বাস্তব ঘটনা হলো ভালো মন্দ সব জায়গায়ই আছে ভাল ব্যাংকার যেমন আছে তেমনি ভাল আইনজীবীও আছে খারাপ ব্যাংকার যেমন আছে তেমনি খারাপ আইনজীবীও আছে ভাল ঋণ গ্রহীতা যেমন আছে, তেমনি ঋণ গ্রহীতা খারাপও আছে সবাই সমান নয়, ভাল মন্দ সবজায়গায়ই বিরাজমান আইনগত মতামত দেয়ার ক্ষেত্রে, বন্ধকনামা দলিল, অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিলসহ বিভিন্ন দলিল পত্র মুসাবিদা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে আইনজীবীকে সততার তপ্ত কড়াইয়ের উপর বসে বরফ শীতল ঠান্ডা মাথায় যেমন কাজ গুলো করা উচিত তেমনি ব্যাংকারদের উচিত সঠিক গ্রাহক বাছাই করা, গ্রাহককে যথাযথ পরিচর্যা করা, গ্রাহক কর্তৃক সরবরাহকৃত তথ্য, উপাত্ত, দলিল দস্তাবেজ ভালভাবে যাচাই বাছাই করা এবং সত্যিকারের ব্যবসায়ী-গ্রাহককে ঋণ দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা দেশের অর্থনীতিকে সবল রাখা
আমার এই লেখা কোন সাফাই গাওয়ার জন্য নয় ব্যাংকার গ্রহকদের মনে কষ্ট দেয়ার জন্যও নয় বাস্তবতার আলোকে আমার পর্যবেক্ষণ পাঠকের সাথে শেয়ার করলাম মাত্র আমার লেখায় কেউ মনে কষ্ট পেলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত