ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Tuesday, October 30, 2018

রোগের নাম ‘আস্থা সংকট’ ‘সংলাপ’ ঔষধে কি সারবে?

দেশে এখন এক ভয়াবহ রোগের প্রকপ চলছে। রোগের নাম হলো ‘আস্থার সংকট’। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না, কারো প্রতি কারো আস্থা নেই। এ অবস্থায় সংলাপ নামের ঔষধে কি অসুখ সারবে? আমার মনে হয় না সারবে।
বেশি পুরনো ইতিহাস ঘেটে লাভ নেই। পুরাতন কাসুন্ধি ঘাটা অনেকেই পছন্দ করে না। এরশাদ সাহেব দীর্ঘদিন স্বৈর শাসন চালিয়েছিলেন। তার শাসনামল কেমন ছিলো তার বিচার জনগন করবে এবং করছে। এরশাদ সাহেবের শাসন অনেকে এখনও পছন্দ করেন, অনেকে করেন না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রধান দুটি দলের একটি দলও তার শাসন পছন্দ করেননি। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যপক আন্দোলন করে এরশাদ সাহেবের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা কায়েম করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দ্বারা নির্বাচন পরিচালনা করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হলো। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় স্লোগান দিত ‘এই মূহুর্তে দরকার, কেয়ার টেকার সরকার, এই মূহুর্তে দরকার, তত্বাবধায়ক সরকার’। কেয়ার টেকার বা তত্বাবধায়ক সরকার হিসাবে প্রথম চালকের আসনে বসলেন তৎকালীন সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করলে আওয়ামীলীগ এই নির্বাচনে সুক্ষ কারচুপির অভিযোগ তোলে। মেয়াদ শেষে নিয়ম রক্ষার ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর অল্প সময় টিকেছিলো বিএনপি সরকার। ক্ষমতা ছাড়ার পূর্বে বিএনপি সরকার তত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত আইনগত বেশ কিছু অসঙ্গতি সংশোধন করে যায়। ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের সর্ব প্রথম সংবিধান সম্মত তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সপ্তম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করলে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান অষ্টম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় ঐক্য জোট সরকার গঠন করে। আওয়ামীলীগ এই নির্বাচনে স্থুল কারচুপির অভিযোগ তোলে। ২০০৬ সালে চতুর্থ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। প্রথমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। চার জন উপদেষ্টার সাথে প্রধান উপদেষ্টার মতনৈক্যর কারনে পদত্যাগ করলে নতুন চার উপদেষ্ঠার নিয়োগ দিলেও নির্বাচন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন এবং এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি তখন দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে নতুন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে তিনি ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সরকার পরিচালনা করে নবম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করলে আওয়ামীলীগ জোট সরকার গঠন করেন। ১০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হয় ক্ষমতায় থেকেই। এ নির্বাচনে নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসা, গণতান্ত্রীক সরকার গঠন ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিতর্ক পিছু ছাড়বে না বলেই মনে হচ্ছে। সরকারী দল বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখতে নানা কৌশল, অপকৌশল ব্যবহার করে থাকে যা হয়তো রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু কোন দলই কোন দলকে বিশ্বাস করে না। এমনকি তত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিও কারো বিশ্বাস নেই। আওয়ামীলীগ-বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলো একসময় তত্ববধায়ক সরকার চেয়ে আন্দোলন করেছিলো। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তাদের কাছে মনে হলো তত্বাবধায়ক সরকারও নিরপেক্ষ নয়। বিএনপি নেত্রীর ভাষায় ‘একমাত্র পাগল ও শিশু ছাড়া কোন মানুষের পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়।’ আওয়ামীলীগও কম যায় না, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর বলে বসলো সুক্ষ কারচুপি হয়েছে আর ২০০১ সালের নির্বাচনে স্থুল কারচুপি হয়েছে। নির্বাচনে একদল জিতবে, আরেক দল হারবে এটাই বাস্তবতা। কিন্তু কোন দলই তত্বাবধায়ক সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারেনি। ঘটনা চক্রে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করলে বিএনপি জোট আবার তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে মাঠে নামে। বিএনপি জোট এখন বলছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। যারাই একসময় তত্বাবধায়ক সরকারকে নিরপেক্ষ ভেবেছিলেন তারাই ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টে ফেলছেন। দেশে নিরপেক্ষ ব্যক্তি নেই তা নয়। আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একে অপরের প্রতি আস্থাই নেই। রাজনৈতিক নেতাদের ‘আস্থার সংকট’ নামক রোগে ধরেছে।
দশম জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামীলীগ সরকার বিএনপিকে সংলাপে ডেকেছিলো। কিন্তু সেই সময় বিএনপি দলীয় নেত্রী সংলাপে যায়নি। সময় বিএনপির জন্য যেমন বসে থাকেনি আওয়ামীলীগের জন্যও নয়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যেমন বিএনপি নির্বাচন করে ফেলেছিলো তেমনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামীলীগও নির্বাচন করে ফেলেছে। বিএনপি তখন টিকে থাকতে পারেনি, আওয়ামীলীগ টিকে গেছে এই যা পার্থক্য। এখন একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জোট সংলাপের জন্য আকুতি মিনতি করায় আওয়ামীলীগ সংলাপের আয়োজন করেছে। কিন্তু সংলাপে কি আদৌ কিছু হবে। একটা গল্প শুনেছিলাম, একজন বলেছে আমাকে যে বুঝাতে পারবে তাকে পালের বড় গরুটা দিয়ে দিব। পাশ থেকে ঐ লোকের চামচা বললো, আপনি এতবড় গরুটা দিয়ে দিবেন? তখন বলেছিলো, আরো বোকা, আমি বুঝলেতো আমায় বুঝাবে! আমি বুঝবোও না আমার গরুও দিব না। তেমনি সংলাপে আলোচনা হবে, খাওয়া দাওয়া হবে, কুশলাদি বিনিময় হবে। রেজাল্ট যা হবে তা বিএনপি জোটেরও পছন্দ হবে আর তাদের দাবি আওয়ামীলীগেরও পছন্দ হবে না। যা হবে তা কয়েকদিনের ভিতরই মানুষ দেখতে পাবে। তাই ‘সংলাপ’ নামের ঔষধে ‘আস্থার সংকট’ রোগ সারবে না।

No comments:

Post a Comment