ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Wednesday, July 13, 2016

কুকুর-বিড়াল-বৃদ্ধ-মহিলা-শিশু-গরু-গন্ড মূর্খ দেখলে সাবধান!!

যারা গাড়ি চালান অর্থাৎ বাই সাইকেল থেকে শুরু করে ভারী যানবাহন (রেল গাড়ি ছাড়া!) তারা সবসময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকেন। নিজেতো সতর্ক থাকেনই শুভাকাক্সিখদের, পরিচিত জনদেরও সর্বদা সতর্ক করেন।
সবসময় বলেন, সাবধানে গাড়ি চালিও! যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে! সতর্ক দৃষ্টি রাখবা গাড়ি চালানোর সময়!
রাস্তা দেখে শুনে চলবা! হঠাৎ কোন কিছু সামনে চলে আসতে পারে বা পিছন থেকে ধাক্কা দিতে পারে তাই দেখে শুনে চলবা।
কুকুর বিড়াল থেকে সাবধান! যে কোন সময় গাড়ির সামনে কুকুর বিড়াল চলে আসবে। কুকুর বিড়ালের লোমের কারনে সহজে গাড়ির চাকা তাদের উপর দিয়ে উঠে না। আর যদি উঠেযায় তবে চাকা পিছলে গিয়ে দুর্ঘনটা ঘটে থাকে তাই সাবধান থাকা জরুরী।
গরু ছাগল কিন্তু আৎকা দৌর মারে!! গরু ছাগল রাস্তায় চলার সময় ডান বাম দেখে না। চিন্তা ভাবনার ক্ষমতা যেহেতু তাদের নাই তাইতো তাদের বলদ বলে। সেই গরু ছাগল দেখে শুনে চলবা।
বুড়া মানুষ কিন্তু কানে কম শোনে!! বৃদ্ধ মানুষ কানে কম শোনে। শারীরিক অক্ষমতার কারনে সে দ্রুত রাস্তা পারাপার হতে পারে না। চোখেও ঝাপসা দেখে। নানা সমস্যার কারনে বৃদ্ধ মানুষকে সম্মান দেখিয়ে সাবধানে গাড়ি চালাতে হবে।
শিশুরা কিন্তু হঠাৎ দৌড় দেয়!! শিশুরা তো কোমল। তাদের সাত পাঁচ ভাবার সময় কই! রাস্তা ঘাটে শিশুরা মনে যা চায় তাই করে। যে কোন সময় অভিভাবকের হাত থেকে ছুটে দৌর মারতে পারে। একা একাই রাস্তায় এসে পড়তে পারে। আর মহিলারাও রাস্তা পারাপারের সময় একটু বেখায়ালী হয়। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পথ চলবা।
পাগলের কিন্তু মাথা ঠিক নাই!!! পাগল তো পাগলই! পাগলের মাথা ঠিক থাকলে কি সে পাগল হতো। কথায় বলে না? পাগলে কি না খায়, পাগলে কি না করে? তাই পাগল দেখলে সাবধান! পাগল যে কোন মূহুর্তে যে কোন কিছু করে বসতে পারে। তাই সাবধানে গাড়ি চালাবে, ইত্যাদী ইত্যাদী।
আমার অভিজ্ঞতায় নতুন একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে সেটা হচ্ছে গরু-ছাগলের মতই একটা প্রাণী আছে তা হলো গন্ডো মূর্খ। এই গন্ড মূর্খ হতেও সাবধান হতে হবে।
ঈদুল ফিতরের আগের রাতে আমি মটরসাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছি। গাড়ি থেকে পড়ে দুই হাটু ছুলে গেছে। দুই হাতের বিভিন্ন স্থানে ছুলে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমার বাম চোখের কোনায়। বাম চোখের ভ্রæর উপরে এবং বাম চোখের কোনায় পিচ ঢালা রাস্তার ঘষায় ত্বক উঠে গেছে। মারাত্মক যন্ত্রনায় স্থানীয় কিছু বিবেকবান মানুষ আমাকে তুলে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্মীরা আমার ক্ষত জায়গাগুলো ধুয়ে মুছে ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে। বন্ধু ডাক্তার মাহবুবুল হক আমায় হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে ঔষধ কিনে বাসায় পৌছে দেয়। আস্তে আস্তে শুরু হয় ব্যাথা। চোখ ফুলে ঢোল! ফুলার চোটে চোখের সাটার বন্ধ হয়ে গেল! এক চোখ দিয়ে দেখার যে কি যন্ত্রনা তা অনুভব করলাম। দুই দিন লাগলো চোখের ফুলা কমতে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে এখন দুচোখেই দুনিয়া দেখি। ঘা এখনও শুকায়নি। ঘা শুকাতে অন্তত মাস খানেক লাগবে। ত্বক আগের অবস্থায় ফিরবে কিনা আমি জানি না। ত্বকের সৌন্দর্য ফিরা নিয়ে আমার তেমন কোন দুশ্চিন্তাও নেই। এই কালো মুখের (পোড়া মুখের নয়!!) কালো ত্বক আর নতুন করে কি সুন্দর হবে?
এবার আসি আমার দুর্ঘটনার কথায়। ঈদুল ফিতরের আগের রাত সাড়ে দশটার দিকে আমি আর আমার বন্ধু ডাক্তার মাহাবুবুল হক কোর্ট এলাকা থেকে চা সেবা করে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। ডাক্তারকে হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। চৌরঙ্গীর মোড় থেকে কিছুদুর আসার পর দুর থেকে দেখলাম ইটালী প্লাজার সামনে দাড়িয়ে এক ব্যক্তি ভ্যানে করে চটপটি-ফুসকা বিক্রি করছে। ফুচকাওয়ালার চারপাশে ছয়-সাতটি কুকুর ঘোরাঘুরি করছে। আমি এগিয়ে আসছি আর দেখছি দৃশ্যটা। আমি যখন ফুচকাওয়ালার কাছাকাছি আসি ঠিক তখনই ফুচকাওয়ালা একটা লাঠি হাতে নিয়ে কুকুরগুলোকে কুকুরের মত তাড়া দেয়!! জ্ঞান শুন্য কুকুরগুলো ভয়ে দিক বিদিক ছোটে জীবনের ভয়ে। কথায় বলে না, মাইরেরে ভয় পায় পাগলেও! একটা সুঠাম দেহী কুকুর দৌরে এসে আমার মোটর সাইকেলের সামনের চাকায় এসে ধাক্কা খায়! ব্যাস!! অমনি আমার গাড়ি বাম দিকে কাত হয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে গড়িয়ে যেতে থাকে। আমি হলাম ভারী জানবাহনের মত! মোটা মানুষ! তাই কিছুদুর ছেচড়ে গিয়ে অতপর ঘর্ষণজনিত কারনে গতি থেমে যায়! ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে গেল। আমার বাম পা গাড়ির নিচে। দেহ জাগিয়ে সহযোগীতার জন্য অপেক্ষা করছি কারন নিজে উঠার শক্তি পাচ্ছি না। বেকুব ফুচকাওয়ালা আমাকে টেনে তোলার জন্য এগিয়ে না এসে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে! আমি তাকে ধমক দিয়ে বললাম, বেটা তোল আমাকে। এর পর সে আমার কাছে এগিয়ে আসলো। ফুচকাওয়ালা আসতে আসতে আসপাশের দোকান থেকে দুর্ঘটনার শব্দ পেয়ে লোকজন ছুটে আসলো। আমাকে প্রথমে রাস্তা থেকে তুলে পাশের একটা দোকানের সিড়িতে বসালো। আমার গাড়িটা রাস্তা থেকে তুলে এনে দোকানের সামনে লক করে গাড়ির চাবিটা একজনের হেফাজতে রেখে আমাকে জানালো যে চাবি তাদের কাছে আছে। আমি কপালের বাম দিকে যন্ত্রনা অনুভব করে হাত দিয়ে ধরে দেখি হাত রক্তে লাল হয়ে গেছে। মাথাটা ডানে ঘুরলো না বামে ঘুরলো জানিনা, অনুভব করলাম মাথা ঘুরাচ্ছে!! হাত গড়িয়ে এবং কপালের রক্ত কপল বেয়ে পড়া দেখে দোকানদার ভাই এক মুঠো টিসু পেপার এনে দিলে আমি টিসু পেপারগুলো একসাথে চেপে ধরলাম কপালের ক্ষতস্থানে। চৌত্র মাসে মাঠের শুস্ক মাটি যেমন পানি পেলে শুশে নেয়, মূহুর্তের মধ্যে টিসু পেপার ভিজে চপচপা হয়ে গেল। আমার উদ্ধারকারীরা রিক্সা ডাকাডাকি করছে আমি শুনতে পাচ্ছি। এরই মাঝে একটা রিক্সা পাওয়া গেল। উদ্ধারকারীদের একজন আমাকে ধরে রিক্সায় উঠিয়ে তার ভাগিনাকে ফোনে বললো একটু দোকানে গিয়া বয় আমি ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। রিক্সায় বসে আমাকে ধরে রাখছে, এরই মধ্যে আমি আমার ফোন বের করে ডাক্তার বন্ধুকে ফোন দিলাম। বলে রাখা ভাল, আমার ডাক্তার বন্ধু দশবার ফোন দিলে একবার ধরে, মাঝে মাঝে ধরেও না! আমার ভাগ্য ভাল, ফোন দেয়ার সাথেই ফোন রিসিভ করলো এবং আমি তাকে বিষয়টি জানালাম। ডাক্তার মাহবুব এর বাড়ি হাসপাতালের পাশেই। সে দ্রুত হাসপাতালে আসলো। আমাকে রিক্সা থেকে ধরে নামিয়ে রিক্সার ভাড়া সেই পরিশোধ করে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেল। আমাকে ডাক্তার বন্ধুর কাছে দিয়ে সাথে আগন্তুক বন্ধু চলে গেল। তার সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা নাই। ধন্যবাদ বন্ধু। ডাক্তার বন্ধু আমাকে জরুরী বিভাগের বেডে বসিয়ে দিয়ে লোক ডাকলো এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিল। জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার ছিল সুমন পোদ্দার। ঈদের কারনে সকল ডাক্তার ছুটিতে যাওয়ায় টানা তিন দিন তার উপরই জরুরী বিভাগের দায়িত্ব পড়েছে বলে সে কথার ফাকে জানালো। এর পর একে একে আমার রক্তাক্ত স্থানগুলো প্রথমে পরিস্কার পানি দিয়ে মুছে দিল এবং পরে ক্ষতস্থানগুলোতে তরল ঔষধ লাগিয়ে দিল। ঔষধ এক এক স্থানে দেয় আর সেই স্থানে একেকটা কামড়ের মত যন্ত্রনা অনুভ‚ত হয়! ছোট হলে চিৎকার দিতাম কিন্তু বয়স বিবেচনায় চিৎকার দিতেও পারছি না, পাছে লোকে যদি হাসে। ডাক্তার সুমন পোদ্দার বন্ধু মাহবুবকে জিজ্ঞাস করলো, স্যার ব্যাথা নাশক ইনজেকশন দিয়ে দেব? কথাটা শুনে আমার মনে হলো, যদি দেয় তবে দুর্ঘটনার থেকেও বেশি আহত হব! আমি তাদের কথপোকথন শুনে বললাম, ইনজেকশন নেব না খাওয়ার ঔষধ যা লাগে দিতে পারো! শুনে দুজনেই হাসলো। বন্ধু মাহবুব সুমন পোদ্দারকে বললো, ইনজেকশনকে ভয় পায় এ কারনে আমি হাজার বার বলার পরেও আজ পর্যন্ত সে জন্ডিসের টিকা দিতে পারেনি, বলে দুজনেই হাসলো। বন্ধু মাহবুব আমায় জিজ্ঞাস করলো আর কোথাও ব্যাথা অনুভব হচ্ছে কিনা, কেমন লাগছে, কোন অ¯^াভাবিকতা অনুভব হচ্ছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বললাম একটু জ্বলে! একটু ব্যাথাও করে। শুনে বন্ধু বললো ওটা কিছু না, ঠিক হয়ে যাবে। কয়েকদিন সময় লাগবে। আমি বাড়িতে ফোন দিয়ে যানাতে যাব তখন বন্ধু বললো ফোন দেয়ার দরকার নাই, তুই যথেষ্ট ভাল আছিস। ফোন দিলে সবাই চিন্তা করবে, শুধু শুধু ফোন দিয়ে তাদের চিন্তা বাড়িয়ে কি লাভ!! ভাল আছি কথাটা শুনে একটু সাহস বাড়লো। ডাক্তার যেহেতু দেখে বলছে ভাল আছিস তাহলে আর খারাপ থাকি ক্যামনে!! পরে বেড থেকে নামিয়ে আমাকে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনল। এর পর একটা রিক্সা ডেকে দুজনে গেলাম দুর্ঘটনাস্থলে। গিয়ে দেখি গাড়ি লক করাই আছে। রিক্সা থেকে নেমে আমি গাড়ি চালু করে দেখি গাড়ির কোন ক্ষতি হয়নি, চলছে। বন্ধু বললো চালাতে পারবি? আমি বললাম পারবো। বন্ধু রিক্সাটা না ছেড়ে আমায় বললো তুই আস্তে আস্তে চালিয়ে যা আমি রিক্সা নিয়ে তোর পিছন পিছন আসি। আমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে বন্ধু রিক্সাটা নিয়ে চলে গেল, এই না হলো বন্ধু। এখানে বলে রাখা ভাল, আমার জীবণে দুর্ঘটনা যাতীয় সকল সময় এবং সকল অসুস্থ্যতার সময় আমার বন্ধু আমার পাশে থেকেছে একারনে তার প্রতি কৃতজ্ঞতাটাও আমার আকাশ সীমা পর্যন্ত।
নিজের কথাতো অনেক বললাম! এই ঘটনায় আমার অভিজ্ঞতার কথাটা এবার বলে শেষ করি। সবাই বলে কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল, পাগল, শিশু, বৃদ্ধ হতে সাবধান! আমি মনে করি, গরু ছাগলের মত গন্ড মূর্খ হতেও সাবধান থাকা দরকার। কারন, ফুচকাওয়ালা কুকুর গুলোকে এমন সময় তাড়া না দিলেও পারতো! তার বিবেক বিবেচনা থাকলে বোঝা উচিত ছিল, তাড়া খেয়ে কুকুরগুলো ছুটে গিয়ে আমার মোটর সাইকেলে ধাক্কা খাবে, আমি যদি না থাকতাম, যদি একজন পথচারি থাকতো তবে কুকুর গুলো পথচারীর সাথে ধাক্কা খেয়ে তার পায়ে কামড় বসিয়ে দিতে পারতো। যদি বড় গাড়ি এসে পড়তো তবে কুকুর বড় গাড়ির চাকার নিচে গেলে চাকা পিছলে গাড়ি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারতো! তাই কুকুর তাড়া দেয়ার সময় তার আশেপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি দেখা উচিত চিল। এখন আমার কাছে কুকুরের বিবেচনা আর ফুচকাওয়ালার বিবেচনা একই মনে হলো। তাই গরুর সাথে গন্ড মূর্খ হতেও সাবধান হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি! সমস্যা হলো দেখেতো আর গন্ড মূর্খ চেনা যায় না!!!
13.07.2016

কুকুর-বিড়াল-বৃদ্ধ-মহিলা-শিশু-গরু-গন্ড মূর্খ দেখলে সাবধান!!




যারা গাড়ি চালান অর্থাৎ বাই সাইকেল থেকে শুরু করে ভারী যানবাহন (রেল গাড়ি ছাড়া!) তারা সবসময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকেন। নিজেতো সতর্ক থাকেনই শুভাকাক্সিখদের, পরিচিত জনদেরও সর্বদা সতর্ক করেন।
সবসময় বলেন, সাবধানে গাড়ি চালিও! যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে! সতর্ক দৃষ্টি রাখবা গাড়ি চালানোর সময়!
রাস্তা দেখে শুনে চলবা! হঠাৎ কোন কিছু সামনে চলে আসতে পারে বা পিছন থেকে ধাক্কা দিতে পারে তাই দেখে শুনে চলবা।
কুকুর বিড়াল থেকে সাবধান! যে কোন সময় গাড়ির সামনে কুকুর বিড়াল চলে আসবে। কুকুর বিড়ালের লোমের কারনে সহজে গাড়ির চাকা তাদের উপর দিয়ে উঠে না। আর যদি উঠেযায় তবে চাকা পিছলে গিয়ে দুর্ঘনটা ঘটে থাকে তাই সাবধান থাকা জরুরী।
গরু ছাগল কিন্তু আৎকা দৌর মারে!! গরু ছাগল রাস্তায় চলার সময় ডান বাম দেখে না। চিন্তা ভাবনার ক্ষমতা যেহেতু তাদের নাই তাইতো তাদের বলদ বলে। সেই গরু ছাগল দেখে শুনে চলবা।
বুড়া মানুষ কিন্তু কানে কম শোনে!! বৃদ্ধ মানুষ কানে কম শোনে। শারীরিক অক্ষমতার কারনে সে দ্রুত রাস্তা পারাপার হতে পারে না। চোখেও ঝাপসা দেখে। নানা সমস্যার কারনে বৃদ্ধ মানুষকে সম্মান দেখিয়ে সাবধানে গাড়ি চালাতে হবে।
শিশুরা কিন্তু হঠাৎ দৌড় দেয়!! শিশুরা তো কোমল। তাদের সাত পাঁচ ভাবার সময় কই! রাস্তা ঘাটে শিশুরা মনে যা চায় তাই করে। যে কোন সময় অভিভাবকের হাত থেকে ছুটে দৌর মারতে পারে। একা একাই রাস্তায় এসে পড়তে পারে। আর মহিলারাও রাস্তা পারাপারের সময় একটু বেখায়ালী হয়। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পথ চলবা।
পাগলের কিন্তু মাথা ঠিক নাই!!! পাগল তো পাগলই! পাগলের মাথা ঠিক থাকলে কি সে পাগল হতো। কথায় বলে না? পাগলে কি না খায়, পাগলে কি না করে? তাই পাগল দেখলে সাবধান! পাগল যে কোন মূহুর্তে যে কোন কিছু করে বসতে পারে। তাই সাবধানে গাড়ি চালাবে, ইত্যাদী ইত্যাদী।
আমার অভিজ্ঞতায় নতুন একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে সেটা হচ্ছে গরু-ছাগলের মতই একটা প্রাণী আছে তা হলো গন্ডো মূর্খ। এই গন্ড মূর্খ হতেও সাবধান হতে হবে।
ঈদুল ফিতরের আগের রাতে আমি মটরসাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছি। গাড়ি থেকে পড়ে দুই হাটু ছুলে গেছে। দুই হাতের বিভিন্ন স্থানে ছুলে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমার বাম চোখের কোনায়। বাম চোখের ভ্রæর উপরে এবং বাম চোখের কোনায় পিচ ঢালা রাস্তার ঘষায় ত্বক উঠে গেছে। মারাত্মক যন্ত্রনায় স্থানীয় কিছু বিবেকবান মানুষ আমাকে তুলে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্মীরা আমার ক্ষত জায়গাগুলো ধুয়ে মুছে ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে। বন্ধু ডাক্তার মাহবুবুল হক আমায় হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে ঔষধ কিনে বাসায় পৌছে দেয়। আস্তে আস্তে শুরু হয় ব্যাথা। চোখ ফুলে ঢোল! ফুলার চোটে চোখের সাটার বন্ধ হয়ে গেল! এক চোখ দিয়ে দেখার যে কি যন্ত্রনা তা অনুভব করলাম। দুই দিন লাগলো চোখের ফুলা কমতে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে এখন দুচোখেই দুনিয়া দেখি। ঘা এখনও শুকায়নি। ঘা শুকাতে অন্তত মাস খানেক লাগবে। ত্বক আগের অবস্থায় ফিরবে কিনা আমি জানি না। ত্বকের সৌন্দর্য ফিরা নিয়ে আমার তেমন কোন দুশ্চিন্তাও নেই। এই কালো মুখের (পোড়া মুখের নয়!!) কালো ত্বক আর নতুন করে কি সুন্দর হবে?
এবার আসি আমার দুর্ঘটনার কথায়। ঈদুল ফিতরের আগের রাত সাড়ে দশটার দিকে আমি আর আমার বন্ধু ডাক্তার মাহাবুবুল হক কোর্ট এলাকা থেকে চা সেবা করে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। ডাক্তারকে হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। চৌরঙ্গীর মোড় থেকে কিছুদুর আসার পর দুর থেকে দেখলাম ইটালী প্লাজার সামনে দাড়িয়ে এক ব্যক্তি ভ্যানে করে চটপটি-ফুসকা বিক্রি করছে। ফুচকাওয়ালার চারপাশে ছয়-সাতটি কুকুর ঘোরাঘুরি করছে। আমি এগিয়ে আসছি আর দেখছি দৃশ্যটা। আমি যখন ফুচকাওয়ালার কাছাকাছি আসি ঠিক তখনই ফুচকাওয়ালা একটা লাঠি হাতে নিয়ে কুকুরগুলোকে কুকুরের মত তাড়া দেয়!! জ্ঞান শুন্য কুকুরগুলো ভয়ে দিক বিদিক ছোটে জীবনের ভয়ে। কথায় বলে না, মাইরেরে ভয় পায় পাগলেও! একটা সুঠাম দেহী কুকুর দৌরে এসে আমার মোটর সাইকেলের সামনের চাকায় এসে ধাক্কা খায়! ব্যাস!! অমনি আমার গাড়ি বাম দিকে কাত হয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে গড়িয়ে যেতে থাকে। আমি হলাম ভারী জানবাহনের মত! মোটা মানুষ! তাই কিছুদুর ছেচড়ে গিয়ে অতপর ঘর্ষণজনিত কারনে গতি থেমে যায়! ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে গেল। আমার বাম পা গাড়ির নিচে। দেহ জাগিয়ে সহযোগীতার জন্য অপেক্ষা করছি কারন নিজে উঠার শক্তি পাচ্ছি না। বেকুব ফুচকাওয়ালা আমাকে টেনে তোলার জন্য এগিয়ে না এসে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে! আমি তাকে ধমক দিয়ে বললাম, বেটা তোল আমাকে। এর পর সে আমার কাছে এগিয়ে আসলো। ফুচকাওয়ালা আসতে আসতে আসপাশের দোকান থেকে দুর্ঘটনার শব্দ পেয়ে লোকজন ছুটে আসলো। আমাকে প্রথমে রাস্তা থেকে তুলে পাশের একটা দোকানের সিড়িতে বসালো। আমার গাড়িটা রাস্তা থেকে তুলে এনে দোকানের সামনে লক করে গাড়ির চাবিটা একজনের হেফাজতে রেখে আমাকে জানালো যে চাবি তাদের কাছে আছে। আমি কপালের বাম দিকে যন্ত্রনা অনুভব করে হাত দিয়ে ধরে দেখি হাত রক্তে লাল হয়ে গেছে। মাথাটা ডানে ঘুরলো না বামে ঘুরলো জানিনা, অনুভব করলাম মাথা ঘুরাচ্ছে!! হাত গড়িয়ে এবং কপালের রক্ত কপল বেয়ে পড়া দেখে দোকানদার ভাই এক মুঠো টিসু পেপার এনে দিলে আমি টিসু পেপারগুলো একসাথে চেপে ধরলাম কপালের ক্ষতস্থানে। চৌত্র মাসে মাঠের শুস্ক মাটি যেমন পানি পেলে শুশে নেয়, মূহুর্তের মধ্যে টিসু পেপার ভিজে চপচপা হয়ে গেল। আমার উদ্ধারকারীরা রিক্সা ডাকাডাকি করছে আমি শুনতে পাচ্ছি। এরই মাঝে একটা রিক্সা পাওয়া গেল। উদ্ধারকারীদের একজন আমাকে ধরে রিক্সায় উঠিয়ে তার ভাগিনাকে ফোনে বললো একটু দোকানে গিয়া বয় আমি ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। রিক্সায় বসে আমাকে ধরে রাখছে, এরই মধ্যে আমি আমার ফোন বের করে ডাক্তার বন্ধুকে ফোন দিলাম। বলে রাখা ভাল, আমার ডাক্তার বন্ধু দশবার ফোন দিলে একবার ধরে, মাঝে মাঝে ধরেও না! আমার ভাগ্য ভাল, ফোন দেয়ার সাথেই ফোন রিসিভ করলো এবং আমি তাকে বিষয়টি জানালাম। ডাক্তার মাহবুব এর বাড়ি হাসপাতালের পাশেই। সে দ্রুত হাসপাতালে আসলো। আমাকে রিক্সা থেকে ধরে নামিয়ে রিক্সার ভাড়া সেই পরিশোধ করে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেল। আমাকে ডাক্তার বন্ধুর কাছে দিয়ে সাথে আগন্তুক বন্ধু চলে গেল। তার সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা নাই। ধন্যবাদ বন্ধু। ডাক্তার বন্ধু আমাকে জরুরী বিভাগের বেডে বসিয়ে দিয়ে লোক ডাকলো এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিল। জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার ছিল সুমন পোদ্দার। ঈদের কারনে সকল ডাক্তার ছুটিতে যাওয়ায় টানা তিন দিন তার উপরই জরুরী বিভাগের দায়িত্ব পড়েছে বলে সে কথার ফাকে জানালো। এর পর একে একে আমার রক্তাক্ত স্থানগুলো প্রথমে পরিস্কার পানি দিয়ে মুছে দিল এবং পরে ক্ষতস্থানগুলোতে তরল ঔষধ লাগিয়ে দিল। ঔষধ এক এক স্থানে দেয় আর সেই স্থানে একেকটা কামড়ের মত যন্ত্রনা অনুভ‚ত হয়! ছোট হলে চিৎকার দিতাম কিন্তু বয়স বিবেচনায় চিৎকার দিতেও পারছি না, পাছে লোকে যদি হাসে। ডাক্তার সুমন পোদ্দার বন্ধু মাহবুবকে জিজ্ঞাস করলো, স্যার ব্যাথা নাশক ইনজেকশন দিয়ে দেব? কথাটা শুনে আমার মনে হলো, যদি দেয় তবে দুর্ঘটনার থেকেও বেশি আহত হব! আমি তাদের কথপোকথন শুনে বললাম, ইনজেকশন নেব না খাওয়ার ঔষধ যা লাগে দিতে পারো! শুনে দুজনেই হাসলো। বন্ধু মাহবুব সুমন পোদ্দারকে বললো, ইনজেকশনকে ভয় পায় এ কারনে আমি হাজার বার বলার পরেও আজ পর্যন্ত সে জন্ডিসের টিকা দিতে পারেনি, বলে দুজনেই হাসলো। বন্ধু মাহবুব আমায় জিজ্ঞাস করলো আর কোথাও ব্যাথা অনুভব হচ্ছে কিনা, কেমন লাগছে, কোন অ¯^াভাবিকতা অনুভব হচ্ছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বললাম একটু জ্বলে! একটু ব্যাথাও করে। শুনে বন্ধু বললো ওটা কিছু না, ঠিক হয়ে যাবে। কয়েকদিন সময় লাগবে। আমি বাড়িতে ফোন দিয়ে যানাতে যাব তখন বন্ধু বললো ফোন দেয়ার দরকার নাই, তুই যথেষ্ট ভাল আছিস। ফোন দিলে সবাই চিন্তা করবে, শুধু শুধু ফোন দিয়ে তাদের চিন্তা বাড়িয়ে কি লাভ!! ভাল আছি কথাটা শুনে একটু সাহস বাড়লো। ডাক্তার যেহেতু দেখে বলছে ভাল আছিস তাহলে আর খারাপ থাকি ক্যামনে!! পরে বেড থেকে নামিয়ে আমাকে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনল। এর পর একটা রিক্সা ডেকে দুজনে গেলাম দুর্ঘটনাস্থলে। গিয়ে দেখি গাড়ি লক করাই আছে। রিক্সা থেকে নেমে আমি গাড়ি চালু করে দেখি গাড়ির কোন ক্ষতি হয়নি, চলছে। বন্ধু বললো চালাতে পারবি? আমি বললাম পারবো। বন্ধু রিক্সাটা না ছেড়ে আমায় বললো তুই আস্তে আস্তে চালিয়ে যা আমি রিক্সা নিয়ে তোর পিছন পিছন আসি। আমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে বন্ধু রিক্সাটা নিয়ে চলে গেল, এই না হলো বন্ধু। এখানে বলে রাখা ভাল, আমার জীবণে দুর্ঘটনা যাতীয় সকল সময় এবং সকল অসুস্থ্যতার সময় আমার বন্ধু আমার পাশে থেকেছে একারনে তার প্রতি কৃতজ্ঞতাটাও আমার আকাশ সীমা পর্যন্ত।
নিজের কথাতো অনেক বললাম! এই ঘটনায় আমার অভিজ্ঞতার কথাটা এবার বলে শেষ করি। সবাই বলে কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল, পাগল, শিশু, বৃদ্ধ হতে সাবধান! আমি মনে করি, গরু ছাগলের মত গন্ড মূর্খ হতেও সাবধান থাকা দরকার। কারন, ফুচকাওয়ালা কুকুর গুলোকে এমন সময় তাড়া না দিলেও পারতো! তার বিবেক বিবেচনা থাকলে বোঝা উচিত ছিল, তাড়া খেয়ে কুকুরগুলো ছুটে গিয়ে আমার মোটর সাইকেলে ধাক্কা খাবে, আমি যদি না থাকতাম, যদি একজন পথচারি থাকতো তবে কুকুর গুলো পথচারীর সাথে ধাক্কা খেয়ে তার পায়ে কামড় বসিয়ে দিতে পারতো। যদি বড় গাড়ি এসে পড়তো তবে কুকুর বড় গাড়ির চাকার নিচে গেলে চাকা পিছলে গাড়ি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারতো! তাই কুকুর তাড়া দেয়ার সময় তার আশেপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি দেখা উচিত চিল। এখন আমার কাছে কুকুরের বিবেচনা আর ফুচকাওয়ালার বিবেচনা একই মনে হলো। তাই গরুর সাথে গন্ড মূর্খ হতেও সাবধান হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি! সমস্যা হলো দেখেতো আর গন্ড মূর্খ চেনা যায় না!!!
13.07.2016