ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Monday, March 5, 2018

একটি চত্তরের নামকরণ ও শরীয়তপুর পৌরসভার উদ্ভট চিন্তা

আমাদের প্রাণের জেলা শরীয়তপুর। ধন সম্পদে, মানব সম্পদে, শান্তিতে, শিক্ষায়, গুণিজনে সমৃদ্ধ একটি জনপদের নাম শরীয়তপুর। আমাদের এতদ অঞ্চলের প্রতি একসময় বর্গিদের পরবর্তীতে হানাদারদের যেমন বদ নজর ছিলো তেমনি বর্তমানেও তথাকথিত বর্গিদের-হানাদারদের বদ নজর আছে। পূরাকালেও যেমন বর্গিদের-হানাদারদের সহযোগীতার জন্য এক শ্রেণীর দোসর ছিলো, তেমনি বর্তমানেও আছে।
আমাদের শরীয়তপুর জেলার বিশেষ করে শরীয়তপুর পৌরসভার অভ্যন্তরের রাস্তাঘাটগুলোর যেমন বেহাল দশা তেমনি নাই কোন নামকরণ। এ দুটি কাজই করার কথা শরীয়তপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষের। রাস্তার বেহাল দশার কথা না হয় সহ্য করা যায় কিন্তু রাস্তা ঘাটের, চত্তরের, মোড়ের নামকরণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কি পৌরবাসী হিসাবে সহ্য করা যায়? উদ্ভট কোন নামকরণ জনগণ সহ্য করবে না।
কথাগুলো আসতো না। আমরা পৌরবাসী সব বিষয়েই ঘুমের মধ্যে আছি। কোন অধিকার নিয়ে আমরা কথা বলি না। আর বলার জায়গাও আছে বলে মনে হয় না। যে জায়গা আছে সেখানে কথা বলে অতীতেও কেউ কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙ্গাতে পারেনি বর্তমানেও পারবে না বলেই আমার ধারনা। তবুও আজ আর প্রতিবাদ না করে পারা গেলো না। 
সম্প্রতি শরীয়তপুর পৌরসভা একটা মহৎ কাজ হাতে নিয়েছে! এতটাই মহৎ যে আমরা উচ্ছসিত হওয়ার পরিবর্তে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছি। মহৎ কাজটা হলোঃ ভাষা সৈনিক ডাক্তার গোলাম মাওলা গণ গ্রন্থাগারের সামনের চত্তরটাকে কোন এক অর্বাচিনের নামে ‘সাইবিতা চত্তর’ নামকরণ করে ফলোক উন্মোচন করা!
শরীয়তপুর জেলার কোর্টের মোড়ে একসময় বিশালাকায় এক কড়ই গাছ ছিলো। রাস্তা প্রসস্ত করণের নামে গাছটিকে হত্যা করা হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে। রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য গাছ তো কাটতেই হবে, সবাই একথা বলবে জানি। কিন্তু আমার মতামত ভিন্ন। গাছটাকে বাঁচিয়ে রেখেও রাস্তা প্রসস্ত করা যেতো। কিভাবে? গাছটা থাকতো মাঝখানে। গাছের পশ্চিম দিকে রাস্তা প্রসস্ত হতো আর গাছের পূর্ব দিকেও প্রসস্ত হত। এভাবে করার মত সরকারের যথেষ্ট জায়গাও ছিলো। কিন্তু সেটার কথা কেউ ভাবলো না। একটি গাছের জন্য আমাদের প্রকৌশলীদের পরিকল্পনা করার মত মানসিকতা না থাকাই এর জন্য দায়ী বলে আমি মনে করি। যা হোক। কালের পরিক্রমায় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় শরীয়তপুর জেলায়ও একটি গণ গ্রন্থাগার স্থাপন করা হলো। গ্রন্থাগারটি করা হলো কড়ই তলার পশ্চিম পাশে। এবার গ্রন্থাগারের নামকরণের পালা। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার কৃতি সন্তান ভাষা সৈনিক ডাক্তার গোলাম মাওলার নামে নামকরণ করা হলো গণ গ্রন্থাগারটির। অবশেষে ‘ভাষা সৈনিক ডাক্তার গোলাম মাওলা গণ গ্রন্থাগার’ নামে সমৃদ্ধ হলো গ্রন্থাগারটি।
শরীয়তপুর পৌরসভা এই মহান ব্যক্তির নামে গড়া গণ গ্রন্থাগারের সামনের চত্তরের নামকরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন সভা, সমাবেশ, গুনিজণদের নিয়ে কোন প্রকার আলাপ আলোচনা না করে ভাষা সৈনিক ডাক্তার গোলাম মাওলা গণ গ্রন্থাগার এর সামনের চত্তরকে ‘সাইবিতা চত্তর’ নামকরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগের কথা জানাজানি হলে শরীয়তপুরের সচেতন জনগণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করেছে। প্রতিবাদী সকলের প্রতি আমার সহমত ও সমর্থন আছে এবং থাকবে। এমন একটি ইস্যু নিয়ে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে তা কখনো ভাবিনি!
শরীয়তপুর পৌরসভা কিংবা যে কোন পৌরসভায় কোন রাস্তা, ঘাট, চত্তরের নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় নজরে রাখতে হয়। সেই ব্যক্তির নামেই চত্তর বা রাস্তার নামকরণ করা যায় যেই ব্যক্তির এ শহরে অতীত কোন অবদান আছে বা অতীতে কোন গুণের স্বাক্ষর রেখেছেন। পৌরসভা সাইবিতা চত্তর নামে যে চত্তরের ঘোষণা করছে সেই ব্যক্তির শরীয়তপুর জেলায় অবদান কি, তার গুন কি, সে কিসের জন্য বিখ্যাত তা শরীয়তপুর বাসী কিছুই জানেনা। শরীয়তপুর পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে সেই ব্যক্তি কি গুণের কারনে গুনিজন সেটা কতর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে। ঐ গুনিজনের গুণ নিয়ে আমরা কোন তর্কেও যেতে চাই না। আমাদের কাছে মনে হয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব কোন লাভের কারনে এই নামকরণ করছে। ঐ গুণিজনের কাছে আমাদের পৌরকর্তৃপক্ষের কি এমন দায়বদ্ধতা, কিসের প্রতিশ্রুতি পূরণের চেষ্টা সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
শরীয়তপুর বাসীর প্রাণের দাবী শরীয়তপুর জেলার ভাষা সৈনিক ডাক্তার গোলাম মাওলা গণ গ্রন্থাগার এর সামনের চত্তরের নামকরণ হোক ‘গোলাম মাওলা চত্তর’ অথবা ‘রথীন্দ্র কান্ত ঘটক চত্তর’ অথবা শরীয়তপুরের অন্য কোন গুণিজনের নামে।
আমি যে দুটি নাম প্রস্তাব করলাম তাদের গুণের এবং শরীয়তপুরের প্রতি তাদের অবদানের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। তারপরেও কয়েকটি কথা না বললেই নয়। ডাক্তার গোলাম মাওলা আমরা যে ভাষায় কথা বলি, আমি আজ যে ভাষায় লিখলাম সেই ভাষা এনে দিয়েছেন। তিঁনি শরীয়তপুরের নামকে দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর রথীন্দ্র কান্ত ঘটক চৌধুরী একাধারে একজন কবি, সমাজ সেবক, শরীয়তপুর জেলা গঠনে তার ভূমিকা, শরীয়তপুর পাবলিক লাইব্রেরী স্থাপনে তার ভূমিকা, শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষ স্থাপনে তার ভূমিকা এমন হাজারো ভূমিকা রাখার জন্য তাঁর নামেও এই চত্তরের নামকরণ করা যেতে পারে।
শরীয়তপুর পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবী অনতি বিলম্বে উদ্ভট চিন্তা থেকে সরে এসে শরীয়তপুর জেলার গুণিজনদের নামে নামকরণ করুন। ভালো চিন্তা, ভালো কাজ করতে না পারলেও উদ্ভট চিন্তা না করাই ভালো! নাম দিলেই নামকরণ হয় না। আমরা না ডাকলে নামের কোন মাহাত্ম থাকবে না। সব শেষে একটা কথাই বলতে চাই, নিজের বাপ-মাকে ভাত দেয়ার মুরোদ নেই দুঃসম্পর্কের তালইর নামে শ্রাদ্ধ করা বন্ধ করুন।

No comments:

Post a Comment