ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Saturday, August 31, 2019

মেঘনার জল, করে টলোমল...

শুক্রবার আমার কাছে ঘুম দিবস! সারা সপ্তাহ যদি ঘুমাই, তার পরেও বৃহস্পতিবার দিনটি আসলে চেম্বারের সকল কাজই আমার কাছে অসাড় লাগে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শরীর ও মনে একটা ছুটি ছুটি ভাব থাকে। সেই স্কুল জীবনে যেমন মনে হতো, আজ বৃহস্পতিবার হাফ ক্লাস! দুপুরেই ছুটি! আজ তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে খেলাধুলা করা যাবে! অথবা রমজানের আগের সময়টা যেমন সামনেই একমাস ছুটি! ঠিক তেমনি বৃহস্পতিবার ছুটি আনন্দ ছারা মাথায় আর কোন কিছু কাজ করে না। বৃহস্পতিবার রাতে একটু বেশি সময় টিভি দেখা, রাত জাগা। অতপর গভীর রাতে ঘুমোতে যাওয়া এবং অনেক বেলা করে ঘুম থেকে ওঠা! তাই বলে প্রয়োজনে যে শুক্রবারেও আগে আগে উঠি না তা কিন্তু নয়। আজ শুক্রবার সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মাহবুবুল হকের ফোনে। ফোন রিসিভ করতেই জানিয়ে দিলো আজ বারোটার দিকে চাঁদপুর ঘাটে যাবো। আমাকেও সঙ্গী করতে চায়। আমার যেহেতু ঘোরাঘুরির বাতিক আছে তাই এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম।
বারোটায়ই চলে এলাম বন্ধুর বাড়ি। কিন্তু যথারীতি বারোটায় আমরা রওয়ানা দিতে পারলাম না। সারে বারোটায় রওয়ানা দিলাম আমরা। সফর সঙ্গী হিসাবে আরো যোগ দিলো বন্ধু মানিরুল ইসলাম, এডভোকেট জালাল আহম্মেদ সবুজ সাথে গাড়ির দায়িত্বে আছেন বুলবুল। গুটি বসন্ত হলে যেমান গালে গর্ত হয়ে যায় ঠিক তেমনি গুটি বসন্তে আক্রান্ত রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে এক পর্যায়ে বিরক্ত বোধ করছিলাম। ভেদরগঞ্জ থেকে ডামুড্যার সংযোগ সড়কের কাছে গিয়ে খোজ খবর করছিলাম ভালো রাস্তা আছে কোন দিক দিয়ে। একজন আমাদের দেখিয়ে দিলো-মোল্লার হাট দিয়ে একটা রাস্তা আছে যেটা দিয়ে অনেকটা ভালো রাস্তা পাওয়া যাবে। আমরা মোল্লারহাট ব্রিজ পার হয়ে গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছি দূর্বার গতিতে। শুক্রবার রাস্তা একদম ফাঁকা। রাস্তার দুই ধারে সবুজ আর সবুজ। মাঝে মাঝে সুদৃশ্য বাড়ি আর পুকুর। কিছু দুর পর পর একসাথে চার-পাঁচটা বাড়ি আবার সবুজ আর সবুজ। রাস্তা এক পর্যায়ে আবার গুটি বসন্তে আক্রান্ত রাস্তায় গিয়ে মিশে গেলো। আমরা হরিনাঘাট গিয়ে একটি হোটেলের সামনে গাড়ি রেখে ইলিশ ভাজা দিয়ে ভাত খেলাম। পেট ঠিক তো সব ঠিক। খাওয়া দাওয়ার পর এবার চিন্তা ভাবনা চলছে কি করা যায়! আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ওপার যাবো।
চাঁদপুর মাছের বাজারের বেশ সুনাম আছে। সিদ্ধান্ত নিলাম ট্রলার দিয়ে মেঘনা পার হয়ে চাঁদপুর মাছঘাটে যাবো। কিন্তু হরিনা ঘাটে কোন ট্রলার পাওয়া গেলো না। ঘাট থেকে এখনই ফেরি ছাড়বে। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো ওপার ফেরিঘাট থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর মাছঘাট। আমরা ফেরিতে উঠে গেলাম। ফেরির একদম সামনের দিকে দাড়িয়ে গেলাম। ফেরিতে পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া বাকী যে কয়টা বাস ও মাইক্রো বাস উঠেছে সবই চট্রগ্রামের ফটিকছড়ি যাবে। মাইজ ভান্ডারির ভান্ডার শরীফ যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিয়েছে। গাড়িতে ভান্ডার শরীফের ফ্ল্যাগ পত পত করে উড়ছে। বাসের ছাদে ভান্ডার শরীফের গুণকির্ত্তন করে গান বাজছে। সব গানই জিকিরের সাথে! বাতাশ খেতে খেতে নদীর দুই ধারের হোগলার বন দেখতে দেখতে আমরা বিনা ভাড়ায়ই পৌছে গেলাম চাঁদপুর ফেরিঘাট। ফেরিঘাটে পৌছাতে পৌছাতে জোয়ার এসেগেছে। ফেরির পল্টুনের গোড়ায় হাটু পানি জমে গেছে। ভান্ডার শরীফগামী বাসে উঠে পানি পার হয়ে মোড় থেকে সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম চাঁদাপুর শহরে ব্রিজের গোড়ায়। সেখান থেকে ইজিবাইক নিয়ে মাছ ঘাটে গিয়ে দেখি এলাহি কান্ড। ইলিশ আর ইলিশ! যেদিকে তাকাই শুধু ইলিশ মাছ! বড় বড় মাছ ধরা নৌকা ঘাটে নোঙ্গর করা আছে। টুকরি ভরা মাছ নিয়ে আড়তে এসে স্তুপ করছে শ্রমিকরা। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম মাছের দৃশ্য। মাছের দাম তুলনামূলক বেশি দেখে বন্ধু মাহবুব কিছু মাছ কিনলো। ককসিটে বরফ দিয়ে ভালো করে প্যাক করে দিলো বিক্রেতা। এবার ফেরার পালা। মাছ দেখতে দেখতে সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে। যাওয়া নিয়ে টেনশন দেখা দিয়েছে। রাতের আধারে ট্রলারে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত হবে চিন্তা করলাম আমরা। কিন্তু যেভাবে এসেছি সেভাবে যেতে চাইলে রাত দশটা বেজে যাবে নদী পার হতেই। আমরা ট্রলার ঘাটে গিয়ে একটা ট্রলার নিলাম। আসল মজাটা হলো ট্রলারেই।
রাতের আঁধারে মেঘনা নদীতে ট্রলারে ভ্রমণ এতটা মন মুগদ্ধকর, প্রশান্তিদায়ক, আনন্দময় হতে পারে চিন্তা করিনি। মাথার উপর তাঁরা ভরা বিশাল আকাশ। দূর আকাশে তাঁরারা চেয়ে আছে আমাদের দিকে। চাঁদপুর থেকে ফেরার পথে চাঁদের দেখা না পেলেও তাঁরারা আমাদের হতাশ করেনি। অসংখ্য উজ্জল তাঁরার উপস্থিতি আমাদের পূলকিত করেছে বেশ। ট্রলারের বেঞ্চে বসে ছোট বড় ঢেউ এর ধাক্কা বেশ ভালোই লাগছে। ঢেউয়ের ধাক্কা বেশি শক্তিশালী হলে অবশ্য প্রাণ আর বুকে থাকতো না! মূল নদী পার হয়ে তীরের কাছ দিয়ে ছুটে চলেছে ট্রলার। কাশবন, হোগলা বনে ঘেরা চর। বাতাশে দুলছে বন। আমরা এগিয়ে চলেছি তীর ঘেষে। মূহুর্তেই যেন পৌছে গেলাম হরিনাঘাটে। যাওয়ার সময়টা যেমন দীর্ঘ লেগেছিলো আসার সময়টা মূহুর্তে শেষ হয়ে গেলো। আসলে ভালো সময় বেশিক্ষণ থাকে না। কষ্টের সময় শেষ হতে চায় না। আমরা হরিনাঘাট থেকে মেঘনা নদীর মধুর স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে চলে এলাম শরীয়তপুর সদরে। বিদায় বেলায় তাই কিছু পঙতিমালা দিয়ে শেষ করতে চাই-
মেঘনার জল করে টলোমল
বয়ে চলেছে নিরবধি
রূপে তাহার মোহিত হয়ে ভাবি,
বার বার যেতে পারতাম যদি!

Thursday, August 29, 2019

খাস কামরা

খাস কামরায় খাস জমি
করতে গিয়ে চাষ
বড় বড় মহারথির
হয়েছে সর্বনাশ!
উত্তেজনায় বিবেক বুদ্ধি
লোপ পায় যখন
ঘরের বিরিয়ানি রেখে
পান্তা খায় তখন।
পান্তা খেয়ে পেট নষ্ট
ইজ্জত গেলো জলে
ন্যাংটোর নেই লজ্জার ভয়
সর্ব লোকে বলে।
ইজ্জাত কামালে বহু
শ্রম ও ছলা কলায়
একটু খানি ভুলে আজ
নেমেছে নীচতলায়।

Wednesday, August 28, 2019

ফুসফুস জ্বলছে...

ফুসফুসে ধরছে আগুন, কলিজায় লাগে তাপ
অন্য অঙ্গ টের পাচ্ছে, লাগছে অল্প ভাপ
কলিজা পুড়ে ছাই হলেই, অসাড় হবে দেহ
নিজের দেহে লাগাই আগুন, দেখছে নাতো কেহ!
নখ কাটি, আঙ্গুল কাটি, কাটি দেহের ত্বক
কাটাকাটির অভ্যাসটা, মোদের পুরনো সখ
ধ্বংস করছি নিজেকে নিজে, দেহ কাঁদছে নিরবে
দেহেরও ধারণে সীমা আছে, নিরবে কতটা সইবে?
অক্সিজেনের সিলিন্ডারে আজ, লাগছে ভীষণ আগুন
নেভানোর কোন গরজ দেখিনা, পুড়ে খাচ্ছে বেগুন
সিলিন্ডারে কোপ মেরে আজ, করছি তাতে ফুটো
কালচে বর্ণ ধারণ করছে, গোলাপী ফুসফুস দুটো?
এমন করে করতে থাকি, যদি নিজের ক্ষতি
একদিন ঠিক থাকবে নাকো, বাঁচার কোন গতি
অক্সিজেনের আধার ধ্বংসে, অধম জুয়েল ভাবে
নিজের ক্ষতির বিষয় নিয়ে, ভাববে মানুষ কবে?
পৃথিবীর ফুসফুস জ্বলছে আজ, রক্তাক্ত বাংলার ফুসফুস
কেউ খায় আলুপোড়া-খৈ, কারো নাই তাতে কোন হুস!

Monday, August 26, 2019

বাঙ্গালির তেলবাজী! তেল কচলিয়ে তেলচিটচিটে...

তেল এমন একটা অপরিহার্য দ্রব্য যা আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হয়। তেল নিয়ে বহু লেখা প্রথিতযশা লেখকরা লিখে তেল বিষয়টাকেই তেলতেলে করে ফেলেছেন। আমি কচলিয়ে আরেকটু তেলচিটচিটে করলে কী দোষ! উপযুক্ত যোগ্যতা না থাকা স্বত্বেও সমাজে অনেকে অনেক ভালো জায়গায় অবস্থান করছে। সেটা সম্ভব হচ্ছে তেলানোর গুনে। একুশ শতকে এসে তেলানোটা একটা শিল্প মনে হচ্ছে। যে যত ভালো তেল মালিশ করতে পারবে সে তত উপরে অবস্থান করবে। আর আপনি যদি একবার উপরে বসে তেলাতে পারেন তাহলে যোগ্য-অযোগ্য কেউ আর উপরে উঠতে পারবে না, কারন আপনি আগেই তেলিয়ে তেলতেলে করে রেখেছেন। সেই সাথে আগন্তুকের পিছনে থাকবে বিশাল লাইন। যতটা উঠার চেষ্টা করবে, কিছুদুর উঠার পরে দেখবেন একজনের পা ধরে আরেকজন, আরেকজনের পা ধরে আরেকজন এভাবে ঝুলছে। একপর্যায়ে আগন্তুকরা ঠিকই পতিত হবে আপনি থাকবেন বহাল তবিয়তে। তেলের গুরুত্ব যারা বুঝতে পারে তাও যথাসময়ে সে’ই চূড়ায় অবস্থান করে। হাতে তেল থাকলেই হবে না, তেল সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায়, সঠিক পদ্ধতিতে মাখতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বেশি পিচ্ছিল করলে আপনিও পিছলে না পরেন। তেলিয়ে পিচ্ছিল করলে তেলও আপনাকে ক্ষমা করবে না। তেলের কাজই উপরে উঠানো এবং সুযোগ পেলে পিছলে ফেলা।
তেল নিয়ে এত কথা বলার আগে তেলকে একটু তেলিয়ে নেয়া উচিত। তেলের প্রশংসা, তেলের উৎপত্তি, তেলের প্রকারভেদ জানা থাকলে আপনি তেলিয়ে মজা পাবেন, যাকে মাখবেন সেও মজা পাবে। তাই আগে তেলকে ভালোভাবে জানুন। তেল এমন কোন বস্তু যা সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। এটি পানির সাথে মেশে না; অথচ জৈব দ্রাবকের সাথে মিশে যায়। তেলে উচ্চমাত্রার কার্বন এবং হাইড্রোজেন রয়েছে। বিভিন্ন প্রকারের তেল হয়, যেমন: উদ্ভিজ্জতেল, ঔষধি তেল এবং অপরিহার্য উদ্বায়ী তেল প্রদত্ত সাধারণ সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। সবধরণের তেলই আদিতে জৈব পদার্থ থেকে উৎসরিত। তেলের নামকরণঃ বাংলায় তেল শব্দটি এসেছে তৈল থেকে। তেলের ইংরেজি Oil এর ব্যবহার প্রথম লক্ষ্য করা যায় ১১৭৬ সালে যা পুরাতন ফরাসি শব্দ oile থেকে আসে। oile এসেছে লাতিন oleum থেকে। অলিয়াম এসেছে গ্রীক ἔλαιον (এলায়ন) থেকে যার অর্থ জলপাই তেল আর এলাইয়া অর্থ জলপাই গাছ বা ফল।
প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করলে কালি ও কলম শেষ হবে প্রকারভেদ লেখা শেষ হবে না। তবে উল্লেখযোগ্য কিছু তেলের কথাতো বলাই যায়। যেমন খনিজ তেলঃ খনিজ তেল ভূ-অভ্যন্তরের সচ্ছিদ্র পাথরের স্তরে পাওয়া যায়। এই খনিজতেল বিভিন্ন জৈব পদার্থ, যেমন আদিকালে সমুদ্র তলদেশে জমে থাকা মৃত প্লাংকটন, থেকে উৎপন্ন হয়েছে। ভূ-অভ্যন্তরে এভাবে জমা থাকা অবস্থায় বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে এসব বস্তু খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়ামে রূপান্তরিত হয়েছে। এসব তেলকে খনিজ তেল হিসাবে শ্রেনীভুক্ত করার কারণ মানবজাতির উদ্ভবেরও বহু আগে এই তেল সৃষ্টি হয়েছে এবং এগুলো ভূগর্ভের বিভিন্ন স্থান যেমন: পাথরের স্তর, বালুর স্তর বা ফাপা স্থান থেকে আহরিত হয়। এসব ছাড়ারও অন্য অনেক ধরণের তৈলাক্ত পদার্থ প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হল পীচ। এটি স্বাভাবিক ভাবেই মাটির নিচে বা আলকাতরার খনির যেখানে ফাটল আছে সেখানে পাওয়া যায়। পেট্রোলিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ তেল (যা পেট্রোকেমিকেল নামেও পরিচিত) বর্তমান সময়ে মানব সভ্যতার জন্য এতই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদে পরিনত হয়েছে যে, এগুলোকে সর্বব্যাপী শুধুমাত্র তেল নামেই অভিহিত করা হয়। জৈব তেলঃ জৈব তেল গুলোও উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অন্যান্য জীব থেকে জৈবিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় এবং এসব তেলের প্রকারভেদ অনেক। রাসায়নের পরিভাষায় তেল একটি অস্পষ্ট শব্দ। পক্ষান্তরে তেল, চর্বি, মোম, কোলেষ্টরেল এবং জীব ও জীব নিসৃত তরল থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য তৈল জাতীয় পদার্থকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় লিপিড বা চর্বি জাতীয় পদার্থ (ইংরেজি: Lipid)। লিপিড গুলিকে (যা মোম থেকে স্টেরয়েড পর্যন্ত হতে পারে) নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দিয়ে বর্ণনা করা কঠিন। তবে একটি দিক থেকে এদের মধ্যে মিল রয়েছে, আর তা হল-এসকল পদার্থ কখনো পানিতে মেশে না বা দ্রবীভূত হয় না অথচ সহজেই অন্য লিপিডের সাথে মিশে যায়। এসব পদার্থের মধ্যেও উচ্চমাত্রার কাবর্ণ ও হাইড্রোজেন থাকে তবে অক্সিজেনের পরিমাণ অন্যান্য জৈব যৌগ বা খনিজ থেকে কম। সিনথেটিক তেলঃ সিথথেটিক তেল একধরণের পিচ্ছিলকারক যা কৃত্রিমভাবে পেট্রোলিয়াম নয় এমন ধরণের রাসায়নিক যৌগ দ্বারা প্রস্তুত করা হয়। সিনথেটিক তেল পেট্রোলিয়াম থেকে পরিশোধিত পিচ্ছিলকারকের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। কারণ এতে খনিজ তেল থেকে ভালমানের যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। প্রচলিত ভাষায় আরো অনেক তেল আছে যা উল্লেখিত তেলেরই বংশধর বা রূপ, যেমন-ষান্ডার তেল, কটুতেল, পাম তেল ইত্যাদি।
আমরা দৈনন্দিন জীবনে উপরে উল্লেখিত সব তেলই কমবেশি ব্যবহার করি। তবে একশ্রেণীর মানুষ যে তেল ব্যবহার করে সেই তেলের কোন রং নেই, বর্ণ নেই, সংজ্ঞা বা বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যাও নেই। এই তেল মুখ থেকে নিসৃত হতে পারে, আচার আচরনে হতে পারে। আজকের দিনে মানুষ জৈব বা খনিজ অথবা উদ্ভিজ তেলের চেয়ে মুখ নিসৃত তেলই বেশি ব্যবহার করে। মুখ নিসৃতি বা আচার আচরনের যে গুনটাকে আমরা তেল বলি সেটা অনেকটা সিনথেটিক তেলের মত কাজ করে। মানুষ এমন সব আচার আচরন করে যে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে তার কোন অসুবিধা হয় না। অযোগ্য মানুষ স্রেফ তেলের কারনে সমাজে এখন নামী-দামী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠছেন। লেখালিখি না করেও লেখক হন, সাংবাদিকতার ‘সা’ না বুঝলেও বিশিষ্ট সাংবাদিক হন, সম্পাদকের ‘স’ না বুঝেও সম্পাদক বনেযায়, তেলের গুণে হয়ে ওঠেন একাধিক সংগঠনের কর্তাব্যক্তি। রাজনীতিতে তেলের মহিমা কত তা বাঙ্গালিকে আর বলে বুঝাতে হবে না। আমাদের রাজনীতিকরা তেলবাজদের কারনে ঠিকমত পথও চলতে পারে না। পারবেই বা কিভাবে, তাদের চলার পথ যে পিচ্ছিল করে রেখেছে। তাইতো অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যরাও তৈলবাজী করতে বাধ্য হয় নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে।
তবে প্রসিদ্ধ তেলবাজ সেই হয় যে পরিমিত তেল দিয়ে একবার সাফল্যের চূড়ায় উঠে বসে পথটাকে তেল দিয়ে পিচ্ছিল করে রাখেন। এবার আপনি চূড়ায় বসে সুবিধাদী ভোগ করবেন আর কেউ যাতে সেখানে পৌছাতে না পারে সেই জন্য তেল দিয়ে পথটাকে পিচ্ছিল করে রাখলে দেখবেন নতুন যারা উঠতে চাইছে তারা উঠতে পারবে না, পিছলে পড়ে যাবে। তার মধ্যেও আপনার মত চতুর ধান্ধাবাজ যারা থাকবে তারা চেষ্টা করবে উঠতে, অনেকে সফলতার দাড় গোড়ায়ও পৌছে যাবে। তবে পারবে না, কারন কি জানেন? একটা গল্প প্রচলিত আছে, সকল নরকে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে শুধু একটা বাদে। একজন জিজ্ঞেস করলো যে ঐ নরকটায় কেন পাহারা বসানো হলো না, ওখান থেকে যদি কোন নরকবাসী উঠে এসে স্বর্গে ঢুকে যায়? তখন অধিকর্তা বললো-কোন সমস্যা নেই, ওখানে আছে বাঙ্গালিরা। তখন আগ্রহী ব্যক্তি বললো, বাঙ্গালিরা কি এত ভালো যে তারা উঠে আসবে না? তখন অধিকর্তা বললেন, আসবে। তারা চেষ্টাও করবে। একজন যখন একটু উঠবে তখন ঐ ব্যক্তির পা ধরে আরেকজন উঠার চেষ্টা করবে, এভাবে তার পা ধরে আরেকজন, একপর্যায়ে প্রথম ব্যক্তিটি আর ভার সহ্য করতে না পেরে হাত ফসকে পড়ে যাবে। তাই আমরা নিশ্চিন্তে থাকি যে ওখান থেকে একা কেউ উঠে আসতে পারবে না। তাই চূড়ায় আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন তবে খেয়াল রাখবেন আপনার তেলে যেন আপনি নিজেই পিছলে না যান।

Sunday, August 18, 2019

রাজশাহীর পথে পথে একদিন... স্বাধীনতার এতটা বছর পরেও কেন রাত বারোটায় শিশু দুই ভাইয়ের দুই দোকানে কাজ করতে হয়!

মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন...তাইরে নাইরে করে গেলো সারাটা জীবন.....। আসলেই মানুষের মন পাখির মত। এক ডালে বসে থাকতে কারোরই ভালো লাগে না। যেমনটা আমার ভালো লাগে না। বিভিন্ন ছল-ছুতায় বেরিয়ে পরতে চায় মন। ঈদ পরবর্তী সবাই কোন না কোন জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছে। জামাই, ওবিডিয়েন্ট জামাই, মোষ্ট ওবিডিয়েন্ট জামাই, ডোমেস্টিক জামাইদেরতো কথাই নাই। বন্ধু-বান্ধব কয়েকজন একসাথে হলেই সুর ওঠে চল বেরিয়ে পড়ি। মুক্ত ভাবে ঘুরার বাসনা সবার মধ্যেই থাকে যেমনটা আমার মধ্যেও আছে। তাইতো ঈদ পরবর্তী ছুটিটা কিভাবে কাটানো যায় সে নিয়ে চিন্তা করতে করতে বন্ধু শামীম সরদার বললো-চলো রাজশাহী ঘুরে আসি। সোনামসজিদ, পদ্মা নদী দেখে আসলে মন্দ হয় না। যদিও আমরা পদ্মা পাড়ের মানুষ। পদ্মার শান্ত-ভয়ানক রুপ দেখে দেখে বড় হয়েছি। তবুও আমাদের পদ্মা আর রাজশাহীর পদ্মা কেমন তা দেখা যেতেই পারে। যেমন কথা তেমন কাজ। বন্ধু শামীম সরদারের গাড়ি নিয়ে রাত বারোটায় বেরিয়ে পরলাম রাজশাহীর উদ্দেশ্যে।
বন্ধু শামীম সরদারের অফিস থেকে শাক-খিচুরি খেয়ে রওয়ানা দিলাম আমরা। পতে পথে গল্প, রাতের দৃশ্য হৃদয়ে ধারণ করতে করতে চলছে গাড়ি দূর্বার গতিতে। রাতের ভ্রমনে কিছুক্ষণ পর পর চা না হলে চলে না। মাদারীপুরের পথে আর চায়ের জন্য থামলাম না আমরা। গাড়ি গিয়ে থামলো ফরিদপুরের মুন্সির বাজার বাইপাসের মোড়ে। ফরিদপুর মুন্সির বাজার বাইপাসে বিশাল এক স্মৃতিস্তম্ভ আছে। এটা নুরু মিয়ার স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরী। নুরু মিয়া বাইপাসে নেমে সদরপুরের দিকে যে রাস্তাটা চলে গেছে সেদিকে একটা চায়ের দোকান খোলা। দোকানটি কদম গাছের নিচে। দোকানি ধুয়ে মুছে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গভীর রাতের চায়ের অনুভূতির একটা দাম আছে, তাই চায়েরও আলাদা দাম থাকে। সচরাচর যে চা আমরা ৫ টাকায় পাই সেই একই চা খেতে হলো দশ টাকা করে। দশ টাকা নিলেও আমাদের কোন আক্ষেপ নেই, আমরা চা নিলাম। দোকানির সাথে গল্পের ফাঁকে ফাঁকে চলছে চা পান। বাইপাসের গুরুত্ব শুনালেন আমাদের। আগে ফরিদপুরের এই রাস্তায় অনেক দূর্ঘটনা ঘটতো। রাস্তার একটা মোড় আছে যেখানে গাড়ি আসার সাথে সাথে চালকরা নাকি সাত আটটি রাস্তা দেখতো চোখের সামনে। দ্বিধাদন্দে ভূগে সবসময় মাঝের রাস্তা দিয়েই গাড়ি ঢুকিয়ে দিতো আর তাতেই ব্যাস! গাড়ি গিয়ে পড়তো লডা ক্ষেতে! পরবর্তীতে এই বাইপাস করায় অনেক দূর্ঘটনা কমে গেছে শুনালো দোকানি।
চা খেয়ে রাস্তা পাড় হয়ে বাইপাসের পাসের একটি দোকানের সামনে স্টিলের বেঞ্চিতে বসলাম। গভীর রাতের শুনসান নিরবতা ভাঙ্গছে অচেনা গাড়ির সাই সাই শব্দ। আপন শহর থেকে বহু দূরের কোন জায়গার নিরবতা অন্যরকম অনুভব হয়। যেখানে আমি কাউকে চিনিনা, কেউ চেনেনা আমাকেও! বসে বসে অনুভব করলাম, গভীর রাতের গাভীর দুধের এক কাপ ধূমায়ীত চা হৃদয়ে কতটা প্রশান্তি বয়ে আনতে পারে তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়! আমিও প্রকাশ করতে পারছি না সেই অনুভূতির কথা। সুযোগ হলে নিজেই কখনো চেখে দেখবেন কেমন অনুভূতি।
এখানে বসে বসে গভীর রাতের সৌন্দর্য অনুভব করলে হবে না, যেতে হবে বহু দূর! তাই চালক তারা দিলো, ওঠেন আগাই আমরা। আবার চলতে থাকলাম আমরা। মুন্সির বাজার থেকে বাইপাস দিয়ে রাজবাড়ীর মোড় পার হয়ে আমরা রাজবাড়ীর উপর দিয়ে কুষ্টিয়ার দিকে চলছি। কুষ্টিয়া আর রাজবাড়ীর মাঝামাঝি জায়গায় বেশ লোক সমাগম দেখে ভাবলাম কোন ডাকাতির ঘটনা। পরক্ষণেই দেখি একাধিক পুলিশের গাড়ি, কিছু মাইক্রোবাস দাড় করা। পুলিশের গাড়ি দেখে বুঝলাম কোন একটা ঝামেলা হয়েছে নিশ্চই! কাছে যেতেই দেখি একটা বড় বাস রাস্তা থেকে ছিটকে পাশের খালে পড়ে আছে। একই বয়সের কিছু যুবক ভেজা অবস্থায়। কেউ রাস্তার পাশে বসে আছে, কেউ পুলিশের কাছে জবানবন্দী বা স্বজনের বা আহত সঙ্গীর তালিকা দিচ্ছে, পুলিশ গাড়ির বনেটের উপর ডায়রি রেখে লিখছে। রাস্তার পাশে অসংখ্য স্কুল ব্যাগের মত ভারি ব্যাগ রাখা আছে। কেউ কেউ ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। দূর দূরান্ত থেকে লোকজন হাতে লাইট নিয়ে এগিয়ে আসছে। পরবর্তীতে শুনেছি ওটা একটা টুরিস্ট বাস ছিলো। স্কুল-কলেজের ছাত্রদের নিয়ে কোন জায়গায় বেরাতে যাচ্ছিলো। এমন ফাঁকা রাস্তায় দূর্ঘটনায় পড়া মানে চালক হয় ঘুমিয়ে পড়েছিলো নয়তো নেশা করেছিলো। যাহোক, আমরা আর ঝামেলায় না জড়িয়ে চলতে থাকলাম। আমরা অমানবিক নই কিন্তু! এখানে পুলিশের গাড়ি আছে, একাধিক মাইক্রোবাস হয়তো পুলিশই এনেছে, তাই আমাদের দর্শক হয়ে ভীর বাড়ানো ছাড়া কোন কাজ হতোনা। আর আমরাও যেহেতু অনেক দূর যাবো, এমন পরিস্থিতি দেখলে হয়তো আমাদেরও খারাপ লাগতে পারে, যার ফল হিসাবে আমাদেরও কোন সমস্যা হতে পারে, সেই ভেবে আমরা চলতে থাকলাম।   
আমরা কুষ্টিয়া হয়ে পাবনার দিকে যাচ্ছি। লালন সেতু পার হতেই বিশাল বিশাল ইমারত চোখে পড়লো। আলো ঝলমলে ইমারত দেখে বন্ধু শামীম বললো, এগুলো কি? আমি মুহুর্তেই বুঝেগিয়ে বললাম, এগুলোই বাশি কান্ড! শামীম সরদার বললো, বালিশ কান্ড মানে কী? বালিশ কান্ড মানে হলো একটা বালিশের মূল্য সাত-আট হাজার আর তা এই ভবনে উঠাতে বলদ বাবদ লাগছে ছয়-সাত হাজার, সেই রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র! চলতে চলতে আমরা পাবনা থেকো নাটোরের দিগের রাস্তার মোড়ে গিয়ে আবার যাত্রা বিরতি দিলাম। মোড়েরর চায়ের দোকানে আমাদের মত আরো অনেকেই চা খাচ্ছে দেখলাম। শ্রমিক যারা আছে তারা হয়তো পেটের দায়ে আর আমরা মনের দায়ে গভীর রাতে রাস্তায়। আমরা চা খেয়ে আবার চলতে শুরু করলাম। গাড়িতে উচ্চ ভলিউমে গান চলছে বিরতিহীন ভাবে। বাংলা-হিন্দী কোনটাই বাদ যাচ্ছে না। শুধু ইংরেজী গান শুনিনি! মনির খানের কলিজা কাটা বিচ্ছেদ, গুরু জেমসের, ইন্দ্রানীর গান, নতুন শিল্পীদের, সবার গানই ভালো লাগবেছ। গভীর রাতের গান বলে কথা। রাস্তার ধারের দোকানগুলো সবই বন্ধ। মাঝে মাঝে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা হাটাহাটি করছে। এছাড়াও আছে কিছু বেওয়ারীশ কুকুর। নাটোরের বুকচিরে চলছে আমাদের গাড়ি। নাটোর পার হতে হতে আমাদের সূর্যমামা উকি দিতে শুরু করেছে। রাস্তায় প্রচুর গাড়ি চলছে। বড় বড় বাস, আমাদের মত অনেকেই প্রাইভেট কার, জীপ, মাইক্রো নিয়ে ছুটেছে। উদ্দেশ্য হয়তো একেক জনের একেক ধরনের। কখনো আমরা গাড়িকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছি আবার কখনো আমাদের পাশ কাটিয়ে সাইসাই করে চলে যাচ্ছে কেউ কেউ। রাজশাহী পৌছাতে পৌছাতে আমাদের ভোর হয়ে গেলো। রাজশাহী ঢুকে দেখি রাস্তায় সবজি বিক্রেতারা কেনাবেচা করছে। আমরা একটা হোটেলে উঠলাম। সারা রাতের জার্ণি! শরীর আর মানতে চাইছে না। একটু বিশ্রাম না নিলে হবে না। ঘুম হয়তো আসবে না, তবুও শরীরটাকে টান টান করা আরকি!
একটু বিশ্রাম নিয়ে উঠে পড়লাম আমরা। হেটেল থেকে বেরিয়ে আগে নাস্তা সারলাম। সকাল সকাল ভাত-ডাল মেরে দিলাম! এবার একটু ঘুরাঘুরি করা দরকার। প্রথমেই গাড়ি নিয়ে দর্শনীয় কিছু স্থান দেখে নিলাম কিন্তু নামলাম না। শুক্রবার হওয়ায় কোন কিছুই তেমন খোলা নেই। বরেন্দ্র যাদুঘর বন্ধ। সবকিছুই দেখলাম কিন্তু নেমে দেখলাম না। গাড়িতে বসেই মুখটা দেখলাম। মুখচ্ছবিতে যদিও সকল সৌন্দর্য বিরাজ করে না, তবে মুখচ্ছবি দেখলে অনেক সময় দেখার বড় একটা অংশ পূর্ণ হয়, আমরাও তেমনি করছি। ঘুরতে ঘুরতে গেলাম পদ্মা পাড়ে।
পদ্মা পাড়ের মানুষ আমরা। তবুও রাজশাহী গিয়ে পদ্মার নাম শুনে চলে গেলাম দেখা করতে পদ্মার সাথে! রাজশাহী ঈদগা মাঠের পাশে গাড়ি রেখে তীরে নামলাম। বিশাল শহর রক্ষা বাধ পাড় হয়ে নিচে নামতেই চোখে পড়লো মুক্তমঞ্চ। চমৎকার করে সাজানো মুক্তমঞ্চ। জেলাটি শিল্প সংস্কৃতিতে অনেক আগানো একটি শহর। অনেক পুরাতন স্থাপনা নজরে আসলো। মুক্তমঞ্চটি দেখলেই বুঝাযায় এখানে মানুষ শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করে। কারন এখানে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করার মত স্পেস নয়। শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায় যে পরিমান মানুষ হওয়ার কথা তার চেয়ে একটু বেশি জায়গা নিয়ে করা। খুবই শৌল্পিক নকশায় করা হয়েছে যা অনেকটা রাজধানীর ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরের আদলে তৈরী। মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে হাটার মত রাস্তা করা। মানুষের শরীর স্বাস্থের কথা চিন্তা করেই হয়তো এই ওয়াকওয়েটা তৈরী করেছে। এর পর নদীর বিশাল অংশের শুরু। শুরুটা কাশবনে বা কাইয়া বন দিয়ে আবৃত। একটু দূরেই বিশাল পদ্মা নদী। কাশবনে বেশ ‍কিছু দোকান গড়ে উঠেছে। প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে দিয়েছে ফুচকা-চটপটির দোকানিরা। স্কুলে কলেজে পড়ুয়া অনেককে দেখা গেলো। আছে মধ্য বয়সীসহ অনেক মানুষ। আমরা যেদিন গিয়েছি সেদিন শরতের প্রথম দিন। আমরা যেমন বলি ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত তেমনি কাশফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ শরৎ। কাশবন এখন ঘণ সবুজ। কিছুদিন পরই হয়তো সফেদ সাদা কাশফুল শোভা পাবে ঘাসের চুড়ায়। কাশবনের পরেই পদ্মার শুরু। এর পর দিগন্ত জোরা আকাশ। অপর প্রান্ত পর্যন্ত যতদূর চোখ যায় শুধু পদ্মাই। শরীয়তপুরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা, মেঘনা, কীর্তিনাশা নদী। পদ্মার একই রুপ, একই জল, প্রবাহও একই রকম। শুধু দৃশ্য একেক জায়গায় একেক রকম। অনুভবও একেক জায়গায় একেক রকম। পদ্মাপাড়ের মানুষ হয়ে পদ্মা দেখছি নয়ন ভরে শুধু আমাদের পদ্মা থেকে অনেক দূরে গিয়ে। 
পদ্মার পাড় দিয়ে হাটতে হাটতে একটা দোকানের সামনে গাছের নিচে পাতা চেয়ার-টেবিলে গিয়ে বসলাম। চেয়ারে বসতেই এক সেবক আসলো আমাদের সামনে। আমরা যেখানে বসেছি তার পাশ দিয়েই ছোট একটি পদ্মা বয়ে চলেছে। এর পর চরের বুকে কাশবন তারপর প্রমত্তা মূল পদ্মা নদী। পদ্মার শাখাটা দিয়ে ট্রলারে করে মানুষ ঘুরছে। সেখানে বসে বসে সৌন্দর্য খালি মুখে দেখলে কেমন হয়! তাই শামীম সরদার আর আমি কোল্ড কফি নিলাম। অল্প অল্প কফি খাচ্ছি আর বেশি সময় পার করে বেশি বেশি সৌন্দর্য দেখছি।পদ্মাকে ঘিরে এখানে তীর জুড়ে বিশাল ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। দোকানের সংখ্যা ও সাজ সজ্জা দেখলেই বুঝাযায় এখানে বিশাল এক বাণিজ্য গড়ে ইঠেছে যা দেশের মূল অর্থনীতিতে স্পর্শ করে। পদ্মা আমাদেরও আছে। কিন্তু আমাদের নেই সিদ্ধান্ত নেয়ার নেতা, নেই আন্তরিক আমলা। আমাদের পদ্মাকে ঘিরে শুধুই হাহাকার। ভাঙ্গছে ভাঙ্গছে বলে আমরা গলা ফাটাই। অথচ এখানে পরিকল্পিতভাবে পদ্মাকে নিয়ন্ত্রণ করে গড়ে উঠেছে ব্যবসা বাণিজ্য। আমরা যদি আমাদের পদ্মাপাড়কে এমন সুন্দর করে শাসন করে পর্যটন কেন্দ্র করে দিতাম তবে কক্সবাজার থেকে মানুষ আসতো পদ্মার রূপ দেখতে। পর্যটন এমন একটা শিল্প যা করে বহু দেশ এগিয়ে গেছে। বহু জেলার চিত্রই বদলে গেছে পর্যটনের কারনে। আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে, যে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে? প্রশ্নটা বার বার মনে দোলা দিলো। উত্তর কেউ দিবে না সেটাও হৃদয় বলে দিলো আমাকে। তাইতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৈকত কক্সবাজার থেকে আমরা কাঙ্খিত অর্থ উপার্যন করতে অক্ষম, তেমনি পদ্মার বড় একটা অংশ আমাদের থাকতেও সেটার সদব্যবহার করতে পারিনি।
দুপুর হয়ে গেছে। পেট জানান দিচ্ছে কৃমি মরে যাচ্ছে তোর! এবার কিছু খেতে হবে। নদীর পাড় থেকে চলে গেলাম হোটেলে। পদ্মাপাড়ের জেলায় এসে পদ্মার ইলিশ খাবো না সেকি হয়? তাই ইলিশ মাছ দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রামে গেলাম। সারা রাত জেগে সকালে বিশ্রামের নামে শরীর যতটুকু চার্য দিয়েছি তাতে আবার একটু ক্লান্ত অনুভব হচ্ছে। তাই দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রামে গেলাম। সন্ধায় উঠে বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়। গাড়িতে করেই এদিক সেদিক ঘুরছি আর দেখছি। মাঝে মাঝে থেকে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। প্রবল বর্ষণ বলা যাবে না। গুরিগুরি টাইপ বৃষ্টি। তাই কোথাও নামার চেয়ে গাড়িতে বসেই রুপ দেখা ভালো বলে মনে হলো।
রাত বারোটা বেজে গেছে। গভীর রাতই বলাযায়! রাজশাহী একটা মহানগর। মহানগরে রাত বারোটা তেমন গভীর রাত মনে হয়নি। মূল শহরে এখনও কিছুটা মানুষের চলাচল চোখে পড়ে। ঘুরতে গেলে এতটা আগে আমরা কখনোই বিশ্রামে যাই না। রাতের খাবার খাওয়া দরকার কথাটা মনে পড়তেই মনে হলো এখানে কালাইর রুটির খুব সুনাম আছে। কিছুদিন আগে আমাদের কয়েকজন আইনজীবী ভাই বেড়াতে এসেছিলো। তারাও কালাইর রুটি খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছে। সাথে সাথে ফোন দিলাম রোকনকে। রোকন বললো এটা উপ-শহরে পাওয়া যায়। এত রাতে উপ-শহর কোনদিকে খুজতে খুজতে শামীম সরদারের চোখে পড়লো একটা ঝুপড়ি ঘর। সেখানে এক মহিলা কি যেন ভাজছে। গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করতে করতে নিজেদের চোখেই ধরা পড়লো যে, মহিলা মোটা মোটা কালচে বর্ণের রুটি ভাজছে। রেল লাইনের পাশে রেল কর্তৃপক্ষের জায়গায় বসেছে দোকান। আমরা রুটি চাইলে আমাদের জানায় আজ আর হবে না। দুজন যুবক বসা। তাদের দশটা রুটির অর্ডার আছে। এর পর আর খামির করা নাই তাই দেয়া যাবে না। আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি শুনে এবং আমাদের আগ্রহ দেখে চেয়ার দিলো বসতে। কারিগর বা দোকানি একজন হিলা, সেবক হিসাবে মহিলাকে সহায়তা করছে ছোট্ট শিশু এই সেই কালাইর রুটি! আমরা যখন গেছি তখন বেচাবিক্রি শেষ তবুও আমাদের অনুরোধে নতুন করে আটার খামির করে তিনটি রুটি তৈরী রে দিলো খাওয়ার মত উপাদানও তেমন নেই! শুধু পিয়াচ কুচি আগ্রহ দেখে আমাদের কিছু বেগুন ভর্তা রে দিলোদোকানি জানালো, বিভিন্ন প্রকার ভর্তা, হাসের মাংস, গরুর বট, গরুর মাংস দিয়ে খেতে হয়। সব বেচা হয়ে গেছে। পিয়াচকুচিটা ফ্রি দেয়া হয়, আমাদের কাছ থেকেও পেয়াজকুচির দাম নিলো না। শামীম সরদার সাথে পেলো গরুর বট বা ভুরি! আমি ওটা কোন কালেই খাইনি, আজও খেলাম না ত্রিশ টাকা রে প্রতিটি রুটির দাম। রুটির চেহারা দেখে মনে হলো খাদ্যাভাব লে হয়তো ত্রিশ পয়সায়ও কিনতাম না, কিন্তু নাম ডাকের কারনে তা ত্রিশ টাকায়ই কিনে খেলাম, তাও চেটেপুটে! মোটা, কালচে রুটিগুলো আমাদের এলাকার চডা পিঠা বা চাপটির মত যা আধুনিক মানুষেরা দোসা বলে তেমন দেখতে রুটিগুলো। স্বাদের কথা বললে বলবো-একেবারে মন্দ নয়, তবে প্রতিদিনের জন্য নয়।
আমাদের যে রুটি-পানি এগিয়ে দিয়ে সেবা করলো সেই সেবক ছেলেটা দেখতে খুবই ছোট। আমাদের চা-পানি এনে দিলো, এগিয়ে দিলো। আমাদের তিনটা রুটি দেয়ার পর একটা রুটি ছেলেটাকে খেতে দিলো দোকানি মহিলা। শামীম সরদার বটের প্লেট থেকে এক টুকরো মুখে দিয়ে ভালো না লাগায় রেখে দিয়েছিলো। সাথে তার চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায় প্রায় অর্ধেকটা রুটিও রেখে দিলো। সেবক ছেলেটা একটু দূরে বসে খাচ্ছে। আমি ওকে ডাক দিয়ে বললাম, বটটা নষ্ট হয়নি, আর খাবেও না। তুমি চাইলে খেতে পারো। শামীম বললো রুটিটাও নিয়ে যাও আমি আর খাবো না। ছেলেটা হাসি মুখে নিয়ে খেতে বসলো। এরই মাঝে পাশের চায়ের দোকানের আরেক সেবককে ডাক দিলো। ছেলেটা আসার পর তার অর্ধেকটা খাবার খেতে দিলো। দোকানি মহিলা তখন বললো, এটা ওর ভাই। ওরা দুই ভাই এই দুই দোকানে কাজ করে। দেখে খুব কষ্ট লাগলো আবার গর্বও হলো যে কাজ করে খায়। সবচেয়ে বেশি অবাক লাগলো ছোট ভাইয়ের প্রতি মমত্ববোধ দেখে। ভাইর জন্য বটের বেশিরভাগ অংশ রেখে খেয়েছে। আমাদের পাশের বেঞ্চে বসেই যখন ছোট্ট ছেলেটি খেতে শুরু করলো প্রথম লোকমা মুখে নিয়ে কিছুটা চিবুনোর পরে গিলার সময় গলায় আটকে গেলো। 
আমি দোকানের একটু বাইরের অংশে খোলা আকাশের নিচে ছেলেটার দিকে মুখ করে চেয়ারে বসে চা খাচ্ছিলাম। শামীম সরদার ছেলেটাকে পিছনে রেখে আমার দিকে মুখ করে চা খাচ্ছে। ছেলেটার ভাই গেছে পানি আনতে। ওর গলায় খাবার আটকে গেছে, চোখগুলো বড় বড় হয়ে মনে হচ্ছে বেরিয়ে যাচ্ছে এবং নিঃস্বাস নিতে পারছে না দেখে আমি দূর থেকে শামীমকে বললাম আমাদের পানির বোতলটা ওকে এগিয়ে দিতে। আমাদের পানির বোতলের মুখ খোলাই ছিলো। শামীম তারাতারি ঘুরে বোতলটা ছেলেটার হাতে দিয়ে বললো পানি খাও। ছেলেটা প্রচন্ড জোড়ে পানির বোতলের মুখ খোলার জন্য বোতলের মুখ মোচরাচ্ছে। আমি তখন ঐ দৃশ্যটা দেখে ওকে বললাম, বোতলের মুখ খোলাই আছে, তুমি পানি খাও তারাতারি। পরে পানি খেয়ে গলা থেকে নামালো। কালাইর রুটি একটু শক্ত শক্ত। বাচ্চা ছেলে, তারাহুরা করে খেতে গিয়ে গলায় আটগে গিয়েছে। পানিটা খাওয়ার পরে ওর চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে পড়লো। এটা কোন কান্নার বা আবেগের অশ্রু নয়, ছোট ছেলেটার জন্য কষ্টের অশ্রু। ওর খাবার নেয়া দেখে এবং চোখের অশ্রু দেখে আমার হৃদয় নিংড়েও অশ্রুক্ষরণ হলো কিন্তু প্রকাশ করলাম না। ওকে বললাম, তুমি আস্তে আস্তে খাও, পানিটা তোমার কাছেই রাখো। পরদিন চলে আসলাম নিজ জেলায়। কিন্তু ছেলে দুটির মায়াভরা মুখ আর ছোট ছেলেটার গলায় খাবার আটকে যাওয়ার ও অশ্রু ঝড়ার দৃশ্যটা হৃদয় থেকে মুছতে পারছি না। আমরা কবে দারিদ্রতা গলা থেকে নামাতে পারবো? দারিদ্রতা আমাদের গলায় আটকে পানির অভাবে দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা কিছুই করতে পারছি না। আর কবে পারবো। স্বাধীনতার এতটা বছর পরেও কেন রাত বারোটার পরে শিশু দুই ভাইর দুই দোকানে কাজ করতে হয়!

Wednesday, August 14, 2019

জাতীয় শোক দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলিঃ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা

আমার জন্ম আটাত্তরে। একাত্তর, পচাত্তরেরও অনেক পরে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখিনি, যুদ্ধ পরবর্তী হাহাকার দেখিনি, সুবিধাবাদীদের লুটতরাজ দেখিনি, ক্ষমতালোভীদের হাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে হত্যাযজ্ঞও দেখিনি। অনেক কিছুই দেখার সুযোগ হয়নি। যখন বুঝতে শিখেছি, জানতে শিখেছি তখন থেকেই দেখেছি বঙ্গবন্ধু বিদ্বেষী মানুষের শাসন, শোষণ, ভাষন, আষ্ফালন, প্রচার, অপপ্রচার, বিকৃতি, আত্ম-স্বীকৃতির মহাউৎসব। কিন্তু আগুন কখনো চাপা থাকেনা শুনেছি সেই ছোটবেলা থেকেই। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আগুণের মত শক্তিশালী সেটা অনুভব করেছি এবং এখনও তা অনুভব করছি। দাবিয়ে রাখার শত চেষ্টায়ও সেই ভাষণ দাবিয়ে রাখতে পারেনি বঙ্গবন্ধু বিদ্বেষীরা। শত প্রতিকূলতার পরেও কানে এসেছে সেই ভাষণ। কখনো মৃদু সুরে, কখনো উচ্চ সুরে। শুনেছি সেই ভাষণ মুগ্ধ হয়ে। দল কী বুঝতাম না, দল কেন করে বুঝতাম না, দল কারাই বা করে তাও বুঝতাম না। নিজের অজান্তে তবুও হৃদয়ে গেথে গেছে সেই ভাষণ। তাইতো মনে হয় বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা, এক অবিচ্ছেদ্য নাম।

আমাদের একটা স্বাধীন দেশ হবে, একটা স্বাধীন পতাকা থাকবে, একটা সংবিধান থাকবে যেখানে থাকবে মানুষের অধিকারের কথা, মানুষে মানুষে থাকবে না ভেদাভেদ এমন চিন্তা যারা করতেন তাদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিলেন যে মহামানব তিনিই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমান একদিনে মহামানব হয়ে ওঠেননি, একদিনে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি। দীর্ঘ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে মহামানব হয়ে উঠতে, বাংঙ্গালি জাতির পিতা হয়ে উঠতে। যার কাছে ধনী গরিব, মুসলিম-অমুসলিম, জাত-পাতের কোন বিচার ছিলো না, ছিলো মানবতার বিচার। তাইতো শত চেষ্টাও বঙ্গবন্ধুকে মানুষের হৃদয় থেকে সরাতে পারেনি একচুলও। বঙ্গবন্ধু তাই মুক্তিকামী মানুষের নেতা হয়ে হৃদয়ে বেঁচে আছে, থাকবে।
একটা ভাষণ মানুষকে কতটা বদলে দিতে পারে, একটা ভাষণ মানুষের মনে কতটা আশা জাগাতে পারে, একটা ভাষণ মানুষকে কতটা উদ্বুদ্ধ করতে পারে তা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ না শুনলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। এখন মানুষের মধ্যে অবিশ্বাসের বিষ ছড়িয়ে গেছে শিরায়-উপশিরায়। নেতাদের ভাষণ এখন কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। নিজেদের সুবিধার জন্য যা-তা বলে ফেলেন মঞ্চে দাড়িয়ে। সত্যির সাথে মিথ্যার মিশ্রন এতটাই ঘটায় যে সত্যটাও তখন আর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না বা কেউ বিশ্বাসও করে না। বঙ্গবন্ধুর নির্লোভ, নিঃস্বার্থ, বিদ্রোহী, মানব দরদী ভাষণ শুনে, তাঁর কথা বিশ্বাস করে, তাঁর কথার উপর আস্থা রেখে বুকের তাজা রক্ত দিতে ঝাপিয়ে পড়েছিলো লক্ষ লক্ষ মানুষ। সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের বুকের তাজা রক্তে লিখেছে স্বাধীন বাংলার নাম, এঁকেছে একটি স্বাধীন দেশের পতাকা, ছিনিয়ে এনেছে একটি স্বাধীন দেশের মানচিত্র। দেশ ও জাতির জন্য মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বার বার যে মহামানব সেই আমাদের বঙ্গবন্ধু, বাঙ্গালি জাতির পিতা। নিজ স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে দেশ ও জাতির কল্যানে বঙ্গবন্ধু যে আহবান জানিয়েছিলো জাতি তার ডাকের যথাযথ সাড়াই দিয়েছিলো সেদিন। তাইতো আজ স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে কথা বলি, কাজ করি, মুক্ত জীবণযাপন করি।
একটি ভাষণ কতটা উদ্দীপক, কতটা জ্বালাময়ী, কতটা আবেগী, কতটা বাস্তবসম্মত, কতটা বিশ্বাসযোগ্য হলে মানুষ তাঁর কথা শুনে ঝাপিয়ে পড়েছিলো মৃত্যুর মুখ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে সেটা বর্তমান স্বাধীন দেশের দিকে তাকালেই কেবল অনুধাবন করা যায়। তাইতো দীর্ঘদিন পরে হলেও ইউনেস্কোর একটি উপদেষ্টা কমিটি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে দেয়া বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামান্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ধরনের দলিলগুলো যে ‘মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভূক্ত করা হয় সে তালিকায় এ ভাষণটিকেও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে আসা প্রস্তাবগুলো দু’বছর ধরে নানা পর্যালোচনার পর উপদেষ্টা কমিটি তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে বলে ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়। মূলত এর মাধ্যমে বিশ্ব জুড়ে যেসব তথ্যভিত্তিক ঐতিহ্য রয়েছে সেগুলোকে সংরক্ষণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের যাতে তা থেকে উপকৃত হতে পারে সে লক্ষ্যেই এ তালিকা প্রণয়ন করে ইউনেস্কো। ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে এখন পর্যন্ত অন্তর্ভূক্ত হয়েছে সব মহাদেশ থেকে ৪২৭টি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস বা কালেকশন। ইউনেস্কোর যে উপদেষ্টা কমিটি এ মনোনয়ন দিয়েছে সেই কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল আর্কাইভসের মহাপরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আলরাইসি। প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে ওই বৈঠকে তিনি ছাড়াও উপদেষ্টা কমিটির আরও ১৪ জন সদস্য ছিলেন যারা সবাই বিশ্বখ্যাত বিশেষজ্ঞ। আজকের স্বীকৃতিই বলে দেয় সেদিনের ভাষণ শুনে বীর বাঙ্গালি কোন ভুল করেনি।
সকল মানুষের রক্তের রং একই হয় কিন্তু সকল রক্তের আচরন, স্বভাব এক নয়। কিছু রক্তের স্বভাব নির্লোভ, কিছু রক্তের স্বভাব হয় ঘাতকের। এই দেশে যেমন নবাব সিরাজ উদ দ্দৌলা, বঙ্গবন্ধুর মত মহামানব জন্ম নিয়েছিলো তেমনি কিছু মীর জাফর, ঘসেটি বেগমও জন্ম নিয়েছিলো। সকল বাঙ্গালির রক্ত পরিস্কার, নির্লোভ, উদার, ইমানদার বলা যাবে না। এ অঞ্চলে বেইমানের ছড়াছড়ি বৃটিশ শাসন-শোষণের সময় যেমন ছিলো, স্বাধীনতা পরবর্তীতেও ছিলো, আজো আছে। তাইতো মীর জাফররা, ঘসেটি বেগমরা যুগে যুগে জন্মনেয় এবং তাদের রক্তের স্বভাবসুলভ কাজগুলো করে দেখায়। বঙ্গবন্ধু কেবল দেশের জন্যই ভেবেছিলো, দেশের মানুষের কথা ভেবেছিলো। কিন্তু ঘাতকরা ভেবেছিলো তাদের স্বার্থের কথা, জিঘাংসার কথা, প্রতিহিংসার কথা। তাইতো বুলেট সেদিন ঘাতকের নিশানা খুজে পেয়েছিলো। একটি জাতির পিতা, যার জন্য পেলাম একটি স্বাধীন দেশ, যার কথায় লাখো মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছিলো সেই বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করতে আমাদের বুক কাপেনি এতটুকুও। কারন আমাদের রক্তে যে মীর জাফর, ঘসেটি বেগমদের রক্তের উপাদান প্রবাহমান আছে।
কষ্ট লাগে যখন ভাবতে হয় যার জন্য স্বাধীনতা পেলাম তাঁকেই হত্যা করতে বুক কাঁপেনি, হাত কাপেনি স্বাধীন দেশের ঘাতকদের। আজও ঘাতকরা ওৎপেতে আছে। আজও ঘাতকরা বুক ফুলিয়ে চলে। কতটা নির্লজ্জ হলে এমনটা করতে পারে। ঘাতকরা জানতো না, মহামানব দেহ ত্যাগ করলেই সব শেষ হয়ে যায় না, থেকে যায় তার আদর্শ, থেকে যায় তার নীতি, থেকে যায় তার বাণী, থেকে যায় তার ঐতিহাসিক ভাষণ। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে আর নেই কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে, তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ অনুসরন করেই পথ চলছি। তাইতো বঙ্গবন্ধুদের মৃত্যু হয় না। যেমন মৃত্যু হবে না লাখো শহীদের রক্ত দানের-জীবন দানের ইতিহাসের, তাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের। তাইতো সবাই বলেন, বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা, এক অবিচ্ছেদ্য নাম। জাতীয় শোক দিবসে সেই মহান নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

Monday, August 5, 2019

জঞ্জাল একদিনের নয়, পরিস্কারও একদিনে হবে না


জঞ্জাল একদিনে জমে না। আস্তে আস্তে জমে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকনা জমতে জমতে পাহাড় না হলেও বালিয়াড়ি তৈরী হয়, বিন্দু বিন্দু জলকনা জমে সিন্ধুতে রূপ নেয় ঠিক জঞ্জালও তেমনি অল্প অল্প আকারে জমতে থাকে। একদিন তা পাহাড়সম হয়ে দাড়ায়। সেই পাহাড়সম জঞ্জাল একদিনের প্রচেষ্টায় পরিস্কারও সম্ভব নয়। তাই হঠাৎ করে অতি উৎসাহ দেখিয়ে লাভ নেই। মাঝে মাঝেই আবেগের বসে বা লোক দেখানোর জন্য আমরা জঞ্জাল পরিস্কার করতে নামি, পরিস্কারের কথাও বলি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। আমাদের প্রয়োজন জনসচেতনাত বৃদ্ধি করা, নিজ নিজ দায়িত্ববোধ সম্পর্কে অবগত থাকা, নিজ নিজ কাজগুলো যথা সময়ে সঠিকভাবে করা, আইন ও নীতিবোধের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো। তবেই মুক্তি আসবে সকল জঞ্জাল থেকে।


জঞ্জাল বলতে শুধু পূতিগন্ধময় ময়লাই নয়। দেশে সকল সেক্টরে এখন জঞ্জালে ভরা। কোন কোন জঞ্জাল গন্ধ ছড়ায় আবার কোন কোন জঞ্জাল গন্ধ ছড়ায় না। জঞ্জাল আছে অনুভব করা যায় কিন্তু গন্ধ পাওয়া যায় না। মানুষের মাঝে ভেজাল মানুষের জঞ্জাল, খাদ্যে বিষের জঞ্জাল, অফিস আদালতে ঘুষখোরের জঞ্জাল, ধর্মে লেবাসধারীর জঞ্জাল, রাস্তাঘাটে ফিটনেসবিহীন গাড়ির জঞ্জাল, রাস্তার পাশে-পরিবেশে ময়লার জঞ্জাল, রাজনীতিতে সুবিধাবাদী লোভী নেতাদের জঞ্জাল। জঞ্জালে জঞ্জালে সয়লাব হয়ে গেছে। এ জাতি এখন জঞ্জালের ভারে নূয়ে পড়ার জোগার। আর কত জঞ্জাল বয়ে বেড়াবো আমরা? এরতো একটা বিহিত করা দরকার। জঞ্জাল যখন নাকের কাছে এসে সুরসুরি দেয় তখনই আমাদের চেতনা জাগ্রত হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় জঞ্জালের মোকাবিলা করছি আমরা। মশা এদেশে আগেও ছিলো, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। সেই মশা যখন ডেঙ্গুর জিবানু বহন করে পৌছে দিচ্ছে আমাদের শিরায় শিরায় ঠিক তখনই আমরা নড়েচড়ে বসছি। মানুষ মরে যখন প্রমান করলো মশা দ্বারা ডেঙ্গু জিবানু শরীরে ঢুকছে, অসুস্থ করছে মানব দেহ। ঠিক তখনই বুঝতে পারলাম জঞ্জালে এডিস আছে, ডিম পাড়ছে, বাচ্চা করছে আর আমাদের মারছে। এবার উঠে পড়ে লাগলাম জঞ্জাল পরিস্কারে। কিন্তু এডিস মশার বাসাটা আমরাই তৈরী করে দিয়েছি। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে রেখেছি, সেই ময়লায় পানি জমেছে, অপরিকল্পিত ভাবে ছাদকৃষি করছি, টবে পানি জমিয়ে রাখছি। সেই পানিতে পরম যত্নে ডিম পারছে এডিস সাহেব। অতঃপর ডিম ফুটে বাচ্চা এবং আমাদের কামড়ে ডেঙ্গুর জিবানু পৌছে দেয়ার কাজটি করে দিচ্ছে। ময়লা ফেলার ক্ষেত্রে যদি একটু সতর্ক হতাম, যথাযথ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলতাম এবং সেই ময়লা নিয়ম মত রিসাইকেল করতাম বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতাম তবে আজ ময়লার এত জঞ্জাল জমতো না। সখের বসে যে ছাদকৃষি করছি, টবে সুন্দর ফুল-ফল গাছ লাগাচ্ছি, সেটা যদি পরিস্কার রাখতাম তবে মশা আর ডিম পেরে বংশ বিস্তার করতে পারতো না। নাড়িকেল-ডাব খেয়ে, দই-আইসক্রিম খেয়ে, অপ্রয়োজনীয় গাড়ির টায়ারটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে সেখানে মশার বংশ বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছি আমরাই। তা যদি না করতাম তবে আজ এডিস নিয়ে এতো চিন্তা করতে হতো না।

আজ যখন এডিস মশার দাপট শুরু হয়েগেছে ঠিক তখন আমাদের চেতনা জাগ্রত হয়েছে। ঝাড়ু নিয়ে নেমে পড়ছি পরিস্কার রাস্তায় যে রাস্তাটা হয়তো একটু আগেই কোন প্রকৃত সেবক ঝাড়ুদার তার দায়িত্ব হিসাবে বা নির্ধারিত কাজ হিসাবে পরিস্কার করে গেছে। নির্লজ্জ, বেহায়ার মত একটা ঝাড়ুর হাতলে তিন-চারজনে ধরে ঝাড়ু দেয়ার ভান করছি। চোখে কালো সানগ্লাস লাগিয়ে, কেউ কেউ জামার উপর গেঞ্জি পড়ে মাঠে নেমেছি। অথচ ঐ গেঞ্জিটা আসল ঝাড়ুদারকে দিলে সে পরম যত্নে গায়ে দিতো। কেউ কেউ ভুড়ির কারনে ঝাড়ু ধরে নিচু হতে পারে না। এভাবে ক্যামেরার সামনে আসার কি দরকার আমাদের? হয়তো অনেকেই বলবেন, এটা একটা প্রতীকী রূপ। মানুষকে উৎসাহিত করতে এটা করছেন। তাদের দেখে সাধারণ মানুষ উদ্ভুদ্ধ হবেন, ঝাপিয়ে পরবেন ময়লার স্তুপে! বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন প্রতীকী কাজও বিরুপ কর্ম হয়ে দাড়ায়। মানুষ উদ্ভুদ্ধ হওয়ার চেয়ে ঘৃণাই প্রকাশ করে বেশি। যারা এমনটা করছে তারা হয়তো ভাবছে মানুষ এসব ভন্ডামি বোঝে না, কিন্তু তারা এটা বোঝে না যে মানুষ এখন সব বুঝতে পারে!

এটাতো গেলো জঞ্জালের কারনে প্রকৃতির এক বিরূপ আচরনের কথা। দেশে আরও জঞ্জাল আছে। আগেই যেটা বলেছি। অফিস আদালতে ঘুষ বাণিজ্যের কারনে কোন কাজই ন্যায়সঙ্গত ভাবে করা যায় না। অফিস আদালতে ঘুষখোররা হচ্ছে জঞ্জাল। মাঝে মাঝেই দুদক সহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এসব জঞ্জাল সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু সেটা মাছ দিয়ে উদাহরণ টানলে বলা যায় চুনোপুটির সাইজ। রাঘব বোয়ালদের ধরা হয় না। আর রাঘব বোয়ালরা বহাল তবিয়তে থাকার কারনে ঘুষখোর জঞ্জাল পরিস্কারের মহরা দেখে আমরা হাসি। সেটা কর্তৃপক্ষ হয়তো বুঝতে চায় না বা পারে না।

খাদ্যে এক আজব জঞ্জাল ভেজাল। ভেজালে ভেজালে, বিষে বিষে খাদ্য এখন অখাদ্য হয়ে যাচ্ছে। ছাগল কম খেলে কিছু হয় না, কিন্তু বেশি খেলে পেট ফুলে মরে। আমাদের অবস্থাও এখন ছাগলে মত কম খাদ্যে বেশি বেশি ভেজাল খেয়ে মরতে হবে। দেশে কতজনই বা মাদক সেবন করেন? গুটিকতেক লোক মাদক সেবন ও ব্যবসা করে তার জন্য আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করি। অথচ ষোল কোটি মানুষ যে খাবার খায় সেই খাবারে দেদারছে বিষ মেশাচ্ছে, ভেজাল মেশাচ্ছে তার জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করি না। যতটুক কাজ হয় তা আই ওয়াশ বলেই আমাদের কাছে বিবেচিত হয়। খাদ্যে যারা ভেজাল দেয় তারাও সমাজে খাদ্যের জঞ্জাল হিসাবেই গণ্য। এদেরও পরিস্কার করা উচিত।

আরও জঞ্জাল আছে। এত জঞ্জাল নিয়ে কচলালে আমার এ লেখাটাকেই মানুষ জঞ্জাল ভেবে ভাগাড়ে ফেলে দিবে। তাই থেমে যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে হয়। তার পরেও কিছু কথা না বললেই নয়। প্রতিটি সেক্টরের জঞ্জালগুলো একদিনে স্তুপ হয়নি। আস্তে আস্তে হয়েছে। আস্তে আস্তেই পরিস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা যদি আমাদের যার যার দায়িত্ব, কর্তব্য সঠিক ভাবে করি তবে একদিন পরিচ্ছন্ন দেশ হয়ে যাবে সোনার বাংলাদেশ। রাত পোহালেই একটি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ দেখতে পাবো এটা আশা করা ভুল এবং আমরা কেউ আশাও করি না। আমরা জঞ্জালে পেচিয়ে গেছি। এর থেকে বের হতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, সামাজিক দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে, ন্যায়-নীতিবোধ সমুন্নত রাখতে হবে, অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে। এমন আরো অনেক কথা বলা যাবে। আর কথাগুলো আমরা সবাই জানি এবং বুঝি। একটু সচেতন ও সক্রিয় হলেই আমরা সুন্দর একটা দেশে সু-নাগরিক হিসাবে জীবনযাপন করতে পারবো। তাই সবশেষে আবারও বলবো, জঞ্জাল একদিনের নয়, পরিস্কারও একদিনে হবে না। তাই হতাশ না হয়ে সক্রিয় হই।

Friday, August 2, 2019

জাজিরাতেই থাকছে তাঁতপল্লী। ধন্যবাদ প্রিয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু

শরীয়তপুরের জাজিরায় শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী হবে এমন খবরে যেমন আমরা খুশি হয়েছিলাম তেমনি অনিয়ম ও দুর্নীতির অযুহাতে বলি আর অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনেই বলি, এ প্রকল্প স্থানান্তরের খবরে হতাশ হয়েছিলাম আমরা শরীয়তপুরের সর্বস্তরের জনগন। শরীয়তপুরের মাটি ও মানুষের নেতা সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু জাজিরা থেকে প্রকল্পটি চলে যাওয়া রোধ করে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে পূনর্বহাল করার বিষয়ে নিবিরভাবে কাজ করেছেন। প্রায় হাতছাড়া হয়ে যাওয়া প্রকল্প পূনরায় বহাল করায় আনন্দিত শরীয়তপুরবাসী। ধন্যবাদ প্রিয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু। তবে ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই, থেমে থাকবে না! প্রকল্পের শেষ পর্যন্ত আপনার নজরদারী খুবই প্রয়োজন। এই প্রকল্প শুধু শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) এলাকার জনগণের জন্য নয়, এটা পুরো শরীয়তপুরবাসীর জন্য একটা উন্নয়ন উপহার, যার সুবিধা ভোগ করবে সমস্ত শরীয়তপুরবাসী। এমন একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন রাজনৈতিক পদক্ষেপ ছাড়া সম্ভব নয়, আর সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন আমাদের রাজনীতিবীদ সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু।  
সারা দেশের মত উন্নয়ন বঞ্চিত দক্ষিণাঞ্চলের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার রয়েছে নানান উন্নয়ন পরিকল্পনা। তারই ধারাবাহিকতায় মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক হাজার ৯১১ কোটি টাকা ব্যয়ে তাঁতপল্লী নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ প্রকল্পটির জন্য শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে ৬০ একর ও শরীয়তপুরের জাজিরায় ৪৮ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাঁতপল্লীতে থাকবে কারখানা, আবাসন, শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ আধুনিক সব সুবিধা। মিরপুরের বেনারসি পল্লীর তাঁতিরাও এ পল্লীর অর্ন্তভূক্ত হবেন। প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পদ্মা সেতুর দ্রুত বাস্তবায়নের সঙ্গে এ এলাকায় তাঁতপল্লী স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন এ অঞ্চলের তাঁতিরা। ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী তাঁতপল্লীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও জায়গা নির্ধারণ হয়েছে আরও আগেই। দুই মাসের মধ্যে শুরু হবে মাটি ভরাটের কাজ। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৫৩ কোটি টাকা। এতে ৬ তলা বিশিষ্ট ভবনগুলোতে প্রত্যেক তাঁতির জন্য ৬০০ ফুটের কারখানা ও ৮০০ ফুটের মধ্যে আবাসন সুবিধা থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে সুতা-রঙসহ কাঁচামালের সুবিধা দেওয়া হবে। নির্মাণ হবে আর্ন্তজাতিক মানের শোরুম ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তাঁতিদের ছেলেমেয়েদের জন্য থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। 
তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, প্রধানমন্ত্রী এই পদ্মাপাড়ে তাঁতপল্লী গড়ে তোলার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে। এখানে সয়েল টেস্ট শেষে বিভিন্ন ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ২৫৩ কোটি টাকার কাজ শেষ করব। মূল প্রকল্প ১ হাজার ৯১১ কোটি টাকার। এটি একটি মেগা প্রকল্প। এখানে ঢাকার মিরপুরের বেনারসি পল্লীর তাঁতি ও এই অঞ্চলের তাঁতিদের পুনর্বাসন করা হবে। তাদের প্রত্যকের জন্য আধুনিক অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। তাঁতিদের বিনামূল্যে অথবা ন্যায্যমূল্যে সুতা, রঙসহ বিভিন্ন কাঁচামাল সরবরাহ করা হবে। রঙ করা, ফ্যাশন ডিজাইনসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এই খবরে শরীয়তপুর সহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আশার আলো দেখতে পায়। দীর্ঘ উন্নয়ন বঞ্চিত দক্ষিণাঞ্চলের শরীয়তপুর জেলায় নানান প্রকল্প বাস্তমায়নে আর্থসামাজিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে এখন এলাকার ভাগ্যবঞ্চিত মানুষ।   
জননেত্রীর এই মহতি উদ্যোগের খবর প্রচার পাওয়ার সাথে সাথেই একশ্রেণীর প্রতারক দালাল চক্র শুরু করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফন্দি। অধিগ্রহণ করা হবে এমন জমিতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তোলা হয় বিভিন্ন স্থাপনা ও রোপন করা হয় গাছপালা। এমন অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরে অনিয়ম রোধে মাদারীপুরের শিবচর ও শরীয়তপুরের জাজিরায় ১৯শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হতে যাওয়া শেখ হাসিনা তাঁতপল্লীর পূর্ব নির্ধারিত স্থান পরিবর্তন করার ঘোষণা জানিয়ে দেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী। চিফ হুইপ গণমাধ্যমকে জানান, শেখ হাসিনা তাঁতপল্লীর নির্ধারিত স্থানে অবৈধ স্থাপনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দেখা গেছে এখানে ভালো কিছু হচ্ছে না। আমাদের নির্দেশনায় মাদারীপুরের প্রশাসন অবৈধ সব স্থাপনা ভেঙে ফেলেছে। কিন্তু শরীয়তপুরের প্রশাসন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। গত ২৪ মার্চ পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম, সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা সবাই একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেসব এলাকায় অবৈধভাবে ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে সেসব এলাকা এই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হবে। এছাড়াও তিনি বলেন, দুই জেলায় এমন একটি প্রকল্প করতে গেলে শুধু এই অনিয়মই নয় ভবিষ্যতে আরও কিছু সমস্যা হবে। তাই সংসদীয় কমিটি, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সবাই একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী একই উপজেলায় করা হবে। আর এ জন্য মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী জাজিরা থেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণায় শরীয়তপুরের সর্বস্তরের মানুষের মনে চরম ক্ষোভের ও হতাশার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সেই হতাশার মেঘ কাটাতে শরীয়তপুর-জাজিরা বাসীর সাংসদ এ অঞ্চলের প্রিয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু মাঠে নামেন। বাঙ্গালি জাতির শেষ ভরসার আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে এবিষয়ে সুবিন্যস্ত আকারে ব্যাখ্যা করে এর ইতিবাচক-নেতিবাচক (মেরিট-ডিমেরিট) সবকিছু উপস্থাপন করেন প্রিয় নেত্রীর একান্ত স্নেহের সুযোগ্য সাংসদ নন্দিত জননেতা ইকবাল হোসেন অপু। মুহুর্তেই দুর হয়ে যায় সকল হতাশার কালো মেঘ। টিকে যায় জাজিরা অংশের তাঁতপল্লী। জাজিরা এলাকায় একাধিক বৈঠক করে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি স্থানীয় মানুষকে বুঝাতে চেষ্টা করেন প্রকল্পের গুরুত্ব এবং আমাদের জন্য প্রকল্পটি কতটা আশীর্বাদের। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে শরীয়তপুরের জাজিরাতেই পূর্বনির্ধারিত জায়গায় প্রকল্প বহাল করেন। এলাকার উন্নয়নে একজন রাজনীতিবীদের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, শ্রম কখনো বৃথা যেতে পারে না তা প্রমান করেছেন সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু। সাংসদের আন্তরিক চেষ্টায় স্থানীয় লোকজন তাদের স্থাপিত ঘড়-বাড়ি, গাছপালা সরিয়ে নেয় এবং প্রশাসন চাপে পড়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে যা শরীয়তপুরবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।     
যখন প্রকল্পের শরীয়তপুর অংশটি একটি প্রবল ক্ষমতাধর চক্রের ষড়যন্ত্রে হাতছারা হওয়ার দারপ্রান্তে, ঠিক তখনি শেষ ভরসার আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে এবিষয়ে সুবিন্যস্ত আকারে ব্যাখ্যা করে এর ইতিবাচক-নেতিবাচক (মেরিট-ডিমেরিট) সবকিছু উপস্থাপন করেন প্রিয় নেত্রীর একান্ত স্নেহের সুযোগ্য সাংসদ নন্দিত জননেতা ইকবাল হোসেন অপু। মুহুর্তেই দুর হয়ে যায় সকল হতাশার কালো মেঘ। টিকে যায় জাজিরা অংশের তাঁতপল্লী। শরীয়তপুরের জাজিরায় তাঁতপল্লী বহাল রাখার জন্য যে আন্তরিকতা, বিচক্ষণতা পরিচয় দিয়েছেন এবং যে শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়েছেন প্রিয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু তার জন্য শরীয়তপুরবাসী চির কৃতজ্ঞ থাকবে। তাঁতপল্লী চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তের খবরে কুচক্রী মহলের প্রতি যতটা ঘৃণা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছিলো প্রকল্প বহাল হওয়ার খবরে তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দিত হয়েছে শরীয়তপুরবাসী। শরীয়তপুরবাসীর একজন হিসাবে বলতে চাই, ধন্যবাদ জননেতা ইকবাল হোসেন অপু। আপনার আন্তরিকতা, বিচক্ষণতা, নিষ্ঠা, শ্রম শরীয়তপুরবাসী চিরদিন শ্রদ্ধাভরে মনে রাখবে।