ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Thursday, June 11, 2009

পরিবেশ বাঁচান


।। পরিবেশ বাঁচাও নিজে বাঁচো ।।
বায়ুদূষণে ঢাকায় বছরে মারা যায় ১৫ হাজার মানুষ !!!

রাজধানীতে বায়ুদূষণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতি বছর এ কারণে মারা যাচ্ছে কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ। গতকাল পরিবেশ অধিদফতর এ তথ্য জানায়। সূত্র জানায়, ধুলাবালি, গাড়ির কালো ধাঁয়া, কারখানার বর্জ্য ও কালো ধোঁয়া, নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য এবং অতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ঢাকার বায়ুকে দূষিত করছে। এ কারণে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এরই ভয়াবহ প্রভাবে মারা যাচ্ছে মানুষ। প্রতিদিন গাড়ি থেকে ১০০ কিলোগ্রাম সিসা, ৬০ টন কার্বন মনোক্সাইড, ১৬ টন নাইট্রোজেন, দেড় টন সালফার ডাইঅক্সাইড, ১ টন হাইড্রো কার্বন এবং সাড়ে ৩ টন অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ বাতাসে নির্গমন হয়। বিশ্বব্যাংক জানায়, ঢাকায় বায়ুদূষণে সৃস্ট রোগের চিকিৎসায় বছরে ব্যয় হয় ১৩২ থেকে ৫৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।উপরের সংবাদটা পড়ে কি মনে হচ্ছে? আমরা কি পরিবেশের মধ্যে বাস করি! আমাদের কি কিছুই করার নাই? আমাদের বাঁচার কি কোন উপায় থাকবে না? অনুন্নত দেশের চেয়ে উন্নত দেশ, অভাবী মানুষের চেয়ে বিত্তবানরা সর্বদা পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। আমাদের এখনই সিন্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি করব।

Sunday, June 7, 2009

গল্প : পথের পদ্য

পথের পদ্য - ০১
জোকের তেল তাবিজ হালুয়া আর কত কাল?

০১
নিয়াজ সাহেব ফুটপাত দিয়ে হাটতে হাটতে হঠা থেমে গেলেন
তার চোখ আটকে গেলো একটি লাল প্লাস্টিকের বড় বলের দিকেবল ভর্তি তরতাজা জোক কিলবিল করছেকৌতুহল নিয়ে দাড়িয়ে গেলদেখলো বল একটি নয় পাঁচটি প্রতিটি বলে হাজার হাজার জোককিলবিল করছেকোনোটা বল বেয়ে বেয়ে উঠে যেতে চাইছে বাইরেযেই উঠতে চাইছে অমনি এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে বলের কাধে বাড়ি দিচ্ছেআর উঠতে থাকা জোকগুলো ঝর ঝর করে পড়ে গেল বলে রাখা পানিতেছোট খাট একটি জটলাএকজন লোক একটি প্লাস্টিকের মোড়াতে বসাহাতে একটি লাঠিবসে লেকচার দিচ্ছেতাদেরকে সবাই লেকচারার বলেই ডাকে

না, এই ব্যাক্তি পিএসসির মাধ্যমে বিসিএস দিয়ে লেকচারার হননিইনি রাস্তার লেকচারাররাস্তায় লেকচার দিতে দিতে লেকচারার হয়েছেনকথায় আছে না? বকতে বকতে হয় বক্তা, আর পিটাতে পিটাতে হয় তক্তা! উনি বকতে বকতে বক্তা অর্থা লেকচারার হয়েছেন

তো লেকচারার সাহেব বসে আছেন লাঠি হাতেবলগুলি ভর্তি জোক চতুর্দিকে সারি সারি বয়ামবয়াম ভর্তি বড় সাইজের জোকএক একটি জোকের সাইজ হবে আট থেকে দশ ইঞ্চিদেখলে মনে হবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে জোকগুলো

নিয়াজ সাহেব দাড়িয়ে পড়লো জোকগুলো দেখে জোক দেখে তার গা ঘিন ঘিন করতে লাগলোতবুও দেখার ও শোনার ইচ্ছা সংবরণ করতে পারলো নালেকচারার সাহেব তার লেকচার শুরু করলো-

:
ভাই সাবজীবনে অনেক চিকিসা করেছেনকোন ওষুধে কাম হয় নাইআমার কাছে আজ শুনে যান কিভাবে সফল হবেনওষুধ কিনতে হবে নাশুনলে কিনতে হয় না, দেখলে ও কিনতে হবে নাকেনা না কেনা আপনার ব্যাপার! নিয়মটা শুনে যান কিভাবে বানাইবেন আর কিভাবে ব্যবহার করবেনএই জোকের তেল ব্যবহার করলে ---শক্ত মজবুত হবে ব্যাথা বেদনা দুর হবে
এভাবে প্রায় অর্ধশত রোগের নাম বললো যা কিন্তু অনেক এমবিবিএস ডাক্তাররাও ভাল করার কথা বলতে পারে নাসেই সব রোগের জন্য লেকচারার সাহেব শতভাগ গ্যারান্টিসহ চিকিসার নিশ্চয়তা দিলেন
একটু দম নিয়ে লেকচারার সাহেব আবার শুরু করলেন-

:
আমার ওষুধ আপনাদেরকে কিনতে হবে নানিয়মটা শুনে যানআর ওষুধ বানানের পদ্ধতিটা জেনে যাননিজে বানাইয়া ব্যবহার করবেনভাল না হলে মুখের উপরে ছুড়ে মারবেনএই দেহেন, এরকম দুইটি মোটা জীবন্ত জোক নিবেনজোক দুটির মুখে লবন দিয়ে মেরে একটি ঝুনা নারিকেল (পাকা নারিকেল) নিবেন নারিকেলের মুখ ছিদ্র করে পানি ফেলে দিবেনচাইলে পানিটা খেতেও পারেনপানি ফেলার পর এই জোক দু'টাকে ভিতরে ভরবেনএর সাথে ভরবেন পারদ, ---- সহ ---এর পর নারিকেলের মুখটা বন্ধ করে আমাবষ্যা-পূর্ণিমার মাঝামাঝি রাতে কালিঘাটে গিয়ে এক নিশ্বাসে মাটির নিচে পুতে রাখবেনরাতটা যেন শনিবার হয়এর পর তিন মাস পরে আবার শনিবার রাতে তুলে আনবেনহাতল ছাড়া দা দিয়ে এক কোপে কেটে নারিকেল দুই ভাগ করে ফেলবেনকাটার পরে দেখবেন ভিতরে কাদার মত হয়ে গেছেসেই কাদার মত বস্তু এক নিশ্বাসে তুলে একটি মাটির পাতিলে এক পোয়া সরিষার তেল, এক পোয়া তিলের তেল, ----- দিয়ে মাটির পাতিলে মাটির চুলায় তেতুলের লাকরি (চলা কাঠ) দিয়ে ভাল করে জাল দিতে হইবোএর পর যেই তেল হবে সেই তেল ছেকে মালিশ করবেনঘা, প্যাচরা, দাউদ, একজিমায় লাগাইবেনরাতে খাউজাইয়া রাতেই লাগাইবেন সকালে কইতে পারবেন না কোন খানে খাউজাইছেন আর কোন খানে লাগাইছেনএত ভাল কাজ করবোইনশআল্লাহভাল নিয়ত করে লাগাইবেনদেখবেন সকল রোগ ভাল হয়ে গেছেতবে ভাই একটা কথা আমার ওষুধ মনের ব্যাথা হলে লাগাইবেন নাএ ওষুধ মনের ব্যাথা সারে না কিন্ত আমি জানি আপনারা এত কিছু জোগার করতে পারবেন নাএকটা যদি ভুল হয় তবে ক্ষতি হয়ে যাবেতাই আমি আপনাদের কথা ভেবে তৈরী করে রেখেছিমূল্য এক দাম পঞ্চাশ টাকা কিন্তু প্রচার পাবলিসিটির জন্য আজ পঞ্চাশ টাকা নেব নাএকে দুই ভাগে ভাগ করে এক ভাগ ফেলে দিলামহাতে থাকে কত? জোরে বলুন

পাঁচ-ছয়জন লোক বলে উঠলো-

:
পচিশ টাকা

:
পচিশ টাকাকে পাঁচ ভাগ করে দুই ভাগ ফেলে দিলামথাকে কত
?
:
পনের টাকা

:
হ্যা! পনের টাকা দিয়ে এখন সর্ব প্রথম যে ভাই আমারে সরমান (সম্মান) করবেন আমি তাকে এমন একটা সরমান করবো যা আপনি ভাবতেও পারছেন না

প্রথম একজন হাত তুলতেই একে একে দশ-বার জন হাত তুলে দাড়িয়ে গেলবেশ ভালই বিক্রি হলোনিয়াজ সাহেব হতাশ হয়ে চলে গেল তার কাজে

০২
বিশিষ্ট আলেম মানুষচারমুষ্ঠি দাড়িকাঁচা-পাকা দাড়িতে মেহেদী দেয়ায় বেশ ভালই লাগছেনূরানী চেহারা দেখলেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করবেসামনে নানান রকম জিনিস নিয়ে বসে আছেনএকটা করে ধরেন আর একদমে বলে যান-
: এটা ধনেশ পাখির ঠোট, একটু দিয়ে দিলাম; এটা মহা সমুদ্রের কট মাছের কাটা, একটু কেটে দিলাম; এটা বনরুই এর ছাল, একটু কেটে দিলাম; এটা কুলুকুলু গাছের ছাল, একটু কেটে দিলাম; এটা ফাঁসির দড়ি, একটু কেটে দিলাম; এটা জারজ মানুষের হাড়, একটু কেটে দিলাম; ----------
এভাবে প্রয় পঞ্চাশ ধরনের জিনিস একটু কেটে দিলাম-একটু কেটে দিলাম বলে কেটে দিলোএরপর কিছু কাগজ পেচিয়ে একটা তাবিজ তৈরী করলোএকটা মাদুলিতে ভরে বলে-
: ভায়েরানিজের চোখে দেখলেন কতগুলি আইটেম একটু করে কেটে দিয়ে দিলামএর হাদিয়া যদি হাজার টাকাও ধরা হয় তবে এর মূল্য দেয়া হবে নাশুধুমাত্র আপনাদের কথা ভেবে এর হাদিয়া নেব দশ টাকা চার আনাএক দাম এক রেটকোন দামাদামি নেইএটা তেলে চুবাইয়া গায়ে মাখবেন, গায়ের রং ফর্সা হবেপানিতে চুবাইয়া পানি খাইবেন পেটের সকল ওষুক ভাল হইবোগলায় বাধবেন- ভাল গান গাইতে পারবেন, হাতে বাধবেন- হাতে শক্তি বাড়বোকিন্তু মাজায় বাধবেন নাযে যেই নিয়ত করে বাধবেন ভাল হয়ে যাবে ইনশআল্লাহএকশত ভাগ গ্যারান্টিভাল হয় নাই এমন প্রমান এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারে নাইদিতে পারলে মূল্য ফেরআর আমি জানি কেউ দিতে পারবেও না
এখানেও একজন প্রথম সরমানকরার জন্য দাড়িয়ে গেলোএর পর আর ক্রেতার অভাব হলো নাসরলমতি-কোমলমতি সাধারণ লোকের কান্ড দেখে হতাশ নিয়াজ সাহেব দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে চলে গেল
০৩
বিশাল একটি লাল ত্রিপল বিছিয়ে তার উপর চলচ্চিত্রের ফিল্ম রাখার বক্সে ভরা বিভিন্ন শুকনা দ্রব্যএক একটা দেখাচ্ছে, তার নাম ও গুনাগুন বলছেন হাকিম সাহেবনাএই হাকিম কোন হুকুম করার হাকিম নাইনি ইউনানী দাওয়াখানার চিকিসক বিশিষ্ট হারবাল গবেষক! হেকিম আবদুল কুদ্দুস মিয়াপাত্রে সাজানো দুই শতাধিক দ্রব্য দেখিয়ে পাশে রাখা দশ-বারটি হরলিকস এর বয়াম ভর্তি গুরা একটা চকচকে স্টিলের বলে রাখলোসেই সাথে কিছুটা মধু, ঘি, কিসমিস দিয়ে মাখালেনএর পর নাম না জানা অপরিচিত কিছু গুরা দিলেনদেয়ার সময় এক একটি দেখিয়ে বললেন-
: এটার নাম বাতাসের আগা, আর এটার নাম রৌদ্রের গুরাআর এখন দিচ্ছি কিছু পাহাড়ের ঘাম
এই সব মিশিয়ে তৈরী হলো এক অনন্য হালুয়াযা দেখতে অনেকটা চাটনির মতোহাকিম সাহেব ঘোষনা দিলেন এই হালুয়া খেলে নব্বই বছরের বুড়ার বয়স মনে হবে আটাশ কি উনিশআর বার বছরের কিশোর খেলে বিশ কি বাইশ বছরের যুবকের মত উন্মাদ হয়ে যাবেওষুখ থাকলেও খাবেন আর না থাকলেও খাবেনযতবড় কোষ্ঠকাঠিন্যই হোক না কেন এটা খেলে বাথরুমে যেয়ে কোনা দিতে হবে নাশুধু পিছনের কাপড়টা তুলে বসলেই হবেদেখবেন ওষুধের কেরামতিখেয়ে আপনি রাতে ঘুমাবেন কিন্তু আমার ওষুধ ঘুমাবে নাআমার ওষুধ সমানে কাজ করবে
চটকদার কথা শুনে রিক্সা চালক, শ্রমজীবি টাইপের লোকজন ত্রিশ টাকা, পঞ্চাশ টাকা মূল্যের বিভিন্ন ফাইল কিনে নিলোসর্ব রোগের মহাঔষধ মাত্র ত্রিশ টাকা-পঞ্চাশ টাকাএ সুযোগ হাত ছাড়া করাটাই যেন বোকামি!
নিয়াজ সাহেব বোকা বনে গেলেনহায়রে বোকার দল! এগুলো খেলে এমনিতেই পেট খারাপ হয়ে পেট নেমে যাবেকষাতো থাকবেই না নির্ঘা ডায়রিয়া হয়ে যাবে
প্রিয় পাঠকউপরের তিনটা ঘটনা কোন গাল গল্প নয়আমাদের দেশের পথের ধারের বাস্তব ঘটনাএভাবেই প্রশাসনের নাকের ডগায় আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সকল রোগের ঔষধ হিসেবে ফুটপাতের লেকচারারদের পাতা ফাঁদ থেকে কিনে নিচ্ছে নানান তেল-মালিস করার জন্য, নিচ্ছে তাবিজ, খাচ্ছে হালুয়া আপদ-বালা-মুসিবত থেকে ভাল হবার জন্য
সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কেনই বা তারা এসব কিনে নিচ্ছেব্যবহার করে অপ চিকিসার শিকার হচ্ছেআসলে অজ্ঞতা, অশিক্ষার সাথে সাথে সরকারের অবহেলা কি নাইআছেসরকার যদি যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারতোচিকিসক নামের একশ্রেণীর কিছু কষাই এর হাতে যদি রোগিকে জবাই হতে না হতো তবে কেউ এই সর্টকাট চিকিসায় উসাহী হতো নাআমাদের যেমন শিক্ষার অভাব আছেআছে অবকাঠামোর অভাবতেমনি আছে চিকিসকদের মানসিকতার অভাবচিকিসকদের সুচিকিসা এখন সেবা নয় পন্য হয়ে গেছেচিকিসকরা যদি অজ্ঞ, সহজ, সরল রোগিদের হাসপাতালমুখি করে সঠিক চিকিসা নিতে উসাহী না করে তবে তারা হাসপাতাল বিমুখ থেকেই যাবেআর রাস্তায় দাড়িয়ে কিনবে জোকের তেল, তাবিজ আর হালুয়া
আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের? আসুন সবাই মিলে সচেতন হইঅসুখ বিসুখ হলে চিকিসকের সরনাপন্ন হইসকল চিকিসকই খারাপ নাএখনো অনেক চিকিসক আছে যারা সমাজকে দিয়ে যাচ্ছেঅপ চিকিসা থেকে দুরে থাকি এবং সবাই মিলে অপ চিকিসা থেকে দুরে থাকি এবং সবাই মিলে অপচিকিসকদেরও মানসিক চিকিসা করাই


পথের পদ্য - ০২
ছেঁড়া দুই টাকার নোট .....
কেমন আছেন?জাবেদ সাহেব রিভলবিং চেয়ারে বসা। চোখ আধ বোজা, একটু একটু দোল খাচ্ছিল। প্রশ্নটা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলেন। একগাল অরেঞ্জ ফ্লেভারের হাসি হেসে উত্তর দিলেন-: ভাই ছেঁড়া দুই টাকার নোটের মত।উত্তরটা শুনে একটু অবাকই হলাম। এটা আবার কেমন ভাল থাকা ! জিজ্ঞেস করলাম-: তার মানে ?: মানে? মানে বাসে বলেন, দোকানে বলেন, যেখানেই যাবেন ছেঁড়া ফাটা দুই টাকার নোটের অবস্থা খারাপ হলেও চলছে। আমার অবস্থা অনেকটা তাই। ভাল না হলেও জীবন চলে যাচ্ছে একরকম।কথাটা জাবেদ সাহেব মন্দ বলেননি। দুই টাকার নোটের যা অবস্থা ! ছেঁড়া, ময়লা, দেখলেই মনে হবে বাংলাদেশের এই দুই টাকার নোটের উপর দিয়ে সিডর বয়ে গেছে বার বার। ধ্বংসের ছাপটা তাই স্পষ্ট।দুই টাকার নোটের মূল্যমান যদিও দুই টাকা অর্থাৎ দুই শত পয়সা এটা সবারই জানা। যে বিষয়টা না জানেন সে হয় শিশু নয় পাগল। কিন্তু দুই টাকার একটি নোট জোড়া দিতে অনেক সময় দেখা গেছে পচাত্তর পয়সার আঠা, পচিশ পয়সার স্কচ টেপ, কখনবা কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে। দুই টাকার একটি নোটে দুই থেকে দুই দশে বিশটি জোড়া তালি পেলে অবাক হওয়ার কোন কারন নেই। বরং কোন দুই টাকার নোটে যদি জোড়া তালি না পাওয়া যায় তবে ভাবতে হয়;হায়! দেশের জালিয়াত চক্রের মাথা বুঝি গেছে! দুই টাকার মত মূল্যমানের নোটেরও কি শেষ পর্যন্ত জাল ছেপে নিলো? হ্যাঁ! নতুন দুই টাকার নোট দেখলে জাল কিনা সেটাই চিন্তা করে প্রথম!!তবে নোট যতই ছেঁড়া বা ফাটা হোকনা কেন তার কদর আছে। বাসের কণ্ট্রাক্টরকে যতই ছেঁড়া-ফাটা নোট দেন কোন সমস্যা হবে না। মামা ডেকে প্লাস্টিকের হাসি হেসে সাদরে গ্রহন করবে টাকাটা। আবার যখন ভাংতি দেবে তখন ঐ দুই টাকার ছেঁড়া-ময়লা নোটই আপনাকে ধরিয়ে দেবে। যদি নিতে না চান তবে হাসি মাখা মুখে বলবে-: মামা নেন। না চললে আমারে ফেরৎ দিয়েন।: তোমাকে পাব কোথায়?: গাড়ির নাম্বারটা লেইখা লন! কোন সমস্যা হইবো না।: তোমার তো সমস্যা নাই, সমস্যা তো আমার।: মামা আমারতো সমস্যা নাই, আপনারও সমস্যা হইবো না।তবে সত্যিই কোন সমস্যা নাই। যাকে দেই তাকেই বলি সমস্যা নাই। যে দেয় সেই বলে সমস্যা নাই। সত্যিই এক সময় ছেঁড়া দুই টাকার নোট এতটা ‘চল’ হয়ে গেল যে কয়েন পকেট থেকে পড়ে যাবে ভেবে মানুষ ছেঁড়া দুই টাকার নোট চেয়ে নেয়া শুরু করে।ছেঁড়া টাকার কথা বলতে বলতে ছেঁড়া টাকা নিয়ে তৈরী করা একটা বিজ্ঞাপন চিত্রের কথা মনে পড়লো।এক ভদ্র মহিলা বাজারে গিয়ে দোকানির কাছ থেকে কিছু তরি-তরকারি, শাক-সবজি কিনলেন। যার মূল্য হলো-ধরুন আটানব্বই টাকা। দোকানিকে ভদ্র মহিলা একশত টাকার একটি তরতাজা কচকচে নতুন নোট দিলেন। দোকানি ভদ্র মহিলাকে দিল ছেঁড়া দুই টাকার একটা নোট। তা আবার যেন তেন নোট নয় সিডরে বিধ্বস্ত দুই টাকার নোট! নোট দেখে ভদ্র মহিলাতো ক্ষেপে গেলেন। রাগে ক্ষোভে গজরাতে গজরাতে বললেন-: আরে! আপনাকে এত সুন্দর একটা নতুন নোট দিলাম। অথচ আপনি আমাকে এমন একটা ছেঁড়া ফাটা নোট দিলেন? বদলে ভাল একটা নোট দেন। এটা চলবে না।দোকানি বললো-: কন কি আফা! চলবো। দুই টাহার নোট আবার অচল আছে নাকি? লাম্বারটা আছে কিনা হেইডা খালি দেখবেন।: না না এটা চলবে না। আমায় টাকা বদলে দিন।দোকানি আর ভদ্রমহিলা চেচামেচি শুরু করে দিলো। ‘চলবে আর চলবে না’ এ কথা নিয়ে শুরু হয়েছে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি। দুজনে ঝগড়া চলছে ফাটাফাটি। এমন সময় এক অতি বুদ্ধিমান মহিলা এসে বললেন-: দেখি টাকাটা চলবে কিনা?দোকানি একটু হালে পানি পেল। ভদ্র মহিলাকে টাকাটা দেখিয়ে বললো-: দেহেন তো মেডাম! টাহাডা বোলে চলতো না?: হুম!! দেখছি, চলে কি না?এই বলে ভদ্র মহিলা টাকাটা তার হাতে নিয়ে সবজির ঝুড়িতে ফেলে হাত ইশারা করে বলেন-: আসো সোনা, আসো, এদিকে আসো।ঝুড়িতে পড়ে থাকা টাকা আগের মতই পড়ে রইলো। কোন নড়াচড়া করলো না। এবার একটু ধমকের সুরে-: আয়, আয় বলছি। এদিকে আয়।এতেও যখন টাকা নড়লো না তখন জোড়ে ধমক দিয়ে বললো-: আয়, আয় বলছি। নইলে দেব মার।যথারিতি রেজাল্ট আগের মতই। অসুস্থ, ক্লান্ত দেহে নিথর হয়ে পড়ে রইল দুই টাকার নোটটি। এত ডাকাডাকির পরও যখন টাকাটা ভদ্র মহিলার কথা মত আসলো না। একটু নড়লোও না। যেখানে রয়েছে সেখানেই পড়ে রইলো। তখন ভদ্র মহিলা দোকানিকে বললো-: নাহ! দেখুন ভাই, কত বললাম। টাকাটা চললো না। মনে হয় চলবে না!ক্রেতা ভদ্র মহিলা ফিক করে হেসে দিলো কান্ড দেখে।দোকানি নোটটা রেখে দুটি কয়েন ধরিয়ে দিলো। দোকানিকে বোকা বানিয়ে গেল। এটা দোকানি বুঝতে পারলেও কিছু যে বলার নেই তাও বুঝতে পারলো।বোকা বনে কয়েন দিলেও দুই টাকার নোট ছেঁড়া হোক, ফাটা হোক এর কদর যে আছে এটা কেউ অস্বীকার করবে না।দেশের অবস্থা কি? রাজনীতির অবস্থা কি? অর্থনীতির অবস্থা কি? সামাজিক অবস্থা কি? খেলাধুলার অবস্থা কি? শিক্ষা-সংস্কৃতির অবস্থা কি? বাজারের অবস্থা কি? আয়ের অবস্থা কি? ব্যায়ের অবস্থা কি? সাধারণ মানুষের অবস্থা কি? এভাবে প্রশ্ন করলে প্রশ্নের অভাব হবে না।এসব প্রশ্নের উত্তরে যদি বলা হয় যে, দুই টাকার নোটের মত, তবে কি ভুল হবে। সব কিছুরই অবস্থা ছেঁড়া, ফাটা, জোড়া তালি দেয়া, ক্ষয়িষ্ণু তবুও চলছে, চলে এবং চলবে।আসলে ছেঁড়া দুই টাকার নোট কেন চলে? সাধারণ হিসাব এটা। যখন ভাংতি দেয়ার জন্য নতুন নোটের চাহিদা মোতাবেক যোগান থাকে না, তখনইতো চলে! দেশে যখন সুস্থ রাজনীতির অভাব, সুস্থ সংস্কৃতির অভাব, সুশাসনের অভাব, হাল ধরার যোগ্য লোকের অভাব দেখা দেয় তখন ছেঁড়া দুই টাকার মত চাহিদার যোগান হিসেবে চলে আসে অযোগ্য অপশক্তি। তাই দেশে দরকার সুস্থ রাজনীতির ধারা, গণতন্ত্রের ধারা, পরিকল্পিত অর্থনীতির ধারা। নইলে ছেঁড়া ফাটা নোট যেমন ঘুরে ফেরে হাতে হাতে আর শাসনের ভারও চলে যাবে ছেঁড়া ফাটা লোকের হাতে। যার পরিনাম ভাল হবে না।



পথের পদ্য - ০৩

নগরীর উৎপাত : লিফলেট বিলি
॥ ০১ ॥
রফিক সাহেব ব্যস্ত ব্যবসায়ী। মতিঝিল ব্যাংক পাড়া থেকে কাজ সেরে দ্রুত বেড়িয়েছেন মিরপুর যাবেন বলে। মিরপুরগামী বাসের টিকেট কেটে বসেছেন জানালার ধারে। ভয়ংকর সীসা ও কার্বনডাই অক্সাইড মেশানো ফুরফুরে বাতা আসছে জানালা দিয়ে। বসে বসে ভাবছেন ব্যবসার কথা। হঠাৎ একটি ভিজিটিং কার্ড সাইজের শক্ত কাগজের টুকরো ক্ষেপনাস্ত্রর গতিতে এসে আঘাত করলো রফিক সাহেবের কপালে। আৎকে উঠলেন! দ্রুত জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন, নেকাবে মুখ ঢাকা বোরকা পড়া এক মহিলা। হাতে অনেকগুলো ভিজিটিং কার্ড নিয়ে জানালা দিয়ে ক্ষেপনাস্ত্র বা রকেট লাঞ্চার এর গতিতে ছুড়ে ছুড়ে মারছে যাত্রীদের দিকে। অনেকেই রফিক সাহেবের মত আৎকে উঠে তাকাচ্ছে জানালার দিকে।
জানালা ছেড়ে অতঃপর ছুড়ে মারা কার্ডটির দিকে তাকালেন রফিক সাহেব। দেখেন একটি রুহানী দরবার শরীফ ও দাওয়াখানা’র বিজনেস কার্ড। কার্ডটিতে বড় বড় হরফে লেখা আছে ‘চিশতিয়া রুহানীয়া হুজুরীয়ার ওপেন চ্যালেঞ্জ। সাপ্তাহের সব দিন খোলা। চিঠির মাধ্যমেও দাওয়াই দেয়া হয়। দেশে থাকুন আর বিদেশে থাকুন আমাদের ওপেন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। বিফলে মূল্য ফেরত পাবেন। সফল হলে আস পাশের আরো দু’একজন রুগি পাঠাবেন ইনশাল্লা। আমরা অত্যন্ত যতেœর সাথে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। যে যে রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়-প্রেমে ব্যর্থতা, ব্যবসায় উন্নতি হয়না, পার্টনারের সাথে মনমালিন্য, স্ত্রীর সাথে অমিল, স্ত্রী অন্যের পরকীয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে, স্বামীকে বস করতে চান (গাধা বানতে চান), বিদেশ যাত্রায় বাধা, পাওনা টাকা নিয়ে টালবাহানা, রাজনীতিতে ব্যর্থতা, পুরাতন হাপানি, গ্যাষ্ট্রিক, আলসার, পড়াশুনায় অমনোযোগ। যেকোন সমস্যার জন্য চলে আসুন’।
কার্ডটি পড়ে রফিক সাহেব নিজের অজান্তেই হেসে ফেললেন। লোকে বলে সব সম্ভবের দেশ আমার সোনার বাংলাদেশ! তাইতো মনে হচ্ছে এদের কথায়! কি না পারো এরা? আমাদের এতো সমস্যা!! আমাদের দেশের নেতা নেত্রীরা হিমসীম খাচ্ছে। কর্মকর্তা কর্মচারীরা দিন রাত খেটে যাচ্ছে। সমাজ কর্মীরা বিভিন্ন ফরমুলায় সমাজকে বদলাতে চাইছেন। চিকিৎসকরা চেষ্টা করে যাচ্ছে রোগ শোক সারানোর জন্য। অথচ এদের যদি আমরা নিয়োগ করে আমাদের সমস্যা গুলি তাদের হাতে ধরিয়ে দেই তবে কত সহজেই তারা সমাধান করে দিতে পারত!! এতে সময়ও বাঁচবে আবার অর্থও বাঁচবে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা, আমাদের বিশাল জনশক্তি অন্যকাজে সময় দিতে পারবে!!
রফিক সাহেব কথাগুলো ভাবে আর মনে মনে হাসে। আহ্ কি বিচিত্র এই দেশ!!
॥ ০২ ॥
মহসিন সাহেব মেয়েকে নিয়ে মতিঝিল এসেছিলেন। থাকেন নারায়নগঞ্জে। মেয়ে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দেবেন। ইন্টারভিউ শেষে নারায়নগঞ্জের বাসে রওয়ানা দিয়েছেন বাসায় যাবেন বলে। বাসে বসে মেয়ের কাছ থেকে ইন্টারভিউ সম্পর্কে খোজ খবর নিচ্ছেন।
বাস যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে থামার সাথে সাথে বাসের জানালা দিয়ে মেয়ের কোলে এসে পড়ল একটি রঙ্গীন ফোল্ডিং লিফলেট। তাকাতেই দেখাগেল লিফলেটের উপরে একটি রঙ্গীন ছবি যাতে এক যুবক এক যুবতীকে আলীঙ্গন করে আছে। তাকিয়ে বাবা ও মেয়ে দুজনই বিব্রত। লিফলেটটি একটি ইউনানী দাওয়াখানার।
এই লিফলেটেও একই ধরনের লেখা। যেখানে লেখা আছে- যৌন চিকিৎসা সহ সকল রোগের চিকিৎসা ১০০% নিশ্চয়তার সাথে করা হয়। হেপাটাইটিস এ-বি-সি-ডি তেকে জেড পর্যন্ত, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, এইচ আইভি-এইডস সহ সকল রোগ। তারা ছবি দেখেও রোগ নির্ণয় করে ঔষধ দিতে পারে। আবার বিদেশ থেকে নির্ধারিত ফি পাঠিয়ে দিলে তারা পোষ্ট যোগে ঔষধ পাঠিয়ে দেয়। ভাল হওয়ার বিষয়ে কোন চিন্তা করার প্রয়োজন নেই!! ১০০% নিশ্চয়তাতো আছেই।
রফিক সাহেব বা মহসিন সাহেবের মত বিব্রতকর অযাচিত বিড়ম্বনায় আমরা সকলেই পরি। এটা বর্তমানে একটি নগরের উৎপাতে পরিণত হয়েছে। নগরির যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, মতিঝিল, গুলিস্থান, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, ফার্মগেট, মহাখালীসহ অটো ট্রাফিক সিগনালের অথবা যে কোন বাস স্টপেজের কথাই বলুন না কেন এ উৎপাদ আপনাকে সহ্য করতেই হবে।
খোজ নিলে দেখতে পাবেন এক শ্রেণীর ইউনানী দাওয়াখানা ও ঝারফুকদাতা ভন্ড হুজুরগন এসব বিজ্ঞাপন প্রচার করে সহজ সরল মানুষকে আকৃষ্ট করে। এসব দাওয়াখানা ও দরবার শরীফগুলোতে সাধারণত যৌন রোগকেই প্রাধান্য দেয়া হয় বেশী। এছাড়া সংসারে অমিল, প্রেমে ব্যর্থতা, বিদেশ যাত্রায় বাধা, শত্রুকে বধ করা, ক্যান্সার, গ্যাসট্রিক, আলসার, হেপাটাইটিস বি সহ সকল রোগের ব্যাপারে ১০০% নিশ্চয়তার সাথে কাজ করার প্রলোভন দেখায়।
এই প্রচার কার্ড বা লিফলেটগুলো বিলি করার কাজে এক শ্রেণীর হত দরিদ্র মহিলা ও যুবকদের ব্যবহার করা হয়। সামান্য পারিশ্রমিক দিয়ে এদের কাজ করানো হয়। এই কাজে নিয়োজিত যুবক ও মহিলারা অনেক সময় পকেট মারার কাজেও ব্যস্ত থাকে।
আপনি বাসে উঠছেন, সুযোগ বুঝে দক্ষ হাতে পকেট থেকে কখন যে মানিব্যাগটা নিয়ে নিয়েছে আপনি তা টেরও পাবেন না। আবার জানালার পাশে মোবাইলে কথা বলছেন। হঠাৎ মোবাইল টান মেরে উধাও!! আপনি শত চেচামেচি করেও আর মোবাইল ফিরে পাবেন না। শশুর বাড়ি থেকে নতুন ঘড়ি উপহার পেয়েছে! হাতে দিয়ে ঢাকায় এসেছেন। বাসে উঠে আনমনে বসে আছেন জানালার কাছে হাত দিয়ে। দেখবেন কেউ খুলে বিয়ে গেছে। ধরার কোন সুযোগই পাবেন না। শুধু হাত থেকে মোবাইল বা ঘটিড়ই নয়, কান থেকে দুল কানসহ ছিড়ে নিয়ে দৌর মারে এসব দৌরবিদেরা!!!! আপাত দৃষ্টিতে দেখতে লিফলেট বিলিকারী মনে হলেও এরা সময়-সুযোগ মত হয়ে যায় ছিনতাই কারী, পকেটমার।
এ বিষয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির উপরে গবেষণা করেন এমন কয়েক বন্ধুর সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, এ সকল ভন্ড চিকিৎসক, ফকির, হুজুর, কবিরাজ আমাদের দেশের কোমলমতি মানুষের মনের স্পর্শকাতর বিষয়ে আঘাত করে তাদের উদ্দেশ্য সফল করে। অজ্ঞতার কারনে স্পর্শকাতর বিষয়ে কাউকে বলতে পারে না সাধারণ লোকজন। গোপন সমস্যা বা গোপন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকদের সাথে অনেকেই কথা বলতে চায়না এবং লজ্জা বোধ করেন। অনেক শিক্ষিত লোকও তার সমস্যা নিয়ে সবসময় যথাযথ বিশেষজ্ঞর সাথে আলাপ করেন না, লজ্জাবোধের কারনে। ফলে ঐসব ভুয়া লোকের চটকদার কথায় সাধারণ মানুষ পটে যায়।
চিকিৎসকদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করার জন্য এসব চটকদার বিজ্ঞাপন বিলি করা হয়। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার জন্য সাধারণ মানুষ এদের কাছে গিয়ে প্রতারিত হয় প্রতিনিয়ত। তারা যে ঔষধ দেয় তাতে কোন রোগ ভালতো হয়ই না বরং অনেক সময় বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নিজেদের সমস্যার কথা তো বলতেই পারে না আবার প্রতারিত হওয়ার কথাও বলতে পারে না। এসকল প্রতারকদের হাত থেকে দুরে থাকাই ভাল। শিক্ষাই পারে এ সকল প্রতারণার থেকে আমাদের রক্ষা করতে। আর প্রশাসন একটু হস্তক্ষেপ করলেই আমরা বিব্রতকর এসব লিফলেট বিলিকারীদের হাত থেকে বাঁচতে পারি, সাধারণ মানুষও প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে পারে।

পরিবেশ বাঁচান দেশ বাঁচান ।। নদী বাঁচাও পরিবেশ বাঁচাও ।। বাঁধ এখন সকলের মরন ফাঁদ


একটি বাঁধ যখন হাজার হাজার মানুষের জন্য মৃত্যু ফাঁদ হয় তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।

শরীয়তপুর জেলা সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দুরে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার আনন্দবার সংলগ্ন পদ্মাকে বাঁধ দিয়ে আনন্দ বাজার সংলগ্ন সাধারণ মানুষকে পানি উন্নয়ন বোর্ড, শরীয়তপুর আনন্দ দিতে না পারলেও বেদনা দিয়েছে এটা সাধারণ মানুষের কথাতেই প্রমান মিলে। তবে হ্যা, দু’একজন মানুষকে যে আনন্দ দিয়েছে তাও সাধারণ মানুষের ক্ষোভে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে প্রমান পাওয়া যায়।

বহু বিতর্কিত সেই বাঁধ দেখার লোভ সামলাতে না পেরে বন্ধু দৈনিক যুগান্তর, বাংলাভিশন ও বিডি নিউজের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি কে এম রায়হান কবীর সোহেল ও ছোট ভাই দৈনিক আমাদের সময়ের জেলা প্রতিনিধি এ বি এম মামুনকে নিয়ে মোটর বাইকে রওয়ানা দিলাম। সেখানে পৌছে দেখি পদ্মার শাখা নদীর উপর বিশাল বাঁধ দিয়ে প্রমত্তা পদ্মার শাখাকে আড়াআড়িভাবে আটকে দেয়া হয়েছে। পূর্ব-পশ্চিমে দেয়া এই বাঁধের কারনে পদ্মা এখন মরা। বাধের দক্ষিনে ও উত্তরে প্রায় নদীর অনেকখানি জায়গা ড্রেজিং করে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। নদীতে হাটু পানি। আমাদের এলাকায় খল্লা মাছ নামে পরিচিত এক প্রকারের মাছ হাটু পানিতে খেলায় রত। মরা নদীর বুকে (মরা বলা ঠিক হবে না বলবো মেরে ফেলা নদী) কয়েকটা ভাঙ্গা ট্রলার ও নৌকা পড়ে আছে।


একটা বাঁধ নদীর উপর দিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে নদীর পূর্ব পারের মানুষ এখন সব সময় হেটে পশ্চিম পারে আর পশ্চিম পারের মানুষ পূর্ব পারে আসতে পারবেন। এটা অত্যন্ত সুখের কথা। এটাই হওয়া উচিত বলে মনে করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা! কিন্তু পরিবেশ? পরিবেশ, জীব বৈচিত্র, পরিবেশ-প্রতিবেশ, পানির সাভাবিক প্রবাহ, স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্য, সাধারণ মানুষের ফসলি জমি ও ঘরবাড়ির কথা একবারও চিন্তা করলেন না তারা!!!

স্থানীয় সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে ঘটনার মূলে গিয়ে জানাযায়, বাঁধের দক্ষিণ প্রান্তে বাড়ি এক সেনা কর্মকর্তার। প্রবাহমান পদ্মা এই সেনা কর্মকর্তার বাড়ি ভেঙ্গে ফেলবে! এই অপরাধে পরিবেশ প্রতিবেশের দিকে না তাকিয়ে ঐ সেনা কর্মকর্তার ও প্রভবশালীদের বাড়ি রক্ষা করার জন্য একটি নদী মেরে বাঁধ করা হলো। এর সাথে আছে আমাদের দেশের শীর্ষ স্থানীয় আর নিম্ন স্থানীয় দুই ধরনের রাজনীতিবিদদের হাত। আমাদের দেশের পরিবেশ আন্দোলনকারীরা এই বেলায় চুপ চাপ থাকলো কেন তা বোঝা গেল না।

সাধারণ মানুষের কথা, এই বাঁধের কারনে বর্ষা মৌসুমে যখন পানি বৃদ্ধি পাবে তখন তীরের বাড়ি ঘর সহজেই তলিয়ে যাবে। আবার যখন পানি টান দেবে তখন পানি আটকে ফসলি জমি পতিত থাকবে।

স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্য সব বন্ধ। আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ীদের মনে আনন্দ নাই। নদীর জন্য বেদনা, ব্যবসার জন্য বেদনা, পরিবেশের জন্য বেদনা। তারা বাঁধ চায় না। তারা চায় সেতু হোক। হেটে নদী পার হওয়ার ইচ্ছা বা অভিলাশ তাদের নেই। আনন্দ বাজার ঘাটে শত শত ট্রলার ভীরতো। ব্যবসা বাণিজ্য চলতো। এখন সব বন্ধ।
তাই এই বাঁধ এখন সকলের মরন ফাঁদ!!!!!

শুভ কামনা

জীবন কাটুক ফুলের মত সুন্দর তবে ক্ষণস্থায়ী নয়


বন্ধুরা,
কেমন আছেন?
সকলেই চুটিয়ে লিখেযাচ্ছে।
সকল বন্ধুর জন্য শুভকামনা।
সবার জীবন কাটুক ফুলের মত স্নিগ্ধ, সুন্দর, দীপ্তিময় কিন্ত ক্ষণস্থায়ী নয়।
দীর্ঘজীবন কাটিয়ে যাক ফুলের মত সৌরভ ছড়াক।
বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন বন্ধুরা আপনাদের জন্য সবসময় শুভ কামনা।

ভাঙ্গছে নদী পদ্মা, কাদছে পাড়ের মানুষ

পদ্মার ভাঙ্গন শুরু !! পাড়ের মানুষের জন্য সহমর্মিতা

শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার মাঝির হাট লঞ্চ ঘাট থেকে এক কিলো মিটার পশ্চিমে পদ্মার ভাঙ্গনের ছবি।
বর্ষার মাত্র শুরু।
কত মানুষকে যে গৃহ হারা করবে আমাদের পদ্মা তার কোন ইয়ত্তা নেই। শুধু যে বর্ষায়ই ভাঙ্গে তা কিন্তু নয়। সারা বছরই ভাঙ্গে। তবে বর্ষায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়ে যায়। এই পদ্মা ঘড় বাড়ি ভাঙ্গে তবু পাড়ের মানুষগুলো পদ্মাকে ভালবেসে তীরে বসবাস করে। পদ্মা যে শুধু ভাঙ্গে তা কিন্তু নয়। এই পদ্মা সাধারণ মাণুষের জীবন জীবিকার উতস বটে।
পদ্মা পাড়ের মানুষগুলো ভাঙ্গন, ঝড়, বন্যার সাথে লড়াই করে বেচে থাকে। থাকবে। ভাল থাকুক পদ্মা পাড়ের মানুষগুলো। প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেচে থাকতে তারা পছন্দ করে। পদ্মা পাড়ের মানুষগুলো ভাল থাকুক। তাদের জন্য শুভকামনা

অতীত ঐতিহ্য : শরীয়তপুরের ঐতিহ্যবাহী কাশ-পিতল শিল্প আজ বিলুপ্ত


শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার পালং, বিলাশখান, বাঘিয়া, দাসার্তা গ্রামে প্রবেশ করলে সাধারণ মানুষ কান হাত দিয়ে বন্ধ করে হাটতো। কাশ-পিতল কারিগরদের অব্যাহত টুং-টাং শব্দ কানে তালা লাগাতো অনেকের। এটা এখন কেবলই স্মৃতি। নানা সমস্যার কারনে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী পিতল শিল্প আজ শরীয়তপুর থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এক সময় ৫ শতাধিক পরিবারে ২ হাজারের উপরে কর্মী কাজ করলেও এখন ৭/৮টি পরিবারে ২০/২৫ জন শিল্পী এ শিল্প ধরে রেখেছে।

গোড়ার কথা : জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করেন এমন ব্যক্তি ও শিল্পের সাথে জড়িতদের সাথে আলাপ করে জানাযায়, অষ্টাদশ শতাব্দির শেষ দিকে কাশ-পিতল শিল্পের সাথে জড়িত কংসবণিক সম্প্রদায় প্রথমে ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে পশ্চিম বঙ্গের হুগলির চন্দন নগর এসে বসতি গড়ে। সেখান থেকে একটা অংশ বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের লৌহজং গ্রামে এসে বসতি গড়ে। পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের ফলে লৌহজং থেকে সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ অংশ শরীয়তপুরের দাসার্তা, বাঘিয়া, পালং, বিলাশখান গ্রামে এসে বসতি গড়ে কারখানা স্থাপন করে। তবে পালং বাজারটাই ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে।
শিল্পের প্রসার : বাঘিয়া, দাসার্তা, বিলাশখান ও পালং গ্রামে কারখানা গড়ে উঠলেও পালং বাজার প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তৎকালীন সময়ে এর ধাতব মূল্য ও সৌন্দর্যের কারনে এ শিল্পের এতটাই প্রসার লাভ করে যে, বাংলাদেশের মধ্যে পালং হয়ে ওঠে কাশ পিতল শিল্পের প্রধান উৎপাদন ও ব্যবসা কেন্দ্র। এখান থেকে দেশের প্রধান বিভাগীয় শহর এবং বিভাগীয় শহর থেকে বিদেশে রপ্তানি হওয়া শুরু হয়। এই শিল্পের প্রসার হিন্দুদের হাতে হলেও পরবর্তীতে মুসলমানরাও জড়িয়ে পরে।
যুক্ত পরিবারের অতীত ও বর্তমান সংখ্যা : গত ২০/৩০ বছর পূর্বেও এ শিল্পের সাথে ৪ শতাধিক পরিবার জড়িত ছিল। এখানে ২ থেকে ৩ শতাধিক কারখানা গড়ে উঠে। পর্যায়ক্রমে মুসলমানরা এ শিল্পে শ্রম দিতে দিতে কারিগর হয়ে ওঠে। নানাবিধ কারনে শিল্পের সাথে জড়িত হিন্দুরা ভারতের পশ্চিম বঙ্গে চলে যেতে থাকলে মুসলমান কারিগররা আস্তে আস্তে কারখানা স্থাপন করে শিল্পটা ধরে রাখে। বর্তমানে জেলায় ৭/৮টি পরিবার এ শিল্পকে ধরে রেখেছে। এর ভেতর বিলাশখান গ্রামে নারায়ন কংসবণিক, পালং গ্রামে হরিপদ মন্ডল, বাঘিয়ায় গ্রামে গিরি বাবু ও দাসার্তা গ্রামে রঞ্জিত কুমার কংসবণিক এই চার পরিবার ছাড়া বাকি সবাই মুসলমান। এক সময় শুধু পালং বাজারেই ৩০ থেকে ৪০টি কাশ-পিতল সামগ্রী বিক্রির দোকান থাকলেও এখন মাত্র ৪টি দোকান আছে এর মধ্যে দুইটি হিন্দু ও দুইটি মুসলমান কারিগররা চালায়।
শিল্প সামগ্রী : একসময় এখানে মালা, কলসি, জগ, বালতি, বদনা, চামচ, পানদান, ডাবর, পানি খাবার গ্লাস-মগ, ধান-চাল পরিমাপের পুড়, কুপি, বিভিন্ন প্রকার প্রদীপ, পাতিল, ঘন্টি, বিন্দাবনী, চারা, কড়াই, ধুপদানী, ছোট ঘটি (পুঁজার জন্য), মালসা, কোসা-কুসি, পুস্প পত্র, করাতথাল, , বাস বেড়া, বগি থাল, পঞ্চপত্র সহ নিত্যব্যবহার্য ও নানান দর্শনীয় সামগ্রী তৈরী করা হতো।
ওপারে (পশ্চিম বঙ্গে) চলে যাওয়ার কারন : নানা সময়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তণের কারনে বিনিয়োগের ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, চাঁদাবাজি, সহজলভ্য সামগ্রী হাতে পেয়ে মানুষ পিতলের সামগ্রী ব্যবহার না করার কারনে এ শিল্পের সাথে জড়িত হিন্দুরা দেশ ছাড়তে থাকে। কাশ-পিতল শিল্পীরা সাধারণত অন্য কাজ করতে না পারায় পশ্চিম বঙ্গে এ শিল্পের চর্চা কিছুটা অব্যাহত থাকায় হিন্দুরা চলে যায়। আবার অনেকের মতে হিন্দুরা বাংলাদেশকে নিজের মত করে ভাবতে পারে না তাই তারা সর্বদা ওপার যাওয়ার চিন্তায় বিভোর থাকে। পশ্চিমবঙ্গে আপনজন থাকায় মনের টানে চলে যায় অনেকে।
শিল্প বিলুপ্তর কারণ : পালং বাজারের কাশ-পিতল জানান, একসময় কাশ-পিতল সামগ্রী তৈরীর কাঁচামাল ‘পাত’ কেজি ছিল ৮০ টাকা। আর এখন প্রতি কেজি পাতের দাম ৩০০ টাকা। এতেই বোঝাযায় কাঁচামালের মূল্য কি হারে বেড়েছে। বাজারে প্লাস্টিক, সিলভার, এমনকি লেহার তৈরী পারিবারিক কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর সহজ লভ্যতা, কম মূল্যর কারনে এবং মানুষ অধিক মূল্যের কারনে কাশ-পিতল সামগ্রী ব্যবহারে অনিহা দেখায়। ফলে শিল্পীরা তাদের উৎপাদনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। কাশ-পিতলের ধাতব মূল্য, স্থায়ীত্ব বিবেচনা না করেই সহজলভ্য সামগ্রী ব্যবহারের কারনে এ শিল্প বিলূপ্তপ্রায়।
চাহিদা : এক সময় মানুষ আচার-অনুষ্ঠানে উপহার দিতে বা পারিবারিক কাজে ব্যবহার করতে প্রধান ও প্রথম পছন্দের তালিকায় ছিল কাশ-পিতল সামগ্রী। বর্তমানে মেলামাইন গিফট বক্স জাতীয় জিনিসের ছড়াছরি ও সহজলভ্যতার কারনে মানুষ কাশ-পিতল সামগ্রী উপহার তালিকা থেকে বাদ দেয়। এখন একান্ত ব্যবহার্য কিছু সামগ্রী যেমন, বিন্দাবনী, বালতি, কলস, পানদান ছাড়া আর কোন সামগ্রীর চাহিদা নেই।
বর্তমান পরিস্থিতি : বর্তমানে ৭/৮ পরিবার এ শিল্পকে কোনমতে বাঁচিয়ে রেখেছে। ৭/৮ টি পরিবারের মধ্যে হিন্দু পরিবারের সংখ্যা মাত্র ৪টি। পূর্বে যারা এ শিল্পে শ্রম দিতেন তারাই মূলত এ শিল্পকে ধরে রেখেছে। নতুন প্রজন্মের কেউ এই শিল্পে শ্রম দেয় না। ফলে এই ৭/৮ পরিবার বিলুপ্ত হলে বা পেশা ছেড়ে দিলে নতুন প্রজন্ম এই শিল্পের হাল ধরবে না বলেই পর্যবেক্ষক মহলের এবং শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের ধারনা।
মুসলমান শিল্পীদের আবির্ভাব : একটা সময়ে পাঁচশতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। প্রচন্ড চাহিদার কারনে শ্রমিক সংকট মেটাতে কংসবণিক সম্প্রদায় স্থানীয় মুসলমান শ্রমিকদের এ কাজে নিয়োগ দেয়। কালক্রমে এখান থেকে হিন্দু ব্যবসায়ীরা চলে যাওয়ায় এখন মুসলমানরা যে চহিদা আছে তা মেটানোর চেষ্টা করছে। এ শিল্প ধরে রাখার কারণ হিসেবে জানা যায়, মুসলমান শিল্পীরা এ কাজ শিখার কারনে অন্য কাজ পারে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পশ্চিম বঙ্গে চাহিদা থাকায় এবং সেখানে অধিকাংশের আত্মীয় পরিজন থাকায় চলে গেলেও মুসলমানরা যাবে কোথায়। তাই তারা এখানে এই পেশাকে ধরে রেখেছে।
শিল্পীদের কথা : দাসার্তার শিবের বাড়ি চেনেন না এমন লোক শরীয়তপুরে খুব কমই পাওয়া যাবে। ঐ শিবের বাড়ি এক সময় ১০টি পরিবার এ কাজের সাথে জড়িত ছিল। বর্তমানে একটি মাত্র পরিবার কাজ করে বাকি সবাই পশ্চিম বঙ্গে চলে গেছে। রঞ্জীত কুমার কংসবণিক, সিদাম কংসবণিক, বাসুদেব কংসবণিক ও স্যামসুন্দর কংসবণিক এ চার ভাই এখনও এ শিল্পকে ধরে রেখে এদেশে পরে আছে। রঞ্জিত কুমার কংসবণিক বলেন, ভোর রাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে কাজ হতো। হাতুরি-পিতলের এতই সম্পর্ক ছিল যে টুং-টাং শব্দ সাধারণ মানুষের কাছে কানে তালা লাগার মত মনে হলেও আমাদের কাছে এটা গানের মতো। এখন আর এ শব্দ শোনা যায় না। আবুল কাশেম বেপারী বলেন, ছোট বেলায় এ শিল্পের চাহিদা এতই বেশি ছিল যে বাবা অন্য কাজে না দিয়ে কাশ-পিতলের কাজে দিলেন। এ কাজ শিখেছি এখনতো আর অন্য কাজ পারি না। তাই ধরে রেখেছি। বর্তমান অবস্থা এতটাই খারাপ যে, আগে এখানকার আফিদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ টন কাঁচামাল বিক্রি হতো আর এখন ১ টন মাল ১ মাসেও শেষ হয় না। এতেই বোঝেন অবস্থাটা কি।
শিল্পীদের দাবী : বর্তমান পিতল শিল্পের সাথে জড়িত শিল্পীরা দাবি করেন এ শিল্পের বিকাশের জন্য তাদের সহজ শর্তে ঋণ ও বাজারজাতকরণের পরামর্শ প্রদান করা দরকার। তাছাড়া সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের দাবি ‘পিতল এমন একটি দ্রব্য এটা পুরাতন হলেও এর মূল্য খুব একটা কমে না। তাই পিতল ব্যবহার করুন। পিতল স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ বান্ধব।’
কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কথা : জেলার পিতল শিল্পের কাঁচামাল প্রকৃয়াজাত প্রতিষ্ঠানের পথিকৃত শরীয়তপুর ব্রাস ইন্ডাষ্ট্রি এর মালিক নুর মোহাম্মদ কোতোয়াল। উৎপাদন ও সরবরাহকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান মেসার্স আফিদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাদিকুর রহমান কোতোয়াল লিটন বলেন, কাঁচামালের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি, কাঁচামাল ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া এবং শিল্পীরা ভারতে চলে যাওয়ায় মিলটি বন্ধপ্রায়। ১৯৮৭ সালেও এখানে কাঁচামালের চাহিদা এত বেশি ছিল যে এখানে কারখানা স্থাপন করতে আগ্রহী হয়েছিলাম। মাত্র ১৫/১৬ বছরের ব্যবধানে দেখা গেল চাহিদা শুন্য। শিল্প ও শিল্পী উভয়ই বিলুপ্তপ্রায়।
বিসিকের ভাষ্য : বিসিক শিল্প নগরী শরীয়তপুর এর এক সম্প্রসারণ কর্মকর্তার সাথে কথা বল্লে তিনি জানান, দশ বছর আগে যখন এখানে একবার এসেছিলাম তখন টুংটাং শন্দে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কুটির শিল্প হিসেবে (যেহেতু হাতের কাজ) উদ্যোক্তারা আসলে ঋণদান, পরামর্শসহ তাদের জন্য কিছু করার সুযোগ ছিল। কিন্তু কেউই আমাদের কাছে আসে না। গবেষকের কথা : শরীয়তপুর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে গবেষনা করেন বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক অধ্যাপক এম এ আজিজ মিয়া। তিনি বলেন, কাশ পিতল শিল্পীরা নানান কারনে ধাপে ধাপে এদেশ ত্যাগ করেছে। শুধু জেলারই নয়, এই দেশের অন্যতম কাশ-পিতল শিল্পের উৎপাদন হতো এখানে। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক কারনে পর্যায়ক্রমে তারা দেশ ছাড়ে। পিতলের স্থায়ীত্ব অনেক বেশি, সংরক্ষণে সুবিধা, পুরাতন হলেও এর দাম কমে না এবং পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত। এসব দিক বিবেচনা করে আমাদের উচিত কাশ পিতলের সামগ্রী ব্যবহার করা।

আমন্ত্রন

ঘুরে যান শরীয়তপুর, ভাল লাগবে নিশ্চই!!

বন্ধুরা, পদ্মা পারের জেলা শরীয়তপুর ঘুরে যান।
আমি নিশ্চিত আপনাদের ভাল লাগবে।
সবুজ শ্যামল দেশের এই জেলায় রয়েছে-
সবুজের সমারহ, অতীত ঐতিহ্য, পুরাকীর্তি এবং মানুষের অসীম ভালবাসা।

সবুজ শ্যামল এই জেলার যে দিকে তাকাবেন আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে।
প্রতিটি নিঃশ্বাসে পাবেন বিশুদ্ধ অক্সিজেন।
চারিদিকে গাছে গাছে পাখির কলকাকলি আপনাকে মুগ্ধ করবে।
পাখির গানে, বট পাতার ঝনঝনানি মুখরিত চারিপাশ।
মাঠে হয় পাকা ধান, নয় রবিশস্য অথবা জলে খেলা করছে হাঁস।
যেদিকে তাকাবেন চোখ আপনার জুরাবেই।

এখানে রয়েছে ঐতিহাসিক ফতেজংপুর যেখানে ফতে হয়েছিল জং (যুদ্ধের সমাপ্তি)
আছে ধানুকার মনসা বাড়ি, রুদ্রকরের মঠ, মহিষারের কালিবাড়ি দীঘি বুড়ির হাটের মসজিদ
পদ্মার ভাঙ্গন!
এরকম হাজারো নাম লিখা যায়।
বেড়াতে এলে এসব দেখতে দেখতে আপনার চোখ ক্লান্ত হবে
দেখার জিনিস শেষ হবে না।

এই জেলার মানুষ অসম্ভব অতিথিপরায়ন।
এখানকার মানুষের আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
যার যতটুকু সামর্থ আছে তা দিয়েই চেষ্টা করবে আপনাকে বরন করে নিতে।
তাই আবারো আমন্ত্রন। বেরিয়ে যান শরীয়তপুর।

প্রভাকরনরে জন্য ভালবাসা

মত যেখানে আছে ভিন্ন মত সেখানে থাকবেই। প্রভাকরণ তামিল টাইগারদের কাছে ছিল দেবেতা, টাইগারসম! আর শ্রীলঙ্কান সেনাদের কাছে ছিলো গেরিলা নেতা, মূর্তিমান আতঙ্কের নাম।
একবার ভাবুন তো---
প্রভাকরণ যদি শ্রীলঙ্কানদের পরাজিত করে স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারতো তবে তামিল জনগনের কাছে সে হতো আজ বীর! জাতির পিতা! একটি রাষ্ট্রের শ্রষ্ঠা!
আজ প্রভাকরণ নেই। শ্রীলঙ্কান সেনারা তাকে বধ করেছে। শ্রীলঙ্কান সেনারা আজ বীর!
এটাইতো নিয়তি! এটাই তো নিয়ম!
নচিকেতার গান তরুন-যুবক বয়সে জাতীয় সঙ্গীতের চাইতেও বেশি পছন্দ হত! নচিকেতা ভবঘুরে না হলেও তার গান শুনে অনেক যুবক ভবঘুরে হয়েছে এমন নজির আছে! তার একটা গানের কথা সবার মনে আছে নিশ্চই!
'রাম যদি হেরে যেত রামায়ন লিখা হত রাবন দেবতা হতো সেখানে!!
আজ প্রভাকরণ রাবণ আর শ্রীলঙ্কান সেনারা দেবতা!

প্রভাকরণের বীরত্তের জন্য অনেকের মত আমার হৃদয়েও রয়েছে ভালবাসা! একজন বিপ্লবী ছিলেন প্রভাকরণ। তার বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে। সব ফুল কি আর দেবতার পা চরনে যায়। কিছু ফুল তো মাটিতে ঝড়ে ছাগলের খাদ্যতে পরিনত হয়। বিপ্লব আছে বলেই নিপিড়ীত, নির্যাতিত, অসহায় মানুষ অবলম্বন পায়। দুর্বলের পক্ষে কেবল বিপ্লবীরাই প্রতিবাদ করে। কখনো সফল হয়, কখনো ব্যর্ত। তাই বলে তো আর বিপ্লব থেমে থাকবে না। বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। বিপ্লব হোক মানুষের জন্য, মানবতার পক্ষে। 

Saturday, June 6, 2009

আজ সারা দিন

আজ সারা দিন ভালই কাটল। নেটে বসে ব্লগ লিখে, বন্ধুদের সাথে চ্যাট করে কেটে গেল দিনটা।

কেমন আছেন বন্ধুরা?

বন্ধুরা কেমন আছেন?
আমি নতুন সদস্য