ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Tuesday, January 22, 2019

গু এবং গাডির মধ্যে পার্থক্য বুঝা কঠিন!

 গু এবং রান্না করা গাডি (কচুর মুখি) দেখতে অনেকটা একই রকম। কিন্তু দুটির পার্থক্য বিস্তর। গাডি হজম হওয়ার পর যা থাকে তা গু হয়ে যায় কিন্তু গু কখনো পাতে তোলার যোগ্য নয়। গু গু’ই। ওটা দেখতে যতই গাডির মত হোক না কেন যদি কেউ ভুল করে তবে পস্তানো ছাড়া কিছু করার থাকে না। তাই গু থেকে সাবধান হওয়া উচিত।
গাডি অনেকের কোছে অপরিচিত মনে হতে পারে। স্থান, কালভেদে প্রতিটি বস্তুর নামের কিছু পার্থক্য থাকে। কচুর মুখি বা ছড়া একটি উৎকৃষ্টমানের খাদ্য আমাদের তথা সারা দেশের মানুষের কাছে। কেউ মাছের সাথে ঝোল করে, কেউ কেউ মাংসের সাথেও রান্না করে খায়। তবে ভর্ত্তা করে অনেকেই খেতে পছন্দ করে যেমন আমি করি। সেই কচু মুখিকে আমাদের এলাকায় গাডি নামেই চেনেন সবাই। তবে আমার লেখার যে গাডি সেটা এই আধুনিক সমাজের গাডি বা কচু মুখি নয়। আমাদের দেশে আগে সবই ছিলো কাচা রাস্তা আর রাস্তার পাশে ছিল খাল। শীতের মৌসুমে রাস্তার পাশের খাল শুকিয়ে যেত। রাস্তার পাশে প্রচুর কচু জন্মাতো। শীতের সময় সেই কচু গাছগুলো মরে শুকিয়ে যেত। গ্রামের লোকজন রাস্তার পাশের সেই কচুর গোড়া কোদাল দিয়ে খুড়ে মোথা বা কচুর মুখি বের করে আনতো। এইগুলোকে আমাদের এলাকায় গাডি নামেই চেনে। মুল থেকে যে মুখি গুলো হতো তাকে বলা হতো আডাগাডি। এই গাডিগুলোকে সংগ্রহ করার পর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে সিদ্ধ করে আবরণ ছাড়িয়ে তার পর পানি, লবন, হলুদ, মরিচ দিয়ে জ্বাল দিলে একদম ঘন করে রান্না ডালের মত দেখতে হতো। এই গাডি খেলে প্রচুর গলা চুলকায় তাই কাচা তেতুল দেয়া হতো চুলকানি কমার জন্য। রান্না করা গাডি ভাতের সাথে, মুড়ির সাথে, রুটির সাথে খেতে বেশ সুস্বাদু লাগতো। গাডির রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুন। গাডিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘এ´ এবং লৌহ থাকে। গ্রামের এমন কোন বাড়ি পাওয়া যেতো না যে বাড়িতে শীতকালে গাডি রান্না হতো না। রান্না করা গাড়ি দেখতে অনেকটা অল্প পাতলা গুয়ের মতোই ছিলো।
গু কারো কাছেই অপরিচিত নয়। গু বা মল বা বিষ্ঠা হল কোন প্রাণীর পরিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ যা পায়ূ পথে দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়। এই নিষ্ক্রমণ প্রক্রিয়াকে মলত্যাগ বলা হয়। জীবন ধারণের জন্য প্রাণী খাদ্যগ্রহণ করে যা পরিপাক ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শরীরে হজম হয়। যে অংশ হজম হয় না তা মল বা বিষ্ঠা হিসাবে শরীর থেকে বর্জিত হয়। তবে উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাণীর মল দীর্ঘ সময় থাকলে তাতে ব্যকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটে এবং পঁচন শুরু হয় ফলে বিভিন্ন গ্যাস ও দুর্গন্ধের কারণে পরিবেশের দূষণ ঘটে। প্রাণীর মল পানিতে মিশলে পানিকে দূষিত করে ঐ পানি পানে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বিভিন্ন রোগ হতে পারে। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগ, যেমন কলেরা, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের জীবাণু মলের সাথে দেহের বাহিরে বের হয়। পাণ্ডুরোগ বা জন্ডিসের অন্যতম কারণ জণ্ডিস রোগীর মল শুষ্ক হয়ে বাতাসে মিশে মুখপথে মানুষের শরীরে প্রবেশ। মল বা বিষ্ঠার রয়েছে আরো নানান ক্ষতিকর দিক। আমাদের গ্রাম্য ভাষায় এটাকে বলে গু।
আমাদের সমাজে অনেকেই আছে গুয়ের মত। দেখতে অনেকটা গাডির রূপ নিয়ে সমাজে চলে। কিন্তু তাদের কার্যকলাপ দেখলেই অনুমেয় যে সেটা কি। সমাজে এরা রংচোরা স্বভাবের হয়। কথা ও কাজ দেখে কেউ বুঝতে পারবে না এরা কতটা ভন্ড। নিজের স্বার্থের জন্য এরা সব ত্যাগ করতে পারে। এরাই আসল ত্যাগী। নিজের প্রয়োজনে সব কিছু ত্যাগ করে শুধু নীতি আর আদর্শ ছাড়া, কারন নীতি আর আদর্শ তাদের কখনোই ছিলো না তাই ত্যাগের প্রশ্নই আসে না। নিজের স্বার্থের কারনে কাউকে চোর বানায়, কাউকে বুকে টেনে নেয় আবার কাউকে দুরে ঠেলে দেয়। তার স্বার্থটাকেই সে বড় করে দেখে। নিজেরটা ষোল আনা বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত এরা নীতিবাগীশ। যেমন গু এর বর্ণ একেক সময় একেক রকম। টাটকা অবস্থায় এক রূপ, শুকনা অবস্থায় আরেক রূপ। তাইতো মানুষ বলে গুয়ের কোন পিঠই ভালো নয়, সেটা শুকনা পিঠ হোক বা কাচা পিঠ। স্বার্থবাদী মানুষগুলো কখনোই ভালো মানুষ হতে পারে না। একান্ত আত্মকেন্দ্রীক হওয়ায় তারা মানুষের আত্মসম্মানবোধকে মূল্য দিতে জানে না, শ্রদ্ধা-ভালোবাসাকে দুর্বলতা ভাবে, নিজের জন্য কর্মীদেরকে জলাঞ্জলি দিতে সিদ্ধহস্ত।
তাই সর্বোপরি বলবো, আসুন আমরা গু আর গাডির মধ্যে পার্থক্যটা অনুধাবন করি। গু কখনো মানুষের আপন হতে পারে না। গাডির মত দেখতে হলেই সেটা গাডি হবে এমন কোন কথা নয়। দেখে, শুনে, বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গু আর গাডির মধ্যে বিস্তর ফারাক, সেটা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

Tuesday, January 15, 2019

সাংবাদিক যখন ৫০৬ ধারা মতে অভিযুক্ত! আসুন, চতুর্থ স্তম্ভের প্রতি সহনশীল হই

 সাংবাদিকতা একটা মহৎ পেশা। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে গণতান্তিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ যদি হয় স্বাধীন সংবাদমাধ্যম তবে একেকজন সাংবাদিক ঐ স্তম্ভের একেকটা খুটি যারা স্তম্ভকে আগলে রাখে। অন্য তিনটি স্তম্ভ হচ্ছে-জাতীয় সংসদ, নির্বাহী বিভাগ তথা প্রশাসন এবং বিচার বিভাগ। বাকী তিনটি বিভাগের পাহাড়ায় সাংবাদিকগণ অতন্ত্র প্রহরী হিসাবে কাজ করে। এতেই অনুধাবন করা যায় গণমাধ্যমের ও গণমাধ্যমকর্মীদের গুরুত্ব কত অসীম।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন বিশ্বের বড় বড় গুণিজনরা। যেমন থমাস জেফারসন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূল রচনাটিও তিনি করেছিলেন। জেফারসন ছিলেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন প্রবাদপুরুষ। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে যদি এই বিকল্পটি দেওয়া হয় যে, তুমি কি সংবাদপত্রবিহীন সরকার চাও, না সরকারবিহীন সংবাদপত্র চাও? তখন আমি পরেরটা বেছে নেব।’ জেফারসন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সংবাদপত্রের কথাই বলেছিলেন। ঠিক তাঁর প্রায় ৫০ বছর পর ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সংবাদপত্র সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, চারটি আক্রমণাত্মক সংবাদপত্র হাজারটা বেয়নেটের চেয়েও ক্ষতিকর।’ অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, ‘কোনো দেশে স্বাধীন গণমাধ্যম থাকলে সে দেশে দুর্ভিক্ষ হানা দিতে পারে না।’ যুগে যুগে মানুষ সংবাদ, সংবাদপত্র, স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, আবার এটিও উপলব্ধি করেছে যে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা না হয় অথবা সংবাদমাধ্যম যদি কোনো দুরভিসন্ধি নিয়ে অসত্য বা অর্ধসত্য সংবাদ প্রচার করে, তা দেশ, জাতি ও সমাজের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমনটা যে হয় না তা কিন্তু নয়। নাম সর্বস্ব সংবাদমাধ্যম ও তাদের কর্মীরা যেমন ক্ষতিকর তেমনি নামজাদা সংবাদমাধ্যম ও তাদের কর্মীরা সমাজের জন্য এইচআইভির মতই ক্ষতিকর। যে আশংকাটা করেছিলেন এবং বুঝেছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
এত কথা যে কারনে এবার সেটা বলি। আমার অত্যন্ত ঘনিষ্টজন নির্ভীক সাংবাদিক কাজী নজরুল ইসলাম। একদিন হঠাৎ রাতের বেলায় ফোনে জানালো তার কাছে একটি সমন গেছে। তার বিরুদ্ধে একটি ননজিআর মামলা হয়েছে। অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। তাকে দন্ডবিধির ৫০৬ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগঃ এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার কাছে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়েছিলেন। পুকুর চুরিতে সিদ্ধহস্ত সেই পদস্থ কর্মকর্তা তাকে সাক্ষাতকার দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি নাকি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন এবং তার রাজ কাজে বাধা দিয়েছেন এবং জীবন নাশের হুমকি দিয়েছেন! আর সেই সাক্ষাৎ চাওয়ার অপরাধে এবং হুমকির-খারাপ ব্যবহারের অভিযোগে কর্মকর্তা থানায় জিডি করেন। জিডি তদন্ত করে কর্মকর্তার অধিনস্ত কর্মচারী ও কতিপয় ঠিকাদারের জবানবন্দী গ্রহণ করে কাজী নজরুল ইসলাম ভাইর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে যা একজন সাংবাদিককে হয়রানি করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
যেহেতু দন্ডবিধির ৫০৬ ধারার প্রসঙ্গ উঠেছে তাই আইনটি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেই যাদের এই ধারাটার গুনাগুন জানা আছে কিন্তু ভুলে গেছেন। দন্ডবিধি (১৮৬০ সালের ৬ অক্টোবর এর ৪৫ নং আইন) আইনটির নাম ছিল ভারতীয় দন্ডবিধি। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর তদানিন্তন পাকিস্তান এর জন্য নাম হয় পাকিস্তান দন্ডবিধি। ভারত ও পাকিস্তানে ওভাবেই নামটি রাখা আছে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শিরোনামটি ৩০ জুন ১৯৭৩ তারিখের ৮ নং আইন দ্বারা সংশোধন করে পাকিস্তান শব্দটি বাদ দিয়ে পেনাল কোড নামে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকারিতা দেখানো হয়েছে। দন্ডবিধির ৫০৬ ধারায় কি বলা আছে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক। ধারাঃ ৫০৬-অপরাধজনক ভীতি প্রদর্শনের শাস্তিঃ যদি কোন ব্যক্তি অপরাধজনক ভীতি প্রদর্শনের অপরাধ করে, তাহা হইলে-সেই ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদান্ডে, কিংবা অর্থদন্ডে, কিংবা এতদুভয় দন্ডেই দন্ডিত হইবে; এবং যদি হুমকিটি মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত ঘটাইবার, কিংবা অগ্নি সংযোগে কোন সম্পত্তি ধ্বংস করিবার কিংবা মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় কোন অপরাধ সংঘটনের কিংবা সাত বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডনীয় অপরাধ সংঘটনের কিংবা কোন স্ত্রীলোকের সতিত্ব নষ্ট হইয়াছে বলিয়া দুর্নাম আরোপের হুমকি হয়, সেই ব্যক্তি সাত বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে অর্থদন্ডে কিংবা এতদুভয় দন্ডেই দন্ডিত হইবে। উক্ত ধারার বিচার প্রকৃয়াঃ আমল অযোগ্য-জামিনযোগ্য-মিমাংসারযোগ্য-যে কোন ম্যাজিস্ট্রেট, গ্রাম আদালত কর্তৃক বিচার্য। মৃত্যু বা মারাত্মক জখমের ভীতি প্রদর্শন হইলে মিমাংসার অযোগ্য এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য।
একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য যখন কোন কর্মকর্তার কাছে যান তখন ঐ কর্মকর্তার যদি সৎসাহস থাকে তবে সাংবাদিককে স্বাগত জানিয়ে এক কাপ লাল চা খাইয়ে তথ্য ও বক্তব্য দিয়ে বিদায় করেন। কিন্তু যদি তার সে সৎসাহস না থাকে তবে তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন এবং তার সাথে মন্দ আচরণ করেন, এটা আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা। আমাদের দেশেই নয় সারা বিশ্বে সাংবাদিকরা (প্রকৃত সাংবাদিক) জীবন বাজী রেখে অন্যায় অবিচারের স্বীকার হয়ে কাজ করেন। কখনো কখনো পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন দিতে হয়। আর চাঁদাবাজী, মানহানি, হুমকি-ধামকির মামলাতো হরহামেশাই খেয়ে থাকে সাংবাদিকরা। আমাদের এই সোনার দেশে জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়নের নামে বরাদ্দকৃত টাকা পোষা চাটুকার নেতা-কর্মীদের ভাগবাটোয়ারা করে দেয়া, অধিগ্রহণের নামে কিছু মৃত-অর্ধমৃত পাটকাঠির মত গাছের মূল্য কোটি টাকা দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত পুকুর নেতার বাড়িতে কাটা, স্কুলের জমি নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ, ভূমি অধিগ্রহণের সময় দোচালা ছনের ঘর দোতালা বানিয়ে টাকা তসরুপ, গৃহহীন মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর নির্মানের নামে টাকা পকেটস্থ করার খবর কাজী নজরুল ইসলামদের মত সাংবাদিকরা হাটে-মাঠে ঘুরে তুলে আনেন বলেই আমরা তা জানতে পারি এবং কোন কোন সময় সেই আত্মসাৎকারী লোভীদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয় সরকারের। এই তালিকা লিখে আসলে শেষ করা যাবে না। চতুর্থ স্তম্ভের খুটিগুলো অপর তিনটি স্তম্ভকে সর্বদা সোজা পথে চলতে বাধ্য করে এই সাংবাদিকরাই। তবে এই দুর্নীতির তালিকা যেমন কাজী নজরুল ইসলামদের মত সাংবাদিকরা তুলে এনে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ খুলে দেয় আবার অনেক কাজী নজরুল ইসলাম আছে যারা সেই সুযোগে দুর্নীতিবাজদের রুটি হালুয়ায় ভাগ বসিয়ে, উচ্ছিষ্ট খেয়ে নেপোলিয়ান বোনাপার্টের চিন্তার কারন হয়।
সর্বপরি যা বলতে এই লেখাটা লিখার তাগিদ অনুভব করলাম তা হলো-পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারনে সাংবাদিকদের প্রতি বিরাগভাজন হওয়া, মামলা-হামলা করে হয়রানি, হুমকি ধামকি দিয়ে তাদের কলম বন্ধ করার চেষ্টা থেকে আমাদের বিরত হতে হবে। নয়তো একদিন এই সোনার দেশ শ্মশানে পরিনত হবে। আপনার আমার কারোরই বাসযোগ্য থাকবে না।

Sunday, January 13, 2019

বৃক্ষের রক্তক্ষরণ বন্ধে আইন হোক

প্রয়োজনে বৃক্ষকে ব্যবহার করতে কোন বাধা নেই। কিন্তু আমরা অপ্রয়োজনেও বৃক্ষকে এমন ভাবে ব্যবহার করি যা উচিত নয় বলেই মনে হয়। বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু এটা সামান্য জ্ঞানসম্পন্ন মানুষও স্বীকার করবে। কিন্তু আমরা অপ্রয়োজনে বৃক্ষর উপর যে অত্যাচার করি তা বন্ধ করা উচিত। বিশেষ করে বৃক্ষের সাথে পেরেক মেরে, দড়ি বেধ বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে বৃক্ষের যে রক্তক্ষরণ করি তা বন্ধ করা উচিত। আর এই অন্যায় বন্ধে প্রয়োজনে আইন হতে পারে। 

প্রথমেই বৃক্ষ নিয়ে কিছু তথ্য দেই। বৃক্ষ বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ। বৃক্ষকে এভাবে সঙ্গায়িত করা হয়ঃ কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ যার মাটি থেকে সুস্পষ্ট শীর্ষ প্রকটতা বিশিষ্ট একটি একক প্রধান কান্ড অথবা গুঁড়ি থেকে বহুধাবিভক্ত অপ্রধান শাখা বিকশিত হয়। কিছু লেখকের মতে পূর্ণ বিকশিত অবস্থায় বৃক্ষের ন্যূনতম উচ্চতা ৩ মিটার থেকে ৬ মিটার হওয়া উচিত। আবার কিছু লেখক গাছের কান্ডের ন্যূনতম ব্যাস নির্ধারণ করেছেন ১০ সেমি। অন্যান্য কাষ্ঠবহুল বৃক্ষ, যারা এই শর্তগুলো পূরণ করতে পারে না, যেমন শাখান্বিত প্রধান কান্ড অথবা ছোট আকৃতির গাছকে গুল্ম বলা হয়। অন্যান্য উদ্ভিদের তুলনায় বৃক্ষ দীর্ঘজীবী হয, কোন কোন গাছ হাজার বছরও বেঁচে থাকে এবং ১১৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। বৃক্ষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কারণ এরা ভূমিক্ষয় রোধ করে এবং এদের পত্রপল্লবের নিচে আবহাওয়া-সুরক্ষিত বাস্তসংস্থান তৈরি করে। বৃক্ষ অক্সিজেন তৈরি ও বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড দূরীকরণ এবং ভূমির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা ল্যান্ডস্কেপিং ও কৃষির উপাদানো বটে, যার কারণ হল তাদের সৌন্দর্যগত আবেদন ও বিভিন্ন ধরণের ফল। বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত কাঠ ঘরবাড়ি তৈরি সহ নানান কাঠামো তৈরিতে এবং জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রায় ৪,০০০ কোটি গাছ ছিল, প্রতি মানুষে প্রায় ৬১ টি।

উপরে বৃক্ষ সম্পর্কে সামান্য কিছু তথ্য দেয়া হয়েছে। বৃক্ষ নিয়ে একটা গবেষণাপত্র লিখলেও লিখে শেষ করা যাবে না। আর বৃক্ষের গুণাগুণ বর্ণনা করার মত জ্ঞানও আমার নেই। তবে বৃক্ষ নিয়ে যা বলতে লিখাটা শুরু করেছি সেটাই বলি। আমাদের দেশে এখন কেউ গাছে না উঠতে পারলে নেতা হয় না। ছোট বড় সাইজের ফেস্টুন, বিজ্ঞাপন গাছের সাথে পেরেক-গজাল দিয়ে সেটে দিয়ে নিজেকে প্রচার করে। দলের মূল নেতা-নেত্রীদের পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিয়ে আর নিজের বিশাল সাইজের ছবি ব্যবহার করে ফেস্টুন, বিলবোর্ড প্রিন্ট করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে দেয়। এছাড়া কোচিং সেন্টার, শ্রীপুরের বড়ি, সান্ডার তেল, কলিকাতা হারবাল, তান্ত্রিক হাকিম, ডাক্তার, দোকানদার কেউ এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই। সবাই বৃক্ষকে প্রচার প্রচারণার একমাত্র দেয়াল হিসাবে ব্যবহার করে। শুধুযে পেরেক-গজাল দিয়ে তা কিন্তু নয়। অনেকে গাছের সাথে নাইলনের মোট-চিকন দড়ি দিয়ে নিজেদের ব্যানার বেধে রেখে আত্মপ্রকাশ করে। প্রচার প্রচারণার কাজটা শেষ হলে কেউই দড়িটা খুলে নেয় না, যেমন নেয় না পেরেক-গজালে যুক্ত বিজ্ঞাপনগুলো।
আমরা সেই কবেই জেনেছি বৃক্ষেরও প্রাণ আছে। তাহলে বৃক্ষের গলায় রশি দিয়ে বেধে দিলে কি তাদের দম আটকায় না? বৃক্ষের গায়ে পেরেক-গজাল বিদ্ধ করলে কি রক্তক্ষরণ হয় না। হয়তো এভাবে কেউ ভাবে না বা নিজের অপ-প্রয়োজনে ভাবতে চায় না। তাই বৃক্ষের এ দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কঠিন আইন প্রণয়ন করা জরুরী বলে মনে হয়। বৃক্ষ আমরা ব্যবহারের জন্য, প্রয়োজনে কাটবো, ভাঙ্গবো কিন্তু এভাবে নির্যাতন বন্ধ করা উচিত।

গাছের জীবন নিয়ে একটা গল্প দিয়ে শেষ করি। আমাদের প্রিয় মহানবীও গাছপালা ভালোবাসতেন। গাছেরও জীবন আছে, গাছও কষ্ট পায়। অকারণে গাছ কাটা কিংবা গাছের পাতা ছেঁড়া মহানবী একেবারেই পছন্দ করতেন না। অবশ্য মহানবী কারণ ছাড়া কোনো কাজ নিজেও করতেন না, অন্যকেও করতে দিতেন না। তিনি বলতেন, ‘এ পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা মানুষের উপকারে লাগবে। অপ্রয়োজনে তাই কোনো কিছু নষ্ট করতে নেই। নিয়মমতো সবকিছু ব্যবহার করা উচিত। তাই প্রয়োজনে গাছ কাটতে হয়। কিন্তু অকারণে গাছের একটি পাতাও ছেঁড়া উচিত নয়। একদিন মহানবী তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে যাচ্ছিলেন এক সফরে। ক্লান্ত হয়ে তাঁরা বিশ্রাম নিতে বসলেন মাঝপথে। এমন সময় দেখেন দূরে গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছে কয়েকজন লোক। কিন্তু ওদের মধ্যে একজন আপন খুশিতে পাতা ছিঁড়ছে। বাতাসে ভাসিয়ে দিচ্ছে সেই পত্রগুচ্ছ। ব্যাপারটা দেখে মহানবী খুব দুঃখ পেলেন। এগিয়ে গেলেন লোকটার কাছে। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন তুমি অযথা গাছের পাতাগুলো ছিঁড়ছ?
‘ছিড়লে ক্ষতি কী? ভালো লাগছে তাই ছিঁড়ছি।’
মহানবী তখন লোকটির আরো কাছে গেলেন। চুল টেনে ধরলেন তার। লোকটি উহ্ আহ্ করে উঠতেই মহানবী বললেন, ‘এত অল্পতেই তুমি ব্যথা পাচ্ছ? যদি তোমার চুল টেনে উপড়ে ফেলতাম তবে কেমন লাগত?’
লোকটি বলল, ‘আমার চুল টানলে ব্যথা তো পাবই। গাছের পাতা ছিঁড়লে গাছ কেন ব্যথা পাবে?’
মহানবী তখন লোকটির কাছে জানতে চাইলেন, ‘গাছ যে বুড়ো হয়ে মারা যায় তা কি তুমি দেখেছ?’
লোকটি মাথা নাড়ল। সে দেখেছে। তাহলে গাছের পাতা ছিঁড়লে গাছও দুঃখ পায়। গাছেরও জীবন আছে। লোকটি মাথা নামিয়ে রাখল। সে মেনে নিল মহানবীর কথা। পরে মহানবী বললেন, ‘অকারণে গাছের পাতা ছেঁড়া ঠিক নয়। যদি তোমার প্রয়োজন হয় তবে পুরো গাছটাই তুমি কেটে ফেল। তাতে কোনো ক্ষতি নেই।’ আমাদেরও শিক্ষা নেয়া উচিত।

Tuesday, January 8, 2019

চমকে ভরপুর মন্ত্রীসভা, মন্ত্রীদের চমক টিকবেতো?

এবারের মন্ত্রীসভা চমকে ভরপুর। নতুন মন্ত্রীসভায় পুরনো মন্ত্রীসভার ৩৭ জনই বাদ পড়েছে আর যুক্ত হয়েছেন ৩১ নতুন মুখ। হিসাবে গরমিল হতে পারে, কারন তথ্যটা অনলাইন থেকে নেয়া। পুরনো মন্ত্রীরা অনেকতো সেবা দিলেন জাতিকে! এবার তাদের বিশ্রাম দেয়াটা খুবই জরুরি ছিলো, যা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। চমকে ভরপুর মন্ত্রীসভার মন্ত্রীরা নিজে নিজেও চমক দেখাচ্ছেন কম না। বাসে চড়ে স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনে যাওয়া, কেউবা নিজ অফিস ঝাড়ু দেয়া, কেউ মোটর বাইকে চড়ে সচিবালয়ে যাওয়া, কেউ উপহার-উপঢৌকন এড়িয়ে চলার ঘোষণা দেয়া সহ নানান কর্ম করছেন বা ঘোষণা দিচ্ছেন। চমক দেয়ার খবরগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন মিডিয়ায় বেশ প্রচার পেয়েছে। এর সত্যতা কতটুকু নিশ্চিত না হলেও চমকগুলো নিয়ে আশাহত হওয়ার কিছু নেই। বিষয়গুলো দেখে খুবই ভালো লাগছে এবং আশায় বুক ফুলে ফেপে উঠছে। তাঁরা প্রতিদিনই এভাবে বাসে চড়ুক, ঝাড়ু দিক তা আমরা চাই না, প্রত্যাশা করাটাও হবে বোকামী। প্রথম প্রথম প্রতীকি কাজগুলো ভালো কাজের, সেবার আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে ইতিবাচক ভাবে দেখতে চাই। তবে কথা হচ্ছে, কতটা ধরে রাখতে পারবেন নিজেদেরকে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আমরা একটি সোনালী ভবিষ্যৎ দেখার জন্য চাতক পাখির মত চেয়ে রইলাম। 
এবারের মন্ত্রীসভায় অন্যতম চমক ছিলো তর্কিত-বিতর্কিত মন্ত্রীদের বাদ দেয়া। অনেক মন্ত্রী যারা নিজেকে হেভী ওয়েট, ঝানু হিসেবে ভাবতেন তারা বাদ পড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময়ে তাদের বাদ দিয়েছেন যখন গাল ফুলানো ছাড়া তাদের তেমন কিছু করারও নেই। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। নতুন মন্ত্রীসভায় বাদ পড়েছেন যেমন অনেক ঝানু ঝানু মন্ত্রী তেমনি অনেকেই যুক্ত হয়েছেন যারা নতুন-কাচা। নতুনদের মেধা, উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনা কাজে লাগিয়ে দেশ কতটা এগোতে পাড়ে তা দেখার জন্য পুরো জাতি অপেক্ষা করছে। 
নতুন মন্ত্রীসভার অনেক সদস্যই ব্যক্তিগত ও দলগত ভাবে চমক দেখাচ্ছেন যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। এমনই এক চমক হচ্ছে-নতুন সরকারের শপথের পরদিন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যান বাসে চড়ে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য বরাদ্দ পতাকাওয়ালা গাড়ি শপথের আগেই তাদের ঠিকানায় পৌঁছে গিয়েছিল। তবে সাভারে যাওয়ার সময় সেই গাড়ি সঙ্গে নেননি তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া মন্ত্রিসভার বাকি ৪৬ সদস্যকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সাভারে নিয়ে যাওয়া হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চারটি মিনিবাসে করে। স্মৃতিসৌধ থেকে বাসে করেই তারা ঢাকায় ফিরে সংসদ ভবনে নামেন। আসন সঙ্কুলান না হওয়ায় বাসের দুই সারি আসনের মাঝে ফাঁকা জায়গায় বাড়তি আসন জুড়েও বসতে হয় কয়েকজনকে। যেমনটা বাসের মাঝ গলিতে বাসের কন্ডাকটর আমাদের মোড়া নিয়ে বসিয়ে দেয়! আশার কথা এখানেই। এতজন মন্ত্রীর গাড়ি, তাদের প্রটোকল, সাথের আমলা-ফইলারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গেলে রাস্তা জ্যাম হয়ে যায় আর তাতে ভোগান্তি বাড়ে আম-জনতা, ভোটারের, যাদের ভোটে পাস করে আজ তারা মন্ত্রী। বাংলাদেশের মন্ত্রীরা প্রটোকলের সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে গিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। মন্ত্রিসভার সব সদস্যের একসঙ্গে বাসে চড়ে কোথাও যাওয়ার এমন ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। আর এধরনের সময়োপযোগী জনবান্ধব কর্মসূচী তারা কতটুকু মেনে চলবেন ভবিষ্যতই তা বলে দেবে।
নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রথম দিন সচিবালয়ে গেলেন মোটর বাইকে চড়ে। যদিও একজন আইন প্রনেতা হয়ে হেলমেড ছাড়া বাইকের পিছনে বসে সচিবালয়ে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে। নিন্দুকেরা এটা করবেই এবং করার মতই বিষয়। যেমনটা ভালো ভাবে দেখিনি আমি নিজেও! তবে মাঝে মাঝে আইন মেনে গাড়ির বহর ছেড়ে যদি জনতার কাতারে এসে সাধারণ মানুষের মত জীবনযাপন করে তবে তা অনুকরণীয় হয়েই থাকবে।

আরেক চমক দিলেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরদিন নিজেই দপ্তর পরিষ্কার করলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্ব নেয়া মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। যদিও প্রকাশিত ছবিটি নিয়ে বিতর্ক আছে। ছবিটা তার বাসগৃহের ছবি বলছেন অনেকে। তবুও যদি অফিস ঝাড়ু দেয়ার ছবি হয়ে থাকে তবে তা মন্দ কিছু নয়। মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে প্রবেশ করেই ঝাড়ু দিয়ে নিজ কক্ষ পরিষ্কার করেন তিনি। প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনগণ ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছে। তারা বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা তাদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করব। এ ছাড়া সামনে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন প্রয়োজন হলে, তা করা হবে। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারের ২১ অঙ্গীকারের মধ্যে শিক্ষার মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি অন্যতম। এই চ্যালেঞ্জ সারাবিশ্বেই আছে। সেগুলোর জন্য আমরা কাজ করে যাবো। সমালোচনা থাকলে তা আমরা দুজনে গুরুত্ব সহকারে নেবো।’ মন্ত্রীর ঝাড়ু হাতে শুধু নিজ অফিসের বা নিজ গৃহের ধুলা পরিস্কার করলেই হবে না। পরিস্কার করতে হবে মন্ত্রনালয়ে জমে থাকা দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাগুলোও। যদি ঠিক মত ঝাড়ু দিতে পারেন মানুষ মাথায় তুলে রাখবে আজন্ম, স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আর তাতে ব্যর্থ হলে মানুষ মন থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করবে এটাও নিশ্চিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চমকপূর্ণ এক স্টাটাস দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন-‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে আমার কিছু অনুরোধ-অনুগ্রহপূর্বক আমাকে কোনো ক্রেস্ট, ফুলের তোড়া, নৌকা, রূপা বা পিতলের তৈরি নৌকার রেপ্লিকা, কোট পিন, কোনো মানপত্র বা উপঢৌকন প্রদান করবেন না। মানপত্রের লেখা শব্দ ডাহা মিথ্যা কথা, হাস্যকর। মানপত্রে যেসব তোষামোদপূর্ণ বাক্যের বর্ণনা থাকে তার ৯৫ ভাগই মিথ্যা, ভিত্তিহীন। আমার জন্য রাস্তায় শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। করলে আমি সেই অনুষ্ঠান বয়কট করবো এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবো। স্বাগত জানিয়ে গেট বা তোরণ নির্মাণ, অবৈধ কাজের তদবির, বিপুল অর্থ ব্যয় করে স্টেজ বানানো, রকমারি খাবারের আয়োজন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখবেন, আমি আপনাদের সেবক। জনগণের দয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধি। আপনারা সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে আমাকে সংসদে পাঠিয়েছেন বলেই আমি আজ প্রতিমন্ত্রী। দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে শপথ গ্রহণ করেছি। দোয়া করবেন, আমি যেন আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে পারি।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন অবশ্য আগেই একটা স্টাটাস দিয়েছিলেন যে স্টাটাসের কথাগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান তার স্টাটাসে দিয়েছেন। দুজনের স্টাটাস প্রায় একই। তিনিও উপহার, উপঢৌকন, মানপত্রের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন। তোষামোদি, চাটুকারি করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে এবং তিনি প্রজাতন্ত্রের জনপ্রতিনিধি, জনগনের দয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধি, দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে শপথ গ্রহণ করেছেন। তিনি প্রভু বা জমিদার নয় সেই বিষয়টা কাজ শুরুর আগেই নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
নতুন শপথ নেয়া মন্ত্রী-সাংসদরা যে স্টাটাস দিচ্ছেন বা মিডিয়ায় যা বলছেন তা খুবই আশা জাগানিয়া কথা। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সকল মন্ত্রী-সাংসদদের মনের কথা এটাই হোক। তারা যদি বুঝতে পারে যে তারা প্রভু বা জমিদার নয় জনগনের দয়ায় প্রতিনিধি হয়েছেন এবং দায়িত্ব পেয়ে শপথ পাঠ করেছেন তবেই তারা তাদের কাজটা সঠিক ভাবে করতে পারবেন। একজন সাংসদ যে উচ্চতায় পৌছান সেখান থেকে অর্থ বিত্তের লোভে নিচে নেমে আসাটা ঠিক হবে না কারোরই। জনসেবা করার এমন সুযোগ মহান সৃষ্টিকর্তা সবাইকে দেন না, যাদের দিয়েছে তারা যেন সে সুযোগটা হাতছাড়া না করে সেই প্রত্যাশা রইলো। চমকের পর চমক দেখতে চাই। তবে চমক হতে হবে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, মাটি ও মানুষের জন্য, দুর্নীতি, অনিয়ম, সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জন্য নয়। আশার ফল কেমন হবে, তিতা না মিঠা তা একমাত্র সময়ই বলে দেবে। 

অতি উৎসাহে কাটতে কাটতে তাল উঠে গিয়েছিলো

কাটতে কাটতে অনেক সময় তাল উঠে যায়। কিভাবে তাল উঠে যায় সেই গল্প শেষে বলছি। আগে কিছু পন্ডিত সুলভ কথা বলি। প্রসঙ্গ আর কিছুই নয়, এবারের নির্বাচন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটাভুটির বিষয় সবারই জানা আছে। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ অভাবনীয় আসনের মালিক হয়েছে। আসন পেয়েছে জোটের অন্য শরীকরাও প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। যাদের কিছুটা পাওয়ার কথা ছিলো তারা অভাবনীয় কম পেয়েছে। এর পেছনে কারন বিশ্লেষণ করলে এত কালিও পাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে না কাগজও। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামীলীগের জয় পাওয়াটা অপ্রত্যাশিত ছিলো বলে আমার মনে হয় না, যদিও অনেকেই মানবে না কথাটা। আর তারাই মানবে না যারা ষোল কোটি মানুষকেই তাদের দলেল ভাবে, এমনকি আওয়ামীলীগের সভানেত্রীকেও! আওয়ামীলীগের জয় পাওয়াটা কতটা যৌক্তিক তা ইভিএমের ভোট দেখলেই বুঝা যায়। নির্বাচন যতটুকু প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তা কেবলই অতি উৎসাহী কর্মীদের কারনে। অতি উৎসাহী কর্মীদের তাল উঠে গিয়েছিলো বলেই আমার কাছে মনে হয়।
দীর্ঘ দশ বছর ক্ষমতায় থাকার কারনে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না। আমরা সাধারণ মানুষ যারা অর্থনীতি বুঝি না, জিডিপি বুঝি না, সূচক বুঝি না, তারা এটা নিশ্চই বুঝি যে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, জীবন মানের উন্নয়ন ঘটেছে, রাস্তা ঘাট-ব্রিজ-কালভার্ট হয়েছে, স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে ব্যপক পরিবর্তন হয়েছে। এক সময় বিশ টাকা রোজে কামলা পাওয়া যেতো, এখন পাঁচশত টাকায় অগ্রিম বুকিং দিয়েও কামলা মিলে না। একসময় খুদের-কুড়ার বিনিময়ে ধান ভানার লোক পাওয়া যেতো, ভাতের ফ্যানের বিনিময়ে কাজের বুয়া মিলতো, এখন মিলে না। একটা বাই সাইকেলের জন্য বাবার কাছে ধরনা ধরতো এখন অনায়াশেই একটা মটর বাইক পায়। এতেই বুঝা যায় মানুষের হাতে এখন টাকা আছে। আর এই সার্বিক উন্নয়নের কারনেই মানুষের আওয়ামী জোটের প্রতি সমর্থন ছিলো বলেই মনে হয়, যে সুবিধাটা পেয়েছে জোট। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী জোট যথারিতি ছিলো ভোটের মাঠে। দিনে রাতে মাঠ চষে বেড়িয়েছে প্রার্থীরা, সেই চষার কারনেই উর্বর মাঠে ভালো ফসল এসেছে। পক্ষান্তরে বিরোধী গ্রুপটা ছিলো অটো পরিবর্তনের প্রত্যাশায় ও আন্দোলনের দিকে। তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়া, প্রচার প্রচারনা করা, সভা-সমাবেশ করা, পোষ্টার টাঙ্গানোসহ নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় ছিলো সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। হামলা মামলাসহ নানান ছল ছুতায় মাঠে নামেনি। একটা ঐশ্বরিক পরিবর্তনের আশায় চাতক পাখির মত চেয়ে ছিলো। ধারনা ছিলো একটানা ক্ষমতায় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে যে বদনাম কামিয়েছে সেই কারনে পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাদের মনোভাব কি ছিলো তা উঠে এসেছে বিরোধী নেতাদের ফোনালাপের মধ্য দিয়েও। মাঠ না চষে ফসলের আশা করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। আন্দোলন, সংগ্রাম, পরিশ্রম ছাড়া কোন দিন কোন কিছুই পায়নি জাতি। যেমনটি পায়নি এবারের নির্বাচনেও। ভোট গ্রহণের অনিয়মের অভিযোগ তুলে পরাজয়ের যে কথা বলে তা ইভিএমে ভোট প্রদানের হার ও রেজাল্ট দেখলেই বুঝাযায়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া হয়। দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৬ টিতে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা হয়। ইভিএম আসনগুলোতে গড় ভোট পড়েছে ৪৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। এসব আসনে মোট ২১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৪টি ভোটের মধ্যে মোট ভোট পড়েছে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫৫টি। ইভিএম আসনের ফলাফলে দেখা যায়ঃ রংপুর-৩ আসনে মহাজোটের হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছে ৫৩ হাজার ৮৯। মোট ভোটের ৫২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে এ আসনে। ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ ৯৩ হাজার ৫৫২টি ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকের সুব্রত চৌধুরী ২৩ হাজার ৬৯০ ভোট। মোট ভোটের ৪৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের মহিবুল হাসান চৌধুরী ২ লাখ ২৩ হাজার ৬১৪টি ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী হলেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ১৭ হাজার ৬৪২টি ভোট পান। মোট ভোটের ৩২ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোট পড়ে। সাতক্ষীরা-৩ আসনে আওয়ামীলীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬১১ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল খালেক ২৭ হাজার ৭১১ ভোট পান। মোট ভোটের ৫২ দশমিক ৮২ শতাংশ ভোট পড়ে। খুলনা-২ আওয়ামী লীগের শেখ সালাহ উদ্দিন ১ লাখ ১২ হাজার ১০০ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ২৭ হাজার ৩৭৯টি ভোট। মোট ভোটের ৪৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পড়ে। ঢাকা-১৩ আওয়ামী লীগের মোঃ সাদেক খান ১ লাখ ৩ হাজার ১৬৩ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবদুস সালাম পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৩২ ভোট। মোট ভোটের ৪৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ভোট পড়ে আসনটিতে।
ব্যালট পেপারের ভোট নিয়ে নানা প্রশ্ন করছেন বিরোধী গ্রুপ। কতটুকু সত্যি আর কতটুকু মিথ্যা সেটা আমার চেয়ে সবাই ভালো জানেন। কিন্তু ইভিএমের পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝাযায় এখানে ব্যালট নিয়ে ভোট বিপ্লব করা যায়নি। যদি করা যেত তবে ব্যালটের কেন্দ্রের মতই ফলাফল হতো, ভোট পড়তো নিশ্চই ৮০-৯০ ভাগ। ইভিএম দিয়ে করা আসনগুলোতেও বিরোধী জোটের ভোটের হার বলে দেয় তাদের জনপ্রিয়তার কথা, তাদের হাত গুটিয়ে থাকার কথা, নিক্রিয়তার কথা। আর অন্য কেন্দ্রগুলোর ভোটের ব্যাপারে বিরোধী গ্রুপ বলেন, জোর করে নিয়েছে, এজেন্ট বের করে দিয়েছে, পুলিশ জোটের, জওয়ান জোটের, অফিসাররা জোটের তাই বিরোধীদের জোর করে হারিয়েছে। একটা গল্প মনে পড়লো, এক গৃহস্থ মাঠে ধান নিড়ানোর জন্য কামলা নিয়েছিলো যাদের মধ্যে একজন ছিলো অন্ধ। দুপুরে যখন তদারকি করতে মাঠে গেছে তখন গিয়ে দেখে কোন ঘোপের নিড়ানিই ভালো হয়নি। গৃহস্থ রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, এই ঘোপ কে করছে? সবাই উত্তর দিলো কানায়, ঐ ঘোপ কে করছে, যথারিতি সবাই বললো কানায়। তখন গৃহস্থ বললো সবই যদি কানায় করে তবে তোমরা কি ছিড়ছো? এজেন্ট আওয়ামী জোটের, পুলিশ আওয়ামী জোটের, জওয়ান আওয়ামী জোটের, কর্মকর্তারা আওয়ামী জোটের, সবাই যদি আওয়ামী জোটের হয় তবেতো ভোটারও আওয়ামী জোটের, বিরোধী জোটের কি করার আছে! কি নিয়েই বা তারা ভোটের মাঠে আছে? অটো পরিবর্তনের আশায়? সে আশার গুরে মোটা দানার বালি ছাড়া আর কিছুই যে নেই তা নির্বাচনের ফলেই দেখা গেছে।
এবার তাল ওঠার গল্পে আসি। আমার ব্যাংকার বন্ধু মোঃ কামরুজ্জামান মিন্টু গল্পটা বলেছিলো। গ্রামের মানুষ গোসলে যাওয়ার আগে ছেন-কাচি-কাটাল নিয়ে বের হন। তার চাচাও গোসলের আগে একটা কাচি নিয়ে বের হয়েছে। পুকুড় পাড়ে বিভিন্ন গাছের ডাল পালা ছাটতে গিয়ে সে ডগার পাতা পর্যন্ত কেটে ফেলছে দেখে অপর চাচা বললো, ও করে কি? কাটতে কাটতে তো গাছই মেরে ফেলবে। তখন তার আরেক চাচা বলেন, কাটতে কাটতে ওর তাল উঠে গেছে! অতি উৎসাহীদের যখন তাল উঠে যায় তখন ডগা পর্যন্তও কেটে ফেলে। এমন ভাবে কাটে যে কোন কোন সময় গাছ দুর্বল হয়ে যায়, কখনো কখনো গাছ মড়েও যায়। গল্পটা যার যার মত ভেবে নিবেন। ধন্যবাদ।

Saturday, January 5, 2019

ধর্ষণ নিয়ে ধস্তাধস্তি

ধর্ষণ রুচিহীন মানুষের বিকৃত রুচির পরিচয়। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বে বিকৃত রুচির যৌনাচার চলমান। বিভিন্ন ছল ছুতায় এক শ্রেণীর পশু মনোবৃত্তি সম্পন্ন মানুষ রুপি জানোয়ার এ রুচির পরিচয় দেন। আসলে জানোয়াররা এমন কর্ম করে কিনা জানিনা, মানুষ করে এটা নিশ্চিত। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন পরবর্তী ৩০ ডিসেম্বর রাতে নোয়াখালির সুবর্ণচরে এমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে যায়। পরিবারের সদস্যদের বেঁধে রেখে আওয়ামীলীগ সমর্থক কিছু পশু মনোবৃত্তি সম্পন্ন জানোয়ার ঘটনাটি ঘটায়। যেমনটি ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচন পরবর্তী ৮ অক্টোবর রাতে বিএনপি-জামায়াতের পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সিরাজগঞ্জের ১৪ বছরের মেয়ে পূর্ণিমা। সভ্য দেশের কোন সভ্য মানুষই এমন ঘটনাকে সমর্থন দেবে না। সেটা যে দলের সমর্থকই হোক না কেন।
ধর্ষণ আসলে কি? ধর্ষণ এক ধরনের যৌন আক্রমণ। সাধারণত একজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গম বা অন্য কোনো ধরনের যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে ধর্ষণ বলা হয়। ধর্ষণ শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্যভাবে চাপ প্রদান কিংবা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত হতে পারে। অনুমতি প্রদানে অক্ষম যেমন-কোনো অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এরকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যৌনমিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত। ধর্ষণ শব্দটির প্রতিশব্দ হিসেবে কখনো কখনো 'যৌন আক্রমণ' শব্দগুচ্ছটিও ব্যবহৃত হয়। বিচারব্যবস্থায় 'ধর্ষণ' শব্দটি ব্যবহার না করে 'যৌন আক্রমণ' কিংবা 'অপরাধমূলক যৌন আচরণ' শব্দগুচ্ছকে ব্যবহার করা হয়। অপরিচিত ব্যক্তিদের চেয়ে পরিচিত ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক সংঘাত বা যুদ্ধের সময়ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে ও ব্যাপক হারে ধর্ষণ (যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতা ও যৌন দাসত্ব) ঘটে থাকে। এ ধরনের ঘটনাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ধর্ষণ গণহত্যার একটি উপাদান হিসেবেও স্বীকৃত। যে কোনো লিঙ্গ, বয়স, জাতি, সংস্কৃতি বা ধর্মের ব্যক্তি ধর্ষণের শিকার হতে পারে। ধর্ষণকে বেশ কয়েকটি ধরনে ভাগ করা হয়, যেমন- গণধর্ষণ, বৈবাহিক ধর্ষণ, অজাচার ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, কারাগারে ধর্ষণ এবং যুদ্ধকালীন ধর্ষণ। গণধর্ষণ হচ্ছে একদল লোক কর্তৃক একজন একক ব্যক্তিকে ধর্ষণ। দুই বা ততোধিক ব্যক্তি (সাধারণত কমপক্ষে তিনজন) কর্তৃক ধর্ষণ সারা বিশ্বে প্রচুর ঘটে থাকে। গণধর্ষণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মদ এবং নেশাজাতীয় দ্রব্যের প্রভাবে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে, দিনের তুলনায় রাতে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে, এক্ষেত্রে অধিকাংশ ভুক্তভোগী নিষ্ঠুর যৌন আক্রমণের শিকার হয়। একক ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণের চেয়ে গণধর্ষণ বেশি হিংস্র হয়। গণধর্ষণকে কখনো কখনো 'দলগত ধর্ষণ'ও বলা হয়ে থাকে।
কিছু ঘটনা মানুষ চাইলেও ভুলতে পারে না। যেমন ২০০১ সালের সিরাজগঞ্জের ঘটনা। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার দেলুয়া গ্রামের অনিল কুমার শীলের কিশোরী কন্যা পূর্ণিমান রানী শীল। অষ্টম সংসদ নির্বাচনের সময়টাতে ছিলেন হামিদা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। নির্বাচনের দিন দেলুয়া হাইস্কুল কেন্দ্রে যান তিনি। সেখানে তাঁর গৃহশিক্ষক সাধন পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন। পূর্ণিমাকে দেখে সাধন অনুরোধ করে বলেন, ‘তিনি বাসায় খেতে যাবেন। তাই তিনি ফিরে আসার আগ পর্যন্ত যেন পূর্ণিমা একটু বসেন।’ পরে সাধন ফিরে আসলে পূর্ণিমা বাড়ির দিকে রওয়ানা দেন। পথে বিএনপি-জামায়াত কর্মী ও সমর্থকরা তাকে শাসায়। সপ্তাহখানেক যেতে না যেতেই সেই শাসানোকে বাস্তবে রূপ দেয় বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা। ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ রাতে পূর্ণিমার ওপর চালানো হয় বর্বরতম অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন। রাতে জোরপূর্বক বাড়িতে ঢুকে পুরো পরিবারের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের চালায় বিএনপি-মামায়াত সন্ত্রাসীরা। এক পর্যায়ে অনিল শীলের ছোট মেয়ে পূর্ণিমাকে গণধর্ষণ করে তারা। এত মানুষ দেখে পূর্নিমার মা সেদিন বলেছিলো, ‘বাবারা, আমার মেয়েটা ছোট তোমরা একজন একজন করে এসো, নয়তো মেয়েটি মরে যাবে।’ পূর্ণিমার মায়ের সেদিনের আকুতি মানুষ কোনদিনই ভুলবে না, আমরাও ভুলিনি।
যেমনটি মানুষ ভুলবে না ২০১৮ সালের নির্বাচন পরবর্তী নোয়াখালীর ‘স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে দলবেঁধে ধর্ষণ’ এর ঘটনা। সুবর্ণ চরের ধর্ষিতা নারীর জবানবন্দিতে উঠে এসেছে সেই বর্বরতার করুন কাহিনী। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য জোর করেছিলো, কিন্তু আমি তাদের কথা না শুনে ধানের শীষে ভোট দিয়েছি।মধ্যরাতে ১০ থেকে ১২ জন লোক হাতে লাঠিসোটা নিয়ে বেড়া কেটে তার বাড়িতে ঢুকে। তারপর তারা তার স্বামী ও চার সন্তানকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর তারা আমাকে বাইরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ বিষয়ে মুখ খুললে তার স্বামী ও সন্তানদের মেরে ফেলা হবে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়ে যায় ধর্ষণকারীরা।’
ধর্ষিতার স্বামী বলেন, ‘তার স্ত্রী গত রবিবার সকাল ১১টায় চর জুবিলী প্রাথমিকে বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। সেখানে তিনি সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে বুথে যেতে চান। ওই সময় আওয়ামী লীগের কর্মী রুহুল আমীন তাকে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য জোর করেন। কিন্তু, তাকে (রুহুল আমীন) যখন বলা হয় যে ধানের শীষে ভোট দেওয়া হয়েছে, তখন তিনি ব্যালট পেপারটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, এরমধ্যেই তার স্ত্রী ব্যালটটি বাক্সে ঢুকিয়ে দেন। এতেই রুহুল ক্ষেপে যান এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।’
কোন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা তাদের কর্মীদের বলেন না এমন জঘন্ন ঘটনা ঘটাও। অতি উৎসাহী একদল কর্মী যারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বা হীন চিন্তা চেতনার বাস্তব রুপ দিতে এমনটা ঘটায়। তারা চিন্তা করে তাদের পিছনে রাজনৈতিক হাতের ছায়া আছে। এধরনের কর্মীদের বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দলেরই সতর্ক হওয়া উচিত। এধরনের অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং কঠোর হস্তে দমন করা না গেলে ভবিষ্যতে পূনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। ধর্ষণ সহ প্রতিটি অপরাধকেই দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করা উচিত নয়। আমাদের দেশে দলীয় পরিচয় পাওয়ার পর সরকার একটু হলেও নমনীয় হয়ে উঠে যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই নমনীয়তা ত্যাগ করে অপরাধীকে অপরাধী হিসাবে বিবেচনা করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে একটি বাসযোগ্য দেশ গঠন করতে হবে। একজন ধর্ষিতার শরীর থেকে যতটা রক্তক্ষরণ হয় তার চেয়ে অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হয় দেশবাসীর হৃদয় থেকে। এই রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হবে। শাস্তি নিশ্চিত করলে রাজনৈতিক শক্তির ভরসায় কেউ আর অপরাধ করতে সাহস পাবে না। ২০০১ সালে সংঘটিত ধর্ষনের বিচার সম্পন্ন হয়েছে ২০১১ সালে। দীর্ঘ দশ বছর সময় লাগাটা উচিত হয়নি। এধরণের অপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হওয়া উচিত। ক্ষমতার লোভে ও মোহে পড়ে এমন সব কর্ম করে এবং প্রশ্রয় দেয় যা জাতির জন্য কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করে। সকলের বোধদয় হোক। মানুষ মানুষের জন্য। বিবেক জাগ্রহত হোক। বিবেক জাগ্রহত হোক। বিবেক জাগ্রহত হোক।