ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Thursday, December 17, 2015

নেতা ভক্তির নমুনা!!!

আমাদের দেশে নেতার প্রতি সাধারণ মানুষের ভক্তি দিন দিন যেন উঠেই যাচ্ছে! তবে সাধারণ মানুষের নেতার প্রতি ভক্তি উঠে গেলেও অসাধারণ মানুষের যেন নেতার প্রতি ভক্তির শেষ নেই। রাজনীতির মাঠে সাধারণ জনগন নেতাকে যে দৃষ্টিতেই দেখুকনা কেন অসাধারণ জনগন মানে এক শ্রেণীর কর্মীর কাছে নেতারা পিতার চেয়েও বেশি শ্রদ্ধাভাজন!! 

আমাদের দেশে নেতাকে কেউ গুরু বলে, কেউ ওস্তাত বলে, কেউ দাদা বলে আবার কেউ ভাই বলে, কেউ কেউ ভাইয়াও বলে, কেউ বস বলে, কেউ লিডার বলে, কেউ কেউ হুজুরও বলে থাকে। দেখাগেছে, বাপেও বলে দাদা আবার ছেলেও বলে দাদা, নাতী বড় হয়েছে, সেও বলে দাদা। দাদা যেন ঐ নেতার নাম হয়ে গেছে!! কেউ কেউ একই ভাবে ভাই বলে, কেউ কেউ একটু বেশি আদর করে বলে ভাইয়া!! বাপে-পুতে একসাথে এমন ভক্তি ভরে সম্বোধন অন্য কোন সম্পর্কে দেখা যায় বলে মনে হয়না!! নির্বোধ নেতাদের এমন পাম দেয় চতুর কর্মীরা যা নেতা বুঝতে পারে না এবং নির্বোধ কর্মীদের এমন বাশ দেয় নেতারা  যা কর্মীরা বুঝতে পারে না!!! সবই ঐ তৈলাক্ত বাশের অংক!

নেতার পিছু একজন তথাকথিত কর্মী যে সময় ব্যয় করে তা নিজের কর্মের বা ধর্মের পিছনেও ব্যয় করে না। তাইতো এক নেতার মুখে বলতে শুনেছি যে, আমি আমার নেতার নাম যতবার যপেছি ততবার যদি মহান আল্লাহকে ডাকতাম তবে আজ আমি অনেক বড় অলি আল্লাহ হতাম। এই হলো সেই মহান নেতার বাণী। সেই নেতার পিছনেও দেখেছি শত শত কর্মী দিন রাত ঘুরে বেড়াতো!! নেতা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন সে তার নেতার নাম যপে কোন কিছুই হতে পারেনি। তারপরও তিনি যখন নেতার আসনে তখন তিনি একবারও তার কর্মীদের বলেনি যে, তোমরা আমার পিছু পিছু এভাবে ঘুরোনা, আমার নাম এত যপে লাভ নেই, আমার পেছনে এত সময় না দিয়ে নিজের কাজের পিছনে সময় দাও, আমার পিছনে সময় দেয়া মানে নিজের পিছনে বাশ নেয়া, আর নিজের পিছনে সময় দেয়া মানে বাশ বেয়ে সাফল্যের চুড়ায় ওঠা!!! ওকথা বলবেনা কোনদিনও। কারন তথাকথিত কর্মীদের বিমোহিত করে রাখে নেতারা নানান আশার বাবল ফুলিয়ে।

সম্প্রতি এক দৃশ্য নেতার প্রতি ভক্তির এক অপূর্ব নিদর্শন বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। একটি ভবনের টয়লেটে নিজে মুত্র বিষর্জন করে এসে বাইরে করিডোরে দাড়িয়েছি মাত্র। হঠাৎ সুনামীর জলের মত অথবা মৌচাকের মত যেভাবেই বলেননা কেন, ঐ ভবনের বিভিন্ন দরজা দিয়ে মানুষ ঢুকছে। তাকিয়ে একটু অবাক হলাম। ভাবলাম বাইরে কি পুলিশ লাঠিচার্জ করছে!!! এভাবে মানুষ কেন দল বেধে এদিকে আসছে? সাথে সাথেই বিষয়টা পরিস্কার হয়ে গেল। তাকিয়ে দেখি এক নেতা ঢুকছে ঐ ভবনে। নেতা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ভিষণ বেগে-প্রবল আবেগে আমার পাশ কাটিয়ে ঢুকে গেল টয়রেটে। কিন্তু কর্মীদের পথ চলা থামছে না। একে অপরের উপর যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে!! এর পর নেতার কাছের এক ভাই (দ্বিতীয় কাতারের নেতা) বলে উঠলো, এই তোরা থাম! ভাই প্রস্রাব করবে!! আরেক জন বলে উঠলো, দাড়া, দাড়া, ........ভাই মোত্তে যায়!!! এবার কথাটা প্রতিধ্বনির মত পিছনের দিকে যেতে শুরু করলো..........ভাই মোত্তে যায়,........... ভাই মোত্তে যায়,........... ভাই মোত্তে যায়,........... ভাই মোত্তে যায়,...........। এর পর কর্মীরা থেমে গেল। থামতে গিয়ে কেউ কেউ একে অপরের উপর ধাক্কাও খেল। কিছুক্ষণ পর ঐ নেতা টয়লেট থেকে বের হলো!! সবাই কড়িডোরের দুই পাশে সাড়িবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে গেল! নেতা এবার পূর্বের চেয়ে কিছুটা মন্থর গতিতে হেটে চললো। নেতার চোখে মুখে প্রশান্তির ছাপ! ভোগে নয়, ত্যাগেই শান্তি তা নেতার মুখের প্রশান্তি বলে দিচ্ছে!!! নেতার পিছু নিল আবার কর্মীরা। কি নেতা ভক্তি!!! এই দেশে নেতাদের মুক্তি নাই!!! মোত্তেও যেতে পারবে না কর্মীদের ছাড়া!! 

পরে বিষয়টা বন্ধুদের জানালে কেউ কেউ মন্তব্য করলো ঘটনার চেয়েও মজার কথা!! এক বন্ধু বললো, আমাদের দেশের কর্মীরা নেতাদের এতটাই ভালবাসে যে নেতার মুত্র বিষর্জনের সময় যদি নেতার মুত্র নল ধরে দাড়িয়ে থাকতে পারতো!! প্রিয় নেতা মুত্র বিষর্জন করে যেমন শান্তি পেত তেমনি কর্মী স্বর্গীয় সুখ অনুভব করতো এবং নিজেকে ধন্য মনে করতো ঐ কর্মী। কিন্তু নেতা তো ওটা ধরতে দিতে পারে না, তাই না?????
(বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তৈরী, নিজ গুণে বুঝে নিবেন)