ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Thursday, February 14, 2019

বালিকা নিয়ে কবিতা...বালিকা বন্দনা.....

বালিকা-১

বালিকা তোমার দুরন্ত ছোটাছুটি
খিলখিলিয়ে হাসির লুটোপুটি
বালিকা তোমার বাঁকা ঠোটের হাসি
দেখতে আমি অনেক ভালোবাসি।

বালিকা তোমার অকপটে কথা বলা
খুনসুটি আর ছোট ছোট ছলা কলা
বালিকা তোমার আকাশ পানে চাওয়া
আমার কাছে আকাশ হাতে পাওয়া।

বালিকা তোমার ছি-কুতকুত খেলা
বৌয়াছি আর গোল্লাছুটে যায় বেলা
বালিকা তুমি এসব কর যখন
তোমায় আমি ভালোবাসি তখন।

বালিকা তুমি শিখবে কখন পড়া
হৃদয় বুঝে হৃদয়টাকে ধরা
বালিকা আমি আছি প্রতিক্ষাতে
কখন রাখবে হাতটি আমার হাতে?
০৫/০২/২০১৯


বালিকা-২

বালিকা তুমি আমার হবে কবে
আমি যখন তোমার হবো, তবে?
আমিতো তোমারই হয়ে আছি
তোমায় নিয়েই স্বপ্ন দেখে বাঁচি।

বালিকা তুমি আমায় বুঝবে কখন
ভালোবেসে জীবন দিলে, তখন?
ডুবেছি তোমার প্রেম সাগরে পরে
আমিতো সেই কবেই গেছি মরে।

বালিকা তোমায় বুঝাই কেমন করে
আমার মনে যতটা প্রেম ধরে
তারচেয়েও বেশি ভালোবাসি
বারবার আমি তাইতো ফিরে আসি।

বালিকা তোমার আবাস এ হৃদয়ে
তোমার জন্য হৃদয় যাচ্ছে ক্ষয়ে
উথাল পাথাল ঢেউয়ের তোরে আমার
ভাঙ্গছে দেখো হৃদয়ের প্রেম খামার।
১০/০২/২০১৯


বালিকা-৩

বালিকা, কাল বসন্ত এসে গেছে
কলি থেকে ফুল ফুটেছে পলাশ গাছে
বালিকা তোমার বসন্ত কি আসেনাই?
আমি আছি, তোমার বসন্তের প্রতিক্ষায়ই।

বালিকা তোমার হৃদয়ের ছোট্ট কলি
ফুটলে পরে হবো আমি অলি।
অলি হয়ে করবো নাচানাচি
কলি ফোটার অপেক্ষাতেই আছি।

বালিকা তোমার ফুলের সুবাশ নিতে
বসন্তের আসায় কষ্ট সইলাম শীতে
মালি হয়ে দিচ্ছি পানি মূলে
অপেক্ষাতে বিদ্ধ হই ত্রিশুলে।

বালিকা আমার কষ্ট বুঝবে কবে?
কষ্টানলে অঙ্গার হলে তবে?
তোমার জন্য কষ্ট সইতে রাজি
জীবনটাকে ধরতে পারি বাজি।
১৩/০২/২০১৯

বালিকা-৪

বালিকা আজ ভালোবাসা দিবসে
তোমায় দেখার আশায় আছি বসে
একশ একটা নীল পদ্ম হাতে
দরজাতে দাড়ালাম প্রভাতে।

তোমার হয়তো মনে হবে প্রলাপ!
সাথে এনেছি একশ একটা গোলাপ
বালিকা আমি প্রলাপ বকি নাকো
আমি চাই তুমি আমারই হয়ে থাকো।

তোমার জন্য বাদাম আর চকোলেট
কেন তুমি করছো বলো লেট?
গেলে তুমি ঘুরতে আমার সাথে
ঝালমুড়ি আর ফুসকা দেব হাতে।

তোমার জন্য আকুল আমার প্রান
ভাবিনা কিসে মান আর অপমান
তোমায় আমি অনেক ভালোবাসি
বুঝনা তবুও বার বার আমি আসি।
১৪/০২/২০১৯


বালিকা-৫

বালক চেয়ে থাকে বালিকার পানে
বালক কাছে আসে বালিকার টানে
বালিকা বুঝে না, সেটা বুঝে বালকে
বালিকাই হুর, আধার কী আলোকে।

বালিকার প্রেমে হয়েছে বিহ্বল
লোক নিন্দা, ভয় করেনা আমল
সমাজ কি বলে, বলে পরিবার?
বালিকাকে নিয়ে হবে ভব পার।

এজনম হায়, বালিকারই তরে
না পেলে তারে, সুখ হবেনা মরে
তাই দিবা নিশি, ভাবি তার কথা
বুঝবে সে কবে হৃদয়েরই ব্যথা?

আমি হবো কৃষ্ণ বালিকা হোক রাধা
আমি হবো ফরহাদ ডিঙ্গাবো সব বাধা
আমি হবো শাজাহান বলিকা মমতাজ
আমার হৃদয় জুড়ে করুক সে রাজ।
১৪/০২/২০১৯
বালিকা-৬

বালিকা তুমি বিকশিত হও,
তুমিতো অন্যদের মত নও!
তোমায়যে আমি দেই পাহারা
তোমায় না পেলে হব সর্বহারা।

তোমায় না দেখলে মন অসান্ত
তোমার পরশে হইযে যাই শান্ত
তোমার শুন্যতায় হই উথাল-পাথাল
তোমার পূর্ণতায় রেঙ্গে হই লাল।

তোমার হাসি দেখে হৃদয় নাচে-হাসে
তাইতো থাকি তোমার আশে-পাশে
করি সদা তোমার অপেক্ষা
কখন যে পাই তোমার দেখা!

তোমায় কেন এত ভালো লাগে?
সেকথা বুঝিনি দেখার আগে
এখন দেখি তুমিই মরন
সারাবেলা করি তোমাকে স্মরণ।
১৮/০২/২০১৯

বালিকা-৭

বালিকাটির নয়ন পটর চেরা
দেখলে মনে হবে সে মন চোরা
বালিকাটির হাসি শক্তিশালী
দেখলে হৃদয় হয়যে ফালিফালি।

বালিকাটির গালে ছোট্ট টোল
অঙ্গযে তার তানপুরারই খোল
বালিকাটির চলন বলন বেশ!
দেখে আমি হয়ে গেছি শেষ।

বালিকাটির জোড়া ভূরুর খেলা
দেখে দেখে কাটে সারা বেলা
কাজল কালো চোখের মনি দুটি
দেখার পরেই লেগেছে মোর শনি।

বালিকাটির ঘন কালো কেশ
দেখার পরে কাটে না তার রেশ
এক দেখাতেই কাটে সরা দিন
কেমনে করি তোমায় হেরা’র ঋণ?
১৯/০২/২০১৯


বালিকা-৮

বালিকা তোমার রুপের এত ঝলক
দেখলে পরে পড়ে নাতো পলক
কেমনে করি রুপেরই ব্যবচ্ছেদ
তাইতো আমার হৃদয়ে এত খেদ।

তোমার কানে ঝুলছে ঝুমকা ফুল
লজ্জা পায় সে তুমিয়ে খাটি ফুল!
তার কাছেতে তুমিই অলংকার
পড়তে চায়সে করে গলার হার!

কাশফুলেতে বুলাও যখন পরশ
তোমার রূপ তারচেয়েও সরেস!
কাশফুলগুলো পায়যে তখন শরম
ভাবে ওরা, হাতটা কিযে নরম!

ছুটো যখন ঘাসফড়িংয়ের পিছন
নেচে ওঠে ফড়িংয়েরই দেহ-মন
আমি দেখি ফড়িং-তোমার খেলা
আনন্দে ভাসাই স্বর্গপানে ভেলা।
১৯/০২/২০১৯


বালিকা-৯

বালিকার চোখ হাসে ঝলোমল
দেখতে যেন দীঘির কালো জল
ওই জলেতে ডুবে গেছি আমি
সে জানেনা, জানে অর্ন্তজামি।

চিকন কালো ভুরুর নাচন দিলে,
আমার হৃদয় ধড় হতে কেড়ে নিলে
দেখে তোমার ঠোটের বাকা হাসি
গলায় পড়লো তোমার প্রেমের ফাঁসি।

বলবো কি আর তার গালেরই কথা
গালটিযে তার বিশাল কাব্য গাথা
টোল পড়া গাল, রুপে চাঁদের মত
কলঙ্ক নয়, অপরূপ সেই ক্ষত।

ঠোট বাকালে গালদুটো তার হাসে
টোল পড়া গাল সবাই ভালোবাসে
ঠোটের কোনে ছোট্ট তিলকখানি
অঢেল রূপযে তাকে দিলো আনি।
১৯/০২/২০১৯

বালিকা-১০

বালিকাটির নাকে পড়া নোলক
রূপ দেখে পাগল হলো ভূলোক
আমি পাগল হয়েছি সেই কবে
মরেই যাব তাকে না পেলে ভবে!

বালিকা তোমার নাকটা যেন বাশি
দেখতে বেশ, যেমন তোমার হাসি!
সরু ডগায় ঘাম বিন্দু বিন্দু
বিন্দুতেই আছে প্রেম সিন্ধু।

নাক ফুলিয়ে যখন কাদো তুমি
সব লাগে যেন বিরান ভূমি
চোখের কোনে অশ্রু দেখি যখন
ধরণীটা তুচ্ছ লাগে তখন।

বালিকা যখন উচ্ছল, খেলে-হাসে
পৃথিবীটা হাতের মুঠোয় আসে
মুখটি যখন করে রাখে ভার
প্রাণটা আমার হয়ে যায় বার।
১৯/০২/২০১৯

বালিকা-১১

বালিকা নিয়ে কাটছে সময় বেশ!
কাটতে চায় না তার রূপেই রেশ
হাবুডুবু খাচ্ছি তাহারই প্রেমে
কারো কথায় যাবো নাকো থেমে।

এমন রূপের কদর যদি না করি
এমন রূপের প্রেমে যদি না পরি
এমন রূপের শোভা যদি না হেরি
শান্তি পাবোনা এই ধরণী ছাড়ি।

বালিকাটির রূপের এতই ঝলক
দেখলে পরে পড়বে নাতো পলক
এক দেখাতে কাটবে হাজার সন
তাইতো দিলাম বালিকাকেই মন।

তোমায় পেলে চাই না আমি হুর
সব কিছুকে করবো যে দূর দূর!
তোমায় পেলে সব যে হবে পাওয়া
তাইতো শুধু তুমিই আমার চাওয়া।
২০/০২/২০১৯

বালিকা-১২

বালিকা তুমি বালিকা হয়েই থাকো
রমনী কিংবা বুড়ি হইও নাকো
থাকো তুমি দূরন্ত চিরদিন
রূপটা থাকুক চির অমলিন।

বালিকা তুমি হাসি-খুশিই থেকো
মুখটি কভু ভর করিও নাকো
অশ্রু জলে ভিজিওনা দুটি চোখ
তোমার জীবন আনন্দময় হোক।

বালিকা তুমি মন কোরোনা ভারী
কষ্টের সাথে দিয়ে রেখো আড়ি
আনন্দ হোক তোমার খেলার সাথী
প্রফুল্ল হোক জীবন, দিবা-রাতি।

বালিকা তুমি কষ্ট পেলে পরে
ভাসি আমি দুঃখেরই সাগরে
হৃদয় আমার ভেঙ্গে হয় খান-খান
সকল প্রাপ্তি মূহুর্তেই হয় ম্লান।
২০/০২/২০১৯





বালিকা-১৩

বালিকা তোমার রূপের ভাজে ভাজে
বলছি না, একটুও আজে বাজে!
শোভা ঝড়ে সকল অঙ্গ থেকে
মুগ্ধ আমি, সেই সোভাই দেখে।

বালিকা তোমার গোলাপী দুটি ঠোট
শক্তিশালী তোমার রূপের চোট
চলন বলন ঠমক হৃদয় কাড়া
দেখে আমি হইযে আত্মহারা!

বালিকা তোমার চিকন ভ্রু’খানি
ডাগর চোখে দীঘির স্বচ্ছ পানি
চোখ দুখানি মিলাও তুমি যখন
মুগ্ধ নয়নে তাকায় ধরনী তখন।

বালিকা তুমি চোখে মাখলে কাজল
সেই শোভা নেয় ধরনী, পেতে আঁচল
পটল চেরা তোমার দুখানা আখি
সেই সোভাটা আড়ালে কেমনে রাখি!
২৫/০২/২০১৯





বালিকা-১৪

বালিকা তোমার রাঙ্গা কপোল দুটি
দেখতে যেন, আছে পদ্ম ফুট!
কপোলেরই গোলাপী আভা দেখে
নাচি আমি খুশির আবির মেখে।

হাসলে পরে টোল দু’খানি হাসে
পরীরা দেখতে ধরনীতে নেমে আসে
দেখে তারা হিংসায় জ্বলে মরে
এত রূপসী হয়যে কেমন করে!

বালিকা তোমার থুতনি হাসে নুয়ে
মন চায় আদর করি, থুতনিটাকে ছুঁয়ে
হাত বুলিয়ে আদরে দেই ঝাকি
কিছুটা কাল থুতনি নিয়েই থাকি!

ভেংচি কাটো যখন ঠোট বাকিয়ে
মুগ্ধ নয়নে আমি, থাকি তাকিয়ে
ভেংচিতেও লাগে তোমায় ভালো
ধরনীতে ছড়ায় খুশির আলো।
২৫/০২/২০১৯





বালিকা-১৫

বালিকা তোমার কথা বলার ভঙ্গি
দেখেই বুঝেছি, তুমি বড়ই ঢঙ্গী
কথা বললে, চোখও কথা বলে
মুখটা তখন লাগে যে ঝলমলে।

বালিকা তুমি কর যখন ঝগড়া
কারো কথায় দাও যখন বাগড়া
কারো কথায় করো প্রতিবাদ
ভাঙ্গে তখন তোমার রূপের বাঁধ।

কাউকে তুমি করলে তিরস্কার
ভেবে নেয় সে এটাই পুরস্কার!
মুখ বাকিয়ে ভেংচিটা নয় মন্দ
সেরূপ দেখে সে’যে পায় আনন্দ!

কথার ফাঁকে হাসো খিলখিলিয়ে
ভেংচি কাটো যখন দাত কেলিয়ে
অল্প কথায় যখন রেগে যাও
দেখতে আমার ভালোলাগে তাও।
০৭/০৩/২০১৯





বালিকা-১৬

বালিকা তোমার মনটা হলে ভার
আমার হৃদয় হয়ে যায় ছারখার
বালিকার মন যখন মেঘে ঢাকে
ধরনী তখন আধার হয়ে থাকে!

তুমি যখন চুপ’টি করে থাকো
কারো সাথে কথা বলো নাকো
চোখের কোনে জমাও বিন্দু জল
ধরনীর চোখও হয়যে টলমল!

দুই হাটুতে মুখটি যখন ঢাকো
যতটা সময় নিরব হয়ে থাকো
এলোমেলো কেশ দু’হাটুই ঢাকে
হৃদয় আমার তখনই মেঘে ঢাকে।

বালিকা তুমি বড়ই অভিমানি
কেউ না জানুক, আমি সেটা জানি
কেউ না বুঝুক, আমি তোমায় বুঝি
আনন্দেতে তাইতো তোমায় খুজি।
০৭/০৩/২০১৯





বালিকা-১৭

বালিকা শুধু খেলতে ভালোবাসে
সখী যত আছে আশেপাশে
ষোলগুটি, এক্কাদোক্কা, লাটিম খেলা
গোল্লাছুট, মোরগ লড়াইয়ে যায় বেলা।

ছি... কুতকুত, বউচি আরো কত
টুক পলান্তি, কানামাছি, লুডু যত
কোন খেলায় নাইযে কোন ক্লান্তি
বকাঝকায়ও দেয়না যে সে ক্ষান্তি।

মার্বেল, লাটিম মোরগ লড়াই, ডাংগুলি
সখীদের নিয়ে খেলে প্রিয় খেলাগুলি
সারাদিন কাটে খেলা আর খেলা নিয়ে
ঘুমাতে গেলেও ঘুমায় পুতুল নিয়ে।

দাড়িয়াবান্ধা-কানামাছি ক্লাশ ফেলে
ফুল টোকা, ইচিং বিচিং খেলে
ওপেন টু বাইস্কোপ আর টোপাভাতি
খেলাই শুধু বালিকার খেলার সাথি।
০৭/০৩/২০১৯





বালিকা-১৮

বালিকা তুমি আঠারোতে পা’দিলে
রোমিওদের হৃদয় কেড়ে নিলে
তুমি এখন ফুটন্ত এক গোলাপ
সত্যি বলছি একটুও নয় প্রলাপ!

বালিকা তুমি ছড়াও সুবাশ এখন
চুল ছেড়ে হেটে যাও তুমি যখন
ঘন কালো চুলও তখন আলো ছড়ায়
রোমিওরা ভাবে, হুর নেমে এলো ধরায়।

হেলে দুলে ঠমকে তোমার চলা
মিষ্টি করে তোমার কথা বলা
হাসির আভা ছড়ায় দিকে দিকে
থামলে পরে ধরনী হয় ফিকে।

যখন তুমি হলে অষ্টাদশী
ধরনীতে নেমে এলো শশী
তোমায় পেতে ব্যাকুল সকল প্রাণ
শোভা নিতে আকুল সকল প্রাণ।
০৭/০৩/২০১৯





বালিকা-১৯

বালিকা বালিকা করে, করি যে বন্দনা
বালিকা আমার দেখতে যে মন্দ না
রূপে গুণে বালিকা আমার দেখতে যেন পরী!
কেমন করে আমি তাহার হৃদয়খানা ধরি?

বালিকাকে নিয়ে আমি ভাবি সারাবেলা
আমার হৃদয় জুড়ে বালিকাই করে খেলা
বালিকা সর্বদা করে হৃদয়েই বিচরণ
তাইতো তাকেই আমি দিয়েছি এই মন।

এক জীবনে বালিকা তোমায় ভালোবেসে
ভরবে না মন বুঝেছি আমি অবশেষে
তাকে দেখার আকাক্সক্ষা আমার না মিটে
তার জন্য ছাড়তে পারি আমার জন্মভিটে।

প্রেমের জ্বালা কী আমি বুঝিনিতো আগে
তার প্রেমে পড়েই বুঝি, প্রেম কেমন লাগে!
তাকে না পেলে আমার জীবন হবে বৃথা
সারাবেলা তাইতো হৃদয় ভাবে তারই কথা।
০৭/০৩/২০১৯





বালিকা-২০

কুড়িতে নয় মোর বালিকা বুড়ি
এখনও সে উড়ায় রঙ্গিন ঘুড়ি
বালিকা মোর পড়াশুনা করছে
মনযোগ দিয়ে পড়াটাকেই ধরছে।

কত প্রেমিক ঘুরছে তাহার পিছে
কেউ জানেনা ঘুরাটা তাদের মিছে!
ঘুরলে পরেই মনটা পাবে নাকো
ভাবছে মনে, থাকো, ঘুরতে থাকো!

প্রেমের চিঠি, চকলেট এটা-ওটা
মন না পেয়ে দিচ্ছে কেউ খোটা
যে যাই বলুক পড়বে না সে প্রেমে
বাঁধা পড়বেনা এখনই ছবির ফ্রেমে।

কুড়িতে এসে সবার চাওয়াই বুঝে
কিসের আশায় আমায় সবাই খুজে
মনটা দেবে তাকেই, যে সত্যি মানুষ
সবাই দেখছি উড়ায় মিথ্যে ফানুশ।
০৭/০৩/২০১৯

Monday, February 11, 2019

ভাষার ও মানচিত্রের জন্য শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় হোক একটি সমন্বিত স্মৃতিস্তম্ভ

আমাদের মুখের ভাষার, স্বাধীন ভাবে চলার, মাথা উচু করে দাড়াবার অধিকার এমনিতেই আসেনি। অধিকার আদায়ে আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে ত্যাগ, সংগ্রাম করেছে তার ঋণ শোধ দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই এবং কোন কালেও সেই ক্ষমতা হবে না। রক্তের ঋণ কখনো শোধ দেয়া যায় না, দিতে পারবোও না। কিন্তু সেই ত্যাগীদের আমরা যদি যথাযথ ভাবে শ্রদ্ধা না জানাই তবে সেটা হবে অস্তিত্বের সাথে বেইমানী, বিশ্বাস ঘাতকতা। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মই নয় আমাদের সম্পর্কে সারা বিশ্বের যে প্রান্তের মানুষই জানবে তারা আমাদের বেইমানী, বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য ক্ষমা করবে না। বরং ঘৃণাভরে আমাদের ধিক্কার জানাবে। আমরা আমাদের সেই ত্যাগী বীরদের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল, অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে তাদের স্মরণ করেছি, করি এবং করবো। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিষ্ঠিত স্মৃতিস্তম্ভগুলো ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের নিমিত্ত তৈরী শহীদ মিনার যা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রতিরূপ। কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের জন্য তৈরী স্মৃতিস্তম্ভের আদলে কোন শহীদ মিনার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চোখে পরবে না। আমাদের দেশে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপনের কিছু কার্যক্রম আছে। তবে সময় এসেছে সেই কার্যক্রমকে একটু ঢেলে সাজিয়ে আরো সুন্দর ও সাবলিল ভাবে শ্রদ্ধানিবেদন করার। আর এ কারনে প্রয়োজন একটি সমন্বিত স্মৃতিস্তম্ভ যা সরকারের উদ্যোগ ছাড়া করা সম্ভব নয়। ভাষা আন্দোলনের ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, জেলা সদরে ও উপজেলাগুলোতে একটি সমন্বিত স্মৃতিস্তম্ভ হোক সময়ের দাবী।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। অনেকেই হয়তো সেই ইতিহাস সম্পর্কে অবগত আছেন। নতুন প্রজন্মও বিভিন্ন ভাবে জানছেন। তবুও সংক্ষিপ্ত ভাবে আমাদের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু কথা এই লেখায় তুলে ধরতে চাই-
১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অবহেলা ও প্রবঞ্চনা শুরু হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী প্রথম আঘাত হানে সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসীর বাংলা ভাষার উপর। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন প্রথম মাইলফলক। তৎকালীন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ তথা ৫৬.৪০% অধিবাসীর ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে মাত্র ৩.২৭% অধিবাসীর ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করে। ভাষা আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল উর্দুর সাথে বাংলা ভাষাকেও রাষ্ট্রভাষা করা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা সংগ্রামীরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করে আমাদের প্রাণ খুলে কথা বলার সুযোগ তৈরী করে দিয়েছেন।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটির জন্মের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈষম্যমুলক আচরণ শুরু করে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী কোন দিনই পুর্ব পাকিস্তানকে তাদের রাষ্ট্রের অংশ মনে করেনি, মনে করেছে তাদের উপনিবেশ । এর প্রমাণ, পাকিস্তানের মোট জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ (প্রায় ৫৬%) পূর্ব পাকিস্তানে বাস করা সত্ত্বেও রাজধানীসহ কেন্দ্রীয় সরকারের সকল বিভাগ, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক এবং সরকারি বেসরকারি অন্যান্য আর্থিক ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রধান কার্যালয় পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দেশ পরিচালনার মূল ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে থাকে। প্রেসিডেন্ট ও প্রধান মন্ত্রী, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান, গুরুত্ত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীত্ব থাকে অবাঙালি পাকিস্তানিদের হাতে। এছাড়া আয় বৈষম্য, সম্পদ পাচার, বৈদেশিক সাহায্য, শিল্পের উন্নয়নসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষমের শিকার হয় পূর্ব পাকিস্তান নামের আমার সোনার বাংলা।
পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ থেকে মুক্তির জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ৬ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। জাতির জনকের ৬ দফা শোষিত ও নির্যাতিত বাঙালির নিকট তাদের “ম্যাগনাকার্টা” বা “মুক্তিসনদ” রুপে গৃহীত হয়। জাতির জনকের কারিশমাটিক নেতৃত্ব এবং বাংলার সংগ্রামী ছাত্র সমাজের গতিশীলতায় অল্প সময়ের মধ্যেই এই কর্মসূচীকে সকল স্তরের বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বলিষ্ঠ ঘোষণায় পরিণত হয়।
১৯৬৯ সালের ১৭ জানুয়ারী থেকে ১১ দফা দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। ঐ দিন ছাত্র সংগ্রাম কমিটি হরতাল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় সভা আহবান করে। একই দিনে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটিও পল্টন ময়দানে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচী গ্রহন করে। এই কর্মসুচী চলাকালে পুলিশের সাথে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ বাধে। এতে জনমনে ভীষন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ১৮ জানুয়ারী প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়। এদিনও পুলিশি নির্যাতনে বহু ছাত্র আহত ও গ্রেফতার হয়। এ আন্দোলন ২০ জানুয়ারী চরমে পৌছায়। এদিন হাজার হাজার ছাত্রের মিছিল রাস্তায় নামলে পুলিশ মিছিলের উপর গুলিবর্ষন করে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদ শহীদ হয়। আসাদের মৃত্যুতে গণজাগরনের বিস্ফোরণ ঘটে। ২১ জানুয়ারী ঢাকা শহরে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ২২ ও ২৩ জানুয়ারী প্রতিবাদ মিছিল হয় এবং ২৪ জানুয়ারি ঢাকা শহরে সাধারণ হরতালের ডাক দেয়া হয়। ২৪ জানুয়ারি সকাল থেকেই ছাত্রসহ লক্ষ লক্ষ শ্রমিক, শহরের দরিদ্র ও মেহনতি মানুষসহ সকল পেশার মানুষ রাজপথে নেমে আসে। হরতাল সম্পূর্ণরূপে সফল হয়।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যূথানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের পতন হলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগন একচাটিয়াভাবে ৬ দফার পক্ষে রায় প্রদান করে। আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নির্বাচনের পর শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রনয়নের দলের অভিমত জানিয়ে দেন এবং এ ব্যাপারে অনড় থাকেন। ইয়াহিয়া খান, ভূট্রো সাহবের প্ররোচণায় আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানা তালবাহানা শুরু করেন এবং গোপনে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য আমদানী করতে থাকেন। ইয়াহিয়া ১৯৭১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঘোষনা করেন, ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসবে। কিন্তু ভূট্রোর সাথে গোপন বৈঠকের পর ১ মার্চ ইয়াহিয়া ৩ মার্চের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। ইয়াহিয়ার এই ঘোষনায় সারা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ঝড় উঠে। শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিবাদে ২ ও ৩ মার্চ ঢাকায় হরতাল এবং ৭ মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে জনসভার ঘোষনা দেন। ২ ও ৩ মার্চ ঢাকায় হরতাল সফল হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্সের ময়দানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের জনসভায় ঘোষনা করলেন “...এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম...”। ৭ মার্চের ভাষণ সারা দেশের মানুষকে রোমাঞ্চিত করে তোলে। তাঁর এ ভাষণ মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস বাঙালির মনে সংগ্রামী প্রণোদনা যোগায়।
২৫ মার্চ মধ্যরাত্রি হতে বাঙালির উপর শুরু হয় ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বর্বরতম গণহত্যা অভিযান। বাঙালিরাও এ গণহত্যা অভিযানের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ঐ রাতেই জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তবে তিনি পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হবার পূর্বে ২৫ মার্চ রাত্রি ১টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সর্বতোভাবে মোকাবেলার আহবান জানান। ২৭ মার্চ চট্রগ্রামের কালুরঘাটে স্থাপিত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করেন। এই যুদ্ধ দীর্ঘ নয় মাস ধরে চলে। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে আসে আমাদের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক লেঃ জেনারেল আমির আবদুল্লাহ নিয়াজী তার ৯৩ হাজার সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রসহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে যৌথ কমান্ডের প্রধান জগজিৎ সিং অরোরা ও বাংলাদেশ বাহিনীর পক্ষে উপ প্রধান এ. কে. খন্দকারের উপস্থিতিতে আত্মসমর্পনের দলিলে স্বাক্ষর করেন। দীর্ঘ ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ বাঙালির রক্তদান ও মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের উদ্ভব হয়।
সীমাহীন ত্যাগ, শ্রম, রক্ত, ঘাম ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রাণের ভাষা ও স্বাধীনতা। সেই ভাষা শহীদ ও সংগ্রামীদের এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ ও সংগ্রামীদের আমরা বিভিন্ন আয়োজনে স্মরণ করি। তবে ভাষা আন্দোলনের শহীদ সংগ্রামীদের বিষয়ে আমাদের স্মরণ একটু ভিন্নতর। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই থাকে শহীদ মিনার। সরকারী উদ্যোগে অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বউদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করে শহীদ মিনার। একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর থেকেই শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সকালে নিজ নিজ শিক্ষালয়ের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে র‌্যালি করে। কিন্তু স্বাধীনতার সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় না। বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট কিছু স্থানে এসে কুচকাওয়াচ সহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়ে থাকে। সরকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান দিবসগুলোর প্রথম প্রহরে তোপধ্বন্নিসহ জেলা বা থানায় স্থাপিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাজধানীর মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্মৃতিসৌধে গিয়ে বা প্যারেড গ্রাউন্ডে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মত স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনটা কেমন যেন খাপছাড়া মনে হয়। 
আমার প্রস্তাবনা হচ্ছে, ভাষা শহীদদের জন্য প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যেমন শহীদ মিনার রয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা প্রয়োজন। এখন কথা হলো, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুটি শহীদ মিনার গড়া কতোটা যুক্তিযুক্ত বা কেমন হবে? এব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা খুবই জরুরী। সরকার চাইলে আমাদের দেশের প্রথিতযশা শিল্পীদের, স্থপতিদের বা সকল শিল্পী-স্থপতিদের কাছ থেকে একটা সমন্বিত নকশা আহবান করতে পারেন। যে নকশায় একটি শহীদ মিনার হবে ভাষা শহীদদের ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর মত সমন্বিত শহীদ মিনার। একটি স্মৃতিস্তম্ভে ফুটে উঠবে দুটি মহান ত্যাগ ও গৌরবের ইতিকথা। সরকার চাইলে এটা সরকারি উদ্যোগে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৈরী করে দিতে পারে। বিশেষ করে সরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করে দিবে এবং বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নকশা সরবরাহ, আর্থিক সহযোগীতা করতে পারে। এতে করে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের স্মৃতিস্তম্ভটি দেখে একই সাথে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে এবং নির্ধারিত দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবে। আমাদের ভাষা আন্দোলনের ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ত্যাগ, গৌরবগাথা মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকুক আজন্ম, এটাই হোক সরকারের সু-প্রচেষ্টা, আমাদের প্রাপ্তি। 

বালিকা-২


বালিকা তুমি আমার হবে কবে
আমি যখন তোমার হবো, তবে?
আমিতো তোমারই হয়ে আছি
তোমায় নিয়েই স্বপ্ন দেখে বাঁচি।

বালিকা তুমি আমায় বুঝবে কখন
ভালোবেসে জীবন দিলে, তখন?
ডুবেছি তোমার প্রেম সাগরে পরে
আমিতো সেই কবেই গেছি মরে।

বালিকা তোমায় বুঝাই কেমন করে
আমার মনে যতটা প্রেম ধরে
তারচেয়েও বেশি ভালোবাসি
বারবার আমি তাইতো ফিরে আসি।

জানোয়ারও কী এত নীচ হতে পারে!

আমার খুব কুকুর পোষার সখ। ছোটবেলা থেকেই এই সখটা ছিলো এখন বড়বেলায়ও আছে। আগে আমাদের কাচা পিড়ার ঘর ছিলো। যখন স্কুলে পড়তাম তখন কুকুর ছানা এনে ঘরের পিড়া খুড়ে গুহা বানিয়ে রাখতাম। বড় হলে কোনটা রোগে আক্রান্ত হয়ে বা বয়সের কারনে মারা যেত। আবার আনতাম, লালন পালন করতাম। তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়ে যেতাম, পশু হাসপাতালে নিয়ে যেতাম, চিকিৎসা করাতাম, মৃত্যু শেষে মাটি দিয়ে রাখতাম। হৃদয়ে তখন বেশ ব্যথা অনুভব করতাম। কুকুরের প্রতি আমার ভালোবাসা দেখে বাড়ির সবাই অপছন্দ করলেও আমাকে ভালোবাসে বলে সহ্য করতো। সেই পোষা কুকুর যদি কেউ বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে তখন কেমন লাগে? সেটা যদি প্রাপ্ত বয়স্ক না হয়ে ছোট্ট বাচ্চা কুকুর ছানা হয়, যে কিনা সারাদিন পায়ের কাছে ঘুরঘুর করে, খাবার দেখলে নাচানাচি করে, একটু আদরের আশায় পায়ের কাছে গড়াগড়ি খায়, সেই কুকুর ছানাটা যদি কোন মানুষরূপি পশু বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে তখন হৃদয়ের অবস্থাটা কেমন হয় ভাবাযায়? তাদের পশু বা জানোয়ার বলা যায় কিনা আমি জানি না। কারন জানোয়াররা কি এতটা অমানবিক-হিংস্র হয়?
আমার বন্ধু ডাক্তার মাহবুবুল হকের বাড়িতে একটা মেয়ে কুকুরের বাচ্চা আসছিলো অনেকদিন আগে। শত চেষ্টায়ও যখন তাড়াতে পারেনি তখন ওটা ওখানেই বড় হতে থাকলো। আস্তে আস্তে কুকুরটি তার প্রভূভক্তির প্রমান দিলো যাকে ওরা টমি ডাকতো। প্রথমে অবজ্ঞা করলেও টমি সকলের ভালোবাসা আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এবছর টমি পাঁচটি ছানা পোষব করেছে এবং পাঁচটিই পুরুষ। আমি একটা নেয়ার আগ্রহ দেখালে একটু বড় হওয়ার পর নেয়ার জন্য বললো। আমি দেখে লাল একটা ছানা নিয়ে নিলাম। গায়ের রং লাল হওয়ায় বাড়ির সবাই লালু বলেই ডাকে। লালু লালু ডাকায় ও বুঝে গেছে ওর নাম লালু। লালু বলে ডাক দিলেই সে দৌড়ে এসে হাজির হয়। আমি লালুকে এনে যতটা না খুশি হয়েছি তার চেয়ে বেশি খুশি আমার মেয়ে প্রিয়ন্তী, বড় ভাতিজা পাপন আর একদম ছোট ভাতিজা রাফান। ভাবি ও আমার স্ত্রী অপছন্দ করলেও খাবার দাবার দিতে কখনো কার্পন্য করেনি। লালুর জন্য হাড়-কাটাতো আছেই, ভাত মেখে লালুর নির্দিষ্ট প্লেটে ঠিকই দিতো। 
কুকুর সর্বদা প্রভূ ভক্ত প্রাণী এটা নতুন কিছু নয়। কথিত আছে কুকুর হলো সর্ব প্রথম মানুষের পোষমানা কোন প্রাণী। প্রভূর জন্য কুকুরের মমত্ববোধ নিয়ে অনেক ঘটনা আছে যা লিখে শেষ করা যাবে না। আমার পোষা লালু অল্প ক’দিনে কতটা প্রভূভক্ত হয়েছিলো তার কিছু ঘটনা বলি। আমি রাতে বা দিনে যখনই বাড়ি ফিরি অন্তত দুশ মিটার দুর থেকে আমার মোটরসাইকেলের আওয়াজ পেয়ে বাড়ি থেকে এক দৌড়ে রাস্তায় চলে আসে। এর পর রাস্তা থেকে আমার সাথে বাড়ি ঢুকতো। আমি কবুতর পোষতে পছন্দ করি। আমার কবুতরকে কাকে আক্রমন করলে লালু কাকের উপর ঝাপিয়ে পড়তো এবং চিৎকার চেচামেচি করতো যাতে আমরা বুঝতে পারি যে কোন বিপদ ঘটেছে। এমন ঘটনা অনেক যা হয়তো যারা কুকুর পোষেন তাদের ঘটনার সাথে মিলে যাবে। 
তিন মাস পূর্বে লালুকে আমি বাড়িতে আনি। প্রথম প্রথম কয়েকদিন খুব কান্নাকাটি করতো। কান্নাকাটির অবশ্য অন্যতম কারন হলো রশি দিয়ে বেধে রাখা! বাড়িটা যখন ওর কাছে পরিচিত হয়ে গেছে তখন ছেড়েই দিয়েছিলাম। দরজার সিড়ির গোড়ায় শুয়ে থাকতো, কখনো পুকুর পাড়ে রোদের মধ্যে শুয়ে শুয়ে ঘুম দিতো। আমাকে দেখা মাত্র দৌড়ে পায়ের কাছে চলে আসতো। লালু একটু নবাবী স্বভাবের ছিলো। ডাল ভাত তার মুখে রুচতো না। মাংস ছাড়া সে ভাতও খেতে চাইতো না। তাই মাংসের ছাডি (মাংসের চর্বি-উচ্ছিষ্ট) লালুর জন্য রান্না করে দিতো আমার বড় বোন। সেই মাংসের ছাডি বক্সে ভরে ফ্রিজে রেখে দিতাম। ওখান থেকে নিয়ে ভাত মেখে দিতাম। লালু একটু রিষ্টপুষ্ট হয়েছে। গলা ছেড়ে ডাক দিতে শিখেছে। অপরিচিত কেউ বড়িতে ঢুকলে ঘেউ ঘেউ করতে শিখেছে। বাচ্চারা যেহেতু কুকুর ছানা পছন্দ করে, তেমনি কুকুর ছানাও বাচ্চাদের পছন্দ করে। বাড়ির আশে পাশের ছোট বাচ্চারা এসে লালুকে খুব আদর করতো। মাঝে মাঝে বাচ্চাদের সাথে বাড়ির বাইরে চলেও যেত। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ঠিকই চলে আসতো ওর নিজ গৃহে। আজ যে ঘটনা ঘটে গেলো সেটা আমার ধারনায়ও ছিলো না। এমন একটা ঘটনার জন্য আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুতও ছিলাম না। 
আজ দুপুরে বাড়ি থেকে আমার বড় বোন ফোন দিলো। বাড়ি থেকে ফোন দিলে প্রথমেই আমার বুকটা একটু কেঁপে উঠে। আমাকে কেউ সাধারণত প্রয়োজন ছাড়া ফোন দেয় না, আমিও দেই না। আমার মা অসুস্থ থাকতে বাড়ির ফোন পেলে বুক কেপে ওঠা শুরু হয়। মা এখন আর নেই। এখন বাবা অসুস্থ ঘরে। ফোন পেলেই মনে হয় কোন বিপদ নয়তো? বোনের ফোন পেয়ে রিসিভ করেই জানতে চাইলাম কি ব্যাপার আপা। আপা ফোনে জানালো, লালুকে কারা যেন বিষ খাইয়েছে। লালু আপার দরজার কাছে দৌড়ে এসে কিছুক্ষণ দপাদপি করে, কাকুতি মিনতি করে দৌড়ে চলে গেছে, এখন আর তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। আপার কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমার মেয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে একই কথা বললো। আমি বাড়ি যাওয়ার সাথে সাথে মেয়ে আমার কোলে উঠে গলা জড়িয়ে অঝরে কান্না করছে আর লালুর কথা বলছে। মেয়ের কান্না দেখে আমিও আবেগতাড়িত হয়ে গেলাম। পোশাক পরিবর্তন করে বেরিয়ে পড়লাম লালুর খোঁজে। আমার পিছু নিলো আমার মেয়ে আর বড় ভাতিজা পাপন। যেদিকে লালু ছুটে গেছে সেদিক দিয়ে খুঁজতে গিয়ে দেখি পাশের বাড়ির বাগানের মধ্যে লালুর নিথর দেহ পড়ে আছে। নাড়া দিয়ে দেখি লালুর শরীরে প্রাণের অস্তিত্ব নেই। লালুর এভাবে শুয়ে থাকা দেখে হৃদয়টা ভেঙ্গে গেলো। আমার মেয়ে ও ভাতিজা দুজনেই কেঁদে ফেললো। আমি লালুকে ওখান থেকে তুলে নিয়ে আসলাম বাড়িতে। নিজেই মাটি খুড়ে লালুর দেহটা মাটিচাপা দিয়ে দিলাম। লালুকে মাটিচাপা দিয়ে আমি দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। পাশের একটা গাছের গুড়ি ছিলো তার উপর বসে পড়লাম। আমার গলা শুকিয়ে আসছে। পাপন এক গ্লাস পানি এনে দিলো। আমার দুই বোন, ভাবি, স্ত্রী, ভাগ্নে দিপ্ত সবাই এসেছে আমার কাছে। সবাই হতবাক! আমাকে সান্তনা দিলো। সবাই আমার মতই হতবাক ও ব্যথিত।  
একটা ছোট্ট কুকুর ছানা। যদি কারো বাড়িতে গিয়ে থাকে, কারো অনিষ্ট করে থাকে তবে কতটাই বা করেছে, কতটাই বা করতে পারে? যদি কারো ক্ষতি করে থাকে তবে সবাইতো জানে যে লালুকে আমি লালন পালন করি, আমাকে বলতে পারতো। আমি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতাম। যদি দিতে না পারতাম আমি ক্ষমা চেয়ে নিতাম। একটা বোবা প্রাণী। তাও আবার বাচ্চা। ছোট শিশু সে যে প্রাণীরই হোক, মানুষ বা ভয়ংকর কোন প্রাণীর বাচ্চা, তাদের কি দেখতে ক্ষতিকর মনে হয়? লালুকে বিষ খাওয়ানোর আগে একবারও কি তাদের বুক কাপলো না? তারা কি মানুষ? লালুর মত একটা বাচ্চা পশুর মুখে বিষ তুলে দিলো যারা তাদের কি পশু বলা যায়? কি নামে ডাকবো তাদের? একটা পোষা প্রাণীকে বিষ খাইয়ে হত্যার অপরাধে আমি বিচার চাইতে পারতাম। আমি বিচার চেয়েছিও। আমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে বিচার চেয়েছি। আল্লাহ তায়ালা, আপনি ওদের ঈমান দিন যারা এমন কাজটি করেছে! আমি মাত্র তিন মাস লালন পালন করেছি তাতে আমার এতটা কষ্ট লাগছে, যে লালুকে সৃষ্টি করেছে সেই সৃষ্টিকর্তার কেমন লেগেছে যখন লালুর মুখে বিষ তুলে দিলো! নিশ্চই মহান সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির উপর অমানবিকতার উপযুক্ত বিচার করবেন। 

Thursday, February 7, 2019

ওজনে কম দেয়া, ঠকবাজি, প্রতারণায় দুনিয়া-আখিরাতে শাস্তি


মানে কম, গুনে কম, ওজনে কম, মাপে কম, আন্তরিকতায় কম, সেবায় কম। কমতে কমতে সবকিছুই কমে আসছে। সবকিছুতেই কম আর কম। কমতে কমতে মানুষের মূল্যবোধই কমেগেছে। তবে মূল্যবোধ কমলেও মূল্য সম্পর্কে বোধটা কমেনি। কখন মূল্য বাড়াতে হবে সেই বোধটা দাড়ি-টুপিধারী লেবাসী ব্যবসায়ীরও আছে। লেবাসহীনদের বিষয়ে আর কি বলবো? সুযোগ পেলেই মূল্য বাড়িয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে আর কমায় না! এভাবে কমতে থাকলে মানুষ কেউ কারো প্রতি আর আস্থা রাখতে পারবে না। আমাদের মূল্যবোধ কমেছে এতটাই যে সবকিছুতেই কম দিয়ে, কম করে বেশি লাভ করতে চাইছি।
ওজনে কম দেয়া, সাইজে কম দেয়া আমাদের অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। কোন প্যাকেটজাত পন্য কিনতে গেলে দেখা যায় পঞ্চাশ থেকে ক্ষেত্রভেদে একশ গ্রাম পর্যন্ত কম হয়। পানি কিনতে গেলে সেখানেও কম পাওয়া যায়। জীবন রক্ষাকারী ঔষধে উপাদান কম দেয়ার মতো ঘটনাও দেখা যাচ্ছে। মাটির তৈরী ইট। সেই্ ইট সাইজে কম দিয়ে মানুষকে ঠকানো হচ্ছে। ঠকানোটা এমন পর্যায়ে পৌছে গেছে যে গাঁজাও পরিমানে কম দিচ্ছে। হাল আমলে সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাবলেট ইয়াবায়ও ভেজাল দেয়া হচ্ছে। শোনাযায় জন্মনিয়ন্ত্রনে মায়া বড়িও ইয়াবা বলে চালিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে, কেউ কেউ নিজেই বাড়িতে বড়ি বানানোর প্রেশার মেশিন বসিয়ে নিয়েছে! জাতা দিলেই ট্যাবলেট!
সম্প্রতি এমন কিছু কম দেয়ার ঘটনা আলোচিত হয়েছে। কুমিল্লার এক গাঁজা ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকায় দেয়ার কথা ছিল তিন কেজি গাঁজা। কিন্তু এক মাদক ব্যবসায়ী তাকে দিল মাত্র এক কেজি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি ফোন দিলেন পুলিশের জরুরি সেবা '৯৯৯'-এ। পুলিশ এসে গাঁজাসহ তাকেই গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। অবিশ্বাস্য এ ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার ব্রাক্ষণপাড়া বাজারে। তবে পুলিশের উপর যে আস্থা বেড়েছে গাঁজা ব্যবসায়ীর এটা খুব আশাব্যঞ্জক! শরীয়তপুরে ইট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে ধরা পড়েছে পরিমানের জালিয়াতি। ক্রেতারা প্রতি হাজার ইটে কমপক্ষে ২শ ৮৪টি সমপরিমাণ ইট কম পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যেকটি ইটের ভাটায় প্রস্তুতকৃত ইটের সাইজ রয়েছে দৈর্ঘ্যে ২২ সেন্টিমিটার, প্রস্থে ৯ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতায় ৫ সেন্টিমিটার। সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতিটি ইটের সাইজ হবে দৈর্ঘ্যে ২৪ সেন্টিমিটার, প্রস্থে ১১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং উচ্চতায় ৭ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ প্রত্যেকটি ইটে কমপক্ষে ২ সেন্টিমিটার করে কম রয়েছে। চালের বাজারেও চলে কমের ঘটনা। এক ব্যক্তি দুই মন চাল কিনে দেখে দুই মণের বস্তায় চাল আছে ৭৭ কেজি, অর্থাৎ তিন কেজি কম।
পরিমানে যদি কেউ কম দেয় তবে ক্ষতিগ্রস্থ বা প্রতারিত ব্যক্তির আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের অপরাধের জন্য দণ্ডবিধির ২৬৪, ২৬৫,২৬৬ ও ২৬৭ ধারা অনুসারে নিকটস্থ মুখ্য মহানগর হাকিম ও মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রতিকার পাবেন কিভাবে?
ফৌজদারি আদালতে মামলা করার ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। সে অভিযোগ শুনে আদালত অভিযোগ থাকা ব্যক্তিকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিতে পারেন। সে নির্দেশ মোতাবেক হাজির না হলে, সে ক্ষেত্রে বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
দণ্ডবিধির ২৬৪ ধারায় ‘ওজনের জন্য প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা যন্ত্র ব্যবহার’ করার বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে কোনো ব্যক্তি যদি প্রতারণামূলকভাবে ওজনের জন্য এমন কোনো যন্ত্র ব্যবহার করেন, মিথ্যা বলেন- তবে সেই ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
দণ্ডবিধির ২৬৫ ধারা অনুসারে ‘প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা ওজন কিংবা মাপ ব্যবহার’ করার বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি প্রতরণামূলকভাবে কোনো মিথ্যা ওজন কিংবা দৈর্ঘ্যের বা ধারণশক্তির মাপকে উহা অপেক্ষা ভিন্ন ওজন কিংবা দৈর্ঘ্য বা ধারণশক্তির মাপ হিসেবে ব্যবহার করেন, তবে সেই ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
দণ্ডবিধির ২৬৬ ধারা অনুসারে, ‘মিথ্যা ওজন কিংবা মাপ করা’ বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো ওজন, পরিমাপ যন্ত্র বা বাটখারা কিংবা দৈর্ঘ্য বা ধারনক্ষমতা মাপবার যন্ত্র রাখে, যা মিথ্যা বলে সে জানে এবং উহা যাতে প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে তার জন্যই রাখে, তবে সেই ব্যক্তির এক বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম অথবা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
দণ্ডবিধির ২৬৬ ধারা অনুসারে, ‘মিথ্যা বাটখারা কিংবা মাপ তৈরি কিংবা বিক্রয় করা’ বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো ওজন বা বাটখারা কিংবা দৈর্ঘ্য বা ধারনশক্তির পরিমাপ যন্ত্র তৈরি করেন, বিক্রয় করেন বা লেনদেন করেন, যা মিথ্যা বলে তিনি জানেন এবং উহা যাতে সত্য বলে ব্যবহার করা যায়, সে উদ্দেশ্যেই তা করেন অথবা উহা সত্য বলে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
এতো গেলো আইনগত অধিকার আদায়ের বিষয়। ধর্মীয় অনুশাসন মানা ব্যক্তির জন্যও ওজনে, সাইজে কম দেয়ার, প্রতারণার অপরাধে পরপারে রয়েছে শাস্তির সু-ব্যবস্থা।
ওজনে কম দেয়া, ঠকবাজি, প্রতারণা একটি কবিরা গুনাহ। ইসলামের দৃষ্টিকোণে ঠকবাজি, প্রতারণা ও ওজনে কম দেওয়ার শাস্তি। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে প্রতারণা ও প্রতারক, উভয়ের ব্যাপারে কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন এবং তাদের জন্য অবধারিত ধ্বংসের ঘোষণা দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত স্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় পবিত্র কালামের এই আয়াতে : “ধ্বংস তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের থেকে মেপে নেয়ার কালে পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদের জন্য মাপে বা ওজন করে, তখন কম দেয়।”[সূরা মুতাফফিফীন : ১-৩]
এ এক কঠিন ঘোষণা, যারা ঠগবাজি করে, মাপে ও ওজনে মানুষকে কম দেয় তাদের জন্য। সুতরাং যারা পুরোটাই চুরি করে, আত্মসাৎ করে, এবং মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তুতে ঠকায়, তাদের কী কঠিন অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। মাপে ও ওজনে কমপ্রদানকারীর তুলনায় এরা আল্লাহ তাআলার শাস্তির অধিক ভাগিদার, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
এমনিভাবে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতারণা থেকে সতর্ক করেছেন এবং প্রতারকের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারের এক স্তুপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি খাবারের স্তুপে হাত প্রবেশ করালেন, তার আঙুলগুলো ভিজে গেল। তাই তিনি বললেন, ‘হে খাবারওয়ালা, এটা কি ? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, তাতে বৃষ্টির পানি পড়েছিল। তিনি বললেন, তুমি কি তা খাবারের উপরে রাখতে পারলে না, যাতে মানুষ তা দেখে ? যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ অন্য রেওয়ায়েতে আছে ‘যে আমাদের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’। অপর রেওয়ায়েতে আছে ‘সে আমাদের দলভুক্ত নয়, যে প্রতারণার আশ্রয় নেয়।’[ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।]
প্রতারণার রয়েছে নানাবিধ ক্ষতি, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: প্রতারণা মানুষকে জাহান্নামের পথে ঠেলে দেয়, নিক্ষেপ করে ভয়াবহ ও স্থায়ী আগুনে।, প্রতারণা ব্যক্তির আত্মিক নীচুতা ও মানসিক কলঙ্কের পরিচায়ক। সুতরাং চরম নীচু মানসিকতার অধিকারীই কেবল তা করে থাকে, এবং স্থায়ী ধ্বংসে পতিত হয়।, প্রতারক ক্রমে আল্লাহ ও মানুষ থেকে দূরে সরে যায়।, প্রতারণা দুআ কবুলের পথ বন্ধ করে দেয়।, প্রতারণা সম্পদ ও বয়সের বরকত ধ্বংস করে দেয়।, ঈমানের দুর্বলতা ও কমতির পরিচায়ক।, অব্যাহত প্রতারণা ও জালিয়াতী প্রবণতার ফলে প্রতারক গোষ্ঠীর উপর যালিম ও কাফিরদেরকে চাপিয়ে দেয়া হয়।

তাই ওজনে কম দেয়ার, ঠকবাজির, প্রতারণা করার আগে একবার হলেও ভাবুন। কেন করছেন এসব? একটু বেশি লাভের আশায়, একটু ভালো থাকার আশায়তো? মানুষের জীবনধারণের জন্য খুব বেশি অর্থ-সম্পদ প্রয়োজন হয় না। আর বেশি অর্থ উপার্যন করে কার জন্য রেখে যাবেন? যাদের জন্য রেখে যাবেন তারা কেউ এই অপরাধের জন্য শাস্তির ভাগ দুনিয়াতে যেমন নিবে না তেমনি পরপারেও আপনাকে স্বীকার করবে না। তাই সাবধান হওয়ার সময় থাকতে হওয়া উচিত।

Tuesday, February 5, 2019

বালিকা-১

বালিকা তোমার দুরন্ত ছোটাছুটি
খিলখিলিয়ে হাসির লুটোপুটি
বালিকা তোমার বাঁকা ঠোটের হাসি
দেখতে আমি অনেক ভালোবাসি।
বালিকা তোমার অকপটে কথা বলা
খুনসুটি আর ছোট ছোট ছলা কলা
বালিকা তোমার আকাশ পানে চাওয়া
আমার কাছে আকাশ হাতে পাওয়া।
বালিকা তোমার ছি-কুতকুত খেলা
বৌয়াছি আর গোল্লাছুটে যায় বেলা
বালিকা তুমি এসব কর যখন
তোমায় আমি ভালোবাসি তখন।
বালিকা তুমি শিখবে কখন পড়া
হৃদয় বুঝে হৃদয়টাকে ধরা
বালিকা আমি আছি প্রতিক্ষাতে
কখন রাখবে হাতটি আমার হাতে?

Friday, February 1, 2019

অদম্য মেধাবীদের কথা! ওদের পন্থা হতে পারে ধনী রাস্ট্র গড়ার পদ্ধতি!

বেশ কিছুদিন যাবত কয়েকটা ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। ঘটনা আর কিছুই নয়, এক কেরানি ও স্টেনোগ্রাফার পনের হাজার কোটি টাকার মালিক আরেক পিয়ন চার হাজার কোটি টাকার মালিক। শুনতেই কেমন ভালো লাগছে! পিয়ন, কেরানী হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক! কি অদম্য মেধাবী তারা, এত ছোট পদে চাকরি করেও তারা সম্পদের পাহাড় গড়েছে, নিজেদের ভাগ্যের চাকা কত দ্রুতগতিতে চালাতে পেরেছে। ভাবাযায়? তারা যদি বাংলাদেশের আমলা হতেন বা বড় কর্তাব্যক্তি বা রাজনীতিক? তবে দেশের অর্ধেকটাই কিনে ফেলতেন মনে হয়!  

এই অদম্য দুই মেধাবী সম্পর্কে কিছু তথ্য না জানলে বন্ধুরা মুল্যায়ন করতে পারবেন বলে মনে হয় না। মানুষ মেধা নিয়ে জন্ম নেয় না। জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ কিভাবে জীবনের শিখরে পৌছানো যায় সেই ধারনাই পাওয়া যায় এদের কাছ থেকে! এদের কাছ থেকে আমাদের তথা দেশের নীতি নির্ধারকরা অনেক কিছু শিখতে পারে! শিখতে পারে কিভাবে নিজেকে ধনী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়! ওদের জ্ঞাণ কাজে লাগিয়ে দেশকে ধনী দেশের খেতাব অর্জন করা সময়ের ব্যপার মাত্র! জানুন গুণীদের সম্পর্কে!


স্বাস্থ্য বিভাগের শতকোটি টাকার কেরানি হাজার কোটি টাকার স্টেনোগ্রাফারের অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ পায় দুদক। অনুসন্ধানে আবজাল রুবিনার নামে স্থাবর-অস্থাবর বিপুল পরিমাণ সম্পদের যে তথ্য পায় যা তাদের বৈধ আয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাদের নামে বাড়ি, গাড়ি, জমি, প্লট, মেয়াদি আমানত, বিভিন্ন ব্যাংকে জমানো টাকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের সম্পদ পাওয়া গেছে। অর্থ পাচার করে বিদেশেও সম্পদ বানিয়েছেন তারা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আবজাল তার স্ত্রী রুবিনা অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে দুই লাখ ডলারে একটি বাড়ি কিনেন। তাদের নামে মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদকের ধারনা তাদের সম্পদের পরিমান পনের হাজার কোটি টাকা হবে। ১৯৯২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে লেখাপড়ার ইতি টানেন ফরিদপুরের আবজাল। এরপর গ্রামে রাখি মালের (মজুদ করে পরে বিক্রি) ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে (ফরিদপুর, কুমিল্লা, খুলনা, দিনাজপুর বগুড়া) অস্থায়ীভাবে 'অফিস সহকারী' পদে যোগদান করেন। প্রকল্পটি ২০০০ সালে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে 'অফিস সহকারী' পদে পাঠানো হয় এরপর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ক্যাশিয়ার পদে ঘুরে আসেন ঢাকার মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখায় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে বদলি করা হলে তিনি দুই মাসের মধ্যে আবার ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন। সর্বশেষ তিনি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। এরই মধ্যে দুর্নীতির কারনে পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়শিক্ষাগত ও সনদের জোর না থাকলেও অর্থ-বিত্তর পাহাড় গড়ার জ্ঞান ছিলো ঢের তা বুঝাই যায়। আর রুবিনাও মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পেই ১৯৯৮ সালে তিনি স্টেনোগ্রাফার পদে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। দুই বছর পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন রুবিনা। দুই বছরেই বুঝে গেছে আবজালের সাথে থাকলে চাকুরি করার কোন প্রয়োজন নেই। ২০০৫ সালে আগস্ট মাসে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স করে রাজকোষ হাতিয়ে অর্থের পাহাড় গড়ার সহযোগী হন তিনি

বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুর এলাকার কে আলী রোডের মৃত হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার সালেহা বেগমের ছেলে আবদুল মান্নান তালুকদার (৬০) ছিলেন বাগেরহাট ডিসি অফিসের নেজারত শাখার উমেদার (এমএলএসএস) মাদ্রাসায় পড়াশোনা করলেও তার কোনো সার্টিফিকেট নেই১৯৮৪ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উমেদার পদে নিয়োগ পান এবং ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেন তিনি। চতুর্থ শ্রেণির এই কর্মচারী মাসে বেতন পেতেন সাকুল্যে পাঁচ হাজার টাকানিজেকে সৎ ধার্মিক দাবি করা চরমোনাই পীরের অনুসারী মান্নান এখন চার হাজার কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টারে চড়ে বিভিন্ন এলাকায় যেতেন। ৪০০ একর জমি, আটটি বিলাসবহুল গাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন শহরে মার্কেট, জুটমিলসহ তার রয়েছে অঢেল সম্পত্তিসমিতি রিয়েল এস্টেটের মাধ্যমে তিনি চার হাজার কোটি আত্মসাৎ আত্মগোপনে যাওয়ায়র অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানে নামছে দুদক নিউ বসুন্ধরা সঞ্চয় ঋণদান সমিতি মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় তার অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জাল ছড়ানোতার সমিতি শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত উল্লেখ করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেন। কৌশলে এলাকার মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, বেকার যুবক চরমোনাই পীরের মুরিদদের কাজে লাগান তিনিএক লাখ টাকা সঞ্চয় রাখলে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা লাভ চার বছরে দ্বিগুণ-এমন অধিক মুনাফা দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ করতেন। আবার ঋণ দিতেন চড়া সুদে। হলমার্ক গ্রুপের মতো নাম প্যাডসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
মান্নান তালুকদারের ভিজিটিং কার্ডে লেখা হয়েছে, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, সাবিল গ্রুপকার্ডে আরও যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে সেগুলো হচ্ছে-অ্যাজাক্স জুট মিলস, সাবিল পেপার মিলস, সাবিল লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সাবিল অটোমেটিক ব্রিক লিমিটেড, বাগেরহাট ট্রেডিং লিমিটেড, জাকারিয়া এন্টারপ্রাইজ নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডসবই নাম সাইন বোর্ডসর্বস্বমান্নান তালুকদার স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি জীবনে কখনো ঘুষ খাননি। শুধু চাকরির বেতনে সংসার চলবে না সৎ থাকা যাবে না এ ভাবনা থেকে পরিকল্পনা মোতাবেক তিনি জমি কেনা শুরু করেনচাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর পেনশনের টাকা তিনি দান করে দিয়েছেন। দায়িত্ব পালনে কোনো ত্রুটি থাকলে তিনি মরার পরে কী জবাব দেবেন?

উপরের তিনজনের দুজন নীতি থেকে সরিয়া আর একজন ইসলাম থেকে সরিয়া তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে বিত্তের পাহাড় গড়েছেন। শিক্ষাজীবনে কেউ ধারনাও করেনি তারা এতটা এগোতে পারবে। কিন্তু বাস্তব জীবনে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে তারা কি জিনিস! তবে তাদের যদি প্রাতিষ্ঠানিক যথাযথ শিক্ষা থাকতো তবে এর চেয়ে বেশি টাকা হাতিয়ে নিলেও কারো ধরার সাধ্য থাকতো না, কেউ কিছু বলতোও না। অনেক আমলা আছেন যারা বিত্তের পাহাড় দেশে নয় দেশের বাইরে রেখেছেন। কিন্তু তাদের বিষয়ে কেউ কোন দিন টু শব্দটাও করে না, করতে পারেওনি। এই সুযোগ সন্ধানী ধূর্ত দুর্নীতিবাজ হায়েনারা সবসময়ই সরকারী দলের লোক হিসাবে পরিচিত। সময় সময় সরকার পাল্টায় কিন্তু এরা কখনো দল পাল্টায় না। এদের দল একটাই, সেটা হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার!

আমি লেখার শুরুতে তাদের সমর্থনে কিছু কথা বলেছি! বলেছি তার কারনও আছে। আমরা জানি, সার্বজনীন দূর্গা পূঁজোর সময় দেবী দূর্গার সাথে অসুরও কিন্তু পূঁজো পায়। মেধাবীদের মূল্যায়নের সাথে এ ধরনের অতি মেধাবীদেরও কাজে লাগানো যায় কিনা ভেবে দেখার দরকার! এই অতি মেধাবীদের জাদুঘরে রেখেও দেখানো যেতে পারে তারা কি ছিলো! মানুষ দেখবে আর ঘৃণা ভরে তাদের ধিক্কার জানাবে, ভবিষ্যতে অন্যরা সতর্ক হবে, এমন কাজ করতে কিছুটা হলেও ভয় পাবে।