ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Thursday, July 24, 2014

কেন এমন হয়!! এই দেশেতে মৃত্যু ভাগ্য তাদের কেন নয়?

নিচে আমার প্রিয় লেখক ডি এল রায় বা দ্বিজেন্দ্র লাল রায় এর একটা অতি পরিচিত কবিতার বলুন আর গানেরই বলুন তার একটি লাইল দিলাম। আমার লেখার শেষে পুরো গানের কথাগুলো দিব বন্ধুদের পড়ার জন্য। নিচের কথাগুলো গানের সুরে না হোক একটু পড়ে দেখুন কি সুন্দর কথা। প্রতিটি শব্দ হৃদয় ছুয়ে যায়।
‘‘আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি’’
গানের এই লাইনটায় আমার কিছু কথা!! ‘আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।’ আসলে সবার কপালে কি এই সৌভাগ্য হয়? এই দেশেতে জন্ম নেয়ার ভাগ্য অনেকেরই হয়। প্রতি বছর জ্যামিতিক হারে বাড়ে মানুষ। তারা আর কিছু পাক বা না পাক সুজলা, সুফলা, সশ্য শ্যামলা এই সোনার দেশে জন্ম নেয়ার ভাগ্য যে পেয়েছে সেটা নিশ্চিত। কিন্তু এই দেশেতে মরার সুযোগ কি পায়? আমার দেশের অনেক বড় বড়, ছোট ছোট, ছোট বড় লোক এই দেশেতে জন্মে এই দেশেতে মরতে পারে না। আমার কথাটা বিশ্বাস না হলে একটু মিলিয়ে দেখুন। আমাদের দেশের অনেক লোক কখনো ভারতে গিয়ে, কখনো হংকংয়ে গিয়ে, কখনো সিঙ্গাপুর গিয়ে, কখনো থাইল্যান্ড গিয়ে, কেউ কেউ আমেরিকা-লন্ডন-সুইজারল্যান্ডসহ নানা দেশে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে!! দেশেই মারা যেতে পারতো। কিন্তু শেষ সময়ে চিকিৎসার ছুতোয় চলে যায় বিদেশে! সেখানে গিয়ে আর ফেরত আসেনা। পরে জোর করে লাশ নিয়ে আসা হয়! আমি মৃত্যু নিয়ে কোন রসিকতা করছি না। বা যারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান তাদের হেয় করছি না। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয় তাদের ভাগ্য বিধাতা এই বঙ্গ মাতার কোলে শান্তিতে মরতে দিতে চায় না। তাই ছল ছুতোয় দেশের বাইরে নিয়ে যায়। যদিও জোর জবরদস্তি করে আবার দেশে আনা হয়। কিন্তু এই দেশেতে মরিবার সাধ মিটে না।
কেন এমন হয়??
আধুনিক ফতোয়া: আসলে এমনওতো হতে পারে! দেশের সাথে তারা এমন কিছু কাজ করেছে যার শাস্তি হিসাবে বিধাতা তাদের এদেশে মৃত্যভাগ্য হরণ করেছেন। কোটি কোটি মানুষ এই দেশের ডাক্তার, এই দেশের কবিরাজ, এই দেশের ফকির, এই দেশের ঝাড়ফুক নিয়ে বাঁচার আশায় বুক বাধে। যারা আমাদেরকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, অন্ন, বস্ত্র, নিরাপত্তা দিবে তারা কি তা দেয় ঠিকমত? নিজের স্বাস্থ্যর চেকআপ করার জন্য দেশের বাইরে চলে যায়, নিজেদের আখের গোছাতে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি করে নিজের সন্তানকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন। লাখো মানুষের বাসস্থান থাকুক বা না থাকুক, নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাদের তাদের থাকে একাধিক আলিশান বাড়ি, ফ্ল্যাট। আবার অনেকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোমল্যান্ড হিসাবে বেছে নেয় বিদেশ, বিদেশে গড়ে স্বপ্নের বাড়ি। ছেড়া কাপরে লজ্জা ঢাকতে পারেনা হাজারো মা। যারা নিশ্চিত করবে তাদের ছেলে-মেয়ে-বউ দেশি কোন পোষাকই গায়ে চড়াতে চায় না। প্রতিদিন হাজারো শিশু কাদে খিদের জালায়। তাদের মুখে অন্ন নিশ্চিত করার কথা যাদের তাদের বাবুটা কিছুই খেতে চায় না কিন্তু ফাষ্টফুডের দোকানে ঢুকলে হাজার হাজার টাকা বিল হয়, না খেয়ে সেই শুকিয়ে যাওয়া বার-পনের বছরের বাবুটার ওজন ৯০ থেকে ১০৫ কেজি।
আমাদের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব থাকে যে নেতার কাছে, যে অফিসারের কাছে, যে ব্যবসায়ীর কাছে, যে শিক্ষকের কাছে, যে সমাজ সেবকের কাছে সে তার দায়িত্ব পালন না করে দেশের সাথে বেইমানি করেছে বলেই আমার মনে হয় তাদের এই দেশে মৃত্যুভাগ্য হয় না! যা আমাদের সাধারণ মানুষের ও দেশের হক নষ্ট করে। এই অপরাধ আমরা আপাত দৃষ্টিতে দেখিনা বা বুঝতে পারি না কিন্তু বিধাতা তো ঠিকই দেখে! সৃষ্টিকর্তাতো এক মহান বিচারক, সে ঠিকই বিচার করে! ফলে দেশের মাটিতে তার আর মরা হয় না। মরার পর দেশে আসে। তাই আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, কেন এমন হয়!! এই দেশেতে মৃত্যু ভাগ্য তাদের কেন নয়? ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে যে স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।
পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখি কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি
গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে
তারা ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে।।
ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ
ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।।
(সংশোধিত)