ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Tuesday, July 23, 2019

গুজব


গুজব গুবজ সারা দেশে
গুজবে চলছে হত্যা
গুজবে আজ হুমকির মুখে
মানব জাতির সত্তা।

মারছে পাগল, ভবঘুরে
মারছে দেখুন মাকে
ছেলে ধরা সুর তুলে আজ
মারছে যাকে তাকে।

মাথা লাগবে সেতুর নিচে
এমন গুজব তুলে
যাকে তাকে দিচ্ছি প্রহার
মানবতা ভুলে।

মা হারাচ্ছে অবুঝ শিশু
বাবা হারায় কেউ
দেখে হৃদয়ে আস্ত্রে পড়ে
কষ্ট নামের ঢেউ।

গুজবে কান দিয়ে আজ
মারছে যাকে তাকে
মৃতের জন্য মৃতের ঘরেও
অপেক্ষায় কেউ থাকে!

অপরাধের বিচার আছে,
তোমার কী করার কথা?
সবার মনে জাগাতে হবে
সত্যি মানবতা।

Monday, July 22, 2019

প্রসঙ্গ ছেলেধরা ও গণপিটুনিঃ তুবা-মিনজু, ক্ষমা করে দিস মা!

গুজব কারো কারো জন্য গজব হয়ে দেখা দিচ্ছে এখন। দেশে গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গণপিটুনির এই তালিকায় ভিক্ষুক, বাক-প্রতিবন্ধী, প্রতিবন্ধীসহ উচ্চ শিক্ষিত নারীরাও বাদ যাচ্ছে না। এখনই যদি এই গুজব ও আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয়ার প্রবনতা থামানো না যায় তবে যে কেউই হতে পারে ভিকটিম। গুজবের কাছে আমরা কেউই এখন আর নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছি না। সরকারকে কঠোর হস্তে দমন ও বিষয়টিতে নজর দিতে হবে। আমাদেরও সচেতন হতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে ‘পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে এ ধরনের গুজবের সূত্র ধরেই মূলত ‘ছেলে ধরা বা অপহরণকারী সন্দেহে গণপিটুনির সূত্রপাত হয়। জুলাই মাস ধরে এ ধরনের গুজবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ‘ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে ২১ জুলাই রোববার পর্যন্ত নিহত হয়েছে ১১ জন এবং চার জেলায় এক দম্পতিসহ আহত হয় ৫০ জনের অধিক। এই পরিসংখ্যান থেমে নেই। যদিও পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন ‘মানুষের মাথালাগার বিষয়টিকে পুরোপুরি গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও ছেলে ধরা সন্দেহ ও গণপিটুনি থেমে নেই। পুলিশ প্রশাসন থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হচ্ছে ‘গণপিটুনির ঘটনা একটি ফৌজদারী অপরাধ। এধরনের অপরাধ থেকে বিরত থেকে কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশে সোপর্দ করুন। কিন্তু কোন কিছুতেই শুনছে না হুজুগে বাঙ্গালি। দুটি ঘটনার বিবরণ শুনলে আপনার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাবে। কতটা নিষ্ঠুর হলে মানুষ এমটা করতে পারে?

ঘটনা-১। স্কুলে সন্তানের ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন তাসলিমা বেগম রানু। হঠাৎ ছেলেধরা অভিযোগ তুলে অনেকেই তসলিমা বেগম রেনুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাকে গণপিটুনি দেয়া হলে তিনি নিহত হন। তাসলিমা বেগম রানু তার ৪ বছরের মেয়ে তাসনিম তুবাকে ভর্তি করাতে খোঁজ-খবর নিতে বাড্ডার একটি স্কুলে গিয়েছিলেন। সন্তানরা জানেন না ছেলেধরা গুজবে এই সমাজের মানুষরাই তাদের মমতাময়ী মাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। যে তুবার ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়েছিলো সেই তুবা জানেনা তার মা আর ফিরে আসবে না, তাকে আর কোনদিন আদর করবে না! গণপিটুনির ভিডিওটি মুহুর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, বাড্ডার অল্প কয়েকজন যুবকই মারছে তাকে। বাকিরা দেখছে, কেউ কেউ কাছ থেকে মোবাইলে ভিডিও করছে। ৮-১০ মিনিট লাঠিপেটার পর আবার উপর্যুপরি লাথি দেয়া হয়। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় গণপিটুনির পর শনিবার সকাল ১০টার দিকে তাসলিমা বেগম রেনুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি মারা যান। এ অবস্থায় তাসলিমা বেগম রেনুর পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করেছিলেন আড়ং, ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠানে, পড়িয়েছিলেন স্কুলেও। বিবাহ বিচ্ছেদের পর ঘরেই কাটাচ্ছিলেন অধিকাংশ সময়। উচ্চ শিক্ষিতা সংগ্রামী একজন নারীর ভাগ্যে এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছে না কেউ। গত দুই বছর আগে স্বামী তসলিম হোসেনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তার। এরপর ছেলে তাহসিন আল মাহিদকে (১১) তার বাবা তসলিম হোসেন নিয়ে যায়। সে নোয়াখালীর চাটখিলে তার এক ফুফুর কাছে মানুষ হচ্ছে। তাসলিমা বেগম রানু মেয়ে তাসমিন তুবাকে (৪) নিয়ে মহাখালী ওয়ার্লেস গেটে জিপি জ-৩৩/৩ নং বাসায় ভাড়া থাকতেন। কিছুদিনের মধ্যেই রানুর আমেরিকা যাওয়ার কথা ছিলো। যেতে পারলে হয়তো তার সন্তানদের জন্য আরো উজ্জল ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পারতেন। কিন্তু কিছু হুজুগে বাঙ্গালি রানু ও তুবাদের সব স্বপ্ন মূহুর্তের মধ্যে নিঃশেষ করে দিলেন।

ঘটনা-২। গত আট মাস আগে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যায় স্ত্রী। এরপর থেকেই একা হয়ে যান বাক-প্রতিবন্ধী সিরাজ। বাক-প্রতিবন্ধী হওয়ায় দুঃখ বুঝানোর তেমন কেউ ছিলো না। স্ত্রীকে ভুলে গেলেও মেয়ে মিনজুকে ভুলতে পারেননি তিনি। তাই তাদের চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই মেয়ের খোঁজ নিতে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন সিরাজ। এক পর্যায়ে দুই মাস আগে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি আলামিননগর এলাকায় কাজ করতে গিয়ে রাস্তায় মেয়ে মিনজুকে দেখতে পান সিরাজ। সেই থেকে তিন-চারদিন পরপরই সকালে স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় মেয়েকে দেখতে যেতেন হতভাগা সিরাজ। ২০ জুলাই সকালে মেয়েকে দেখতে যান আর সেই দেখাই হয় বাবা-মেয়ের শেষ দেখা। সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাগলাবাড়ির সামনে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে অজ্ঞাত পরিচয় যুবক হিসাবে নিহত হন। পরে রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে ছবি দেখে থানায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করে নিহতের পরিবার। নিহতের পরিবার জানায়, সিরাজ ছেলেধরা নয় বরং বাক-প্রতিবন্ধী। নিজের মেয়ের সঙ্গে লুকিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলো। নিজের কাছে টাকা ছিলো না। তাই একটি মোবাইলের দোকান থেকে ১০০ টাকা ধার করে মেয়ের জন্য বিস্কুট, চিপস নিয়ে গিয়েছিলো। নিহত সিরাজ রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। চারভাই ও তিন বোনের মধ্যে সিরাজ বড়। জন্মের পর থেকেই সিরাজ কথা বলতে পারে না। পরে ১০ বছর আগে একই এলাকার শামসুন্নাহারের সঙ্গে সিরাজের বিয়ে হয়। গ্রামে কাজ না পাওয়ায় ২০১৫ সালে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে আসেন তিনি। সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলোগেইট এলাকায় মোহর চানের বাড়িতে ভাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন সিরাজ। নিজে কখনো রাজমিস্ত্রির সহকারী আবার কখনো দিনমজুর হিসেবেই কাজ করতেন। আর স্ত্রী শামসুন্নাহার বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। আটমাস আগে স্থানীয় বিদ্যুৎমিস্ত্রি আব্দুল মান্নান ওরফে সোহেলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে একমাত্র মেয়ে মিনজুকে নিয়ে পালিয়ে যান শামসুন্নাহার। পাঁচ মাস আগে সিরাজকে তালাকের চিঠি পাঠায় তার স্ত্রী। বোবা হলেও ইশারায় সব কথা বলতে পারতো। মোখলেসের মোবাইলের দোকান থেকে টাকা নেওয়ার সময় নিজেই হাতের ইশারা বুঝিয়েছে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। মেয়েকে দেখতে যাবে তাই অনেক খুশি ছিলো সিরাজ। ছেলেধরার অভিযোগ এনে মারতে মারতে সিরাজকে মাটিতে শুয়েই ফেলেছে উৎসুক মানুষ। মাটিতে যখন সে ছটফট করছিলো তখন কয়েকজন যুবক প্রাণটা যায় না কেনো তাই একের পর এক লাথি মেরেই চলেছে। মরে যাওয়ার পর লাশটা টেনে হেঁচড়ে প্রায় ১০০ গজ দূরে ফেলে রাখে।

এতো গেলো সিরাজ ও রানুর ঘটনা। একজন স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়েছে অন্য জন স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ। আবার কোথাও মাদকাসক্ত যুবক, কোথাও ভবঘুরে ভিক্ষুক এর সাথে ঘটছে ঘটনা। কোথাও কিন্তু ছেলে ধরা বা কল্লা কেটে সেতুর নিচে দেয়ার অভিযোগ প্রমানিত নয়। প্রতিটি ঘটনায়ই সন্দেহজনক। হয়তোবা নিজেদের মধ্যে কেউ উসকে দিচ্ছে, অথবা প্রতিশোধপরায়ন হয়ে বা অতি উৎসাহী হয়ে বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিষয়টা পুলিশ বিষদভাবে খতিয়ে দেখলে প্রকৃত রহস্য উঠে আসবে। ততদিনে ঝড়ে যাবে কিছু প্রাণ, বুক খালি হবে কিছু মায়ের, পিতা-মাতা হারা হবেন কিছু সন্তান।   

বাস্তবতা বলছে, আইনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা, গুজবে হুজুকে জনতার কান দেয়া এবং মানুষের নৈতিক-সামাজিক অবক্ষয় থেকে মানুষ হয়েও জীবিত আরেকজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যার মতো জঘন্য কাজ করতে পারছে। এ ধরনের হত্যার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কাউকে দায়ী করতে না পারার সুযোগটি কাজে লাগায় অপরাধপ্রবণ একদল মানুষরূপি জানোয়ার। কিন্তু যারা এধরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা হয়তো চিন্তাও করতে পারছে না তারা কত বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গণপিটুনির ঘটনা একটি ফৌজদারী অপরাধ। দন্ডবিধি ১৮৬০ এর বিভিন্ন ধারায় এ অপরাধের শাস্তির বিধান রয়েছে। দন্ডবিধিতে গণপিটুনির বিষয়ে বিস্তারিত হয়তো সংগায়িত করা নেই। কারন, হয়তো আইন প্রণয়নের সময় এজাতীয় অপরাধ সমাজে ছিলো না বা মানুষ এমন ঘটনা ঘটানোর কথা ভাবতেও পারত না। আইনবিদদের মতে গনপিটুনিতে মারা গেলে দন্ডবিধি১৮৬০ এর ৩০৪ ধারায় শাস্তি প্রদান করার সুযোগ রয়েছে। আর মারা না গেলে আঘাত বা জখমের ধরন অনুযায়ী দন্ডবিধির ১৪১-১৪৮, ২৬৮ ধারায়ও শাস্তির বিধান রয়েছে।

যে কোনো গুজবে কান দিয়ে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা বন্ধ করা উচিত। কাজটা করতে হবে সরকারকে এবং আমাদের উচিত সরকারকে সহযোগিতা করা। অতি উৎসাহী হয়ে গুজবে কান দিয়ে গণপিটুনিতে অংশ নিয়ে অপরাধীর খাতায় নাম লিখানো উচিত হবে না। নিজেকে হিরো প্রমান করতে গিয়ে আসামীর খাতায় কেউ নাম লিখাবেন না। আপনার হিরোগিরি ভিডিও হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। সেই ভিডিও দেখেই পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গুজবে কান না দিয়ে এ পরিস্থিতি দমনের জন্য সচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। অপরিচিত কোনো নারী-পুরুষকে কোনো কারণে সন্দেহজনক মনে হলে তাকে আটকে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়াই সচেতন নাগরিকদের দায়িত্ব। অবিলম্বে এ বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই। নতুবা এটা মহামারির চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারন করবে, তখন আপনি আমি কেউই আর নিরাপদ থাকবো না। অতি উৎসাহীদের নির্মমতায় মা হারা তুবাকে কি জবাব দিবো সমাজ, বাক প্রতিবন্ধী বাবা হারা মিনজুকেই বা কি জবাব দিবে সমাজ? তুবার চোখের দিকে তাকানো যায় না, প্রতিটি তুবার চোখের ভাষা একই। আমাদের ক্ষমা করিস মা। এ সমাজ তোদের মা-বাবাকে হত্যা করেছে। 

Saturday, July 20, 2019

বিচারকের খাসকামরায় খুন। বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় না


১৫ জুলাই ২০১৯ বেলা ১১টায় দেশে ঘটে যায় এক কলঙ্কজন ঘটনা। ঘটনাটি আর কিছুই নয়, আদালতের বিচার কক্ষে এবং বিচারকের কক্ষে (খাসকামরায়) ঘটেযায় হত্যাকান্ডের মত ঘটনা। সিনেমার ঘটনার মত ডায়লগ দিতে দিতে বিচার কক্ষের আসামী হাজিরার ডক থেকে কোপাতে কোপাতে খাসকামরায় গিয়ে কোপানো শেষ হয়। আদালতে বিচার প্রার্থী বিচারকের কক্ষেই উপর্যুপরি কোপে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক আসামী। ঘাতক অপর আসামী তখন ডায়লগ দিচ্ছিলো-‘তোর কারণে মামলা খাইছি’। কি বিভৎস্য ঘটনা ভাবাযায়? ঘটনার পর পরই ঘাতককে গ্রেফতার, তদন্ত কমিটি গঠন এবং এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা এবং নিরাপত্তা জোরদারের বিষিয়টি সামনে চলে এসেছে। হাস্যকর মনে হলেও নিরাপত্তার জন্য সেই পুলিশ কর্মীরাই থাকবে এবং সেটাই স্বাভাবিক। বিচার বিভাগ যদি একটি পাখি হয় তবে তার দুইটি ডানার মধ্যে একটি হলো বিজ্ঞ বিচারক অন্যটি আইনজীবী। একটি ডানা যদি ভেঙ্গে যায় বা ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেক্ষেত্রে পাখিটি যেমন উড়তে পারে না। তবে একটি পাখির শুধু দুইটি ডানা থাকলেই হয় না, এর মজবুত পা থাকতে হয়, শক্ত ঠোট থাকতে হয়, থাকতে হয় পালকও। সব মিলিয়েই পাখিটির সৌন্দর্য ও কর্মক্ষমতা প্রকাশ পায়। বিজ্ঞ বিচারক আর আইনজীবী যদি পাখির দুটি ডানা হয় তবে আদালতে কর্মরত কর্মীরা হলেন কেউ পা, কেউ ঠোট, কেউ পালক।

আদালত পাড়ার ঘটনা নিয়ে মাঝে মাঝেই আলোচনার ঝড় ওঠে। কখনো আইনজীবীদের দোষ দেয়া হয়, কখনো বিজ্ঞ বিচারকদের দোষ খুজে বেড়াই। কিন্তু কেউ কি অন্য অঙ্গগুলোর খোজ রাখি? আদালতে পেশকার, সেরেস্তাদার, জারিকারক, পিয়ন থেকে শুরু করে আরো নানান শ্রেণীর লোক কাজ করে। সেই সাথে আদালতে নিরাপত্তার জন্য কাজ করে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। সকলে যদি আন্তরিকতা, নিষ্ঠার সাথে সমান্তরাল গতিতে কাজ না করে তাহলেতো দুর্ঘটনা ঘটবেই।

সারা দেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সাথে সাথে আদালত পাড়ায় আগত বিচার প্রার্থীদেরও ব্যয় বেড়ে গেছে। আগে শুনেছি বিচারপ্রার্থীরা তার নিয়োজিত আইনজীবীকে বিশ টাকাও বায়না দিতেন। পূর্বে হয়তো আরো কম ছিলো। এখন বায়না বেড়ে দাড়িয়েছে পাঁচশত টাকায় ক্ষেত্র বিষেশ আরো বেশি। বিচার প্রার্থীদের ব্যয় বৃদ্ধির কারন আইনজীবীদের উচ্চাভিলাশী চিন্তা নয়। প্রকৃত খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনটা হয়েছে। আদালতের কর্মচারীদের স্পিড মাটি দিতে হয়। নয়তো দরখাস্ত থাকে না, নথী থাকে না বা পাওয়া যায় না। নকলখানায় গেলে কোন নথীই পাওয়া যায় না টাকা ছাড়া, জারিকারকরা মামলার রায় পর্যন্ত বিক্রি করে আসে। মোটা অংকের উৎকোচ না দিলে দিনের পর দিন সমন জারি হয় না এমন অভিযোগ হরহামেশাই শোনা যায়। কর্মচারীদের আচরন দেখলে মনে হয়, আইনজীবীরা কাড়ি কাড়ি টাকা নেয়, তাদের কেন দেবে না। তাইতো মানুষের মুখে মুখে-কোর্ট কাচারির দুর্বা ঘাসও নাকি টাকা চায়! এই অভিযোগটা কিন্তু গোপন নয়। প্রকাশ্য হলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কখনোই নজর দেয় না। আর দেবেই বা কিভাবে? একজন কর্মচারী যদি প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে নিয়োগ লাভ করে থাকে তবে সেতো সেই টাকা উঠানোর জন্য শুধু বেতনের দিকে তাকিয়ে থাকবে না বা তাকিয়ে থাকলে হবেও না। চাকরিটায় লাভ শুধু পেনশনে। সারা জীবনের বেতনের টাকা একবারে ঢেলে নিয়োগ পেয়েছে, সংসার চালায় স্পিড মানি দিয়ে, শেষ জীবনের ভরসা পেনশনের টাকাটাই, এমনটা ভেবেই তাদের চরিত্র নষ্ট হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন!

একসময় বাদশারা ছদ্মবেশে বের হতেন। অন্য কোন করনে নয়, দেখতে কেমন চলছে তার রাজ্য, বাদশা সম্পর্কে প্রজাদের মনোভাব কেমন। ছদ্মবেশে বের হয়ে দেখতো দেশে কিভাবে বিচার চলছে, শাসন চলছে, অনিয়ম হচ্ছে। নিজ চোখে দেখে বিচার করতেন বাদশারা। বর্তমান সময়ে কর্তাব্যক্তিদের উচিত মাঝে মাঝে তার অধস্তন কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক কিনা খোজ নেয়া। শুধু অভিযোগপত্র পেলেই ব্যবস্থা নেয়া যাবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। নিজে যদি সৎ এবং সঠিক হন তবে অধস্তন ব্যক্তিদের উপরও নজর দেয়া উচিত। দুই চারটা সমন জারির খবর নেন গোপনে বা প্রতিদিনের বিভিন্ন দরখাস্ত জমা দেয়ার সময় নিজের লোক দিয়ে জমা দিয়ে দেখেন পেশকার কি করে, বা নকল প্রাপ্তির জন্য একটু নকলখানায় দূত পাঠান বা জামিন শেষে খোজ নেন পুলিশ কি করে তবেই পেয়ে যাবেন প্রকৃত চিত্র। নিজে ভালো হলেই তো হবে না, পরিবেশ ভালো করতে হবে নিজে ভালো থাকার জন্য। একটু নজর দিলে আদালত পাড়ায় দালালি, ঘুষ লেনদেন, অনিয়ম, বকসিস বাণিজ্য সব ঠিক হয়ে যাবে। 

আদালতের নিরাপত্তার কথায় আসি। প্রতিটি আদালতের প্রতিটি এজলাসের সামনে-ভিতরে পুলিশ দায়িত্বে থাকে। তারা শুধু শৃঙ্খলাই রক্ষা করে না, এজলাসে উপস্থিত সকলের নিরাপত্তার জন্যও থাকে। কিন্তু যারা আদালতে যান বা যাতায়াত আছে তারা দেখবেন, পুলিশ কি করে? একটা জামিন হওয়ার সাথে সাথে পুলিশ জামিনপ্রাপ্ত আসামীর পিছু নেয় বকসিসের জন্য। কোন কোন পুলিশ আসামীর নিয়োজিত আইনজীবীর চেম্বার পর্যন্ত চলে আসে! নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলো কি হলো না তার থেকে বেশি নজর বকসিসের দিকে থাকলে যে কেউ ছুরি-কাচি নিয়ে প্রবেশ করতেই পারে! একজন আসামী যখন কোর্টে ওঠে তখন নূন্যতম তল্লাশিটাও করে না। যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেলো সেই ঘটনা কোন বিজ্ঞ বিচারক বা আইনজীবী বা বিচার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথেও ঘটতে পারতো। বিশেষ করে আইনজীবীর সাথেও ঘটতে পারতো। ঘাতকের ধারনা নিহত ব্যক্তির কারনেই সে আসামী শ্রেণীভূক্ত হয়েছে! যে মামলায় আসামী হয়েছে সেই মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবীর শুনানী শুনেতো তার মনে হতে পারে যে ঐ আইনজীর কারনেই সে জেলে গেছে! তাই অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাদের কারনে ঘটেছে তাদের কর্মকান্ড এখন আর অনাকাঙ্খিত নয়। তারা এমনটাই করে থাকে। তবে সবাই যে করে এমনটি যেমন ঠিক নয়, আবার সবসময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে এটাও ঠিক নয়। যখন ঘটে তখন সবাই নড়েচড়ে বসে। সবসময় সতর্ক থাকলে এমনটা ঘটতো বলে মনে হয় না।

আদালত পাড়ায় হত্যার ঘটনা আগেও ঘটেছে। এর আগে আদালত, বিচারক এবং আইনজীবীদের ওপর জঙ্গি সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে যা সবার মনে আছে। এসব ঘটনায় বিচারক-আইনজীবীসহ কয়েকজন নিহতও হয়েছেন। এরপর থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবি উঠেছিল। এবার এই ঘটনা জনগণকে আবারও শঙ্কিত করে তুলেছে। একেকটা ঘটনা ঘটার পরে আমরা শঙ্কিত হই। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে অবশ্যই সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিচারসংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। ছাড় দিলে বার বার আমাদের শঙ্কিতই হতে হবে।

বিচার প্রার্থীদের সুবিচার দিতে হলে আদালতের পরিবেশ ঠিক করা জরুরী। যার যার দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করার দিকে নজর দেয়া উচিত। আদালতের ভিতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা আদালতের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তির নজর থাকতে হবে। কঠোর ভাবে যদি যার যার দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা যায় তবে বিচার প্রার্থীরা সুবিচার পাবে এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটবে না বলেই আমাদের মনে হয়।

Tuesday, July 9, 2019

বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা ॥ লাগাম টানতে হবে এখনই

পত্রিকায় খবর আসে টিভি নিউজের পরে। পত্রিকা পড়ার আগেই আমরা টিভি নিউজে ঘটনার আদ্যোপান্ত জেনে যাই। টিভি চ্যানেলগুলো এখন ঘটনা ঘটার সাথে সাথে তথ্য উপাত্ত প্রচারতো করেই সেই সাথে লাইভ টেলিকাস্ট করে ঘটনার পরিবেশ প্রতিবেশ জানিয়ে দেয় দর্শকদের। টিভি চ্যানেলের চেয়ে একধাপ এগিয়ে আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ফেসবুক এমন পর্যায়ে পৌছে গেছে কিছু বিষয় এখন লাইভও দেখাতে পারে এক্টিভিস্টরা। ফেসবুক একটিভিস্টরা ক্ষেত্র বিশেষ হত্যা, ধর্ষণও লাইভ দেখানোর ক্ষমতা রাখে, দেখায় না শুধু সামাজিকতা বা আইনের ভয়ে। তবে ফেসবুকের উপর অনেকসময় নির্ভর করা কঠিন। দল বিবেচনায় বা পক্ষ বিবেচনায় এক্টিভিস্টরা তাদের পছন্দ মত তথ্য প্রচার করে। কোন কোন সময় ফেসবুক এক্টিভিস্টরা মিথ্যা তথ্যও প্রচার করে আমাদের বিভ্রান্ত করে। এডিট করা ছবি, ভিন দেশের ভিডিও ফুটেজ নিজ দেশের সাম্প্রতিক ঘটনা বলে প্রচার চালিয়ে ভাইরাল করতে চেষ্টা করে। তাই ফেসবুকে কোন খবর, ছবি, ভিডিও ফুটেজ দেখার সাথে সাথে নির্ভরযোগ্য অনলাইন পোর্টাল বা পত্রিকার অনলাইন ভার্সন ঘেটে নিশ্চিত হয়ে নেই যে আসলে প্রচারিত তথ্য সঠিক আছে কী না! কর্মব্যস্ততার কারনে অনেকেরই টিভি দেখার সুযোগ হয় কম। তবুও সকালে পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালে হৃদযন্ত্র কেপে ওঠে। প্রতিদিন এক বা একাধিক হত্যা, ধর্ষণ, ধর্ষণ শেষে হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন, সড়ক দূর্ঘটনা, দুর্নীতি, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতিসহ নানান অপকর্মের সংবাদ নজরে আসলে কার হৃদয় না কাপে বলেন? যত শক্ত হৃদয়ই হোক না কেন কাপ দেবেই। বুড়া-মধ্যম-গুরা সবাই অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনা এমন পর্যায়ে পৌছে গেছে যে লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু লাগামটা টানতে হবে।  
দেশে দিন দিন ধর্ষণের নজিরবিহীন রেকর্ড হচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ১০০ দিনের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এটা উন্নয়নের কোন পরিসংখ্যান নয়, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের পরিসংখ্যান! ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনে নজিরবিহীন রেকর্ড হতে চলেছে দেশে। হঠাৎ যেন মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। একের পর এক ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও কোনোভাবেই যেন এর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। বিকৃত রুচির একশ্রেণির মানুষের বিকৃতি থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোমলমতি শিশুরা এমনকি বৃদ্ধরাও। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই নারী ও শিশুর জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে সামাজিক জীবনে। চলতি বছরের প্রথম সাড়ে তিন মাসে ৩৯৬ জন নারী-শিশু হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। খোদ পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৩৯টি এবং হত্যা মামলা হয়েছে ৩৫১টি। বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের প্রথম ১৫ দিনে সারা দেশে ৪৭ শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। ৪৭ শিশুর মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৩৯ জন। শিশু ধর্ষণের ঘটনায় শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৬৪ জন শিশু। এ সংখ্যা জানুয়ারিতে ছিল ৫২, ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে হয় ৬০ এবং মার্চে ফের ৫২ জনে দাঁড়ায়। তিন মাসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৯ জন। এর মধ্যে ৭ জন প্রতিবন্ধী শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণচেষ্টা হয়েছে ৮ জনের ওপর। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১২ জনকে। এ ছাড়া অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে ১১ জনকে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার ১৬ জন। ২০১৮ সালে প্রতিদিন গড়ে ১৩ শিশু নির্যাতন, দুই শিশু ধর্ষণ এবং এক শিশু হত্যার শিকার হতো। ২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষণ-গণধর্ষণ বেড়েছে অন্তত ৩৪ শতাংশ। সংস্থাটি বলছে, এর বাইরেও বহু অপরাধের ঘটনা নিত্যদিনই ঘটে। সেসব ঘটনা রেকর্ডহীন বলে স্থান পায় না থানার হিসাবে। চাইল্ড পার্লামেন্টের নিজস্ব জরিপে এসেছে- গত বছর ৮৭ শতাংশ শিশুই কোনো না কোনো যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গণপরিবহনেই নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫৩ শতাংশ। কর্মজীবী ও গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। শিশুদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। ২০১৮ সালে ২৯৮ শিশু আত্মহত্যা করে, ২০১৭ সালে এ সংখ্যাটি ছিল ২১৩। অপরাধের এই যে উর্ধ্বমুখী সূচক এ সূচক আমরা চাই না। 
এতো গেলো ধর্ষণ-নারী ও শিশু নির্যাতনের কিছু পরিসংখ্যান। এর বাইরেও সংঘটিত হচ্ছে হত্যা, জখম, গুম, অপহরণ, মাদক সংশ্লিষ্ট নানান অপরাধ। প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষের সামনে কুপিয়ে, পিটিয়ে, গুলি করে মানুষ মারছে সন্ত্রাসীরা। কোন কোন ঘটনা এতটাই বিভৎস্য যা দেখা যায়না বা পড়াও যায় না। দুর্বল চিত্তের মানুষ সেসব ঘটনা পড়লে অসুস্থ হয়ে পরে। ধর্ষণের ঘটনাগুলো পড়লে গা শিউরে উঠে। কলা বাগানে নিয়ে, ধান ক্ষেতে নিয়ে, পাট ক্ষেতে নিয়ে, ছাদে নিয়ে, চলন্ত বাসে ধর্ষণের বর্ণনা পাওয়া যায়। শিশু থেকে শুরু করে এক পা কবরে এমন বৃদ্ধাকেও ধর্ষণের স্বীকার হতে হচ্ছে। যুবতী বা মধ্য বয়সী হলেতো কথাই নেই। বাবার কাছে কন্যাও নিরাপদ থাকছে না, শশুরের কাছে পুত্র বধু, শিক্ষকের কাছে ছাত্রী, আত্মীয়র কাছে আত্মীয় এমনকি মসজিদের ইমামদের কাছেও অনিরাপদ হয়ে উঠছে নারী-শিশু-ছাত্রীরা। আমরা কি এমন দেশ চেয়েছি না চাই? মানুষ একটু স্বাভাবিক ভাবে যদি বাঁচতেই না পারে তবে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতার কি মূল্য আছে?
সমাজে এখন এক নিদারুন অস্থিরতা বিরাজ করছে। কারো প্রতি কারো শ্রদ্ধাবোধ নেই, ভালোবাসা নেই, মমত্ববোধ নেই, আন্তরিকতা নেই, শুধু নেই নেই। দেশে বিচার নেই সে কথাতো বলা যাবে না। অঘটন ঘটাচ্ছে, আসামী গ্রেফতার হচ্ছে, বিচার হচ্ছে তবুও থামছে না। আবার একই রকম ঘটনায় প্রভাবশালীদের আত্মীয় হলে বেশি কোপাকুপি করেও হাজতে যায়, প্রভাব না থাকায় কম কুপিয়েও খরচের খাতায় চলে যায়! কেউ চুরির মামলায় আট মাসেও জামিন পায় না আবার কেউ ধর্ষণ করে আট দিনের মাথায় জামিনে মুক্তি নিয়ে ফুলের মালা গলায় দিয়ে বের হয়। এটাও কি সামাজিক অবক্ষয় বা অস্থিরতার কারন নয়?
এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে, যদি না লাগাম টানা হয়। আর লাগামটা টানতে হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের সমাজ বিজ্ঞানীদেরও অনেক ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে, হোক সেটা পরামর্শ দিয়ে। রাষ্ট্র যন্ত্রকে পরামর্শ শুনতে হবে। অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া বন্ধ করতে হবে এবং সেটা করার জন্য আমাদের রাজনীতিবীদদের ভূমিকা রাখতে হবে। একটা কথা এখন বেশ প্রচলিত হয়ে গেছে, সেটা হলো-আগে ছিলাম দারিদ্র সীমার নিচে আর এখন আছি চরিত্র সীমার নিচে। আমাদের পরিবারগুলোর অনেক ভূমিকা রাখা উচিত। সবকিছু রাষ্ট্রের উপর আর ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। প্রতিটি পরিবার থেকে সন্তানদের সামাজিক মূল্যবোধ শিক্ষা দিতে হবে। সন্তান কি করে, কোথায় যায়, কার সাথে চলে সেই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। আর বড়দের বিষয়টা নাহয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপরই ছেড়ে দিন। পরিবার থেকে শিক্ষা নিতে পারলে বড় হয়ে আর খারাপ পথে যাবে না, তবে একেবারেই যে যাবে না সেই নিশ্চয়তা আমিতো দিতে পারবোই না এমনকি পরিবারও দিতে পারবে না। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সেবা দেয়ার ও সেবা নেয়ার, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকার মানসিকতা জাগ্রত করতে হবে। সর্বপরি একটা কথাই বলবো, আমরা এ পরিস্থিতির থেকে মুক্তি চাই, স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে ও মরতে চাই। একটা সুস্থ্য সমাজ চাই, যেখানে আপনার আমার সন্তান নিরাপদে বড় হবে। 

Monday, July 1, 2019

আমার ফুপি

আমার ফুপিরা অনেক ভালো
ঠিক যেন মেয়ে
কিসে আমার ভালো হবে
থাকে সেদিক চেয়ে।
আমায় অনেক আদর করে
অনেক ভালোবেসে
সবসময় কথা বলে
আমার সাথে হেসে।
মামমামও অনেক ভালো
আদর দেয় বেশি
ফুপি-মামমাম সবার সাথে
থাকি আমি খুশি।

ফুল ও ফুলী

শুঁকেছো কী তুমি কদমের ঘ্রাণ, কিংবা হিজল ফুল
গোছল শেষে যাওয়ার কালে, প্রিয়ার ভেজা চুল?
ছাতিম ফুলের মাতাল গন্ধ, অনুভব করেছো তুমি
প্রাণের চেয়েও হয় কতটা, প্রিয় মাতৃভূমি?
কৃষ্ণচুড়া কতটা রক্ত, ঢেলেছে তাহার ফুলে
দেখেছোকি কভু প্রিয়ার চলন, অর্ন্তদৃষ্টি খুলে?
সোনালূ গাছে কেমন করে, ঝুলছে থোকায় ফুল
আদর করে দিয়েছো কভু, প্রিয়ার কানে দুল?
জারুল ফুলের শোভা তুমি, দেখেছো কী কভু চেয়ে
তোমার জন্য ভালোবাসায়, প্রিয়ার মন গেছে ছেয়ে?
কামিনী ফুল কেমন করে, ফুটে আছে থোকা থোকা?
প্রিয়ার কোমল মনে কভু, দেয়া যাবে না ধোকা।
গন্ধরাজের গন্ধে মাতাল, ভ্রমর গুনগুনায়
প্রিয়া তোমার পথ পানে, কেন সদা চায়?
বেলি ফুলের শৌরভে, অলিরা গুনগুন করে
তোমার প্রিয়া তুমি বিহীন, কেমনে থাকে ঘরে?
রক্ত জবা ঠোটে কভু, আলতো ছোঁয়া দিয়ে
সফেদ সাদা মেঘের ভেলায়, ভেসেছো প্রিয়াকে নিয়ে?
বকুল ফুল কুড়িয়ে তুমি, দিয়েছো আজলা ভরে?
চাতকের মত চেয়ে আছে যে প্রিয়া তোমার ঘরে?
কচুরি ফুলের কোমন শোভা, প্রিয়ার গালের মত
তুমি বিহনে তার হৃদয়ে হয়েছে কত ক্ষত?
ফুলের শোভা নিও তুমি, প্রিয়ার পরশ নিও
দু’হাত বাড়িয়ে, বুকে টেনে নিয়ে একটু আদর দিও।

ভন্ড

ভন্ড আমি ভন্ড তুমি, ভন্ড সারা দেশে
ভন্ডের চাপে আস্থা শব্দ, বিলিন হলো শেষে।
ভদ্রতার লেবাস পরে, করছি ব্যবসা-ধান্দা
সবার সামনে প্রকাশ করি, আমিই সহি বান্দা।
ধানে পানি, চালে কাকড়, ওজনে দেই কম
মাছ-ফলে বিশ মেশাই, দেহের যেটা জম।
সাধু সেজে দেই ধোকা, মানুষকে ফেলি ফাঁন্দে
সহজ সরল মানুষগুলো, ধরা খেয়ে কান্দে।
চাকুরি করি বেতন নেই, ওটায় দেই না হাতই
সংসার চালাতে তাই, কাজ করে হাত পাতি।
আমি ভাবি তুমি খারাপ, তাইতো খারাপ হই
তোমার জন্য খারাপ হলাম, আমার দোষটা কই?
আবুর টুপি হাবুর মাথায়, আর কতকাল রাখবে
টুপি পরানোর ধান্দাটা, আর কতদিন থাকবে?
সময় গেছে অনেক বয়ে, বদলাতে হবে এবার
আমি তুমি ভালো হলে, ভালো হবে সবার।