ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Monday, December 29, 2014

শিশু জিহাদ ও আমাদের রাজনীতিতে অবিশ্বাসের বিষ

শরীয়তপুরের সন্তান জিহাদ। কেউ তাকে চিনতো না কয়েকদিন আগেও। নিয়তির নির্মম বাস্তবতায় জিহাদ আজ আমাদের মাঝেই নয় সারা বিশ্বে পরিচিত নাম। কিন্তু জিহাদ মরিয়া প্রমান করিল সে পাইপেই ছিল!!! জিহাদ মরিয়াই প্রমান করিল ঘটনা গুজব নয় বাস্তব। জিহাদ মরিয়াই প্রমান করিল আমাদের রাজনীতিতে অবিশ্বাসের বিষ এতটাই বেশি যে বাস অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। জিহাদ মরিয়াই প্রমান করিল আমাদের দেশে উৎসুক জনতা-মিডিয়া-প্রশাসন কেউই নিজের কাজ সম্পর্কে দায়িত্বশীল নয়। আমরা সবাই অতি উৎসাহী।
রাতে বাসায় ফিরে টিভি ছাড়ার সাথে সাথে যে খবরটি চোখ আটকে দিলো তা হলো জিহাদ নামে একটি শিশু খোলা গভীর নলকুপের পরিত্যক্ত পাইপের মুখ দিয়ে পড়ে গেছে। পাইপের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নিয়ে শুরু হলো গবেষণা! সেই সাথে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা। ফায়ার ব্রিগেডের লোকজন বলছে আমরা জিহাদের সাথে কথা বলেছি, সে জুস খেয়েছে। ইত্যাদি...।
এই কথাগুলো টিভিতে দেখলাম রাতে। জিহাদ পাইপে পড়েছে সেই বিকালে! সর্বশেষ ডাক্তারদের ফরেনসিক রিপোর্টে জানাগেল জিহাদ পাইপে পরার ২ ঘন্টার মধ্যে মারা গেছে এবং মাথা আঘাত পাওয়ার পর সে পানিতে ডুবে যায়, ডাক্তারদের কথায়-পানিতে না ডুবলেও জিহাদ মাথায় আঘাতের কারনে মারা যেত। তাহলে প্রশ্ন আসে জিহাদ যদি পাইপে পতনের ২ ঘন্টার মধ্যেই মারা যায় তবে জুস খেল কে? যাহোক, আমাদের দায়িত্বশীল লোকদের আসলেই কোন দায়িত্বজ্ঞান নেই এটা বার বার প্রমান করে।
উদ্ধার তৎপরতার এক পর্যায়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সহ অন্যান্যরা ঘোষণা দিলেন এখানে কোন শিশুর অস্তিত্ব নাই! উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ধার করে ফেলে জিহাদকে। এখন কিভাবে পাওয়া গেলো জিহাদকে?? এই প্রশ্নগুলো কে করবে?? কিভাবে করা যায়?? উত্তর দেয়ার দায়িত্বই বা কার??
জিহাদকে উদ্ধার করার পর সেখান থেকে তাকে বাইরে আনার জন্য যেভাবে কষ্ট করতে হয়েছে সেটা চোখে পরার মত। কেন জিহাদকে পাওয়ার পর জিহাদকে নিয়ে এম্বুলেন্স এর দরজা পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা ফাকা হয়ে গেল না? মিডিয়া কর্মীরা ছবি তুলছে পেশাগত কারনে, কিন্তু উৎসুক জনতা ভির করে মোবাইলে ফটো তুলছে আর ভির বারাচ্ছে, কেন এটা হচ্ছে? পুলিশ কেন অযাচিত-অনাকাঙ্খিত লোকজন ঠেলে সরিয়ে দেয় না?
আমাদের মিডিয়া যেভাবে বিষয়টা তুলে ধরেছে সে জন্য ধন্যবাদ তবে সেই সাথে এটাওকি ভেবে দেখা উচিত নয় যে, বারাবারি হয়ে যাচ্ছে কিনা? মিডিয়া কর্মীদের কারনে উদ্ধার কাজের কোন ব্যাঘাত ঘটছে কিনা? মিডিয়া কর্মীরা যখন বক্তব্য সংগ্রহ করেন তখন ঐ বক্তব্যদানকারীর কাজের সমস্য হচ্ছে কিনা সেগুলো বিচার করার সময় এখন হয়েছে।
জিহাদ পাইপে পরেছে বিকালে। পরদিন তার লাশ পাওয়া গেল। আমি সন্ধায় আমার বন্ধু শাহীন মিয়ার দোকানে বসে নেটে ঘাটাঘাটি করছি আর দেখছি কে কোন ভিডিও ক্লিপ দিয়েছে? কিছু ডাউনলোড করে দেখলাম। মনে চাপা কষ্ট চেপেই রাখলাম। এক ভদ্রলোক এসে মন্তব্য করছেন, এগুলো ভুয়া খবর। জনগনের চোখ গাজীপুর থেকে সরাইতে সরকার নাটক সাজাইছে! আমি তাকে বললাম, ভাই নাটক না, ছেলেটার লাশ পাওয়া গেছে। ভদ্রলোক আমার কথাও বিশ্বাস করলো না। লাশ পাওয়া গেছে সেটা শোনার পরও সে বলে যাচ্ছে, এগুলো ভুয়া, মিথ্যা নাটক। আমার বন্ধু শাহীন তার ক্ষোভ চাপতে না পেরে ভদ্রলোককে বললো, মিয়া আপনার মতো কিছু কট্টর বিএনপি-কট্টর আওয়ামীলীগ দেশে আছে বলেই আমাদের এই দুর্দশা!! লাশ পাইছে তার পরেও আপনি বলেন নাটক!
অবিশ্বাসের বিষ আমাদের বাতাশে এতটাই বেড়ে গেছে যে লাশ পাওয়ার পরও বিশ্বাস করছে না যে ঘটনা সত্যি!!! বিএনপি পন্থিরা বিএনপির চিন্তাধারা মতে কথা বলছে! কোন এক নেতা হয়তো বলছে এটা নাটক, তাই সবাই বলছে নাটক। পরে জিহাদের লাশ প্রমান করলো জিহাদ নাটক জানেনা!! সরকার হালকা ঘেটেঘুটে কিছু না দেখে বলে দিল কোন লাশের অস্তিত্ব নাই। পরে জিহাদ প্রমান করে দিল অস্তিত্ব আছে তার প্রমান লাশ!!