ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Friday, April 12, 2019

বাইক কেনার সময় বেলচা-ওড়া-কোদাল কিনে রেডি থাকুন

বেলচা, ওড়া, কোদাল আমাদের নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ। কৃষি কাজে, ঘর-গৃহস্তালি কাজে এর ভূমিকা অপরিসীম। অনেক পিতা-মাতা-ভাই আছেন যাদের এগুলো প্রয়োজন হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে! তাই সন্তানের জন্য একটা বাইক কিনার সাথে সাথে বেলচা-ওড়া-কোদাল কিনে রেডি থাকুন! কেন একথা বলছি হয়তো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। সে কথা বলার জন্যই আজকের এ লেখা। এ লেখার মানে এই নয় যে কেউ বাইক কিনবেন না, বাইকে চড়বেন না!
আজকের লেখাটার কারন আর কিছুই নয়, দুটি তাজা প্রাণ কেড়ে নিলো মটরবাইক। সম্প্রতি মোটর রেস করতে গিয়ে মাদারীপুর-শরীয়তপুর মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী একটি ট্রাকের পেছনে মোটরবাইক নিয়ে আছড়ে পড়ে দুই যুবক। এতে দুজনই ঘটনাস্থলে নিহত হয়। ১০ এপ্রিল ২০১৯ বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার মঠেরবাজার সংলগ্ন সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয়েছে শরীয়তপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের তুলাসার গ্রামের মো. ইউনুস মোল্লার ছেলে তালহা তানজিম দিগন্ত মোল্লা (১৭) ও উত্তর বালুচরা গ্রামের খোকন সরদারের ছেলে সুমন সরদার জুম্মান (১৭)। দুজনই পালং তুলাসার গুরুদাস সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দুজনই পরিবারের একমাত্র আদরের পুত্রধন। দিগন্ত দ্রুতগতিতে মোটরবাইক চালাতো। এজন্য মাঝে মাঝেই বাড়িতে বিচার আসতো। গতকালও দ্রুত গতিতে মোটরবাইক চালানোর কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।
নিহত দুজনের বয়স ও মৃত্যুর বিবরণ দেখলেই বুঝাযায় তারা কতটা বেপরোয়া ছিলো। সবে মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এখনও ফল বের হয়নি। শরীয়তপুরের মত একটা পশ্চাদপদ জেলার এসএসসি পরীক্ষার্থী রাত এগারোটায় মাদারীপুর ঘুরতে যায় তারা কেমন বাবা মায়ের সন্তান হয়তো আমার নয় অনেকেরই মনে এমন প্রশ্ন। তাদের বন্ধুরা বলছেন তারা দীর্ঘদিন যাবৎই এমন বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাচ্ছিলো। মাঝে মাঝে শরীয়তপুর-মাদারীপুর হাইওয়েতে রেস করে। এই অবুঝ শিশুদুটির মৃত্যুতে ওদের কোন ভূমিকা ছিলো বলে আমি মনে করি না। ওদেরকে ওদের বাবা-মা’ই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। মানবিকতার কারনে আমরা সবাই আজ বাবা-মাকে সান্তনা দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হওয়া উচিত বলে আমি একজন বাবা হিসাবে মনে করি।
শরীয়তপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি যে পেশার মানুষ বাস করে তা হলো কৃষির পরেই প্রবাসী পেশা। মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি অখ্যাত দেশেও অনেক মানুষ থেকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের দেশের জন্য মহা মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্র পাঠায়। যার কারনে আমরা মাঝে মাঝেই গর্বের সাথে পরিসংখ্যান দেই যে, এখন আমাদের রিজার্ভে এত মুদ্র আছে! প্রবাসী ছাড়াও অনেক ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী রয়েছে, সেই সাথে রয়েছে অনেক ঘুষখোর। তবে টাকা যেভাবেই কামাই করিনা কেন আমাদের সবার উদ্দেশ্য থাকে একটা সেটা হলো পরিবারকে ভালো রাখা, খুশি রাখা, সুখে রাখা। সন্তানদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে বাবা-মা। এর পরে যারা শিশুদের ভালোবাসে তারা হলেন তাদের ভাই-বোন। আমরা ছোটরা বাবা-মা, ভাই-বোনদের অনেক সময় বিভিন্ন আবদারে মানসিক নির্যাতন করি। এতটাই নির্যাতন করি যে আমাদের অন্যায় আবদারও তারা মিটাতে পিছপা হয় না। বাবা-ভাই প্রবাসী, ব্যবসায়ী বা ঘুষের চাকুরী করেন, অঢেল টাকা হাতে। সন্তানের অন্যায় আবদারও মিটাতে বেগ পেতে হয় না। একসময় কৃষক বাবার পক্ষে সন্তান দুইদিন একটা বাইসাইকেলের জন্য না খেয়ে থাকলেও আবদার মিটাতে পারেনি বা মিটায়নি। কিন্তু এখন দুচারটা গ্লাস ভাঙ্গলেই আধা ঘন্টার মধ্যে ছেলের পাছার নিচে নতুন মটর বাইক তাও আবার একশত পঞ্চাশ থেকে দুইশ সিসির বাইক কিনে দেন। কৃষক বাবার সন্তান ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যে থাকেন। ঘন্টায় পাঁচ টাকা দিয়ে বাইক ভাড়া করে চালানোর ক্ষমতা ছিলো না এখন অঢেল টাকা হয়েছে তাই ভাইয়ের আবদার মিটাতে নতুন দ্রুত গতির মটর বাইক কিনে দেন। আসলে কি তারা অবুঝ সন্তান বা ভাইকে মটর বাইক কিনে দিলেন না মৃত্যুর যন্ত্র কিনে দিলেন সেটা কখনো ভাবেন না।
১৮৭৫ সালে পাস করা ব্রিটিশ প্রশাসনের ফ্রেন্ডলি সোসাইটিস অ্যাক্টে ছিল ৫০ বছর বয়সের পর থেকেই একজন মানুষ ‘বার্ধক্যে’ প্রবেশ করল। আর জাতিসংঘের খাতায় বার্ধক্যে প্রবেশের সীমানা দেয়াল হচ্ছে ৬০ বছর। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) মানুষকে তারুণ্যের শক্তি প্রদর্শনের জন্য ৬৫ বছর পর্যন্ত সময় দেয়ার পক্ষপাতি। এ ব্যাপারে তারা নতুন একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। বর্তমানের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের সুযোগ, জীবনমান, গড় আয়ু ইত্যাদি বিবেচনায় জীবনচক্রের নতুন বিভাজন তৈরী করেছে। এগুলো হচ্ছে: (ক) ০ থেকে ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু, (খ) ১৮ থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত তরুণ, (গ) ৬৬ থেকে ৭৯ বছর পর্যন্ত মধ্যবয়সী, (ঘ) ৮০ থেকে ৯৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধ এবং (ঙ) ১০০ বছরের উপরে গেল দীর্ঘজীবী। গবেষণালব্ধ পরিসংখ্যানের বিবেচনায় নিহত দুই ছাত্র এখনও শিশুই ছিলো। শিশুর হাতেই আমরা তুলে দিয়েছিলাম মরনের উপাদান।
শিশুর আবদার বিবেচনা করার মত ক্ষমতা থাকা উচিত। আপনার শিশু এখন যদি আপনার কাছে আবদার করে যে, বাবা আমাকে একটা একে-৪৭ রাইফেল কিনে দাও, ওটার ট্রিগারে একবার চাপ দিলে কি সুন্দর ঘট ঘট করে গুলি বের হয়, একবার চাপলে অনেক মানুষ মারা যায়। আমাকে এখনই একটা কিনে দিতে হবে নইলে আমি ভাত খাবো না, ঘরে ভাঙ্গচুর করবো। আপনি কি কিনে দিবেন? নিশ্চই দিবেন না। হয়তো বলবেন, লাইসেন্স দেবে না সরকার, মার্ডার কেইসে পড়বা ইত্যাদি। শিশু পুত্রকে মোটর সাইকেল কিনে দিলেন, ওকে কি সরকার গাড়ির লাইসেন্স দিবে, ওকে কি সরকার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিবে? দিবে না। তাহলে কেন ওকে অবৈধ ভাবে রাস্তায় একটা বাইকাস্ত্র দিয়ে ছেড়ে দিলেন? শিশু ছিলো সে, ওরতো কোন অপরাধ নেই, অপরাধটাতো আপনি করলেন প্রিয় বাবা, ভাই। রাত এগারোটায় নিজ বাড়ি থেকে পনের-ষোল কিলোমিটার দুরে আপনার সন্তানকে কি করতে পাঠিয়েছিলেন? হয়তো বলবেন আমি পাঠাইনি, এত দ্রুত গতিতে কেন বাইক চালাতে দিলেন, এই বয়সে মাদারীপুর-শরীয়তপুর (যা চট্রগ্রাম-মংলা হাইওয়ে) হাইওয়ের মত ব্যস্ত রাস্তায় কেন রেস করতে দিলেন? বলবেন আমিতো দেইনি। তবে কেন বাড়িতে ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর আটকালেন না? যদি আটকাতেন তবে আজ শোক সইতে হতো না। রাস্তায় বেরোলে দুর্ঘটনা হবে না এমন নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না, কিন্তু এটাকে আমি দুর্ঘটনা মানতে নারাজ, এটা হত্যাকান্ড, একটা শিশুর জন্য একটা বাইক নিরব ঘ্তক সমান।
একটা বেকার, ছাত্রকে বাইক কিনে দিলে সব দায়িত্ব বা চাহিদা শেষ হয়ে যায় না। এর পর আসে তেলের খরচ, মেইনটেনেন্স খরচ, হাত খরচ ইত্যাদি। যখন তার হাতে এসব খরচ দিতে অনিহা প্রকাশ করবেন তখন সে কি করবে একবার ভেবে দেখেছেন? তখন সে ছিনতাই করবে, মাদক কেনা-বেচার সাথে জড়াবে, সন্ত্রাসের সাথে সঙ্গ দিবে। একটা বাইক হলে সেই ছেলের বন্ধুর অভাব হবে না। অতীতে কেউই ছাত্র বা বেকার সন্তানকে বাইক কিনে দিয়ে সুখস্মৃতি হাতড়াতে পারেনি। একটু খোজ খবর নিলেই দেখতে পারবেন কি ঘটেছে সেই সন্তানদের সাথে। বাইক চালাতে চালাতে আর পড়ারই সময় পায়নি!
হয়তো অনেকে বলবেন একটা বাইক দরকার আছে, ছেলেটা স্কুলে যায, কলেজে যায়, প্রাইভেট পড়ে। রিক্সা ভারা দিতে দিতে ক্লান্ত, বাইক হলে ভালো হয়। হতে পারে। কিনে দিন একটা বাই সাইকেল বা সর্বোচ্চ ফিফটি সিসির স্কুটি। দেখবেন সে নেবে না। তার দরকার দ্রুত গতির লেটেস্ট দৃষ্টিনন্দন বাইক। বাইক প্রয়োজন আছে, একজন কর্মির জন্য, একজন চাকুরিজীবীর জন্য, একজন ব্যবসায়ীর জন্য। সে প্রয়োজন বুঝে নিজের আয় থেকে ফুয়েল কিনে চালায়, আর তখন সে ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হয়। বাপের দামী শাল চাদর দিয়ে নিজের টাকায় কেনা ছিড়া স্যান্ডেল মুছা যায়, আর নিজের কেনা শাল হলে? তখন ওটাকে কাধে আগলে রাখে যেন ভাজ নষ্ট না হয়। এটাই বাস্তবতা।
তাই পরিশেষে বলবো, বেকার, ছাত্র সন্তানকে একটা বাইক কিনে দেয়ার সময় একটা বেলচা, একটা ওড়া ও একটা কোদাল কিনে রাখুন ঘরে। আপনারই কাজে লাগবে। কিভাবে? বেকার বা ছাত্রটি যে দ্রুত গতিতে বাইকটি চালাবে তাতে দুর্ঘটনায় পড়লে সন্তান সহ গাড়ি গুড়াগুড়া হয়ে যাবে, হয়ে যাচ্ছে। কোথাও হতে গাড়ির পার্টস, কোথাও হতে সন্তানের মগজ, কোথাও হতে হাড়গোড় তুলতে বেলচাটা আর ওড়া খুব কাজে দেবে আর বাড়িতে এনে দাফন করতে কোদাল ওড়া প্রয়োজন হবে। আমার এ লেখায় যদি কেউ মনে কষ্ট পান তবে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমি কষ্ট দেয়ার জন্য লেখাটা লিখিনি। সতর্ক করার জন্য লিখলাম। প্রয়োজনের বেশি আদর আবদার মিটাবেন না। যাতায়াতের জন্য হাটা পথ হলে বাই সাইকেলও নয়, একটু দুর হলে বাইসাইকেল দিন মটর বাইক নয়, যদি বেশি দুরত্বর কোথাও নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় তবে স্কুটি দিন রেসার বাইক নয়। এতে সন্তান ভালো থাকবে, সুস্থ্য থাকবে, আপনাকে কাদতে হবে না। তবে এসবই যে দুর্ঘটনা রোধ করবে তা কিন্তু নয়। দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই, যে কোন সময় যে কারোর সাথে ঘটে যেতে পারে।

পতিত পোয়া

সোনাগাছির সোনার ছেলে
সোনাউদদৌলা নাম
দেখতে ঠিক মানুষের মত
পশুর মত কাম।
সোনাগাজীর নয়তো সে
সোনাগাছির পোলা
কামকাইজে প্রমান মেলে
আকামে হাত খোলা।
অর্থ হাতাতে ওস্তাদ সে
যৌন লিপ্সাও আছে
ছাত্রীরা সুন্দরী হলে
লাগে তাহাদের পাছে।
পরের বাড়ি খেয়ে খেয়ে
তাগুত বাড়ছে ঢের
জেলের ভাত খাবে এখন
মজা পাবে টের।

সোনার তাড়না

সোনাগাজীর সোনার ছেলের
সোনার তাড়নায়
সোনামনি নুসরাতের
জীবন চলে যায়।
সোনার ছেলে সিরাজ উদ্ দৌলার
কাম দেখেছে যারা
বোরখা পড়ে মুক্ত করতে
মাঠে নেমেছে তারা!
তারা সবাই সন্তুষ্ট
বেজার হয় নুসরাতরা
আমরা শুধু বাজে বকি
লোকটা বাজে, ফাতরা!
কত সুন্দর লেবাস দেখো
উল্টে খায় না ভাজা মাছ
আকাম করে ভেবেছিলো
কেউ করতে পারবেনা আচ!

নুসরাতরা মরে না

নুসরাতরা মরে না কভু
শুধু দেহ করে ত্যাগ
দেখিয়ে যায়, সমাজের আকাশে
কতটা জমেছে মেঘ।
কতটা বেড়েছে লেবাসধারী
সমর্থক কত তাদের
কতটা হয়েছে জানোয়ার তারা
নিরাপদ ভাবি যাদের।
লেবাসীরা সদা ভালো কথা বলে
বুকে পিঠে দেয় হাত
নুসরাতরা যুগে যুগে হায়
করে শুধুই প্রতিবাদ।
হায়েনার পাশে থাকে বেশি লোক
নুসরাতদের পাশে কম
লেবাসীরা হয়ে উঠেছে আজ
আম জনতার জম।
হায়েনার তরে চেয়ারম্যান নামে
বোরখা পরারাও মাঠে
ছাড়িয়ে নিতে প্রতিবাদ করে
মিছিল পথে ঘাটে।
অধম জুয়েল বলে
লেবাসীদেরই হবে জয়?
আমরা কি আজ থেমেযাবো
পেয়ে লেবাসীদের ভয়?

Wednesday, April 3, 2019

আমরা ভেজাল থেকে মুক্তি চাই, স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে চাই


দুধে ভেজাল, মাছে ভেজাল, চালে ভেজাল, মাংসে ভেজাল, ডিমে ভেজাল, অক্সিজেনে ভেজাল, এমনকি ভেজালেও ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে আমার সোনার বাংলায়। এসব ভেজাল খেয়ে ভেজাল মানুষ বড় হচ্ছে ধরনীতে। পরীক্ষা করলে মায়ের দুধেও ভেজাল পাওয়া যাবে। তাইতো কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন-ভেজাল, ভেজাল ভেজাল রে ভাই, ভেজাল সারা দেশটায়, ভেজাল ছাড়া খাঁটি জিনিষ মিলবে নাকো চেষ্টায়! ভেজাল তেল আর ভেজাল চাল, ভেজাল ঘি আর ময়দা, ‘কৌন ছোড়ে গা ভেজাল ভেইয়া, ভেজালসে হ্যায় ফয়দা। ভেজাল পোশাক ভেজাল খাবার, ভেজাল লোকের ভাবনা, ভেজালেরই রাজত্ব এ পাটনা থেকে পাবনা। ভেজাল কথা-বাংলাতে ইংরেজী ভেজাল চলছে, ভেজাল দেওয়া সত্যি কথা লোকেরা আজ বলছে। ‘খাঁটি জিনিষ এই কথাটা রেখো না আর চিত্তে, ‘ভেজাল নামটা খাঁটি কেবল আর সকলই মিথ্যে। এই ভেজালের ভীরে খাটি জিনিস বিলুপ্তির পথে। যেমনটা বিলুপ্তির পথে খাটি মানুষ। মায়ের গর্ভ থেকেই যখন ভেজাল রক্ত নিয়ে পয়দা হচ্ছে তখন ধরনীতে আর সলিড থাকতে পারছে না।

আমাদের দেশে প্রক্রিয়াজাত খাবারে ভেজাল মেশানোটা এখন একটা নিয়মতান্ত্রিক কাজে পরিনত হয়েছে। সম্প্রতি খাটি গাওয়া ঘি নামে ভেজাল ঘি তৈরীর একটা খাটি কারখানার খবর পাওয়া গেছে। টিস্যু পেপার গলিয়ে সাথে দুধ, চিনি দিয়ে তৈরী হচ্ছে লাচ্ছি, দধি। মেশানো ছাড়াও খাবারে বিষের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি দেখা গেছে চালেও বিষের উপস্থিতি রয়েছে। কারন কি? চালে তো ভেজাল মেশানো যায় না বা প্রয়োজন পরে না তবে কেন বিষ থাকবে? প্রকৃতি এখন আমাদের উপর মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। রাসায়নিক বর্জ্য, অতি মাত্রায় কীটনাশক, সার দেয়ায় এবং আমাদের অপরিকল্পিতভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলায় সেই ময়লা আবর্জনার বিষ মাটিতে গিয়ে মিশছে, সেখান থেকে ধানে প্রবেশ করছে বলেই গবেষকরা ধারনা করছে। খাদ্যে ভেজাল বা ভেজাল খাদ্য কি সেটা একটু দেখে নিলে সুবিধা হবে।

ভেজাল খাদ্য বা খাদ্যে ভেজাল (Food Adulteration) বলতে-খাদ্যে নিম্নমানের, ক্ষতিকর, অকেজো ও অপ্রয়োজনীয় দ্র্য মেশানো। প্রকৃতিগত ও গুণগত নির্ধারিত মানসম্মত না হলে যে কোনো খাদ্যদ্রব্যই ভেজালযুক্ত বিবেচিত হতে পারে। অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার জন্য সাধারণত এ কাজ করে থাকে। ভেজাল দেওয়ার প্রক্রিয়ায় খাদ্যশস্যে বহির্জাত পদার্থ সরাসরি যোগ করা হয়, যেমন ওজন বৃদ্ধির জন্য বালি বা কাঁকর, ভাল শস্যের সঙ্গে কীটপতঙ্গ আক্রান্ত বা বিনষ্ট শস্য মেশানো ইত্যাদি। কেউ কেউ ধানভানার সময় খুদ ও কুঁড়া যোগ করে ওজন বাড়ায়। আজকাল দানাশস্য-এর সঙ্গে শস্যদানার আকারের প্লাস্টিকের ছোট ছোট টুকরা আর ডালের সঙ্গে রঙিন টুকরা মেশানো হয়। অনেক সময় মজুদ খাদ্যশস্যের ওজন বাড়ানোর জন্য কেউ কেউ তাতে পানি ছিটায়। তেল ও চর্বিতে ভেজাল দেওয়া খুবই সহজ এবং এগুলি শনাক্ত করাও দুরূহ। ঘি-এর সঙ্গে পশুচর্বি দিয়ে ভেজাল দেওয়া হয়ে থাকে। ইদানিং কৃত্রিম রং ও গন্ধদ্রব্য আবিষ্কারের ফলে চর্বি দিয়ে নকল ঘি বানিয়ে ভোক্তাদের সহজেই ঠকানো যায়। এখন ডালডা, সুজি, পামঅয়েল, ফেবিকল আঠা আর কিছু ফ্লেভার মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে তৈরী করছে খাটি গাওয়া ঘি। তিল বা নারিকেল তেলের সঙ্গে প্রায়ই বাদাম তেল বা তুলাবীজের তেল মেশানো হয়ে থাকে। সরিষার সঙ্গে প্রায়ই শিয়ালকাঁটার বীজ একত্রে মিশিয়ে তেল বের করা হয়। উল্লেখ্য, শিয়ালকাঁটার তেলের স্যাঙ্গুইনারিন (sanguinarine) নামের উপক্ষার অত্যন্ত বিষাক্ত এবং তা শোথ ও পক্ষাঘাত ঘটায়। সয়াবিন তেল বা পামতেলের সঙ্গে এলাইলআইসোথিওসায়ানেট (allylisothiocyanate) মিশালে তাতে সরিষার তেলের মতো ঝাঁঝ হয় এবং সহজেই সরিষার তেল বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। সয়াবিন তেলের সঙ্গে পামতেলের ভেজাল মেশানো অধিক মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চিরাচরিত অপকর্ম। দুধের মাখন তুলে নিয়ে অথবা দুধে পানি মিশিয়ে ভেজাল দুধ বাজারজাত করা হয়। কখনও কখনও সয়াবিন তেল বা বাদাম তেল, ময়দা ও অন্যান্য দ্রব্যাদি দুধে মেশানো হয়। মহিষের দুধ পানি দিয়ে পাতলা করে গরুর দুধ বলে সহজেই চালানো যায়। গুঁড়াদুধে ময়দা, সুজি ও অন্যান্য দ্রব্য মেশানো খুবই সহজ যা করছে প্রতারক শ্রেণী মানুষ। দুধে পানিটাও দেয় ভেজাল (বিশুদ্ধ নয়) পানি। ব্যবহৃত চা পাতা, কাঠের গুঁড়া ও শুকনা পাতার গুঁড়া দিয়ে চায়ে ভেজাল দেওয়া হয়। মসলার মধ্যে লঙ্কা বা হলুদ গুঁড়াতে সীসাজাতীয় রঞ্জক পদার্থ মিশিয়ে রঙের উজ্জ্বলতা বাড়ানো হয় এবং দেখতে ভাল দেখায়। মিষ্টিজাতীয় দ্রব্যাদি তৈরিতে ছানার পরিবর্তে বেশি বেশি চালের গুঁড়া বা ময়দা মেশায়। কোমল পানীয় তৈরীতে তরল গ্লুকোজ বা চিনির সিরাপের পরিবর্তে প্রায়শ ব্যবহৃত কার্বোক্সি মিথাইল সেলুলোজ (CMC) মেশানো হয়। বিভিন্ন ফলের রসের নামে কৃত্রিম ও নিষিদ্ধ দ্রব্য ব্যবহার করে নকল রস তৈরী হয়ে থাকে। সম্প্রতি মিনারেল ওয়াটার নামে বাজারে যে পানির ব্যবসা চলছে তাতে গুণ ও মানের নিশ্চয়তা অতি সামান্য বা অনেক ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। প্রকৃতির এক অমূল্য নিয়ামত মধুতে চিনি, ইনভার্ট সুগার মিশিয়ে ভেজাল মধু তৈরী করে। গুর স্বচ্ছ করতে কাপর কাচার সোডা মিশানো হয়। হাল আমলে খেজুর গুর হোক আর আখর গুর দুটোতেই চিনি মিশিয়ে ভেজাল দেয়া হয়। মুড়িকে বেশি সাদা ও ফোলা ফোলা করতে ইউরিয়া সার ব্যবহার করে। বিভিন্ন জুসে আলু, কুমড়া মেশানো, সসে টমেটো কম কুমড়া বেশি, প্রশাধনীতে মেশানো হয় ভেজাল। ভেজাল প্রসাধনী মেখে ভেজাল রুপসী হচ্ছেন অনেকেই। পার্লার থেকে সাজুগুজু করা মেয়ে বৌ হিসাবে বাড়ি নেয়ার পর মুখ ধুলে দেখাযায় যেন অন্য কেউ।

হাত বাড়ালেই মিলছে নকল আর ভেজাল প্রসাধনী। মোড়ক দেখে কারও বোঝার সাধ্য নেই কোনটি আসল আর কোনটি নকল। নকলের ভিড়ে প্রিয়জনের জন্য কেনা হচ্ছে প্রসাধনীর নামে এক প্রকার বিষ। দেশি-বিদেশি বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর মোড়ক নকল করে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যানটিন প্রো-ভি শ্যাম্পু, গার্নিয়ার, হেড অ্যান্ড শোল্ডার, লরেল, রেভলন ও প্যানটিন, নিভিয়া লোশন, লাক্স লোশন, মাস্ক লোশন, অ্যাকুয়ামেরিন লোশন, ফেড আউট ক্রিম, ডাভ সাবান, ইমপেরিয়াল সাবান; সুগন্ধির মধ্যে হুগো, ফেরারি, পয়জন, রয়েল, হ্যাভক, কোবরা সবই এখন ভেজাল আর নকলে ভরা। কসমেটিকস দোকানগুলোতে রকমারি এসব বিদেশি পণ্যের সমারোহে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। কী নেই! বিশ্বের সব নামকরা ব্র্যান্ডের প্রসাধনসামগ্রী থরে থরে সাজানো। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, বাজারে প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর লেবেল ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই। এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৫ ভাগ প্রসাধন পণ্যের বিএসটিআইর সনদ নেই, ৭৫ ভাগ পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা নেই।

সুকান্ত ভট্টাচার্য আরো লিখেছিলেন-“কলিতে ভাই ‘ভেজাল সত্য ভেজাল ছাড়া গতি নেই, ছড়াটাতেও ভেজাল দিলাম, ভেজাল দিলে ক্ষতি নেই। তাই আমিও বলবো আমার এ লেখাটাতেও একটু ভেজাল দিলাম। গুগলে সার্চ দিয়ে তথ্য বের করে কপি নিলাম। এই ভেজালে নিশ্চই কোন ক্ষতি নেই। কি বলেন পাঠক বন্ধুরা? তবে শেষ কথার এক কথা হলো, আমরা বাঁচতে চাই। জাপানের হিরোসিমা-নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমা ফেলা হয়েছিলো, তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব এতটাই ছিলো যে দীর্ঘদিন পরেও বিকলাঙ্গ বাচ্চা পয়দা হতো। আমাদের দেশের যে অবস্থা তাতে অদূর ভবিষ্যতে বিকলাঙ্গ বাচ্চা পয়দা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর বিকলাঙ্গ বাচ্চা একটি জাতির জন্য কতটা অভিষাপ, কতটা বোঝা তা যে পরিবারে প্রতিবন্ধী-বিকলাঙ্গ শিশু জন্মনেয় সে পরিবারই কেবল জানে। বিকলাঙ্গ শিশু না যায় মারা, না যায় পালা! ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উচিত এখনই লাগাম টেনে ধরা। ভালো জিনিস দিন, দাম একটু বেশি হলেও ক্ষতি নেই। আর আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেক দ্বায়িত্ব রয়েছে। তাদের উচিত কঠর নজরদারি, তদারকির মাধ্যমে এই অপকর্ম দুর করা। আবারও বলছি-আমরা বাঁচতে চাই, আমাদের বাঁচতে দিন। নতুন প্রজন্মকে সুস্থ-সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠতে দিন, মনে রাখতে হবে, প্রতিবন্ধী-বিকলাঙ্গ শিশু আপনার ঘরেও জন্ম নিতে পারে!

Tuesday, April 2, 2019

চৈৎ মাসেই এত আগুন, বৈশাখে কি হবে!


দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা। প্রকৃতি কেন যেন বিরুপ আচরন করছে আমাদের সাথে। ষড়ঋতুর দেশ ছিলো এই সোনার বাংলা। একেক ঋতুর একেক স্বাদ উপভোগ করতাম আমরা। এখন দেখাযায় বদলে গেছে সোনার বাংলার ঋতুবৈচিত্র। প্রকৃতির ভাব দেখে মনে হয় ঋতু কমে তিনটিতে চলে এসেছে। গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীতেই ঘুরপাক খাচ্ছে আমাদের ঋতু। ছোট বেলায় ঋতু নিয়ে রচনা লিখতে হতো। কত সুন্দর সুন্দর কথা লিখতাম আমরা ঋতু নিয়ে। আজো মনে পরে সেকথা। একটু পিছনে ফিরে গেলে মনে পরবে ঋতুর রচনা। 

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ, ঋতুবৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। একেক ঋতুর একেক রূপ। ঋতুতে ঋতুতে এখানে চলে সাজ বদলের পালা। নতুন নতুন রং-রেখায় প্রকৃতি আলপনা আঁকে মাটির বুকে, আকাশের গায়ে, মানুষের মনে। তাই ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে এখানে জীবনেরও রং বদলায়। প্রতি দুই মাস অন্তর একটি নতুন ঋতুর আবির্ভাব ঘটে। ঋতুগুলো হলো গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসস্ত।
গ্রীষ্মকালঃ ঋতুচক্রের শুরুতেই আসে গ্রীষ্ম। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল। আগুনের মশাল হাতে মাঠ-ঘাট পোড়াতে পোড়াতে গ্রীষ্ম ঋতুর আগমন। তখন আকাশ-বাতাস ধুলায় ধূসরিত হয়ে ওঠে। প্রকৃতির শ্যামল-স্নিগ্ধ রূপ হারিয়ে যায়। খাল-বিল, নদী-নালা শুকিয়ে যায়। অসহ্য গরমে প্রাণিকুল একটু শীতল পানি ও ছায়ার জন্য কাতর হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে কখনো হঠাৎ শুরু হয় কালবৈশাখীর দুরন্ত তান্ড। ভেঙেচুরে সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যায়। তবে গ্রীষ্ম শুধু পোড়ায় না, অকৃপণ হাতে দান করে আম, জাম, জামরুল, লিচু, তরমুজসহ নানান রকম অমৃত ফল।
বর্ষাকালঃ গ্রীষ্মের পরই মহাসমারোহে বর্ষা আসে। আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকৃতি থেমে থেমে শিউরে ওঠে। শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টি। মাঠ-ঘাট পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। প্রকৃতিতে দেখা দেয় মনোরম সজীবতা। জনজীবনে ফিরে আসে প্রশান্তি। কৃষকেরা জমিতে ধান-পাটের বীজ রোপণ করেন। গাছে গাছে ফোটে কদম, কেয়া, জুঁই। বর্ষায় পাওয়া যায় আনারস, পেয়ারা প্রভৃতি ফল।
শরৎকালঃ বাতাসে শিউলি ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আসে শরৎ। ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস শরৎকাল। এ সময় বর্ষার কালো মেঘ সাদা হয়ে স্বচ্ছ নীল আকাশে তুলার মতো ভেসে বেড়ায়। নদীর তীরে তীরে বসে সাদা কাশফুলের মেলা। বিকেল বেলা মালা গেঁথে উড়ে চলে সাদা বকের সারি। সবুজ ঢেউয়ের দোলায় দুলে ওঠে ধানের খেত। রাতের আকাশে জ্বল জ্বল করে অজ¯্র তারার মেলা। শাপলার হাসিতে বিলের পানি ঝলমল ঝলমল করে।
হেমন্তকালঃ ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসবের আনন্দ নিয়ে আগমন ঘটে হেমন্তের। কার্তিক-অগ্রহায়ণ দুই মাস হেমন্তকাল। প্রকৃতিতে হেমন্তের রূপ হলুদ। শর্ষে ফুলে ছেয়ে যায় মাঠের বুক। মাঠে মাঠে পাকা ধান। কৃষক ব্যস্ত হয়ে পড়েন ফসল কাটার কাজে। সোনালি ধানে কৃষকের গোলা ভরে ওঠে, মুখে ফোটে আনন্দের হাসি। শুরু হয় নবান্নের উৎসব। হেমন্ত আসে নীরবে, আবার শীতের কুয়াশার আড়ালে গোপনে হারিয়ে যায়।
শীতকালঃ কুয়াশার চাদর গায়ে উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গে আসে শীত। পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল। শীত রিক্ততার ঋতু। কনকনে শীতের দাপটে মানুষ ও প্রকৃতি অসহায় হয়ে পড়ে। তবে রকমারি শাকসবজি, ফল ও ফুলের সমারোহে বিষন্ন প্রকৃতি ভরে ওঠে। বাতাসে ভাসে খেজুর রসের ঘ্রাণ। ক্ষীর, পায়েস আর পিঠা-পুলির উৎসবে মাতোয়ারা হয় গ্রামবাংলা।
বসন্তকালঃ সবশেষে বসন্ত আসে রাজবেশে। ফাল্গুন-চৈত্র দুই মাস বসন্তকাল। বসন্ত নিয়ে আসে সবুজের সমারোহ। বাতাসে ফুলের সুবাস। গাছে গাছে কোকিল-পাপিয়ার সুমধুর গান। দখিনা বাতাস বুলিয়ে দেয় শীতল পরশ। মানুষের প্রাণে বেজে ওঠে মিলনের সুর। তাই বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ।

রচনাটা পড়লেই হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কত বৈচিত্রময় ছিলো আমাদের দেশ। এখন আমরা কি দেখছি? গ্রীষ্ম গেলে আসে বর্ষা, বর্ষা গেলে আসে শীত আবার শীত গেলে আসে গ্রীষ্ম। বাকী ঋতুগুলোর কোন খবরই নেই। ওরা আছে এখন বইয়ের পাতায়। ঋতুর আচরনের সাথে সাথে দেশে দুর্যোগের আচরনও বদলে গেছে। শীত এখন যেতেই চায় না। চৈত্রের শেষেও রাতে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে হয়। আবার দিনে গ্রীষ্মের খরতাপে পুড়তে হয়। বিনিময়ে আমরা পাচ্ছি ঠান্ডা, জ্বর, কাশির মত নানান রোগব্যাধি।

এবার চৈত্রের শুরুতেই দেশে শুরু হয়েছে আগুনের ধ্বংসলীলা। ঢাকা হলো বিশাল জায়গা, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। সেই বিশাল জায়গায় কিছুদিন পর পরই ঘটছে অগ্নিকান্ড। শুধুযে ঢাকায় তা কিন্তু নয়। সারা দেশেই এমটা ঘটছে। আগুন কেড়ে নিচ্ছে সম্পদ, সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো মানুষ। একেকটা অগ্নিকান্ডে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটছে শতের উপরেও। আগুনের সাথে লড়াই করে বাঁচা কঠিন। চৈত্রের এমন রূপ হলে বৈশাখে যে কি অবস্থা হবে তা ভেবেই গা শিউরে ওঠে। বৈশাখের তাপদাহে আরো কতযে প্রাণ যাবে তার কোন ইয়ত্তা নেই। বৈশাখে অগ্নিকান্ডর প্রয়োজন পড়ে না, তাপদাহে হিটস্ট্রক করেও অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। আসলে প্রকৃতি কি আমাদের উপর বিরুপ হয়ে গেছে! কেন এমন হচ্ছে সেটা কি আমরা ভেবে দেখেছি কখনো, না দেখছি? প্রকৃতির এমন আচরনের কারনও আছে নিশ্চই।

শুধুযে আমাদের দেশে তা নয়, সারা বিশ্বেই প্রকৃতি এখন আমাদের উপর বিরুপ। বিরুপ হওয়ার কারনও আছে অনেক। আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতির কারন। নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংস করার জন্য আমরাই দায়ী। বৈশ্বিক তাপমাত্র বেড়ে গেছে, গলে যাচ্ছে বরফ, ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল, বিল, নদী নালা। সমুদ্র তল ফুলে উঠছে। পাহাড়ও কেটে সমতল করে ফেলি আমরা। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গাছ কাটি, বাঁশ কেটে নিজেদের পিছনে নিজেরাই নিচ্ছি। বিলাসিতার কারনে রুমে রুমে এসি লাগিয়ে ঠান্ডার ব্যর্থ চেষ্টা করছি। এ যেন গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢেলে গাছ বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা। উন্নয়নের নামে নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংস করে মেগা প্রকল্প তৈরী করছি। প্রকৃতিকেতো আমরাই ক্ষেপিয়ে তুলেছি, প্রকৃতির দোষ দিয়ে কি লাভ হবে? সবুজ বনভূমি এখন আর সবুজ নেই, কাটতে কাটতে ধূষর করে ফেলেছি। সবুজ মাঠ এখন ইট ভাটার ধুয়ায় সয়লাব। জলাভূমি বালু দিয়ে ভরাট করে নিজেরাই তৈরী করছি মরুভূমি। প্রকৃতি ধ্বংস করে করছি ইট পাথরের জঞ্জাল। এখন আর আমরা প্রকৃতির রংয়ে সাজি না, নিজেরাই তৈরী করি নকল প্রকৃতি। বিনিময়ে আমরা পাচ্ছি ধ্বংসলীলা।

আমাদের বাঁচতে হবে, আমরা বাঁচতে চাই। প্রকৃতির দান যেমন হাত খোলা, তেমনি প্রকৃতির ধ্বংসযজ্ঞও অসীম। প্রকৃতি যেমন দিতে পারে তেমনি নিতেও পারে। আমাদের জন্য, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে না পারলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ঘৃণাভরে গালি দেবে। আমাদের যত অর্জন, আমাদের যত চেষ্টা সবইতো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। যাদের জন্য আমাদের এত শ্রম, এত ত্যাগ তাদের কাছে যদি আমরা নিকৃষ্ট হয়ে যাই তবেতো এই মানব জনমই বৃথা হয়ে যাবে। চৈৎ মাসের বিরুপ আচরনে ভাবছি বৈশাখে কি হবে, কিন্তু একবারও কি ভাবছি যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কি হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি ভাববে? আমাদের এখনই ভাবা উচিত। একটু ভাবুন।