ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Saturday, April 14, 2018

একদিনের বাঙ্গালী

একদিনের জন্য হচ্ছি বাঙ্গালী
পান্তা খাই যেন ‘খাচ্ছে কাঙ্গালী’।
সুটেড ব্যুটেড হয়ে চলি সারা মাস
সব রং পাঞ্জাবীতে লেগে গেছে আজ।
ঘরে-বাইরে সাজি সালোয়ার কামিজে
আজ পড়েছি শাড়ি বৈশাখী আমেজে।
বাসন্তী রং-শাড়ি পড়ে ললনারা মেলায় যায়
আচার, ফুচকা আর ঝালমুড়ি কিনে খায়!
ঘোড়া-হাতি পাঙ্খা কিনে ডুলা উরকী
হাটে আর কেউ খায় কিনে মোয়া মুরকি।
লাল লাল চরকা আর, কিনে বাশের বাসি
আজ আমি বাঙ্গালি বাংলা ভালোবাসি!
সারা বছর শুণি শুধু রক আর হিনদি
বাউল গানের লাগি আজ খুব দরদি।
কবিতার পাঠ হয়, চলে পালাগান
উজার করে আজ দিতে পারি প্রাণ!

কবি জুয়েল বলে, ভন্ডামি ছেড়ে
বাঙ্গালীত্ব আকড়ে ধর, নিয়ে যাচ্ছে কেড়ে।
একদিনের নয়, হও কায়মনে বাঙ্গালী
সমৃদ্ধ হবো মোরা, হবো না ‘কাঙ্গালী’।

Tuesday, April 10, 2018

সূ-----ড়া

এরাবিয়ানে খায় জিন
ইন্ডিয়ানে রাম
হগলে মিলে
করে একি কাম?

কোনের টেবিলে বাবু
খায় পেগ হুইস্কি
হালকা হয়েছে মাথা!
খেয়ে হাসে মুস্কি।

ভৎ করে ভদকা
ঢালছে গ্লাসে
অনেকেই গিলছে
দেখো আশে পাশে।

শম্পার হাতে দেখ
শ্যাম্পেন ধরা
খেলে বেশি করো না
খুব নড়াচড়া।

ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ডি
নিয়ে হাতে হাতে
চিয়ার্স চিয়ার্স ধ্বণি
করে দেখো রাতে।

সুরের তালে তালে
চলে সুরা পান
কারো আসে বমি
কারো কাছে প্রাণ।

বড় বড় মগ নিয়ে
ভরে নেয় বিয়ার
কারো সাথে বান্ধবি
কারো সাথে ইয়ার।

এখানেই শেষ নয়
মুদিরার সাথে
সুরের তালে নটি
নাচে প্রতি রাতে।

এটা ওটা খায় আর
করে ধুমপান
আসক্ত হলে পরে
চলে যায় প্রাণ।

Saturday, April 7, 2018

দোষ আমারই!!

এক সপ্তাহ। পুরা এক সপ্তাহ বিছানায় কাটালাম। সম্পূর্ণ বিশ্রামে ছিলাম। বিশ্রাম নেয়াও যে ক্লান্তির বিষয় তা আগে বুঝিনি। একপর্যায়ে বিশ্রাম নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে গেছি, সেই ক্লান্তি দুর করতে আবার বিশ্রামের প্রয়োজন হয় কিনা বুঝতে পারছি না। সুস্থ্য শরীরে বিশ্রাম নেয়া যে এত কষ্টের তা আগে বুঝিনি!  

যা হোক, কেন এই অখন্ড বিশ্রাম তার কারন বলছি। গত ৩০ মার্চ বরিশাল যাওয়ার জন্য সকাল বেলা রওয়ানা দিলাম বাড়ি থেকে। কোর্ট মোড় থেকে একটা মটর সাইকেল নিয়ে চলে গেলাম মাদারীপুরের মোস্তফাপুর। সেখানে নেমে নাস্তা সেরে দাড়ালাম বাসের জন্য। ঢাকা টু বরিশালগামী বাসগুলো মোস্তফাপুর যাত্রী নামিয়ে কিছু যাত্রী তোলে। আমার সফর সঙ্গী এডভোকেট মুরাদ হোসেন মুন্সী। হাত ইশারায় ঢাকা টু বরিশালগামী বাস থামলো। মুরাদ মুন্সী উঠে পড়লো। এবার আমার উঠার পালা। আমি বাসের হাতল ধরে সবে মাত্র ডান পা তুলেছি, বাম পা এখনও ভূমিতে অবস্থান করছে। বাম পা উঠানোর আগেই একটা ঝটকা টান দিলো চালক। অমনি টের পেলাম আমার ভাঙ্গা পা আবারও খাদে পড়েছে! বাম পায়ে ব্যাথা পাওয়ার কারনে আমি আর উঠতে পারলাম না। উঠতে না পারলেও আমি বাসের হাতল ছাড়িনি। আমি নিজের চোখে দেখছি, যদি হাতল ছেড়ে দেই আমার পা সহ আমিই চাকার নিচে চলে যাবো। তাই হাতল না ছেড়েই ঝুলে রইলাম। কিছুদুর গিয়ে বাসটি থামালো চালক। এবার আমি উঠে পড়লাম। কিন্তু ততক্ষণে টের পেলাম যা হবার তা হয়ে গেছে। হাটুতে ব্যাথা অনুভব করছি। চিন চিন ব্যাথা। আস্তে আস্তে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাসের পিছনের দিকে সিটে গিয়ে বসলাম। বরিশাল বাস ষ্ট্যান্ডে গিয়ে সাবধানে নেমে কাজ শেষে চলে আসলাম শরীয়তপুর। বন্ধু ডাক্তার মাহবুবকে বললাম সবকিছু খুলে। সে পরামর্শ দিলো, কোন ঔষধ লাগবে না, শুধু বিশ্রাম নিতে হবে। আমাকে জিজ্ঞেস করলো, পা প্লাস্টার করে দিবে কিনা। বলে রাখা ভালো, এই পায়ে কয়েক বছর আগে লিগামেন্ট সরে গিয়ে একমাস প্লাস্টার করে বিছানায় শুয়ে ছিলাম। যখন প্লাস্টার খুলেছে তখন মাটিতে পা রাখলে মনে হতো পায়ের পাতা যেন পাথর হয়ে গেছে। সেই ভয়ে বললাম প্লাস্টার না করে কি বিশ্রাম নেয়া সম্ভব? ডাক্তার আমায় বললো, সম্ভব, তবে নড়াচরা করা যাবে না। তিন চার দিন বিশ্রাম নিতে হবে। যেই বলা সেই কাজ। আমি বিছানায় চলে গেলাম। তিন চার দিন পর ডাক্তার আবার গিয়ে দেখে বললো, এক সপ্তাহ বিশ্রাম নিতে হবে, পুরোটা ভালো হয়নি। তিন চার দিনের সাথে যোগ দিয়ে দিলাম বাকী সময়টা। অখন্ড আট দিন বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাটিয়ে দিলাম। আটটি দিন আমার সাথে ছায়ার মত লেগেছিলো আমার মেয়ে যাকে আমি মা বলে ডাকি সেই প্রিয়ন্তী। আট দিনের মধ্যে সে একবারও ঘরের বাইরে যায়নি। আমার কি লাগবে, তা দেয়ার জন্য দ্রুত চেষ্টা করেছে। একেবারে মায়ের মত সেবা করেছে আমার মেয়ে। আট দিন বিশ্রাম শেষে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে ফিরলাম নিজ কর্মস্থল আমার চেম্বারে।

আমার এই আটদিনের বিশ্রামের জন্য আমিই দায়ী। পরিবহনের বাড়াবাড়ির জন্য যা হলো তাকে আর কি দোষ দেব বলেন? বাসটা একটু দাড়ালে আমি উঠতে পাড়তাম। আমি উঠার পর গাড়িটা টান দিলে কি চালকের খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত? সময় কি খুব বেশি চলে যেত? এমন হাজারো প্রশ্ন মনে জাগে। উত্তর? কোন উত্তরই পাই না, আর উত্তর দেবেই বা কে? পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য আজ নতুন কিছু নয়। আমার দুর্ঘটনার পর পরই ঢাকায় এক দুর্ঘটনায় হাত হারালো কলেজ ছাত্র। দুই বাসের রেশারেশি আর পাল্লাপাল্লিতে হাত কাটা পড়লো। হাতের সাথে ছিড়ে গেলো তার একরাশ ভবিষ্যত। তার পরপরই দুই বাসের চাপে এক গৃহবধুর কোমড় ভেঙ্গেছে। কেন এমন হয়? কি আমাদের করা উচিত? কোন উত্তর নেই। 

এই যে অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা এর পেছনে কারা? এমন ভাবে গাড়ি চালায় যারা তারা কোথা থেকেই বা আসে? আসলে আমাদের দেশে সৎ বাবা-মায়ের অসৎ সন্তানগুলো, বখে যাওয়া সন্তানগুলো, নিকৃষ্ট সন্তানগুলো বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে এরা বিভিন্ন বাস, টেম্পুতে হেলপারের কাজ করে অপরাধ জগতের সাথে মেলামেশায় লিপ্ত হয়। ছোট বয়সেই বাদুরের মত বা বানরের মত বাসের হাতল ধরে ঝুলে ঝুলে চলতে থাকে পথে। নানান অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে আর প্রমোশন পেতে পেতে একদিন হয়ে যায় ড্রাইভার! এক মন্ত্রীর মতানুসারে গরু-ছাগল, লাল নীল রং চিনে বলে তারা পেয়ে যায় ড্রাইভিং লাইসেন্সও! এর পর চালকের আসনে বসে বেপরোয়া ভাবে চালাতে থাকে যানবাহন। ওরা নিজের জীবন নিয়ে যেমন ভাবে না তেমনি অন্যের জীবন নিয়েও ভাবে না। যেমনটি ভাবেনি আমার জীবন নিয়ে!!

আমি চালককে কোন দোষ দিতে চাই না! চালক তার স্বভাবসুলভ কাজটিই করেছে। আমিতো বানরের মত ঝুলে বাসে উঠতে পারিনি সেটা কি চালকের দোষ? আমার ওজন আমি কমাতে পারিনি, ঝুলে ঝুলে বাসে উঠতে পারিনি সেটা কি চালকের দোষ? সব দোষ আমারই। বাসে যাত্রী উঠার পরে ছাড়তে হবে সেই শিক্ষা চালক পায়নি, আমার তো উচিত ছিলো বাদুর ঝোলা হয়ে বাসে উঠার অভ্যাস করার তাই মনে মনে ভাবছি দোষ আমারই।