ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Saturday, November 22, 2014

মামলার কোর্ট ফি (Advalorem Fees) নির্ধারণ পদ্ধতি

মামলা মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য আদালতকে একটা নির্দিষ্ট পরিমানে কোর্ট ফি দিতে হয়। এই ফি আইনজীবী ফি এর বাইরে মামলা দায়েরের খরচ। মামলা দায়েরের খরচ নির্ধারণ করা হয় Court Fees Act, 1870 সংশোধনী ২০১০ (২০১০ সনের ৪৫ নং আইন-১ আগষ্ট ২০১) এবং ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ এর এস,আর,ও নং-৩২৬-আইন/২০১০ অনুযায়। 
কোর্ট ফি নির্ধারণ পদ্ধতি:
কোন মোকদ্দমার মূল্যমান এর উপর বা দাবীর মূল্যমানের উপর কোর্ট ফি নির্ণয় করা হয়ে থাকে। 
তায়দাদের উপর ২%
উক্ত ২% এর উপর ১৫% ভ্যাট। মোট (২%+২% এর ১৫%= কোর্ট ফি)
 
মানি স্যুট বা অর্থঋণ মোকদ্দমা :
মানি স্যুট বা অর্থঋণ মোকদ্দমার ক্ষেতে সর্ব নিম্ন কোর্ট ফি হলো ৩০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ কোর্ট ফি হবে ৫০,০০০ টাকা। 
দেওয়ানী মোকদ্দমা:
দেওয়ানী মোকদ্দমার সর্বো নিম্ন কোর্ট ফি হবে ৩০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ কোর্ট ফি হবে ৪০,০০০ টাকা।
সাকসেশন মোকদ্দমা:
সাকসেশন মোকদ্দমায় ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত ফ্রি। পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১% এবং পরবর্তী ১৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ২%। 

যেমন: 
কোন মোকদ্দমার তায়দাদ ধরি ১৫,০০,০০০ টাকা।  এর কোর্ট ফি হবে
১৫,০০,০০০ টাকার ২%=৩০,০০০ টাকা
৩০,০০০ টাকার ১৫%= ৪,৫০০ টাকা
মোট কোর্ট ফি লাগবে ৩০,০০০+৪,৫০০=৩৪,৫০০ টাকা। 
 

Tuesday, November 4, 2014

আগাম জামিন (Anticipatory bail)

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ প্রত্যেক নাগরিককে জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা সংরক্ষণের অধিকার প্রদান করেছে, উক্ত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনে বর্নিত বিধান ব্যতীত জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার থেকে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। আইনের আরেকটি সাধারণ নীতি হল- “Everyone shall be presumed to be innocent unless he is found guilty by a competent court”. আইনের চোখে অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী নয়, আসামী মাত্র।সুতরাং বিশেষ কোন হেতু ভিন্ন কোন ব্যক্তিকে আটকের পর আদালত আইন ও তার সু-বিবেচনা মূলক এখতিয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতের আদেশমত নিদৃষ্ট স্থানে এবং নিদৃষ্ট সময়ে আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে সাময়িক মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারেন যাকে আইনের চোখে জামিন বলা হয়।ফৌজদারী কার্যবিধিতে জামিন প্রসঙ্গে ২ ধরনের অপরাধের কথা সু-স্পষ্ট ভাবে বর্ণিত হয়েছে—১) জামিনযোগ্য অপরাধ(৪৯৬ ধারা); এবং ২) জামিন অ-যোগ্য অপরাধ।(৪৯৭ ধারা)।এছাড়া, গ্রেফতার পূর্ব জামিন বা anticipatory bail নামীয় আরেক ধরনের জামিনের চর্চা হাইকোর্ট সহ দায়রা আদালতে হতে দেখা যায়।(ধারা-৪৯৮)

বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধি,১৮৯৮-এ আগাম জামিন সম্পর্কে সু-স্পষ্ট বিধান নেই। কিন্তু ৪৯৮ ধারায় উল্লেখিত “হাইকোর্ট বিভাগ ও দায়রা আদালত যে কোন ক্ষেত্রে যে কোন ব্যক্তিকে জামিন মঞ্জুর ---- নির্দেশ দিতে পারেন।“- শব্দগুলোর সম্প্রসারিত অর্থ দ্বারা আসামীকে ক্ষেত্রে বিশেষ জামিন প্রদান করে থাকেন। মূলতঃ আমদের দেশের আগাম জামিন সম্পর্কিত ৪৯৮ ধারার শিরোনামের দিকে তাকালে দেখা যাবে, “৪৯৮। জামিন মঞ্জুর ও জামিনের অর্থের পরিমাণ হ্রাসের ক্ষমতা”-‘র কথা বলা হয়েছে।অর্থাৎ ওই ধারাতে আগাম জামিনের বিধানের চেয়ে ’জামিনের অর্থের পরিমাণ হ্রাসের ক্ষমতা’-কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভারত সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ এদিক থেকে অনেক এগিয়ে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ভারতীয় ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৩৮/৪৩৯ ধারায় আগাম জামিন সম্প্রর্কে সু-স্পষ্ট ও কমপ্রিহেন্সিভ বিধান রয়েছে।

আগাম জামিন

ফৌজদারী কার্যবিধির অধীনে দুই ধরনের জামিনের চর্চা আছে, সাধারণ জামিন(Regular Bail) যা আসামীর আটকের পর আদালত কর্তৃক মঞ্জুর হয়; আর আরেক ধরনের জামিন হল আগাম জামিন (Anticipatory Bail) যা আসামীর গ্রেফতারের পূর্বে আদলত মঞ্জুর করে থাকেন। আগাম জামিনের আভিধানিক অর্থ গ্রেফতারের পূর্বেই প্রাপ্ত জামিন। আর্থাৎ গ্রেফতারের পূর্বে উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় কোন ব্যাক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালত আটককৃত ব্যক্তিকে যে জামিন মঞ্জুর করে থাকেন তাকেই আগাম জামিন বলা হয়।

আগাম জামিনের প্রয়োজনীয়তা

পূর্বে শত্রু পক্ষের কাউকে দমিয়ে রাখার জন্য যাদু-টোনা করা হত বলে শুনেছি; বর্তমানে যাদু-টোনার সেই স্থান দখল করে আছে মিথ্যা মামলা। যদি কোন ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে অপরাধী না হন তাহলে বিচারের পূর্বে গ্রেফতার ও কারাগারে দূর্বিসহ বন্দী জীবন কাটাতে বাধ্য করা ভিন্ন অর্থে অপরাধ প্রমানের আগেই শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করার নামান্তর। এবং এক্ষেত্রে আদালতই এ সকল নিরীহ মানুষগুলোর শেষ ভরসাস্থল। সুতরাং যে ক্ষেত্রে আসামী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, যে ক্ষেত্রে আসামীর এরুপ অপরাধে জড়িত হবার কোন স্বাক্ষর নেই বা আসামীর জামিনে মুক্তির পর পলায়নের কোন সম্ভাবনা নেই বা তাঁকে আইন শৃখলা বাহিনীর হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপক কোন কারন নেই, সে ক্ষেত্রে আসামীকে গ্রেফতারের পূর্বেই জামিনে মুক্তি দিতে আদালত কার্পন্য করবেন না।

আগাম জামিনের আইনি বিধানের পরীক্ষা

মূলতঃ ‘আগাম জামিন’ প্রত্যয়টিকে কিছু ক্ষেত্রে সমালোচকগন Misnomer বা ভূল ভাবে সংজ্ঞায়িত একটি প্রত্যয় হিসাবে অনেকে ব্যখ্যা করেন। কারণ,তাদের প্রশ্ন হল জামিনের অধিকারের সূত্রপাত কখন ঘটবে? – আসামী যখন আইন শংখলা বাহিনীর আইনগত হেফাজতে(Lawful Custody) থাকবে তখন থেকে। সেই হিসাবে কোন ব্যক্তি গ্রেফতারের পূর্বেই যখন জামিনের আবেদন করেন তখন তাকে Misnomer না বলে পারা যায় না। তবে, আমার হিসাবে যখন কোন ব্যক্তি আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছেন তখন তিনি মূলত আদালতের কাছে নিজেকে সমর্পণ করছেন এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজের মুক্তির জন্য আদালতের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন যার কারণে গ্রেফতারের পূর্ব থেকেই জামিন অনুমোদনের হিসাবে তথাকথিত অর্থে Misnomer বলা অনেকাংশে সমীচীন নয়।

যাই হোক,ভারতীয় সংবিধান সর্বপ্রথম যখন বলবৎ হয়েছিল ফৌজদারী কার্যবিধিতে তখন আমাদের দেশের মত আগাম জামিনের কোন সুস্পষ্ট বিধান ছিল না। সুতরাং আইনের অনুপস্থিতিতে, গ্রেফতারের পূর্বে কোন ব্যক্তিকে জামিন দেওয়া উচিৎ কিনা এ প্রশ্নে Varkey Paily Madthikudiyil (1967)- মামলায় কেরালা হাইকোর্ট মন্তব্য করেছিলেন,” যতক্ষন না কোন ব্যক্তিকে আটক আর্থাৎ লিগ্যাল কাস্টডিতে রাখা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জামিন মঞ্জুর করা যায় না।

Kartar Singh v. State of Panjab ,মামলায় পাঁচজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চে উত্তর প্রদেশের একটি আইনের বৈধতা যাচাই করা হয় এই মর্মে যে, আইনটিতে আগাম জামিনের প্রয়োগযোগ্যতার বিষয়ে কোন বিধান ছিল না। Constitutional Bench- উল্লেখ করেন যে, আগাম জামিনের বিধান বাতিল করা হয়েছে শুধু এই কারণে বলা যাবে না যে, উক্ত বাতিলের মাধ্যমে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের চর্চাকে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারতে সংবিধানের সাথে সংগতি বজায় রেখে রাজ্য সমূহ কেন্দ্রীয় কার্যবিধিকে ভিত্তি ধরে তাদের নিজস্ব কার্যবিধি সংক্রান্ত আইন গ্রহণ করতে পারে।

আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আদালতের বিবেচ্য বিষয়াবলী

সাধারণভাবে, জামিন অযোগ্য মামলায় জামিন আবেদনের শুনানী প্রসঙ্গে আদালত যে সকল বিষয় বিবেচনা করবেন আগাম জামিনের ক্ষেত্রে ও আদালত একই বিষয় সমূহ বিবেচনা করবেন। [19 DLR 39 (SC)] যাই হোক,আগাম জামিনের বিষয় সাধারণ জামিনের বিষয় থেকে একটু হলেও ভিন্ন এবং আগাম জামিনের আবেদন বিবেচনাকালে আদালত মোটাদাগে নিন্ম লিখিত বিষয় সমূহ বিবেচনা করতে পারেনঃ

১। উত্থাপিত আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং তর্কিত অভিযোগের নিবিড় বিবেচনায় আদালতের কাছে যদি এটি প্রতীয়মান হয় যে, আসামীকে উক্ত মামলায় কোন খারাপ উদ্দেশ্যে জড়ানো হয়েছে এবং ওই মামলায় গ্রেফতারের মাধ্যমে তাকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে অথবা আসামীকে উক্ত মামলার মাধ্যমে ক্ষতির মুখোমুখি করাই একমাত্র উদ্দেশ্য তাহলে আদালত তাঁকে গ্রেফতারের পূর্বেই নিজ বিবেচনায় জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।

২। আদালত আগাম জামিনের ক্ষেত্রে একটা অ-স্পষ্ট ও অ-নিদৃষ্ট(Blanket Order) মঞ্জুর নামা জারি করবেন না। আদালত এক্ষেত্রে সুনিদৃষ্ট অপরাধ ও অভিযোগ ও তৎপ্রসঙ্গে আবেদননামা বিবেচনা করতঃ শ্বুধুমাত্র তার ভিত্তিতেই জামিন মঞ্জুর করবেন। [ G. V. Prabhu v. State, (1975) CrlJ 1339-40 (goa)]

৩। আগাম জামিন মঞ্জুরের পূর্বে আদালত এটিই বিবেচনায় রাখবেন যে, উক্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ বা তথ্য উধঘাটনের জন্য আসামিকে পুলীশ হেফাজতে নেবার প্রয়োজন রয়েছে কিনা? যদি এরুপ প্রয়োজন বিবেচিত হয় তাহলে আদালত জামিন না-মঞ্জুর করতে পারেন।

৪। আদালতের আগাম জামিনের ক্ষমতাকে বলা হয় ‘Power of Extra Ordinary Nature)। সুতরাং, এটি বিশেষ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ব্যবহার করা উচিৎ। যদি আদালত এটি উপলব্ধি করেন যে, আসামী তার জামিনের সুযোগের অপব্যবহার করবেন না বা মামলা প্রভাবিত করবেন না সে ক্ষেত্রে আদালত আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।

৫। আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আসামীকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে। আগাম জামিনের আবেদন সাধারণত তাদের ক্ষেত্রে না-মঞ্জুর করা হয় যারা তদন্তকারী সংস্থাকে সহায়তা করেন না বা করার সম্ভাবনাও ক্ষীন, অথবা যাদেরকে ‘Custodial Interrogation’ প্রয়োজন অথবা যারা জামিনে মুক্ত থেকে মামলা প্রভাবিত করতে পারেন।

৬। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের আমল গ্রহণ করার পর এমন কি চার্জশীট দেওয়ার পরও আগাম জামিন মঞ্জুর করা যায় [Ravindra Saxena’s Case(2010) 1 SCC 684]। যদিও ভারতে H.D.F.C-মামলায় (2009) Reported as 2010 1 SCC 679 মামলায় ভিন্নমত পাওয়া যায়। এই মামলায় আদালত মন্তব্য করেন, “Once the accused in the Charge Sheet, he has to surrender to the custody of the Court and pray for regular bail.” অর্থাৎ, একবার আসামীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দেওয়া হলে তাকে নিন্ম আদালতে আত্নসমর্পন পূর্বক নিয়মিত জামিন চাইতে হবে। আমদের দেশে অবশ্য মামলার উভয় পর্যায়ে আদালত বিবেচনা প্রসূত আগাম জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।

৭। এজাহার দায়ের করা আগাম জামিনের পূর্ব শর্ত নয়। মামলায় চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে বা আসামীকে গ্রেফতারের জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে- শুধুমাত্র এই গ্রাউন্ডেই আসামীর আগাম জামিনের অধিকার খর্ব করা হয়েছে বলা যাবে না।

উপরোক্ত বিষয়সমূহ সহ অন্য অনেক বিষয়ের মধ্যে আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আদালত প্রধাণত নিন্মলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে থাকেন—

১। অভিযোগের প্রকৃতি ও ভয়াবহতা;

২। আবেদনকারীর পূর্বপরিচয় সেই সাথে আবেদনকারী পূর্বে কখনও আমলযোগ্য অপরাধে দন্ডিত হয়েছিল কিনা সেম্পর্কে তথ্যাদি;

৩। জামিন পেলে আসামীর পলায়নের কোন সুযোগ ও সন্দেহ আছে কিনা?;

৪। আসামীর গ্রেফতারের মাধ্যমে তাকে সমাজের চোখে হেয় করা হবে- এমন উদ্দেশ্য নিয়ে উক্ত মামলায় তাকে জড়িত করা হয়েছে কিনা এ মর্মে অভিমত।

অন্যান্য বিষয়ের সাথে উপরোল্লিখিত নিয়ামক সমূহ বিবেচনা পূর্বক পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত কোন মামলায় আসামীর আগাম জামিন মঞ্জুর বা না- মঞ্জুর করে থাকেন। এবং যেক্ষেত্রে আসামীর আগাম জামিনের দরখাস্ত না-মঞ্জুর করেন সেক্ষত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসামীকে গ্রেফতার করতে পারবেন।

আগাম জামিন আদেশের বলবতযোগ্যতার মেয়াদকাল

আমাদের দেশে সাধারণত জামিন মঞ্জুর কালে আগাম জামিনের মেয়াদ উল্লেখ করে দেওয়া হয় উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ৪ বা ৬ সপ্তাহের জন্য ইত্যাদি। সুতরাং মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে জামিনের মেয়াদ আদালত কর্তৃক বৃদ্ধি করা না হলে উক্ত মেয়াদান্তে জামিন বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়া, আদালত ইচ্ছা করলে এবং যুক্তি সঙ্গত মনে করলে মঞ্জুরকৃত জামিন আদেশ বাতিল করতে পারেন।

এক অপরাধের জন্য আগাম জামিন পেলে আসামীকে অন্য অপরাধের জন্য গ্রেফতার করা যাবে কিনা?

পূর্বেই বলা হয়েছে, আগাম জামিনের আবেদন করা হয় সু-নিদৃষ্ট কোন মামলা বা ঘটনা থেকে উদ্ভূত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতারের আশঙ্কা থেকে। সুতরাং, আগাম জামিন কোন এক বিশেষ ঘটনা বা মামলাকে সামনে রেখে আদালত কর্তৃক মঞ্জুর হয়। সুতরাং, সুস্পষ্টভাবে আসামীর যদি অন্য কোন আমল যোগ্য অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় যার জন্য তাকে জামিন মঞ্জুর করা হয় নি – এমন মামলায় তাকে গ্রেফতার করতে কোন আইনী বাঁধা নেই। Gurbaksh Sing Sibia v. State of Panjab, AIR (1978) P&H 1 মামলায় আদালত বলেন যে, “The exercise of power under this section is with regard to a specific accusation and cannot be extended in blanket fashion to cover all offences which the petitioner may come to be charged.”

ভূমি সংক্রান্ত কিছু শব্দ

ভূমি সংক্রান্ত সাধারণ কিছু পরিচিত শব্দ আছে। শব্দগুলো আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি কিন্তু তার সঠিক ইতিহাস বা অর্থ অনেকের জানা নেই। আসুন জেনে নেই এমন কিছু শব্দের উৎপত্তি, ইতিহাস ও ব্যবহার।
C.S(Cadestral survey)- ১৮৮৮  সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাংলায় একটি ভূমি জরিপ হয় যাকে সিএস জরিপ বলে। রামু থানা থেকে শুরু হয়ে দিনাজপুরে এ জরিপ শেষ হয়। এটাই ব্রিটিশ ভারতের প্রথম ভূমি জরিপ। এই জরিপে কৃত নকশাকে সিএস নকশা, খতিয়ানকে সিএস খতিয়ান বলে।
R.S(Revision survey)- ১৯৪০  থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সিএস জরিপের সংশোধনী জরিপকে আরএস জরিপ বলে। এই জরিপে কৃত নকশাকে আর.এস নকশা, খতিয়ানকে আর.এস খতিয়ান বলে।
S.A(State aquisition)- জমিদারী উচ্ছেদ হবার পর ১৯৫৬থেকে ১৯৬৩  সাল পর্যন্ত জমিদারদের নিকট থেকে অধিগ্রহণকৃত ভূ-সম্পত্তির হিসাব নির্ণয়ের জন্য যে জরিপ করা হয় তাকে এস.এ জরিপ বলে। এই জরিপে কৃত নকশাকে এস.এ নক্সা, খতিয়ানকে এস.এ খতিয়ান বলে।
R.S(Revision survey)- এস.এ জরিপের পর ১৯৬৫ সালে রাজশাহী হতে শুরু হয় ২য় আর.এস। এটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানব্যপি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা শহর জরিপে এসে আইনী জটিলতার কারণে এ প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। এই জরিপে কৃত নকশাকে আর.এস নকশা, খতিয়ানকে আর.এস খতিয়ান বলে।
D.C.R(Duplicate carbon receipt)- উন্নয়ন কর বহির্ভূত সরকারি আয়ের জন্য দেয় যা দাখিলা নয় তাই ডিসিআর। যেমন হাট, বাজার, জলাশয়, জলমহাল ইত্যাদির ইজারা বা বন্দোবস্ত প্রদানের রশিদ।
B.S(Bangladesh survey)- বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই জরিপের কাজ সমাপ্ত হলেও কিছু কিছু এলাকায় আইনী জটিলতায় এখনো এই জরিপ শেষ হয় নাই। সে মতে এটি এখন চলমান জরিপ।
Mutition বা জমা খারিজ- জমিন সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সাম্প্রতিক মালিকের নামে হালনাগাদ করাকে মিউটেশন বা জমা খারিজ বলে। ক্রয়কৃত ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে করা হয়।
খতিয়ান ও পরচা- ভূমির হিসাব যখন সরকারের রেজিষ্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত থাকে তখন তাকে খতিয়ান এবং ব্যক্তির নিকট থাকে তখন পরচা বলে। উভয় ক্ষেত্রে একই বিষয় উল্লেখ থাকে। খতিয়ানের নকলই পরচা।
দাখিলা- ভূমির খাজনা পরিশোধপত্রকে দাখিলা বলে। ১৯৭২ সাল থেকে ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভূমি মালিকানার খাজনা মওকুফ হলে ভূমির দখল স্বত্ব নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ১৯৮২ সালে এক সামরিক ফরমান বলে খাজনার পরিবর্তে একই হারে ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য করা হয়। উন্নয়ন কর পরিশেধের রশিদের নাম দাখিলা।
সায়রাত মহাল- যে যে ভুমির জন্য ডিসিআর প্রদেয় তা সায়রাত মহাল। যেমন- বাজার, ঘাট, জলমহাল, বালুমহাল ইত্যাদি।
মৌজা
মৌজা রাজস্ব আদায়ের সর্বনিম্ন একক। মোগল আমলে কোন পরগনা বা রাজস্ব-জেলার রাজস্ব আদায়ের একক হিসেবে শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হতো। একগুচ্ছ মৌজা নিয়ে গঠিত হতো একটি পরগনা । বিংশ শতাব্দীতে মৌজা শব্দটি ব্যবহৃত হয় সামাজিক একক গ্রামের বিকল্প নাম হিসেবে এবং এই নামটি বেশ জনপ্রিয়তাও লাভ করে।
ঊনবিংশ শতাব্দী এবং তারও পূর্বে মৌজা সামাজিক ও রাজস্ব উভয়েরই একক হিসেবে চিহ্নিত হতো। এমন অনেক মৌজা ছিল যেখানে সামান্য কয়েকটি বসতবাড়ি ছিল অথবা আদৌ কোন বসতবাড়ি ছিল না। মৌজা ছিল শনাক্তকরণের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য চিহ্ন। মৌজার অন্তর্গত নির্দিষ্ট পরিমাণ ভূমিতে ছিল গ্রামীণ বসতি বা স্থাপনা। অবস্থাভেদে এই বসতিগুলি ছিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে অথবা একস্থানে কেন্দ্রীভূত। কেন্দ্রীভূত স্থাপনাগুলি সামগ্রিকভাবে গ্রাম বা পল্লী নামে পরিচিতি লাভ করে। জরিপ বিভাগ এবং রাজস্ব আদায়কারী কর্মচারীদের নিকট তাই শব্দদুটির (মৌজা ও গ্রাম) দুটি স্বতন্ত্র অর্থ রয়েছে। রাজস্ব নির্ধারণ এবং রাজস্ব আদায়ের জন্য এক ইউনিট জমির ভৌগোলিক অভিব্যক্তি ছিল মৌজা। অন্যদিকে গ্রাম ছিল মৌজার অন্তর্ভুক্ত শক্ত সামাজিক বন্ধনে গঠিত মনুষ্যবসতি। এভাবে একটি মৌজার অন্তর্গত একের অধিক গ্রাম থাকতে পারত এবং একইভাবে, একটি গ্রাম সন্নিহিত দুটি মৌজা নিয়ে গঠিত হতে পারত। বঙ্গদেশের পাললিক সমভূমিতে কেন্দ্রীভূত রীতিতে গ্রামবসতি খুব কমই গঠিত হয়েছে। ব্যক্তিক কৃষক পরিবার উন্মুক্ত মাঠে তাদের নিজস্ব ভূমির উপর বাস্তুভিটা নির্মাণ করা সুবিধাজনক মনে করত। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাকেরগঞ্জ জেলার সমতল ভূমিতে কদাচ গুচ্ছ বা কেন্দ্রীভূত গ্রাম ছিল। প্রতিবেশিতার বিষয় বিবেচনা না করেই এসব বসতবাড়ি নির্মাণ করা হতো। কিন্তু সিলেট ও ময়মনসিংহ জেলায় বিষয়টি এরকম ছিল না। সেখানে নদীতীরের উঁচু জমিতে কৃষকরা বৃহদাকার কেন্দ্রীয় গ্রামবসতি স্থাপন করত। উত্তরবঙ্গের জেলাসমূহে কতিপয় জলাশয়ের (পুকুর, দিঘি, ইত্যাদি) চারদিকে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা ছিল সাধারণ বৈশিষ্ট্য। একইভাবে, পরবর্তীকালে বঙ্গদেশের জেলাসমূহে ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ পরিচালনাকালেও মৌজাকে সর্বনিম্ন রাজস্ব একক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। স্থানীয় রাজস্ব নকশায় জুরিসডিকশন লিস্ট (জেএল) এবং রেভিনিউ সার্ভে (আরএস) নম্বর দ্বারা একটি মৌজা শনাক্ত করা হতো। জরিপ বা সেটেলমেন্টের রেকর্ডপত্রে মৌজা শব্দটির ব্যবহার এখনও প্রচলিত।