ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Wednesday, December 12, 2018

মহিলার হাতে রিক্সা চালক নির্যাতন ও ভাইরাল ভাবনা


ভাইরাল। কথাটার মধ্যেই কেমন যেন একটা ভাইরাস ভাইরাস গন্ধ আছে। ভাইরাস (Virus) সম্পর্কে যদি একটু খোজ খবর নেন তবে জানবেন, ভাইরাস হলো এক প্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা বা অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভিতরেই বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এরা অতি-আণুবীক্ষণিক এবং অকোষীয়। ভাইরাসকে জীব হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দ্বিমত আছে। ভাইরাস মানুষ, পশু-পাখি, উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। এমনকি, কিছু ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে-এদের ব্যাক্টেরিওফাজ (Bacteriophage) বলা হয়। ভাইরাস ল্যাটিন ভাষা হতে গৃহীত একটি শব্দ। এর অর্থ হল বিষ। আদিকালে রোগ সৃষ্টিকারী যে কোন বিষাক্ত পদার্থকে ভাইরাস বলা হত। বর্তমান কালে ভাইরাস বলতে এক প্রকার অতি আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুকে বোঝায়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর বহু রোগ সৃষ্টির কারণ হল ভাইরাস। ভাইরাস কে জীবাণু না বলে 'বস্তু' বলা হয়। কারণ, জীবদেহ কোষ দিয়ে গঠিত , কিন্তু ভাইরাস অকোষীয়। ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে সক্ষম। 

আর বর্তমানে ফেসবুক ভাইরালও দ্রুত ছড়িয়ে যায়। সম্প্রতি ঢাকায় এক রিক্সা চালককে এক মহিলা দ্রুত রিক্সা চালাতে না পারার অভিযোগে মারধর করে। এক পর্যায়ে পথচারিরা বিতর্কে জড়ালে তাদের সাথেও মহিলা খারাপ আচরণ করে। একজন মহিলার এমন আচরন আমাদের সবাইকে হতবাক করেছে। একজন মহিলার কাছ থেকে এমন আচরণ কারোরই কাম্য নয়, যেমনটি নয় আমার।

একজন প্রায় স্থুলকায় মহিলাকে রোগা পাতলা রিক্সা চালক কতটুকু দ্রুতইবা টেনে নিতে পারে? মহিলার হয়তো জরুরী কোন কাজ ছিলো। কিন্তু জরুরী কাজের জন্য দ্রুত যেতে হলে তাকে অন্য বাহন বেছে নেয়া উচিত ছিলো, রিক্সা দিয়ে কি টেক্সির দ্রুততা আশা করা যায়? অথচ মহিলা সেটাই আশা করেছেন। তার চেয়ে বড় কথা হলো একজন ভদ্র মহিলার যে আচরণ থাকার কথা ঐ মহিলার মধ্যে সেই আচরণ দেখা যায়নি। সে যেভাবে রিক্সা চালককে মারধর করেছে, উচ্চ স্বরে গালাগাল দিয়েছে, প্রতিবাদী পথচারিদের সাথে যে আচরণ করেছে তা দেখলে কেউই মহিলাকে ভদ্র মহিলা সম্বোধন করবে বলে মনে হয় না, তাই আমিও বার বার মহিলাই লিখছি ভদ্র মহিলা লিখলাম না। 
ঘটনাটা ঘটার পর ফেসবুকে আসলে মূহুর্তেই হয়ে যায় ভাইরাল। বড় বড় মিডিয়াও ভিডিও সহ সংবাদ প্রচার করতে থাকে। প্রশ্ন উঠে কে এই মহিলা, কি তার পরিচয়, কোন দল করে, শুধুই মহিলা না গণিকা? কারন হচ্ছে, আমাদের দেশের জল-হাওয়ায় বেড়ে উঠা ভদ্র মহিলারা এভাবে প্রতিবাদ করতে অভ্যস্ত নয়। প্রতিবাদ করলেই নারীর জাগরণ ঘটেছে বলা যাবে না, প্রতিবাদ হতে হবে যৌক্তিক, শালীন, ভদ্রচিত, মার্জিত, আচরন হতে হবে রুচিশীল যার ছিটেফোটাও মহিলার মধ্যে আছে বলে মনে হয়নি। 
ফেসবুকে প্রচারের সাথে সাথে সুযোগ সন্ধানী মানুষ মহিলার ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি, পেইজ খুলে প্রোফাইলে বিএনপির নেত্রী, আওয়ামীলীগ নেত্রী বানিয়ে ফেলেন। সেই আইডি থেকে পোষ্টও দেয়া হয়, ‘আমি বিএনপি নেত্রী, বিএনপি নেতার ভাগ্নে,’ ‘আমি আওয়ামীলীগ নেত্রী, আমার বিষয়ে পোষ্ট দিলে মামলা করবো।’ বাস্তবে খোজ নিয়ে দেখা যায় আইডিগুলো সবই ঘটনা প্রচার পাওয়ার পর পরই ওপেন করা হয়ে। যা ভাইরাসের মত ছড়িয়েছে। 
সবচেয়ে বড় কথা হলো, সে আওয়ামীলীগ করুক বা বিএনপি করুক, মহিলা হোক বা পুরুষ তাতে তার কর্মের সাথে কি সম্পর্ক? একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে, ‘আগুন খাইলে আঙ্গার ত্যাগ করতে হয়।’ সে অপকর্ম করেছে, মানুষকে হেয় করেছে, অপমান করেছে তার মানে সে ভদ্রতা শিখেনি। এই কারনে যদি কিছুটা দোষ হয়ে থাকে তবে সেটা তার পিতা-মাতার দোষ। কারন প্রথমত এমন কন্যা পয়দা করে তারা ভুল করেছে, দ্বিতীয়ত পয়দা করার পর নৈতিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সবকিছুর মধ্যেই আমরা দলকে টেনে আনি। আওয়ামীলীগ-বিএনপি আমাদের দেশের বিশাল দুই দল। এতবড় দলে লুচ্চা, বদমাইশ, পাজি, সুবিধাবাদী যেমন আছে, তেমনি দেশ প্রেমিক, নিবেদিতপ্রাণ, হাজি, ইমাম, শিক্ষাবীদও আছে। 
তাই, ভাইরাল ভাবনায় আমরা দলকে না টেনে ব্যক্তি যদি কোন অপরাধ করে থাকে সেই বিষয়টা বিবেচনায় আনলে মহিলা হয়তো ভবিষ্যতের জন্য সংশোধন হতে পারে। 

No comments:

Post a Comment