ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Friday, February 9, 2018

পথের পদ্য ॥ ২ ॥ আসাদুজ্জামান জুয়েল


জোকের তেল, তাবিজ-হালুয়া আর কত কাল?
॥ ০১ ॥
নিয়াজ সাহেব ফুটপাত দিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ থেমে গেলেন। পাশেই একটি জটলা। গোল হয়ে উৎসুক মানুষের ভির। কথার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কৌতুহল আটকে রাখতে পারলেন না। নিয়াজ সাহেব তাকালেন ভিরের দিকে।
ভিরের দিকে তাকাতেই তার চোখ আটকে গেলো একটি লাল প্লাস্টিকের বড় বলের দিকে। বল ভর্তি তরতাজা জোক কিলবিল করছে। গ্রামে এই জোকগুলোকে বলা হয় করাতি জোক। ময়লা আবর্জনা ভর্তি পুকুরে নামলে এই জোকগুলো পায়ের সাথে লেপটে থাকে। রক্ত চোষা জোকগুলো মুহুর্তেই মোটা হয়ে যায় রক্ত খেয়ে। দেখলেই কেমন গা ঘিন ঘিন করে!
নিয়াজ সাবে কৌতুহল নিয়ে দাড়িয়ে গেলেন। দেখলেন বল একটি নয় পাঁচটি। প্রতিটি বলে হাজার হাজার জ্যান্ত জোক। কিলবিল করছে। দেখলেই কেমন গা গুলায়! একটার গা বেয়ে আরেকটা বলের প্রাচীর বেয়ে উপর উঠে আসার চেষ্টা করছে পেট মোটা জোকগুলো। জোকগুলো বল বেয়ে বেয়ে উঠে যেতে চাইছে বাইরে। যেই না উঠতে চাইছে অমনি এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে বলের কাধে বাড়ি দিলো। আর অমনি উঠতে থাকা লকলকে জোকগুলো ঝর ঝর করে পড়ে গেল বলে রাখা পানিতে। ছোট খাট একটি জটলা। লক লকে রোগা পাতলা একজন লোক। বিদঘুটে চেহারা। জোক দেখলে যেমন গা ঘিন ঘিন করে তেমনি লোকটাকে দেখলেও গা ঘিন ঘিন করে। তেল চিটচিটে একটি ফতুয়া পড়া। পান খাওয়া দাত। তরমুজের বিচির মত দেখতে। মুখে কাচাপাকা দারি। লোকটি প্লাস্টিকের মোড়ার উপর বসা। হাতে একটি তেলতেলে লাঠি। লাঠিটাই তার প্রধান হাতিয়ার। কোন কিছু দেখাতে লাঠিটা ব্যবহার করছেন। আবার প্লাস্টিকের বল বেয়ে উঠে যাওয়া জোকগুলোকে নামাচ্ছেন। লাঠি দিয়ে বলের উপর বাড়ি মারলে মন্ত্রের মত কিছু জোক সুর সুর করে নেমে যাচ্ছে আর কিছু জোক যেন লাফ দিয়ে বলের পানিতে ঝাপ দিচ্ছে। মোড়ায় বসে লাঠি হাতে লোকটা লেকচার দিচ্ছে। তাদের কথাকে সবাই লেকচার আর তাদেরকে সবাই লেকচারার বলেই ডাকে।
না, এই ব্যাক্তি পিএসসির মাধ্যমে বিসিএস দিয়ে লেকচারার হননি। আবার বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও লেকচারার নন তিনি। তিনি রাস্তার লেকচারার। রাস্তায় লেকচার দিতে দিতে লেকচারার হয়েছেন। কথায় আছে না? বকতে বকতে হয় বক্তা, আর পিটাতে পিটাতে হয় তক্তা! উনি বকতে বকতে বক্তা অর্থাৎ লেকচারার হয়েছেন!
তো, লেকচারার সাহেব বসে আছেন লাঠি হাতে। বলগুলি ভর্তি জোক। একটা বড় প্লাষ্টিকের কাগজ বিছানো। তার চতুর্দিকে সারি সারি বয়াম। বয়াম ভর্তি বড় সাইজের জোক। এক একটি জোকের সাইজ হবে আট থেকে দশ ইঞ্চি। দেখলে মনে হবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে জোকগুলো।
নিয়াজ সাহেব দাড়িয়ে পড়লো জোকগুলো দেখে। জোক দেখে তার গা ঘিন ঘিন করতে লাগলো। তবুও দেখার ও লেকচার শোনার ইচ্ছা সংবরণ করতে পারলো না। লেকচারার সাহেব তার লেকচার শুরু করলো-
-ভাই সাব। জীবনে অনেক কিছু দেখেছেন আর অনেক কিছু শুনেছে আবার অনেক চিকিৎসা নিয়েছেন। কোন ওষুধে কাম হয় নাই। আমার কাছে আজ শুনে যান কিভাবে সফল হবেন। ওষুধ কিনতে হবে না। শুনলে কিনতে হয় না, দেখলে ও কিনতে হবে না। কেনা না কেনা আপনার ব্যাপার! নিয়মটা শুনে যান কিভাবে বানাইবেন আর কিভাবে ব্যবহার করবেন। এই জোকের তেল ব্যবহার করলে ---শক্ত মজবুত হবে। ব্যাথা বেদনা দুর হবে।
প্লাস্টিকের বলের উপর তেলতেলে লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরে বললেন-
যাবেন না। নিয়মটা শুনে যাবেন। আমার এই ঔষধের নিয়ম জানলে ঔষধ আর নিয়ম না জানলে বিষ। তাই নিয়মটা শুনে যাবেন। 
এভাবে প্রায় অর্ধশত রোগের নাম বললো যা কিনা অনেক এমবিবিএস ডাক্তাররাও ভাল করার কথা বলতে পারে না। সেই সব রোগের জন্য লেকচারার সাহেব শতভাগ গ্যারান্টিসহ চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিলেন।
একটু দম নিয়ে লেকচারার সাহেব আবার শুরু করলেন-
ঃ আমার ওষুধ আপনাদেরকে কিনতে হবে না। নিয়মটা শুনে যান। আর ওষুধ বানানের পদ্ধতিটা জেনে যান। নিজে বানাইয়া ব্যবহার করবেন। ভাল না হলে মুখের উপরে ছুড়ে মারবেন। এই দেহেন, এরকম দুইটি মোটা জীবন্ত জোক নিবেন। জোক দুটির মুখে লবন দিয়ে মেরে একটি ঝুনা নারিকেল (পাকা নারিকেল) নিবেন। নারিকেলের মুখ ছিদ্র করে পানি ফেলে দিবেন। চাইলে পানিটা নিজে খেতে পারেন অথবা আপনার বিবি বাচ্চাকেও খাওয়াইতে পারেন। পানি শেষ হলে এই জোক দু'টাকে ভিতরে ভরবেন। এর সাথে ভরবেন পারদ, ---- সহ ---
এভাবে আট দশটি উপাদানের নাম বলে একটু দম নিলেন। প্লাস্টিকের বলের ঘারে বাড়ি মারতে মারতে আবার শুরু করলেন।
এর পর নারিকেলের মুখটা বন্ধ করে আমাবষ্যা-পূর্ণিমার মাঝামাঝি রাতে কালিঘাটে গিয়ে এক নিশ্বাসে মাটির নিচে পুতে রাখবেন। রাতটা যেন শনিবার হয়। এর পর তিন মাস পরে আবার শনিবার রাতে তুলে আনবেন। হাতল ছাড়া ভোতা দা দিয়ে এক কোপে কেটে নারিকেল দুই ভাগ করে ফেলবেন।
মনে রাখবেন কোপ দেয়ার সময় নিঃশ্বাসটা যেন বন্ধ থাকে। আর কাটবেন এক কোপে! সামচুর মত কোপাইলেই হইবো না।
কাটার পরে দেখবেন ভিতরে ক্যাদার মত হয়ে গেছে। সেই ক্যাদার মত বস্তু এক নিশ্বাসে তুলে একটি মাটির পাতিলে এক পোয়া সরিষার তেল, এক পোয়া তিলের তেল, ----- দিয়ে মাটির পাতিলে মাটির চুলায় তেতুলের লাকরি (চলা কাঠ) দিয়ে ভাল করে জাল দিতে হইবো।
মনে রাখবেন, গ্যাসের চুলায় রানলে কিন্তু হইবো না। এর পর যেই তেল বাইর হইবো সেই তেল নতুন একটা গামছা দিয়া ছাকবেন। ছাকা তেল দিয়া মালিশ করবেন। ঘা, প্যাচরা, দাউদ, একজিমায় লাগাইবেন। রাতে খাউজাইয়া রাতেই লাগাইবেন সকালে কইতে পারবেন না কোন খানে খাউজাইছেন আর কোন খানে লাগাইছেন। এত ভাল কাজ করবো। ইনশআল্লাহ। ভাল নিয়ত করে লাগাইবেন। দেখবেন সকল রোগ ভাল হয়ে গেছে।
ভাই সাব। আমি আগেই কইছি, আমার ওষুধ নিয়ম জানলে ওষুধ নিয়ম না জানলে বিষ!। সেদিন হাটে থেকে এক লোক ওষুধ কিনছে। পরদিন তার পুতেরে লইয়া আইছে। বলে, মিয়া কি ওষুধ দিছেন? পুতের বিচি ফুইল্যা গেছেগা! আমি কইলাম, ক্যা কি হইছে? লোকটায় কয় ওষুধ লাগানোর পর তার পুতের বিচি ফুইল্যা ঢোল হইয়া গেছে! আমি জিগাইলাম কেমনে ব্যবহার করছেন? লোকটায় কয়, ক্যান? আপনি যেমনে বলছে তেমনেইতো লাগাইছি।
আমি জিগাইলাম কেমনে লাগাইতে কইছি কনদিহি?
লোকটায় কয় প্রথমে হারিকেনের উপর পুতের বিচি গরম করছি, তারপর তেলডা লাগাইছি। এহন দেহি পুতের বিচি ফইল্যা বড় ঢোল হইয়া গেছে।
এইবার বোঝেন অবস্থা! আমি কইছি, হারিকেনের উপর তেলডা গরম কইরা বিচিতে লাগাইতে আর উনি বিচি গরম কইরা তেল লাগাইছে! দোষ কি আমার ভাই সাব? তাইতো বলি নিয়ম না জানলে বিষ।
তবে ভাই আর একটা কথা, আমার ওষুধ ঘারে ব্যাথায় লাগাইবেন, মাজায় ব্যাথায় লাগাইবেন, পিঠে ব্যাথায় লাগাইবেন কিন্তু মনের ব্যাথা হলে লাগাইবেন না। এ ওষুধ মনের ব্যাথা সারে না।
কিন্তু ভাই সাব। আমি জানি আপনারা এত কিছু জোগার করতে পারবেন না। একটা যদি ভুল হয় তবে ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই আমি আপনাদের কথা ভেবে তৈরী করে রেখেছি। মূল্য এক দাম পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু প্রচার পাবলিসিটির জন্য আজ পঞ্চাশ টাকা নেব না। আজ একদম পানির দরে দিয়ে যাব দু’একটা কাস্টমার ধরার জন্য। আমার ওষুধে যদি রোগ ভাল হয় তবে দু’একটা রুগি আমারে আপনারার দিবেন না বাজান? আমি জানি দিবেন। তাই একে দুই ভাগে ভাগ করে এক ভাগ ফেলে দিলাম। বাবারা হাতে থাকে কত? জোরে বলুন।
পাঁচ-ছয়জন লোক বলে উঠলো-
ঃ পচিশ টাকা।
ঃ পচিশ টাকাকে পাঁচ ভাগ করে দুই ভাগ ফেলে দিলাম। থাকে কত?
ঃ পনের টাকা।
ঃ হ্যা! পনের টাকা দিয়ে এখন সর্ব প্রথম যে ভাই আমারে সরমান (সম্মান) করবেন আমি তাকে এমন একটা সরমান করবো যা আপনি ভাবতেও পারছেন না।
প্রথম একজন হাত তুলতেই একে একে দশ-বার জন হাত তুলে দাড়িয়ে গেল। বেশ ভালই বিক্রি হলো। নিয়াজ সাহেব হতাশ হয়ে চলে গেল তার কাজে। যেতে যেতে ভালছেন, এও কেনে মানুষ? কিভাবে সহজ সরল মানুষগুলোকে ঠকাচ্ছে আমাদের চোখের সামনে।

॥ ০২ ॥
বিশিষ্ট আলেম মানুষ। চারমুষ্ঠি দাড়ি। কাঁচা-পাকা দাড়িতে মেহেদী দেয়ায় বেশ ভালই লাগছে। নূরানী চেহারা দেখলেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করবে। সামনে নানান রকম জিনিস নিয়ে বসে আছেন। একটা করে ধরেন আর একদমে বলে যান-
ঃ এটা ধনেশ পাখির ঠোট, একটু দিয়ে দিলাম; এটা মহা সমুদ্রের কট মাছের কাটা, একটু কেটে দিলাম; এটা বনরুই এর ছাল, একটু কেটে দিলাম; এটা কুলুকুলু গাছের ছাল, একটু কেটে দিলাম; এটা ফাঁসির দড়ি, একটু কেটে দিলাম; এটা জারজ মানুষের হাড়, একটু কেটে দিলাম; --- ।

এভাবে প্রায় পঞ্চাশ ধরনের জিনিস একটু কেটে দিলাম-একটু কেটে দিলাম বলে কেটে দিলো। এরপর কিছু কাগজ পেচিয়ে একটা তাবিজ তৈরী করলো। একটা মাদুলিতে ভরে বলে-
ঃ ভায়েরা। নিজের চোখে দেখলেন কতগুলি আইটেম একটু করে কেটে দিয়ে দিলাম। এর হাদিয়া যদি হাজার টাকাও ধরা হয় তবে এর মূল্য দেয়া হবে না। শুধুমাত্র আপনাদের কথা ভেবে এর হাদিয়া নেব দশ টাকা চার আনা। এক দাম এক রেট। কোন দামাদামি নেই। এটা তেলে চুবাইয়া গায়ে মাখবেন, গায়ের রং ফর্সা হবে। পানিতে চুবাইয়া পানি খাইবেন পেটের সকল ওষুক ভাল হইবো। গলায় বাধবেন- ভাল গান গাইতে পারবেন, হাতে বাধবেন- হাতে শক্তি বাড়বো। কিন্তু মাজায় বাধবেন না। যে যেই নিয়ত করে বাধবেন ভাল হয়ে যাবে ইনশআল্লাহ। একশত ভাগ গ্যারান্টি। ভাল হয় নাই এমন প্রমান এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারে নাই। দিতে পারলে মূল্য ফেরৎ। আর আমি জানি কেউ দিতে পারবেও না।
এখানেও একজন প্রথম ‘সরমান’ করার জন্য দাড়িয়ে গেলো। এর পর আর ক্রেতার অভাব হলো না। সরলমতি-কোমলমতি সাধারণ লোকের কান্ড দেখে হতাশ নিয়াজ সাহেব দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে চলে গেল।

॥ ০৩ ॥
বিশাল একটি লাল ত্রিপল বিছিয়ে তার উপর চলচ্চিত্রের ফিল্ম রাখার বক্সে ভরা বিভিন্ন শুকনা দ্রব্য। এক একটা দেখাচ্ছে, তার নাম ও গুনাগুন বলছেন হাকিম সাহেব। না। এই হাকিম কোন হুকুম করার হাকিম না। ইনি ইউনানী দাওয়াখানার চিকিৎসক বিশিষ্ট হারবাল গবেষক! হেকিম আবদুল কুদ্দুস মিয়া। পাত্রে সাজানো দুই শতাধিক দ্রব্য দেখিয়ে পাশে রাখা দশ-বারটি হরলিকস এর বয়াম ভর্তি গুরা একটা চকচকে স্টিলের বলে রাখলো। সেই সাথে কিছুটা মধু, ঘি, কিসমিস দিয়ে মাখালেন। এর পর নাম না জানা অপরিচিত কিছু গুরা দিলেন। দেয়ার সময় এক একটি দেখিয়ে বললেন-
ঃ এটার নাম বাতাসের আগা, আর এটার নাম রৌদ্রের গুরা। আর এখন দিচ্ছি কিছু পাহাড়ের ঘাম।
এই সব মিশিয়ে তৈরী হলো এক অনন্য হালুয়া। যা দেখতে অনেকটা চাটনির মতো। হাকিম সাহেব ঘোষনা দিলেন এই হালুয়া খেলে নব্বই বছরের বুড়ার বয়স মনে হবে আঠারো কি উনিশ। আর বার বছরের কিশোর খেলে বিশ কি বাইশ বছরের যুবকের মত উন্মাদ হয়ে যাবে। ওষুখ থাকলেও খাবেন আর না থাকলেও খাবেন। যতবড় কোষ্ঠকাঠিন্যই হোক না কেন এটা খেলে বাথরুমে যেয়ে কোৎনা দিতে হবে না। শুধু পিছনের কাপড়টা তুলে বসলেই হবে। দেখবেন ওষুধের কেরামতি। খেয়ে আপনি রাতে ঘুমাবেন কিন্তু আমার ওষুধ ঘুমাবে না। আমার ওষুধ সমানে কাজ করবে।
চটকদার কথা শুনে রিক্সা চালক, শ্রমজীবি টাইপের লোকজন ত্রিশ টাকা, পঞ্চাশ টাকা মূল্যের বিভিন্ন ফাইল কিনে নিলো। সর্ব রোগের মহৌষধ মাত্র ত্রিশ টাকা-পঞ্চাশ টাকা। এ সুযোগ হাত ছাড়া করাটাই যেন বোকামি!
নিয়াজ সাহেব বোকা বনে গেলেন। হায়রে বোকার দল! এগুলো খেলে এমনিতেই পেট খারাপ হয়ে পেট নেমে যাবে। কষাতো থাকবেই না নির্ঘাৎ ডায়রিয়া হয়ে যাবে।
বন্ধুরা, উপরের তিনটা ঘটনা কোন গাল গল্প নয়। আমাদের দেশের পথের ধারের বাস্তব ঘটনা। এভাবেই প্রশাসনের নাকের ডগায় আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সকল রোগের ঔষধ হিসেবে ফুটপাতের লেকচারারদের পাতা ফাঁদে ধরা দিয়ে কিনে নিচ্ছে নানান তেল-মালিস করার জন্য, নিচ্ছে তাবিজ, খাচ্ছে হালুয়া আপদ-বালা-মুসিবত থেকে ভাল হবার জন্য।
সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কেনই বা তারা এসব কিনে নিচ্ছে। ব্যবহার করে অপ চিকিৎসার শিকার হচ্ছে। আসলে অজ্ঞতা, অশিক্ষার সাথে সাথে সরকারের অবহেলা কি নাই। আছে। সরকার যদি যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারতো। চিকিৎসক নামের একশ্রেণীর কিছু কষাই এর হাতে যদি রোগিকে জবাই হতে না হতো তবে কেউ এই সর্টকাট চিকিৎসায় উৎসাহী হতো না। আমাদের যেমন শিক্ষার অভাব আছে। আছে অবকাঠামোর অভাব। তেমনি আছে চিকিৎসকদের মানসিকতার অভাব। চিকিৎসকদের সুচিকিৎসা এখন সেবা নয় পন্য হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা যদি অজ্ঞ, সহজ, সরল রোগিদের হাসপাতালমুখি করে সঠিক চিকিৎসা নিতে উৎসাহী না করে তবে তারা হাসপাতাল বিমুখ থেকেই যাবে। আর রাস্তায় দাড়িয়ে কিনবে জোকের তেল, তাবিজ আর হালুয়া।
আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের? আসুন সবাই মিলে সচেতন হই। অসুখ বিসুখ হলে চিকিৎসকের সরনাপন্ন হই। সকল চিকিৎসকই খারাপ না। গুটিকয়েক অপচিকিৎসকের কারনে মানুষ হতাশ হচ্ছে। এখনো অনেক চিকিৎসক আছে যারা সমাজকে দিয়ে যাচ্ছে। অপ চিকিৎসা থেকে দুরে থাকি এবং সবাই মিলে অপ চিকিৎসা থেকে দুরে থাকি এবং সবাই মিলে অপচিকিৎসকদেরও মানসিক চিকিৎসা করাই।



ছেঁড়া দুই টাকার নোট .....
কেমন আছেন?
জাবেদ সাহেব রিভলবিং চেয়ারে বসা। চোখ আধ বোজা, একটু একটু দোল খাচ্ছিল। প্রশ্নটা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলেন। এক গাল অরেঞ্জ ফ্লেভারের হাসি হেসে উত্তর দিলেন-
ঃ ভাই ছেঁড়া দুই টাকার নোটের মত আছি আরকি।
উত্তরটা শুনে একটু অবাকই হলাম। এটা আবার কেমন ভাল থাকা! জিজ্ঞেস করলাম-
ঃ তার মানে ?
ঃ মানে? মানে বাসে বলেন, দোকানে বলেন, যেখানেই যাবেন ছেঁড়া ফাটা দুই টাকার নোটের অবস্থা খারাপ হলেও চলছে। আমার অবস্থা অনেকটা তাই। ভাল না হলেও জীবন চলে যাচ্ছে একরকম।
কথাটা জাবেদ সাহেব মন্দ বলেননি। দুই টাকার নোটের যা অবস্থা! ছেঁড়া, ময়লা, দেখলেই মনে হবে বাংলাদেশের এই দুই টাকার নোটের উপর দিয়ে সিডর বয়ে গেছে বার বার। ধ্বংসের ছাপটা তাই স্পষ্ট।
দুই টাকার নোটের মূল্যমান যদিও দুই টাকা অর্থাৎ দুই শত পয়সা এটা সবারই জানা। যে বিষয়টা না জানেন সে হয় শিশু নয় পাগল। কিন্তু দুই টাকার একটি নোট জোড়া দিতে অনেক সময় দেখা গেছে পচাত্তর পয়সার আঠা, পচিশ পয়সার স্কচ টেপ, কখনওবা কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে। দুই টাকার একটি নোটে দুই থেকে দুই দশে বিশটি জোড়া তালি পেলে অবাক হওয়ার কোন কারন নেই। বরং কোন দুই টাকার নোটে যদি জোড়া তালি না পাওয়া যায় তবে ভাবতে হয়;
হায়! দেশের জালিয়াত চক্রের মাথা বুঝি গেছে! দুই টাকার মত মূল্যমানের নোটেরও কি শেষ পর্যন্ত জাল ছেপে নিলো? হ্যাঁ! নতুন দুই টাকার নোট দেখলে জাল কিনা সেটাই চিন্তা করে প্রথম!!
তবে নোট যতই ছেঁড়া বা ফাটা হোকনা কেন তার কদর আছে। বাসের কণ্ট্রাক্টরকে যতই ছেঁড়া-ফাটা নোট দেন কোন সমস্যা হবে না। মামা ডেকে প্লাস্টিকের হাসি হেসে সাদরে গ্রহন করবে টাকাটা। আবার যখন ভাংতি দেবে তখন ঐ দুই টাকার ছেঁড়া-ময়লা নোটই আপনাকে ধরিয়ে দেবে। যদি নিতে না চান তবে হাসি মাখা মুখে বলবে-
ঃ মামা নেন। না চললে আমারে ফেরৎ দিয়েন।
ঃ তোমাকে পাব কোথায়?
ঃ গাড়ির নাম্বারটা লেইখা লন! কোন সমস্যা হইবো না।
ঃ তোমার তো সমস্যা নাই, সমস্যা তো আমার।
ঃ মামা আমারতো সমস্যা নাই, আপনারও সমস্যা হইবো না।
তবে সত্যিই কোন সমস্যা নাই। যাকে দেই তাকেই বলি সমস্যা নাই। যে দেয় সেই বলে সমস্যা নাই। সত্যিই এক সময় ছেঁড়া দুই টাকার নোট এতটা ‘চল’ হয়ে গেল যে কয়েন পকেট থেকে পড়ে যাবে ভেবে মানুষ ছেঁড়া দুই টাকার নোট চেয়ে নেয়া শুরু করে।
ছেঁড়া টাকার কথা বলতে বলতে ছেঁড়া টাকা নিয়ে তৈরী করা একটা বিজ্ঞাপন চিত্রের কথা মনে পড়লো। ভালই লেগেছে দেখে, আপনাদেরও নিশ্চই মনে আছে!!
এক ভদ্র মহিলা বাজারে গিয়ে দোকানির কাছ থেকে কিছু তরি-তরকারি, শাক-সবজি কিনলেন। যার মূল্য হলো-ধরুন আটানব্বই টাকা। দোকানিকে ভদ্র মহিলা একশত টাকার একটি তরতাজা কচকচে নতুন নোট দিলেন। দোকানি ভদ্র মহিলাকে দিল ছেঁড়া দুই টাকার একটা নোট। তা আবার যেন তেন নোট নয় সিডরে বিধ্বস্ত দুই টাকার নোট! নোট দেখে ভদ্র মহিলাতো ক্ষেপে গেলেন। রাগে ক্ষোভে গজরাতে গজরাতে বললেন-
ঃ আরে! আপনাকে এত সুন্দর একটা নতুন নোট দিলাম। অথচ আপনি আমাকে এমন একটা ছেঁড়া ফাটা নোট দিলেন? বদলে ভাল একটা নোট দেন। এটা চলবে না।
দোকানি বললো-
ঃ কন কি আফা! চলবো। দুই টাহার নোট আবার অচল আছে নাকি? লাম্বারটা আছে কিনা হেইডা খালি দেখবেন।
ঃ না না এটা চলবে না। আমায় টাকা বদলে দিন।
দোকানি আর ভদ্রমহিলা চেচামেচি শুরু করে দিলো। ‘চলবে আর চলবে না’ এ কথা নিয়ে শুরু হয়েছে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি। দুজনে ঝগড়া চলছে ফাটাফাটি। এমন সময় এক অতি বুদ্ধিমান মহিলা এসে বললেন-
ঃ দেখি টাকাটা চলবে কিনা?
দোকানি একটু হালে পানি পেল। ভদ্র মহিলাকে টাকাটা দেখিয়ে বললো-
ঃ দেহেন তো মেডাম! টাহাডা বোলে চলতো না?
ঃ হুম!! দেখছি, চলে কি না?
এই বলে ভদ্র মহিলা টাকাটা তার হাতে নিয়ে সবজির ঝুড়িতে ফেলে হাত ইশারা করে বলেন-
ঃ আসো সোনা, আসো, এদিকে আসো।
ঝুড়িতে পড়ে থাকা টাকা আগের মতই পড়ে রইলো। কোন নড়াচড়া করলো না। এবার একটু ধমকের সুরে-
ঃ আয়, আয় বলছি। এদিকে আয়।
এতেও যখন টাকা নড়লো না তখন জোড়ে ধমক দিয়ে বললো-
ঃ আয়, আয় বলছি। নইলে দেব মার।
যথারিতি রেজাল্ট আগের মতই। অসুস্থ, ক্লান্ত দেহে নিথর হয়ে পড়ে রইল দুই টাকার নোটটি। এত ডাকাডাকির পরও যখন টাকাটা ভদ্র মহিলার কথা মত আসলো না। একটু নড়লোও না। যেখানে রয়েছে সেখানেই পড়ে রইলো। তখন ভদ্র মহিলা দোকানিকে বললো-
ঃ নাহ! দেখুন ভাই, কত বললাম। টাকাটা চললো না। মনে হয় চলবে না!
ক্রেতা ভদ্র মহিলা ফিক করে হেসে দিলো কান্ড দেখে।
দোকানি নোটটা রেখে দুটি কয়েন ধরিয়ে দিলো। দোকানিকে বোকা বানিয়ে গেল। এটা দোকানি বুঝতে পারলেও কিছু যে বলার নেই তাও বুঝতে পারলো। দোকানি অস্ফুট স্বরে বললো, আফা আপনেও নতুন তবে অচল টাকাই দিয়া গেলেন, যেখানে রাখছি সেখানেই পড়ে আছে, নড়েও না চড়েও না!!
বোকা বনে কয়েন দিলেও দুই টাকার নোট ছেঁড়া হোক, ফাটা হোক এর কদর যে আছে এটা কেউ অস্বীকার করবে না।
দেশের অবস্থা কি? রাজনীতির অবস্থা কি? অর্থনীতির অবস্থা কি? সামাজিক অবস্থা কি? খেলাধুলার অবস্থা কি? শিক্ষা-সংস্কৃতির অবস্থা কি? বাজারের অবস্থা কি? আয়ের অবস্থা কি? ব্যায়ের অবস্থা কি? সাধারণ মানুষের অবস্থা কি? এভাবে প্রশ্ন করলে প্রশ্নের অভাব হবে না।
এসব প্রশ্নের উত্তরে যদি বলা হয় যে, দুই টাকার নোটের মত, তবে কি ভুল হবে। সব কিছুরই অবস্থা ছেঁড়া, ফাটা, জোড়া তালি দেয়া, ক্ষয়িষ্ণু তবুও চলছে, চলে এবং চলবে।
আসলে ছেঁড়া দুই টাকার নোট কেন চলে? সাধারণ হিসাব এটা। যখন ভাংতি দেয়ার জন্য নতুন নোটের চাহিদা মোতাবেক যোগান থাকে না, তখনইতো চলে! দেশে যখন সুস্থ রাজনীতির অভাব, সুস্থ সংস্কৃতির অভাব, সুশাসনের অভাব, হাল ধরার যোগ্য লোকের অভাব দেখা দেয় তখন ছেঁড়া দুই টাকার মত চাহিদার যোগান হিসেবে চলে আসে অযোগ্য অপশক্তি। তাই দেশে দরকার সুস্থ রাজনীতির ধারা, গণতন্ত্রের ধারা, পরিকল্পিত অর্থনীতির ধারা। নইলে ছেঁড়া ফাটা নোট যেমন ঘুরে ফেরে হাতে হাতে আর শাসনের ভারও চলে যাবে ছেঁড়া ফাটা লোকের হাতে। যার পরিনাম ভাল হবে না।




নগরীর উৎপাত ঃ লিফলেট বিলি
॥ ০১ ॥ 
রফিক সাহেব ব্যস্ত ব্যবসায়ী। মতিঝিল ব্যাংক পাড়া থেকে কাজ সেরে দ্রুত বেড়িয়েছেন মিরপুর যাবেন বলে। মিরপুরগামী বাসের টিকেট কেটে বসেছেন জানালার ধারে। ভয়ংকর সীসা ও কার্বনডাই অক্সাইড মেশানো ফুরফুরে বাতা আসছে জানালা দিয়ে। বসে বসে ভাবছেন ব্যবসার কথা। হঠাৎ একটি ভিজিটিং কার্ড সাইজের শক্ত কাগজের টুকরো ক্ষেপনাস্ত্রের গতিতে এসে আঘাত করলো রফিক সাহেবের কপালে। আৎকে উঠলেন! দ্রুত জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন, নেকাবে মুখ ঢাকা বোরকা পড়া এক মহিলা। হাতে অনেকগুলো ভিজিটিং কার্ড নিয়ে জানালা দিয়ে ক্ষেপনাস্ত্র বা রকেট লাঞ্চার এর গতিতে ছুড়ে ছুড়ে মারছে যাত্রীদের দিকে। অনেকেই রফিক সাহেবের মত আৎকে উঠে তাকাচ্ছে জানালার দিকে।
জানালা ছেড়ে অতঃপর ছুড়ে মারা কার্ডটির দিকে তাকালেন রফিক সাহেব। দেখেন একটি রুহানী দরবার শরীফ ও দাওয়াখানা’র বিজনেস কার্ড। কার্ডটিতে বড় বড় হরফে লেখা আছে ‘চিশতিয়া রুহানীয়া হুজুরীয়ার ওপেন চ্যালেঞ্জ। সপ্তাহের সব দিন খোলা। চিঠির মাধ্যমেও দাওয়াই দেয়া হয়। দেশে থাকুন আর বিদেশে থাকুন আমাদের ওপেন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। বিফলে মূল্য ফেরত পাবেন। সফল হলে আস পাশের আরো দু’একজন রুগি পাঠাবেন ইনশাল্লা। আমরা অত্যন্ত যতেœর সাথে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। যে যে রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়- প্রেমে ব্যর্থতা, ব্যবসায় উন্নতি হয়না, পার্টনারের সাথে মনমালিন্য, স্ত্রীর সাথে অমিল, স্ত্রী অন্যের পরকীয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে, স্বামীকে বস করতে চান (গাধা বানতে চান), বিদেশ যাত্রায় বাধা, পাওনা টাকা নিয়ে টালবাহানা, রাজনীতিতে ব্যর্থতা, পুরাতন হাপানি, গ্যাষ্ট্রিক, আলসার, পড়াশুনায় অমনোযোগ। যেকোন সমস্যার জন্য চলে আসুন’।
কার্ডটি পড়ে রফিক সাহেব নিজের অজান্তেই হেসে ফেললেন। লোকে বলে সব সম্ভবের দেশ আমার সোনার বাংলাদেশ! তাইতো মনে হচ্ছে এদের কথায়! কি না পারো এরা? আমাদের এতো সমস্যা!! আমাদের দেশের নেতা নেত্রীরা হিমসীম খাচ্ছে। কর্মকর্তা কর্মচারীরা দিন রাত খেটে যাচ্ছে। সমাজ কর্মীরা বিভিন্ন ফরমুলায় সমাজকে বদলাতে চাইছেন। চিকিৎসকরা চেষ্টা করে যাচ্ছে রোগ শোক সারানোর জন্য। অথচ এদের যদি আমরা নিয়োগ করে আমাদের সমস্যা গুলি তাদের হাতে ধরিয়ে দেই তবে কত সহজেই তারা সমাধান করে দিতে পারত!! এতে সময়ও বাঁচবে আবার অর্থও বাঁচবে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা, আমাদের বিশাল জনশক্তি অন্যকাজে সময় দিতে পারবে!!
রফিক সাহেব কথাগুলো ভাবে আর মনে মনে হাসে। আহ্ কি বিচিত্র এই দেশ!!

॥ ০২ ॥
মহসিন সাহেব মেয়েকে নিয়ে মতিঝিল এসেছিলেন। থাকেন নারায়নগঞ্জে। মেয়ে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দেবেন। ইন্টারভিউ শেষে নারায়নগঞ্জের বাসে রওয়ানা দিয়েছেন বাসায় যাবেন বলে। বাসে বসে মেয়ের কাছ থেকে ইন্টারভিউ সম্পর্কে খোজ খবর নিচ্ছেন।
বাস যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে থামার সাথে সাথে বাসের জানালা দিয়ে মেয়ের কোলে এসে পড়ল একটি রঙ্গীন ফোল্ডিং লিফলেট। তাকাতেই দেখাগেল লিফলেটের উপরে একটি রঙ্গীন ছবি যাতে এক যুবক এক যুবতীকে আলীঙ্গন করে আছে। তাকিয়ে বাবা ও মেয়ে দুজনই বিব্রত। লিফলেটটি একটি ইউনানী দাওয়াখানার।
এই লিফলেটেও একই ধরনের লেখা। যেখানে লেখা আছে- যৌন চিকিৎসা সহ সকল রোগের চিকিৎসা ১০০% নিশ্চয়তার সাথে করা হয়। হেপাটাইটিস এ-বি-সি-ডি থেকে জেড পর্যন্ত, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, এইচআইভি-এইডস সহ সকল রোগ। তারা ছবি দেখেও রোগ নির্ণয় করে ঔষধ দিতে পারে। আবার বিদেশ থেকে নির্ধারিত ফি পাঠিয়ে দিলে তারা ডাকযোগে ঔষধ পাঠিয়ে দেয়। ভাল হওয়ার বিষয়ে কোন চিন্তা করার প্রয়োজন নেই!! ১০০% নিশ্চয়তাতো আছেই।
রফিক সাহেব বা মহসিন সাহেবের মত বিব্রতকর অযাচিত বিড়ম্বনায় আমরা সকলেই পরি। এটা বর্তমানে একটি নগরের উৎপাতে পরিণত হয়েছে। নগরির যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, মতিঝিল, গুলিস্থান, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, ফার্মগেট, মহাখালীসহ অটো ট্রাফিক সিগনালের অথবা যে কোন বাস স্টপেজের কথাই বলুন না কেন এ উৎপাদ আপনাকে সহ্য করতেই হবে।
খোজ নিলে দেখতে পাবেন এক শ্রেণীর ইউনানী দাওয়াখানা ও ঝারফুকদাতা ভন্ড হুজুরগন এসব বিজ্ঞাপন প্রচার করে সহজ সরল মানুষকে আকৃষ্ট করে। এসব দাওয়াখানা ও দরবার শরীফগুলোতে সাধারণত যৌন রোগকেই প্রাধান্য দেয়া হয় বেশী। এছাড়া সংসারে অমিল, প্রেমে ব্যর্থতা, বিদেশ যাত্রায় বাধা, শত্রুকে বধ করা, ক্যান্সার, গ্যাসট্রিক, আলসার, হেপাটাইটিস বি সহ সকল রোগের ব্যাপারে ১০০% নিশ্চয়তার সাথে কাজ করার প্রলোভন দেখায়।
এই প্রচার কার্ড বা লিফলেটগুলো বিলি করার কাজে এক শ্রেণীর হত দরিদ্র মহিলা ও যুবকদের ব্যবহার করা হয়। সামান্য পারিশ্রমিক দিয়ে এদের কাজ করানো হয়। এই কাজে নিয়োজিত যুবক ও মহিলারা অনেক সময় পকেট মারার কাজেও ব্যস্ত থাকে।
আপনি বাসে উঠছেন, সুযোগ বুঝে দক্ষ হাতে পকেট থেকে কখন যে মানিব্যাগটা নিয়ে নিয়েছে আপনি তা টেরও পাবেন না। আবার জানালার পাশে মোবাইলে কথা বলছেন। হঠাৎ মোবাইল টান মেরে উধাও!! আপনি শত চেচামেচি করেও আর মোবাইল ফিরে পাবেন না। শশুর বাড়ি থেকে নতুন ঘড়ি উপহার পেয়েছে! হাতে দিয়ে ঢাকায় এসেছেন। বাসে উঠে আনমনে বসে আছেন জানালার কাছে হাত দিয়ে। দেখবেন কেউ খুলে নিয়ে গেছে। ধরার কোন সুযোগই পাবেন না। শুধু হাত থেকে মোবাইল বা ঘটিড়ই নয়, কান থেকে দুল কানসহ ছিড়ে নিয়ে দৌর মারে এসব দৌরবিদেরা!!!! আপাত দৃষ্টিতে দেখতে লিফলেট বিলিকারী মনে হলেও এরা সময়-সুযোগ মত হয়ে যায় ছিনতাইকারী, পকেটমার।
এ বিষয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির উপরে গবেষণা করেন এমন কয়েক বন্ধুর সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, এ সকল ভন্ড চিকিৎসক, ফকির, হুজুর, কবিরাজ আমাদের দেশের কোমলমতি মানুষের মনের স্পর্শকাতর বিষয়ে আঘাত করে তাদের উদ্দেশ্য সফল করে। অজ্ঞতার কারনে স্পর্শকাতর বিষয়ে কাউকে বলতে পারে না সাধারণ লোকজন। গোপন সমস্যা বা গোপন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকদের সাথে অনেকেই কথা বলতে চায়না এবং লজ্জা বোধ করেন। অনেক শিক্ষিত লোকও তার সমস্যা নিয়ে সবসময় যথাযথ বিশেষজ্ঞর সাথে আলাপ করেন না, লজ্জাবোধের কারনে। ফলে ঐসব ভূয়া লোকের চটকদার কথায় সাধারণ মানুষ পটে যায়।
চিকিৎসকদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করার জন্য এসব চটকদার বিজ্ঞাপন বিলি করা হয়। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার জন্য সাধারণ মানুষ এদের কাছে গিয়ে প্রতারিত হয় প্রতিনিয়ত। তারা যে ঔষধ দেয় তাতে কোন রোগ ভালতো হয়ই না বরং অনেক সময় বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নিজেদের সমস্যার কথা তো বলতেই পারে না আবার প্রতারিত হওয়ার কথাও বলতে পারে না। এসকল প্রতারকদের হাত থেকে দুরে থাকাই ভাল। শিক্ষাই পারে এ সকল প্রতারণার থেকে আমাদের রক্ষা করতে। আর প্রশাসন একটু হস্তক্ষেপ করলেই আমরা বিব্রতকর এসব লিফলেট বিলিকারীদের হাত থেকে বাঁচতে পারি, সাধারণ মানুষও প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে পারে।




ভাল ঋণ-মন্দ ঋণ ॥ ব্যাংকার ও আইনজীবীর দায়
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান পন্য হলো ঋণ। আপনি-আমি বিশ্বাসের সাথে টাকা জমা রাখি ব্যাংকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। আমাদের জমানো সেই আমানতের বিনিময়ে সুদ বা মুনাফা যে নামেই ডাকি না কেন পেয়ে থাকি। সেই সুদ বা মুনাফাটা দেয় কোথা থেকে? আমাদের আমানতের টাকা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগ থেকে আসা লভ্যাংশ বা সুদ বা মুনাফার একটা অংশ আমাদের দেয়। আর বাকীটা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটায়। যেহেতু আমানতের টাকা বিনিয়োগ করে মানে ঋণ দেয় সেক্ষেত্রে ব্যাংক ঝুকি নেয়। এই ঝুকির প্রকৃয়ায় কে কে জড়িত, কার কতটুকু দায় সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
ঋণের সাথে জড়িত জামানত, জামানত হিসাবে সবচেয়ে ভাল বস্তু জমি, জমির সঠিকতা যাচাইয়ে দরকার আইন জানা লোক মানে আইনজীবী, আর সেই কাজটা করেন ব্যাংকের মনোনিত প্যানেল আইনজীবী বা আইন উপদেষ্টা। আমি যেহেতু একজন আইনজীবী, সাথে বিভিন্ন ব্যাংকের মনোনিত প্যানেল আইনজীবী বা আইন উপদেষ্টা, তাই ভাল ঋণ-মন্দ ঋণের বিষয়ে আমার নিজস্ব কিছু মতামত সকলের সাথে শেয়ার করতে চাই।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পন্য ঋণ বা লোন। আর ঋণ বিক্রি অন্য সকল পন্য বিক্রির মত নয়। অন্য সকল পন্য ক্রেতাকে দিতে বা গছিয়ে দিতে পারলেই বিক্রেতার দায়িত্ব অনেকাংশে শেষ। কিন্তু ঋণ এমন পন্য যা বিক্রয়ের পরে বিক্রয়োত্তর সেবা-সুশ্রসা করতে হয়। ঋণ গ্রহীতা বা লোনের ক্রেতা ভাল থাকলে ঋণ ভাল। ঋণের ক্রেতা যদি ভাল না থাকে তবে ঋণ ভাল থাকবে না মন্দ ঋণে বা ক্লাসিফাইড লোন হয়ে যাবে।
একটি ঋণ বা লোন বিক্রয় করার পূর্বে ক্রেতা সম্পর্কে অর্থাৎ ঋণ গ্রহীতা সম্পর্কে ব্যাংকের ভাল ধারনা থাকতে হবে। ব্যাংক অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি সম্পর্কে ভাল ভাবে খোজ নিয়ে একটা সুন্দর মধুর সম্পর্ক তৈরী করে। ঋণ নিতে আগ্রহী ব্যক্তির একটি হিসাব খুলে লেনদেন করতে বলা বা পূর্বের খোলা হিসাবের হিসাব বিবরণী (স্টেটমেন্ট) বা লেনদেন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা। আমার বন্ধু বিশিষ্ট ব্যাংকার মোঃ কামরুজ্জামান মিন্টু সবসময় বলতেন, একটি ভাল ঋণ হলো সুখি মানুষের জামার মত। সারা রাজ্য ঘুরে যেমন সহজে সুখি মানুষের জামা মেলে না। তেমনি ভাল ঋণ গ্রহীতাও মেলা ভার। বন্ধু সবসময় বলতো, লেনদেন প্রতিবেদন দেখে ব্যাংক সন্তুষ্ট হলে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তির (৫ সি) (১) ঈযধৎধপঃবৎ, (২) ঈধঢ়রঃধষ, (৩) ঈড়হফরঃরড়হ, (৪) ঈড়ষষধঃবৎধষ ও (৫) ঈধঢ়ধপরঃু অর্থাৎ ১) চরিত্র, ২) মূলধন, ৩) অবস্থা, ৪) জামানত ও ৫) সক্ষমতা এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা খুবই জরুরী। একটা মানুষ চরিত্রবান না হলে তার বাকী পাঁচটি গুণ থেকেও লাভ নেই। আর ঋণ গ্রহীতার মূলধন কেমন আছে, তার বর্তমান অবস্থা কেমন, ঋণ গ্রহণ করে সে তা সুদাসলে ফেরত দিতে পারবে কিনা, তার জামানত কেমন, তার সক্ষমতা আছে কিনা এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা শেষে যদি মনে হয় ভাল হবে তবেই ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে জামানত হিসাবে বন্ধক রাখার জন্য মূল্যবান জমির কাগজপত্র সংগ্রহ করে ব্যাংক মনোনিত একজন প্যানেল আইনজীবীকে দেন। প্যানেল আইনজীবী কাগজপত্র ভালভাবে দেখে চেইন ডকুমেন্টস (জেনোলজি) মিলিয়ে জমির মালিকানা স্বত্ব নির্ধারণ করে একটি আইনগত মতামত প্রস্তত করে ব্যাংক বরাবর প্রেরণ করেন। এ পর্যায়ে আইনজীবী সাহেবের প্রাথমিক কাজ শেষ। এর পর ব্যাংক আইনজীবী সাহেবের দেয়া মতামতের কাগজ নিয়ে নিজেরা এবং থার্ড পার্টি (কোন সার্ভে প্রতিষ্ঠান) দিয়ে জমির মূল্যায়ন (ভ্যালুয়েশন) করেন। অনেক ব্যাংক একজন প্রকৌশলী দ্বারা মূল্যায়ন করে থাকেন। জমির মূল্য নির্ধারন করে দুই ভাবে। একটি হলো জমির বাজার মূল্য ও জমির তৎক্ষণি বিক্রয় মূল্যমান (ফোর্স সেল ভ্যালু) নির্ধারণ করা। অর্থাৎ জমির স্বাভাবিক বাজার মূল্য কত এবং তাৎক্ষণিক ভাবে বিক্রি করতে চাইলে কত টাকা বিক্রি করা যাবে তা নির্ধারণ করা। তাৎক্ষণিক বিক্রয় মূল্যমান (ফোর্স সেল ভ্যালু) যা নির্ধারণ করা হয় তা থেকে অনেক কম অর্থাৎ নিরাপদ দুরত্বে থেকে ঋণ গ্রহনে আগ্রহী ব্যক্তিকে ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকেন।
গ্রাহক এর নিকট থেকে সংগৃহীত কাগজপত্র ব্যাংক আইনজীবীর কাছে সরবরাহ করে, সেই সরবরাহকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনা করেই একজন আইনজীবী তার আইনগত মতামত দিয়ে থাকেন। গ্রাহক যে কাগজপত্র সরবরাহ করলো (যেমন-বিভিন্ন খতিয়ানের পর্চা, মূল দলিল, মূল দলিল না থাকলে সইমোহরকৃত দলিল, খাজনার দাখিলা, ডিসিআর এর কপি, নির্দায় সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর সনদ, জাতীয় পরিচয় পত্র, ওয়ারিশ সনদ ইত্যাদি) সেই কাগজপত্র সঠিক আছে কিনা বা জাল কিনা তা যাচাই-বাছাই করার জন্য ব্যাংকের লোনস এন্ড এডভান্স এর অফিসার ভেটিং ও সার্চিং এর কাজ সম্পন্ন করে। ভেটিং ও সার্চিংয়ের কাজ ব্যাংক নিজেই তার অফিসার দিয়ে বা কোন থার্ড পার্টি দিয়ে বা আইনজীবীর মাধ্যমে বা অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দিয়ে করতে পারেন বা করেন। সার্চিংয়ের কাজটি করার জন্য জেলা রেকর্ড শাখা, জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস, সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস, স্থানীয় ভূমি অফিস, ইউনিয়ন বা পৌরসভা, আয়কর অফিস, নির্বাচন অফিস সহ সংশ্লিষ্ট অফিস সমূহে যোগাযোগ করে তল্লাশির মাধ্যমে নিজ চোখে দেখে মূল্যায়ন ও দলিলপত্রের সঠিকতা যাচাই করে থাকেন। 
ব্যাংকে অনেকেই জাল টাকা নিয়ে আসেন, ব্যাংকাররা সেই জাল নোট অনেক সময় ধরতে পারেন না, দিন শেষে হয় টাকা বান্ডিলে ঢুকে গ্রাহকের কাছে চলে যায় আর ধরা পরলে জমা দিতে আসা ব্যক্তির কাধে বা পরে ধরা পরলে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার ঘারে দায় চাপে। ঠিক তেমনি, দলিল সঠিক না জাল, মিউটেশন ঠিক আছে কি নাই, খতিয়ানের পর্চা সঠিক না টেম্পারিং করা, খাজনা দাখিলা, ডিসিআর কপি, নির্দায় সনদ, ওয়ারিশ সনদ ইত্যাদি ইত্যাদি কাগজপত্র যাচাই করার জন্য বেশিরভাগ সময়ই আইনজীবীর পক্ষে তহশিল অফিস, এসিল্যান্ড অফিস, জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস বা সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস, ইউনিয়ন বা পৌরসভা কোথাও যাওয়া সম্ভব হয় না এবং যাওয়ার কথাও না।
একটা আইনগত মতামত এর জন্য আইনজীবীকে ব্যাংক (লোন গ্রহীতার কাছ থেকে নিয়ে) দুইশত টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে। এই সামান্য টাকার বিনিময়ে আইনজীবীকে পাঁচ থেকে দশ পাতার (ক্ষেত্র বিশেষ আরো বেশি) একটি আইনগত মতামত দিতে হয়। এই সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আইনগত মতামতের সাথে সার্চিং ও ভেটিং কেউ আশা করে না এবং কেউ দেয়ও না। সার্চিং ও ভেটিং এর কাজ আইনগত মতামতের সাথে সংযুক্ত নয়। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
একটা ঋণের ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক ব্যাংকে আসলো, কাগজপত্র দিল, আইনজীবী আইনগত মতামত দিয়ে দিল আর ব্যাংক গ্রাহককে শত কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দিলো এমনটা নয়। ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি ঐ ব্যাংকে হিসাব খোলেন, লেনদেন করেন, লেনদেনের মাধ্যমে তার বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যাংক। তার নৈতিক চরিত্র, তার ব্যবহার, তার ব্যবসা, তার প্রয়োজন, তার লেনদেন তার ঋণ ধারণ ও পরিশোধের ক্ষমতা ইত্যাদী নানান বিষয় ব্যাংক পরীক্ষা করে তাকে ঋণ দেয়ার কথা চিন্তা করে গ্রাহকের নিকট থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করেন। দীর্ঘ লেনদেন করার পরেও যে ব্যাংকার প্রতারক গ্রাহককে চিনতে পারলো না সেই গ্রাহককে কয়েকটি কাগজ দিয়ে কিভাবে চিনবে আইনজীবী? একটি নকল দলিল তো আসল ষ্ট্যাম্পে তৈরী করে, একটা নকল মিউটেশন তো আসল সিল মোহর দিয়েই তৈরী করে। হাজার হাজার কর্মকর্তার স্বাক্ষর কি আইনজীবী সাহেবের চেনা? আর কাগজ জাল হোক আর আসল হোক উকিলের কাজ চেইন ডকুমেন্টস মিলিয়ে দেখা। কাগজের সঠিকতা প্রমান করবে যার উপর সার্চিং ও ভেটিং এর দায়িত্ব সেই কর্মকর্তার বা ব্যক্তির।
এবার বলি ঋণ কিভাবে খারাপ হয় সে বিষয়ে আমার ধারনা। আমার সামান্য অভিজ্ঞতায় দেখেছি গ্রহীতাকে ঋণ দিয়ে অনেক ব্যাংক আর কোন খবর রাখে না। ঋণ পাস হওয়ার পর সেই ঋণ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সে নিয়মিত লেনদেন করবে, কিন্তু অর্থঋণ মামলা করার সময় ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখেছি ঋণ পাস হওয়ার পর চেকের এক পাতা খরচ করে পুরো টাকা তুলে নিয়ে আর কোন যোগাযোগ করেনি এবং লেনদেনও করেনি। ঋণ দেয়ার পর ঋণের কোন পরিচর্যা করেনি। পরিচর্যা ছাড়া কোন কিছু কি ভাল হয়? পরিচর্যা ছাড়া কি কোন ভাল ফল পাওয়া যায়? পরিচর্যা ছাড়া বাগানে তো আগাছাই জন্মাবে তাই না? গ্রাহক কেন ব্যাংকে আসছে না, কেন লেনদেন করছে না, সেকি নিঃশেষ হয়ে গেছে? গেলে তাকে কিভাবে সহযোগীতা করে আবার দাড় করিয়ে টাকাটা আদায় করা যায়? সেই বিষয়ে ব্যাংকের অনেক দায়িত্ব আছে যা ব্যাংকারগণ করে না। তারাতো অনেক ক্ষেত্রে ঋণ দিয়েই খালাস!!! ফলে ঋণ আর আদায় হয় না, ব্যাংকের গুনতে হয় শতকোটি টাকার লোকসান।
অনেকে ব্যাংকের সেই লোকসানের দায় দিতে চান আইনজীবীর উপর যে কিনা মাত্র দুইশত পঞ্চাশ টাক থেকে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে আইনগত মতামত দিয়েছেন। মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে যে ব্যাংকারদের রাখা হয়েছে তদারকির জন্য তারা কি দায়ী নয় এই লোকসানের জন্য? কেন একজন বাজে লোককে ঋণ দেয়া হলো? কেন ঋণ দেয়ার পর তদারকি করা হলো না? ঋণের বন্ধকি দলিলে ও অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিলে তো লিখে নিলেন আইনজীবীর মাধ্যমে যে, যে কোন সময় তদারকির জন্য ব্যাংককে তার ব্যবসা বাণিজ্য, গোডাউন, প্রকল্প পরিদর্ন করতে দিতে বাধ্য থাকিবেন। আইনজীবী শত টাকার পারিশ্রমিক নিয়ে শত কোটি টাকার দায় কিভাবে নেবে? আসলে অন্যের ঘারে দায় চাপানোটা আমাদের অভ্যাষে পরিনত হয়ে গেছে।
আবার অনাদায়ী ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংক অর্থঋণ আদালতে মামলার মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয়। অনেকে মনে করেন, আইনজীবী মামলায় সময় নিয়ে ঘুরায় এবং সময় ক্ষেপণ করেন। আসলে কথাটা সত্যি নয়। আমি বেশ কিছু মামলা পরিচালনা করেছি এবং এখনও করছি। আমার যে ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে তা থেকে বলছি, প্রত্যেক ব্যাংকই আইনজীবীকে ব্যাংকের নির্ধারিত সিডিউল দেখে বিল প্রদান করেন। একটা মামলার জন্য বিভিন্ন বিষয় মিলে একটা বিল হয়ে। উদাহরণ হিসাবে বলি, একটা মামলা পরিচালনার জন্য একশত টাকা বিল হলো। পচিশ টাকা মামলাটা দায়ের করার পর আইনজীবীকে দেয়া হবে। এর পর চুড়ান্ত শুনানীর আগে আরো পচিশ টাকা দিবে। বাকী পঞ্চাশ টাকা দিবে রায় পাওয়ার পর। এই মামলাটা যদি দশটা তারিখ ঘুরে নিষ্পত্তি হয় তাতে আইনজীবীকে ঐ একশত টাকাই দেবে দশটা টাকাও বেশি দেয়া হবে না আর যদি একশতটা তারিখ ঘুরে মামলাটি নিষ্পত্তি হয় তাতেও দশটা টাকা বাড়াবে বা কমাবে না। টাইম পিটিশন বা হাজিরার জন্য কোন ফি ধার্য নাই। মামলা দায়েরের সময়ই বিলের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়। দশ দিনে মামলা শেষ হলে ঐ একশত টাকা আবার দশ বছর ঘুরে নিস্পত্তি হলেও ঐ একশত টাকা। তাই মামলাটা ঘুরিয়ে আইনজীবীর কোন লাভ নাই বরং লস, দ্রুত নিস্পত্তি করতে পারলে পকেটে অবশিষ্ট টাকাটা আসবে, নিস্পত্তি যত দেরিতে বিল তত দেরিতে। আর নিষ্পত্তি হলে বরং জারি মোকদ্দমার উদ্ভব হবে, আইনজীবী আবার নির্ধারিত ফি পাবে, নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জারি মোকদ্দমার উদ্ভব হবে না। এবার বুঝুন এখানে আইনজীবীর কি কোন লাভ আছে? তাই অহেতুক দোষারোপ করে আইনজীবীকে হেয় করে কি লাভ?
আমি কিছু ব্যাংকের ঋণের বিষয় জানি। ব্যাংকিং ব্যবসায় প্রধান প্রোডাক্ট কি, সবাই জানে ঋণ বা লোন, যা আগেও আলোচনা করেছি। ব্যাংক লোন সেল করে। এক সময় কিছু ব্যাংকের লোন সেল করতো ব্যাংকটির একটি ব্রাঞ্চের সামনের কয়েকজন দোকানদার। কারো দুই লাখ টাকা ঋণ চাই, দোকানদার বললো, দুই লাখ নিবি কিরে! তোকে দশ লাখ তুলে দেই!! ব্যবসায়ী দুই লাখ খরচ করে দশ লাখ টাকা ব্যাংকের কাছ থেকে কিনে নিলো!! সেই যে গেল আর ফিরে এলো না!! ব্যবসায়ীর কথা, কে টাকা ফেরত দেব? আমিতো লোন কিনছি? কিন্তু তার ঐ অনৈতিক কথা কি আইন শুনবে? পরবর্তীতে কি হলো, সেই বিক্রয়কৃত ঋণের গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলো। অতঃপর জমি বিক্রয় করে, জেল খেটে বিভিন্ন ভাবে ঋণ পরিশোধ করলো, আবারও সহযোগীতা করলো সেই আইনজীবী!!
আইনজীবীদের কাজের উপর মহামান্য হাইকোর্ট বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আইনজীবীগণ যেহেতু প্রদত্ত কাগজের উপর মূল্যায়ন করেন তাই একজন আইন উপদেষ্টা তার আইনগত অভিমতের জন্য দায়ী নয়।
এ প্রসঙ্গে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হক এবং বিচারপতি মোঃ নুরুল ইসলাম কর্তৃক আব্দুস সামাদ বনাম রাষ্ট মামলার [ইখঈ (১৯৯৬) ঢ়ধমব ৬৩] জাজমেন্টে বলেছেন, “অ খবমধষ অফারংবৎ পধহহড়ঃ নব সধফব ষরধনষব ভড়ৎ ঃযব ড়ভভবহপব ড়ভ ভড়ৎমবৎু ধহফ পৎরসরহধষ নৎবধপয ড়ভ ঃৎঁংঃ ভড়ৎ মরারহম যরং ষবমধষ ড়ঢ়রহরড়হ.”
অনেকতো বললাম, এবার বাস্তবতায় আসি। বাস্তবকে অস্বীকার করার ক্ষমতা কারো নেই, আমারতো নেই-ই। বাস্তব ঘটনা হলো ভালো মন্দ সব জায়গায়ই আছে। ভাল ব্যাংকার যেমন আছে তেমনি ভাল আইনজীবীও আছে। খারাপ ব্যাংকার যেমন আছে তেমনি খারাপ আইনজীবীও আছে। ভাল ঋণ গ্রহীতা যেমন আছে, তেমনি ঋণ গ্রহীতা খারাপও আছে। সবাই সমান নয়, ভাল মন্দ সবজায়গায়ই বিরাজমান। আইনগত মতামত দেয়ার ক্ষেত্রে, বন্ধকনামা দলিল, অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দলিলসহ বিভিন্ন দলিল পত্র মুসাবিদা ও প্রস্তুতের ক্ষেত্রে আইনজীবীকে সততার তপ্ত কড়াইয়ের উপর বসে বরফ শীতল ঠান্ডা মাথায় যেমন কাজ গুলো করা উচিত তেমনি ব্যাংকারদের উচিত সঠিক গ্রাহক বাছাই করা, গ্রাহককে যথাযথ পরিচর্যা করা, গ্রাহক কর্তৃক সরবরাহকৃত তথ্য, উপাত্ত, দলিল দস্তাবেজ ভালভাবে যাচাই বাছাই করা এবং সত্যিকারের ব্যবসায়ী-গ্রাহককে ঋণ দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ও দেশের অর্থনীতিকে সবল রাখা।
আমার এই লেখা কোন সাফাই গাওয়ার জন্য নয়। ব্যাংকার ও গ্রহকদের মনে কষ্ট দেয়ার জন্যও নয়। বাস্তবতার আলোকে আমার পর্যবেক্ষণ পাঠকের সাথে শেয়ার করলাম মাত্র। আমার লেখায় কেউ মনে কষ্ট পেলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।




জঙ্গি-মঙ্গি কিছুই নয় ॥ ইসরাইল শান্তিকামী বিশ্বের জন্য আজরাইল
দেশ এখন আতঙ্কের এক জনপদ। আর আতঙ্কের নাম জঙ্গি। দেশে বিদেশে জঙ্গি মানেই ইসলামিক জঙ্গি! এমন ভাবে মিডিয়া প্রচার করে যেন বিশ্বে আর অন্য কোন ধর্মীয় উগ্রবাদী বা জঙ্গী নাই। আর আমাদেরও দুর্ভাগ্য যেই উগ্রবাদী ধরা পরে, তার নামের আগে থাকে মোহাম্মদ শব্দটা। আবার হামলা শেষে আল্লাহু আকবার স্লোগান দিয়ে বীর দর্পে চলে যায় বা যাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে জঙ্গি মানেই ইসলাম ধর্মের লোক! অথচ সমস্ত বিশ্বেই উগ্রবাদ এখন একটি বিষ ফোড়ার মত যন্ত্রনাদায়ক ব্যধি যা অন্য দেশের মত আমাদের দেশেও আছে। রাজনৈতিক কারনে হোক বা রাষ্ট্রীয় কারনে হোক নাশকতার ঘটনা ঘটার সাথে সাথে কৌশলগত কারনে সরকার তা অস্বীকার করে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে বেশ কিছু অঘটনের জন্ম দেয় জঙ্গিরা। আরো অঘটন ঘরার হুমকি মাথায় নিয়ে ঘুরছি আমরা। হুমকিগুলো সত্যিও হতে পারে আবার এক শ্রেণীর লোকের উড়ো চিঠিও হতে পারে। কিন্তু হুমকিকে তো আর সাধারণ ভাবে নেয়া যায় না। অঘটন না ঘটলেই ভাল, সতর্ক না থাকলে ঘটেওতো যেতে পারে!
সারা বিশ্বে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে হত্যাযজ্ঞ। কেউ গাড়ি চালিয়ে শত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। আবার কেউবা গ্রেনেড ফাটিয়ে, কেউবা গুলি ফুটিয়ে, কেউ কেউ আবার ছুড়ি-চাকু-ধারালো অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়ছে নাশকতায়। ঘটনা ঘটিয়ে কেউ পালিয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী পরিবারের-দরিদ্র পরিবারের, আলেম বেশে-জালেম বেশে, শিক্ষক হয়ে-শিক্ষার্থী হয়ে নাশকতাকারীর খাতায় নাম লিখিয়ে চালাচ্ছে হত্যাযজ্ঞ। বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবার মাদ্রাসা থেকে প্যাগোডার সব স্থানেই বিরাজ করছে নাশকতাকারীরা। শুধু দোষ পড়ে ধর্মীয় লেবাসের উপর। সব যায়গায়ই চলে ধর্মের অপ ব্যাখ্যা। নাশকতাকারীরা কেবলই জঙ্গি তাদের কোন ধর্ম নেই। ধর্ম কখনো সাধারণ মানুষ হত্যার অনুমতি দেয় না। এক শ্রেণীর লোভি ধর্মান্ধরা নাশকতার পথ বেছে নিয়ে নিজেদের ধর্মীয় উগ্রবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কলকাঠি নাড়ছে পিছনে বসে ধর্মীয় নেতার বেশে মুখোশধারী কিছু কুচক্রী। তারা বিশ্বের বিশেষ কোন এস্যাইনমেন্ট কার্যকর করছে মাত্র। যে বেশে নিজেদের জাহির করলে কার্য সিদ্ধি করা যাবে সেই বেশই ধারণ করছে। আসলে তারা ধর্মের কেউ না। শান্তি প্রিয় বিশ্ববাসীর শান্তি দেখলে তাদের গা জলে। বিশ্ব বাণিজ্যের বড় পরিবেশক এই মুখোশধারীরা। সাধারণ মানুষ সাধারণ চোখে দেখে, সাধারণ জ্ঞানে তাদের চিনতে পারে না। ফলে তাদের মিঠা কথায় ভিটা খালি করে জড়িয়ে যাচ্ছে উগ্রপন্থায়। 
আমাদের দেশে সম্প্রতি দুজন সমকামী জঙ্গিদের হামলায় নিহত হয়। সাথে সাথে পশ্চিমা বিশ্বের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বিশ্ব মোড়ল তেতে উঠে। ঘটনার নিন্দা, তদন্তের আগ্রহ, নিজের দেশের নাগরিকদের সতর্ক করা সহ নানান পদক্ষেপ নেয়। আমাদের দেশের ঘটনার কিছু দিন পর আমেরিকায় এক সমকামি জঙ্গি সমকামিদের ক্লাবে হামলা চালিয়ে অর্ধশত সমকামীকে গুলি করে মেরে ফেলে। এবার আর ঐ মোড়লদের মুকে কথা ফোটে না। আমাদের দেশের অঘটনের পর সবাই বলে গোয়েন্দারা কি করেছে? তারা কেন আগাম তথ্য পেল না ইত্যাদি। মোড়লদের দেশে এতবড় ঘটনা ঘটলেও তাদের নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে কোন কথা হয় না। তাদের তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান, অস্ত্র-শস্ত্র, সুযোগ-সুবিধা কোন কমতি না থাকলেও নাশকতার কোন পূর্বাভাষ তারা জানতে পারে না, আমাদের দেশের নিরাপত্তা বাহিনী কিভাবে জানবে? আসলে নাশকতাকারীরা মনে মনে যা চিন্তা করে তা কোন প্রযুক্তিতেই ধরা পরে না। আর নাশকতাকারীরা ধর্মীয় লেবাশ নেয়। ভারতে উগ্র হিন্দুবাদীরা যে চিন্তা চেতনা নিয়ে হঠাৎ অঘটন ঘটায় সেটা দেখে কেউ কি ধারনা করতে পারে তাদের মনে এত ঘৃন্য চিন্তা বিরাজ করছে? আমাদের দেশে যাদের আমরা ইসলামীক জঙ্গি বলে আখ্যা দেই তাদের দেখলে কি বোঝার উপায় আছে তাদের মনে এমন ঘৃন্য চিন্তা বিরাজ করছে? করার পর বোঝা যায় তারা কতটা ঘৃন্য মানব রুপি ঘাতক। 
সারা বিশ্বে এত নাশকতা এত হানাহানি এত প্রাণহানী কিন্তু বিশেষ একটা দেশে কোন অঘটন ঘটে না তাহলো ইসরাইল। ইসরাইলের মানুষ কি এতই ধোয়া তুলসি পাতা! তারা কি এতই সতর্ক যে তাদের দেশে কোন অঘটন ঘটার আগেই সতর্ক হয়ে যায়!! আমার তো তা মনে হয় না। ইসরাইলের মত বর্বর জাতি শান্তিকামি বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমাদের জানা নেই। ইসরাইলীরা ফিলিস্তিনের মাটিতে যে পরিমান বোমা ও গুলি বর্ষণ করেছে, যদি না করতো তবে অস্ত্র উৎপাদনকারীদের অস্ত্র নিয়ে কান্না করা ছাড়া কোন উপায় থাকতো না এবং ইসরাইল আজ আর ধরনীর উপর থাকতো না, অস্ত্রের বারে দেবে সাগরের তলদেমে দিয়ে ঠেকতো। ইসরাইলীরা ফিলিস্তিনের যে পরিমানের নারী-শিশু-সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে এর বিচার হলে সমগ্র ইসরাইল জাতিকে একাধিকবার ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে হবে। যে জাতি নারী-শিশু কাউকেই বাদ দেয় না তারা এত সাধু আর সতর্ক হয় কি করে? ইসরাইলের মত ছোট্ট একটি রাষ্ট্র কিভাবে এত সাহস পায়?
বিশ্বে বড় বড় অঘটন যা হয়েছে তা জানে না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। বলদেও জানে আমেরিকায় দুইটা জোড়া বিল্ডিং বিমান দিয়া ভাইঙ্গা দিছে জঙ্গিরা। আমেরিকার ঐ টুইন টাওয়ারে হামলা হলো। হাজার হাজার মানুষ মারা গেল। বিশ্বের এমন কোন দেশ নাই যেই দেশের দুই চার দশ জন করে নাগরিক মারা যায় নাই। সব দেশের মানুষই মারা গেছে শুধু ইসরাইলের কোন নাগরিক মারা গেছে তা শোনা যায় নাই। লাদেনকে জ্ঞানীগুনিরাই কিছুটা চেনতো আর চেনতো আমেরিকা। টুইন টাওয়ার ভাঙ্গা হলো বিমান দিয়ে, নাম হলো লাদেনের! ঘোষণাও দিল লাদেন যে সেই ভাঙ্গিয়েছে। গোপন জায়গা থেকে টেপ আসে, দাড়ি পাগড়িওয়ালা একজন ঘোষণা দেয়, বাহবা জানায়, আর আমেরিকার সুরসুরি বাড়ে! এবার শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। নিরপরাধ মানুষ মেরে জঙ্গি দমনের নামে একের পর এক দেশ ধ্বংশ করে নিজেদের মানবতা প্রতিষ্ঠা করে আমেরিকা। দীর্ঘ দিন পরে আবার স্বীকারও করে যুদ্ধ করাটা ভুল ছিল। কিন্তু ভুলের মাসুল দেয় না। ভুলের মাসুল গুনতে হয় সাধারণ জনগনকে। টুইন টাওয়ার হামলার পর যা ঘটেছে সবারই জানা আছে, আফগানের সুন্দরী বউ আমেরিকার ভাবি!! আফগানে যত সম্পদ আছে সব লুন্ঠন করা শেষে লাদেন গেল পাকিস্তানে। এর পরও আমেরিকা নিজেদের মানবতার প্রতীক হিসাবে নিজেদের জাহির করে, সাধু সাজে। একটি গল্প বলি, এক ব্যক্তি সারা জীবন মানুষের বাড়ি বাড়ি চুরি করেছে। চুরিই ছিল তার পেশা। সেই চোর মৃত্যুশয্যায়। শয্যাপাশে তার সন্তানেরা। চোর তার সন্তানদের ডেকে বললো, বাবারা, আমিতো সারা জীবন মানুষের বাড়ি বাড়ি চুরি করেছি যা তোমরা জান এবং তোমরা আমাকে সব সময় সহযোগীতাও করেছো। আমি আর বেশিক্ষণ মনে হয় তোমাদের মাঝে নাই। সময় হয়ে গেছে। তোমরা দুনিয়ায় এমন কাজ করবে যাতে সবাই আমায় ভাল বলে। এই বলে কিছুক্ষণ পর চোর মারা গেল। শোক কাটিয়ে উঠে চোরের সন্তানেরা চিন্তা করে কি এমন কাজ আমরা করতে পারি যাতে বাবাকে মানুষ ভাল বলবে! তারা এতদিন বাবার সাথে চুরিতে সহযোগীতা করত। বাবা মারা যাওয়ার পর এখন তারাও চুরি করা শুরু করেছে। একদিন ভাইয়েরা মিলে আলোচনায় বসল। সবাই মিলে চিন্তা ভাবনা করলো, কি কাজ করলে মানুষ বাবাকে ভাল বলতে পারে। চিন্তা ভাবনা শেসে এবার তারা চুরি ছেড়ে ডাকাতি শুরু করলো। কয়েক দিন ডাকাতি করার পর মানুষের মুখে বাবা সম্পর্কে ভাল কথা শুনতে না পেয়ে এবার কাজের ধরণ পরিবর্তন করলো। সবাই মিলে ডাকাতি করা শেষে বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে দেয় এবং ঘরে যুবতী মেয়ে, বাড়ির বউদের পালাক্রমে ধর্ষণ শুরু করলো। এবার ফল পেল নগদে! সবাই বলাবলি করছে, আহারে! ওদের বাবা কত ভাল মানুষ ছিল! শুধু চুরি করতো! আর তার ঘরে কি কুলাঙ্গার হয়েছে, ডাকাতি করে, ডাকাতি শেষে ঘরে আগুন দেয়, জুয়ান বুড়া মানে না, ধর্ষন করে। ওদের চাইতে ওদের বাবা অনেক ভাল ছিল। আমেরিকাকে আমরা ভাল বলি। কিন্তু আমেরিকা সেই চোর যার সন্তান ইসরাইল ডাকাতি শেষে ঘরে আগুন দেয় এবং গুরা-বুড়া মানে না ধর্ষন করে।
যা হোক, আমেরিকা পাকিস্তানের যেখানেই হামলা করা দরকার লাদেন সেখানেই যায়! পাকিস্তানিরাতো এক বিচি ফেলে দেয়া বলদের মত। ওটা না আবাল না দামড়া। আমেরিকাকে সুযোগ দিয়ে নিজেদেরই অস্তিস্ব সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। নিজেরাই এখন একটি জঙ্গি রাষ্ট হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে। আর জঙ্গি দমনের নামে সাধারণ মানুষ মেরে আমেরিকা হয়েছে মানবতার দেশ!
আমেরিকা হলো সেই দেশ যে, ইসরাইলকে দিয়ে কার্য সিদ্ধি করে নিজেই আবার মলম নিয়ে দৌড়ায়। ইসরাইলকে দিয়ে বিশেষ এসাইনমেন্ট এক্সিকিউট করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে নিজের দেশেও দু’একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যা নিরবে সহ্য করছে। কিন্তু ইসরাইল থাকছে ধরাছোয়ার বাইরে। ফেসবুকের কারনে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। সমর্থিত, অসমর্থিত নানা উৎস হতে তথ্য ভেষে বেড়ায় অনলাইনে। এমন অনেক তথ্যের মধ্যে যে তথ্য ভেষে বেড়াচ্ছে তা হলো আজকের এই আইএসআইএস আমেরিকারই সৃষ্টি! আইএসআইএস এর অন্যতম শ্রষ্টাদের মধ্যে ইসরাইলের প্রাধান্যই বেশি। তবে তারা পানির মত। পাত্রে স্থান নেয়ার সাথে সাথে সেই পাত্রের রূপ নেয়। আইএসআইএস যেহেতু ইসলাম এর নাম ব্যবহার করে, তাই ইসরাইলীরা ইসলাম পন্থির রূপ ধারণ করে থাকতে পারে। বাংলাদেশেও অনেক জঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে বা যাদের খোজা হচ্ছে তাদের তালিকায় নব্য ইসলাম গ্রহণকারীর আধিক্য বেশি। মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী, হুরের জন্য মরতে রাজী। জঙ্গিদের কাছে এমন এক মস্তিস্ক প্রক্ষালন যন্ত্র আছে যা দিয়ে মাথা এমন ভাবে ওয়াশ করা হয় যে, যা শেখানো হয় তাই বলে। তাদের মাথায় জেহাদ, জেহাদ আর জেহাদ!! কারন জেহাদে মরলে শহীদ, শহীদ বিনা হিসাবে বেহেস্তে, আর বেহেস্তে হুরের ব্যবস্থা!! তাহলে দুনিয়ায় থেকে কি লাভ, জেহাদে জাব (নাশকতায়), শহীদ হব (অপারেশন থান্ডার বোল্টে গুলি খেয়ে মরব) এই হলো তাদের দর্শণ। পবিত্র কোরআন এসব তথাকথিত শহীদরা পড়ে বা বুঝে বলে মনে হয় না। পড়লে বা বুঝলে এমন কাজে পা বাড়াতো না।
ইসলামের লেবাসে নাকি অনেক ইসরাইলী মোসাদের সদস্য জঙ্গি সদস্য হিসাবে নাম লিখিয়েছে! জঙ্গি মরে কিন্তু ইসরাইলী বাংশোদ্ভুত কোন জঙ্গি মরেছে শোনা যায় নাই। তাই জঙ্গি-মঙ্গি কিছ্ইু না। আমেরিকার ইশারায় ইসরাইলীরা বিশেষ এসাইনমেন্ট এক্সিকিউট করছে এমনটাই ধারনা পাওয়া যাচ্ছে ইন্টারনেট বিশ্বে! ইসরাইলই আজরাইল শান্তিকামী বিশ্বের জন্য!!
 
   



কুকুর-বিড়াল-বৃদ্ধ-মহিলা-শিশু-গরু-গন্ড মূর্খ দেখলে সাবধান!!
যারা গাড়ি চালান অর্থাৎ বাই সাইকেল থেকে শুরু করে ভারী যানবাহন (রেল গাড়ি ছাড়া!) তারা সবসময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকেন। নিজেতো সতর্ক থাকেনই শুভাকাঙ্খিদের, পরিচিত জনদেরও সর্বদা সতর্ক করেন।
সবসময় বলেন, সাবধানে গাড়ি চালিও! যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে! সতর্ক দৃষ্টি রাখবা গাড়ি চালানোর সময়! 
রাস্তা দেখে শুনে চলবা! হঠাৎ কোন কিছু সামনে চলে আসতে পারে বা পিছন থেকে ধাক্কা দিতে পারে তাই দেখে শুনে চলবা। 
কুকুর বিড়াল থেকে সাবধান! যে কোন সময় গাড়ির সামনে কুকুর বিড়াল চলে আসবে। কুকুর বিড়ালের লোমের কারনে সহজে গাড়ির চাকা তাদের উপর দিয়ে উঠে না। আর যদি উঠেযায় তবে চাকা পিছলে গিয়ে দুর্ঘনটা ঘটে থাকে তাই সাবধান থাকা জরুরী।
গরু ছাগল কিন্তু আৎকা দৌর মারে!! গরু ছাগল রাস্তায় চলার সময় ডান বাম দেখে না। চিন্তা ভাবনার ক্ষমতা যেহেতু তাদের নাই তাইতো তাদের বলদ বলে। সেই গরু ছাগল দেখে শুনে চলবা।
বুড়া মানুষ কিন্তু কানে কম শোনে!! বৃদ্ধ মানুষ কানে কম শোনে। শারীরিক অক্ষমতার কারনে সে দ্রুত রাস্তা পারাপার হতে পারে না। চোখেও ঝাপসা দেখে। নানা সমস্যার কারনে বৃদ্ধ মানুষকে সম্মান দেখিয়ে সাবধানে গাড়ি চালাতে হবে।
শিশুরা কিন্তু হঠাৎ দৌড় দেয়!! শিশুরা তো কোমল। তাদের সাত পাঁচ ভাবার সময় কই! রাস্তা ঘাটে শিশুরা মনে যা চায় তাই করে। যে কোন সময় অভিভাবকের হাত থেকে ছুটে দৌর মারতে পারে। একা একাই রাস্তায় এসে পড়তে পারে। আর মহিলারাও রাস্তা পারাপারের সময় একটু বেখায়ালী হয়। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পথ চলবা।
পাগলের কিন্তু মাথা ঠিক নাই!!! পাগল তো পাগলই! পাগলের মাথা ঠিক থাকলে কি সে পাগল হতো। কথায় বলে না? পাগলে কি না খায়, পাগলে কি না করে? তাই পাগল দেখলে সাবধান! পাগল যে কোন মূহুর্তে যে কোন কিছু করে বসতে পারে। তাই সাবধানে গাড়ি চালাবে, ইত্যাদী ইত্যাদী।
আমার অভিজ্ঞতায় নতুন একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে সেটা হচ্ছে গরু-ছাগলের মতই একটা প্রাণী আছে তা হলো গন্ডো মূর্খ। এই গন্ড মূর্খ হতেও সাবধান হতে হবে।
ঈদুল ফিতরের আগের রাতে আমি মটরসাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছি। গাড়ি থেকে পড়ে দুই হাটু ছুলে গেছে। দুই হাতের বিভিন্ন স্থানে ছুলে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমার বাম চোখের কোনায়। বাম চোখের ভ্রুর উপরে এবং বাম চোখের কোনায় পিচ ঢালা রাস্তার ঘষায় ত্বক উঠে গেছে। মারাত্মক যন্ত্রনায় স্থানীয় কিছু বিবেকবান মানুষ আমাকে তুলে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্মীরা আমার ক্ষত জায়গাগুলো ধুয়ে মুছে ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে। বন্ধু ডাক্তার মাহবুবুল হক আমায় হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে ঔষধ কিনে বাসায় পৌছে দেয়। আস্তে আস্তে শুরু হয় ব্যাথা। চোখ ফুলে ঢোল! ফুলার চোটে চোখের সাটার বন্ধ হয়ে গেল! এক চোখ দিয়ে দেখার যে কি যন্ত্রনা তা অনুভব করলাম। দুই দিন লাগলো চোখের ফুলা কমতে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে এখন দুচোখেই দুনিয়া দেখি। ঘা এখনও শুকায়নি। ঘা শুকাতে অন্তত মাস খানেক লাগবে। ত্বক আগের অবস্থায় ফিরবে কিনা আমি জানি না। ত্বকের সৌন্দর্য ফিরা নিয়ে আমার তেমন কোন দুশ্চিন্তাও নেই। এই কালো মুখের (পোড়া মুখের নয়!!) কালো ত্বক আর নতুন করে কি সুন্দর হবে?
এবার আসি আমার দুর্ঘটনার কথায়। ঈদুল ফিতরের আগের রাত সাড়ে দশটার দিকে আমি আর আমার বন্ধু ডাক্তার মাহাবুবুল হক কোর্ট এলাকা থেকে চা সেবা করে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। ডাক্তারকে হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। চৌরঙ্গীর মোড় থেকে কিছুদুর আসার পর দুর থেকে দেখলাম ইটালী প্লাজার সামনে দাড়িয়ে এক ব্যক্তি ভ্যানে করে চটপটি-ফুসকা বিক্রি করছে। ফুচকাওয়ালার চারপাশে ছয়-সাতটি কুকুর ঘোরাঘুরি করছে। আমি এগিয়ে আসছি আর দেখছি দৃশ্যটা। আমি যখন ফুচকাওয়ালার কাছাকাছি আসি ঠিক তখনই ফুচকাওয়ালা একটা লাঠি হাতে নিয়ে কুকুরগুলোকে কুকুরের মত তাড়া দেয়!! জ্ঞান শুন্য কুকুরগুলো ভয়ে দিক বিদিক ছোটে জীবনের ভয়ে। কথায় বলে না, মাইরেরে ভয় পায় পাগলেও! একটা সুঠাম দেহী কুকুর দৌরে এসে আমার মোটর সাইকেলের সামনের চাকায় এসে ধাক্কা খায়! ব্যাস!! অমনি আমার গাড়ি বাম দিকে কাত হয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে গড়িয়ে যেতে থাকে। আমি হলাম ভারী জানবাহনের মত! মোটা মানুষ! তাই কিছুদুর ছেচড়ে গিয়ে অতপর ঘর্ষণজনিত কারনে গতি থেমে যায়! ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে গেল। আমার বাম পা গাড়ির নিচে। দেহ জাগিয়ে সহযোগীতার জন্য অপেক্ষা করছি কারন নিজে উঠার শক্তি পাচ্ছি না। বেকুব ফুচকাওয়ালা আমাকে টেনে তোলার জন্য এগিয়ে না এসে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে! আমি তাকে ধমক দিয়ে বললাম, বেটা তোল আমাকে। এর পর সে আমার কাছে এগিয়ে আসলো। ফুচকাওয়ালা আসতে আসতে আসপাশের দোকান থেকে দুর্ঘটনার শব্দ পেয়ে লোকজন ছুটে আসলো। আমাকে প্রথমে রাস্তা থেকে তুলে পাশের একটা দোকানের সিড়িতে বসালো। আমার গাড়িটা রাস্তা থেকে তুলে এনে দোকানের সামনে লক করে গাড়ির চাবিটা একজনের হেফাজতে রেখে আমাকে জানালো যে চাবি তাদের কাছে আছে। আমি কপালের বাম দিকে যন্ত্রনা অনুভব করে হাত দিয়ে ধরে দেখি হাত রক্তে লাল হয়ে গেছে। মাথাটা ডানে ঘুরলো না বামে ঘুরলো জানিনা, অনুভব করলাম মাথা ঘুরাচ্ছে!! হাত গড়িয়ে এবং কপালের রক্ত কপল বেয়ে পড়া দেখে দোকানদার ভাই এক মুঠো টিসু পেপার এনে দিলে আমি টিসু পেপারগুলো একসাথে চেপে ধরলাম কপালের ক্ষতস্থানে। চৌত্র মাসে মাঠের শুস্ক মাটি যেমন পানি পেলে শুশে নেয়, মূহুর্তের মধ্যে টিসু পেপার ভিজে চপচপা হয়ে গেল। আমার উদ্ধারকারীরা রিক্সা ডাকাডাকি করছে আমি শুনতে পাচ্ছি। এরই মাঝে একটা রিক্সা পাওয়া গেল। উদ্ধারকারীদের একজন আমাকে ধরে রিক্সায় উঠিয়ে তার ভাগিনাকে ফোনে বললো একটু দোকানে গিয়া বয় আমি ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। রিক্সায় বসে আমাকে ধরে রাখছে, এরই মধ্যে আমি আমার ফোন বের করে ডাক্তার বন্ধুকে ফোন দিলাম। বলে রাখা ভাল, আমার ডাক্তার বন্ধু দশবার ফোন দিলে একবার ধরে, মাঝে মাঝে ধরেও না! আমার ভাগ্য ভাল, ফোন দেয়ার সাথেই ফোন রিসিভ করলো এবং আমি তাকে বিষয়টি জানালাম। ডাক্তার মাহবুব এর বাড়ি হাসপাতালের পাশেই। সে দ্রুত হাসপাতালে আসলো। আমাকে রিক্সা থেকে ধরে নামিয়ে রিক্সার ভাড়া সেই পরিশোধ করে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেল। আমাকে ডাক্তার বন্ধুর কাছে দিয়ে সাথে আগন্তুক বন্ধু চলে গেল। তার সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা নাই। ধন্যবাদ বন্ধু। ডাক্তার বন্ধু আমাকে জরুরী বিভাগের বেডে বসিয়ে দিয়ে লোক ডাকলো এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিল। জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার ছিল সুমন পোদ্দার। ঈদের কারনে সকল ডাক্তার ছুটিতে যাওয়ায় টানা তিন দিন তার উপরই জরুরী বিভাগের দায়িত্ব পড়েছে বলে সে কথার ফাকে জানালো। এর পর একে একে আমার রক্তাক্ত স্থানগুলো প্রথমে পরিস্কার পানি দিয়ে মুছে দিল এবং পরে ক্ষতস্থানগুলোতে তরল ঔষধ লাগিয়ে দিল। ঔষধ এক এক স্থানে দেয় আর সেই স্থানে একেকটা কামড়ের মত যন্ত্রনা অনুভূত হয়! ছোট হলে চিৎকার দিতাম কিন্তু বয়স বিবেচনায় চিৎকার দিতেও পারছি না, পাছে লোকে যদি হাসে। ডাক্তার সুমন পোদ্দার বন্ধু মাহবুবকে জিজ্ঞাস করলো, স্যার ব্যাথা নাশক ইনজেকশন দিয়ে দেব? কথাটা শুনে আমার মনে হলো, যদি দেয় তবে দুর্ঘটনার থেকেও বেশি আহত হব! আমি তাদের কথপোকথন শুনে বললাম, ইনজেকশন নেব না খাওয়ার ঔষধ যা লাগে দিতে পারো! শুনে দুজনেই হাসলো। বন্ধু মাহবুব সুমন পোদ্দারকে বললো, ইনজেকশনকে ভয় পায় এ কারনে আমি হাজার বার বলার পরেও আজ পর্যন্ত সে জন্ডিসের টিকা দিতে পারেনি, বলে দুজনেই হাসলো। বন্ধু মাহবুব আমায় জিজ্ঞাস করলো আর কোথাও ব্যাথা অনুভব হচ্ছে কিনা, কেমন লাগছে, কোন অস্বাভাবিকতা অনুভব হচ্ছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বললাম একটু জ্বলে! একটু ব্যাথাও করে। শুনে বন্ধু বললো ওটা কিছু না, ঠিক হয়ে যাবে। কয়েকদিন সময় লাগবে। আমি বাড়িতে ফোন দিয়ে যানাতে যাব তখন বন্ধু বললো ফোন দেয়ার দরকার নাই, তুই যথেষ্ট ভাল আছিস। ফোন দিলে সবাই চিন্তা করবে, শুধু শুধু ফোন দিয়ে তাদের চিন্তা বাড়িয়ে কি লাভ!! ভাল আছি কথাটা শুনে একটু সাহস বাড়লো। ডাক্তার যেহেতু দেখে বলছে ভাল আছিস তাহলে আর খারাপ থাকি ক্যামনে!! পরে বেড থেকে নামিয়ে আমাকে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনল। এর পর একটা রিক্সা ডেকে দুজনে গেলাম দুর্ঘটনাস্থলে। গিয়ে দেখি গাড়ি লক করাই আছে। রিক্সা থেকে নেমে আমি গাড়ি চালু করে দেখি গাড়ির কোন ক্ষতি হয়নি, চলছে। বন্ধু বললো চালাতে পারবি? আমি বললাম পারবো। বন্ধু রিক্সাটা না ছেড়ে আমায় বললো তুই আস্তে আস্তে চালিয়ে যা আমি রিক্সা নিয়ে তোর পিছন পিছন আসি। আমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে বন্ধু রিক্সাটা নিয়ে চলে গেল, এই না হলো বন্ধু। এখানে বলে রাখা ভাল, আমার জীবণে দুর্ঘটনা যাতীয় সকল সময় এবং সকল অসুস্থ্যতার সময় আমার বন্ধু আমার পাশে থেকেছে একারনে তার প্রতি কৃতজ্ঞতাটাও আমার আকাশ সীমা পর্যন্ত। 
নিজের কথাতো অনেক বললাম! এই ঘটনায় আমার অভিজ্ঞতার কথাটা এবার বলে শেষ করি। সবাই বলে কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল, পাগল, শিশু, বৃদ্ধ হতে সাবধান! আমি মনে করি, গরু ছাগলের মত গন্ড মূর্খ হতেও সাবধান থাকা দরকার। কারন, ফুচকাওয়ালা কুকুর গুলোকে এমন সময় তাড়া না দিলেও পারতো! তার বিবেক বিবেচনা থাকলে বোঝা উচিত ছিল, তাড়া খেয়ে কুকুরগুলো ছুটে গিয়ে আমার মোটর সাইকেলে ধাক্কা খাবে, আমি যদি না থাকতাম, যদি একজন পথচারি থাকতো তবে কুকুর গুলো পথচারীর সাথে ধাক্কা খেয়ে তার পায়ে কামড় বসিয়ে দিতে পারতো। যদি বড় গাড়ি এসে পড়তো তবে কুকুর বড় গাড়ির চাকার নিচে গেলে চাকা পিছলে গাড়ি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারতো! তাই কুকুর তাড়া দেয়ার সময় তার আশেপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি দেখা উচিত চিল। এখন আমার কাছে কুকুরের বিবেচনা আর ফুচকাওয়ালার বিবেচনা একই মনে হলো। তাই গরুর সাথে গন্ড মূর্খ হতেও সাবধান হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি! সমস্যা হলো দেখেতো আর গন্ড মূর্খ চেনা যায় না!!!




আমার মায়ের ডাক ও মুখ
মা... মা... মা...। পৃথিবীতে যত কিছু আছে মায়ের সাথে কোন কিছুরই তুলনা করা যায় না। পৃথিবীতে যত কথা, যত শব্দ আছে মা শব্দের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন শব্দ খুজে পাইনি। এত মধুর, এত সুরেলা, এত মমতা মাখা, এত আবেগী একটা শব্দ যে মা ডাকাতেই তার স্বাদ পাওয়া যায়। অন্য কোন ডাকে বা অন্য কোন শব্দ উচ্চারনে এত প্রশান্তি লাভ করা সম্ভব নয়।
আমার মা নেই। বিগত ৩০ মার্চ ২০১২ তারিখে আমার মা আমাদের চির বিদায় দিয়ে পৃথিবী থেকে চলে গেছে। কোন শান্তনাই মায়ের অভাব পুরন করতে পারেনি। কোন ডাকেই মায়ের মমতা মাখা আবেগ পূর্ন করতে পারেনি। কোন কিছুতেই মন শান্ত হয় না, আজও শান্ত হয়নি, আর হবেও না জানি। কারন মা তো আর ফিরে আসবে না। মায়ের কাছে শত আব্দার করেছি ফেরায়নি কোন আব্দারই। কত অভিমান করেছি মা মনে রাখেনি। শত রাগের পরেও খাবার সময় ঠিকই রাগ ভেঙ্গে ডাক দিয়েছে। বাড়িতে ফিরতে দেরি হলে খোঁজ নিয়েছে। মুখ ভারি দেখলে শান্তনা দিয়েছে। ভিতরে হিংসা দেখলে উপদেশ দিয়েছে। এমন উদার গর্ভধারিনী জননী ছাড়া আর কে হতে পারে? এমন নির্লোভ ভালবাসা মা ছাড়া আর কে দিতে পারে? সবই উপলব্ধি করতে পারছি এখন যখন মা আর কাছে নেই। মায়ের জন্য কিছুই করতে পারিনি-অপরাধবোধ কাজ করে প্রতিনিয়ত। কিন্তু মার কোন দিন কোন চাওয়া ছিল না আমার কাছে। কোন দিন কিছু চায়ওনি। আর মায়েরা কোনদিন কিছু চায়ও না, শুধুই দেয়। দিতে দিতে নিঃশেষ হয়ে যায় তবুও দেয়া ফুরায় না। মাকে আর কিই বা দিব, কিই বা দেয়ার আছে আমাদের। মায়ের মুখের মধুর ডাক এখনও কানে বাজে। আমার মা আমাকে বাবা বলেই ডাকতো। কি মধুর সে ডাক। এখন আর ডাকে না কিন্তু প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনি বাজে কানে। এখনও সমাধির পাস দিয়ে যাওয়ার-আসার সময়, নিরবে নিভৃতে থাকার সময়, একলা পথ চলার সময় শুনি সেই মধুর বাবা ডাক। আমার মা আমাকে এতটাই বাবা ডেকেছে যে মায়ের মৃত্যুতে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি মা হারাইনি আমার আদরের সন্তান হারিয়েছি। মা হারিয়ে প্রথমে ডুকরে ডুকরে কেদেছি দেখে অনেকেই শান্তনা দিয়েছে। আস্তে আস্তে ডুকরে কাদা থেমে গেছে। এখনও কাদি। তবে নিরবে নিভৃতে। বুকের ভিতর মা হারানোর ব্যাথা যে কত কষ্টের তা পরিমাপের কোন যন্ত্র নেই, প্রকাশের কোন ভাষা নেই। এখন আর চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়ে না। মুখ ফ্যাকাশে হয় না। কিন্তু বুকের ভিতর চিন চিন ব্যাথা হয়, কথা জড়িয়ে যায়, অনুভব করি তখন গর্ভধারিনী মা আর নেই, আর আসবে না। সব ব্যাথা ভুলে যাওয়া যায় না। আঘাতের ব্যাথা সেরে যায়, বন্ধুদের দেয়া কষ্ট মুছে যায়, মা হারানোর ব্যাথা শত চেষ্টায়ও ভুলে থাকা যায় না। ভুলবই বা কি করে? মায়ের যে অবদান, মায়ের যে আত্ম ত্যাগ, মায়ের যে ভালবাসা, মায়ের যে উদারতা, মায়ের যে মমতা তার সাথে তো কোন কিছুরই তুলনা করা যায় না! তাই মা হারানোর ব্যাথা কখনো যায় না, যাবেও না। এখন দুঃখ পেলে মায়ের দেয়া শান্তনাগুলো কানে বাজে, এখনো কষ্ট পেলে মায়ের কথাগুলো মনে পরে, এখনও মনে হিংসা-ক্রোধ দানা বাধলে মায়ের উপদেশগুলো কানে বাজে, শান্ত হয়ে যাই, উদার হতে চেষ্টা করি। একজন মা এতটা উদার, মমতাময়ী কি করে হয় ভেবে পাই না। তাই মনে মনে ভাবি, মা ছিল, মা থাকবে। লোকচক্ষুর আড়ালে গেলেও মায়ের অস্তিত্ব টের পাই, দেখানো পথে হাটতে চেষ্টা করি। চিরদিন যেন মায়ের দেখানো পথে হাটতে পারি আল্লাহর কাছে সেটাই চাই। মায়ের দোয়াতেইতো আজকের আমি, আমার অবস্থান, আমার সবকিছু। 
দেখতে দেখতে অনেকটা বছর কেটে গেল। আমিও বাবা হলাম আবার। গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ আমি বাবা হয়েছি। আল্লাহর কাছে আমি একটা মা’ই চেয়েছিলাম। মহান আল্লাহ আমার মনের কথা শুনেছেন। আমাকে একটা কন্যা সন্তান দিয়েছে সৃষ্টিকর্তা। আমার মায়ের বিদায়ে আমি কেদেছি। আবারও কাদলাম আমার নতুন মায়ের কান্নার শব্দে, নতুন মাকে কোলে নিয়ে। আমার কন্যার নামও রেখেছি মায়ের নামের সাথে মিল রেখে। আমার মায়ের নাম ছিল রওশনারা বেগম। আমার কন্যার নাম রওশন আসাদ প্রিয়ন্তী। প্রিয়ন্তী একটু একটু করে বড় হচ্ছে। সে আস্তে আস্তে বিভিন্ন শব্দ করতে শিখছে। বুঝে কোন শব্দ করে না জানি। কিন্তু প্রিয়ন্তীর মুখে প্রথমেই সেই মায়ের ডাক। আমার মা আমাকে সবসময় বাবা বলেই ডাকতো। প্রিয়ন্তী মুখ দিয়ে আব্বু আব্বু শব্দ উচ্চারন করে! সকল শিশুই শুরুতে দাদা, দাদি, বু শব্দ উচ্চারন করে। আমার কন্যা স্পষ্টই আব্বু শব্দ উচ্চারন করে! আমি অভিভূত হই, অবাক হই না। আল্লাহ আমার মাকে নিয়ে আবার আমাকে মা দিয়েছে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের অভাব বোঝেন। তাই আমার কন্যা আমাকেই ডাকছে। কন্যার মুখে আব্বু শব্দ শুনে আমি মহান ¯্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার মায়ের গায়ের রং ছিল কালো কিন্তু অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জন্মেছিল। তার জ্ঞান গরিমায় তাকে মরহুম ফজলুর রহমান কোতোয়ালের মেয়ে না বলে অনেকে ছেলে বলতো!! আমার মায়ের গায়ের রং আমি পেয়েছি। আমার কন্যার গায়ের রং তার মায়ের মত। কিন্তু প্রিয়ন্তী মুখের গড়ন পেয়েছে আমার মায়ের মত। আমার মায়ের মুখ গোলাকার, সর্বদা হাসি মাখা। রাগলেও কখনো ধরা দিত না। শত কষ্ট, অভাব-অনটন আমার মায়ের মুখে ছাপ ফেলতে পারেনি। গোলাকার হাসিমাখা মায়ের সে মুখ আমি ভুলতে পারি না। সর্বদা আমার চোখের সামনে ভাষে। আমার মেয়ের গোলাকার হাসিমাখা মুখ দেখে আমি মায়ের মুখের সাথে মিলিয়ে ফেলি। প্রিয়ন্তীর মুখের দিকে তাকালে আমি আমার মায়ের কথা মনে করি। তাই প্রিয়ন্তীকে আমার নাম ধরে ডাকা হয়না। আমি মা বলেই ডাকি। আমি বাড়ি ফিরলে যেমন আমার মায়ের মুখ উজ্জল হয়ে যেত। কন্যার মুখেও তেমনি আমি বাড়ি ফিরলে হাসি ঝড়ে পরে। আমার বাড়ি ফেরার পর সে ঘুমে থাকলেও জেগে ওঠে।
আমার মায়ের অনেক আচরণই আমি আমার কন্যার মধ্যে খুঁজে ফিরি। কিছু কিছু মিলে যায়। আমি দেখে আনন্দ পাই। আমি সবসময় বলি, আমার কন্যা যেন আমার মায়ের মত বুদ্ধি পায়, মেধা মননে যেন মায়ের মত হয়। সে যেন আমার মায়ের মত উদার, মমতাময়ী হয়। সে যেন সকলের প্রশংসা কুড়ায়। আমি আমার কন্যার ভিতর আমার মায়ের মুখ ও ডাক ফিরে পেয়েছি। সেই ডাক ও মুখ ফিরে পাই, কখনো বেশি পাই। কিন্তু মাকে ভুলতে পারি না, পারবোও না। ভাল থাকুক আমার নতুন মা, শান্তিতে থাকুক আমার মা.............





মায়ের জন্য আকুতি ঃ ভাল থাকুক সবার মা
আজ মা দিবস। যদিও একটি নির্দিষ্ট দিনে মা দিবস পালন করার মত কোন বিষয় না। মা দিবস পালন করার কি আছে। মা তো আছে সবার অন্তরে, সব সময়, সব জায়গায়। আনন্দে মা, কষ্টের সময় মা, বিপদে মা, উল্লাসে মা, নিঃস্বাসে মা, মা মা মা মা .........হাজারো উপমা উদাহরণ লিখা যাবে মা নিয়ে।
আমার কাছে মা দিবস প্রতিটি ন্যানো সেকেন্ড। আমার মা আজ নেই। দুই বছর হয়ে গেল সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এই দুটি বছরের কোন মুহুর্ত বাদ যায়নি মাকে মনে পড়েনি। কোন কিছুতেই পুরন হয়নি মায়ের অভাব। আর পুরন হবেও না জানি।
আমার মা নেই। যাদের মা আছে তারা আমার চেয়ে অনেক ভাগ্যবান। সবাই মাকে, বাবাকে ভালবাসবেন, ভাল জানবেন, খেয়াল রাখবেন, শ্রদ্ধা করবেন এই কামনাই করি। একবার চলে গেলে আর শত চেষ্টায়ও ফেরাতে পারবেন না, চাইলেও আর সেবা করতে পারবেন না।
সবার মা ভাল থাকুক, সুস্থ্য থাকুক, সুন্দর থাকুক।




সাগরে ভাসছে মানবতা ঃ কোথায় এখন মানবাধিকার?
সম্প্রতি সময়ে দেশে সবচেয়ে আলোচিত খবর অবৈধ ভাবে মানব পাচার। জীবিকার তাগিদে ছোট নৌকাযোগে উত্তাল সাগর পারি দিয়ে কর্মের সন্ধানে ছোটা মানুষগুলো পড়ছে বিপদে। অতঃপর গ্রেফতার, মৃত্যু, গণকবর! ভূখা নাঙ্গা হাড্ডিার কিছু মানুষের প্রতিচ্ছবি বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই ঘটনা যখন চরম অবস্থায় পৌচেছে তখন সরকার সহ বিশ্ব বিবেকের গায়ে সামান্য সুরসুরি লাগছে। আসলে এমন কেন হচ্ছে?
আজ থেকে দশ-পনের বৎসর আগেও লোক মুখে শুনেছি, মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি মানুষ ইটালী যাচ্ছে মাছের ফ্রিজিং গাড়িতে করে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌছাতে না পারলে মানুষ হিমায়িত অবস্থায় গিয়ে পৌছায়। হিমায়িত মাছের মূল্য আছে কিন্তু হিমায়িত মানুষের মূল্য নাই দুই পয়সাও! আবার দিনের পর দিন পায়ে হেটে, বন জঙ্গল পার হয়ে বরফের চাদরের উপর দিয়ে হেটে যায়, স্থানীয় ভাবে তাকে বলে ডাংকিমারি!! প্রকৃত শব্দটা কি হবে আমি নিজেও জানি না। ভূক্তভোগীদের জিজ্ঞেস করলে বলে ঐ এলাকায় বরফের খাল, নদী পায়ে হেটে পার হওয়াকে ডাংকিমারি বলে।
সেই সময়কার ডাংকিমারি করে যারা দেশে খালি হাতে শুধু জীবন নিয়ে ফিরে আসছে তাদের অনেকের সাথে আমার কথা হয়েছে পেশার কারনে। একসময় আমি সাংবাদিক ছিলাম। প্রথম আলো, কালেরকন্ঠ পত্রিকায় কাজ করেছি দীর্ঘদিন। পেশার কারনে মানুষের সাথে কথা বলেছি, মিশেছি, তাদের হৃদয় ভাঙ্গার গল্প শুনেছি। এই ঘটনায় আমার পরিচিত জন, আত্মীয় স্বজন, কন্ধু বান্ধবও ছিল। আমার এক বিয়াই এভাবে অবৈধ পথে ইটালী যাওয়ার চেষ্টা করে জীবন নিয়ে দেশে ফিরত এসেছে। দেশ থেকে পাকিস্তান হয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে প্রথমেই পড়ে মাফিয়াদের হাতে। সেখানে মাফিয়ারা আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবী করে। মুক্তিপণ দিয়ে আবার পাড়ি দেয়। বরফের নদী পায়ে হয়ে যখন আলোর সন্ধান পাবে সেই মুহুর্তে গ্রেফতার। অতঃপর দেশে ফেরত।
আরেক পরিচিতজন এভাবেই দিন রাত বরফের উপর দিয়ে পায়ে হেটে এক স্টেশনে পৌছার পর দেখে পায়ে আর জোর নেই। পাটাই যেন বরফ হয়ে গেছে। আগুনে ছেকার জন্য পা রাখে আগুনের উপর। আস্তে আস্তে পা একটু গরম হয় ঠিকই কিন্তু আগুনের তীব্রতা অনুভব করতে পারে না। অনুভবের সেই বোধ শক্তি হারিয়ে গেছে। পরবর্তীতে দেখা গেল তার পায়ে পচন ধরেছে। যতটা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় পা গরম করা উচিত ছিল ততটা দ্রুত পা গরম করায় তার পায়ে পচন ধরে। পরবর্তীতে তাকে দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হলো। চিকিৎসা শেষে তার দুই পায়ের অর্ধেকটা করে কেটে ফেলতে হলো। জীবন জীবিকার টানে সুস্থ্য অবস্থায় বিদেশের পথে পাড়ি জমালেও পঙ্গু হয়ে গেল সে। এখন আর স্বাভাবিক অন্য দশজনের মত হাটতে পারে না, পছন্দ মত জুতা পড়তে পারে না। এভাবেই মানুষগুলো পণ্যের মত বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে কেউ জীবন নিয়ে পালায় আবার কেউ জীবন দেয়। পিছনে ফেলে যায় অনেক স্মৃতি, পরিবার, ভালবাসার মানুষগুলো আর একরাশ স্বপ্ন।
আমাদের সকলের মনে একটাই প্রশ্ন, কেন মানুষগুলো এভাবে জীবনের ঝুকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে? বন জঙ্গল বরফের উপর দিয়ে জীবনকে সংকটে ফেলছে? এর অনেক কারন আছে যা বোধ্যারা ভাল বলতে পারবেন। তবে আমার কাছে যে কারনগুলো মনে হয় তা আমি আপনাদের সাথে একটু শেয়ার করে নিতে পারি।
অশিক্ষাঃ যারা জীবনের ঝুকি নিয়ে সমুদ্র, বন জঙ্গল বাড়ি দিচ্ছে তাদের বেশির ভাগ মানুষই অত্যন্ত অশিক্ষিত। অশিক্ষিত মানুষগুলো দেশে তেমন ভাল কোন কাজ করতে পারে না। তাদের ধারনা দেশে যেহেতু কিছু করতে পারলাম না তাই বিদেশ গিয়ে নিজের ভাগ্যটা পরিবর্তন করে ফেলবো দ্রুত সময়ে। বিদেশে গিয়ে যে কোন কাজই করবো কেউ দেখবে না। বিদেশের ঐ কাজই দেশে করলে একটু শরম লাগে!! তাই বিদেশে গিয়ে নিম্নমানের কাজই হোক আর উচ্চমানের কাজই হোক করে মোটা টাকা নিয়ে দেশে এসে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকিব!!
অগ্যতাঃ অশিক্ষিত এই মানুষগুলো জ্ঞান গরিমায়ও ছোট, কাজের অভিজ্ঞতাও কম, অনেকেই একদম অযোগ্য। বিদেশ বিভূইয়ে কি করতে পারবো, কি করতে হবে, কিভাবে যাওয়া যায়, কোন পথ বৈধ কিছুই জানা নেই। আর অগ্য-অনভিজ্ঞ এই মানুষগুলো বিদেশ পাড়ি দিয়ে বিপদে পরে নিজে, বিপদে ফেলে পরিবারকে, বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেশ ও জাতিকে।
কাজের অভাবঃ দেশে জনসংখ্যা অনুপাতে কাজের অভাব। এক্ষেত্রে সরকারের বিশাল গাফিলতি আছে নিঃসন্দেহে। সরকার উদ্যোগি হয়ে নাগরিকদের পর্যাপ্ত কাজের ক্ষেত্র, সুযোগ করে দিতে ব্যার্থ হওয়ায় মানুষগুলো পিপিলিকার মত দল বেধে বিপদের মুখে ঝাপ দিচ্ছে।
উচ্চাভিলাশী মনঃ আমাদের দেশের সাধারণ মানুষগুলোর উচ্চাভিলাশী মন আজকের এই পরিস্থিতির জন্য অনেকটা দায়ী। দেশে কাজ করতে মন চায় না। দেশের কাজকে ছোট করে দেখে। একই কাজ ক্ষেত্রবিশেষ নিম্নমানের কাজ বিদেশে করতে মন্দ লাগে না। দেশে নিজের উদ্যোগে, নিজের মেধা খাটিয়ে, অল্প পূজি দিয়ে কাজ করতে উদ্যোগি হয় না এই মানুষগুলো। সবসময় চেয়ে থাকে উচু তলার মানুষের দিকে। তাকিয়ে তাকিয়ে মনের ভিতরে হিংসা পয়দা করে আর বলে আমারও এমন বাড়ি হতে হবে, আমারও এমন গাড়ি থাকতে হবে, আমিও দুহাত খুলে টাকা খরচ করবো!!! কিন্তু সবসময় যদি উপর দিকে না তাকিয়ে নিচের দিকে তাকাই তবে আজকের পরিস্থিতির মত উষ্ঠা খাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো না। দ্রুত বড়লোক হওয়া যায় না। আস্তে আস্তে হলে সেটা মজবুত হয় এবং বেশিদিন টিকে থাকে। অন্যের অর্থবিত্তের দিকে না তাকিয়ে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী চলার মানসিকতা থাকলে কেউ বিপদে ঝাপ দিত না। তাই উচ্চাভিলাসী মনকে সংযত করতে হবে।
সরকারের ব্যর্থতাঃ সবচেয়ে বড় সমস্যা সরকারের উদাসীনতা ও ব্যর্থতা। সরকারের কাজ প্রতিটি নাগরিকের জীবন জীবিকার খেয়াল রাখা। প্রতিটি নাগরিককে যথাযথ ভাবে শিক্ষিত করে, কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা। শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনের পর যার যার যোগ্যতা অনুযায় কাজের ব্যবস্থা করা। আমাদের সরকার কি সেটা নিশ্চিত করতে পেরেছে? আমাদের সরকার কখনোই সেটা করতে পারেনি। পারলে আজকের এ দৃশ্য দেখতে হতো না। লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার পড়ে আছে কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। লাখ লাখ বেকার কর্মী পরে আছে কাজে লাগছে না। কাজের সুযোগ করে দিলে এভাবে কেউ বিপথগামী হতো না। সরকারের উদাসীনতা চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে। ঘুষ, দুর্নিতি এমন রূপ ধারণ করেছে যার কারনে রাতের আধারে, দিনের আলোয় মানুষ ছোট্ট নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিতে যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তর থেকে অবৈধ ভাবে মানুষ বাইরে যাবে আর বাইরে থেকে ভিতরে ঢুকবে এটা কি করে সম্ভব হয়? তাহলে দেশে নিরাপত্তার জন্য হাজার কোটি টাকা খরচ করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন পোষা হয়? দেশের ভিতর প্রতারক চক্র ঘুরে ঘুরে মুরগি কেনার মত করে বোকা-অগ্য মানুষগুলোকে কিভাবে বিদেশে পাচার করে? দালালরা কিভাবে পার পেয়ে যায়। দালালদের টাকার ভাগ কি প্রশাসনের লোকজন পায় না? না পেলে কেনই বা তাদের বাধা দেয় না? সাধারণ মানুষ তার শেষ সম্বল ভিটে মাটি বিক্রি করে, স্থানীয় এনজিওর কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে। প্রতারিত হয়ে কি শুধু অর্থ বিত্তই হারায়, হারায় তার স্বপ্নও। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে চোখে শরষে ফুল দেখে গৃহকত্রী। পিতা-ভাই হারিয়ে নিঃশ্ব হয় সন্তান-স্বজন। সামান্য রোজগারের জন্য বিদেশে পারি দিয়ে কত মায়ের বুক খালি হলো, কত স্ত্রী স্বামী হারা হলো, কত সন্তান পিতা হারা হলো, গভীর সমুদ্রে মাছের খাবারে পরিনত হল আপনজন।
ঝুকিপূর্ণ বিদেশ পাড়ি দেয়ার ক্ষেত্রে শুধুকি পুরুষই, নারী-শিশুরাও সামিল হয়েছে। নারীরা হয়ে যাচ্ছে ভোগের পন্য। নির্যাতন স্বীকার করে উজ্জল ভবিষ্যতের আশায় ছুটে যাচ্ছে সমুদ্র  পাড়ি দিতে। ভবিষ্যতের উজ্জলতা ম্লান হয়ে যাচ্ছে মুহুর্তেই। দালালের ক্ষপ্পরে পরে জিম্মি হয়ে দেশে কিছু থাকলে তা বিক্রি করে টাকা তুলে দিচ্ছে মাফিয়ার হাতে। সেই টাকাও যাচ্ছে অবৈধ পথে। দীর্ঘদিন যাবৎ এমনটা হচ্ছে সরকার কি কিছুই জানে না? আর কত না জানার ভান করে থাকবে সরকার। আর কত??
দেশে একজন মানুষ ক্রসফায়ার হলে বা অবহেলায় মৃত্যু হলে বা অপঘাতে মৃত্যু হলে আমরা জেগে উঠি। জেগে ওঠাই স্বাভাবিক। আমাদের সাথে বিশ্ব বিবেকও জেগে ওঠে। আজ হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, গণকবর আবিস্কার হচ্ছে, সমুদ্রে অনাহারে থাকা মানুষগুলোকে তীরে ভিরতে দিচ্ছে না।
কেন এখন বিশ্ব বিবেক জেগে উঠছে না। কেন কঠর ভাবে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা হচ্ছে না? সাগরে ভাসমান মানুষগুলো হোক বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের। তারাওতো মানুষ। বিশ্ব বিবেক কেন প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করছে না আজ। এক পৃষ্ঠা প্রেস রিলিজ বা একটু চোখ রাঙ্গানি দিয়েই কি তাদের দায়িত্ব শেষ? হাড্ডিসার কঙ্কালের মত মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকালে বড় মায়া হয়। এই মানুষগুলো যেখানে যেতে চাইছিল সেখানে গিয়েও কোন কাজ করতে পারবে বলে আমার মনে হয়না। আর এ মানুষগুলো দেশে এসেও কোন কাজ করতে পারবে কিনা আমি জানি না। বেশিরভাগ অভিযাত্রীই যেখানে যাবে সেখানের বা ফেরত আসলে দেশের বোঝা হয়ে দাড়াবে। এই জনগণ আর জনশক্তি থাকবে না।
অসহায় মানুষগুলো দেখে বড় মায়া হয়। নিজের বিবেকের কাছে কেন যেন প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, কোথায় আজ মানবতা? মানুষ হিসাবে আমাদের কি এ ঘটনা চেয়ে চেয়ে দেখতেই হবে? কিছুই কি করার নেই? ঠুটো জগন্নাথরা কি বিবৃতি দিয়ে পেয়ালায় পেয়ালায় চিয়ার্স করবে? দালালরা কি বহাল তবিয়তেই তাদের কাজ চালিয়ে যাবে আর আমাদের রাষ্ট্রীয় জানোয়াররা কি দালালদের টাকায় শরীরের মেদ বারাবে?







নেতা ভক্তির নমুনা!!!
আমাদের দেশে নেতার প্রতি সাধারণ মানুষের ভক্তি দিন দিন যেন উঠেই যাচ্ছে! তবে সাধারণ মানুষের নেতার প্রতি ভক্তি উঠে গেলেও অসাধারণ মানুষের যেন নেতার প্রতি ভক্তির শেষ নেই। রাজনীতির মাঠে সাধারণ জনগন নেতাকে যে দৃষ্টিতেই দেখুকনা কেন অসাধারণ জনগন মানে এক শ্রেণীর কর্মীর কাছে নেতারা পিতার চেয়েও বেশি শ্রদ্ধাভাজন!!
আমাদের দেশে নেতাকে কেউ গুরু বলে, কেউ ওস্তাত বা ওস্তাদ বলে, কেউ দাদা বলে আবার কেউ ভাই বলে, কেউ কেউ ভাইয়াও বলে, কেউ বস বলে, কেউ লিডার বলে, কেউ কেউ হুজুরও বলে থাকে। দেখা গেছে, বাপেও বলে দাদা আবার ছেলেও বলে দাদা, নাতী বড় হয়েছে, সেও বলে দাদা। দাদা যেন ঐ নেতার নাম হয়ে গেছে!! কেউ কেউ একই ভাবে ভাই বলে, কেউ কেউ একটু বেশি আদর করে বলে ভাইয়া!! বাপে-পুতে একসাথে এমন ভক্তি ভরে সম্বোধন অন্য কোন সম্পর্কে দেখা যায় বলে মনে হয়না!! নির্বোধ নেতাদের এমন পাম দেয় চতুর কর্মীরা যা নেতা বুঝতে পারে না এবং নির্বোধ কর্মীদের এমন বাশ দেয় নেতারা যা কর্মীরা বুঝতে পারে না!!! সবই ঐ তৈলাক্ত বাশের অংক!
নেতার পিছু একজন তথাকথিত কর্মী যে সময় ব্যয় করে তা নিজের কর্মের বা ধর্মের পিছনেও ব্যয় করে না। তাইতো এক নেতার মুখে বলতে শুনেছি যে, আমি আমার নেতার নাম যতবার যপেছি ততবার যদি মহান আল্লাহকে ডাকতাম তবে আজ আমি অনেক বড় অলি আল্লাহ হতাম। এই হলো সেই মহান নেতার বাণী। সেই নেতার পিছনেও দেখেছি শত শত কর্মী দিন রাত ঘুরে বেড়াতো!!
নেতা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন সে তার নেতার নাম যপে কোন কিছুই হতে পারেনি। তারপরও তিনি যখন নেতার আসনে তখন তিনি একবারও তার কর্মীদের বলেনি যে, তোমরা আমার পিছু পিছু এভাবে ঘুরোনা, আমার নাম এত যপে লাভ নেই, আমার পেছনে এত সময় না দিয়ে নিজের কাজের পিছনে সময় দাও, আমার পিছনে সময় দেয়া মানে নিজের পিছনে বাশ নেয়া, আর নিজের পিছনে সময় দেয়া মানে বাশ বেয়ে সাফল্যের চুড়ায় ওঠা!!!
ওকথা বলবেনা কোনদিনও। কারন তথাকথিত কর্মীদের বিমোহিত করে রাখে নেতারা নানান আশার বাবল ফুলিয়ে।
সম্প্রতি এক দৃশ্য নেতার প্রতি ভক্তির এক অপূর্ব নিদর্শন বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। একটি ভবনের টয়লেটে নিজে মুত্র বিষর্জন করে এসে বাইরে করিডোরে দাড়িয়েছি মাত্র। হঠাৎ সুনামীর জলের মত অথবা মৌচাকের মত যেভাবেই বলেননা কেন, ঐ ভবনের বিভিন্ন দরজা দিয়ে মানুষ ঢুকছে। তাকিয়ে একটু অবাক হলাম। ভাবলাম বাইরে কি পুলিশ লাঠিচার্জ করছে!!! এভাবে মানুষ কেন দল বেধে এদিকে আসছে? সাথে সাথেই বিষয়টা পরিস্কার হয়ে গেল। তাকিয়ে দেখি এক নেতা ঢুকছে ঐ ভবনে। নেতা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ভিষণ বেগে-প্রবল আবেগে আমার পাশ কাটিয়ে ঢুকে গেল টয়লেটে। কিন্তু কর্মীদের পথ চলা থামছে না। একে অপরের উপর যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে!! এর পর নেতার কাছের এক ভাই (দ্বিতীয় কাতারের নেতা) বলে উঠলো, এই তোরা থাম! ভাই প্র¯্রাব করবে!! আরেক জন বলে উঠলো, দাড়া, দাড়া, ........ভাই মোত্তে যায়!!! এবার কথাটা প্রতিধ্বনির মত পিছনের দিকে যেতে শুরু করলো..........ভাই মোত্তে যায়........... ভাই মোত্তে যায়........... ভাই মোত্তে যায়........... ভাই মোত্তে যায়...........।
এর পর কর্মীরা থেমে গেল। থামতে গিয়ে কেউ কেউ একে অপরের উপর ধাক্কাও খেল। কিছুক্ষণ পর ঐ নেতা টয়লেট থেকে বের হলো!! সবাই কড়িডোরের দুই পাশে সাড়িবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে গেল! নেতা এবার পূর্বের চেয়ে কিছুটা মন্থর গতিতে হেটে চললো। নেতার চোখে মুখে ত্যাগের প্রশান্তির ছাপ! ভোগে নয়, ত্যাগেই শান্তি তা নেতার মুখের প্রশান্তির ছাপ বলে দিচ্ছে!!! নেতার পিছু নিল আবার কর্মীরা। কি নেতা ভক্তি!!! এই দেশে নেতাদের মুক্তি নাই!!! মোত্তেও যেতে পারবে না কর্মীদের ছাড়া!!
পরে বিষয়টা বন্ধুদের জানালে কেউ কেউ মন্তব্য করলো ঘটনার চেয়েও মজার কথা!! এক বন্ধু বললো, আমাদের দেশের কর্মীরা নেতাদের এতটাই ভালবাসে যে, নেতার মুত্র বিষর্জনের সময় যদি নেতার মুত্র নল ধরে দাড়িয়ে থাকতে পারতো!! প্রিয় নেতা মুত্র বিষর্জন করে যেমন শান্তি পেত তেমনি কর্মী স্বর্গীয় সুখ অনুভব করতো এবং নিজেকে ধন্য মনে করতো ঐ কর্মী। কিন্তু নেতা তো ওটা ধরতে দিতে পারে না, তাই না??





কেন এমন হয়!! এই দেশেতে মৃত্যু ভাগ্য তাদের কেন নয়?
নিচে আমার প্রিয় লেখক ডি এল রায় বা দ্বিজেন্দ্র লাল রায় এর একটা অতি পরিচিত কবিতা বলুন আর গানেরই বলুন তার একটি লাইল দিলাম। আমার লেখার শেষে পুরো গানের কথাগুলো দিব বন্ধুদের পড়ার জন্য। নিচের কথাগুলো গানের সুরে না হোক একটু পড়ে দেখুন কি সুন্দর কথা। প্রতিটি শব্দ হৃদয় ছুয়ে যায়।
‘‘আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি’’
গানের এই লাইনটায় আমার কিছু কথা!! ‘আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।’ আসলে সবার কপালে কি এই সৌভাগ্য হয়? এই দেশেতে জন্ম নেয়ার ভাগ্য অনেকেরই হয়। প্রতি বছর জ্যামিতিক হারে বাড়ে মানুষ। তারা আর কিছু পাক বা না পাক সুজলা, সুফলা, সশ্য শ্যামলা এই সোনার দেশে জন্ম নেয়ার ভাগ্য যে পেয়েছে সেটা নিশ্চিত। কিন্তু এই দেশেতে মরার সুযোগ কি পায়? আমার দেশের অনেক বড় বড়, ছোট ছোট, ছোট বড় লোক এই দেশেতে জন্মে এই দেশেতে মরতে পারে না। আমার কথাটা বিশ্বাস না হলে একটু মিলিয়ে দেখুন। আমাদের দেশের অনেক লোক কখনো ভারতে গিয়ে, কখনো হংকংয়ে গিয়ে, কখনো সিঙ্গাপুর গিয়ে, কখনো থাইল্যান্ড গিয়ে, কেউ কেউ আমেরিকা-লন্ডন-সুইজারল্যান্ডসহ নানা দেশে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে!! দেশেই মারা যেতে পারতো। কিন্তু শেষ সময়ে চিকিৎসার ছুতোয় চলে যায় বিদেশে! সেখানে গিয়ে আর ফেরত আসেনা। পরে জোর করে লাশ নিয়ে আসা হয়! আমি মৃত্যু নিয়ে কোন রসিকতা করছি না। বা যারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান তাদের হেয় করছি না। কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয় তাদের ভাগ্য বিধাতা এই বঙ্গ মাতার কোলে শান্তিতে মরতে দিতে চায় না। তাই ছল ছুতোয় দেশের বাইরে নিয়ে যায়। যদিও জোর জবরদস্তি করে আবার দেশে আনা হয়। কিন্তু এই দেশেতে মরিবার সাধ মিটে না।
কেন এমন হয়??
আধুনিক ফতোয়াঃ আসলে এমনওতো হতে পারে! দেশের সাথে তারা এমন কিছু কাজ করেছে যার শাস্তি হিসাবে বিধাতা তাদের এদেশে মৃত্যুভাগ্য হরণ করেছেন। কোটি কোটি মানুষ এই দেশের ডাক্তার, এই দেশের কবিরাজ, এই দেশের ফকির, এই দেশের ঝাড়ফুক নিয়ে বাঁচার আশায় বুক বাধে। যারা আমাদেরকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, অন্ন, বস্ত্র, নিরাপত্তা দিবে তারা কি তা দেয় ঠিকমত? নিজের স্বাস্থ্যর চেকআপ করার জন্য দেশের বাইরে চলে যায়, নিজেদের আখের গোছাতে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি করে নিজের সন্তানকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেন। লাখো মানুষের বাসস্থান থাকুক বা না থাকুক, নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাদের তাদের থাকে একাধিক আলিশান বাড়ি, ফ্ল্যাট। আবার অনেকে দেশের গন্ডি পেরিয়ে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোমল্যান্ড হিসাবে বেছে নেয় বিদেশ, বিদেশে গড়ে স্বপ্নের বাড়ি। ছেড়া কাপরে লজ্জা ঢাকতে পারেনা হাজারো মা। যারা নিশ্চিত করবে তাদের ছেলে-মেয়ে-বউ দেশি কোন পোষাকই গায়ে চড়াতে চায় না। প্রতিদিন হাজারো শিশু কাদে খিদের জালায়। তাদের মুখে অন্ন নিশ্চিত করার কথা যাদের তাদের বাবুটা কিছুই খেতে চায় না কিন্তু ফাষ্টফুডের দোকানে ঢুকলে হাজার হাজার টাকা বিল হয়, না খেয়ে সেই শুকিয়ে যাওয়া বার-পনের বছরের বাবুটার ওজন নব্বই থেকে একশত পাঁচ কেজি।
আমাদের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব থাকে যে নেতার কাছে, যে অফিসারের কাছে, যে ব্যবসায়ীর কাছে, যে শিক্ষকের কাছে, যে সমাজ সেবকের কাছে সে তার দায়িত্ব পালন না করে দেশের সাথে বেইমানি করেছে বলেই আমার মনে হয় তাদের এই দেশে মৃত্যুভাগ্য হয় না! যারা আমাদের সাধারণ মানুষের ও দেশের হক নষ্ট করে। এই অপরাধ আমরা আপাত দৃষ্টিতে দেখিনা বা বুঝতে পারি না কিন্তু বিধাতা তো ঠিকই দেখে! সৃষ্টিকর্তাতো এক মহান বিচারক, সে ঠিকই বিচার করে! ফলে দেশের মাটিতে তার আর মরা হয় না। মরার পর দেশে আসে। তাই আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়,
কেন এমন হয়!! এই দেশেতে মৃত্যু ভাগ্য তাদের কেন নয়?

ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে যে স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।
পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখি কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি
গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে
তারা ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে।।
ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ
ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।।





শিশু জিহাদ ও আমাদের রাজনীতিতে অবিশ্বাসের বিষ
শরীয়তপুরের সন্তান জিহাদ। কেউ তাকে চিনতো না কয়েকদিন আগেও। নিয়তির নির্মম বাস্তবতায় জিহাদ আজ আমাদের মাঝেই নয় সারা বিশ্বে পরিচিত নাম। কিন্তু জিহাদ মরিয়া প্রমান করিল সে পাইপেই ছিল!!! জিহাদ মরিয়াই প্রমান করিল ঘটনা গুজব নয় বাস্তব। জিহাদ মরিয়াই প্রমান করিল আমাদের রাজনীতিতে অবিশ্বাসের বিষ এতটাই বেশি যে বাস অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। জিহাদ মরিয়াই প্রমান করিল আমাদের দেশে উৎসুক জনতা-মিডিয়া-প্রশাসন কেউই নিজের কাজ সম্পর্কে দায়িত্বশীল নয়। আমরা সবাই অতি উৎসাহী।
রাতে বাসায় ফিরে টিভি ছাড়ার সাথে সাথে যে খবরটি চোখ আটকে দিলো তা হলো জিহাদ নামে একটি শিশু খোলা গভীর নলকুপের পরিত্যক্ত পাইপের মুখ দিয়ে পড়ে গেছে। পাইপের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নিয়ে শুরু হলো গবেষণা! সেই সাথে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা। ফায়ার ব্রিগেডের লোকজন বলছে আমরা জিহাদের সাথে কথা বলেছি, সে জুস খেয়েছে। ইত্যাদি...।
এই কথাগুলো টিভিতে দেখলাম রাতে। জিহাদ পাইপে পড়েছে সেই বিকালে! সর্বশেষ ডাক্তারদের ফরেনসিক রিপোর্টে জানাগেল জিহাদ পাইপে পরার ২ ঘন্টার মধ্যে মারা গেছে এবং মাথা আঘাত পাওয়ার পর সে পানিতে ডুবে যায়, ডাক্তারদের কথায়-পানিতে না ডুবলেও জিহাদ মাথায় আঘাতের কারনে মারা যেত। তাহলে প্রশ্ন আসে জিহাদ যদি পাইপে পতনের ২ ঘন্টার মধ্যেই মারা যায় তবে জুস খেল কে? যাহোক, আমাদের দায়িত্বশীল লোকদের আসলেই কোন দায়িত্বজ্ঞান নেই এটা বার বার প্রমান করে।
উদ্ধার তৎপরতার এক পর্যায়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সহ অন্যান্যরা ঘোষণা দিলেন এখানে কোন শিশুর অস্তিত্ব নাই! উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ধার করে ফেলে জিহাদকে। এখন কিভাবে পাওয়া গেলো জিহাদকে?? এই প্রশ্নগুলো কে করবে?? কিভাবে করা যায়?? উত্তর দেয়ার দায়িত্বই বা কার??
জিহাদকে উদ্ধার করার পর সেখান থেকে তাকে বাইরে আনার জন্য যেভাবে কষ্ট করতে হয়েছে সেটা চোখে পরার মত। কেন জিহাদকে পাওয়ার পর জিহাদকে নিয়ে এম্বুলেন্স এর দরজা পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা ফাকা হয়ে গেল না? মিডিয়া কর্মীরা ছবি তুলছে পেশাগত কারনে, কিন্তু উৎসুক জনতা ভির করে মোবাইলে ফটো তুলছে আর ভির বারাচ্ছে, কেন এটা হচ্ছে? পুলিশ কেন অযাচিত-অনাকাঙ্খিত লোকজন ঠেলে সরিয়ে দেয় না?
আমাদের মিডিয়া যেভাবে বিষয়টা তুলে ধরেছে সে জন্য ধন্যবাদ তবে সেই সাথে এটাওকি ভেবে দেখা উচিত নয় যে, বারাবারি হয়ে যাচ্ছে কিনা? মিডিয়া কর্মীদের কারনে উদ্ধার কাজের কোন ব্যাঘাত ঘটছে কিনা? মিডিয়া কর্মীরা যখন বক্তব্য সংগ্রহ করেন তখন ঐ বক্তব্যদানকারীর কাজের সমস্য হচ্ছে কিনা সেগুলো বিচার করার সময় এখন হয়েছে।
জিহাদ পাইপে পরেছে বিকালে। পরদিন তার লাশ পাওয়া গেল। আমি সন্ধায় আমার বন্ধু শাহীন মিয়ার দোকানে বসে নেটে ঘাটাঘাটি করছি আর দেখছি কে কোন ভিডিও ক্লিপ দিয়েছে? কিছু ডাউনলোড করে দেখলাম। মনে চাপা কষ্ট চেপেই রাখলাম। এক ভদ্রলোক এসে মন্তব্য করছেন, এগুলো ভূয়া খবর। জনগনের চোখ গাজীপুর থেকে সরাইতে সরকার নাটক সাজাইছে! আমি তাকে বললাম, ভাই নাটক না, ছেলেটার লাশ পাওয়া গেছে। ভদ্রলোক আমার কথাও বিশ্বাস করলো না। লাশ পাওয়া গেছে সেটা শোনার পরেও সে বলে যাচ্ছে, এগুলো ভূয়া, মিথ্যা নাটক। আমার বন্ধু শাহীন তার ক্ষোভ চাপিয়ে রাখতে না পেরে ভদ্রলোককে বললো, মিয়া আপনার মতো কিছু কট্টর বিএনপি-কট্টর আওয়ামীলীগ কিছু কট্টর দল কানা দেশে আছে বলেই আমাদের এই দুর্দশা!! লাশ পাইছে তার পরেও আপনি বলেন নাটক!
অবিশ্বাসের বিষ আমাদের বাতাশে এতটাই বেড়ে গেছে যে লাশ পাওয়ার পরও বিশ্বাস করছে না যে ঘটনা সত্যি!!! বিএনপি পন্থিরা বিএনপির চিন্তাধারা মতে কথা বলছে! কোন এক নেতা হয়তো বলছে এটা নাটক, তাই সবাই বলছে নাটক। পরে জিহাদের লাশ প্রমান করলো জিহাদ নাটক জানেনা!! সরকার হালকা ঘেটেঘুটে কিছু না দেখে বলে দিল কোন লাশের অস্তিত্ব নাই। পরে জিহাদ প্রমান করে দিল অস্তিত্ব আছে তার প্রমান লাশ!!






সহিংসতা নয়, চাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান
সম্প্রতি সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। শরীয়তপুরে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ নির্বাচন। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হয় জেলার জাজিরা, ডামুড্যা, গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার নির্বাচন। দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হয় শরীয়তপুর সদর ও নড়িয়া উপজেলার নির্বাচন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে জাজিরায় আওয়ামীলীগ সমর্থিত মোবারক আলী সিকদার, ডামুড্যায় আওয়ামীলীগের আলমগীর মাঝি, গোসাইরহাট উপজেলায় আওয়ামীলীগের সৈয়দ নাসির উদ্দিন ও ভেদরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত আনোয়ার মাঝি। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে শরীয়তপুর সদর উপজেলায় আওয়ামীলীগের আবুল হাসেম তপাদার ও নড়িয়া উপজেলায় আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে হারিয়ে আওয়ামীলীগেরই এ কে এম ইসমাইল হক বিজয়ী হন। নির্বাচন পরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় সহিংসতার খবর পাওয়া যায় এবং সহিংসতার খবর এখনও পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনে এ ধরনের সহিংসতার খবর কখনো কাম্য নয়। প্রতিযোগীতায় এক দল হারবে আর এক দল জিতবে এটাই নিয়ম। যে হারে সে যে একেবারেই হেরে গেল তা কিন্তু নয়। আবার যে জিতে গেল সে যে চিরকালের জন্য জিতে গেল তাও নয়। ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী হয় না। কৃত কর্মের কারনে ক্ষমতা আসে আবার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা কেড়ে নেয়। বিজয়ীর চিন্তা করতে হবে সে বিজয়ী হয়েছেন সকলের ভোটে। আর যে পরাজিত হয়েছেন সেও অনেক ভোট পেয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। তারও রছেয়ে বিপুল সম্ভাবনা এবং সমর্থন। তাই বিজয়ী প্রার্থীর উচিত প্রতিদ্বন্দীকে সাথে নিয়ে সহাবস্থান করে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করা। এ কাজটা বিজয়ীকেই করতে হবে। বিজয়ী সবার আগে বিজিতর দিকে হাত বাড়াবে। বিজয়ী যদি জয়ের মালা নিয়ে বিজিতর গলায় পড়ায় তাতে বিজয়ীই আরেকবার বিজয় লাভের তৃপ্তি উপভোগ করতে পারেন। আর এর ফলে বিজিত প্রার্থী তার মনবেদনা কিছুটা কমাতে এবং কাজের উদ্দীপনা জোগাতে পারেন।
নির্বাচন পূর্ব এবং নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। আবার অনেকের বাড়ি ঘর ভাংচুর, দোকান পাট লুটপাট, মারধরে আহতের সংখ্যা বারছে। সহিংসতায় মৃতের পরিবর জানে তারা কি হারিয়েছে। স্বজন হারা পরিবারের আকুতি কিছুতেই মিটবে না। কোন কিছু দিয়েই এ ক্ষতি পূরণ করা যায় না। সন্তান হারা বাবা-মায়ের, স্বামী হারা স্ত্রীর, পিতা হারা সন্তানের, ভাই হারা স্বজনের দীর্ঘশ্বাস কেন আমরা নিজেদের ঘারে বয়ে বেড়াবো? প্রতিপক্ষ হলেই কি তাকে শেষ করে দিতে হবে? মতের অমিল থাকতেই পারে। আর পৃথিবী যতদিন আছে মতের অমিল থাকবেই। তাই পরমতকে সহ্য করার মানসিকতা পোষণ লালন ও ধারণ করতে হবে। যার বাড়ি ঘর কুপিয়ে, ভাংচুর করে ক্ষতি করেছে সে জানে তার কি ক্ষতি হয়েছে। একজন ক্ষুদ্র চায়ের দোকানদার জানে তার লুটপাটের ক্ষতি পূরণ করতে কি বেগ পোহাতে হবে। হয়তো এক খন্ড জমি আছে সেটাই তার বিক্রি করে আবার পুজি সংগ্রহ করতে হবে। যার ঘর লুট হয়েছে সে তার ক্ষতি পূরণ করতে পারবে কি পারবে না তা সে জানে না। আজ প্রতিপক্ষের কাউকে খুন করে, প্রতিপক্ষের ঘর-বাড়ি, দোকান পাট ভাংচুর-লুটপাট করবেন আগামীতে যদি কেই আপনার একই ক্ষতি করে? তখন অনুভব করতে পারবেন ক্ষতির কি যন্ত্রনা। তাই আমাদের উচিত সহাবস্থান। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। আপনার উদারতা, শ্রদ্ধাবোধ, সম্মানবোধ এবং আন্তরিকতা আপনাকে বড় করবে। মানুষ হিসাবে আমাদের এটাইতো কাম্য হওয়া উচিত। আসুন সবাই আন্তরিক হই।






চোখের বালি...
করিম সাহেব সরকারী চাকুরী করেন। বাড়ি তার জেলা সদরের বাইরে। উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে। এতে তার লাভ দুইটা। এক সে তার নিজের বাড়িতে থাকায় পরিবার পরিজনকে কাছ থেকে দেখভাল করে, নিজের বাড়ি পরিচর্যা করে, ফসল ফলায়, সবজি ফলায়, হাস মুরগি পালন করে, তাজা খাবার খায়, গ্রামের ফুরফুরে কার্বন বিহীন পরিস্কার অক্সিজেন সেবন করে সুস্থ্য থাকে, আর দুই শহর এলাকায় থাকতে গেলে যে মোটা অংকের বাড়ি ভাড়া লাগে তা বেচে যায়। স্বল্প বেতনের চাকুরী, উপরি কামাইয়ের দিকে নজর নেই। সৎ জীবন যাপনের চেষ্টা করে। ভাড়া বাড়িতে থাকতে গেলে যে টাকা খরচ যেত তা দিয়েই তার গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত, দুপুরে আধপেটা খাবার খাওয়া, চা নাস্তার খরচ করে অনেকটাই বেচে যায়। বেচে যাওয়া টাকায় সে একপ্রকার রাজার হালেই গ্রামের বাড়িতে সংসার চালায়। করিম সাহেব একটি মোটর সাইকেল কিনে নিয়েছে সাধ্যের মধ্যে দাম দিয়ে। সেই মোটর সাইকেলটি চালিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করে। নিয়মের প্রতি করিম সাহেবের খুব যতœবান। সে আইন মান্য করে চলতে চেষ্টা করে সর্বদা। ড্রাইভিং লাইসেন্স করে নিয়েছে। কখনো হেলমেড ছাড়া গাড়ি চালায় না। গাড়িতে একটি রেইন কোট রেখে দেয় সবসময়। প্রতিদিনের মত সে বাড়ি থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। পথি মধ্যে তার সামনে পড়লো একটি নসিমন। নসিমনটি তার যোগ্যতার চেয়ে বেশি বালু ভরাট করে প্লেনের গতিতে ছুটছে। চৈত্র মাস, প্রচন্ড খরতাপ। শুস্ক বালু বাতাসের তোড়ে উড়ছে সেদিকে সনিমন ড্রাইভারদের কোন খেয়াল নেই। হেলমেড মাথায় দিলেও সব সময় সামনের গ্লাসটা নামিয়ে রাখতে ভাল লাগে না। এমনিতে প্রচন্ড গরম। হেলমেড মাথায় দিয়ে চোখের সামনের ক্লাসটা উপরের দিকে উঠিয়ে রেখেছে যাতে একটু বাতাস পায় সেই চিন্তায়। দ্রুত গতির নসিমন, কাউকে সাইড দিতে অভ্যস্ত নয় তারা। করিম সাহেবকেও তারা সাইড দিচ্ছে না, আর করিম সাহেবও অতটা দ্রুত মোটর বাইক চালাতে অভ্যস্ত না। সে নিয়ন্ত্রনের ভিতরে থেকে সবসময় গাড়ি চালায়। দ্রুত গতির নসিমনের পিছনে পিছনে চলছে করিম সাহেব। হঠাৎ এক দমকা হাওয়া এসে লাগলো নসিমনের গায়ে। শুস্ক বালু উড়ে এসে করিম সাহেবের দুচোখ ভরে গেল। করিম সাহেব দুচোখে শুধু অন্ধকার দেখছে। কোন মতে গাড়ি থামিয়ে দিলো রাস্তার ধারে। চোখ খুলতে পারছে না করিম সাহেব। আস্তে আস্তে সে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো। তারপর পাশের বাড়িতে গিয়ে একটি টিউবয়েলের নিচে মুখ দিয়ে চোখে পানির ঝাটকা দিলো। ভাল ভাবে চোখ ধোয়ার পরেও চোখের ভিতর বালুর ক্ষুদ্র কনা রয়ে গেছে। ভাল ভাবে তাকাতে পারছে না। তার চোখ আস্তে আস্তে লাল হয়ে গেল। বাসায় যাওয়ার পর রাতে দেখাগেলো করিম সাহেবের চোখ ফুলে ঢোল। চোখ অতি সুক্ষ আবরন দিয়ে তৈরী, সামান্য বালু কনায় টিস্যু কাটা ছেড়া হয়ে যায়। করিম সাহেবেরও তাই হলো।
আফসার সাহেব একজন সিনিয়র সিটিজেন। বিকাল হলে একটু হাটাহাটি করে নিজেকে সচল রাখার জন্য। এমনিতে বয়স হয়েছে, তার উপর ডায়াবেটিসের নানা উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তাই প্রতিদিনের ন্যায় ফুটপাত দিয়ে হাটাহাটি করেন আফসার সাহেব। বিকেল বেলা হাটতে হাটতে প্রধান সড়কে আসার পর হঠাৎ একটা ইটের সুড়কি ভর্তি ট্রাক তাকে পাস কাটিয়ে চলে গেলো ঝড়ের গতিতে। পাতাসের কারনে গাড়িতে রাখা সুড়কি থেকে লাল রংয়ের ধুলি ঝড় বয়ে চলেছে সেদিকে তাদের কোন খেয়ালই নেই। আফসার সাহেবের চোখে মুখে এসে লাগলো ধুলি ঝড়ের একাংশ। পরিস্কার চেহারার মানুষটা মুহুর্তের মধ্যে হলি খেলার নায়ক হয়ে গেল। সারাটা মুখ তার সুরকির লাল ছাইয়ে ভরে গেল। চোখ মেলতে পারছে না। সে দাড়িয়ে গেল। হাত দিয়ে মুখটা ঝেড়ে লাল ধুলা পরিস্কার করলেও ধুলার সাথে কিছু কনাও তার চোখে ঢুকে গেছে। চোখ ডলা দিলে সে অনুভব করছে চোখের ভিতর বড় বড় সুরকি যেন তার চোখের ভিতর ঘুরছে। রাস্তার পাশের এক চায়ের দোকানে গিয়ে মুখটা ধুয়ে নিলেন। মুখটা পরিস্কার হলেও তার চোখে পৃথিবী এখন লাল পৃথিবী। চোখের ভিতর সুরকির লাল বালু কনা ঢুকে আছে। প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছে। অনেক ক্ষণ পানির ঝাপটা দেয়ার পর একটু স্বাভাবিক হলেও চোখের ভিতর কুট কুট করছে, চুলকাচ্ছে। মনে হচ্ছে চোখের ভিতর কয়েকটা ইট ঢুকে আছে বের হচ্ছে না।
করিম সাহেব আর আফসার সাহেবের মতই আরেক ভূক্তোভূগি রহমান দম্পত্তি। রিক্সা করে বেরিয়েছেন মার্কেটে শপিং করতে। নতুন দম্পত্তি। হুড খোলা রিক্সায় বাতাশ খেতে খেতে আর গল্প করতে করতে সস্ত্রীক যাচ্ছেন শপিংয়ে। ফুরফুরে মেজাজ। হঠাৎ পাশ দিয়ে বিশালাকার আজরাইলের মত ট্রাক গর্জন করতে করতে পাশ দিয়ে গেল। ট্রাকের উপর কালো কালো পাথরের টুকরো দেখেই বোঝা যাচ্ছে এগুলো ভাঙ্গা পাথরের টুকরো। বড় কোন ভবন বা পিচ ঢালা রাস্তার তৈরীতে ব্যবহারের জন্য কোন ঠিকাদার আমদানী করেছে। বাতাসে খোলা ট্রাক থেকে পাথরের গুড়া উড়ে উড়ে আসছে। চোখ মুখ ঢাকার আগেই তাদের কর্ম সারা। দুজনেরই চোখে ঢুকে গেল ভাঙ্গা পাথরের গুড়া। রহমান দম্পত্তি অনুভব করলো চোখের ভিতর পাথরের বোল্ডার। চোখ ডলতে ডলতে দুজনের চোখই লাল। যে কেউ দেখলেই ভাববে টাল হয়ে এসেছে শপিংয়ে।
উপরের গল্প গুলো বাস্তবতার আলোকে কাল্পনিক ঘটনা। আসলে এমনটা কেন হয়? আমাদের দেশে ময়লার উদাম গাড়ি রাজ পথ দিয়ে সাই সাই করে ঘুরে বেড়ায়। পুতি গন্ধে নাগরিকরা নাক ঢাকে। যাদের সহ্য ক্ষমতা কম তারা রিক্সা-গাড়িতে বসেই বমি করে। ফুটপাতের মানুষগুলে বসে পড়ে বমি করতে করতে। নসিমন, ট্রলি, ট্রাক উন্মুক্ত অবস্থায় ইট, বালু, সুরকি পরিবহন করে। বাতাসে মানুষের চোখে মুখে লাগে সেই বালু কনা। একটু ঢেকে নিলেই হয়। কিন্তু ঢেকে নেওয়ার কোন প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেনা এসব পরিবহনের ড্রাইভাররা। তাদের শিক্ষার জোর কম, সামাজিক দায়বদ্ধতা কি সেটা তাদের জানার কথাও না। ড্রাইভার-শ্রমিকরা তারা তাদের যে দায়িত্বগুলো জানে না, সে দায়িত্বগুলো কি তারা কোনদিনই জানবে না? তাদের তো জানানো উচিত!। যারা মালের মালিক তাদেরও তো দায়িত্ব আছে। তার মাল পরিবহনে অন্যের যাতে ক্ষতি না হয় সেই বিষয়টা কি কখনো আমরা তাদের মনে করিয়ে দেই? আর প্রশাসনের কথা যদি বলি, তবে প্রশাসনের কি এ বিষয়ে কোন দায়িত্ব নেই। ক্ষতিকর পণ্য পরিবহনে সতর্কতামূলক কিছু দায়িত্ব থাকে। আমাদের রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ভাইয়েরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করে। তারা কি কখনো কোন ট্রাক, নসিমন থামিয়ে বলে, যে তোমরা এভাবে পরিবহন করো না। একটা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে নাও, বা পলেথিন দিয়ে ঢেকে পরিবহন কর। অবৈধ অনেক পরিবহন চলাচল করে রাস্তায়। অবৈধ পরিবহনকে বৈধতা দেয়া হয় আরেক অবৈধ উপায়ে। পরিবহনের সুবিধার জন্য যদি কিছু পরিবহনকে ছাড় দিয়েও থাকে তবে কিছুটা সামাজিক দায়িত্ববোধের শিক্ষা কি তাদের দেয়া যায় না? রাস্তায় চলতে গিয়ে এভাবে ইট বালু সুরকির ধুলায় কেন নাকাল হতে হবে আমাদের। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কি দায়িত্ব রাস্তায়? শুধুকি অবৈধ গাড়ি ধরা, রাস্তার জানজট পরিস্কার রাখাই তাদের কাজ হবে। বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রন, সুশৃঙ্খল ভাবে গাড়ি চালানো, ক্ষতিকর পন্য পরিবহনে সতর্কতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা যদি একটু নজরদারি বাড়াতো তবে রাস্তায় এমন ভোগান্তির শিকার হতে হতো না আমাদের।
আমারা যারা আম জনতা আমাদের পক্ষে এটা নিয়ন্ত্রন বা তাদের ছবক শেখানো সম্ভব নয়। ট্রাফিক ভাইরা যদি এসব পরিবহন আটকে তাদের কিছু বিধি নিষেধ দিয়ে দেয় তবেই তারা কথা শুনবে। রাস্তায় বেরিয়ে আমরা কেউ চোখ ডলতে চাইনা, ধুলি কনার কারনে চোখের অপূরনীয় ক্ষতি করতে চাই না। ইট, বালু, সুরকি পরিবহনের সময় অবশ্যই ঢেকে নিয়ে পরিবহন করবে এটাই প্রত্যাশা করি পরিবহন শ্রমিক ভাইদের কাছে। আর প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা করি তারা এটা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রন করবেন এবং করতে বাধ্য করবেন। তবেই ধুলি কনা বিহীন একটা সমাজে আমরা বসবাস করতে পারবো, যে সমাজে বসবাস করেন ঐ পরিবহন শ্রমিকরা, নিয়ন্ত্রন ক্ষমতার অধিকারী প্রশাসনের কর্তা-কর্মীরাও। নগরির আরেক উৎপাৎ যত্র তত্র ইট, বালু, সরকি, রড রাখা। সকলেই রাস্তার একটা অংশ জুরে এসব নির্মান সামগ্রী রাখতে অভ্যস্ত। এর ফলে রাস্তায় সবসময় ধুলা লেগেই থাকে। একটু বাতাসে বা দ্রুত গতিতে গাড়ি চললে চাকার ঘর্ষণে ধুলা উড়ে। রাস্তার উপর নির্মান সামগ্রী রেখে রাস্তা অপরিস্কার করে এবং রাস্তাকে সংকুচিত করার কারনে যান চলাচল এবং পায়ে হাটা মানুষের ভোগান্তি লেগেই থাকে। এ থেকেও পরিত্রান প্রয়োজন। আর চোখের বালি পরিস্কার করার দায়িত্ব যাদের তাদের একটু মনযোগ প্রয়োজন।  





প্রথম শ্রেণীর শরীয়তপুর পৌরসভার নাগরিক হিসাবে গর্বিত
জলাবদ্ধতা, অপরিচ্ছন্নতা, ভাঙ্গা রাস্তা ঘাট, কি সেবা আর বাকি!!
তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে যাত্রা শুরু করে আমাদের শরীয়তপুর পৌরসভা। আস্তে আস্তে ডিমোশন পেয়ে দ্বিতীয় থেকে আজ প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা নেমে এসেছে শরীয়তপুর পৌরসভা! এক এর চেয়ে নিরানব্বই অনেক বড় সংখ্যাতত্বের ভিত্তিতে! আবার ক্লাসে নিরানব্বই পাওয়া ছাত্রের রোল হয় এক আর এক নম্বর পাওয়া ছাত্রের রোল হয় একশ বিশ! আসলে সংখ্যার ব্যবহারে রয়েছে নানা জটিলতা। আমরা যারা সাধারণ আম জনতা এসব সংখ্যাতত্বের জটিলতা খুব একটা বুঝি না। ক্লাসের এক রোল যার সে ভাল ছাত্র, প্রথম শ্রেণী পাওয়া ছাত্রকে আমরা বলি মেধাবী আর প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা নাকি তৃতীয় শ্রেণীর চাইতে ভাল। কিভাবে যে এর মূল্যায়ন করে সেটাই আমার মত আধা পড়ার মাথায় ঢোকে না!
আমি শরীয়তপুর পৌরসভার একজন বাসিন্দা। আমার বসবাস শরীয়তপুর পৌরসভার এক নাম্বার ওয়ার্ডে। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার প্রথম নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিসাবে নিজেকে গর্বিত মনে করতাম। কিন্তু আস্তে আস্তে সুযোগ সুবিধা দেখে আমার কাছে মনে হচ্ছে ক্লসে পরীক্ষার খাতায় এক নাম্বার পাওয়া ছাত্রের মত আমিও এক নাম্বার পৌরসভার এক নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা হিসাবে মূল্যায়িত ও সুযোগ সুবিধা ভোগী।
পৌরসভার চেয়ারম্যান বা মেয়রকে আমরা আদর করে বলি পৌর পিতা। এই পৌর পিতার নয় ঘর মানে নয়টি ওয়ার্ড নিয়ে সংসার। নয় সংসারে তাহার রয়েছে অসংখ্য সন্তান! এই সন্তানদের দেখাশোনা করবে বলেই আমরা তাকে পিতার আসনে বসাই। শরীয়তপুর পৌরসভার জন্ম লগ্ন থেকে একাধিক চেয়ারম্যান, মেয়র দেখার সুযোগ হয়েছে। আমাদের তো আসলে মুড়িতেও (উরুমে) ভরে না!! পূর্বের ওল্ড ম্যান চেয়ারম্যান, মেয়ররা এসে যা করেছে তাতে আমাদের খুশি করতে পারেনি। বৃদ্ধ নগর পিতাদের হয়তো দৃষ্টি শক্তি কমছিল, কারো সুযোগ কম ছিল, কেউ লোভি ছিল, কারো দৃষ্টি শক্তি কম ছিল, এমন নানা কারনে আমাদের ভালভাবে দেখভাল করতে পারেনি। সম্প্রতি আমাদের পৌরসভায় এসেছে এক ইয়াং এনার্জিটিক মেয়র বা নগর পিতা। আমরা সবাই খুশিতে আটখানা হয়ে গেছি। এবার অন্তত একটা পরিবর্তন আসবে! আধুনিক যুগের ভাল প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশুনা করে আসা ইয়াং এনার্জিটিক মুক্ত মনা ডিজিটাল চিন্তাধারার মেয়র পেয়ে বেশ পুলকিত আমরা। ভেবেছিলাম নগরির জঞ্জাল দেখে এ মেয়র নিশ্চয়ই নেমে পড়বে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায়, পৌরসভার আনাচে কানাচে হেটে বেড়াবে, নাগরিকদের সুখ দুঃখ দেখবে নিজের চোখে। আর নিজেকে একজন নাগরিকের স্থানে বিবেচনা করে নাগরিকদের সমস্যার সমাধান করবে। সমস্যার সমাধানে কাউকে না পেলে নিজের পরিষদের কাউন্সিলরদের নিয়ে চেষ্টা করবে। তার পরে কতটুকু করা যায়, কতটুকু করতে পারলো তার মূল্যায়ন করবে জনগন। আসলে মূল্যায়ন করার সুযোগই বা কে দেয়, মূল্যায়ন তারা চায়ইবা কতটুকু?
আমি আগেই বলেছি আমি থাকি শরীয়তপুর পৌরসভার এক নাম্বার ওয়ার্ডে নাগরিক। আমি আমার এলাকার নাগরিক সুবিধাদির কথাই আজ শোনাতে চাই! আমিতো আর পৌর পিতার মত ঘুরে ঘুরে নয় ঘরে লালিত, বসবাসরত সন্তানদের খবর নিতে পারি না। পালং মডেল থানার সামনে দিয়ে একটা রাস্তা চলেগেছে কোতোয়াল বাড়ি পর্যন্ত। রাস্তাটাকে কোতোয়াল বাড়ি রোড বললেই সবাই চিনে। গ্রামের নামের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আশ পাশের অনেকে নিজেদের এলাকার নাম কেউ শান্তি নগর, কেউ নিরালা, কেউ আরালা নানান নাম রেখেছে। আমরা থেকে গেছি সেই আদী নামেই। আমরা এখনও পালংয়েই আছি। পালং বাজার সড়ক থেকে থানার সামনে দিয়ে যে রাস্তাটা পূর্ব দিকে ঢুকে গেছে সেই রাস্তা দিয়ে ঢুকলে কোতোয়াল বাড়ি হয়ে কালিখোলা পর্যন্ত ওটাকে রাস্তা বললে ভুল হবে। রাস্তা এতটাই খানাখন্দে ভরা যে রিক্সাওয়ালারা এখন আর আমাদের এলাকায় যেতে চায় না, আর গেলেও ভাড়া চার গুন নেয়। একটা ভাড়া নেয় যাত্রীর আর বাকী তিনগুন ভাড়া নেয় ভাঙ্গা রাস্তায় রিক্সার যে ক্ষতি হবে তার ক্ষতিপূরন বাবদ। কিন্তু কি আর করা? যেতে যখন হবেই তো দিতেও তখন হবে। আর রিক্সা চালকদেরই বা কি দোষ! তারা সারাদিন কতটাকাই বা আয় করে? রিক্সার যে ক্ষতি হয় তাতো আর মেয়র মহোদয় দিবে না!! রাস্তাটার প্রয়াত হারুন বেপারীর সাহেবের বাড়ির সামনে বিশাল গর্ত। পনের মিনিট বৃষ্টি হলে গর্তে এক গিড়া পানি জমে যায়। তার পর একটু এগুলে মসজিদ ও এডভোকেট খান মোঃ আসাদ আলী সাহেবের বাড়ি। এখানে সারা বছর পানি জমে থাকে তাতে বৃষ্টি লাগে না। এডভোকেট খান মোঃ আসাদ আলী সাহেবের বাড়ি পার হয়ে মোড় থেকে শুরু যে রাস্তাটুকু আমি তার নাম দিয়েছি বিছানার কান্দি। সিলেটের বিছানা কান্দির অপরূপ দৃশ্য আমাদের জানা আছে। বিছানো পাথরের উপর দিয়ে পরিস্কার পানির প্রবাহ ঝির ঝির করে বয়ে চলেছে। সেটা দেখার জন্য অনেক পর্যটকই যায় টাকা খরচ করে। আমি যাইনি, বাড়ির কাছে বিছানা কান্দি থাকলে টাকা খরচ করে যে যায়? রাস্তা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে হাটু পানি জমে গেছে, দয়াপরবশ হয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর কিছু রাবিশ টাইপের ইটের আধলা ফেলেছিল। সেই ইটের আধলা পানির নিচে ডুবে আছে বারো মাসের প্রতিটি দিন প্রতিটি রাত। এ অবস্থা চলছে আমার বাড়ি পর্যন্ত। এক ঘন্টা যদি মনোযোগ দিয়ে বৃষ্ট পড়ে তবে মটর সাইকেলের ইঞ্চিন পর্যন্ত ডুবে যায়। চলতে চলতে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়, রিক্সার চাকা ফেসে গিয়ে উল্টে যায়, মানুষে হাত পা ভাঙ্গে, সুটেট বুটেট হয়ে বেরহওয়া ব্যক্তির জুতার ভিতর পানি ঢোকে। আমি একাধিক দিন ভিজা জুতা মোজা পায়ে দিয়ে কোর্টে এসেছি। ভিজা জুতা মোজা পায়ে শুকিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, এ রাস্তাটা যদি কেটে দিত তাহলে আমরা কোসা নৌকা কিনে নিতাম। বর্তমান অবস্থা নৌকা চলার মতও না আবার পায়ে হাটার মতও না! কোতোয়াল বাড়ির ব্রিজ থেকে কালিখোলার রাস্তা এতটাই খারাপ যে রিক্সা তো দুরের কথা হেটেও ওয়ায়া যায়না। পিচ ভেঙ্গে সুরকি খসে মাটি পর্যন্ত বের হয়ে গেছে। তাতেও কোন নজর নেই মেয়র নামের নগর পিতার।
সম্প্রতি আমাদের রাস্তার কাজ ধরবে শুনেছি। কাজের নাকি টেন্ডারও হয়ে গেছে। কাজ পেয়েছেন মেয়র মানে নগর পিতার ভাই। সেই সূত্রে ঠিকাদার আমাদের নগর কাকা!! পিতা যেখানে খেয়াল রাখেন না চাচা সেখানে কি খেয়াল রাখবেন। একদিন বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় দেখি রাস্তার দুধার বেশ পরিস্কার। ঘাসগুলো ছেটেছুটে রেখেছে। রাস্তার দুধারের ইটগুলো দেখা যাচ্ছে। দেখে খুব খুশি লাগলো। আনন্দে মনটা ভরে উঠলো। এবার দুঃখের দিন শেষ!! রাস্তার কাজ ধরবে। তার পরে কয়েকদিন গত হলো। আবার এক সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় একটা নসিমন ভটভট আওয়াজ করে বাড়ির রাস্তার সামনে দাড়িয়ে আছে। নসিমনের উপর কিছু ইট। সব মিলিয়ে দেড় থেকে দুশ ইট। আমি ভাবলাম কোন লোক হয়তো বাড়ির কাজ ধরেছে। ইটগুলো রাস্তার উপর না ফেলে একটু পাশে ফেলতে বললে নসিমনের ড্রাইভার ও হেলপার বললে, এগুলো রাস্তার কাজে ব্যবহার হবে, দুএকদিনের মধ্যে চলে যাবে। তার পরেও আমি বললাম বাড়িতে ঢোকার রাস্তাটা রেখে পাশে রাখো। ওরা আমাকে বললো ঠিক আছে। আমি চলে গেলাম আমার কর্মস্থলে। এসে দেখি বাড়িতে ঢোকার রাস্তা অর্ধেকটা ব্লক করে ইটগুলো স্তুপ করে রেখেছে। রাস্তার স্বার্থে আমি মেনে নিলাম। কদিনই বা লাগবে। সেই ইট আজ তিন মাস ধরে পড়ে আছে আমার রাস্তার উপর। বাড়িতে ঢুকতে বেরুতে বেশ কষ্ট হয়। আর নসিমন চালকদেরই বা কি দোষ। সারা রাস্তার মধ্যে আমার বাড়িতে ঢুকার রাস্তাই আছে শুকনা। আর অন্য কেউ তো বাড়ির সামনে একফুটও জায়গা রাখেনি। কোথায় রাখবে? আসলে বাড়ির সামনে ফাকা জায়গা রাখলেও বিপদ, কেউ কেউ গাড়ি এনে ঘুরায় আমার বাড়ির রাস্তা দিয়ে, কেউ ইট রাখে, কেউ বালি রাখে। যে দেশে ঘি আর তেলের দাম সমান সমান সে দেশে চিকন আলীকে সূলে চড়ানোর পর যদি পাছা দিয়ে সূল ওজন স্বল্পতার কারনে না ঢোকে তবে আমার মত মোটা লোকইতো খুজে বের করবে, কারন পর্যাপ্ত ওজনের কারনে সূল ঢুকবে ভাল!! রাস্তার দুধার পরিস্কার আর কয়েক জায়গায় ইট রাখার কারন হিসাবে পরে লোক মুখে শুনেছি এগুলো করে নাকি প্রাথমিক একটা বিল উঠিয়ে নিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার বা নগর চাচা। তবে তা কতটা সত্য আর কতটা মিথ্যা আমি জানিনা, ভগা জানে!!  
নগরির জলাবদ্ধতার কথা আর কি বলবো নতুন করে। গত তিন চার বছর যাবত আমাদের ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারন করেছে। ঘর আর ঘরের আশ পাশের দুএক ফুট ভূমি ছাড়া বাকী সব জমি তলিয়ে আছে পানির নিচে। বর্ষা আসে বর্ষা যায়, শীত আসে শীত যায় কিন্তু আমাদের এলাকায় পানি এসেছে পানিতো আর যায় না!! বাড়িতে যত গাছ ছিল তার অর্ধেকের বেশি মরে ভুত হয়ে দাড়িয়ে আছে। বাকী যা আছে তা মরার অপেক্ষায় দিন গুনছে। আমাদের এলাকার এ জলাবদ্ধতা নিয়ে পৌর পিতার কোন নজর নাই। পিতার নজর যদি এতই ঘোলাটে হয় তবে কি আর করা? এলাকার কোথাও কোন ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান নেই। তাই জোড়াভবনের কোনে সকলে ময়লা ফেলার স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। একেতো ভাঙ্গা রাস্তা তার উপর ময়লা ফেলতে ফেলতে মানুষ এখন আর ময়লার স্থানে ময়লা ফেলে না। ময়লা রাস্তার উপরই জমা হয়ে আছে। আসতে যেতে সেকি ফ্লেভার!!! পেটের ভিতর থেকে সব বেরিয়ে আসতে চায়।
এলাকায় আরেক যন্ত্রনা ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পালং থানা থেকে কুয়েতি মোড় হয়ে শান্তি নগর দিয়ে তুলাসার স্কুল রোড পর্যন্ত ড্রেন তৈরীর কাজ হাতে নিয়েছেন আমাদের পৌর মেয়র। কাজ দিয়েছেন কাকে সেটা বড় কথা নয়, কত বছরের জন্য কাজটা দিয়েছেন সেটা কারো জানা নেই। এত ধীর গতিতে কাজ করা যায় এমন ধারনা আমার আগে কখনো হয়নি। ড্রেনের জন্য রাস্তার ধার খুড়ে রেখেছে তাও বছর হয়ে গেলো। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে একটা কাজ কত বছরের জন্য দেয়া যায় তার হিসাব জানা দরকার। কিন্তু জেনে কি হবে, মেয়র মহোদয় যে দিয়েছেন, বুঝেই তো দিয়েছেন, তাই না?
সড়ক বাতি পৌর এলাকার একটা সেবার মধ্যেই পড়ে। আমাদের সড়ক আছে হোক সে ভাঙ্গাচোরা কিন্তু বাতি কই? বাতি থাকে না। আসলে বাতিগুলো লোহার তৈরী হলে ভাল হতো, একবার কাটলে আর জোড়া লাগে না। তাই আমাদের এলাকায় সড়ক বাতির ব্যবস্থা আছে কিন্তু বাতি কেটে গেলে মেয়র কি করবেন? এ ফলে আমাদের এলাকায় নির্বিঘেœ চলে চুরি চামারি। আর চোরের কি দোষ, বড় বড় লোক গুলোই যেখানে চুরিতে ব্যস্ত সেখানে এলাকার চোরের দোষ ধরে কি লাভ?
শরীয়তপুর পৌরসভা একটা প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। ছোট্ট এ নগরী একটু পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠলে নাগরিকরা কতই না সুখে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাবন করতে পারতো। নগরিতে নেই কোন পরিকল্পনা। যে যার মত স্থাপনা করছে। আর বাড়ির সীমানা প্রাচীর এমন ভাবে করছে যে রাস্তা কেটে দুই ফিট ঢুকতে পারলে কেউ পিছাচ্ছে না। রাস্তা ঘেষে সীমানা প্রাচীর, বাড়ির গেট থেকে রাস্তার অর্ধেক পর্যন্ত নিজেরাই ঢালাই করে রাস্তা তৈরী করেছে। এসব দেখার দায়িত্ব কি মেয়র মহোদয়ের? সে কি এতটা নিচে নামতে পারে? তাইতো যার যা ইচ্ছা করে যাচ্ছে।
আমাদের এলাকার এত সমস্যা দেখার জন্য মেয়র আছে যাকে নগর পিতা বলে ডাকি। কিন্তু সে আমাদের এলাকায় কেন আসেনা? পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে মানিক বন্দোপাধ্যায় লিখেছিলেন “ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে, ভদ্র পল্লীতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।” তবে কি লেখকের এই আক্ষেপপূর্ণ উক্তিটিই আমাদের এলাকার জন্য প্রযোজ্য? নগর পিতা কি ভদ্র পল্লীতেই থাকে? আর ভদ্র পল্লীই বা কোনটা? কোন এলাকায়ইতো তিনি যান বলে মনে হয় না। যে এলাকায় যান সেই এলাকাকেই বা ভদ্র পল্লী বলি কিভাবে। ঢাকা তো ভদ্র পল্লীর মধ্যে পড়ে না! সেখানেও তো বাজে অবস্থা, সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে! ওহ! সেখানে ভদ্র পল্লী আছে, গুলশান, বনানী, বাড়িধারা, ধানমন্ডী, উত্তরা সহ নানান ভদ্র পল্লী আছে!! আমাদের এখানে ঘুরে কি লাভ?
শুরুতে তো ওল্ড-ইয়াং এনার্জিটিক চেয়ারম্যান মেয়র সম্পর্কে অনেক বলেছি। এবার একটি গল্প বলি, এক ব্যক্তি সারা জীবন মানুষের বাড়ি বাড়ি চুরি করেছে। চুরিই ছিল তার পেশা। সেই চোর মৃত্যুশয্যায়। শয্যাপাশে তার সন্তানেরা। চোর তার সন্তানদের ডেকে বললো, বাবারা, আমিতো সারা জীবন মানুষের বাড়ি বাড়ি চুরি করেছি যা তোমরা জান এবং তোমরা আমাকে সব সময় সহযোগীতাও করেছো। আমি আর বেশিক্ষণ মনে হয় তোমাদের মাঝে নাই। সময় হয়ে গেছে। তোমরা দুনিয়ায় এমন কাজ করবে যাতে সবাই আমায় ভাল বলে। এই বলে কিছুক্ষণ পর চোর বেটা মারা গেল। শোক কাটিয়ে উঠে চোরের সন্তানেরা চিন্তা করে, কি এমন কাজ আমরা করতে পারি যাতে বাবাকে মানুষ ভাল বলবে! তারা এতদিন বাবার সাথে চুরিতে সহযোগীতা করত। বাবা মারা যাওয়ার পর এখন তারাও চুরি করা শুরু করেছে। একদিন ভাইয়েরা মিলে আলোচনায় বসল। সবাই মিলে চিন্তা ভাবনা করলো, কি কাজ করলে মানুষ বাবাকে ভাল বলতে পারে। চিন্তা ভাবনা শেষে এবার তারা চুরি ছেড়ে ডাকাতি শুরু করলো। কয়েক দিন ডাকাতি করার পর মানুষের মুখে বাবা সম্পর্কে ভাল কথা শুনতে না পেয়ে এবার কাজের ধরণ পরিবর্তন করলো। সবাই মিলে ডাকাতি করা শেষে বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে দেয় এবং ঘরে যুবতী মেয়ে, বাড়ির বউদের পালাক্রমে ধর্ষণ শুরু করলো। এবার ফল পেল হাতে নাতে, নগদে! সবাই বলাবলি করছে, আহারে! ওদের বাবা কত ভাল মানুষ ছিল! শুধু চুরি করতো! আর তার ঘরে কি কুলাঙ্গার হয়েছে, ডাকাতি করে, ডাকাতি শেষে ঘরে আগুন দেয়, জুয়ান বুড়া মানে না, ধর্ষন করে। ওদের চাইতে ওদের বাবা অনেক ভাল ছিল।
ভূক্তোভূগি নাগরিক হিসাবে অনেক কথাই লিখলাম। নগর পিতা সমস্যার দিকে নজর দিনেব, আমার কথায় রাগ করবেন না আশা করি। আমি একজন ভূক্তোভোগী নাগরিক। আমার মনে অনেক ক্ষোভ আছে, থাকাটাই স্বাভাবিক। এর সমাধান একটাই, পিতা আসুন আমাদের এলাকায়, দেখুন আমাদের দূর্দশা, সমাধানের পথ খুজুন। আপনার প্রতি আমাদের অনেক প্রত্যাশা। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির একটা সমন্বয় করুন, চেষ্টার পর ব্যর্থ হলে আমরা আপনাকে দোষ দিবো না, ভুলেও যাব না। পিতার চেষ্টার মূল্যায়ন করবো। পিতার ব্যর্থ চেষ্টায় ক্ষুব্ধ হবো না।






রামু বৌদ্ধ বিহার দর্শন, চুল্লবর্গ বিক্রয়ের নামে প্রতারনা!
শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয় প্রতি বছর। নতুন বছরের প্রথম মাসের শেষ সপ্তাহের শনিবার সাধারণত ভোট গ্রহণ করা হয়। এতটা সুন্দর ভাবে গণতন্ত্রের চর্চা অন্য কোন সমিতিতে দেখা যায় না যা দেখা যায় আইনজীবী সমিতিগুলোতে। সে মোতাবেক শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির ২০১৭ সালের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল জানুয়ারীর শেষ সপ্তাহে। ভোটার তালিকা নিয়ে একটু জটিলতার কারনে নির্বাচন পিছিয়ে যায় দুই দফা। শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের বছরের শেষ মিটিংয়ে আলোচনার ভিত্তিতে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তাকে সহযোগীতার জন্য দুইজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে আলাপ আলোচনা হলো। যথারীতি একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ তিন জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগও করা হলো। কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ তোলায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন স্থগিত করে পদত্যাগ করে বসলেন। শুরু হলো জটিলতা। সাধারণ সভা করে ভোটার তালিকা নিয়ে একটা সমাধানে গিয়ে পূর্বের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ তিন কমিশনারকে আবার দায়িত্ব দেয়া হলো নির্বাচন করার জন্য। তফসিল অপরিবর্তিত রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতিকালে আবারও ভোটার তালিকা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলো। আবারও পদত্যাগ করে বসলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এবার দীর্ঘ আলাপ আলোচনা শেষে সিনিয়র কয়েকজন আইনজীবী সমস্যার সমাধান করলেন। এবার আর সেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার নয়। নতুন করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হলো। এবার নির্বাচন কমিশনার বেশ কলিজাওয়ালা। তৃতীয় দফায় নির্বাচন কলিজা ওয়ালা প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ফলে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। নির্বাচনে আমিও দাড়িয়ে ছিলাম কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য পদে। প্রত্যাশার চাইতে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচনে পাস করলাম। চতুর্থ বারের মতে আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদে স্থান পেলাম। নির্বাচনে বন্ধুদের মধ্যে আরো পাস করল এডভোকেট জামাল ভূইয়া, এডভোকেট মোঃ আমিনুল ইসলাম পলাশ, এডভোকেট সরদার আজিজুল রহমান রোকন।
নির্বাচন শেষ, একটু রিক্রিয়েশন দরকার! যেই ভাবা সেই কাজ। ঘুরতে যাওয়া দরকার, তাই টিম গঠনের পালাা। একে একে টিমে যোগ হলো জামাল ভূইয়া, পলাশ, রোকন, তারা, মুরাদ, জাকির ভাই, রুহুল ভাই, জাহাঙ্গীর ভাই, এমদাদ ভাই। দশ জনের টিম, এগার জন হলে মাঠে নেমে পড়া যেত! রুহুল ভাইর কাধে পড়লো ট্যুর ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব। শরীয়তপুরে না পেয়ে মাদারীপুর থেকে একটা বড় এসি মাইক্রোবাস ভাড়া করা হলো। গুছিয়ে একদিন সকালে রওয়ানা দিলাম কক্সবাজারের পথে। মধু হই হই গাইতে গাইতে আমরা পৌছে গেলাম কক্সবাজার। সারা রাস্তায় আনন্দ আর আনন্দ। যখন মন চাইছে চা খেতে, দাড়িয়ে গেলাম গাড়ি নিয়ে। যখনই খুধা লেগেছে খুজে নিলাম হোটেল। এভাবেই চললো আমাদের যাত্রা। সময়ের কোন বালাই নেই। সময়টাকে থামিয়ে দিয়ে ইচ্ছা মত মজা করা আরকি। রুহুল ভাই আগেই হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছিলো। ডলফিন মোড়েরর কাছেই হোটেল বেষ্ট ওয়েষ্টার্ণ প্লাস হেরিটেজে উঠলাম আমরা। হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম খাবারের সন্ধানে। খাওয়া দাওয়া শেষে বীচের কাছে গিয়ে দোকন থেকে কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে আবার হোটেল। শান্তির ঘুম চুমু দিলো সবার চোখে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বীচে নেমে গোসল সেরে আবার হোটেলের সুইমিং পুলে চই ডুব খেলা! বেশ কাটছে আমাদের কক্সবাজার ভ্রমণ।
বিভিন্ন স্পট দেখার যে পরিকল্পনা করেছি তার মধ্যে রামু বৌদ্ধ বিহার অন্যতম তালিকায় রইল। এক দুপুরে আমরা গেলাম রামু বৌদ্ধ বিহার। বিশাল প্রাসাদপম বৌদ্ধ মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার সাথে সাথে একজন দৌরে এসে বললো, জুতা খুলে প্রবেশ করুন। আমরা জুতা খুলে এক পাশে রেখে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ভিতরে বিশালাকায় বৌদ্ধ মূর্তি নিরবে বসে আসে। ঘুরে ঘুরে সরকারের অর্থানুকুল্যে নির্মিত নতুন কমপ্লেক্স দেখছি। দ্বিতীয় তলায় বিশাল হল রুমের ভিতর ছোট ছোট ছেলেরা মাথা ন্যাড়া অবস্থায় বসে বসে দুষ্টামি করছে। এ বয়সটাই দুষ্টামির! কিন্তু ধর্মীয় বিধি নিষেধের কারনে তাদের আটকে রেখেছে মনে হলো। রুমের দেয়াল ঘেষা বোর্ডে বিভিন্ন ছবি। আছে সেলফে সাজানো বইয়ের সমারহো। একটা বই দেখে আমার আর তারার নজর কারলো। বইটির নাম চুল্লবর্গ। একজন ভিক্ষুকে ডাক দিলাম। কাছে আসতেই জানতে চাইলাম বইগুলো কি বিক্রর জন্য। আমাদের সে জানালো হ্যা, এগুলো বিক্রির জন্য। দাম জানতে চাইলে বললো এর মূল্য দুইশত পঞ্চাশ টাকা। আমি আর তারা দুজনে দুটি বই নিলাম। বইয়ের মূল্য বাবদ পাঁচশত টাকার একটি কচকচে নোট ভদ্রলোককে ধরিয়ে দিলাম। এর পর ওখান থেকে নেমে আমরা বাইরে আসলে আরেক ব্যক্তি আমাদের পাশের কিছু পুরাতন বৌদ্ধ নিদর্শন দেখানোর জন্য নিয়ে গেল। আমন্ত্রনের ভাব দেখে মনে হলো খুবই আন্তরিক। আমাদের বললো, এত দুর থেকে এসেছেন, আদী নিদর্শনগুলো দেখে যাবেন না? লোকটি আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বৌদ্ধের বিভিন্ন পুরাতন মুর্তি দেখালো। কোনটা কত সালের তা বলে দিচ্ছে আর একটা দেখা শেষ হলে আরেকটার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে দেখতে দেখতে যখন সব দেখা শেষ তখন আন্তরিক ব্যক্তিটির আসল রুপ বেরিয়ে পড়লো। সে এবার আমাদের কাছে বখশিস দাবী করলো। তার চাইতে লজ্জা না করলেও আমাদের লজ্জা লাগলো। আমরা তাকে বখশিস দিয়ে বের হয়ে এলাম। গেটের পাশেই আমাদের মাইক্রোবাস দাড়ানো ছিলো। স্বজতেœ বইটাকে নিয়ে আমরা গাড়িতে উঠে গেলাম। গাড়িতে উঠে বইটা নেড়ে চেরে দেখলাম, লেখা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে বিতরনের জন্য। লেখাটা দেখে একটু অবাক লাগলো! যে বইটি বিনা মূল্যে বিক্রয়ের জন্য সেই বইটির দাম আড়াইশো টাকা কি করে হয়? বুদ্ধিষ্ট ব্যক্তিটি আমাদের বলতে পারতো, বইটি বিনা মূল্যে বিতরনের জন্য, আপনারা খুশি হয়ে মন্দিরের জন্য যদি কিছু দান করতে চান তবে করতে পারেন। আমরা দুটি বই হাতে নিয়ে ধরেই নিয়েছি এর মূল্য পাঁচশত টাকার কম হওয়ার কথা নয়। আমাদের সত্যি কথাটা বললে অনায়াসেই দুটি বই নিয়ে এক হাজার টাকা তার হাতে তুলে দিতাম। আমাদের কাছে ঐ ব্যক্তিটিকে প্রতারক বলেই মনে হলো!
এবার আমাদের যাত্রা রামুর একশ ফুট লাম্বা বৌদ্ধ মূর্তি প্রদর্শন। একশ ফুট লম্বা মূর্তি সম্পর্কে কিছু কথা নেট থেকে খুজে পেয়েছি। বন্ধুদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-
মহামানব গৌতম বুদ্ধ ধন্যবতীর রাজা চাঁদ সুরিয়ার সময় সেবক আনন্দকে নিয়ে আরাকানের রাজধানী ধন্যবতী আসেন। সেখানে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সেবক আনন্দকে উদ্দেশ্য করে বুদ্ধ বলেন, ‘হে আনন্দ ভবিষ্যতে পশ্চিম সমুদ্রের পূর্ব পার্শ্বে পাহাড়ের উপর আমার বক্ষাস্থি স্থাপিত হইবে। তখন উহার নাম হইবে ‘রাংউ’। ধন্যবতী রাজবংশ গ্রন্থে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, ভাষাতাত্ত্বিক প্রকৃয়ায় রাংউ থেকে রামু শব্দটি এসেছে। রাংউ বার্মিজ শব্দ। রাং অর্থ বক্ষ, উ অর্থ অস্থি অর্থাৎ রাংউ শব্দের অর্থ হচ্ছে বক্ষাস্থি। বর্তমানেও রামুতে রয়েছে অনেকগুলো প্রাচীন বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও প্রতœতাত্তিক নিদর্শন।
এই রামুতে বৌদ্ধ সভ্যতা বা বৌদ্ধ স্থাপত্যের গোড়াপত্তন কখন থেকে তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। তবে আরাকানের প্রাচীন ইতিহাস ‘রাজোয়াং’ থেকে জানা যায়, ‘খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের দিকে অর্থাৎ ১৪৬ খ্রিস্টাব্দে মগধ রাজ্যের চন্দ্র সূর্য নামক জনৈক সামন্ত যুবক তাঁর বহু অনুগামী সৈন্যসামন্ত নিয়ে চট্টগ্রাম ও আরাকান দখল করেন। একটি অখন্ড রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং আরকানের ধন্যবতীতে রাজধানী স্থাপন করেন। রাজা চন্দ্র সূর্য এবং তাঁর সঙ্গে আগত সৈন্যদের অধিকাংশ ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। তারা চট্টগ্রাম ও আরকানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে কার্যকর ভূমিকা রাখেন। তাই মগদাগত বৌদ্ধ এবং এতদঅঞ্চলের বৌদ্ধদের মধ্যে নিবিড় ধর্মীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে রাজকীয় প্রষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রাম ও আরকানে বৌদ্ধ ধর্মের দ্রুত বিস্তার ঘটে’।
বিভিন্ন সূত্রে আরো জানাযায়, প্রাচীনকাল থেকে রামু আরাকানী এবং এদেশীয় রাখাইন (রাকখাইন) বৌদ্ধদের পদভারে মুখর ছিল। আরাকানী শাসনামলে কক্সবাজার বা রামুতে রাখাইন সম্প্রদায় ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইংরেজদের আগমনের আগ পর্যন্ত এই সংখ্যাধিক্য অটুট ছিল। বর্তমানে রামুতে যে সকল বৌদ্ধ পূরাকীর্তি বা প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্য শিল্প রয়েছে, বিশেষ করে দৃষ্টিনন্দন শিল্পঐশ্বর্যে কাঠের তৈরি বিহারগুলো রাখাইনদের স্বর্ণোজ্জ্বল যুগের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে এসব পূরাকীর্তির মধ্যে কোনটি সবচেয়ে প্রাচীন? সঠিক দিনক্ষন এভাবে নিরুপন করা যায়নি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে (খ্রিস্টপূর্ব ৩০৮) রামকোটের পাহাড়ের উপর স¤্রাট অশোক রামকোট (রাংকুট) বনাশ্রম বৌদ্ধবিহারটি নির্মাণ করেন। এই বিহারের সংরক্ষিত বুড়া গোঁসাই মূর্তির মাঝেই গৌতম বুদ্ধের বক্ষাস্থি স্থাপিত হয়েছে। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এর ভ্রমণকাহিনীতে উল্লেখ আছে, বিহার নির্মাণের পরর্বতী সময়ে সেখানে সাত’শ ভিক্ষু বসবাস করতেন। কালের পরিক্রমায় অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে। কিছু কিছু হারিয়ে যাওয়ার পথে। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সাম্প্রদায়িক হামলায় এরকম বেশ কয়েকটি প্রাচীন পুরাকীর্তি ধ্বংস করা হয়েছে। মুছে ফেলা হয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে।
তবে পুরাকীর্তি ও প্রতœতাত্তিক নিদর্শনের ঐতিহ্য বহন করে এখনো স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, এমন নিদর্শনের সংখ্যা রামুতে এখনো কম নয়।
শ্রীকুল গ্রামে কাঠের তৈরি শ্রীকুল রাখাইন বৌদ্ধ বিহার। এটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৮৯৯ সালে। ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের লামার পাড়া গ্রামে অবস্থিত থোয়াইংগ্যা চৌধুরীর ক্যাং। তবে গ্রামের নামানুসারে এটি লামারপাড়া ক্যাং নামেই পরিচিত। ১৮০০ সালে তৎকালীন রাখাইন জমিদার উথোয়েন অংক্য রাখাইন এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পাড়ার ভেতরের শান্ত নিথর কিছুটা পথ মাড়িয়ে এ ক্যাং-এ পৌঁছালে এখনো চোখে পড়ে, আশ্চর্য হবার মতো বড় বড় দুটি পিতলের ঘন্টা। পিতলের তৈরি এগুলো দেশের সবচেয়ে বড় ঘন্টা। এখানে আরও সংরক্ষিত আছে অষ্টধাতু নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি এবং প্রাচীন শিলালিপিসহ ঐতিহাসিক স্মৃতি চিহ্ন।
রেংগুনী কারুকাজে তৈরি প্রায় দুইশ বছরের প্রাচীন এ বিহারের নির্মাণ শৈলীও দারুন চমৎকার। কিন্তু উপযুক্ত পরিচর্যা এবং রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে বর্তমানে এ বিহারটির ভগ্নদশা।
১৮৯৯ সালে তৈরি চেরাংঘাটা উসাইসেন বৌদ্ধ বিহার। স্থানীয়ভাবে বড় ক্যাং নামে পরিচিত। এ বিহারের নির্মাণ শৈলীও দারুন। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে কাঠের তৈরি বিহারগুলোর মধ্যে প্রায় দেড়’শ বছরের পুরনো হাজারীকুল রাখাইন বৌদ্ধ বিহার ও দক্ষিণ শ্রীকুল গ্রামে অবস্থিত লাহ-পেঁ-বাঙ-রঙ ক্যাং বা সাংগ্রীমা ক্যাং বর্তমানে ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়েছে।
রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের পাশ ঘেঁষে পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকার জাদী। এটি লাওয়ে জাদি নামে পরিচিত। এক সময় ওই জাদির সীমানা প্রাচীরের উপর দাঁড়ালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখা যেত। এখন পাহাড় ধ্বসের কারণে সেই সীমানা প্রাচীরও ভেঙ্গে গেছে।
রামুর পোড়া মাটিতে আধুনিক স্থাপত্য শিল্পঃ ইতিহাস প্রসিদ্ধ রামুতে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেবর কাল রাতে ঘটে গেছে এক অবিশ্বাস্য ধ্বংসযজ্ঞ। যে ধ্বংসযজ্ঞে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে রামুর প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী এরকম বারটি নিদর্শন। পুড়ে গেছে মহামূল্যবান বুদ্ধের ধাতু, তাল পাতার উপর বিভিন্ন ভাষায় লেখা ত্রিপিটক, অনেকগুলো বুদ্ধমূর্তিসহ প্রাচীন প্রতœতাত্তিক নিদর্শন। পাশাপাশি ওই একরাতেই পুড়েছে এখানকার হাজার বছরের গর্বের ধন-সম্প্রীতি।
তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় মাত্র এক বছরে বদলে গেছে রামুর দৃশ্যপট। সেই ধ্বংসস্তুপের উপর গড়ে তোলা হয় দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি নব নির্মিত সেই বিহারগুলোই এখন নতুন ইতিহাস। একদিন এ ইতিহাসের বয়সও হবে হাজার বছর।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার, উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র, রামু মৈত্রী বিহার, লাল চিং, সাদা চিং, অপর্ণাচরণ চিং, জাদী পাড়া আর্য্যবংশ বৌদ্ধ বিহার, উখিয়াঘোনা জেতবন বৌদ্ধ বিহার, উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বন বিহার, চাকমারকুল অজান্তা বৌদ্ধ বিহারসহ নব নির্মিত এসব বৌদ্ধ বিহার যেন এখন নতুন ইতিহাস। এসব বিহারের ঐতিহ্য নিয়ে আবার নতুন করে সমৃদ্ধ এই রামু।
অন্য রকম আলোয় আলোকিত বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রঃ উঁচু নিচু পাহাড় টিলায় সবুজের সমারোহ। এ সবুজের মাঝে গড়ে ওঠেছে মানুষের বসতি। শান্ত কোমল পরিবেশে এখানকার প্রাকৃতিক সৌর্ন্দর্য মানুষকে অবিরাম কাছে টানার মত জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর মিঠাছড়ি গ্রাম। সেই অসাধারণ সৌন্দর্য্যে ঘেরা পাহাড় চূড়ায় এক টুকরো সবুজের মাঝে ছিল বাঁশের তৈরি বিমুক্তি বির্দশন ভাবনা কেন্দ্র। এর সামনেই ছিল উত্তর-দক্ষিণ কাত হয়ে শোয়া গৌতম বুদ্ধ মূর্তি। সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বিহারটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মূর্তিটি প্রায় অক্ষত থেকে যায়। অন্যান্য বিহারগুলোর মত এটিও নতুনভাবে নির্মাণ করে সেনাবাহিনী।
তবে সেনাবাহিনী বারটি বিহার নির্মাণ করলেও সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ রূপ পেয়েছে এ বিহারটি। বর্তমানে যে কেউ বিহারটি দেখে অভিভূত হবেনই। বিহারের চমৎকার নির্মাণ শৈলীতো আছেই এ ছাড়াও বিহারের আঙ্গিনাকেও সাজানো দারুনভাবে। সেই অসাধারণ সৌন্দর্যের মাঝে নতুনভাবে শোভা পাচ্ছে একশ ফুট দীর্ঘ বিশালাকার আগের সেই মূর্তিটি। বর্তমানে এটি যেন অধারণের চেয়েও বেশি অসাধারণ। বলা যায়, রামুর বৌদ্ধ ঐতিহ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র।
‘অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী নিয়ে বৌদ্ধ জাতিকে আলোর পথ দেখান মহামানব গৌতম বুদ্ধ। তিনি শান্তির প্রতীক, বৌদ্ধদের পথ প্রদর্শক। তাই এ মূর্তির নাম দেওয়া হয়েছে বিশ্বশান্তি সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধমূর্তি। বিহারকে নতুন করে সাজানোর পর এখন এ মূর্তিটিও নতুন রূপ পেয়েছে।
পাহাড় চূড়ায় নির্মিত বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার পাশাপাশি নতুন মাত্রা দিয়েছে এ মূর্তিটি। বর্তমানে এটিই দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধমূর্তি। মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে কারিগর এনে এটি তৈরি করা হয়। মিয়ানমারের কারিগর থোয়াইংছি রাখাইন দীর্ঘ সাড়ে তিনবছর কাজ করে মূর্তিটি তৈরি করেন। ‘এ মূর্তির মডেলও সংগ্রহ করা হয়েছে মিয়ানমারের ইয়াংগুনের ধাম্মাদূত বৌদ্ধ বিহার থেকে। ওই মন্দিরে সংরক্ষিত গৌতম বুদ্ধের মূর্তির আদলে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ মূর্তির নির্মাণ শৈলী দেশী বিদেশী সকল মানুষকে আকৃষ্ট করছে যেমনটি আকৃষ্ট হয়েছি আমরা।







জান মালের উপর ভরসা করা কঠিন!!
॥ ১ ॥
আকাশ মনি আর বাতাশ কুমার খুব ভাল বন্ধু। দুজনেই এবার জিপিএ ফাইভ পেয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিলো ‘আই গট জিপিএ ফাইভ’! দুজনেই ভর্তি হয়েছে একই কলেজে! আগে দুজনে দুই স্কুলের বাসিন্দা ছিল। আকাশ মনি পড়তো জেলা সরকারী গার্লস স্কুলে আর বাতাশ কুমার পড়তো জেলা সরকারী বয়েজ স্কুলে। গার্লস স্কুলের সম বয়সী ইয়ারমেটদের প্রতি বয়েজদের একটু আগ্রহ থাকে বেশি, ঠিক তেমনি বয়েজ স্কুলের ইয়ারমেটদের প্রতি গার্লসদের আগ্রহ দেখা যায়। স্কুলটা ছুটি হলে বয়েজরা ইনিয়ে বিনিয়ে গার্লস স্কুলের পাশ দিয়ে বাড়ি ফেরার শেষ রাস্তাটা খুজে পায়। আর গার্লসরা বয়েজ স্কুলের ছাত্রদের দেখলে একদম গুটিয়ে যায়। যা হোক, সমবয়সী সহপাঠিদের মধ্যে মেয়েরা নিজেদের একটু ছোট ভাবতেই পছন্দ করে। গার্লস স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বয়েজ স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভাইয়া বা ভাইজান বলে। এসএসসি পাস করার পর আকাশ মনি ও বাতাশ কুমার দুজনে একই কলেজে একই বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুবাদে এখন বেশ কাছে এসেছে। পূর্বের পরিচিত এখন ক্লাসমেট, সম্পর্কের উন্নতি হতে থাকে জ্যামিতিক হারে। প্রথমে ভাইয়া ভাইয়া ডাকলেও সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে হয়ে যায় ভাইজান ভাইজান। কয়েকদিনের মধ্যে এক সাথে কলেজে আসা, একসাথে যাওয়া, একসাথে ক্যান্টিনে খাওয়া। এর বিল ও দেয়, ওর বিল এ দেয়। বেশ জমিয়ে ফেলেছে আকাশ আর বাতাশ। দুজনে ক্লাস ফাকি দিয়ে মাঝে মাঝেই কলেজের পাশের শীতল ছায়া ঘেরা বাগানে ঘুরে বেরায়, সবুজ ঘাসে বসে একটু গল্প সল্প করে। আকাশ মনি ঘাসের ডগা ছেড়ে, বাতাশ কুমার গাছের পাতা কচলায়।
এভাবে কখন যে একে অপরকে আপন করে নিয়েছে কেউ বুঝতে পারেনি। ভাইয়া থেকে দোস্ত আর দোস্ত থেকে ভাইজান ডাকে মেয়েটা ছেলেটাকে। দেখতে দেখতে ভাইজান থেকে ভাই শব্দটা যে কোথায় উড়ে গেল দুজনের কেউই বুঝতে পারলো না। এখন একজন আরেকজনকে জান জান বলে পাগল প্রায়। জান তুমি কি কর? জান তুমি কি খাও? জান তুমি কোথায় এমন হাজারো প্রশ্নের বন্যা।
আস্তে আস্তে চলতে থাকে জান জান ডাকা। আর সময় ও ¯্রােত কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না তা তো আমরা সবাই জানি। আকাশ বাতাশের সময়ও বসে নেই। দুজনেরই পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে। দেখতে দেখতে কলেজের প্রায় সময়টাই চলে গেছে। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। জান জান খেলায় পরীক্ষার প্রস্তুতির অবস্থা দুজনেরই খারাপ। পরীক্ষার পর রেজাল্ট বের হলো, কিন্তু আজব এক কারিশমায় দুজনে আবার ‘জিপিএ ফাইফ গট’!! ভর্তি পরীক্ষার চাপে দুজনেই বেসামাল। আকাশ মনিকে তার বাবা উপায়ান্ত না দেখে একটা বেসরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে দিলো। আর ছেলেটা চলে গেলো ফিলিপাইনে মেরিন সাইন্স পড়ার জন্য। আজ দুজনের দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেকে...
তার পর দীর্ঘ দিন চলে গেলো। দেশে এসে বাতাশ কুমারের সাথে দেখা আকাশ মনির। আকাশ মনির হাতে ফুটফুটে একটা মেয়ে! আকাশ মনি তার মেয়েকে বললো, মামনি এটা তোমার একটা আংকেল। বাতাশ কুমার তার পাশে দাড়ানো মেয়েটিকে আকাশ মনির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো তোমার ভাবি!! আমরা দুজন একসাথে পড়তাম! ইত্যাদি!!
॥ ২ ॥
এক দেশে এক প্রধানমন্ত্রী ছিল। সেই প্রধানমন্ত্রীর এক আস্থাভাজন বিত্ত মন্ত্রী ছিল। সে শুধু মালের হিসাব রাখতো। মালের হিসাব রাখতে রাখতে তার নাম হয়ে গেছে মাল বাবু। কোথায় কত মাল খরচ করতে হবে, কোথা হতে মাল আনা যাবে। কোথায় কত শুল্ক ধরলে দেশ মালে মালামাল হয়ে যাবে, কারা কারা মাল চুরি করলে কিছু বলা যাবে না বরং মাল চুরির সময় যদি মনে ব্যাথা পায় তবে কিভাবে শান্ডার তেল দিয়ে মালিশ করতে হবে এ বিষয়ে তার বিস্তর জ্ঞান। জ্ঞানী মানুষের চোখ ফাকি দেওয়া সহজ। আবার জ্ঞানী মানুষ অপকর্ম করিয়া বেরালেও তাহা ঢাকিতে বেশ ওস্তাদ। মাল বাবুর দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু দুষ্ট লোক লক্ষাধিক কোটি স্বর্ণমূদ্রা নিয়ে বিদেশ পলায়ন করিল তাহা মাল বাবু টেরই পেল না। তাহাকে জিজ্ঞাস করায় সে বললেন, এ তেমন কোন মুদ্রা না। এর চেয়ে তাজ মহল বানিয়ে চুন সুরকি রাবিশ খরচ করে অনেক মুদ্রা নষ্ট করা হয়েছে।
বাজেটের সময় হয়ে গেছে। দূর দর্শন খুললে বাজেট নিয়ে দেখি বাটে টক করছেন জ্ঞানী গুনি বুদ্ধিজীবীরা। মালবাবু একদা এক রাতে বাজেট চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়লেন। চিন্তা করে বের করলেন মানুষের উপর করের বোঝা বাড়াতে হবে। মূল্যের উপর আরো মূল্য সংযোজন করতে হবে। তবে তার মাথায় সবচেয়ে যে নিষ্টা বুদ্ধিটা এলো সেটা হলো সঞ্চীত মুদ্রার উপর শুস্কের উপর শুল্ক কাটা। মুদ্রা সঞ্চীতি সাধারণত বৃদ্ধ বা সিনিয়র সিটিজেনদের আর প্রবাসীদের কাজ। শেষ জীবনের সঞ্চয় কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রেখে মুনাফা ভেঙ্গে ভেঙ্গে খাওয়া। মাল বাবু বিষয়টা খেয়াল করলো। সঞ্চীত মুদ্রার উপর মুনাফা আসবে তা দিয়ে আরামে বসে খাবা সেটা তো হতে পারে না। তাতে অলসতা বাড়বে, মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নয় ছয় হয়ে গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া প্রায়, কোষাগার গুলো শুন্যের কোঠায় অবস্থান করছে। এই অবস্থায় তাদের তহবিল টইটুম্বুর করতে হবে। সে টাকা কে দেবে! জনগন আছে না! তাই বাজেটে সে ঘোষণা দিলো যে প্রতিষ্ঠান গুলো চুরি-লুটের কারনে ফান্ড সংকটে পড়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে মুদ্রা দিয়ে ফান্ড ভরে রাখতে হবে। কারন পরবর্তীতে চোর ডাকাতরা আবার যখন হানা দিবে তখন কি তারা খালি হাতে যাবে। আর ওরা যদি খালি হাতে যায় আমাকে কমিশন বাবদ কি দেবে, লবডংকা? তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা জমালে উক্ত টাকার উপর শুস্ক শুল্ক দিতে হবে। দেশে তো এ নিয়ে তুলকালাম কান্ড। নিজের ভাই বেরাদাররা পদত্যাগ দাবী করলো মাল মন্ত্রীর। কেউ কেউ ক্রিমিনাল চার্য গঠনের দাবী জানালো। কিন্তু যারা এত দাবী জানালো তারা তো জানে না মাল কোথায় উঠে বসে আছে। মাল যে কোথা উঠেছে তা জানে শুধু মালে। রাবিশ কোথাকার, ওরা মালের পাওয়ার সম্পর্কে জানেই না!!
বাতাশ কুমার বিদেশে পড়াশুনার পাশাপাশি জব করতো। পড়াশুনা যখন শেষ হয় তারপরেও বেশ কিছুদিন চাকুরি করে বেশ টাকা কামিয়ে দেশে এসেছে। দেশে এসে চিন্তা করলো টাকা গুলো কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রেখে আবার বিদেশ চলে যাবে। এখান থেকে যে লাভের টাকা আসবে তা দিয়ে বাবা মায়ের স্বাচ্ছন্দে চলে যাবে। দেশে এসে দেখা হলো আকাশ মনির সাথে হাতে তার ফুটফুটে মেয়ে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখবে জমা তাও দেখে শুল্ক নামের বিষ পিপড়ার থাবা। মালের থিওরিতে মুদ্রা সঞ্চয় করে লাভের পরিবর্তে দেখা গেলো লস হবে। বাতাশ কুমার নিজেই বির বির করে বললো, জান আর মালের উপর কোন ভরসা নাই...
ধার করা কৌতুকঃ
এক যুবককে পুলিশে ধরেছে। বিচারক যুবককে বলো
-তোমার বিরুদ্ধে দেশের অর্থ মন্ত্রীকে বেকুব বলার জন্য চার্জ গঠন করা হলো
যুবক-আমিতো কোন দেশের অর্থ মন্ত্রী তা বলি নাই। আমি উগান্ডার অর্থ মন্ত্রীকে বলেছি।
বিচারক-কোন দেশের অর্থ মন্ত্রী বেকুব আমরা জানিনা মনে করো? আমাদের কে দেখে কি তোমার আবুল মনে হয়??





চিকুনগুনিয়ার জন্য দায়ী সনাক্ত !!!
সম্প্রতি ঢাকায় ছড়িয়ে পড়েছে চিকুনগুনিয়া রোগ। এ রোগের জন্য কে দায়ী এ নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। সরকার বলছে সিটি কর্পোরেশন দায়ী। আবার সিটি কর্পোরেশন বলছে তারা দায়ী নয়। সিটি কর্পোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনের জন্য কাজ করছে। চিকুনগুনিয়া চিকন না মোটা তারা জানে না! যেহেতু সরকার দায় চাপাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের উপর আর সিটি কর্পোরেশন দায় অস্বীকার করছে, তাহলে দায়টা কার তা বের করা জরুরী। দুটি অর্গানই যখন দায় অস্বীকার করছে তখন তাদের দিয়েতো আর দায় সনাক্ত করা যায় না। তাই নন গভার্মেন্ট থেকে নন জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে!! তারা চিকুনগুনিয়ার জন্য দায়ী সনাক্ত করার কাজ করেছে। তাতে বেরিয়ে এসেছে কে দায়ী!! তবে চিকুনগুনিয়ার দায়ী সনাক্তের আগে এ সম্পর্কে আমাদের তদন্ত কমিটি বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সংবাদগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে জনগন দিশেহারা হয়ে যে নন জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলো সেই তদন্ত কমিটি সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন!! সূদীর্ঘ প্রতিবেদন এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয় তাই প্রতিবেদনের খন্ডিত অংশগুলো তুলেধরা হলো!!
তদন্ত কমিটির সদস্যগণ বলেছেন, জনগন মহা মারি মহা মারি বলে চিৎকার না করে সকলে যদি মশা মারি মশা মারি বলে চিৎকার করতো তাতে লাভ হতো! অযথা চিৎকার চেচামেচি করে কি লাভ? চিকুনগুনিয়া ছড়ানোর দায় জনগনের! কারন, জনগন মশার ডিম পাড়ার জায়গা করে দেয়। জনগন ডাব খেতে পছন্দ করে, ডাব খাওয়া হলে কেটে ভিতরের লেওয়া খায় (ডাবের শাষ) আর লেওয়া খাওয়া শেষে ছুড়ে ফেলে দেয়। ডাবের ছুড়েফেলা অংশে পানি জমে আর পারিতে ডিম পারে এডিস মশা! ডাবের পানি খাবেন, লেওয়া খাবেন আর মশার কামড় খাবেন না তাকি হয়!!
আমাদের দেশের ধনীরা গাড়ি ব্যবহার করে। গাড়ি চাকা মেরামত করার পর ছোট মানসিকতার জনগন পুরাতন টায়ার যতœ করে রেখে দেয়, সেই টায়ারে পানি জমে, সেই পানিতে ডিম পারে মশা! আমাদের দেশের ধনীর দুলালরা কোমল পানীয় খায় ক্যানে, সেই ক্যান ফেলে দেওয়ার পর জনগন তা পরিস্কার করে না, ফলে ক্যানের ভিতর জমে থাকা পানিতে মশা ডিম পারে আর তাতেই চিকুনগুনিয়া ছড়ায়!
আমাদের দেশের জনগণের রয়েছে শিক্ষার অভাব। বস্তিবাসীদের শিক্ষার সুচকতো প্রায় শুন্যের কোঠায়!! বস্তিবাসী কুদ্দুস মিয়ার মতে, এসিড মশার কারনে তাদের ঘরে চিকুনগুনিয়া ঢুকেছে। এসিড মশা কামড় দিয়ে ভিতরে এসিড ঢুকিয়ে দিচ্ছে, এসিডের ত্যাজে ঐ জায়গা পরে লাল হয়ে যায়যে!
তদন্ত কমিটি লখাই মিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলো, চিকুনগুনিয়া কি ও কেন হয় জানেন? লখাই মিয়া বলেন, মনে হয় মশা গুয়ের উপর বসে, মুখ দিয়ে চিকন চিকন গুয়ের টুকরা এনে আমাদের শরীরে উপর বসে এবং কামড় দিয়ে ভিতরে গুয়ের বিজানু ঢুকাইয়া দেয়, তারপর যে রোগ হয় ওইডাই চিকুনগুনিয়া।
মালেশ্বর বাবুকে চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা কিছুটা সম্পাদিত করে একাশ করতে হলো, তিনি বলেন, চিকন গো... না মোডা গো... তা দিয়া আমরা কি করুম? আমরা হইলাম সাধারণ আম জনতা। আম জনতার খাতায় নাম লিখাইয়া চিকন মোডা বাছার সুযোগ আছে? একটা হইলেই হয়!! (তিনি কিছুটা ক্ষিপ্ত, কথা না বাড়িয়ে আমাদের তদন্ত কমিটি ভালয় ভালয় কেটে পড়েন)।
তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারীগণ এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, তারা আসলে কোন বিষয়ে একমত নন। তদন্তকারী কারো মতে চিকুন গুনিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায় হচ্ছে আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার। তাদের দেশের অভূক্ত মশা উড়ে উড়ে আমাদের দেশে এসে সাধারণ মানুষের উপর হুমড়ি খেড়ে পড়ায় রোগটা ছড়াচ্ছে। আর যেমন খাচ্ছে তেমনি ডিম পেড়ে বংশ বাড়াচ্ছে।
অপর এক তদন্তকারীর মতে, দেশের জনগনই এর জন্য দায়ী, তারা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে উদাসীন, তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে মশার কামড় খায়, ঠিকমত মশারি টানায় না, তাদের বোঝা উচিত মেয়রতো আর ঘরের ভিতর গিয়ে মশারি টানাবে না!
অপর এক তদন্তকারীর মতে, ডাব বিক্রেতা, গারির গ্যারেজ মালিক দায়ী, কারন তারা ডাবের খোসা, টায়ার টিউব যথাযথ স্থানে ফেলে না এবং পরিস্কার রাখে না। এবার লেওয়া খাওয়ার মজা বুঝুক!!
নন জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি যেহেতু কোন বিষয়ে একমত হতে পারেনি তাই প্রতিবেদন পাঠে জনগন এই মর্মে একমত হয়েছে যে, চিকুনগুনিয়ার জন্য আসলে জনগনই দায়ী!!! তবে সরকারকে তারা কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। তাদের মতে আর দেরি না করে সিটি করপোরেশনকে এখনি মশা মারতে কামান সরবরাহ করা উচিত!





শরীয়তপুরের লিজা হত্যা ॥ হলুদ সাংবাদিকতায় আতঙ্ক ছড়ায় একদল জানোয়ার
শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার সরদার কান্দি গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান লিজা আক্তার। লিজা আপনার আমার সন্তানের মতই তার পিতা-মাতার আদরের সন্তান। লিজা সখিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। ভাবা যায়, তৃতীয় শ্রেণীতে পড়–য়া একটি মেয়ে কেমন ফুটফুটে, চঞ্চল, হৃদয়কারা হতে পারে? ঠিক তেমনি একটি মেয়ে লিজা। স্কুল পড়–য়া লিজা আক্তার সাইকেল চালাতে ভালবাসতো। স্কুল থেকে ফিরে প্রতিদিনের মত খাওয়া দাওয়া সেরে ছুটে গেছে খেলতে। খেলতে খেলেত নিশ্চই তার মনে পড়েছে প্রিয় কাজ সাইকেল চালানোর কথা। ছুটে গেছে সাইকেল ভাড়া দেয়ার দোকানে। পনের মিনিটের জন্য একটা সাইকেল ভাড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বিশ মিনিট সাইকেল চালিয়ে এসে দোকানির কাছে ফিরত দেয় সাইকেলটি। পাঁচ মিনিট বেশি হয়ে গেছে, তাতে কি, দোকানদার চাচ্চু কিচ্ছু বলবে না, কারন প্রতিদিনের কাষ্টমার যে লিজা! লিজার সেই সৎ সাহস ছিল। দোকানদারের কাছ থেকে সাইকেল ভাড়া নিয়ে চালিয়ে আবার ফেরতও দিয়ে গেছে কিন্তু দেরির জন্য দোকানি কিছু বলেনি, আর বলবেই বা কেন, এতটুকু বাচ্চা, পাঁচ মিনিট বেশি চালিয়েছে তাতে এমন কি ক্ষতি হয়ে যাবে তার? সাইকেল ফেরত দিয়ে যাওয়ার পর লিজা নিখোজ। ঘটনাটা ১৫ জুলাই শনিবার। অনেক খোজাখুজির পর থানায় সাধারণ ডায়রী করা হলো। অবশেষে আট দিন পর মিললো তার নিথর দেহ। লিজার মৃত্যু অত্যন্ত বেদনা দায়ক, আমরা মর্মাহত এবং শোকাহত পরিবারের জন্য গভীর সমবেদনা প্রকাশ ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।
লিজার লাশ আট দিন পরে নিজ বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে এক ফসলী জমিতে পাওয়া গেছে। ছোট্ট বাচ্চা, মৃত্যুকালে কতটাই না ছটফট করেছে! কতটাই না কান্নাকাটি করেছে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য, বাবার কাছে যাওয়ার জন্য। স্বজনরা কত জায়গায়ই না খোজাখুজি করেছে! আট দিন পরে শাক তুলতে যাওয়া মানুষ দূর্গন্ধ পেয়ে এগিয়ে দেখে একটি লাশ। খবর পেয়ে লিজার পরিবার ছুটে এসেছে। তারাই সনাক্ত করেছে আর কেউ নয় এটাই তাদের আদরের ধন লিজা।
লাশ পাওয়ার পর যা হয়! সেই পোষ্ট মর্টেম, কাটাছেড়া। লিজাকে আনা হলো শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে। সেখানে দুজন ডাক্তার লিজার মরদেহর ময়না তদন্ত করলো। আট দিনের পচা গলা লাশের ময়না তদন্ত করা খুবই কঠিন। চিকিৎসক লাশের ভিতরে লিভার, হৃদযন্ত্র, কিডনি, জরায়ু কিছুই পেল না। এ পর্যন্ত সবই চলেছে প্রকৃতির নিয়মে। লিজার মৃত্যু যেমন একটি ঘৃন্য কাজ এর পরের কাজগুলো করলো কিছু হলুদ সাংবাদিক। সংবাদটাকে রং মেখে হলুদ থেকে লাল করে দিলো। শরীয়তপুরে কিছু চিহ্নিত সাংবাদিক আছে যারা খবর বানায়। তাদের বানানো খবরে মানুষ বিভ্রান্ত হয়, এতেই ঐ সাংবাদিকরা মজা পায়।
ঘটনাটা নিয়ে কিছু সাংবাদিক ইঙ্গিত করলো অঙ্গ পাচারকারীর আনাগোনার দিকে। তাদের নিউজে উঠে এলো লিজার যেসব অঙ্গ নেই সেগুলো পাচারকারী চক্রের কাজও হতে পারে। আর সেই ভীত তৈরী করার জন্য কৌশলে চিকিৎসকদের দিয়ে এমন কিছু বক্তব্য বের করলো যা টানলে রাবারের মত বলে। সেই সাংবাদিকরা একবারও বিবেচনায় আনলো না যে অঙ্গগুলো যদি কোন পাচারকারী চক্র নিয়ে থাকে সেগুলো কোন কাজে লাগবে কিনা? আর এটা সম্ভব কিনা তাও তারা জানে কিনা আমি তা নিশ্চিত নই। আমি নিজেও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়ে জানিনা। তবে এটুকু ধারনা আছে যে, অঙ্গ কোন আলু পটলের তরকারী না যে নিয়ে গেলে রেধে খাওয়া যাবে বা কোন বয়ামে ভরে নিয়ে গেলে খোলা বাজারে চড়া দামে বেচা যাবে। তাই বন্ধু ডাক্তার মাহবুবুল হকের সাথে যোগাযোগ করলাম বিষয়টা জানার জন্য। জানতে তো কোন দোষ নেই, তাই আমার অজ্ঞতার কথা খুলে বললাম। বন্ধু আমায় জানালো, এধরনের সংবাদ প্রচারকারীরা শুধু হলুদ সাংবাদিকই না তারা দালাল চক্রও বটে। বন্ধু আমায় কিছু তথ্য দিলো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়ে। পাঠকের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
‘কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হলে ডোনারের কাছ থেকে কিডনি নিয়ে মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যে অপারেশন শুরু করতে হয়। অপারেশন করতে লাগে ৬ ঘন্টা। পৃথিবীতে ত্রিশ মিনিটের বেশি সময় দেহের বাহিরে কিডনী সংরক্ষনের কোন উপায় আবিষ্কৃতই হয়নি। এর বেশী সময় অতিবাহিত হলে রক্তের কোষ মারা যায়, সেই কিডনী প্রতিস্থাপন করলে রোগী মারা যাবে। কিডনী প্রতিস্থাপন করতে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিতসক লাগে, লাগে দুটি অপারেশন থিয়েটার। দাতা গ্রহীতা দুইজন থাকেন পাশাপাশি অপারেশন থিয়েটারে। যার তার কাছ থেকে কিডনি নেয়াও যায়না। রক্তের গ্রুপ মিলতে হয়, এইচএলএ টাইপিং এর মত আধুনিক আরও পরীক্ষা, দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ের একরকম হলে তবেই একজন আরেকজনকে কিডনি দিতে পারে। নাহলে গ্রহীতার মৃত্যু নিশ্চিত। কোনভাবেই যা সম্ভব নয়, তা কী করে সেটা ফলাও করে নিউজ আকারে প্রচারিত হয়। কিংবা কেন? উত্তর পাবেন ২০১১ সালে ফিরে গেলে। বাংলাদেশে সবে মাত্র কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপন শুরু হল। সম্ভাবনা তৈরী হল এদেশেই এসব চিকিতসা শুরুর। মাথা খারাপ হয়ে গেল, বিদেশী হাসপাতালের এদেশীয় দালালদের, বিশেষ করে পাশের একটি দেশের কতিপয় হাসপাতাল ব্যাবসায়ীদের। আর তখনি প্রথম শুরু হল গত কয়েকদিনের মত করে, কিডনি পাচার বিষয়ক সংবাদ। যার জন্য সরকার নিষিদ্ধ করে দিল এদেশে কিডনি প্রতিস্থাপন অপারেশন। হাস্যকর ব্যাপার। মানুষ আবার বিদেশ যেতে লাগল, ভারতে গেলে খরচ হয় ১০-১৫ লাখ টাকা, সিংগাপুর গেলে প্রায় দেড় কোটি। দালাল চক্র শান্ত হল। তাদের ভাগেও যে ২-৪ লাখ করে জুটে। তাদের দালালি করে কোটি কোটি টাকার আয় চলতে লাগল। কিন্তু, সরকার তার ভুল বুঝতে পেরে দেশে আবার কিডনি প্রতিস্থাপনের অনুমতি দিল। যা এখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ১ থেকে ১.৫ লাখ টাকায় করা যায়। বারডেমে ২ লাখ ৭৫ হাজারে, কিডনি ফাউন্ডেশনে ২ লাখ ৩০ হাজারে, আর জাতীয় কিডনি ইন্সটিটিউট এ বিনামুল্যে। আবারও মাথা খারাপ হয়ে গেল দালাল চক্রের, শুরু হল ২০১১ এর মত করে অপপ্রচার। অজ্ঞ মানুষেরা সেটা বিশ্বাস করতে শুরু করল। যেটা চিকিতসা বিজ্ঞানে অসম্ভব বলে বিবেচিত। যেটা হওয়া সম্ভব সেটা হল, কিডনি নেয়ার জন্য একজন মানুষকেই ভারতে বা অন্য কোন দেশে পাচার করে দেয়া, যার ব্লাড গ্রুপ, এইচএলএ টাইপিং সহ সব কিছু মিলতে হবে গ্রহীতার সাথে, এর সম্ভাবনা খুব কম, সাধারনত এসব কিছু পরিবারের লোকজনের সাথে মেলার সম্ভাবনা থাকে, তাও সব সময় মেলেনা। কিন্তু কিডনি চুরি কাঁচি দিয়ে কেটে পাঠিয়ে দেয়া, চিকিতসা বিজ্ঞানে ইহা অসম্ভব। অসম্ভব। অসম্ভব। এটা সম্ভব কেবল এদেশের মিডিয়া আর বিদেশি হাসপাতালের এ দেশীয় দালালদের অজ্ঞতা, মূর্খতা উদ্ভট কল্পনা আর ষড়যন্ত্রে।’
এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা এলাকার হলুদ সাংবাদিকরা নয়। এরাতো সেই সব দালালদের পাচাটা বাচ্চা দালাল। শরীয়তপুরে হলুদ সাংবাদিকতা আজ নতুন নয়। এর আগেও হয়েছে। আমাদের এলাকা মঙ্গা কবলিত এলাকার মত অভাবি এলাকা নয়। তারপরেও কিছু হলুদ সাংবাদিক একবার বন্যার সময় লিখেছিলো ‘শুধু শাপলা খেয়ে বেঁচে আছে নছিমন!!’। আবার আরেকটি মেয়ে হত্যাকান্ডকে দোররা মেরে হত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার ঘটনাও আমরা দেখেছি। আসলে এসব নির্লজ্জ হলুদ সাংবাদিকদের লজ্জার কিছু অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। আট দিনের পচা শিশুর শরীরের অঙ্গ না পাওয়ার সাথে অঙ্গ পাচারের গল্প জুড়ে দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক তৈরী করার অধিকার কি তাদের আছে? তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কিন্তু ব্যবস্থা নেবে কিভাবে? তারা যে হলুদ সাংবাদিক! তাদের ক্ষমতা যে অনেক, তারা যখন তখন, যার তার ইজ্জত লুটে নিতে পারে মিথ্যা, বানোয়াট সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে!!
অবশেষে পুলিশ প্রশাসন ঘটনার মুল হোতাকে খুজে পেয়েছে। লিজার চাচাই ঘটনার মূল হোতা। প্রথমে সাইকেল চালাতে টাকা দিয়ে পরে আরো পাঁচশো টাকা দিয়ে লিজাকে প্রলুব্ধ করেছে। পরে একটা বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা কালে লিজা বলে ফেলেছে যে, মাকে বাবাকে বলে দিবে। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে লিজার চাচা। গলা টিপে হত্যা করে রাতে ভ্যানে করে লাশ কৃষি জমিতে ফেলে দিয়ে নারায়নগঞ্জ চলে গেছে। আট দিন পর লিজার গলিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। আট দিনে লাশ পচে যেতে পারে, দ্রুত পচনের জন্য কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করতে পারে এমনটাই ধারনা করছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমাদের হলুদ সাংবাদিকরা দেখলো অঙ্গ পাচারকারীদের পদচারনা!! এসব সাংবাদিক নামধারী হলুদ সাংবাদিকদের জন্য শুধুই ঘৃনা আর ঘৃনা!





সর্বনাশা নদী
শরতের পড়ন্ত বিকেল। পাখির কলকাকলিতে চারদিক মুখরিত। শালিকের কিচির-মিচির, কাকের কা-কা শব্দে কাল ঝাঝিয়ে ওঠে। দূর বাশঁবনে বিরহী ডাহুকের করুন আর্তনাদ। সামনেই বিশাল বিল, বিলের মাধ্যে কচুরীপানা, লতা, বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ জন্মেছে। বিলের মধ্যে ঝাকে ঝাকে পাখি এসে পড়েছে। এটাই হয়তো আজকের জন্য ওদের রাতের আশ্রয়। কারো কারো বাসা এখানেই। বিকেল হলেই ঝাকে ঝাকে পাখি নামে। এক ঝাক পাখি নামলেই আরেক ঝাক ওঠে। পুরো বিলটা পাখিতে ছেয়ে যায় বিকেল হলে। বিলের এপাড় দাড়ালে অপর পাড় দেখা যায় না। সামনে তাকালে শুধু ধূ-ধূ করে। বিলের এপার ধরে শিমুল গাছ। সাড়ি সাড়ি শিমুল গাছ। তার একটু উপরে হেটে চলার মত পথ। আকাবাকা সাপের মত দেখতে। সামনে একটি জায়গা যেখানটা একদম নিরব নিস্তব্ধ। নির্জনতা যেন ওখানেই শোভা পায়। জায়গাটার উপর একটা করুন ছাপ। সুমন সেই আকাবাকা বিলের তীরবর্তী পথ ধরে হাটছে। বিকেলে ওখানে হাটলে মনটা কেমন উদাস উদাস লাগে। ফুরফুরে হাওয়া, পাখির কলকাকলি। এমন পরিবেশে হাটলেই মনের কান্তি দূর হয়। হঠাৎ সুমনের চোখ যায় সেই নির্জন জায়গাটিতে। সেখানে বসে আছে একটি পনের বছরের ছেলে। সে একান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে বিলের পানে। সে বসে আছে করুন ভঙ্গিতে। তার দৃষ্টি যেন ধূ-ধূ প্রান্তের দিকে। সুমন ছেলেটাকে দেখে আস্তে আস্তে সেদিকে এগোতে থাকে। এর মধ্যে একটি লোকের সাথে দেখা হয় সুমনের সাথে। লোকটি মাঝ বয়সী, মুখে কাচা-পাকা দাড়ি। ছেলেটি সম্পর্কে জানার কৌতুহল জাগে সুমনের মনে। সুমন লোকটিকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে-
ঃ আচ্ছা ভাই, ঐ ছেলেটাকে চেনেন?
লোকটি সহজ সরল ভাবে উত্তর দেয়-
ঃ হ চিনি।
কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকায় সুমনের দিকে। কারন ওর নাম ঠিকানা জানেনা এমন লোক আশেপাশে দু’এক গ্রামের মধ্যে নেই বললেই চলে। লোকটি সুমনকে আর কখনও দেখেনি। তাই জিজ্ঞেস করে-
ঃ আপনারে তো ঠিক চিনলাম না!
ঃ আমার নাম সুমন। আমি এ গ্রামে বেড়াতে এসেছি।
ঃ ওহ! তাই কন। নাইলে ওরে চেনেনা এমন লোক এই গ্রামে আছে বইলা মনে হয় না।
সুমন কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে লোকটির দিকে। লোকটি একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে। তার পর বলতে শুরু করে-
ঃ সে অনেক দিন আগের কতা। ঐ যে দেখতাছেন ওর নাম মনু। এক অভাগা পোলা। ঐ যে দখতাছেন না সামনের দিকে ধূ-ধূ করতাছে, ঐডা এক সময় ছিল প্রমত্তা গাঙ্গ। এক সময় এই কিনার দিয়া বড় বড় জাহাজ, ইস্টিমার যাইতো। ঐ মাঝ গাঙ্গ দিয়া যাইতে সাহস পাইতো না। এর পর আস্তে আস্তে চর পড়তে থাকে। অহনতো পুরা চর। শীতের দিনে এহনতো মাইনসে চাষ-বাস কইরা খায়। এমন একদিন ছিল ঐহানে কেউ ভয়েও যাইতো না। এহনতো গাঙ্গ মইরা গেছে। চর পরছে। এহনতো চাষ কইরা, মাছ ধইরা খায় সবাই। এইডা ছিল একসময় ভয়ংকর রাক্ষুইস্যা গাঙ্গ। মনুর বাবার নাম ছিল কাদু মিয়া। কাদুর অবস্থা ছিল মোটামুটি। বেশি ভালও না আবার বেশি খারাপও না আরকি! কাদুরা আছিল আট ভাই চার বোন। বাপের যা সম্পত্তি আছিল ভাই বইনেরা ভাগাভাগি কইরা অল্প অল্প কিছু পাইছে। মনুর বাপ আছিল কৌশলী এবং ভাল মানুষ। মনুর দাদায়ও আছিল দয়ালু প্রকৃতির। সে মইরা গেছে সেই কবে আজও মানুষ তার নাম লয়। মনুর বাবাও আছিল অত্যন্ত ভাল মানুষ। সংসার ভিন্ন হওয়ার আগেই কাদু বিয়া করছিল। বউডা আছিল খুবই ভাল, মনে হইতো সাক্ষাৎ লক্ষী। ভিন্ন হওনের তিন বছর পর এই মনুর জন্ম হয়। আস্তে আস্তে কাদুর উন্নতি হইতে লাগলো। কাদুর গোয়ালে চারটা গরু আছিল। জায়গা জমি যা আছে তাই চাষ-বাস করে। কোন রকম দিন কাইট্যা যায়। দুধের গাই আছিল। কাদু আছিল একটা জুয়ান মরদ। বাহুতে আছিল বল। নিজের কাজ নিজেই করতো। প্রত্যেকদিন গরুগুলারে নাওয়াইতে যাইতো ঐখানে। গরুগুলারে কাদু বড় আদর করতো। ঐ যে দেখতাছেন মনু ওর বয়স তহন পাঁচ বছর। মনুরে ওর বাপ বড় আদর করতো। পোলারে নিজের পরানের চাইতেও বেশি ভালবাসতো। পোলাও সারাদিন বাপের লগে লগেই থাকতো। মাঝে মাঝেই মনু ওর বাপের লগে গরু নাওয়াইতে আইতো। মনু উপরে দাড়াইয়া থাকতো। একদিন মনু উপরে দাড়াইয়া ওর বাপেরে জিগায়-
ঃ বাজান গরুগুলা কার?
ঃ তোমার বাজান।
ঃ আমার গরুগুলারে কারে দিমু জানো বাজান?
ঃ কারে বাজান?
ঃ তোমারে দিমু!
ঃ বাজান, প্রত্যেক দিন গরুগুলারে নাওয়াও ক্যান?
ঃ গরুগুলা যাতে ভাল থাকে হেইয়ার লাইগ্যা প্রত্যেকদিন নাওয়াই।
ঃ আমাগো গরুতো ভালোই।
এইভাবে মনু তার বাপেরে একটার পর একটা প্রশ্ন করতেই থাকে। কাদু এর পর রাগ হইয়া কয়-
ঃ এত কতা কইসনাতো বাজান।
ঃ কতা কইলে কি হইবো বাজান?
ঃ এত কতা কইলে আমি হারাইয়া যামু।
ঃ আমারে থুইয়া তুমি কই হারাইয়া যাইবা বাজান?
ঃ ঐ যে দেহসনা কিছু দেহা যায় না। খালি ধূ-ধূ করতাছে ঐ হানে হারাইয়া যামু।
ঃ এ্যা, তোমারে যাইতে দিলে সেনা।
সুমনকে পিছনের দিকটা দেখিয়ে লোকটা বলে-
ঃ ঐ যে দেহেন না, একটা জাম গাছ ঐ হানে আছিল একটা ঘাট। ঐ হানে সবাই গোসল করতো। একদিন করিম বেপারীর পুতের বউ নাইতে আইছিল একটা কলসি লইয়া। হেইযে আইছিল আর বাড়ি ফিরা যায় নাই। তার আর কোন খোজও পাওয়া যায় নাই। নদীর ঘাটে খালি কলসি পাওয়া গেছে। কিন্তু বউরে আর পাওয়া যায়নাই। রহিম বয়াতীর পোলা একদিন বশ্যি বাইতে আইছিল নদীর ঘাটে। সন্ধায় ডুলাডা পাওয়া গেছে, বশ্যিও নাই, পোলাও নাই। কই গেছে কেউ কইতে পারে নাই।
    হেইদিন বিয়ান বেলা ঘুম থেইকা উইঠ্যা বাইরে যাওয়ার সময় কাদু দরজার কপাটে একটা উষ্ঠা খায়। তখনই কাদুর মনটা খারাপ হইয়া যায়। বাইরে গিয়া গোয়াল ঘরের তোন গরু বাইর করতে যায়। বাইর করার সময় গাই গরুডা আইজ একটা গুতা দেয় কাদুর কোকষা বাড়াইয়া। কাদু খুব অবাক হয়। যেই গরুর নিচে হুইয়া থাকলেও একটা পারা দেয় না। মনু নিচে বইয়া গরুর বানের থোনে মুখ লাগাইয়া দুধ খায় তাতেও গরু একটা লাত্তি দেয় না। মাডির মত ঠান্ডা কাদুর গাই গরু, হেই গরুতে গুতা দিল? এতে কাদুর মনডা আরো খারাপ অইয়া যায়। কাদু সব গরু বাইর কইরা আড়ালে বান্ধে। তার পর ফ্যান, কুড়া মিশাইয়া পানি খাওয়ায়। পানি খাওয়া হইলে কাদু সব গরু লইয়া চকে যায়। চক থেইক্কা আইয়া দেহে বউর এহনো রান্দা অয় নাই। আইজ এত সক্কালে কাদুর রাক্ষুইস্যা খিদা লাগছে দেইখ্যা কাদুর বউ তাজ্জব হইয়া যায়। আইজ কাদুর কতাবাতি কেমন যানি চাড়া চাড়া। এতদিন ধইরা সংসার করতাছে একদিনও এমন ব্যবহার করতে দেহে নাই। কাদুর বউর মনটাও খারাপ হইয়া যায়। কাদু বউরে কর্কশ গলায় জিগায়-
ঃ ভাত অইছে?
ঃ ভাত অইছে, তয় তরকারি রান্দা অয়নাই। একটু বহেন অহনই অইয়া যাইবো। আমনের বেশি খিদা লাগলে উরুম দেই, উরুম খান। ভাত হইছে, গরম ফ্যান আছে, আউষ চাউলের ফ্যান তো আমনের খুব পছন্দ, খাইবেন? হেলে ওলদি দিয়া, দুগ্গা ভাত লইয়া খান।
ঃ মুড়ি খাইমু ক্যান, ভাত হইছে তরকারি অয়নাই কিয়ের লাইগ্যা? মাগি বাইত্তে বইয়া কি ছিরচ? এহনও রান্দা হয়না?
ঃ আমনে এমনে কতা কন ক্যা?
ঃ এমনে কইম না তো কেমনে কইম? তোর কাছে কি এহন কতা কওয়া হিগদে হইবোনি?
কাদুর এই ব্যবহারে বউ খুব দুঃখ পায়। সংসার জীবনে এত দিনের মধ্যে কোন ঝগড়া ঝাটি অয় নাই। অভাব অনটনের সংসার ঠিকই কিন্তু কোনদিন কাদু বউরে কডুকতাও হুনায় নাই। এক কতায় দুই কতায় কাদুর লগে বউর ঝগড়া বাইজ্জা যায়। ঝগড়ার হেশে কাদু না খাইয়াই একটা কাচি লইয়া বাড়ি থেইকা বাইর অইয়া যায়। যাইতে যাইতে কাদু কইতে থাকে-
ঃ আল্লায় আমারে যানি আর বাইতে না আনে।
তহন মনু বাপেরে কয়-
ঃ বাজান আমি তোমার লগে যামু।
ঃ না, তুই বাইতে থাক।
এমনে আর কোন দিন মনুর লগে কাদু মিয়া কতা কয় নাই। মনুর কচি মনে বড় একটা আঘাত লাগে। বাড়ি থেইকা যাইয়া আর খাইতে কাদু আর খাইতে আহে না। দুফার গরাইয়া বিয়াল হয়, মনুর কোন খবর নাই। এমিহি একটা কাউয়্যা কা-কা করতে করতে যেন গলাডা ফাডাইয়া হালাইতাছে। কাদুর বউর মনডাও আজ কেমন যানি করতাছে। বউ বিরক্ত অইয়া কতগুলা ভাত দেয় কিন্তু কাউয়্যাডা হেই ভাত ছুইয়াও দেহে না। ভাত দেওয়ার পরেও কাউয়্যাডা কাবলাইতেই থাকে। মনুর মায়ও ভাত খায় নাই। হেইদিন আমরা ঐ ঘাটটায় নাইতে নামছি। ঐ যে মনু বইয়া রইছে ঐ হানে কাদু গরু নাওয়াইতে নামছে। প্রত্যেকদিন কাদু কত হাসি খুশি থাহে। কত কতা কয়, কত রঙ্গ রস করে। আমাগো ডাইকা ডাইকা কতা কয়। পোলার লগে কতা কয় আর গরু নাওয়ায়। আইজ কাদু চুপ-চাপ। এক্কেবারে মন মরা। মাত্র দুইডা গরু নাওয়াইয়া উপরে উডাইছে। দুইডা পানিতে নামাইছে। নামাইয়া গরুর পিঠ ডলতাছে। এমন সময় একটা চিৎকার হোনতে পাইলাম। চাইয়া দেহি পানির গরু দুইডা লাফালাফি কইরা উপরে উঠতাছে। একটা মাত্র চিৎকার আর কোন শব্দ নাই। আমরা সবাই ডরে উপরে উঠ্যা গেলাম। উপরে উঠ্যা দেহি মনুর বাপেরে দেহা যায় না। আমরা গাঙ্গের মিহি চাইলাম। পানিতেও দেহি নাই। ইট্টু পরেই দেহি ঐ মাঝ গাঙ্গে একটা বড় কুমইর মাথা ঝাকাইতাছে। কুমইরের মুখের মধ্যে মনুর বাপের পাও দেহা যায়। মনুর বাপেরে দেইখা আমরা সবাই আল্লার নাম লইতে থাকি। আর হৈ-চৈ করতে থাকি। মনুর বাপেব পাও কামরাইয়া ঝাকাইতে ঝাকাইতে মাছ গাঙ্গের দিকে যায়। মাঝ মিহি যায় আর ঝাকায়। মনুর বাবার দেহ নিথর নিষ্প্রাণ। মনুগো বাড়িতে একজন খবর পাডাইলো। মনুর মায় দৌড়াইয়া আইলো, সাথে মনুও আইলো। মনু, মনুর মার কিযে কান্দন! মনুর মার কান্দনে গাছের পাতা ঝইরা যায়। মনু কানতে কানতে কইতো-
ঃ আমার বাজান ঐহানে হারাইয়া গেছে। আমিও ঐহানে যামু।
মাঝে মাঝেই মনু এইহানে আইয়া বইয়া থাকে। একলা একলা বইসা কান্দে। দুই চোখের পানিতে বুক ভাইস্যা যায়। এহনও মানুষ মাঝ রাইতে মনুর বাবার চিৎকার হোনতে পায়। হেই করুন আর্তনাদ! এহনও মনুর মায় মাঝ রাইতে উইঠ্যা কান্দে।
এই করুন হৃদয় স্পর্শী কাহিনী শুনে কখন যে সুমনের চোখের কোনা বেয়ে অশ্রু ফোটা ঝরে পড়ে তা সে নিজেও টের পায় না। লোকটিরও দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে। দু’হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছতে মুছতে লোকটি চলে যায়। সুমন একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলে- হায়রে শর্বনাশা নদী!
১৩ ডিসেম্বর ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ।





ধর্মানুভূতিতে আঘাত-হিন্দুদের বাড়ি ঘরে আগুন-মন্দির, প্রতিমা ভাংচুর
হ্যাকার পোলায় মালাউন বলা শিখে গেছে, এটা উচিত নয়
সম্প্রতি ধর্মানুভূতিতে নাকি আঘাত লেগেছে নাসির নগরের মুসলমানের! কেউ দেখেছে, কেউ শুনেছে, কেউবা সুযোগ পেয়েছে। আর অমনি শুরু হয়েছে হিন্দু বাড়িতে আগুন দেয়া, মন্দিরে মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাংচুর, লুট তরাজ। যে যেমন বুঝেছে, যে যেমন সুযোগ পেয়েছে তাই করেছে আমাদের হুজুগে বাঙ্গালি কিছু বিপথগামী নষ্ট জনতা। সেই নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড়, নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাস্ত, মন্ত্রীর গদি গরম, বেফাস কথায় ফেসে যাওয়া কত কি। বিষয়টা নিয়ে কিছু লিখতে যাওয়াও বিপদজনক! কোন কথা বেফাস হয়ে যায়! কোন কথা যে উস্কানিমূলক হয়ে যায় বলা বা বুঝা মুসকিল!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। সমাজে অসামাজিক লোক যেমন আছে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু অসামাজিক লোকও আছে। অসামাজিক মানুষগুলো সমাজে নানা অপকর্ম করে বেরায়। অসামাজিক মানুষগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৈজন্যমূলক পোষ্ট লেখা, বিকৃত রুচির ভিডিও-স্থির চিত্র পোষ্ট দেয়া, উষ্কানিমূলক কথা প্রচারের মাধ্যমে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। সমাজে অসামাজিক মানুষের অবস্থান তা সংখ্যায় কত? সবাই বলে মন্দ লোকের সংখ্যা নাকি কম, ভাল মানুষই নাকি বেশি। তবে কেন অল্প সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোকের অশান্তির জন্ম দেয়?? এটা আমার কাছে লাখ টাকার প্রশ্ন হলেও কোন উত্তর নাই। উত্তর যা আসে তা কাজে আসে না। অল্প সংখ্যক অসামাজিক লোক অধিক সংখ্যক ভাল মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। কারন নাকি, অসামাজিক লোকগুলো নির্বোধ, নির্লজ্জ, বেহায়া ও সহসি হয়ে থাকে। পাশাপাশি সামাজিক লোকগুলো আত্ম মর্জাদার কথা চিন্তা করে একটু ভীরু প্রকৃতির হয়। সেই সুযোগই অসামাজিক লোকগুলো কাজে লাগায়। অসামাজিক লোকগুলোর ইউনিটি ভাল। সামাজিক লোকগুলোর ইউনিটির অভাব আছে। তারা একে অপরের বিপদে সহজে এগিয়ে আসতে চায় না, পাছে নিজের কোন ক্ষতি হয়ে যায়!!
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার উস্কানিতে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগর দেশের বেশ কিছু স্থানে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে যা সবাই জানে। কে করেছে সেটা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার হলেও উস্কানির আগুনে পুড়েছে অনেক অসহায় হিন্দু পরিবারের ঘর, মন্দির, প্রতিমা। কোন প্রকার যাচাই বাছাই ছাড়াই নির্বিচারে সাধারণ হিন্দুদের উপর হামলা হয়েছে। হামলা করেছে মুসলমানরা এটাতে কারো কোন সন্দেহ নেই। হামলা ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছে অনেক মুসলমান সন্তানও। তাহলে কেন এমন হলো? আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি কি এতই ঠুনকো যে সামান্য উস্কানিতেই আঘাত লেগে যাবে? পবিত্র ধম গ্রন্থে বলা আছে, কোন কোন গর্হিত অপরাধকে স্বচক্ষে অন্তত ১৩ বার দেখবার আগে সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না নিতে বা সেটি প্রচার না করতে। অনেক সময় নিজের চোখে দেখা বা কানে শোনা বিষয়ও সব সময় সত্যি না হতে পারে। ঘটনার আড়ালে অনেক ঘটনা থাকে যা হয়তো আমরা কখনো জেনেই উঠতে পারিনা। কারন, এখন খারাপ মানুষের জয় জয়কার। আর তারা ওঁত পেতে আছে ভালো মানুষের ক্ষতি করবার জন্য। হয়তো কোন কারন ছাঁডাই, শুধুমাত্র তাদের বিকৃত আনন্দ চরিতার্থ করবার জন্য, নিজেদের ফায়দা লোটার জন্য ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে অন্য ধর্মের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। ভালো মানুষেরা কখনও কখনও সত্যিই অসহায়।
নাসিরনগরের ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রী নাকি বলে বসলেন মালাউনরা বারাবারি করছে!!! পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পারুক না পারুক উত্তেজনা বসত হোক আর ঠান্ডা মাথায় হোক মালাউন শব্দটা চলে আসলো আমাদের সামনে। মন্দিরে মন্দিরে ঘরে ঘরে আগুন নিভুক আর না নিভুক ফেসবুকে নিন্দার আগুন ছরিয়ে পড়লো। মালাউন শব্দটা কেউ তার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার করে প্রচার শুরু করলো। কেউ কেউ তার ওয়ালে লিখলো আমি মালাউন, আপনি? এভাবে সামাজিক মাধ্যমে জনমত সৃষ্টি করে মন্ত্রীর গদী গরম করে ফেললো। মন্ত্রী বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন, পদত্যাগ দাবীতে স্লোগান আরো কত কি! কিছুদিন পরে সেটা থেমেও গেল। কিন্তু এরই মধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার নিরীহ হিন্দুদের হয়ে গেছে।
একটা সময় আমাদের এই অঞ্চল ছিল হিন্দু অধ্যষিত। আমাদের পূর্ববর্তী বয়োবৃদ্ধদের কাছ থেকে শোনা কাহিনী। হাতে গোনা মুসলমান ছিল। মুসলমানরা ছিল সংখ্যা লঘু শ্রেণীর। মুসলমানরা ছিল কেবলই গৃহস্ত। রহিম, করিম, গণি, কাদের ছিল একান্তই নিচু জাতের। আর হিন্দুরা ছিল কুলিন! কোন মুসলমান কোন হিন্দু বাড়ির সামনে দিয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে যেতে পারতো না। পায়ে স্যান্ডেল থাকতে পারতো না। স্যান্ডেল হাতে করে, ছাতা বন্ধ করে যেতে হতো হিন্দু বাড়ির সামনে দিয়ে। কালে কালে সেসব এখন আর নেই। তখন মুসলমানদের বলা হতো হ্যাকা, হ্যাকার পো!!! গোসল করে যাওয়ার সময় কোন হ্যাকার পোর ছায়া যদি নিজের ছায়ার উপর পড়তো তবে আবার গোলস করতে হতো। সকাল বেলা ঘরের বাইরে গিয়ে হ্যাকার পোলার মুখ দেখলে যাত্রা ভঙ্গ হতো। এমনই গোরামী ছিল বলে দাদা দাদীর মুখে শুনেছি গল্পের মতো। তখন মুসলমানদের শিক্ষার অভাব ছিল, খাদ্যের অভাব ছিল, সম্পদের অভাব ছিল। অভাবী মানুষের প্রতিবাদ করার ক্ষমতাও ছিল না। সেই সময় বদলে গেছে। আস্তে আস্তে এলাকার হিন্দুরা বিভিন্ন কারনে ও অযুহাতে চলে যেতে শুরু করে দেশ ছেড়ে। এলাকার মুসলমানরাও শিক্ষায় দীক্ষায় এগিয়ে গেল। আস্তে আস্তে হিন্দুদের হ্যাকা বলা বা হ্যাকার পো বলা কমে গেল। তখনকার হ্যাকা বলাটা ছিল আত্মমর্জাদার উপর আঘাত। মুসলমানদের হ্যাকা বলাটা উচিত হয়নি হিন্দুদের।
আজ অনেকদিন পর আবার মিডিয়ার মাধ্যমে শুনতে পেলাম মালাউন ডাক। কথাটা যদি সত্যি হয় তবে মন্ত্রী মহোদয় ঠিক করেননি। মুসলমানদের হ্যাকা বলার কারনে আমরা যেমন মনে কষ্ট পেতাম, এখনও মনে কষ্ট পাই ঠিক তেমনি হিন্দুদের মালাউন বললে তারাও মনে কষ্ট পায়। আজ মনে হচ্ছে, হ্যাকার পোলা মালাউন বলা শিখে যেছে, এটা ঠিক নয়। প্রত্যেকেরই আছে আত্ম সম্মানবোধ, ধর্মীয় অনুভূতি, সামাজিক মর্যাদা। অন্য ধর্মের অনুসারীদের সম্মান দিয়ে কথা বলাই ধর্মের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। ধর্ম অন্য ধর্মের অনুসারীদের হেফাজতের শিক্ষা দেয়, নির্যাতন নয়, অন্য ধর্মের অনুসারীদের সম্মান করার শিক্ষা দেয়, নিপিড়ন বা অপমান নয়। যে হিন্দুরা হ্যাকা বলতো তাদের আমরা ঘৃণা ভরে স্মরণ করি, আজ অমি যদি মালাউন বলি তবে আমাকেও ইতিহাস ঘৃণা ভরে স্মরণ করবে, অশ্রদ্ধা করবে। ধর্মীয় অনুভূতি এত হালকা নয়, সামান্য আঘাত দিলে ভেঙ্গে যাবে। ধর্মের বড় শিক্ষা ধৈর্য, সহনশীলতা, সহানুভূতি পরায়নতা এবং অন্যকে সম্মান করা। আসুন আমরা ধর্মের চর্চা করি, ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে ধ্বংষযজ্ঞ নয়।





অতীত ঐতিহ্যের কাশ-পিতল শিল্প ঃ আজ শিল্পীও নেই শিল্পও নেই
এক সময় শরীয়তপুর জেলার বিশেষ করে সদর উপজেলার পালং, বিলাশখান, বাঘিয়া, দাসার্তা গ্রামে প্রবেশ করলে মানুষ কান হাত দিয়ে দু’কান বন্ধ করে হাটতো। কাশ-পিতল কারিগরদের পিতল পাতের উপর অবিরাম হাতুরির বাড়িতে হওয়া টুং-টাং শব্দ কানে তালা লাগাতো অনেকের।
এটা আমাদের কাছে এখন কেবলই স্মৃতি। কারন সেই অতীত ঐতিহ্যের কাশ-পিতল শিল্পীও নেই, নেই শিল্পও। নানা সমস্যার কারনে, নানা সমস্যার অযুহাতে, নানা অভিযোগে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ এলাকার পিতল শিল্প আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এক সময় পাঁচ শতাধিক পরিবারে দুই হাজারের উপরে কর্মী কাজ করলেও এখন সাত-আটটি পরিবারে বিশ-পচিশ জন শিল্পী এ শিল্প ধরে রেখেছে। এ শিল্পের প্রকৃত শিল্পী যারা তারা চলে গেছেন ওপার বাংলায়। এপারে যারা এই শিল্পকে আকরে ধরে আছেন তারা জাত শিল্পী না। জাত শিল্পীদের কাছে একসময় রুটি-রুজির জন্য কাজ করেছে বা শিল্পকে ভালবেসে কাজ শিখেছে তারাই ধরে রেখেছে শিল্পকে।
একেবারে গোড়ার কথাঃ জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করেন এমন ব্যক্তি ও শিল্পের সাথে জড়িতদের সাথে আলাপ করে জানাযায়, অষ্টাদশ শতাব্দির শেষ দিকে কাশ-পিতল শিল্পের সাথে জড়িত কংসবণিক সম্প্রদায় প্রথমে ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে পশ্চিম বঙ্গের হুগলির চন্দন নগর এসে বসতি গড়ে। সেখান থেকে একটা অংশ বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের লৌহজং গ্রামে এসে বসতি গড়ে। পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের ফলে লৌহজং থেকে কংসবণিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ অংশ শরীয়তপুরের দাসার্তা, বাঘিয়া, পালং, বিলাশখান গ্রামে এসে বসতি গড়ে কারখানা স্থাপন করে। শরীয়তপুর সদরে তথা পালং ছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলাতে বসতি গড়লেও সংখ্যায় তা কম। তবে পালং বাজারটাই ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে।
শিল্পের প্রসারঃ বাঘিয়া, দাসার্তা, বিলাশখান ও পালং গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে কারখানা গড়ে উঠলেও পালং বাজার প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তৎকালীন সময়ে কাশ-পিতলের ধাতব মূল্য ও সৌন্দর্যের কারনে এ শিল্পের এতটাই প্রসার লাভ করে যে, বাংলাদেশের মধ্যে পালং হয়ে ওঠে কাশ পিতল শিল্পের প্রধান উৎপাদন ও ব্যবসা কেন্দ্র। এখান থেকে দেশের প্রধান বিভাগীয় শহর এবং বিভাগীয় শহর থেকে বিদেশে রপ্তানি হওয়া শুরু হয়। এই শিল্পের প্রসার প্রথমে হিন্দুদের হাতে শুরু হয়। পরবর্তীতে মুসলমানরাও জড়িয়ে পরে এ শিল্পের সাথে।
পেশার সাথে যুক্ত পরিবারের অতীত ও বর্তমান সংখ্যাঃ গত বিশ-ত্রিশ বছর পূর্বেও এ শিল্পের সাথে চার শতাধিক পরিবার জড়িত ছিল। এখানে কাশ-পিতল শিল্পের প্রায় দুই থেকে তিন শতাধিক কারখানা গড়ে উঠেছিল। পর্যায়ক্রমে মুসলমানরা এ শিল্পে শ্রম দিতে দিতে কারিগর হয়ে ওঠে। নানাবিধ কারনে শিল্পের সাথে জড়িত হিন্দুরা ভারতের পশ্চিম বঙ্গে চলে যেতে থাকলে মুসলমান কারিগররা আস্তে আস্তে কারখানা স্থাপন করে শিল্পটা ধরে রাখে। বর্তমানে জেলায় সাত-আটটি পরিবার এ শিল্পকে ধরে রেখেছে। এক সময় শুধু পালং বাজারেই ত্রিশ থেকে চল্লিশটি কাশ-পিতল সামগ্রী বিক্রির দোকান থাকলেও এখন মাত্র চারটি দোকান আছে।
শিল্প সামগ্রীঃ একসময় এ জেলায় মালা, কলসি, জগ, বালতি, বদনা, চামচ, পানদান, ডাবর, পানি খাবার গ্লাস-মগ, ধান-চাল পরিমাপের পুড়, কুপি, বিভিন্ন প্রকার প্রদীপ, পাতিল, ঘন্টি, বিন্দাবনী, চারা, কড়াই, ধুপদানী, ছোট ঘটি (পুঁজার জন্য), মালসা, কোসা-কুসি, পুস্প পত্র, করাতথাল, বাস বেড়া, বগি থাল, পঞ্চপত্র সহ নিত্যব্যবহার্য ও নানান দর্শনীয় সামগ্রী তৈরী করা হতো।
ওপারে (পশ্চিম বঙ্গে) চলে যাওয়ার কারনঃ নানা সময়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তণের কারনে বিনিয়োগের ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, চাঁদাবাজি, সহজলভ্য সামগ্রী হাতে পেয়ে মানুষ পিতলের সামগ্রী ব্যবহার না করার কারনে এ শিল্পের সাথে জড়িত হিন্দুরা দেশ ছাড়তে থাকে। কাশ-পিতল শিল্পীরা সাধারণত অন্য কাজ করতে না পারায় পশ্চিম বঙ্গে এ শিল্পের চর্চা কিছুটা অব্যাহত থাকায় হিন্দুরা চলে যায়। আবার অনেকের মতে হিন্দুরা বাংলাদেশকে নিজের মত করে ভাবতে পারে না তাই তারা সর্বদা ওপার যাওয়ার চিন্তায় বিভোর থাকে। পশ্চিমবঙ্গে আপনজন থাকায় মনের টানে চলে যায় অনেকে। অনেকের মতে সংকট আছে থাকবেই। মুসলিম পরিবার গুলো তাদের পেশার সংকটের কারনে কি অন্যত্র চলে যাবে? সংকটের সাথে লড়াই করেই টিকে থাকতে হয়, টিকে থাকতে হবে। তাই শিল্প ধ্বংসের পিছনে শুধু সংকট, সন্ত্রাস, নিরাপত্তাহীনতা, বাজার মূল্য, সামাজিক প্রেক্ষাপটকে দায়ী করলে ঠিক হবে না।   
শিল্প বিলুপ্তর কারণঃ পালং বাজারের কাশ-পিতল ব্যবসায়ীরা জানান, একসময় কাশ-পিতল সামগ্রী তৈরীর কাঁচামাল ‘পাত’ কেজি ছিল একসময় আশি টাকা। আর এখন প্রতি কেজি পাতের দাম তিনশত টাকা। এতেই অনুমান করা যায় কাঁচামালের মূল্য কি হারে বেড়েছে। বাজারে প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, সিলভার, এমনকি লেহার তৈরী পারিবারিক কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর সহজ লভ্যতা, কম মূল্যর কারনে এবং কাশ-পিতলে তৈরী সামগ্রীর অধিক মূল্যের কারনে মানুষ কাশ-পিতল সামগ্রী ব্যবহারে অনিহা দেখায়। ফলে শিল্পীরা তাদের উৎপাদনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। কাশ-পিতলের ধাতব মূল্য, স্থায়ীত্ব বিবেচনা না করেই সহজলভ্য সামগ্রী ব্যবহারের কারনে এ শিল্প বিলুপ্তপ্রায়। তাছাড়া কাশ-পিতলের তৈরী সামগ্রীর চেয়ে সিলভার, প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, লোহার সামগ্রী দেখতে অনেক দৃষ্টিনন্দন।
চাহিদাঃ এক সময় মানুষ আচার-অনুষ্ঠানে উপহার দিতে বা পারিবারিক কাজে ব্যবহার করতে প্রধান ও প্রথম পছন্দের তালিকায় ছিল কাশ-পিতল সামগ্রী। কাশ-পিতল সামগ্রী ছিল আভিজাত্যের প্রকাশও। বর্তমানে মেলামাইন গিফট বক্স জাতীয় জিনিসের ছড়াছরি ও সহজলভ্যতার কারনে মানুষ কাশ-পিতল সামগ্রী উপহার তালিকা থেকে বাদ দেয়। তাছাড়া এখন উপহারের তালিকায় নগদ টাকার প্রচলন বেড়ে যাওয়ায় এর কদর কমেছে। এখন একান্ত ব্যবহার্য কিছু সামগ্রী যেমন, বিন্দাবনী, বালতি, কলস, পানদান ছাড়া আর কোন সামগ্রীর চাহিদা নেই।
বর্তমান পরিস্থিতিঃ বর্তমানে সাত-আটটি পরিবার এ শিল্পকে কোনমতে বাঁচিয়ে রেখেছে। সাত-আটটি পরিবারের মধ্যে হিন্দু পরিবারের সংখ্যা নেই বললেই চলে। পূর্বে যারা এ শিল্পে শ্রম দিতেন তারাই মূলত এ শিল্পকে ধরে রেখেছে। নতুন প্রজন্মের কেউ এই শিল্পে শ্রম দেয় না। ফলে এই সাত-আটটি পরিবার বিলুপ্ত হলে বা পেশা ছেড়ে দিলে নতুন প্রজন্ম এই শিল্পের হাল ধরবে না বলেই পর্যবেক মহলের এবং শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের ধারনা।
মুসলমান শিল্পীদের আবির্ভাবঃ একটা সময়ে পাঁচশতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। প্রচন্ড চাহিদার কারনে শ্রমিক সংকট মেটাতে কংসবণিক সম্প্রদায় স্থানীয় মুসলমান শ্রমিকদের এ কাজে নিয়োগ দেয়। কালক্রমে এখান থেকে হিন্দু ব্যবসায়ীরা চলে যাওয়ায় এখন মুসলমানরা যে চহিদা আছে তা মেটানোর চেষ্টা করছে। এ শিল্প ধরে রাখার কারণ হিসেবে জানা যায়, মুসলমান শিল্পীরা এ কাজ শিখার কারনে অন্য কাজ পারে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পশ্চিম বঙ্গে চাহিদা থাকায় এবং সেখানে অধিকাংশের আত্মীয় পরিজন থাকায় চলে গেলেও মুসলমানরা যাবে কোথায়। তাই তারা এখানে এই পেশাকে ধরে রেখেছে।
শিল্পীদের কথাঃ দাসার্তার শিবের বাড়ি চেনেন না এমন লোক শরীয়তপুরে খুব কমই পাওয়া যাবে। ঐ শিবের বাড়ি এক সময় দশটি পরিবার এ কাজের সাথে জড়িত ছিল। বর্তমানে একটি মাত্র পরিবার কাজ করে বাকি সবাই পশ্চিম বঙ্গে চলে গেছে। রঞ্জীত কুমার কংসবণিক, সিদাম কংসবণিক, বাসুদেব কংসবণিক ও স্যামসুন্দর কংসবণিক এ চার ভাই এখনও এ শিল্পকে ধরে রেখে এদেশে পরে আছে। রঞ্জিত কুমার কংসবণিক বলেন, ভোর রাত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে কাজ হতো। হাতুরি-পিতলের এতই সম্পর্ক ছিল যে টুং-টাং শব্দ সাধারণ মানুষের কাছে কানে তালা লাগার মত মনে হলেও আমাদের কাছে এটা গানের মতো। এখন আর এ শব্দ শোনা যায় না। আবুল কাশেম বেপারী বলেন, ছোট বেলায় এ শিল্পের চাহিদা এতই বেশি ছিল যে বাবা অন্য কাজে না দিয়ে কাশ-পিতলের কাজে দিলেন। এ কাজ শিখেছি, এখনতো আর অন্য কাজ পারি না। তাই ধরে রেখেছি। বর্তমান অবস্থা এতটাই খারাপ যে, আগে এখানকার আফিদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন টন কাঁচামাল বিক্রি হতো আর এখন এক টন কাঁচামাল এক মাসেও শেষ হয় না। এতেই বোঝেন অবস্থাটা কি।
শিল্পীদের দাবীঃ বর্তমান পিতল শিল্পের সাথে জড়িত শিল্পীরা দাবি করেন এ শিল্পের বিকাশের জন্য তাদের সহজ শর্তে ঋণ ও বাজারজাতকরণের পরামর্শ প্রদান করা দরকার। তাছাড়া সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের দাবি ‘পিতল এমন একটি দ্রব্য এটা পুরাতন হলেও এর মূল্য খুব একটা কমে না। তাই পিতল ব্যবহার করার প্রতি মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে। পিতল স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশ বান্ধব।
কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কথাঃ জেলার পিতল শিল্পের কাঁচামাল প্রকৃয়াজাত প্রতিষ্ঠানের পথিকৃত শরীয়তপুর ব্রাস ইন্ডাষ্ট্রি এর প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ কোতোয়াল। বর্তমানে উৎপাদন ও সরবরাহকারী মেসার্স আফিদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাদিকুর রহমান কোতোয়াল লিটন বলেন, কাঁচামালের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি, কাঁচামাল ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া এবং শিল্পীরা ভারতে চলে যাওয়ায় মিলটি বন্ধপ্রায়। ১৯৮৭ সালেও এখানে কাঁচামালের চাহিদা এত বেশি ছিল যে এখানে কারখানা স্থাপন করতে আমার বাবা আগ্রহী হয়েছিলো। মাত্র পনের-ষোল বছরের ব্যবধানে দেখা গেল চাহিদা শুনের কোঠায়। শিল্প ও শিল্পী উভয়ই বিলুপ্তপ্রায়।
বিসিকের ভাষ্যঃ বিসিক শিল্প নগরী শরীয়তপুর এর এক সম্প্রসারণ কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, দশ বছর আগে যখন এখানে একবার এসেছিলাম তখন টুংটাং শন্দে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কুটির শিল্প হিসেবে (যেহেতু হাতের কাজ) উদ্যোক্তারা আমাদের কাছে আসলে তাদের ঋণদান, উৎপাদন, বাজারজাত, পরামর্শসহ তাদের জন্য কিছু করার সুযোগ ছিল। কিন্তু কেউই আমাদের কাছে আসে না।
গবেষকের কথাঃ শরীয়তপুর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে গবেষনা করেন এমনই একজন বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক অধ্যাপক এম এ আজিজ মিয়া। তিঁনি বলেন, কাশ পিতল শিল্পীরা নানান কারনে ধাপে ধাপে এদেশ ত্যাগ করেছে। শুধু জেলারই নয়, এই দেশের অন্যতম কাশ-পিতল শিল্পের উৎপাদন হতো এখানে। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক কারনে পর্যায়ক্রমে তারা দেশ ছাড়ে। পিতলের স্থায়ীত্ব অনেক বেশি, সংরক্ষণের সুবিধা, পুরাতন হলেও এর দাম কমে না এবং পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত। এসব দিক বিবেচনা করে আমাদের উচিত কাশ পিতলের সামগ্রী ব্যবহার করা।






নদী বাঁচাও পরিবেশ বাঁচাও ঃ পদ্মা নদীর উপর নির্মিত বাঁধ এখন মরন ফাঁদ!
একটি বাঁধ যখন হাজার হাজার মানুষের জন্য মৃত্যু ফাঁদ হয় তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।
শরীয়তপুর জেলা সদর উপজেলা থেকে প্রায় বাইশ কিলোমিটার দূরে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার আনন্দবার সংলগ্ন পদ্মাকে বাঁধ দিয়ে আনন্দ বাজার সংলগ্ন সাধারণ মানুষকে শরীয়তপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ড আনন্দ দিতে না পারলেও বেদনা দিয়েছে এটা সাধারণ মানুষের কথাতেই প্রমান মিলে। তবে হ্যা, দু’একজন মানুষকে যে আনন্দ দিয়েছে তাও সাধারণ মানুষের ক্ষোভে ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে প্রমান পাওয়া যায়।
বহু বিতর্কিত সেই বাঁধ দেখার লোভ সামলাতে না পেরে বন্ধু দৈনিক যুগান্তর, বাংলাভিশন ও বিডি নিউজের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি কে এম রায়হান কবীর সোহেল ও ছোট ভাই দৈনিক আমাদের সময়ের জেলা প্রতিনিধি এ বি এম মামুনকে নিয়ে মোটর বাইকে রওয়ানা দিলাম। সেখানে পৌছে দেখি পদ্মার শাখা নদীর উপর বিশাল বাঁধ দিয়ে প্রমত্তা পদ্মার শাখাকে আড়াআড়িভাবে আটকে দেয়া হয়েছে। পূর্ব-পশ্চিমে দেয়া এই বাঁধের কারনে পদ্মা এখন মরা। বাধের দক্ষিনে ও উত্তরে প্রায় নদীর অনেকখানি জায়গা ড্রেজিং করে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। নদীতে হাটু পানি। আমাদের এলাকায় খল্লা মাছ নামে পরিচিত এক প্রকারের মাছ হাটু পানিতে খেলায় রত। মরা নদীর বুকে (মরা বলা ঠিক হবে না বলবো মেরে ফেলা নদী) কয়েকটা ভাঙ্গা ট্রলার ও নৌকা পড়ে আছে।
একটা বাঁধ নদীর উপর দিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে নদীর পূর্ব পারের মানুষ এখন সব সময় হেটে পশ্চিম পারে আর পশ্চিম পারের মানুষ পূর্ব পারে আসতে পারবেন। এটা অত্যন্ত সুখের কথা। এটাই হওয়া উচিত বলে মনে করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা! কিন্তু পরিবেশ? পরিবেশ, জীব বৈচিত্র, পরিবেশ-প্রতিবেশ, পানির সাভাবিক প্রবাহ, স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্য, সাধারণ মানুষের ফসলি জমি ও ঘরবাড়ির কথা একবারও চিন্তা করলেন না তারা!
স্থানীয় সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে ঘটনার মূলে গিয়ে জানাযায়, বাঁধের দক্ষিণ প্রান্তে বাড়ি এক সেনা কর্মকর্তার। প্রবাহমান পদ্মা এই সেনা কর্মকর্তার বাড়ি ভেঙ্গে ফেলবে! এই অপরাধে পরিবেশ প্রতিবেশের দিকে না তাকিয়ে ঐ সেনা কর্মকর্তার ও প্রভবশালীদের বাড়ি রক্ষা করার জন্য একটি নদী মেরে বাঁধ করা হলো। এর সাথে আছে আমাদের দেশের শীর্ষ স্থানীয় আর নিম্ন স্থানীয় দুই ধরনের রাজনীতিবিদদের হাত। আমাদের দেশের পরিবেশ আন্দোলনকারীরা এই বেলায় চুপ চাপ থাকলো কেন তা বোঝা গেল না।
সাধারণ মানুষের কথা, এই বাঁধের কারনে বর্ষা মৌসুমে যখন পানি বৃদ্ধি পাবে তখন তীরের বাড়ি ঘর সহজেই তলিয়ে যাবে। আবার যখন পানি টান দেবে তখন পানি আটকে ফসলি জমি পতিত থাকবে।
স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্য সব বন্ধ। আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ীদের মনে আনন্দ নাই। নদীর জন্য বেদনা, ব্যবসার জন্য বেদনা, পরিবেশের জন্য বেদনা। তারা বাঁধ চায় না। তারা চায় সেতু হোক। হেটে নদী পার হওয়ার ইচ্ছা বা অভিলাশ তাদের নেই। আনন্দ বাজার ঘাটে শত শত ট্রলার ভীরতো। ব্যবসা বাণিজ্য চলতো। এখন সব বন্ধ।
তাই এই বাঁধ এখন সকলের মরন ফাঁদ!!







ঘুরে ঘুরে মধু আহরণ...
ঘুরে ঘুরে চলছে মধু আহরণ। মৌ মাছি এ ফুল থেকে ও ফুলে ঘুরে আর মৌয়ালী এ জেলা থেকে ও জেলায় ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে। এখন শীতের সময়। মৌয়ালীরা এসেছে শরীয়তপুর জেলায় আর মৌ মাছিরা যাচ্ছে সরিষা, ধনিয়া আর কালজিরার ফুলে ফুলে। এভাবেই চলে বাণিজ্যিক ভাবে মধু আহরনের কাজ। শরীয়তপুর জেলার জাজিরায় এমন ভ্রাম্যমান মধু চাষীরা প্রায় এক হাজার মৌ বক্স নিয়ে মধু আহরণের কাজ করছে। আর মৌমাছিরা ফুলে পরাগায়ন ঘটিয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলা সদর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পশ্চিমে মাঝিরঘাট-শরীয়তপুর মহাসড়কের দুই পাশে বিশাল বিশাল ফসলের মাঠ। মহাসড়কের পাশে আড়াচন্ডী মোড়, কাজির হাট ও চৌকিদার বাড়ী ঘাট সংলগ্ন এলাকায় চারটি স্থানে মৌয়ালীরা মধু সংগ্রহের জন্য বসেছে তাদের সরঞ্জাম নিয়ে। প্রায় এক মাস যাবত তারা এসেছে। সরঞ্জামের মধ্যে মৌমাছিসহ বক্স, মধু সংগ্রহের জন্য ঘুর্ণন মেশিন, মধু রাখার পাত্র। তাবু খাটিয়ে রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা তদারকি করছেন মৌ বক্সের মালিকসহ শ্রমিকরা। রাত দিন পরিশ্রম করে মৌ মাছির কামড় খেয়ে একেকজন শ্রমিকের বেতন মাত্র দুই হাজার টাকা।
জাজিরার আড়াচন্ডির মোড়ে একশত পঞ্চাশটি মৌ বক্স নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে এসেছে মিজানুর রহমান। মাত্র বিশটি মৌ বক্স দিয়ে যাত্র শুরু করে এখন তার একশত পঞ্চাশটি বক্স। মিজানুর রহমান জানায়, সপ্তাহে এক দিন মধু সংগ্রহ করে। প্রতি সপ্তাহে পনের থেকে বিশ মন মধু আহরন করা যায় ভরা মৌসুমে। মিজানুর রহমান বলেন, মধু সংগ্রহ করলেও ভাল দাম পাই না। সরকার যদি পৃষ্ঠপোষকতা দিত তবে আমরা লাভবান হতে পারতাম। প্রতি কেজি মধু বিক্রি করি দুইশত থেকে আড়াইশ টাকা। অথচ প্যাকেটজাত করে আমাদের মধু বিক্রি হয় তিনশত থেকে চারশত টাকা।
সাতক্ষীরার সুন্দরবন এলাকার সুকুমার মন্ডল তিন বছর যাবত মধু আহরনের ব্যবসা করছে। এবার এসেছে জাজিরার কাজিরহাট নামক স্থানে। দুইশটি মৌ বক্স নিয়ে বসেছে ধনিয়া খেতের পাশে। সুকুমার জানান, এর আগে সরিষা খেতের পাশে মৌ বক্স বসিয়েছিল। ধনিয়া ফুলের মধু সংগ্রহ শেষে যাবে লিচু বাগানে। লিচুর ফুল শেষ হলে ফিরে যাবে সুন্দরবনে। এভাবেই ঘুরে ঘুরে তারা সংগ্রহ করে মধু। আক্ষেপ একটাই, বাজারজাতের অভাবে ভাল দাম পায় না।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোঃ গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, মধু সংগ্রহের সাথে সাথে মৌমাছি কৃষকদের সবচেয়ে বড় যে উপকারটা করছে তাহলো ফুলে পরাগায়ন ঘটিয়ে ফসলেরও উৎপাদন বাড়িয়ে দিচ্ছে।






পাগল নিয়ে পাগলামী
অনেক দিন আগে একটা কথা শুনেছিলাম। শুদ্ধ ভাবে হয়তো বলতে পারবো না। তবে যতটুকু মনে পড়ে তা হলো এমন- ‘পাগল পাগল পাগলরে ভাই, পাগল সারা দেশটায়, পাগল ছাড়া ভালো মানুষ পাবে নাকো চেষ্টায়।’ অনেক দিন পরে হলেও আমার মনে হচ্ছে কথাটা সত্যিই ছিলো। আমরা কোন না কোন কারনে কোন না কোন বয়সে পাগল ছিলাম, পাগল আছি, পাগল হবো।
তবে কিছু পাগল আছে তাদের পাগলামির সাথে আমার এ লেখার কোন সম্পর্ক নাই। যারা মানসিক ভারসাম্যহীন তারাতো সত্যিকারের পাগল। তাদের জন্য আমার সমবেদনা আছে। মহান সৃষ্টিকর্তা তাদের মানুষ করে পৃথিবীতে পাঠিয়েও কেন মানসিক ভারসাম্যতা কেড়ে নিয়েছেন তা তিঁনি নিজেই ভালো জানেন। তবে আমার মনে হয়েছে মানুষ একেক বয়সে একেক রকম পাগল। এই পাগল মানেই মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ নয়। সম্পূর্ণ রক্ত মাংসের মানুষ হয়ে, মানসিক ভারসাম্য থাকা স্বত্বেও যে ধরনের পাগলামি করে আমি সেসব পাগলের পাগলামির নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
ছোট শিশু। কিছুই বুঝে না। কোলে-বিছানায় মল মুত্র ত্যগ করে, বলতেও পারে না। খিদে লাগলেও বলতে পারে না। তবে কিছু না বুঝলেও খিদের জ্বালা বোঝে। কিছু বলতে না পারলেও খিদের কথা বলতে পারে তার নিজস্ব প্রকাশ ভঙ্গি দিয়ে। যখনই একটা শিশুর খিদে পায় তখনই সে কেদে উঠে। শিশুটি বুঝে না কানলে মায়ও দুধ দেয় না তাই খুধা অনুভব করলেই কান্না শুরু করে। কান্না তখনই থামে যখন তার মুখে খাবার তুলে দেয়। শিশুর খাবার হলো দুধ। তাই মুখে দুধ দিলেই সে শান্ত হয়ে যায়। আসলে সে দুধের পাগল।
দুধের পাগল সন্তানটা যখন একটু বড় হয় তখন তাকে নিয়ে বাবা মায়ের কত চিন্তা। পড়াশুনা করাতে হবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাতে হবে, বড় হয়ে জজ, ব্যরিষ্টার হতে হবে। কোন পিতা-মাতা অবশ্য ছোট থাকতে কখনো ভাবে না আমার সন্তান বড় হয়ে রাজনীতিবিদ হবে! তাই কোথায় ভর্তি করা যায়, কাকে টিউটর রাখলে রেজাল্ট ভালো হবে এ নিয়ে অভিভাবকের চিন্তার শেষ নাই। অবশেষে তাকে ভর্তি করা হলো স্কুলে। এতদিন ভালোই কেটেছিলো জীবন। খাওয়া দাওয়া, খেলাধুলা, দুষ্টমি করেই সময় চলে গেছে। ক্লান্ত হয়ে পড়লেই ঘুম। এক স্বর্গীয় জীবন শিশুকাল, যদিও শিশুরা সেটা বোঝে না, বড় হওয়ার পর যেমনটা আমরা বুঝতে পারছি। শিশুটির পড়াশুনা শুরু করার পরই হলো বিপত্তি। একগাদা বইপত্রের পাহাড় পিঠে বয়ে নিয়ে স্কুলে যাওয়া, ক্লাস শেষে বাসায় এসে টিউটরের কাছে পড়া, সুযোগ পেলে একটু খেলা। এর পরে সন্ধা হলেই পিতা-মাতার হাকডাক পড়তে বসো! পড়তে বসলেই ঘুম আসে। হয়ে গেলো ঘুমের পাগল।
শিক্ষা জীবন শেষ হলো। এবার কিছু করতে হবে। প্রবল ইচ্ছা স্বত্বেও পছন্দের কোন কাজ করতে পারছে না। শিক্ষার জোর নেই, উদ্ভাবনী চিন্তা নেই সে কথা বলে না! তাই বলে বেড়ায়, মামুর জোর নেই, টাকার জোর নেই ইত্যাদি। মাথায় সবসময় চিন্তা কিছু একটা করতে হবে, কিছু একটা করতে হবে। যোগ্যতার ফাইলপত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কাজের সন্ধানে। এখন সে কাজের পাগল।
যেভাবেই হোক কাজ একটা জুটে গেছে। গদবাধা জীবণ এখন। চাকুরী হলে ঘড়ি ধরা সময়ের বাইরে যেতে পারবে না। শ্রম দিলে, নিয়োগ কর্তার কড়া নজরদারী। নির্দিষ্ট কাজটা শেষ করতেই হবে। এখন আর কাজ ভালো লাগে না। মন চায় একটু ঘুরে বেরাতে, একটু এদিক ওদিক উকি ঝুকি দিতে। কিন্তু সে সুযোগ কই? এখন সে ফাঁকির পাগল। কখন কাজে ফাঁকি দেয়া যায়, কখন মুক্ত হওয়া যায় সেই আশায় তীর্থের কাকের মত তাকিয়ে থাকে, সুযোগ খোজে। অবশেষে সে এখন কাজ ফাকির পাগল।
জীবনে বেঁচে থাকার নিয়ামক হলো খাবার। আমরা এক বেলা, দু’বেলা না খেয়ে থাকতে পারি। কখনো কখনো তিন বেলাও খাওয়া হয় না। খুব বীরত্ব দেখাই যে, না খেয়ে ছিলাম। কিন্তু এর চেয়ে বেশি অভুক্ত থাকলে জীবণ যায় যায়। একজন অভুক্ত মানুষ তখন খাবার পাগল হয়ে যায়। তাই মানুষ কখনো কখনো খাবার পাগল। খুধার জ্বালায় তখন মানুষ কি না করে? যা পায় তাই খায়। 
জীবন জীবিকার সাথে আছে টাকার সম্পর্ক। মানুষ তার প্রয়োজন মিটাতে কোন না কোন ভাবে টাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। টাকা ছাড়া জীবন চলে না। কথায় বলে, মহিলাদের বল তার স্বামী আর পুরুষের স্বামী টাকা। প্রতিটা মানুষ স্বপ্ন দেখে তার অনেক টাকা থাকবে। যার শত টাকা আছে সে ভাবে কবে হাজার টাকা হবে, যার হাজার টাকা আছে সে ভাবে কবে লাখ টাকা হবে আর যার লাখ টাকা আছে সে ভাবে কবে কোটি টাকা হবে। আর কোটি পতির কথা বলে লাভ নেই। সেও ভাবে, কবে কোটি কোটি টাকা হবে। যে করেই হোক টাকা রোজগার করতে হবে। আর এ চিন্তা থেকে মানুষ যে কোন পথ মাড়াতে পারে। বৈধ-অবৈধ সকল পথই বেছে নেয়। সাদা হোক আর কালো হোক টাকাটাই চায়। এক পর্যায়ে মানুষ টাকার পাগলও হয়ে যায়। তবে অর্থ অনর্থের মূল কথাটা মনে রাখতে হবে। কিন্তু টাকার পাগল সে কথাটা বেমালুম ভুলে যায়।
শ্রমে-ঘামে, সুপথে-কুপথে টাকাতো অনেক হলো। টাকা যে মানুষকে শান্তি দিতে পারে না সেটাও বুঝা গেল। এখন একটু হাত খুলে খরচ করতে মন চায়। দান খয়রাত দিয়ে, মানুষের পিছনে খরচ করে একটু যদি নাম ফুটানো যায়! টাকা খরচ করে অনেকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। কেউ কেউ টাকা দিয়ে লেখক ভাড়া করে লিখিয়ে নিজের নামে তা ছেপে নাম ফুটায়। আবার কেউ কেউ টাকা খরচ করে দানবীর হিসাবে পরিচিতি পেতে ব্যস্ত থাকে। আসলে টাকাওয়ালা এবার নামের পাগল হয়ে যায়। যেভাবেই হোক টাকার বিনিময়ে নাম কামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। 
নানান ধরনের মানুষ আছে আমাদের এই সমাজে। কেউ টাকার পাগল, কেউ কাজের পাগল, কেউ খাবার পাগল। এছাড়া কেউ কেউ আছে ভাবের পাগল। তার নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে ধারনা থাকুক বা না থাকুক তবুও ভাব নেয়। পকেটে ফুটো কড়ি নেই তবুও ভাব নেয় সে ধনি মানুষ। মাথায় জ্ঞান নেই, ভাব নেয় সে খুব জ্ঞানী পন্ডিত। ছ্যাবলা-বাচাল ব্যক্তি কিন্তু ভাব নিবে সে খুব ব্যক্তিত্ববান মানুষ। এগুলো আসলে ভাবের পাগল। তবে সত্যিকারের ভাবের পাগল আবার অন্য জিনিষ। যেমন কেউ লালন ভক্ত, সে লালনের ভাব শিষ্য। সে লালনের ভাবের পাগল। এধরনের ভাবের পাগলের বিষয়ে আমার শ্রদ্ধা-ভক্তি আছে। তাদের বিষয়ে আমার কোন বিদ্বেষ নাই।
জন্মের পর বাবা মা চায়নি কিন্তু জীবনের বাকে এসে ইচ্ছে হয় নেতা-নেত্রী হবো। অমনি নাম লিখিয়ে ফেলি রাজনীতির খাতায়। কেউ কেউ নৈতিক দাবী আদায়ের লক্ষে কথা বলতে বলতে রাজীতিতে নিজের অবস্থান করে নেয়, তাদের বিষয়ে আমার কথা নেই। তবে অনেকে টাকার জোরে বা বাহুর জোরে নেতা হয়, কেউবা উপরওয়ালার পা চেটে চেটে নেতা হয়ে যান। তবে যেভাবেই হন না কেন রাজীতিকদের একটাই চাহিদা থাকে তাহলো গদির চাহিদা। যে করেই হোক, পদ-পজিশন ধরতে হবে, আর বড় নেতা নেত্রীদের গদির দিকে। তাই নেতা নেত্রীরা গদির পাগল হয়ে থাকেন।
শিক্ষা জীবন হোক আর সাধারণ জীবন একটা সময় মানুষ প্রেমিক হয়। কেউ বইয়ের প্রেমিক, কেউ সিনেমার প্রেমিক, আবার ঘরের বউ টিভির প্রেমিক। প্রেমিক পুরুষ প্রেমিকার জন্য পাগল, প্রেমিকা প্রেমিক পুরুষের জন্য পাগল। কেউ প্রেমের জন্য এতটাই পাগল হয় শেষ পর্যন্ত টিকতে না পারলে বলে, একসাথে বাঁচতে যদি না পারি, চলো একসাথে মরতে তো পারবো! আবার যাদের মরার সাহসও নেই তারা চুল, দাড়ি রেখে দেবদাস হয়ে যায়, তাদের আমরা প্রেমের পাগলও বলি। অনেক ভালো ভালো বিষয় আছে যার প্রতি আসক্তির কারনে ঐ বিষয়ে পাগল বললেও সেসব পাগল মন্দ নয়।
পুত্র শুয়ে আছে পাশের রুমে। মাঝ রাতে ঠুক ঠাক শব্দে পিতা মাতার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পিতা মাতা গিয়ে দেখে পোলা খাট কুপিয়ে কাটছে। জিজ্ঞেস করে, কিরে খাট কাটিস কেন? ছেলে উত্তর দেয়, এত বড় খাট লাগে নাকি। তাই কেটে ফেলছি। পিতা মাতার বুঝতে বাকি থাকে না ছেলেকে বিয়ে করাতে হবে। যুয়ান পোলা বিয়ার পাগল! মেয়েরাও কম যায় না। তবে নারীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের বিষয়ে কিছু বললাম না।
দেখতে কুৎসিত। গায়ের রং কালো। তবুও চেষ্টার কমতি নেই। বোটানিক এ্যারোমা থেকে শুরু করে ফেয়ার এন্ড লাভলী পর্যন্ত কি না ব্যবহার করেছে? কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। সৃষ্টিকর্তা যে রুপ লাবন্য দিয়ে পাঠিয়েছেন ঘষে মেজে তার চেয়ে ভালো হওয়া কখনেই সম্ভব হয় না জেনেও চেষ্টার ত্রুটি রাখে না। তারা আসলে রুপের পাগল। বাহ্যিক রুপটাকে প্রাধান্য দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যায়। রুপের পাগল ছেলেদের থেকে মেয়েরা একটু বেশিই হয়ে থাকে। 
অনেকের অনেক রকম নেশা আছে। কারো বই পড়ার নেশা, কারো স্কুল পালানো নেশা, কারো কাজের নেশা, কারো ঘুমের নেশা, কারো রাত জাগার নেশা, কারো মদের নেশা, কারো গাজার নেশা, কারো টাকার নেশা, কারো চুরির নেশা, কারো লুচ্চামির নেশা। তবে এখন নতুন এক নেশায় আসক্ত আমরা সেটা হলো ফেসবুকের নেশা, মোবাইলের নেশা। গাজাখোরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে গাজার নেশা ধরে, তখন সে পগলের মত হয়ে যায়। নেশার জন্য চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে অবলীলায়। মদখোর মদের জন্য পাগল। সময় হলেই পাগলামী শুরু করে দেয়।
কেউ কেউ আছেন সংসারের পাগল। সবসময় সে তার সংসার নিয়ে ভাবেন। সংসার ছাড়া কিছু বোঝেন না। পরিবারের সবাইকে খুশি রাখতে তাদের প্রাণপণ চেষ্টা। তবে সংসারের পাগল ভালো পাগলই বলতে হয়। এই পাগলামিতে কারো কোন ক্ষতি হয় না। একজন সংসার পাগল মানুষ পরিবারের সবাইকে আষ্টেপিষ্টে রাখতে পারেন।
অনেকেই আছে গান পছন্দ করে। গান শুনতে দূর দূরান্তে চলে যায়। আমাদের দেশে শীতের দিনে পালা গানের আসর বসে। সারা রাত গান চলে। শীতের দিনেই এই আয়োজনটা বেশি হয়। বিভিন্ন তরিকার পীর ফকির আছে যাদের আখড়ায় বাৎসরিক উরস উপলক্ষে গানের আসর বসায়। গ্রামের মাঠে প্রচন্ড শীত সহ্য করে গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে আউশ ধানের নারার উপর বসে রাত ভর গান শোনে। কোথাও গানের আয়োজন হয়েছে শুনলেই পাগলের মত ছুটে যায় গান শুনতে। এমন পাগলকে আমরা গানের পাগলই বলেথাকি।
কেউ কেউ আছে নাচের পাগল। অবশ্য অনেকে নাচের চেয়ে নাচাতে ভালোবাসে। আবার কেউ কেউ নাচতে ভালোবাসে। নাচাতে বা নাচতে যাই করুক না কেন তাদের নাচের পাগল বলা চলে।
একটু সময় পেলেই অনেকে বেড়িয়ে পড়ে। দেশে কিংবা বিদেশে সুযোগ পেলেই ঘুরতে চলে যায়। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বার বার ঘুরতে যায়। এমন ভ্রমন পিপাসুদের ভ্রমন পাগল বলা যেতে পারে।
অনেকে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ি চালাতে পারে। বিরামহীন ভাবে গাড়ি চালানোর পরেও কোন ক্লান্তি আসে না। গাড়ির আরোহীরা ক্লান্ত হয় কিন্তু চালক পাগল হয় না। এমন পাগলও আছে নেহায়েত কম নয়।
ধর্ম নিয়ে বরাবারি না করাই ভালো। তবে অনেকেই আছে পীর মুরশিদের পাগল। এমন পাগলের সংখ্যা আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়। নানান নামে চতুর কিছু লোকজন আখড়া খুলে বসে। ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষগুলো তাদের টার্গেট। কিছু নীতিকথা শুনিয়ে এমন ভাবে মগজ ধোলাই করে যে বাবা মাকে ভাত দেয় না কিন্তু বছরের বিশেষ দিনে পীরের বাড়ি চলে যায়। বাড়িতে বিবি বাচ্চাদের বছরে একদিন ভালো ভাবে গোস্ত খাওয়াতে পারে না। কিন্তু পীর বাবার জন্য টাকা জমিয়ে গরু কিনে নিয়ে যায় গাড়ি ভরে। বাবারাও কম চতুর না! আমি এমন এক পীর বাবাকে চিনি যে কিনা ওড়সের তিন দিন আমিষ খায় না। গরু, ছাড়ল, হাস, মোড়গ রাখার জন্য বাবার আলাদা আলাদা খোয়ার আছে। সেই খোয়ারে প্রচুর পশু জমা পড়েছে। কিন্তু ওড়সের তিন দিন পশু জবাই করে না। জানতে চাইলে বাবা বলেন, তিন দিন আমরা নিরামিষ খাই। পরে চিন্তা করে দেখলাম, তিন দিন নিরামিষ খাওয়ার কারন কি। আসলে গরীব মুরিদরা পশু আনতে পারে না। তারা আনে নিজের খেতের ফসল, গাছের লাউ, কুমড়া, মুলা, গাজর, আলু, পিয়েচ। এগুলো হলো পচনশীল দ্রব্য। বেশি দিন রাখা যাবে না। তাই বুদ্ধি করে পচনশীল পন্যগুলো তিন দিনের ওড়সে চালিয়ে দেন। ওড়স মাহফিল শেষে পশুগুলো বিক্রি করে ঢাকায় চলে যায় আরাম আয়েশ করতে।
অনেকে আছে স্মৃতির পাগল। তারা পুরাতন জিনিসপত্র ফেলতে চায় না। তাদের মায়া মমতা বেশি। সব কিছুই আকড়ে ধরে রাখতে পছন্দ করে। তারা স্মৃতির পাগল। এধরনের পাগলা খারাপ না।
অনেকে আছে খেলাধুলার পাগল। আমি অবশ্য অন্য খেলার কথা বলছি না। জুয়া খেলার কথাই বলছি। জুয়া যারা খেলে তারা সর্বস্ব বাজি রেখে খেলতে পারে। শত চেষ্টায়ও জুয়ার পাগল ভালো করা যায় না। আজ পুলিশে ধরবে, ছাড়া পেয়ে কালই বসে পড়বে। সহায় সম্পদ বিক্রি করে হলেও জুয়া খেলবে এই পাগল। পয়সা না থাকলে জুয়ার কোটে আরেক জুয়ারীর পাশে বসব, পরামর্শ দিবে, তবুও বসতে হবে। এক মা তার ছেলেকে বললো বাবা জুয়া খেলা ভালো না, আজ জিতলে কাল হারতে হয়। ছেলে বললো, মা, আমি তাহলে একদিন পর পর খেলবো! তবে আসল জুয়ার পাগলরা প্রতিদিনই বসতে পছন্দ করে।
অনেকে আছে খেলাধুলার পাগল। ছাত্র জীবনে সকাল বিকাল নেই। সবসময়ই খেলার মাঠে থাকতে পছন্দ করে। খাওয়া নেই, নাওয়া নেই খেলা আর খেলা। পত্রিকা পড়লে খেলার পাতা, টিভি দেখলে খেলার চ্যানেল। গায়ে দিবে পছন্দের খেলোয়ারের জার্সি। খেলতে খেলতে অনেকেই ভালো খেলোয়ার হয়ে যায়। আবার পড়া রেখে খেলতে খেলতে ভালো খেলোয়ার না হতে পেরে জীবনের বাকে হারিয়েও যায়।
কেউ কেউ আছে বউয়ের পাগল। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা অটুট থাক এটা আমরা সবাই চাই। কিন্তু কেউ কেউ আছে বউয়ের প্রতি এতটাই আসক্ত যে পিতা-মাতা-ভাই-বোন, সংসারের সবাইকে ফেলে বউয়ের কথায় উঠে, বসে। বউ দিন বললে দিন, রাত বললে রাত। নিজের উপর নিজের কোন নিয়ন্ত্রন থাকে না। আমাদের দেশে বউ গাগলার অভাব নেই।  
কেউ চুল বড় রাখতে পছন্দ করে, কেউ দাড়ি বড় রাখতে পছন্দ করে। অনেকে ধর্মীয় কারনে চুল দাড়ি বড় রাখে তাদের বিষয়টা আলাদা। কেউ নখ বড় রাখে। এটা মেয়েদের ক্ষেত্রেই বেশি ঘটে। জুল দাড়ি না কেটে, নখ বড় রেখে অনেক ভালো মানুষ, সুস্থ্য মস্তিস্কের মানুষ পাগল পাগল ভাব নেয়।
পুরান পাগলে ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানী। কথাটা আমরা মাঝে মাঝেই বলে থাকি। সমাজে অনেক পাগল আছে যাদের আমরা পুরান পাগল হিসেবেই চিহ্নিত করি। যখন নতুন কোন বিষয়ের নতুন কোন পাগলের আবির্ভাব হয় তখনই বলে উঠি পুরান পাগল ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানী।
তবে সত্যিকারের পাগল হিসাবে আমরা যাদের চিহ্নিত করি তারা হলো মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ। কোন কোন মানুষের মুদ্রদোষ কিংবা ছোটখাট পাগলামি থাকে। কোন কোন মানুষের চরিত্রের ব্যক্তিত্বে এমন কোনো ঘাটতি বা খুঁত ছিল, যার কারণে মানুষজন তাকে সিরিয়াসলি নেয় না। তখন ‘পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়’ বলে তার কথা উড়িয়ে দেওয়া হয়। ভবে মানসিক ভারসাম্যহীন পাগলের মধ্যে নানান রকম পাগল আছে। কেউ হার্মলেস পাগল, কেউ উদ্দাম পাগল, খিঁচুনি লাগা পাগল, মারধোর করা পাগল ইত্যাদি। তবে পাগল কথাটার মানে কী, আর পাগলামিই বা কী বস্তু? ওটা কি কোনো রোগ না বিকার? পাগলামি কি ভালো হয় এমন নানা প্রশ্ন আছে আমাদের মনে। 
মেয়ে ছেলের জন্য বর-কনে খুঁজতে গিয়ে আগের আমলে লোকে খোঁজ করত, বংশে কোনো ‘সুইসাইড' বা পাগল আছে কিনা। যেন পাগলামিটা বংশগত! যদি অভিনয় কিংবা গানের গলা বংশগত না হয়, তবে পাগলামিই বা বংশগত হতে যাবে কেন? আসলে একটা মানুষ তার পারিপার্শ্বিকের আর পাঁচটা মানুষের মতো ব্যবহার না করে, আচার-আচরণ না করে, একটু উদ্ভুটে ব্যবহার, আচার-আচরণ করছে। সেই উদ্ভুটে আচার-আচরণ বুঝতে গেলে তার ব্যক্তিগত ইতিহাস, আশা-আকাঙ্খা, আশাভঙ্গ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হয়। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের বড় একটি অংশ মানসিক রোগীদের প্রতি এখনো সহানুভূতিশীল হয় না। তারা মানসিক রোগীদের ‘পাগল’ বলে অভিহিত করেন। মানসিক রোগীকে পাগল বলা সামাজিক অপরাধ হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ২০১১ সালে একটা জরিপ হয়েছিলো। তাতে দেখা গেছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৮ বছরের নীচে যাদের বয়স তাদের মধ্যে শতকরা ১৮.১ ভাগ এবং ১৮ বছরের উপরে যাদের বয়স তাদের মধ্যে ১৬.১ ভাগ কোনো না কোনোভাবে মানসিক রোগী। মোট জনসংখ্যার সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানসিক রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, সারা বিশ্বের প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে একজন মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন। তবে গুরুতর মানসিক রোগ যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে তা মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭ ভাগ। আশার কথা হলো যে কোনো মানসিক রোগীই চিকিৎসা পেলে পুরোপুরি সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। কিন্তু আমি উপরে যে পাগলের কথা বলেছি তারা সাধারণত ভালো হয় কম।
মানসিক রোগের অনেক কারন থাকতে পারে। তবে চিকিৎসকদের মতে বাংলাদেশে যারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হন, তাদের একটি অংশ আক্রান্ত হন বায়োলজিক্যাল এবং জেনেটিক কারণে। কিন্তু বড় একটি অংশ আক্রান্ত হন পারিবারিক এবং সামাজিক কারণে। নানা চাপ, দারিদ্র্য, সামাজিক এবং পারিবারিক অসঙ্গতি এর অন্যতম কারণ। বলা বাহুল্য, মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ওষুধের পাশাপাশি কাউন্সেলিং ও সঠিক সেবা যতœ জরুরি। সামাজিকভাবে মানসিক রোগীদের হেয় করে দেখা হয় এটা ঠিক নয়।
বাংলাদেশে সাড়ে তিন কোটির বেশি মানসিক রোগী আছে। দরিদ্রতা, পারিবারিক অশান্তি, কর্মসংস্থান ও ধর্মীয় শাসনের অভাবের মতো আরো বিষয়কে মনের অসুখ হওয়ার নানা কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই বিশ্বের সবাই নাকি পাগল, কেউ কম আর কেউ বেশি। পারিবারিক সচেতনতার অভাবেই মানসিক রোগের শুরু। পরিবারে মা-বাবারা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে শিশুদের সামনে ঝগড়া বিবাদ করে। অহেতুক গালাগাল, দোষারোপ, দুর্ব্যবহার করে, যা শিশুদের ছোট মনে ছোট ছোট বিষণ্যণতার জন্ম দেয়, আর শিশুরা বড় হবার সাথে সাথে এই বিষণ্যতা ধীরে ধীরে মানসিক চাপে পরিণত হয়। এই মানসিক চাপ কেউ সহ্য করতে পারে আর কেউ না পেরে হয়ে যায় রোগী।
তবে শেষ কথা হলো সুস্থ্য সাভাবিক মানুষ যখন পাগলামি করে তাদের পাগল বলা ঠিক কি বেঠিক সেটা পাঠক নির্ধারণ করবে। কিন্তু প্রকৃত ভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে কেই পাগল না বলাই ভালো। প্রকৃত পাগলের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, তাদের মানসিক সাহস দিন, ভালো আচরন করুন। তারাও সমাজের কেউ। চাইলেও আমরা তাদের ফেলে দিতে পারবো না। তারা আমাদেরই সন্তান, ভাই, বোন, পিতা, মাতা, আত্মীয়।







আপা নিয়ে চাপাচাপি
কয়েকদিন যাবৎ আপা নিয়ে বেশ চাপাচাপি চলছে দেশে। এক সাংবাদিক ভাই এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আপা সম্বোধন করে কথা বলেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তাতে আতে ঘা লেগেছে। সে উত্তেজিত হয়ে গেছে এবং বলেই ফেলেছে, আপা বললেন কেন, আপনি ইউএনওর সাথে কি বলে কথা বলতে হয় জানেন না, স্যার অথবা ম্যাডাম বলবেন।
সাংবাদিক সাহেব তাকে আপা বলে কি খুব অপরাধ করে ফেলেছেন? আপা বলাটা কি তাকে যথাযথ সম্মান দেখানো হয় নি? উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে বা কি? একজন মানুষ তার শিক্ষা জীবন শেষ করে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে প্রশাসনের ক্যাডার হয়েছেন। সহকারী কমিশনার উপাধী নিয়ে কর্ম জীবন শুরু করে আস্তে আস্তে এ দপ্তর, ও দপ্তর পার হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হয়েছেন। পরে তার কর্মের বিভিন্ন ধাপে সে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে আসীন হয়েছেন। দীর্ঘ কর্ম জীবনে সে অনেক ঘাত প্রতিঘাত দেখেছেন। কাজের ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম মেনেছেন, অনেক অনিয়মও করেছেন। বাস্তবে আসলে সে কি? সাধারণ মানুষের কাছে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী ছাড়া আর কিছুই নয়। সে হয়তো একটু বড় মাপের কর্মচারী, পিয়ন হয়তো ছোট মাপের কর্মচারী। এর বাইরে তো কিছু না। দুজনেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আর জনগণ প্রজাতন্ত্রের মালিক। প্রজাতন্ত্রের মালিক তাকে আপা বলেইতো অনেক সম্মান করে ফেলেছে, স্যার তো তারই বলা উচিত ছিলো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজের মধ্যে একটা অহংকার বোধ লালন করছেন। তিনি বেতন পান প্রজাতন্ত্রের আম জনতার দেয়া করের টাকায় সেটা তার খেয়াল ছিলো না। তিনি আপা বলায় এতটা ক্ষেপে যাবেন সেটা ভাবা যায়? তিনি তো কারো না কারো সন্তান, কারো না কারো বোন। তাকে আপা বলায় এতটা অপমানিত হওয়ার কিছু ছিলো না। তবুও সে অপমানিত বোধ করলেন। জোর করে কি সম্মান পাওয়া যায়? আপা মনে হচ্ছে জোর করে সম্মান আদায় করতে চায়। কিন্তু সম্মান ভূমি কর বা কোন ফি নয় যে আদায় করবেন। সম্মান আসে হৃদয়ের গহীন থেকে, কাজের মূল্যায়ন থেকে। এমন কি করে ফেলেছেন যে আপনাকে সম্মান করতেই হবে।  
একজন উপজেলা নির্বাহীর কাজ কি? তার কাজ তো উপজেলার জনগনের কাছ থেকে স্যার-ম্যাডাম শোনা না। উপজেলার সাধারণ জনগনের প্রশাসনিক কার্যকলাপ সমাধান করা, অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রন করা, শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সিটিজেন চার্টার অনুযায় জনগনকে সেবা দেয়া। আর কাজগুলো করবে জনগনের জন্য। সেই জনগন কেউ এসে যদি মা বলে, কেউ যদি বোন বলে, কেউ আপা বলে তাতে ক্ষতি কি? একজন লোক কতটা আপন জেনে তাকে আপা বলেছে সেই দিকটা বিবেচনায় কি নেয়া উচিত ছিলো না? কজন অফিসার সাধারণ মানুষের আপন হতে পারে! অনেক অফিসার আছেন যারা বদলি হলে মানুষ কাদে। যাওয়ার সময় মানুষের কান্নাটাই আসল প্রাপ্তি, ঘুষ-দূর্নীতির টাকাটা কোন প্রাপ্তি নয়।
একজন সাংবাদিক তাকে আপা বলেছে, এতে সে অপমানিত বোধ করেছেন। সাংবাদিকের অবস্থান কি সেটা হয়তো তার জানা নেই। অবশ্য এখন সমাজে অপসাংবাদিকতার ছড়াছড়ি চলছে। কোথাও গেলেই সেখানকার মানসিক ভাবে দুর্বল, অপরাধ প্রবন মানুষ, ঘুষখোর, সুবিধাবাদীদের কাছ থেকে তেলের টাকা চয়। হাত পেতে দেয়, চাটুকারী করে অনেক সাংবাদিক। ঘরে কন্যা আত্মহত্যা করেছে, পিতাকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখায়, নিউজ করার কথা বলে টাকা হাতায় এমন সাংবাদিকও আছে যাদের আমরা হলুদ সাংবাদিক বলি। হলুদ সাংবাদিকদের প্রতি আমার ঘৃণা আছে। তবে নির্ভীক সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আমারই নয় সবারই আছে, থাকবে। আর সেই নির্ভীক সাংবাদ কর্মীরা আছে বলেই সমাজটা টিকে আছে। তারা সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণ কাজ করে যাচ্ছে।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা স্বীকৃত চারটি স্তম্ভের ওপর দাড়িয়ে থাকে। আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম। এ জন্য রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদ মাধ্যমকে বিবেচনা করা হয় গুরুত্বের সাথে।
গণমাধ্যম শক্তিশালী হলে রাষ্ট্রযন্ত্র সঠিকভাবে পরিচালিত হতে বাধ্য হয়। সংবাদ মাধ্যম জনগণের প্রত্যাশা, অর্জন, চাহিদা, জনমত সৃষ্টি ও সমাজের ভালোমন্দ তুলে ধরে। তাইতো সাংবাদ মাধ্যমকে সমাজের দর্পন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গণমাধ্যমকে উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের প্রতিনিধিও বলা চলে। মানবজীবন ও সমাজ উন্নয়নের একমাত্র মাধ্যম হলো গণমাধ্যম। গণমাধ্যম দ্বারা সমাজের বাস্তব প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেন সাংবাদিক।
আর তৃণমূল পর্যায়ে একজন সংবাদকর্মীর চোখ থাকে সমাজের ঘটে যাওয়া ছোট থেকে বড়, ভালোমন্দ, সমস্যা-সম্ভাবনা সবকিছুতে। একজন ভালো সাংবাদিক নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে রাতদিন জীবনের সোনালী সময় ব্যয় করে গণমানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনার খোঁজে কান পেতে থাকেন।
একজন নির্ভিক সংবাদকর্মী হলেন সমাজের নির্মাতা। সে গণমানুষের চাহিদা ও স্বপ্নকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন তার লেখনির মাধ্যমে। সংবাদ কর্মীর লেখালিখি সরকারের নজরে আসে, অতঃপর সরকার সেই আশা, আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করে। একটি অবহেলিত জনপদের খরব লেখনির মাধ্যমে সভ্যতার উচ্চতায় নিতে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ভূমিকার বিকল্প নেই। নিজের স্বার্থ না দেখে গণমানুষের জন্য নিঃস্বার্থে কাজ করাই একজন নির্ভিক সংবাদকর্মীর কাজ। গণমাধ্যম সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করে। সুবিধাবঞ্চিত জনপদের নাগরিকদের অধুনিক উন্নত সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত করে। একমাত্র গণমাধ্যম পারে মানুষকে নতুন নতুন চিন্তা, ধারণা ও পদ্ধতি সম্পর্কে প্রতিনিয়ত তথ্য সরবরাহ করে উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিকা রাখে।
আজকের যুগে গণমাধ্যম শিক্ষা, যোগাযেগ, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, লাইফ স্টাইল, রেসিপি, চিকিৎসা, প্রযুক্তি, আইসিটি, চাষাবাদ, ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে নাগরিক জীবনের প্রয়োজনীয় সব চাহিদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করছে। নানা সীমাবদ্ধতা আর সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও গণমাধ্যম সমাজের উন্নয়ন নিশ্চিত করছে। সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমের কার্যকর অংশগ্রহণ ছাড়া রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা সবাই জানি-যে দেশে গণমাধ্যম স্বাধীন-শক্তিশালী সে দেশে গণতন্ত্র উন্নত এবং শক্তিশালী।
এ ছাড়াও বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির স্বর্ণযুগে গণমাধ্যমের কল্যাণে এসিড সন্ত্রাস, ইভটিজিং, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, ভেজালের বিরুদ্ধে মানুষকে প্রতিনিয়ত সচেতন করে যাচ্ছে গণমাধ্যম। আর এর মাধ্যমে দেশ ও সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সমাজ দেহে যে বোধের জায়গা তৈরি হচ্ছে এর পেছনে গণমাধ্যমের ভূমিকাই প্রধান। গণমাধ্যম সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে থাকে। গণমাধ্যম ছাড়া কোনোভাবেই সরকার ও জনগণের মধ্যে জনগণ কি ভাবছে, সরকার কি করছে তা প্রকাশ পাওয়া সম্ভব না।
গণমাধ্যম সমাজের জন্য এত কিছু করে বলেই তাদের অবস্থানটা একটু ভিন্নধর্মী। সমাজ তাদের সমীহ করে ব্যক্তি হিসাবে নয় তাদের কাজের কারনে। রাজধানীতে যারা সংবাদ কর্মী হিসাবে কাজ করে, বিশেষ করে সম্পাদক থেকে প্রতিবেদক সবাইকে সকল সেক্টরের কর্তাব্যক্তিরা সমীহ করে তাদের কাজের কারনে। আমাদের দেশের প্রধাম মন্ত্রীকে মহিলা, বিরোধী দলীয় নেত্রী মহিলা। সংবাদকর্মীরা তাদের আপা সংম্বোধন করে কথা বললে তারা তো কিছু মনে করে না। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যেখানে তাদের ম্যাডাম ম্যাডাম বলে মুখে ফেনা তোলেন সেখানে সংবাদ কর্মীরা আপা বলে কথা বলছে। তাদের যদি আতে ঘা না লাগে তাহলে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমন কি হয়ে গেছেন যে তাকে স্যার বা ম্যাডাম বলতে হবে।
একসময় আমাদের দেশ তথা গোটা ভারত বর্ষ বিট্রিশদের শাসন কয়েম ছিলো। তখন ব্রিটিশ কর্তাব্যক্তিদের সমিহ করে চলতে হতো। ইউর এক্সিল্যান্সি, ইউর এক্সিল্যান্সি বলে মুখে ফেনা তুলতে হতো। শাসনের নামে তারা আমাদের যে শোষন করেছে তা আজও জাতি ভুলে নাই, হাজার বছর পার হলেও কোন প্রজন্মই ভুলবে না। তাদের এ অঞ্চল থেকে বিতারিত করা হয়েছিলো, সম্মানের সাথে যায়নি। কথাটা নিশ্চই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যারা তাদের অজানা নয়। বর্তমানেও যদি কেউ মনে করে তিনি বড় কর্মকর্তা, তাকে ইউর এক্সিল্যান্সি, ইউর এক্সিল্যান্সি করতে হবে তাহলে ভুল করবে। বর্তমান কর্তাব্যক্তিদের তো আর বিতারিত করার প্রয়োজন হবে না, কিন্তু তারা তাদের অবস্থানে থাকতে পারবে না। তাদের জন্য বিপ্লবীদের প্রয়োজন নেই, জাগ্রত সংবাদ কর্মীরাই যথেষ্ট।
একটি গল্প বলি। একদা এক রাষ্ট্রপতি এক সম্পাদককে বলেছিলো রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের একটা স্তর তৈরী করতে। সম্পাদক মহোদয় রাষ্ট্রপতিকে প্রথম অবস্থানে রেখে বাকি পদের নাম অবস্থান অনুযায় লিখে রাষ্ট্রপতির হাতে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি তালিকায় সম্পাদকের অবস্থান দেখতে না পেয়ে সম্পাদক মহোদয়কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার অবস্থান কোথায় লিখেননি কেন? প্রশ্নের জবাবে সম্পাদক মহোদয় বলেছিলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমার অবস্থান যদি লিখতে হয় তবে লিখতে হবে অনড়াব চৎবংরফবহঃ! তাই আমি আমার অবস্থানটা নিজ হাতে লিখিনি।
আমি সিনেমার ভক্ত। সুযোগ পেলেই সিনেমা দেখি। সিনেমার ম্যাডাম নিয়ে আরেকটা গল্প মনে পড়ে গেল। হঠাৎ বৃষ্টি চলচ্চিত্রটা হলে মুক্তি না পেয়ে টেলিভিশনে মুক্তি পায়। ছবিটা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। সেখানে অমল বোসের একটা চরিত্র ছিলো। অমল বোসের মিষ্টির দোকন যার নাম ছিলো ভোলার মিষ্টান্ন ভান্ডার! দোকানে একটা টেলিফোন সেট ছিলো। আশেপাশের সকলের কল আসতো, অনেকে কল করতো। ভোলা বাবুর দোকানে মালামাল ছিলো কম। তিনি তার টেলিফোন সেটটাকে পূজো দিয়ে বেচাকেনা শুরু করতো। একদিন একজন এসে তাকে ভোলা দা বলে ডাক দেয়ায় সে বেশ অপমানিত বোধ করেছিলো। তখন ভোলা বাবু বলেছিলো, আমাকে শ্যের অথবা মেডম বলতে পারিস না! ভোলা বাবুরও ইচ্ছে হয় স্যার অথবা মেডম ডাক শোনার। কিন্তু ইচ্ছে হলেই কি এমন মধুর ডাক শোনা যায়!!






রাজীতিক ও আমাদের শিক্ষা
রাজনীতি করলেও কিছুটা পড়াশুনা যে করা উচিত সম্প্রতি হারে হারে টের পেলাম এবং গভীর ভাবে অনুভব করলাম! আমাদের শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির এক শ্রদ্ধাভাজন বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী ইন্তেকাল করলে তাঁর জানাজায় অংশ নিয়ে দাড়িয়েছি। এক নেতা মাইকে বক্তৃতায় ব্যস্ত। কোন এলাকা থেকে কে এসে উপস্থিত হলো, কোন নেতা কতটা সংগ্রামী। কোন নেতার বিশেষত্ব কি, রাজনৈতিক ভঙ্গিমায় জোরালো ও সংগ্রামী কন্ঠে প্রচার করে যাচ্ছে। এর ফাকে ফাকে বার বার বলে যাচ্ছে, শরীয়তপুর বার কাউন্সিলের বার বার বিনা পতিতায় নির্বাচিত সভাপতি! কথাটা বলার তার কাছাকাছি উপস্থিত অনেক সংগ্রামী নেতারাও দাড়িয়ে ছিলো কিন্তু কোন সংশোধনী দিচ্ছেন না। অনেকের মনেই প্রশ্নের জন্ম হলো, বিনা পতিতায় কথাটার মানে কি আমি নিজেও বার বার চেষ্টা করে ধরতে পারলাম না! আর শরীয়তপর বার কাউন্সিলই বা কবে গঠন হলো!! যারা কিছুটা জানে তারা সবাই বোঝে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বার বার নির্বাচিত হওয়া যায়, কথাটা তাই হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু তাকে এটা কে বোঝাবে? আর জেলায় জেলায় বার এসোসিয়েশন আছে। জেলা সদর ছাড়াও উপজেলা বা এর বাইরে চৌকি বার বলে একটা কথা আছে, এগুলো সবই বার এসোসিয়েশন বা সমিতি।
বার কাউন্সিল বলতে বুঝি ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ৪৬ নং আদেশ)-এর অধীনে গঠিত একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন যা ঞযব ইধহমষধফবংয খবমধষ চৎধপঃরঃরড়হবৎং ধহফ ইধৎ ঈড়ঁহপরষ ঙৎফবৎ ধহফ জঁষবং ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৩(১), অনুচ্ছেদ ৩(২) এবং অনুচ্ছেদ ১০ মতে আইনজীবিদের স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এই আইনের অধীন সকল কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে। এক কথায় বার কাউন্সিলকে আইনজীবি সম্প্রদাযের অভিভাবক বলা যায়। এটা সমগ্র বাংলাদেশ আইনজীবিদের পেশাগত কার্যক্রমের একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আর বার এসোসিয়েশন বলতে বিভিন্ন জায়গায় আইনজীবীগণ পেশাগত কাজের সুবিধার্থে একত্রিত হয়ে যে সমিতি গঠন করে এবং এর সদস্য অর্ন্তভূক্ত হয়ে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে সেটাই বার এসোসিয়েশন বা আইনজীবী সমিতি।
এমনই আরেক নেতার জানাজা নামাজের অংশ নিতে গিয়েছেন এক বন্ধু। সেখানেও মাইকে এক নেতা বার বার ঘোষণা দিচ্ছে ‘আর মাত্র অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আপনারা এদিক সেদিক ঘোরাফিরা না করে মাঠে চলে আসুন, আমাদের জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ করুন।
এমন আরেক নেতা দেখেছি যে কিনা সারাজীবনেও একটা শব্দকে সঠিক ভাবে বলতে পারে নাই। শব্দটা হলো সাংবাদিক। সে সবসময় সাম্বাদিক ভাই বলেই সম্বোধন করেন। সেই নেতার স্কুল জীবনের শিক্ষক তাকে অনেক বার বুঝিয়েছে যে ওটা সাম্বাদিক না হবে সাংবাদিক। কিন্তু কে শোনে কার কথা? অনেকে পড়ে না, ক ল আকারে লা ক্যালা। অনেকটা সেই কিসিমের ছাত্র!
পড়াশুনা নিয়ে একটা গল্প বলে শেষ করছি। এক পীর এসেছে এলাকায়। তাহার মুরিদগণ এসেছে পীর বাবার সাথে দেখা করতে। বাবার সাথে দেখা করবে আর তাকে নজরানা, সালামী দেবে না তা তো হয় না। কয়েকজনের হাত হতে পীর বাবা সালামী নেয়ার পর ক্লান্ত হয়ে গেলেন। অতঃপর সে একটা পথ বাতলে দিলেন। পীরের চ্যালাকে বললেলন, তুমি বলো, সবাই টাকার গায়ে যার যার নাম লিখে এই বাক্সে রাখুন। আমি পরে তাদের নাম ঘোষণা করবো।
যথারীতি চ্যালা মাইকে ঘোষণা দিলো, আপনারা ভির করবেন না, টাকার গায়ে নাম লিখে এখানে জমা দিন। পরে নাম ঘোষণা করা হবে।
এর কিছুক্ষণ পর শুরু হলো নাম বলা। একটা করে টাকা তুলছে আর নাম ঘোষণা করছে,
-এই যে মোঃ করিম, বাবাকে সরমান করে এক হাজার টাকার নোট দিয়েছে, এই যে আবুল বাবাকে পাঁচশত টাকা দিয়ে সরমান করেছে। এই যে দেখেন, মরাবক বাবাকে পাঁচশত টাকা দিয়ে সরমান করেছেন, দেখছেন মরাবকও বাবাকে কতটা সম্মান করেন!
পীর বাবা আর টিকতে না পেরে চ্যালার কান টেনে বললেন,
-কইছিলাম ভালো ভাবে পড়াশোনাটা কর, তাতো শুনলি না! ওটা মরাবক না, মোবারক! বল মোবারক টাকা দিছে।
আমাদের দেশে এখন এমন মরাবক পড়ার নেতাই বেশি। মাইক পাইলে আর ছাড়তে চায় না। যা মন চায় বলে যায়। লজ্জা শরমের বালাই নেই, শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। তাই ভয়ও নেই।





দাদুর নির্বাচনী গল্প
দাদুর কাছে নাতি নাতনীদের আবদার খুব একটা বেশি নয়। আগে গ্রাম গঞ্জে দুই মাথা বাকা অনেকটা ইংরেজী এস অক্ষরের মত দেখতে বিস্কুট পাওয়া যেত যার নাম ছিলো কুকিজ। তখনকার দিনে ছোট দোকানগুলোতে বয়ামে ভরে চানাচুর, নাবিস্কোর লজেন্স, সুপার বিস্কুট, বাতাশা বিক্রি করতো। নাতি নাতনীদের আবদারের মধ্যে দাদুর কাছে ঐ কুকিজ, চানাচুর বা লজেন্সই ছিলো। আর ছিলো গল্প যাকে গ্রামে কিচ্ছা বলে তা শোনার আবদার।
একদিন দাদুকে নাতি নাতনীরা জোর ধরা ধরেছে, দাদু কিচ্ছা শুনবো, কিচ্ছা বলো।
দাদুও নাতি নাতনীদের প্রচন্ড ভালোবাসে। ওদের আবদার ফেলার ইচ্ছা তার কখনোই মনে আসেনি। আজও ফেলবে না চিন্তা করে শুরু করলেন-
-তবে শোন, সে অনেক কাল আগের কথা। তোমাদের বাবারা ছিলো তখন অনেক ছোট। তখন আমাদের হাটে একটা সমিতি ছিলো।
ছোটদের সৎগুন আর বদগুন যাই বলিনা কেন একটা গুন আছে সেটা হলো প্রশ্ন করার গুন। অমনি প্রশ্ন শুরু হয়ে গেলো। একজন বললো-
-দাদু কোন হাটে?
দাদুরও ওদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বেশ ভালোই লাগে। এতে একটা সুবিধা হলো কিচ্ছাটা দীর্ঘায়িত করা যায় এবং বেশি সময় ওদের ব্যাস্ত রাখা যায়।
ওদের প্রশ্নের উত্তরে দাদু তখন বললো-
-আমাদের গ্রামের পাশে একটা খাল আছে না?
অমনি প্রশ্ন শুরু হলো-
-কোন খাল দাদু?
-আরে ঐযে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ডান দিকে যে সরু নদীটা আছে না? ঐ রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলে একটা ছোট্ট সাকো পার হই না আমরা? সরু নদী থেকে একটা চিকন খাল বাম দিকে বেরিয়ে গেছে যার উপর সাকোটা। ঐ সরু খাল যাকে দামরার খাল বলে। ঐ খাল পার হয়ে কিছুদূর গেলেইতো হাট। কতবার নিয়ে গেছি তোদের মনে নাই?
নাতি নাতনীদের উত্তর-
-হ্যা দাদু মনে পরেছে, মনে পরেছে। ঐ হাটে হারান দাদুর দোকান থেকে খাজুর আর রসগোল্লা কিনে দাও আমাদের ঐ হাট না?
দাদু বললো,
-হ্যা, হ্যা, ঐ হাটই। ঐ হাটে একটা সমিতি আছে। সমিতির নাম।
-নাম বলা লাগবে না দাদু, পরে কি তা বলো।
-পরে ঐ সমিতি চালাতে হলে কমিটি গঠন করতে হয়। আর কমিটি গঠন করতে হলে সমিতির সদস্যদের ভোটে কমিটি নির্বাচিত হয়। সমিতির নির্বাচন হয় তিন বছর পর পর। তো, ঐ সমিতির একজন সদস্য আছে যে কিনা প্রতি নির্বাচনেই সম্পাদক পদে নির্বাচন করতো আর ফেল করতো।
-তার নাম কি দাদু?
-বলছি, দাড়া। তো একবার হলো কি, সবাই দয়াপরবস হয়ে তাকে সাপোর্ট দিলো। কিন্তু বাদ সাধলো অন্য এক প্রার্থী তার মনোনয়ন উঠাইলো না। মনোনয়ন বোঝো তো? মনোনয়ন হলো নির্বাচনে দাড়াতে হলে একটা ফরম আছে তা ফিলাপ করে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা লোক যাদের নির্বাচন কমিশনার বলে, তাদের কাছে জমা দিতে হয়। যদি কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকে তাহলে ঐ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়ে যায় আর যদি মনোনয়ন না উঠায় তাহলে ঐ পদে ভোট গ্রহণ ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
-দাদু, মনোনয়ন না উঠালে সমস্যা কি? ভোট হলেই বা সমস্যা কি? আর বার বার নির্বাচনে দাড়ানোর লোকটার নাম বললা নাতো দাদু?
-সমস্যা আছে, সবাই যাকে দাড় করিয়েছে সেই প্রার্থী ছিলো মাথাফুলা। তার নাম ছিলো জহরি লাল কুন্ডু। মাথাফুলা বোঝো? একটু আবাল কিসিমের আরকি। আমাদের গাবুর মোকলেছ আছে না? ওর মত মাথাফুলা। সবাই তাকে মাথাফুলা জহরি বলে ডাকতো। 
-পরে কি হলো দাদু?
-আর কি হবে? গোপনে ভোটাভুটি হলে জহরি লাল কুন্ডু যে পাস করবে না তা সবাই বুঝে গেছে। জহরি লাল কুন্ডুর হাটুর বয়সী প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করেও চিন্তায় সবার মাথার ঘাম পায়ে পড়া শুরু হয়ে গেছে। তাই উপায়ন্ত না দেখে গায়ের জোরে সেই মাথাফুলারে প্রকাশ্যে ভোট দিয়া পাস করান লাগছে।
-তার পর দাদু।
-তার পর আবার একবার নির্বাচনে সেই মাথাফুলায় দাড়াইছে।
-সেইবারওকি প্রকাশ্যে ভোট দেওয়া লাগছে দাদু?
-না, সেই বার প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ছিলো বেশ জনপ্রিয় প্রার্থী। সারা মাস জহরি লাল ভোটারদের সাথে কথা বলে আর গুনে দেখে সে বিশাল ব্যবধানে পাস করবে। কিন্তু ভোটের দিন ভোট গণনার পর দেখা গেলো সেই প্রার্থীর সাথে মাথাফুলায় হেরে গেছে। পরের বারও যখন ভোট এলো আবার দাড়ালো। আবারও মাথাফুলা জহরি ফেল করলো!
-বলো কি দাদু? বার বার ফেল করার পর দাড়ায় কেন, লজ্জা নাই?
-লজ্জা? লজ্জা বলতে একটা জিনিস আছে সেটা জহরি জানেই না। আবার নিয়ম মতো নির্বাচন এলো। সেই নির্বাচনেও দাড়িয়ে গেলো। নির্বাচন এলেই জহরির পায়ের নিচে খোটায় তাই দাড়িয়ে যায় নির্বাচনে।
-সেবার কি পাস করেছে? প্রকাশ্যে ভোট নেয়া লাগছে দাদু? 
-আরে না, প্রত্যেক বার কি এক পদ্ধতিতে আকাম করা যায়? এই বার ভিন্ন পদ্ধতি খাটান লাগছে।
-ভিন্ন পদ্ধতিটা কি দাদু?
-এই বার নির্বাচনের কাজে যারা দায়িত্বে ছিলো তাদেরকে হাত করে ব্যালট পেপার আগেই কয়েকটা সরাইয়া রাখছে। পরে সেগুলায় সিল মাইরা বাক্সে ভরছে। সেইবার ছল চাতুরি করে জয়লাভ করে নির্বাচন কমিশনারদের দিয়ে তরিঘরি করে ব্যালট পুরিয়ে ফেলছে।
-তারপর দাদু?
-তারপর আবার নির্বাচন আইছে। সেইবারও মাথাফুলা জহরি লাল কুন্ডু দাড়াইছে। আগের বারের চালাকি এইবার আর করতে না পাইরা ফেল করছে।
-প্রতি বারই নির্বাচনে দাড়ায় আর ফেল করে, মাত্র দুইবার পাস করলো তাও ছলচাতুরি করে, তাহলে দাড়ায় কেন নির্বাচনে? তার পরে কি হলো দাদু?
-এইবার ফেল কইরা মনে হয় একটু সরম লজ্জা জালাইছে। পরের বার নির্বাচনে আর দাড়াইতে গিয়া গিড়ায় বল পায়নাই। আগের বার যার কাছে হারছে এইবারের নির্বাচনে তারে নিয়া মাঠে নামছে।
-বলো কি দাদু? আগের নির্বাচনে যার কাছে হারলো পরের নির্বাচনে তাকে নিয়েই মাঠে নামলো। কিভাবে সম্ভব এটা?
-সম্ভব রে দাদুরা সম্ভব। আগের বার প্রতারনা করে জিতছে। পরের বার প্রতারনা করতে ব্যার্থ হয়ে ফেল করায় চিন্তা করছে, যার কাছে হারলাম সে মনে হয় অনেক জনপ্রিয়। জনপ্রিয় লোকটা নিশ্চই এবারও জিতবে। তাই জিতা পার্টির সাথে থেকে কিছু টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার ধান্দা আরকি! মাথাফুলা জহরি লাল কুন্ডুর কিছু বদ অভ্যাস ছিলো।
-কি বদ অভ্যাস দাদু?
-একটু পাগলা পানির অভ্যাস ছিলো। বাদ দে, ওটা তোরা বুঝবি না।
-তার পর দাদু?
-তারপর আর কি? নির্বাচন শুরু হলো। সহজ সরল বেটার কাছ থেকে টাকা নেয় আর পাগলা পানি খাইয়া উল্টা পাল্টা কথা বলে। রাস্তা দিয়া হাটে আর সরল মানুষটাকে বুঝায়। সাহস দিয়ে বলে-‘বা....কাটতে কুড়াল লাগে নাকি।’ আবার কতক্ষণ বলে, ‘রাখ বেটা, কুড়াল কাটতে বা...... লাগে নাকি?’
-দাদু বা... কি?
-ওটা তোদের না জানলেও চলবে। ওটুকু সেন্সর করে দিলাম। বড় হলে একদিন বুঝবি কথাটার মানে কি? তো একদিন বাজারে ভোটারদের দাওয়াত দিয়ে নির্বাচনী মিটিং করলো। মিটিংয়ে পাগলা পানি খেয়ে জহরি লাল কুন্ডু বক্তৃতা দিতে দাড়িয়ে বলতে শুরু করলো, ‘আপনারা জানেন, পাগলা পানি ভালো না। অথচ খোজ নিলে দেখবেন আমাদের প্রতিপক্ষের লোকজন পাগলা পানি খাচ্ছে। ওরা ভালো না। (মনে মনে বলে, আমি এত অপকৌশল করি তার পরেও এবারের প্রার্থীর সাথে জিততে পারি না। দুইবার জিতছি তাও নানান অপকৌশল করে, পীর বাবার হাত পা ধরে।) ভাইসব, এবার আমরা একটা জবাব দিয়ে দেবো। কি বলেন আপনারা? সবাই ভদ্রতার খাতিরে তার সাথে সায় দিলো। কিন্তু মনে মনে ভোটের ব্যাপারে দিবে কচু!
-তার পর কি হলো দাদু?
-সেবার জহরি লাল কুন্ডুর সমর্থকের বিরুদ্ধে যে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছিলো সে ভোটারদের সবসময় খেয়াল রাখতো। সারা বছর ভোটারদের সুখ দুঃখের খোজ খবর রাখায় তার প্রতি ভোটারদের ভালোবাসাটাও ছিলো গভীর। আর সেই প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ভোটের রাজনীতি করে সারা বছর। ভোটারদের সুখ-দুঃখে ছুটে যেত যখন তখন। ভোটারদের আপন ভাইয়ের মত ¯েœহ করতো, ভালোবাসতো। তা দেখে জহরি লাল কুন্ডুদের গা জ্বলতো। আর মাথাফুলা জহরি লাল কুন্ডু ও তার লোকজন ভোটারদের খোজখবর নিতো শুধু নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে। ফলে তাকে কেউ মন থেকে ভোট দিতো না। ভোট নিতো জোর করে প্রকাশ্যে, অপকৌশলে।
-তারপর দাদু?
-আগের বার যার কাছে হারলো এবার তাকে নিয়ে নানা অপকৌশল করেও আর জিততে পারলো না। ব্যালট পেপার নিয়ে অপকৌশল করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়, পীর বাবার দয়াও পায়নি। পীর বাবা বুঝে গেছে, মাথাফুলা আবালের জন্য নিজের ইমেজটাতো আর নষ্ট করা যায় না! আমাকে সবাই ভালোবাসে, মাথাফুলার জন্য কেন আমি সকলের কাছে ঘৃনার পাত্র হবো। তাই পীর বাবা এবার কোন সাপোর্ট না দিলো না। ফলে বিশাল ব্যবধানে হেরে গেলো।
-বলো কি দাদু?
-হ্যারে, বিশাল ব্যবধানে জহরি লালের দল হেরে গেলো। হেরেই ক্ষ্যান্ত দিলো না। এবার শুরু করলো আরেক ভন্ডামি।
-নির্বাচনে হেরেছে। এর পর আর কোন ভন্ডামি বাকি রাখলো, লজ্জা সরম কি ধুইয়া খাইছে দাদু?
-বাকি ছিলোরে, বাকি ছিলো। নির্বাচনের পর হেরে গেলে বিজয়ী কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হয়। কিন্তু এবার দায়িত্ব দিচ্ছে না। হারার পরে নতুন ধুয়া তুলছে, নির্বাচন ঠিক মতো হয় নাই, মামলা করুম, দায়িত্ব দিমু না, সংবিধান ঠিক করতে হবে, টাকা খাইয়া ভোটাররা ভোট দিছে, আমাদের যারা ভোট দিছে তারা ভালো, ওদের যারা ভোট দিছে তারা হাজী হলেও পাজি, সব বিক্রি হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। জহরি লাল কুন্ডু নিজে যে টাকা খাইছে তা ভুলেই গেছে!
-বলো কি দাদু? ঝামেলা থাকলে নির্বাচনে গেলো কেন? মনোনয়ন দেয়ার আগে ঝামেলা আছে সেটা কি বুঝতে পারে নাই? আর হারার পরেই বা এমন আবোল তাবোল বকছে কেন?
-কারন আছে রে দাদুরা। তবে শোন। জহরি লাল কুন্ডু যাকে নিয়ে নির্বাচনে নেমেছে তার কিছুটা স্বচ্ছতা ছিলো, জনপ্রিয়তাও ছিলো। আগের বার যেই লোকটা তার নির্বাচন করেছে তার সাথে বেইমানী করে আগের বারের প্রতিদ্বন্দির সাথে আতাত করে নির্বাচন করেছে। আর জহরি লাল ওর সাথে যোগ দিয়েছে কেন জানিস? সেই লোকটাকে ভোটারদের কাছে স্থায়ী ভাবে খারাপ বানাতে পারলে জহরি লাল কুন্ডুর লাভ হয়। সরল লোকটার পাছায় সিরা ভরাইয়া দিলো। সিরা ভরান নিয়া আজ আর কোন প্রশ্ন করবি না, আরেক দিন সিরা ভরানির কিচ্ছা বলবো। জহরি লাল কুন্ডু ভবিষ্যতে যাতে চান্স নিতে পারে সেই অপকৌশল করে লোকটাকে পচানোর ধান্ধা শুরু করলো। আর ক্ষমতার লোভ হয়তো পেয়ে বসেছিলো ভালো লোকটাকে। তাই সেও ঐ উপদেষ্টাদের কথায় নাচতে শুরু করলো।
-উপদেষ্টাদের মানে? জহরি লাল কুন্ডু ছাড়াও কি আরো উপদেষ্টা ছিলো সরল লোকটার সাথে?
-হ্যা, ছিলো, এমন অনেক উপদেষ্টা ছিলো যারা নিজের দোকানে বসে গল্প করে না কারন আলো জ্বালালে তেল খরচ হবে, চা-পান খাওয়ানো লাগবে সেই খরচের ভয়ে। অন্যের দোকানে বসে গল্প চাটামি করতো। কারো মুখে কোনদিন চা-পান না দিলেও নির্বাচন এলে একটা পুরান কট কাপড়ের প্যান্ট পড়ে মুখে একটা পান পুরে দাত দিয়ে শুপারি কাটতে কাটতে ভোট চাইতে, পরে যখন ভোটাররা তার ভন্ডামি বুঝে ফেলেছে তখন সেই উপদেষ্টা আস্তের উপর সরে পড়েছে! এমন চাটা, কৃপন অনেক আছে ঐ হাটে।
-আরও আছে এমন উপদেষ্টা দাদু?
-হ্যা, আছে তো। এক উপদেষ্টা আছে এমন কৃপন যে আশি টাকা হাতে এলে বিশ টাকা ধার করে একশ টাকা বানিয়ে রেখে দিতো। ধার্মিক ভাব নিয়ে চলতো কিন্তু কুটনার হদ্দ ছিলো। আরেক উপদেষ্টা গজিয়েছে তাকে হালিম চাটা বলেই সবাই ডাকতো। জাতীয় ছাত্রলীগ বললেই সবাই চিনে। কথা শুরু করলেই গল্প শুরু করে দিতে সে জাতীয় ছাত্রলীগ করা নেতা, অমুক করেছে, তমুক করেছে। গ্রামের থেকে উঠে আসা ফহিন্নির পুত, ভাব ধরেছে জমিদারের। সব বাইনচোদের দল। বড় হলে ওদের সম্পর্কে জানতে পারবি, এখন কিচ্ছা শোন।
-তার পর দাদু?
-তারপর আর কি? ভালো লোকটাকে গুয়ের মত পচিয়ে ছেড়ে দিলো। নিয়ম অনুসারে ক্ষমতা তো আর না দিয়ে পারলো না। কয়েকদিন ঘুরিয়ে পেচিয়ে পরে ক্ষমতা দিতে বাধ্য হলো।
-তাহলে ঐ খারাপ জহরি লাল কুন্ডুদের কথা লোকটা শুনলো কেন দাদু?
-শোন, ভালো মানুষও মাঝে মাঝে শয়তানের ফাদে পা দেয়। লোভে পড়ে ভালো মানুষটা হয়তো শয়তানগুলোর ফাদে পা দিয়েছে। গল্পের ভিতরেই আরেকটা গল্প বলি শোন। এই গল্পে একটা শিক্ষনীয় বিষয় আছে। ধরতে পারলে তোদের কুকিজ কিনে খাওয়াবো, সাথে লজেন্সও দেব।
-বল দাদু, দেখি ধরতে পারি কি না?
-এক দেশে জহরি লাল কুন্ডুর মতো এক মাতাল ছিলো। সেই মাতাল পাগলা পানি একটু বেশিই পছন্দ করতো। একদিন পাগলা পানি খেতে খেতে একটু বেশিই মাতাল হয়ে পড়েছে। অন্ধকার রাতে, টলতে টলতে বাড়ি যাচ্ছিলো। হাতে ছিলো একটা বোতল। বাড়িতে গিয়ে আবারও খাওয়ার জন্য বোতলে করে কিছুটা পাগলা পানি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলো। হঠাৎ হাত থেকে পাগলা পানির বোতল পড়ে গেলো। এখন অন্ধকারের মধ্যে বোতলতো খুজে পাচ্ছে না। তখন নিরুপায় হয়ে মা কালির সাহাহ্য চাইলো। বললো, মা কালি, তুমি যদি আমার বোতলটা খুজে দাও তবে তোমার নামে জোড়া পাঠা বলি দেব। মা কালি জহরি লাল কুন্ডুর কথায় প্রসন্ন হলেন। খুশি হয়ে মা কালি বোতলটা পায়ের একদম কাছে এনে বুড়ো আঙ্গুলে ছোয়ালেন। এবার মাতাল হাত দিয়ে বোতলটা তুললো। পরের দিন জোড়া পাঠা বলি না দেয়ায় মা কালি স্বপ্নে আবির্ভূত হলো। এসে বললো, কিরে জোড়া পাঠা দিবি বললি কই? তখন ঘুম থেকে উঠে জহরি বললো, মা হাতের অবস্থা ভালো না, দুইটা পাঠা দিতে পারবো না, যাও, একটা পাঠা দিব। পরের দিন সেই একটা পাঠা দিবে বলে তাও দিলো না। মা কালি এসে আবার বললো, কিরে একটা দিবি বললি দিলি নাতো। এবার বললো, মা, সত্যিই হাতের অবস্থা ভালো না, পাঠার যা দাম দিতে পারবো না, যাও, একটা মোড়গ দিব। পরের দিন সেই মোড়গও দিলো না জহরি। মা কালি এসে বললো, কিরে মোড়গ কই? এবার জহরি বললো, মা হাতের অবস্থা খুবই খারাপ, মোড়গ কেনার পয়সাও নেই, পাগলা পানি খাওয়ার পয়সা জোটানোই দায় হয়ে পড়েছে মোড়গ কিনবো কেমনে? যাও, একটা চড়–ই পাখি দিব। পরের দিন চড়–ই পাখি না দেয়ায় মা কালি এসে বললো, কিরে আর কত ঘুরাবি, কথা তো রাখলি না, চড়–ই পাখি কই? এবার বললো, মা বিশ্বাস করো, আমার হাতের অবস্থাতো ফিরছেই না, চড়–ই পাখি ধরতেও পারছি না, যাও, একটা ফরিং বলি দিবো, এবার কথার আর নরচর হবে না। পরের দিন সেই ফরিংও দিলো না। এবার মা কালি এসে বললো, কিরে ফরিং কই? তখন জহরি বললো, মা তুমি কি পাগল হইছো? তুমি একটা মাতালের কথাও বিশ্বাস করো? আর কত ফরিং ঘাসের আগায় উড়াউড়ি করে, একটা ধইরা খাইলেই পারো, এইটার জন্য আবার আসা লাগে?
-এবার বল, কি শিখলি?
দাদু, আসলে মাতালের কথা বিশ্বাস করতে নাই!
-একদম ঠিক কথা। ধরতে পেরেছিস। আমি কিন্তু আমার কথা রাখবো। আর যা বলেছি তাই হবে, কুকিজ আর লজেন্স সবই পাবি। বোনাস হিসাবে পাবি হাটের হারান দা’র দোকান থেকে খাজুর আর রসগোল্লা।

1 comment:

  1. এটি সাধারণ জনগণকে অবহিত করতে হবে যে হোসম্যাট হাসপাতালের জরুরি অবিলম্বে কিডনি দাতা দরকার, 820,000 মার্কিন ডলারে কিডনি বিক্রি করতে রাজি। আগ্রহী দাতাদের আমাদের ইমেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা উচিত: DR.HOSMATHOSPITAL@GMAIL.COM বা আমাদের সদর দফতরে 45 ম্যাগরাথ রোড, রিচমন্ড রোড, ব্যাঙ্গালোর, ভারত। বা +91 9873591114।
    শুভকামনা, ডাঃ জোসেফ

    ReplyDelete