ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Sunday, November 4, 2018

শিক্ষার চেয়েও মাহফিল গুরুত্বপূর্ণ!

২০১৮ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা গত ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে। এবছর দুই পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৩ জন। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬০১ জন ছাত্রী, ১২ লাখ ২৩ হাজার ৭৩২ জন ছাত্র। সারা দেশে মোট ২৯ হাজার ৬৭৭টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই দুই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এটা হলো পরিসংখ্যান, আর সবকিছুতো পরিসংখ্যানে মাপলে হবে না! এত বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পূর্ব ঘোষিত পরীক্ষা ‘অনিবার্য’ কারনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বন্ধ ঘোষণা করে নতুন সময় সূচী নির্ধারণ করে দিয়েছে। 

‘অনিবার্য’ শব্দের জুতসই অর্থ খুজলাম। যা বেরিয়ে এলো তা হলো “আবশ্যক, জরুরি, প্রয়োজনীয়, অত্যাবশ্যক, অধিকতর আবশ্যক, অবশ্যম্ভাবী, আবশ্যকীয়, দরকারী, অপরিহার্য, বাধ্যতামূলক, যথাকর্তব্য, অনিবার্য, পূর্বকারণ-নিয়ন্ত্রিত, অবশ্যকরণীয়”। কিন্তু প্রকৃত কারনটা কি সেটার অর্থ ডিকশনারীতে পেলাম না। কিন্তু বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় ডিকশনারী যে আর্ন্তজাল। একটু ঘাটলেই বেরিয়ে আসে তাজা-পচা কোটি তথ্য। সেখান থেকেই জানলাম আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি শিক্ষার্থীদের শোকরানা মাহফিল থাকায় পরীক্ষা পিছিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিডিয়াকে জানান, রোববার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের শোকরানা মাহফিল থাকায় পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতগুলো শিক্ষার্থীর পরীক্ষা পিছিয়ে একটা শুকরানা আদায় বা সংবর্ধনা কতটা জরুরী ছিলো সেই উত্তর কেউ দিলো না। আর শিক্ষার্থীদের জন্য এতটা চিন্তা মাথায় থাকলে পরীক্ষা না পিছিয়ে কি শুকরানা মাহফিল পেছানো যেতো না? শুকরানা মাহফিল কয়েকদিন পিছিয়ে দিলে বা শুকরানাটা শুক্রবার বন্ধের দিন দিলে কি এমন ক্ষতি হতো, তা মাথায় আসে না। 

আমাদের দেশে যারা সবচেয়ে বেশি মেধাবী তারাই ভর্তি হয় প্রকৌশল বিভাগে। এর পর যারা আছে তারা ভর্তি হয় চিকিৎসা বিভাগে। অবশ্য পছন্দ ভেদে অনেকে প্রকৌশলে না গিয়ে চিকিৎসায় বা চিকিৎসায় না গিয়ে প্রকৌশলেও যায়। মূলকথা হলো সবচেয়ে ভালো যারা তারাই যায় প্রকৌশল ও চিকিৎসায়। ওখানে যারা চান্স পায় না তারা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিষয়ে। এর চেয়ে নিচের স্কেলে যারা তারা সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করে। এর পরের ধাপ ছিটকে পড়ে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায় কর্মসংস্থান খুজে নেয়। আর যাদের কোন কোয়ালিটিই নেই তারাই সাধারণত শুরুর দিক থেকেই পড়াশুনা বাদ দিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেয় (অবশ্য সবাই না)। এর পরের কাহিনীটা এমন, প্রকৌশল থেকে পাস করে বিসিএস দিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্ব নিলে শিক্ষার আলোহীন ঐ রাজনীতি করা পোলাপান দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী প্রকৌশলীকে মারধর করতে একটুও চিন্তা ভাবনা করে না। একই ঘটনা ঘটে চিকিৎসকের সাথেও। একটু যদি দেরি হয় নেতার বা তার কোন স্বজনের চিকিৎসা দিতে বা চিকিৎসা পছন্দ না হলে মেধাবী চিকিৎসককে মারধর করতে মূহুর্ত সময়ও নেয় না। কারন, সে রাজনীতি করে, সে রাজার সমান। সে নেতা, বড় নেতার চামচা সে। রাজ্যটাই তারা চালায়, তারা রাজা, বাকী সব তাদের প্রজা, গোলাম। মেধাবীদের কাজ ঐ রাজাদের সেবা করা মাত্র। 

তাই শিক্ষার চেয়ে রাজনীতিটাই এখন মনোযোগ দিয়ে করা উচিত। তা না হলে প্রায় ২৭ লাখ শিক্ষার্থীকে বাসায় বসিয়ে রেখে কয়েক হাজার মানুষের শুকরানার জন্য পরীক্ষা স্থগিত করতো না সরকার। একটা শুকরানা মাহফিল ও সংবর্ধনার এতটাই গুরুত্ব যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাও সেখানে গৌন বলে বিবেচিত হচ্ছে। আর হবেইনা বা কেন? তাদের শুকরিয়া আদায় ও মাহফিলের দোয়ায় কারো বৈতরনী পার হয়ে যেতে পারে! বেহেস্তের লোভ কার নেই? তাদের দোয়ায় জুটে যেতে পারে কাঙ্খিত বেহেস্ত, নিভে যেতে পারে দোযখের আগুন! তারাইতো আমাদের ভবিষ্যতে ফতোয়া দিবে! তারাইতো ফতোয়া দিয়ে নৈতিক-অনৈতিক বিচার করে দিবে! এমন একটি মাহফিলের জন্য লক্ষ কেন, কোটি শিক্ষার্থীর পরীক্ষা পিছালে এমন কি ক্ষতি হবে! তাই শিক্ষার চেয়ে রাজনীতি বড়, শিক্ষার চেয়ে মাহফিল বড়, আসেন আমরা শুকরিয়া আদায় করি!

No comments:

Post a Comment