ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Wednesday, October 31, 2018

বিরোধ ও সংলাপঃ চাচা-ভাতিজির কাল্পনিক কথোপকথন

একটা কথা আগেই বলে রাখা ভালো। কথপোকথন অবাস্তব ঘটনা অবলম্বনে রচিত। বাস্তবের সাথে মিল পেলে আমি কিন্তু দায়ী নই। একদা এক দেশে ছিলো এক বিজ্ঞ চাচা ও এক জাদরেল ভাতিজি। চাচা ছিলো বিধান প্রণেতা। দীর্ঘদিন ভাতিজির বাবার সাথে লড়াই সংগ্রাম, রাজনীতি করেছে চাচা। একসাথে পথ চলে গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করেছে। বাবার মৃত্যুর পরও আষ্টেপিষ্টে ছিলেন একসাথেই। হঠাৎ কিযে হয়ে গেলো, চাচা চলে গেলেন স্রোতের বিপরীতে। আর স্রোতের বিপরীতে যাওয়া মানে তো বুঝেনই। ভাসতে ভাসতে অনেক দূরে চলে গেলেন চাচা। চাচার কাছে মনে হলো সংকট চলছে তাই আলোচনা, সংলাপ প্রয়োজন। অতঃপর চাচা ভাতিজিকে চিঠি দিলেন আলোচনায় বসার জন্য। ভাতিজিও সাথে সাথে তাতে সাড়া দিয়ে চিঠি পাঠালেন স্বগত জানিয়ে। চিঠিতে লিখে দিলেন ‘বিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।’ পত্র বাহককে বলে দিলেন চাচা কি খাবে জেনে আসতে। অতঃপর চাচা তার দলবল নিয়ে চলে আসলেন আলোচনায়, সংলাপে।
প্রথমেই শুরু করলেন চাচা। বললেন, তুমিতো জানোই কি কথা বলতে বসেছি আমি দলবল নিয়ে। সামনে নির্বাচন। আমাদের কিছু দাবী আছে। বেশি দাবী করবো না। মাত্র সাতটা দাবী নিয়েই আলোচনা করতে চাই।
আমাদের প্রথম দাবী হলো-অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে তোমাকে পদ থেকে সড়ে দাড়াতে হবে, সংসদ বাতিল, সকলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন একং সাবেক নেত্রীসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-চাচা আপনিতো জানেন। বিধানের বাইরে আমি কিছুই করবো না। আর বিধানের প্রতি আপনারও শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত এবং আছে বলেই আমি জানি। আপনি যাদের ফুসলানিতে এসেছেন আমি তাদের মনবাঞ্চা পূর্ন করতেতো বসিনি। সংসদ বাতিল, নির্দলীয় সরকার গঠন, চুরির দায়ে জেলে যাওয়া ব্যক্তিকে তো ছাড়া বিধান সম্মত হবে না! আর মামলা বিচার না হতে বা তদন্ত না হতেতো বুঝার উপায় নাই সত্য না মিথ্যা কাকা?
আমাদের দ্বিতীয় দাবি হলো-গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকাযে কি বলেন! গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি কোথায় পাবেন? যার মুক্তির আব্দার করছেন সেই নেত্রীই একদিন বলেছিলেন-‘একমাত্র পাগল ও শিশু ছাড়া কোন মানুষের পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়।’ তাহলে আপনিই বলেন কাকে দেব। যাকেই দায়িত্ব দেবো তাকেই আপনাদের কাছে মনে হবে হয় পাগল নয় শিশু। আর গঠন, পূনর্গঠন, বাক্স না মেশিন সে সবইতো বিধান মতে। আমার হাত কোথায় বলেন কাকা?
আমাদের তৃতীয় আব্দার হলো-বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-এতদিন যাবত কাজ করছি, আমি কি বুঝিনা কি করা ঠিক আর কি করা ঠিক নয়? সব স্বাধীনতাই দেয়া আছে। শুধু অপপ্রচার, হানাহানি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির স্বাধীনতা আমি দিতে পারি না, ওটা বিধানেও নাই কাকা।
আমাদের চতুর্থ দাবী হলো-কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল ‘কালো আইন’ বাতিল করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-হয়রানিমূলক মামলা হলে আমি রাখি না। কাকার কি মনে নাই, আমার লোকজনের বিরুদ্ধে যেসব হয়রানি মূলক মামলা করেছিলো স্বাধীনতার সত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে, আমি দায়িত্ব নিয়ে সব মামলা থেকে জনগণকে মুক্তি দিয়েছি। আর কালো আইন যদি হয়ে থাকে তা বাতিল করার বিষয়ে আমি খুব সিরিয়াস। বাবার খুনিদের বাঁচাতে কালো আইন হয়েছিলো, তা বাতিল করেছি না কাকা?
আমাদের পঞ্চম দাবীর কথা এবার বলি-নির্বাচনের ১০ দিন পূর্ব থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকা, আমি নির্বাচন কমিশনের উপর পূর্ণ আস্থাশীল। কমিশন যদি মনে করে দরকার তবে করবে। আমি এতে বাধা দিব কেন। কি করা দরকার আর কি করা দরকার নাই তাতো ঐ বিধানেই বলা আছে। আপনি ওনিয়ে চিন্তা করবেন না কাকা।
প্রশ্নতো মা শেষ করেই ফেলেছি। এবার আমাদের ষষ্ঠ দাবীর কথা বলি-নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পুলিং বুথ, ভোট গণনাস্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশের ওপর কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনকালীন গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকা, গত নির্বাচনেও পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। তারা ভালো রিপোর্টই দিয়েছিলো। তারপরওতো আপনাদের পছন্দ হয়নি। আর দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমিতো না করিনি, কিন্তু ডেকে ডেকে আনতেতো পারবো না কাকা। আর গণমাধ্যম কর্মীরাতো স্বাধীন ভাবেই কাজ করছে। তবে সব বিধানের বাইরে কাউকে ঘোরাঘুরি করতে দেয়া কি ঠিক হবে। আপনি বিধান রচয়িতা, আপনিই বলুন!
আমাদের শেষ প্রশ্নটা করেই ফেলি। সাত হলো লাকী নাম্বার। সপ্তম দাবী হলো-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোনো ধরনের নতুন মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
ভাতিজি উত্তর দিলেন-কাকা, নতুন করে বিশৃঙ্খলা করলে কি করতে হবে তাতো বললেন না! আমি আপনার এই বিধানবহির্ভূত কথা রেখে কি আউল কাইজ্জা বাধামু? মামলা চলবে মামলার গতিতে। বিচার আচারের উপর আমি কোন নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না! আপনিও বিধানের বাইরে কিছু করতে চাওয়ার মানুষ নয়। তাই সব কিছু হবে বিধানের মধ্যে থেকে। আর কারো আব্দারেতো হঠাৎ করে বিধান বদলানো যায় না। বিধান বদলাতে সময় লাগে, সেই সময়ও কিন্তু হাতে নাই। ভবিষ্যতে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা যাবে। এখন আসেন খাওয়া দাওয়া করি।

Tuesday, October 30, 2018

রোগের নাম ‘আস্থা সংকট’ ‘সংলাপ’ ঔষধে কি সারবে?

দেশে এখন এক ভয়াবহ রোগের প্রকপ চলছে। রোগের নাম হলো ‘আস্থার সংকট’। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না, কারো প্রতি কারো আস্থা নেই। এ অবস্থায় সংলাপ নামের ঔষধে কি অসুখ সারবে? আমার মনে হয় না সারবে।
বেশি পুরনো ইতিহাস ঘেটে লাভ নেই। পুরাতন কাসুন্ধি ঘাটা অনেকেই পছন্দ করে না। এরশাদ সাহেব দীর্ঘদিন স্বৈর শাসন চালিয়েছিলেন। তার শাসনামল কেমন ছিলো তার বিচার জনগন করবে এবং করছে। এরশাদ সাহেবের শাসন অনেকে এখনও পছন্দ করেন, অনেকে করেন না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রধান দুটি দলের একটি দলও তার শাসন পছন্দ করেননি। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যপক আন্দোলন করে এরশাদ সাহেবের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা কায়েম করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দ্বারা নির্বাচন পরিচালনা করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হলো। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় স্লোগান দিত ‘এই মূহুর্তে দরকার, কেয়ার টেকার সরকার, এই মূহুর্তে দরকার, তত্বাবধায়ক সরকার’। কেয়ার টেকার বা তত্বাবধায়ক সরকার হিসাবে প্রথম চালকের আসনে বসলেন তৎকালীন সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করলে আওয়ামীলীগ এই নির্বাচনে সুক্ষ কারচুপির অভিযোগ তোলে। মেয়াদ শেষে নিয়ম রক্ষার ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর অল্প সময় টিকেছিলো বিএনপি সরকার। ক্ষমতা ছাড়ার পূর্বে বিএনপি সরকার তত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত আইনগত বেশ কিছু অসঙ্গতি সংশোধন করে যায়। ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের সর্ব প্রথম সংবিধান সম্মত তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সপ্তম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করলে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান অষ্টম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় ঐক্য জোট সরকার গঠন করে। আওয়ামীলীগ এই নির্বাচনে স্থুল কারচুপির অভিযোগ তোলে। ২০০৬ সালে চতুর্থ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। প্রথমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। চার জন উপদেষ্টার সাথে প্রধান উপদেষ্টার মতনৈক্যর কারনে পদত্যাগ করলে নতুন চার উপদেষ্ঠার নিয়োগ দিলেও নির্বাচন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন এবং এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি তখন দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে নতুন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে তিনি ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সরকার পরিচালনা করে নবম জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করলে আওয়ামীলীগ জোট সরকার গঠন করেন। ১০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হয় ক্ষমতায় থেকেই। এ নির্বাচনে নবম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ দলই বর্জন করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ ১৭টি দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে। নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ায় নির্বাচনটি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসা, গণতান্ত্রীক সরকার গঠন ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিতর্ক পিছু ছাড়বে না বলেই মনে হচ্ছে। সরকারী দল বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখতে নানা কৌশল, অপকৌশল ব্যবহার করে থাকে যা হয়তো রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু কোন দলই কোন দলকে বিশ্বাস করে না। এমনকি তত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিও কারো বিশ্বাস নেই। আওয়ামীলীগ-বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলো একসময় তত্ববধায়ক সরকার চেয়ে আন্দোলন করেছিলো। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তাদের কাছে মনে হলো তত্বাবধায়ক সরকারও নিরপেক্ষ নয়। বিএনপি নেত্রীর ভাষায় ‘একমাত্র পাগল ও শিশু ছাড়া কোন মানুষের পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়।’ আওয়ামীলীগও কম যায় না, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর বলে বসলো সুক্ষ কারচুপি হয়েছে আর ২০০১ সালের নির্বাচনে স্থুল কারচুপি হয়েছে। নির্বাচনে একদল জিতবে, আরেক দল হারবে এটাই বাস্তবতা। কিন্তু কোন দলই তত্বাবধায়ক সরকারের উপর আস্থা রাখতে পারেনি। ঘটনা চক্রে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করলে বিএনপি জোট আবার তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে মাঠে নামে। বিএনপি জোট এখন বলছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। যারাই একসময় তত্বাবধায়ক সরকারকে নিরপেক্ষ ভেবেছিলেন তারাই ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টে ফেলছেন। দেশে নিরপেক্ষ ব্যক্তি নেই তা নয়। আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একে অপরের প্রতি আস্থাই নেই। রাজনৈতিক নেতাদের ‘আস্থার সংকট’ নামক রোগে ধরেছে।
দশম জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামীলীগ সরকার বিএনপিকে সংলাপে ডেকেছিলো। কিন্তু সেই সময় বিএনপি দলীয় নেত্রী সংলাপে যায়নি। সময় বিএনপির জন্য যেমন বসে থাকেনি আওয়ামীলীগের জন্যও নয়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যেমন বিএনপি নির্বাচন করে ফেলেছিলো তেমনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামীলীগও নির্বাচন করে ফেলেছে। বিএনপি তখন টিকে থাকতে পারেনি, আওয়ামীলীগ টিকে গেছে এই যা পার্থক্য। এখন একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জোট সংলাপের জন্য আকুতি মিনতি করায় আওয়ামীলীগ সংলাপের আয়োজন করেছে। কিন্তু সংলাপে কি আদৌ কিছু হবে। একটা গল্প শুনেছিলাম, একজন বলেছে আমাকে যে বুঝাতে পারবে তাকে পালের বড় গরুটা দিয়ে দিব। পাশ থেকে ঐ লোকের চামচা বললো, আপনি এতবড় গরুটা দিয়ে দিবেন? তখন বলেছিলো, আরো বোকা, আমি বুঝলেতো আমায় বুঝাবে! আমি বুঝবোও না আমার গরুও দিব না। তেমনি সংলাপে আলোচনা হবে, খাওয়া দাওয়া হবে, কুশলাদি বিনিময় হবে। রেজাল্ট যা হবে তা বিএনপি জোটেরও পছন্দ হবে আর তাদের দাবি আওয়ামীলীগেরও পছন্দ হবে না। যা হবে তা কয়েকদিনের ভিতরই মানুষ দেখতে পাবে। তাই ‘সংলাপ’ নামের ঔষধে ‘আস্থার সংকট’ রোগ সারবে না।

Monday, October 29, 2018

কার মুখে কালি মাখছি আমরা, দেশের মুখে না সরকারের মুখে?

কোন দাবিই আন্দোলন ছাড়া কোন কালেই আদায় হয় নাই। না কাদলে মা’ও অনেক সময় দুধ দিতে ভুলে যায়। তাই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন একটা অধিকার ও দায়িত্ব। কিন্তু সেই আন্দোলন হতে হয় শান্তিপূর্ণ, যৌক্তিক ও সমর্থনযোগ্য। অন্যায়-অন্যায্য দাবিতে আন্দোলন কোন অধিকারের মধ্যে পড়ে না। আন্দোলনে যেন অন্যের অধিকার খর্ব না হয় সেদিকেও কড়া নজর রাখা উচিত। নিজের অধিকার, দাবি আদায় করতে গিয়ে যেন অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে কজনই নজর রাখে।
সম্প্রতি ঢাকায় একটা দুর্ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থী মারা গেলে সড়ক পরিবহন আইন পাশের দাবি জোড়ালো ভাবে সামনে চলে আসে। শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে একজন শ্রমিকবান্ধব মন্ত্রী দাত কেলিয়ে হেসে আন্দোলন চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই আন্দোলনে অবশ্য বিএনপি জোট ঘি ঢালতে চেষ্টা করেও নিজেদের মনবাঞ্চা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে কিছু বিপথগামী শিক্ষার্থী অশ্লীল ভাষায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় দাড়ালে আমরা সমালোচনা করি, কিছু শিক্ষার্থী গাড়িতে মার্কার পেন দিয়ে আঁকিবুকি করে সমালোচনার পাত্র হয়। আবার সেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ এ্যাম্বুলেন্সকে নির্বিঘ্নে যেতে দিয়ে, সাড়িবদ্ধভাবে রিক্সাসহ যানবাহন চলতে বাধ্য করে, সিটবেল্ট পড়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গাড়ি চালাতে বাধ্য করে, ঝাড়ু হাতে নিজেরা রাস্তা পরিস্কার করে সকলের প্রশংসার দাবিদার হন। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস করে সরকার।
সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস করলে নাখোশ হন পরিবহন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সংগঠন। শ্রমিকরা তাদের নাটের গুরুদের নির্দেশে মামার বাড়ির আবদার নিয়ে মাঠে নামে। শ্রমিকদের সকল দাবিই অযৌক্তিক তা কিন্তু নয়। তাদের দাবিতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত আছে যা আমাদের অনেকেরই দাবি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের ভাষাটা। তারা যে ভাষায় আন্দোলন করে সে ভাষা তারা কোথা থেকে শিখেছে আল্লাহ মালুম! তাদের গুরুজনদের ভাষাও যে মধুর তা কিন্তু নয়। শ্রমিকদের আন্দোলনের ভাষা তাদের শিক্ষারই পরিচয় বহন করে বলেই মনে হয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের আট দফা দাবিগুলো হচ্ছে ১) সড়ক দুর্ঘটনায় সকল মামলা জামিনযোগ্য করা, ২) শ্রমিকের অর্থদন্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না, ৩) সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, ৪) শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫ম শ্রেণি করা, ৫) ওয়েস্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল, ৬) সড়কে পুলিশ হয়রানি বন্ধ করা, ৭) শ্রমিকের নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত থাকার ব্যবস্থা রাখা ও ৮) শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধ করা। শ্রমিক ফেডারেশনের আটটি দাবির অধিকাংশই সমর্থ যোগ্য। শুধু মামলা জামিনযোগ্য করা, অর্থদন্ড মৌকুফ, শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা মামার বাড়ির আবদারের মতই শোনায়। আবার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা, প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক ও সময়োপযোগী।
শ্রমিকরা তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছে। তারা গাড়ি চালাবে না, ভালো কথা। কিন্তু অন্যের গাড়ি বের করলে, এমনকি মটর সাইকেলে বের করলে তাদের কেন আতে ঘা লাগে। গাড়ি না চালানো শ্রমিকদের অধিকার, গাড়ি চালানোওতো নাগরিকদের অধিকার। শ্রমিকরা আন্দোলন করছে তাদের নিজস্ব ভাষায়। গাড়িতে কালি মাখছে, পোড়া মবিল দিয়ে মুখ কালো করছে, বাদ যাচ্ছে না কলেজ ছাত্রী, মটর সাইকেল আরোহিও। ইজিবাইক থেকে শ্রমিকরা যাত্রী নামতে বাধ্য করছে। এই যে কালিমা লেপন, এটা কার মুখে? দেশের মুখে মাখছে না সরকারের মুখে। সরকারের খুটিতে ভর করে শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা শ্রমিকদের দিয়ে আজ যে কাজগুলো করছে এর দায় সরকারও এড়াতে পারবে না। স্বেচ্ছাচারিতার একটা সীমা থাকা উচিত। শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের উচিত তাদের শ্রমিকদের গাড়ি চালনায় প্রশিক্ষণ দেয়া, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া, রাষ্ট্রের নিয়ম কানুন সম্পর্কে অবহিত করে তা মানার মানসিকতা গড়ে তোলা এবং নিজেরাও কিছুটা শিক্ষা নেয়া। নইলে দেশের মুখে কালি মাখতে মাখতে একসময় দেশ আরো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। দেশের মুখ উজ্জল হলেই আপনাদের মত উচু তলার মানুষের মুখ জ্বলজ্বল করবে, সম্মান পাবেন।

Sunday, October 28, 2018

অধিকার


দেশের মুখে মাখছে কালি
জনতাকে দিচ্ছে গালি
আন্দোলনকে বলছে ওরা
গণতান্ত্রিক অধিকার।
জনগণ, তোমার কি আছে
ফেরাবার কোন অধিকার?

গাড়ির গায়ে, নারীর গায়ে
মাখছে কালি চালকের গায়ে
নিষেধ গুরুর তবুও তোমরা
কেন, চলো-চালাও গাড়ি?
তোমাদের কি নেই সরম-লজ্জা
কোন দেশেতে বলো তোমার বাড়ি?

মানুষ মারবো, পিষে দেব
আদালত হতে জামিন নেব
লাইসেন্স নেব রং চিনেই
এটা আমাদের অধিকার।
জনগণ তোমার লাফাও কেন
এতে বলো ক্ষতিকার?

এই দেশেতে শক্তি যার
পূরো দেশটাই হচ্ছে তার
দুর্বল জনগণের কি
আছে কোন অধিকার?
জ্ঞনীরা মার খাবে, মূর্খ চালাবে দেশ
এটাই এখন তাদের অধিকার।





মা ইলিশ নিধন নয় চলছে হত্যাযজ্ঞ

নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ সুদীর্ঘ কাল থেকেই। বলা যায় নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি সৃষ্টির শুরু থেকেই আগ্রহ। আর এই আগ্রহ কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষের বেশি, কোন কোন ক্ষেত্রে নারীর। যেমন নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি প্রথম যে লোভ বা আগ্রহটা দেখিয়েছেন তিনি হলেন নারী। বর্তমান সময়ে নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি নারী পুরুষ সমান হারেই আগ্রহী। 

একসময় ফেনসিডিল ছিলো কাশির ঔষধ। হাসপাতাল থেকে ফাও পাওয়ার পরও অনেকে খেতে চাইতো না। আস্তে আস্তে যখন মানুষ বুঝলো এটা খেলে নেশা হয় তখন বোতল চেটে খাওয়া শুরু করলো। বিষয়টা যখন কর্তাব্যক্তিদের ভাবিয়ে তুললো তখন করা হলো নিষিদ্ধ। অমনি আগ্রহ বেড়ে গেলো সবার। 

আমাদের দেশ হলো ইলিশের দেশ। সারা বছরই কম বেশি ইলিশ মাছ পাওয়া যায় বাজারে। কখনো দাম বেশি কখনো দাম কম। যখন বেশি থাকে তখন সাধারণ মানুষ হয়তো কিনে খেতে পারে না কিন্তু বিত্তবানরা ঠিকই কিনে খেতে পারে। আগে নদীতে মাছ আর পানি প্রায় সমান সমান ছিলো বলতো মুরব্বিগণ। তখন বাজারে মাছ বিক্রি করতে না পেরে ফেলেও দিতে হতো। সেই ইলিশ মাছ ধরতে ধরতে যখন তলানিতে এসে পৌচেছে তখনই কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়লো। আগে ধরার কোন মৌসুম ছিলো না। যে যখন জাল ফেলতো তখনই মাছ নিয়ে ফিরতে পারতো। যখন সংকট দেখা দিলো তখন প্রজননের মৌসুমে মা ইলিশ ও ঝাটকা ধরা নিষিদ্ধ করলো সরকার। 

বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় মা ইলিশ ধরা এবং প্রজনন শেষে একটু বেড়ে উঠা ঝাটকা ধরা নিষিদ্ধ করার পর দেখা গেলো ইলিশের উৎপাদন বেড়ে গেছে অনেক গুন। একটা সময় গেছে যখন জেলেরা ভরা মৌসুমেও কাঙ্খিত ইলিশ না পেয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতো। মা ইলিশ ও ঝাটকা ধরা বন্ধ রাখতে বাধ্য করার পর দেখা গেছে তাদের মুখে হাসির ঝিলিক। কিন্তু ঐযে নিষিদ্ধ ফলের প্রতি আগ্রহটাই কাল হয়ে দাড়িয়েছে। 

গত বছর মা ইলিশ ও ঝাটকা ধরা কড়াকড়ি ভাবে নিয়ন্ত্রন করায় এবছর নদীতে নাকি পানি সমান মা ইলিশ ঘুরছে। জাল ফেলে টেনে তুলতে পারছে না জেলেরা। কিন্তু জেলেরা এটা চিন্তা করছে না, এবার নাহয় ধরলো, কিন্তু পরবর্তী মৌসুমে যখন খালি জাল টেনে তুলবে তখন কি তাদের ভালো লাগবে? 

সম্প্রতি চাঁদপুরের এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যর বাড়ি থেকে সাড়ে সাতশ মন মানে ত্রিশ হাজার কেজি মা ইলিশ মজুত অবস্থায় উদ্ধার করেছে প্রশাসন। এটাতো একজন মেম্বারের কাহিনী। এমন হাজারো মেম্বার আছে পদ্মা-মেঘনার তীর জুড়ে। আর অভিযোগ আছে, নদীতে ট্রলার নিয়ে যেতে হলে ট্রলার প্রতি টাকা দিয়েই নদীতে নামছে জেলেরা। টাকাটা কাকে দিতে হচ্ছে তা আমি আর প্রকাশ করলাম না, কারন সবাই জানেন বলেই আমার বিশ্বাস। মা ইলিশ শুধু মেম্বারদের কাছেই না, খুঁজলে পাওয়া যাবে নিধন নিয়ন্ত্রনকারী কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মীসহ ক্ষমতাধর সবার বাড়িতে। এমন কোন বাড়ি পাওয়া যাবে না যার ফ্রিজে খালি জায়গা আছে। যার বাড়িতে মা ইলিশ ঢুকেনি তার বাড়িতে বিবাদ শুরু হয়ে গেছে। 

আসলে এবার নিরাপত্তা ও তল্লাশি ব্যবস্থা কিছুটা শিথিল করার কারনে মা ইলিশ নিধন বেড়ে গেছে। যদি পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা কড়াকড়ি হতো তবে নদী থেকে মা ইলিশ ধরেও লাভ হতো না। কারন ধরে যদি বিক্রিই করতে না পারে তবে এতো মাছ দিয়ে কি করবে। কতটাই বা খাওয়া যায়! 

এবার নিয়ন্ত্রনকারী কর্তৃপক্ষের শিথিলতার সুযোগে মা ইলিশ নিধন নয় চলছে হত্যাযজ্ঞ। এ হত্যাযজ্ঞে জড়িত জেলেরা, পুলিশ, প্রশাসন, আপনার আমার মত ক্রেতা, মজুতদার। আমরা সবাই জড়িত মা ইলিশ হত্যাযজ্ঞে। এর ফল পাওয়া যাবে আগামী মৌসুমে। বাজারে যখন ইলিশ শুন্যতা দেখা দিবে তখন জেলেদের পরবে মাথায় হাত, পেটে হাত, চোখের জল, আমাদের পরবে জিভের জল।     

Saturday, October 27, 2018

শুধু জানি ভালোবাসি

তোমায় কতটা ভালোবাসি, ভাষায় প্রকাশ করতে চাই না।
প্রকাশ করলে আর কী বাকী থাকলো, ভালোবাসা হচ্ছে
অনুভব করার বিষয়, তুমি কতটা অনুভব করলে,
সেটা তোমার একান্তই ব্যক্তিগত ক্ষমতা, আমি শুধু,
আমার ভালোবাসাটা বেসে যেতে চাই, আমার মত করে।
তুমি বুঝে নিবে, তোমার অনুভবের মিটারে মেপে।
ভালোবাসা প্রকাশের নির্দিষ্ট কোন মিটার এখনো
তৈরী হয়েছে বলে শুনিনি, জানিওনি, দেখিওনি।
আর, মিটারে মেপে কখনো ভালোবাসাও হয় না।
এটা আমার বিশ্বাস, এটা আমার ধারনা।
আমার কাজ ভালোবাসা, মেপে দেখা নয়,
মাপামাপি তোমার কাজ, তোমার অনুভব।
আমি মাপি তোমার ভালোবাসা, কতটা বাসো তুমি।
আমার হৃদয় মিটার দিয়ে, যখনই হৃদয় ধকধক করে,
অনুভব করি, আমার ভালোবাসার পারদ এখন উর্ধ্বমূখী।
আমি যখন পাখনা ছাড়াই আকাশে উড়ি, ভালোবাসায় ডুবি,
পাহাড়ে চড়ি, সুখে মরি, হাসি, কাদি, উন্মাদ হই যখন,
তখনই অনুভব করি, তোমার ভালোবাসা আমায় উজার করেছে।
তোমায় কতটা ভালোবাসি, ভাষায় প্রকাশ করতে চাই না।
প্রকাশ করলে সে কী আর ভালোবাসা থাকে, মনে হয় না,
প্রকাশে সীমা থাকে, ভালোবাসা হয় সীমাহীন, বন্ধনহীন
মেকি ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয় হয়তো, আমার ভালোবাসা
মেকি নয়, ভালোবাসি এটাই কথা, কতটা বাসি সেটা আমার
নিজেরই নেই জানা, জানা থাকার কথাও নয়, শুধু জানি
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, এর বেশি কিছুই নয়।
তোমার আবেশে আমি উদাস হয়ে যাই,
তোমার আবেশে আমি হই মাতাল, কবি,
তোমার আবেশে আমি মোহাবিষ্ট হয়ে,
সাত আসমান ঘুরে আসি মূহুর্তেই,
পরক্ষণেই আমি হাটু গেড়ে, একশ একটা
নীল পদ্ম তোমার হাতে গুজে দিয়ে বলি,
ভালোবাসি, ভালোবাসি, শুধুই ভালোবাসি।
কতটা বাসলাম তা আমার নেই যে জানা। 

Thursday, October 25, 2018

শরীয়তপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্তরে এসব কি হচ্ছে? আমার প্রতিবাদ

বুধবার সকালে চেম্বারে আসার সময় শরীয়তপুর জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্তর দেখি বেশ সরগরম ও সুসজ্জিত। প্যান্ডেল ঘেরা, সুদৃশ্য গেট। গেটে ব্যানার লেখা ‘টিভিএস মেগা কেয়ার ক্যাম্প, আপনাদের মুখের হাসিই আমাদের অর্জন’! ভিতরের কাম কাইজ দেখে বুঝলাম মটর সাইকেল সার্ভিসিং হচ্ছে মনে হয়।
মটর সাইকেল কোম্পানি ফ্রিতে হোক আর টাকা নিয়ে হোক সার্ভিস দিচ্ছে সেটা খুবই ভালো কথা। তারা তাদের গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনে নানা চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক হলো স্থান নির্বাচন।
সব জেলাতেই একটা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থাকে। শরীয়তপুরেও একটা আছে। শহীদ মিনার হলো সকল আন্দোলনের, আবেগের, শ্রদ্ধার, ভালোবাসার প্রতীক। এখানে কেউ প্রতিবাদ করতে আসে, কেউ আশে অপ্রাপ্তির কথা জানাতে, কেউ আসে প্রাপ্তির কথা জানাতে, কেউ দেয় সাহিত্য আড্ডা, কেউ দেয় শুধুই আড্ডা, কেউ করে অনশন। সেখানে মটর সাইকেল সার্ভিসিং হচ্ছে বিষয়টা একটু কেমন যেন হয়ে গেলো না?
শরীয়তপুর জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ডিজাইন করেছিলেন আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন একজন মানুষ ভাস্কর শহীদুজ্জামান শিল্পী স্যার। দীর্ঘ পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের ফসল আজকের এই শহীদ মিনার। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় জায়গা অপ্রতুল তবুও এই শহীদ মিনারকে সুন্দর করতে তিনি স্বল্প জায়গায়, স্বল্প বাজেটে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
একটি শহীদ মিনারের সৌন্দর্য রক্ষা ও বৃদ্ধির জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ কত কিছুই না করে। দেয়াল রং করে, বেষ্টনি দেয়, গাছ লাগায়, চত্তরে ঘাস লাগায়, পানি ঢালে এমন শত তালিকা উপস্থাপন করা যায়। আর এসবই করা হয় শ্রোদ্ধাবোধ থেকে, শহীদ মিনারের প্রতি ভালোবাসা থেকে।
শরীয়তপুর পৌরসভার সামনে আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কি একটা অভিভাবকহীন বেওয়ারিশ শহীদ মিনার, এ প্রশ্ন মাঝে মাঝেই আমার মাথায় ঘুরপাক খায়। আর প্রশ্নটা মনে আসার কারন একটাই, এ শহীদ মিনার চত্তরে মানুষ গরু চড়ায়, বাস মালিকরা বাস রেখে দেয়, রিক্সা, ভ্যানতো হরহামেশাই রাখা থাকে। একটা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের এমন যথেচ্ছা ব্যবহার কেন হয় এ প্রশ্ন আমার মতো হয়তো অনেকেরই আছে।
এবার আসি মূল বিষয়ে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চত্তরে সবুজ ঘাসের উপর চলছে টিভিএস কোম্পানির মটর সাইকেল সার্ভিসিং। লোহা লক্করের ঝনঝনানি, তেল মবিলের ছড়াছরি করে চলছে কর্মযজ্ঞ। এতে ঘাসের বারোটা বেজে যাচ্ছে। মানুষ শহীদ মিনার চত্তরে সবুঝ ঘাস লাগায়, পানি ছিটিয়ে ঘাস বাঁচায়, বড় হলে ছেটে দেয়। এ সবই করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষে এবং আগত মানুষের সুবিধার জন্য। মানুষ যেন শহীদ মিনার চত্তরে বসে দু’দন্ড সময় কাটাতে পারে, মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে, প্রতিবাদ করতে পারে, সাহিত্য চর্চা করতে পারে, বসে তর্ক বিতর্ক করতে পারে, তবে ঝগড়া নয়। যেভাবে সার্ভিসিং চলতে তাতে তেল মবিল পড়ে এবং লোহা লক্করের যন্ত্রাংশের চাপে ঘাসগুলো বাঁচবে বলে মনে হয় না।
শহীদ মিনারে এমন একটি উৎসব করার জন্য কি কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েছে। নিশ্চই অনুমোদন নিয়েছে। নইলে কোম্পানির এত সাহস হতো না এমন স্পর্শকাতর একটি জায়গায় এমন আয়োজন করার। আর যারা অনুমোদন দিয়েছে তারাই বা কেমন বেকুব, গাধা যে এখানে অনুমতি দিলো? তাদের সার্ভিসিং যারা পেতে আগ্রহী সেই গ্রহকরা চাঁন্দের দেশেও যদি আয়োজন করা হয় সেখানেই যাবে। প্রধান সড়কের পাশে শহীদ মিনারেই করতে হবে এমন তো কোন কথা নেই।
দেশে সুশিল সমাজ বলতে একটা কথা আছে। সরকার যদি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজনে একটা গাছ কাটে তবে অনেক সুশিল সমাজের
ব্যক্তি তার প্রতিবাদ করে, গাছ ধরে কান্নাকাটি করে, যদি কোন পুকুর ভরাট করে তবে পুকুরের পাড়ে মানব বন্ধন করে প্রতিবাদ জানায় জলাশয় ভরাটের জন্য। কিন্তু আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমন একটি কাজ হচ্ছে অথচ কেউ কোন টু শব্দ করতে দেখলাম না। অন্তত জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একটা লাইন দেখলাম না যে কেউ নিন্দা করেছে। তাহলে কি আমাদের বিবেক আসলে মরে গেছে না আমাদের বিবেকের উপর কুকুরে পেশাব করে ভিজিয়ে দেয়ায় নিস্তেজ হয়ে গেছে, এমন প্রশ্নে হয়তো অনেকে বিব্রত হবেন। কিন্তু আমি বিব্রত করার জন্য বলছি না। আমাদের উচিত প্রতিবাদ করা। আর প্রতিবাদ করার অনেক মাধ্যম আছে এখন। ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে কিছু করতে না পারলে নাকি মনে মনে ঘৃনা করতে হয়। আসুন আমরা কিছুই যদি করতে না পারি তবে একটু ঘৃনা করে প্রতিবাদ জানাই। টিভিএস কোম্পানির সার্ভিসিং হয়তো শেষ হয়ে যাবে, আবার নুতন কোন আয়োজন হবে যে আয়োজনে শহীদ মিনারের সৌন্দর্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। তবে যাতে ভবিষ্যতে যেন এধরনের কর্মকান্ডকে কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারে বা চত্তরে প্রশ্রয় না দেয়। আমার মত সাধারণ নিরিহ মানুষের জন্য এটাই হলো প্রতিবাদ।

Monday, October 22, 2018

চৈতা পাগলের দেশ

দেশে চৈতা পাগলের অভাব নাই। বছরের বেশিরভাগ সময়ই ভালো থাকে। যখন চৈত্র মাস আসে, গরম একটু বেশি পরে, অমনি পাগলামি শুরু হয়ে যায়। এধরনের পাগলকে আমরা চৈতা পাগল হিসাবেই চিনি এবং ডাকি।
সম্প্রতি একটা বিষয় বেশ আলোচনায় আছে। একটু বেশি মাতামাতি হলেই যেমন আমরা বলি ভাইরাল হয়ে গেছে, তেমনি ব্যারিস্টার মইনুল ইসলামের সাথে মাসুদা ভাট্টির তর্ক-বিতর্ক দেশে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুক গরম, আদালতপাড়া গরম, মিডিয়া গরম, ইউটিউব গরম, অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও গরম হয়ে উঠেছে। আর উল্লেখিত মাধ্যম গরম হওয়ার সাথে সাথে অনেকে কার্তিক মাসে হালকা শীতের আমেজে চৈত্র মাসের আমেজ পেয়ে গেছে। আর জেগে উঠেছে চৈতা পাগলেরা।
বড় বড় বিজ্ঞজনরা বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। নারী যেমন মানুষ তেমনি পুরুষও মানুষ। ঢাকার বহুল প্রচার পাওয়া গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা যেমন মানুষ তেমনি ঢাকার ফুটপাতে গণমাধ্যম পল্লীর পাশে রাতে পন্যবাহী সবজির ট্রাক খালাশ করার কাজের জন্য অপেক্ষমান টুকরির মধ্যে কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে থাকা ব্যক্তিটিও মানুষ। কথার যৌনাঙ্গ দিয়ে ধর্ষিত উচু স্তরের তর্কবিশারদ নারী যেমন মানুষ তেমনি কুড়িগ্রামের নিভৃত পল্লীতে মোড়ল বেটার পুত্র দারা ধর্ষিতাও মানুষ। বহুল প্রকাশিত ও প্রচারিত দৈনিকের সাংবাদিক যেমন মানুষ তেমনি শরীয়তপুরের মত অবহেলিত জেলার একজন জেলা প্রতিনিধি কাজী নজরুল ইসলামও একজন মানুষ। কিন্তু সেই মানুষগুলো যখন আক্রান্ত হয় তখন প্রতিবাদী মানুষগুলো যেন কেমন কেমন আচরণ করেন।
নিভৃত পল্লীর একজন সাধারণ মেয়ে ধর্ষিত হলে পত্রিকার ভিতরের পাতায় সিঙ্গেল কলামে ছোট করে নিউজ প্রকাশিত হয়। নিউজ বড় হলে লাইনেজ বিল দিতে হবে তাই যতটা কাটা যায়, কিন্তু বড় কোন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুখের কথায় ধর্ষিত হলে চৈতা পাগলরা জেগে যায়। বড় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মামলায় পড়লে মূহুর্তে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায় আর জেলার সাধারণ সাংবাদিক মিথ্যা মামলা খেলে জেল খাটে। বড় সম্পাদক গোত্রের সাংবাদিক মামলা খেলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে আর ছোট সাংবাদিক মামলা খেলে চাকরি খোয়ায় বিনা বিবেচনায়, বিনা তদন্তে, বিনা বিচারে। এই যে প্রতিবাদের পার্থক্য এখানেই দুঃখ লাগে। চৈতা পাগলরা সাধারণ মানুষের পক্ষে নাই, আছে ক্ষমতা, রুটি, হালুয়ার পক্ষে।
বড় সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মামলা হলে বিশজন, পঞ্চাশজন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানায় কিন্তু শরীয়তপুরের কাজী নজরুল ইসলামদের মত সাংবাদিকরা সত্যের পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখে মামলার পর মামলা খেলেও তাদের কলম দিয়ে একটা শব্দও বের হয় না, তাদের জন্য একমাত্র সম্পাদকই একটা পত্র লিখে তা হলো টার্মিনেশন লেটার! ভাত দেয়ার মুরোদ নেই চাকরি খাওয়ার গোশাই!!
চৈতা পাগলরা আবার বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। কেউ লাল দল, কেউ নীল দল, কেউ সাদা প্যানেল, কেউ গোলাপী প্যানেল। কিন্তু অবহেলীতা সাধারণ মানুষের জন্য কোন প্যানেল দেখি না। টক শোতে দেখি অমুক সমর্থক আলোচক, তমুক সমর্থক সমালোচক, অমুক বিশারদ, তমুক বিশারদ। কই, মানুষ সমর্থক, সুস্থ সমাজ সমর্থক কোন বিশারদ তো দেখি না।
কেন এমন হয়? কেন এমন হচ্ছে? সবাই কি রুটি হালুয়ার পিছনে দৌরাচ্ছে? দেশে যখন খাদ্যের অভাব ছিলো, দেশে যখন মঙ্গা, খড়া, অনটন ছিলো তখনতো এত ক্ষুধার্ত বিবেক ছিলো না। এখন দেশ খাদ্যে অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু মানুষের ক্ষুধা কেন এত বেড়েছে। তাহলে কি এটা ক্ষমতার ক্ষুধা? যদি ক্ষমতার ক্ষুধায় ক্ষুধার্ত হয় তবে কেন তারা সুশীল নামে আখ্যায়িত হন? তারাতো ভুখা, নাঙ্গা, ক্ষুধার্ত ছাড়া কিছুই না। একটি ক্ষুধার্ত বিবেকের কাছে আমরা কি আশা করতে পারি? পাগলের কাছেই বা আমরা কি আশা করতে পারি? পাগলের যেমন বুদ্ধি থাকে না, আবার ক্ষুধা থাকলেও মাথায় বুদ্ধি খেলে না। সুতরাং চৈতা পাগলদেরও কোন বিবেক নাই।
আসুন, চৈতা পাগল থেকে সাবধানে থাকি। আমরা সাধারণ মানুষ হলেও আমরা কিন্তু সব বুঝি! একটা লোকাল উক্তি বলি, ‘আমরা কিন্তু সব বুঝি, কে আমার বুকের দিকে তাকায় আর কে পেটের দিকে তাকায়, আমরা কিন্তু সব বুঝি।’
সব শেষে একটা বিষয় ক্লিয়ার করে দেই। আমার এই লেখায় কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হন তবে আমার বিরুদ্ধে কোন একশনে গিয়ে লাভ নেই। কেন লাভ নেই তা একটা কৌতুকের মাধ্যমে বলি-
এক যুবককে পুলিশে ধরেছে। বিচারক যুবককে বলো
-তোমার বিরুদ্ধে দেশের অর্থ মন্ত্রীকে বেকুব বলার জন্য চার্জ গঠন করা হলো
যুবক-আমিতো কোন দেশের অর্থ মন্ত্রী তা বলি নাই। আমি উগান্ডার অর্থ মন্ত্রীকে বলেছি। 
বিচারক-কোন দেশের অর্থ মন্ত্রী বেকুব আমরা জানিনা মনে করো? আমাদের কে দেখে কি তোমার আবুল মনে হয়??

আমিও কোন দেশের চৈতা পাগলের কথা বলেছি তা কিন্তু বলিনি!!

Sunday, October 21, 2018

ইলিশের আকুতি

আমায় মেরে ভরছো সবাই, ডিপ ফ্রিজের ভিতর
ভাবতে পারো তোমরা হলে, কত বড় ইতর?
কয়েকটা দিন করলে দেরি, এমন কি ক্ষতি হতো
এই ক’দিনে ছাড়তাম ডিম, কোটি গুনন শত।
ডিম ফুটে হতো পোনা, কয়েক দিনেই ঝাটকা
এর পরেই পারতে খেতে, ধরে আমায় টাটকা।
প্রজননের মৌসুম এখন, এলাম ডিম দিতে
নিষেধ থাকা সত্বেও জাল, ফেললে তুলে নিতে।
রাষ্ট্র তোমায় খাবার দিলো, আমায় না ধরতে
তুবুও আজ ডিমসহ কেন, হলো আমায় মরতে?
একটু যদি সবুর করতে, পুশিয়ে দিতাম ঘাটতি
জাল ভরে উঠতাম আমি, আমার আছে কাটতি!
তোমার এমন আচরনে, মন চায়না আসতে
মৌসুম এলে তবুও আমি, আসি ভাসতে ভাসতে।
প্রজনন আমার কমে গেলে, কমে উৎপাদন
তখন তুমি কেমনে চলো, ভাঙ্গে কেন মন?
রাজা, উজির, পাইক, পেয়াদা, রক্ষার তরে আছে
তবুও দেখি লোভনীয় আমি, এখনই তাদের কাছে।
সবাই যদি হও সচেতন, একটু আমার তরে
দেখবে আমি উঠবো বেড়ে, নদী যাবে ভরে।
এভাবে যদি ধরতে থাকো, একদিন হবো শেষ
তখন কেউ বলবে না আর, এটা ইলিশের দেশ।
অধম জুয়েল বলে, মা’ইলিশ করুক প্রজনন
অতি মুনাফা, স্বাদের লিপ্সা করো নিয়ন্ত্রন।


Saturday, October 13, 2018

জান মালের উপর ভরসা করা কঠিন!!

।১।
আকাশ মনি আর বাতাশ কুমার খুব ভাল বন্ধু। দুজনেই এবার জিপিএ ফাইভ পেয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিলো ‘আই গট জিপিএ ফাইভ’! দুজনেই ভর্তি হয়েছে একই কলেজে! আগে দুজনে দুই স্কুলের বাসিন্দা ছিল। আকাশ মনি পড়তো জেলা সরকারী গার্লস স্কুলে আর বাতাশ কুমার পড়তো জেলা সরকারী বয়েজ স্কুলে। গার্লস স্কুলের সম বয়সী ইয়ারমেটদের প্রতি বয়েজদের একটু আগ্রহ থাকে বেশি, ঠিক তেমনি বয়েজ স্কুলের ইয়ারমেটদের প্রতি গার্লসদের আগ্রহ দেখা যায়। স্কুলটা ছুটি হলে বয়েজরা ইনিয়ে বিনিয়ে গার্লস স্কুলের পাশ দিয়ে বাড়ি ফেরার শেষ রাস্তাটা খুজে পায়। আর গার্লসরা বয়েজ স্কুলের ছাত্রদের দেখলে একদম গুটিয়ে যায়। যা হোক, সমবয়সী সহপাঠিদের মধ্যে মেয়েরা নিজেদের একটু ছোট ভাবতেই পছন্দ করে। গার্লস স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বয়েজ স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভাইয়া বা ভাইজান বলে। এসএসসি পাস করার পর আকাশ মনি ও বাতাশ কুমার দুজনে একই কলেজে একই বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুবাদে এখন বেশ কাছে এসেছে। পূর্বের পরিচিত এখন ক্লাসমেট, সম্পর্কের উন্নতি হতে থাকে জ্যামিতিক হারে। প্রথমে ভাইয়া ভাইয়া ডাকলেও সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে হয়ে যায় ভাইজান ভাইজান। কয়েকদিনের মধ্যে এক সাথে কলেজে আসা, একসাথে যাওয়া, একসাথে ক্যান্টিনে খাওয়া। এর বিল ও দেয়, ওর বিল এ দেয়। বেশ জমিয়ে ফেলেছে আকাশ আর বাতাশ। দুজনে ক্লাস ফাকি দিয়ে মাঝে মাঝেই কলেজের পাশের শীতল ছায়া ঘেরা বাগানে ঘুরে বেরায়, সবুজ ঘাসে বসে একটু গল্প সল্প করে। আকাশ মনি ঘাসের ডগা ছেড়ে, বাতাশ কুমার গাছের পাতা কচলায়।

এভাবে কখন যে একে অপরকে আপন করে নিয়েছে কেউ বুঝতে পারেনি। ভাইয়া থেকে দোস্ত আর দোস্ত থেকে ভাইজান ডাকে মেয়েটা ছেলেটাকে। দেখতে দেখতে ভাইজান থেকে ভাই শব্দটা যে কোথায় উড়ে গেল দুজনের কেউই বুঝতে পারলো না। এখন একজন আরেকজনকে জান জান বলে পাগল প্রায়। জান তুমি কি কর? জান তুমি কি খাও? জান তুমি কোথায় এমন হাজারো প্রশ্নের বন্যা।

আস্তে আস্তে চলতে থাকে জান জান ডাকা। আর সময় ও স্রোত কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না তা তো আমরা সবাই জানি। আকাশ বাতাশের সময়ও বসে নেই। দুজনেরই পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে। দেখতে দেখতে কলেজের প্রায় সময়টাই চলে গেছে। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। জান জান খেলায় পরীক্ষার প্রস্তুতির অবস্থা দুজনেরই খারাপ। পরীক্ষার পর রেজাল্ট বের হলো, কিন্তু আজব এক কারিশমায় দুজনে আবার ‘জিপিএ ফাইফ গট’!! ভর্তি পরীক্ষার চাপে দুজনেই বেসামাল। আকাশ মনিকে তার বাবা উপায়ান্ত না দেখে একটা বেসরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে দিলো। আর ছেলেটা চলে গেলো ফিলিপাইনে মেরিন সাইন্স পড়ার জন্য। আজ দুজনের দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেকে...

তার পর দীর্ঘ দিন চলে গেলো। দেশে এসে বাতাশ কুমারের সাথে দেখা আকাশ মনির। আকাশ মনির হাতে ফুটফুটে একটা মেয়ে! আকাশ মনি তার মেয়েকে বললো, মামনি এটা তোমার একটা আংকেল। বাতাশ কুমার তার পাশে দাড়ানো মেয়েটিকে আকাশ মনির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো তোমার ভাবি!! আমরা দুজন একসাথে পড়তাম! ইত্যাদি!! 

।২। 
এক দেশে এক প্রধানমন্ত্রী ছিল। সেই প্রধানমন্ত্রীর এক আস্থাভাজন বিত্ত মন্ত্রী ছিল। সে শুধু মালের হিসাব রাখতো। মালের হিসাব রাখতে রাখতে তার নাম হয়ে গেছে মাল বাবু। কোথায় কত মাল খরচ করতে হবে, কোথা হতে মাল আনা যাবে। কোথায় কত শুল্ক ধরলে দেশ মালে মালামাল হয়ে যাবে, কারা কারা মাল চুরি করলে কিছু বলা যাবে না বরং মাল চুরির সময় যদি মনে ব্যাথা পায় তবে কিভাবে শান্ডার তেল দিয়ে মালিশ করতে হবে এ বিষয়ে তার বিস্তর জ্ঞান। জ্ঞানী মানুষের চোখ ফাকি দেওয়া সহজ। আবার জ্ঞানী মানুষ অপকর্ম করিয়া বেরালেও তাহা ঢাকিতে বেশ ওস্তাদ। মাল বাবুর দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু দুষ্ট লোক লক্ষাধিক কোটি স্বর্ণমূদ্রা নিয়ে বিদেশ পলায়ন করিল তাহা মাল বাবু টেরই পেল না। তাহাকে জিজ্ঞাস করায় সে বললেন, এ তেমন কোন মুদ্রা না। এর চেয়ে তাজ মহল বানিয়ে চুন সুরকি ‘রাবিশ’ খরচ করে অনেক মুদ্রা নষ্ট করা হয়েছে।

বাজেটের সময় হয়ে গেছে। দূর দর্শন খুললে বাজেট নিয়ে দেখি বাজে টক করছেন জ্ঞানী গুনি বুদ্ধিজীবীরা। মালবাবু একদা এক রাতে বাজেট চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়লেন। চিন্তা করে বের করলেন মানুষের উপর করের বোঝা বাড়াতে হবে। মূল্যের উপর আরো মূল্য সংযোজন করতে হবে। তবে তার মাথায় সবচেয়ে যে নিষ্টা বুদ্ধিটা এলো সেটা হলো সঞ্চীত মুদ্রার উপর শুল্ক কাটা। মুদ্রা সঞ্চীতি সাধারণত বৃদ্ধ বা সিনিয়র সিটিজেনদের আর প্রবাসীদের কাজ। শেষ জীবনের সঞ্চয় কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রেখে মুনাফা ভেঙ্গে ভেঙ্গে খাওয়া। দেশে যারা অবস্থান করে তারা টাকা সঞ্চয়ের সময়ই পায় না, হাতে আসে আর খরচ করে। মাল বাবু বিষয়টা খেয়াল করলো। সঞ্চীত মুদ্রার উপর মুনাফা আসবে তা দিয়ে আরামে বসে খাবা সেটা তো হতে পারে না। তাতে অলসতা বাড়বে, মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নয় ছয় হয়ে গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া প্রায়, কোষাগার গুলো শুন্যের কোঠায় অবস্থান করছে। এই অবস্থায় তাদের তহবিল টইটুম্বুর করতে হবে। সে টাকা কে দেবে! জনগন আছে না! তাই বাজেটে সে ঘোষণা দিলো যে প্রতিষ্ঠান গুলো চুরি-লুটের কারনে ফান্ড সংকটে পড়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে মুদ্রা দিয়ে ফান্ড ভরে রাখতে হবে। কারন পরবর্তীতে চোর ডাকাতরা আবার যখন হানা দিবে তখন কি তারা খালি হাতে যাবে? আর ওরা যদি খালি হাতে যায় আমাকে কমিশন বাবদ কি দেবে, লবডংকা? তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা জমালে উক্ত টাকার উপর শুস্ক শুল্ক দিতে হবে। দেশে তো এ নিয়ে তুলকালাম কান্ড। নিজের ভাই বেরাদাররা পদত্যাগ দাবী করলো মাল মন্ত্রীর। কেউ কেউ ক্রিমিনাল চার্য গঠনের দাবী জানালো। কিন্তু যারা এত দাবী জানালো তারা তো জানে না মাল কোথায় উঠে বসে আছে। মাল যে কোথা উঠেছে তা জানে শুধু মালে। রাবিশ কোথাকার, ওরা মালের পাওয়ার সম্পর্কে জানেই না!!

।৩।
বাতাশ কুমার বিদেশে পড়াশুনার পাশাপাশি জব করতো। পড়াশুনা যখন শেষ হয় তারপরেও বেশ কিছুদিন চাকুরি করে বেশ টাকা কামিয়ে দেশে এসেছে। দেশে এসে চিন্তা করলো টাকা গুলো কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রেখে আবার বিদেশ চলে যাবে। এখান থেকে যে লাভের টাকা আসবে তা দিয়ে বাবা মায়ের স্বাচ্ছন্দে চলে যাবে। দেশে এসে দেখা হলো আকাশ মনির সাথে হাতে তার ফুটফুটে মেয়ে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখবে জমা তাও দেখে শুল্ক নামের বিষ পিপড়ার থাবা। মালের থিওরিতে মুদ্রা সঞ্চয় করে লাভের পরিবর্তে দেখা গেলো লস হবে। বাতাশ কুমার নিজেই বির বির করে বললো, জান আর মালের উপর কোন ভরসা নাই... জান চলে গেছে আরেকজনের সাথে আর মাল খাবে মাল বাবু........ 

ধার করা একটা কৌতুকঃ 
এক যুবককে পুলিশে ধরেছে। বিচারক যুবককে বলো
-তোমার বিরুদ্ধে দেশের অর্থ মন্ত্রীকে বেকুব বলার জন্য চার্জ গঠন করা হলো
যুবক-আমি কোন দেশের অর্থ মন্ত্রীকে বেকুব বলেছি তাতো বলি নাই! আমিতো উগান্ডার অর্থ মন্ত্রীকে বেকুব বলেছি। 
বিচারক-কোন দেশের অর্থ মন্ত্রী বেকুব আমরা জানিনা মনে করো? আমাদের কে দেখে কি তোমার আবুল মনে হয়??