ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Friday, August 31, 2018

কয়লা ধুলে সিস্টেম লস হয়!


কয়লা ধুলেও নাকি ময়লা যায় না। কিন্তু কয়লা ধুয়ে ধুয়ে আমাদের দেশে যে পরিমান কমে তাকে সিস্টেম লস বলা হয়!

কয়লার অভাবে গত জুলাই মাসে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কয়লা উধাও হওয়ার বিষয়টি নিয়ে শোরগোল তৈরি হয়। বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা দিয়েই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চলত

কয়লা উধাওয়ের ঘটনায় গত ২৪ জুলাই খনির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৯ জনকে আসামি করে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমানপ্রাথমিক তদন্তে এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার প্রমাণ পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলার ১৯ আসামিসহ পেট্রোবাংলার ৩২ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেমামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে যে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করে ২৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেনকিন্তু মামলার আসামি সাবেক এমডি হাবিব সাংবাদিকদের বলেন, আমি শুরু থেকেই বলে এসেছি, কয়লা চুরি বা দুর্নীতি হয়নিযেটুকু কয়লা গায়েব হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, সেটুকু প্রকৃত অর্থে সিস্টেম লস। আমাদের এখানে যেটুকু কয়লা উবে গেছে, তার পরিমাণ দশমিক শতাংশের বেশি হবে না, অথচ আন্তর্জাতিকভাবে থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সিস্টেম লস গ্রহণযোগ্য।



চোরের মায়ের বড় গলা শুনেছি। কিন্তু চোরের গলা এত বড় আগে কখনো দেখিনি শুনিওনি। ২৩০ কোটি টাকার কয়লা বিক্রি করে খেয়ে কিভাবে যে বলে কয়লা উবে গেছে! আসলে কয়লা উবে গেছে না আমাদের নীতি নৈতিকতা, আদর্শ, বিবেক উবে গেছে সেটাই এখন বিবেচ্য বিবেচ্য বিষয়। কয়লা উত্তোলনের পর থেকে বছর বছর কি পরিমান কয়লা উবে গেলো তার হিসাব বছর বছরই করা এবং কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিৎ ছিল। এত পরিমান কয়লা উধাউ হওয়ার পর যদি বলা হয় কয়লা উবে গেছে তা সরকার বুঝুক বা না বুঝুক জনগণ কি বুঝবে?   

আমাদের অর্থনীতির আমানতস্থল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখান থেকে রিজার্ভের টাকা চুরি হয়ে যায়, কোষাগারে জাল টাকা ধরা পরে, স্বর্ণের পরিমানে ও কোয়ালিটিতে ঘাটতি ধরা পরে। এ নিয়ে কয়েকদিন মাতামাতি হয়। এরপর হয় সরকার তার পিঠ বাঁচাতে যেন তেন একটা তদন্ত করে অথবা অভিযুক্তরা খোয়া যাওয়া সম্পদের ভাগ দিয়ে তদন্ত ধামাচাপা দিয়ে দেয়। আমরা যারা আম জনতা তারা কয়েকদিন সমালোচনা করে আবার নতুন কোন ইস্যূ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরি। অবশ্য এছাড়া আমাদের আর কিছু করণীয়ও থাকে না। আমাদের করনীয় যেটা সেটাইতো আমরা যথাসময়ে যথাযথ ভাবে করতে পারি না। আমরা ব্যর্থ হই নেতা নির্বাচনে, আমরা ব্যর্থ হই জবাবদিহিতা আদায়ে, আমরা প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হই প্রতিবাদে।

আমাদের উচিত সিস্টেমকে পরিবর্তন করা এবং সিস্টেমকে আপগ্রেড করা। যে সিস্টেমের কারনে ২৩০ কোটি টাকার কয়লা উবে যায় বা সিস্টেম লস হয় সেই সিস্টেমের পরিবর্তে নতুন সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন যাতে লুট হয়ে না যায়। যে সিস্টেমের কারনে সোনায় খাদ পাওয়া যায় সে সিস্টেম চাই না। যে সিস্টেমের কারনে রিজার্ভের টাকা গায়েব হয়ে যায়, যে সিস্টেমের করনে রিজার্ভে জাল টাকা পাওয়া যায় সেই সিস্টেম বদলানো এখন জরুরী। রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিনীত অনুরোধ, সিস্টেম বদলান, নয়তো আপনারাই একদিন বদলে যাবেন! জনগন সব বোঝে, তারা বোকা নয়, তাদের চোখে ধুলা দিবেন না, চোখ থেকে ধুলা একসময় সরবেই। তখন আর কোন উপায় থাকবে না। কথাগুলো শুধুযে রাষ্ট্রযন্ত্রকে জনগন বলছে তা কিন্তু নয়, যারা রাষ্ট্রের চালকের আসনে বসতে চান বা স্বপ্ন দেখেন তারাও সতর্ক হন। অতীতে যা করেছেন তার ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে, ভবিষ্যতে কি করবেন তা ভালো ভাবে ভেবে চিন্তে তবেই স্বপ্ন দেখুন। আর ভুলে গেলে চলবে না, কয়লার গর্ভে আছে আগুন। আগুন সবাকিছুকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে।

Sunday, August 26, 2018

দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকায় প্রকাশিত আমার কলাম ও কবিতা

দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকায় ০৪ আগষ্ট ২০১৮ তারিখে ৪ পাতায় প্রকাশিত।
লিংকঃ http://amadernotunshomoy.com/newsite/2018/08/04/%E0%A6%8F-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%A4/#.W4J8w84zapq

দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকায় ১২ আগষ্ট ২০১৮ তারিখে ৪ পাতায় প্রকাশিত।
লিংকঃ http://amadernotunshomoy.com/newsite/2018/08/12/%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%8F%E0%A6%96%E0%A6%A8%E0%A6%87-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%B9%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE/#.W4J9EM4zapq

দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকায় ১৪ আগষ্ট ২০১৮ তারিখে ৪ পাতায় প্রকাশিত।
লিংকঃ http://amadernotunshomoy.com/newsite/2018/08/14/%E0%A7%A7%E0%A7%A6-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%A8%E0%A7%9F-%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%AC%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A7%8B%E0%A6%95/#.W4J9N84zapq

দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকায় ১৯ আগষ্ট ২০১৮ তারিখে ৪ পাতায় প্রকাশিত।
লিংকঃ http://amadernotunshomoy.com/newsite/2018/08/19/%E0%A6%AC%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%81/#.W4J7oc4zapq

দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকায় ১৫ আগষ্ট ২০১৮ তারিখে ৪ পাতায় প্রকাশিত।
লিংকঃ http://amadernotunshomoy.com/newsite/2018/08/25/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87/#.W4J7rs4zapp






Friday, August 24, 2018

কোরবানিটাকে কোরবানি দেবেন না

সম্প্রতি দেখা গেছে কাঙ্গালি ভোজের অনুষ্ঠানে কাঙ্গালিদেরই বের করে দেয়া হয়। দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রানসামগ্রী দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয় না, দোস্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়। যে বিষয় যে কারনে সে বিষয়টা আর বিষয়ে থাকে না। তাই কোরবানিটা সঠিক ভাবে করুন। কোরবানিটাকে কোরবানি দিয়ে দেবেন না।

সামনে কোরবানির ঈদ। কোরবানির রয়েছে বিশাল তাৎপর্য। কোরবানি শব্দের অর্থ হচ্ছে নৈকট্য, ত্যাগ, উৎসর্গ। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে ১০ জিলহজ হতে ১২ জিলহজ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গৃহপালিত হালাল পশু আল্লাহ নামে উৎসর্গ করাকে কোরবানি বলে। কোরবানির মাধ্যমে নিজেদের নফস কে পবিত্র করা যায়। কোরবানি ঈদকে ত্যাগের উৎসবও বলা হয়ে থাকে।

ত্যাগের উৎসবের আরো কিছু তাৎপর্যও আছে। কোরবানি দেয়ার জন্য হালাল পশু নির্বাচন করতে হবে, হালাল উপার্যন হতে হবে, অসহায়, গরীব দুঃখিদের মাঝে গোস্ত বিতরণ করতে হবে ইত্যাদি। আর এসবই করতে হবে আল্লাহকে রাজী খুশি করার জন্য।

আমাদের দেশে ধর্মভীরু লোকের সংখাই বেশি কারন আমরা মুসলিম প্রধান দেশ। তাই কোরবানির পশুটা হালাল টাকায় কেনার চেষ্টা করি, বাকী সব ঘুষ, দুর্নীতির টাকায় কিনি। কেউ কেউ পশুটাও ঘুষ, দুর্নীতির টাকায় কিনি প্রতিযোগিতা করার জন্য। কোরবানির তাৎপর্যকে কোরবানি দেয়ার করনেই এমনটা হয়। কোরবানি ঈদের আগে বিশেষ ডিসকাউন্ট দেয়া হয় ফ্রিজের উপর। বিশাল সাইজের ফ্রিজ কিনে কোরবানির গোস্ত ভরে রাখি। সেই গোস্ত পরের রমজানে নামিয়ে ইফতারের নানা আইটেম করে গর্বের সাথে বলি, এটা কোরবানির পশুর মাংস, খান অনেক সোয়াব হবে। কোরবানির পশু জবেহ করার পর একটা করে আস্ত রান পাঠিয়ে দেই এক বিয়াইর বাড়ি গরিব দুস্থদের সামনে দিয়ে। তার পর যা থাকে তা নিজের ফ্রিজে রেখে অবশিষ্ট কিছু থাকলে দেই গরিব দুস্থদের। গরিব দুঃখিদের না দিয়ে নিজেরা রেখে দেয়ার মানসিকতাটা কোরবানি দেয়া উচিত।

ত্যাগের মহিমায় আমরা এতটাই উদ্ভাসিত যে হালাল টাকায় গরু কেনা ত্যাগ করে ফেলেছি, গরিব দুঃখিকে গোস্ত দেয়া ত্যাগ করেছি, মহান আল্লাহকে খুশি করা ত্যাগ করে ফেলেছি, নৈকট্য লাভের ইচ্ছে ত্যাগ করে ফেলেছি, উৎসর্গ করার মহিমাটা ত্যাগ করে ফেলেছি।

যেভাবে ত্যাগ করা শুরু করেছি আমরা তাতে একসময় আমরা হয়তো কোরবানিটাকেই কোরবানি দিয়ে ত্যাগ করে ফেলবো। আসলে সবকিছু ত্যাগ করতে নেই। হিংসা, ঘৃণা, লোভ-লালসা, দুর্নীতি, ত্যাগ করুন তবেই আপনার কোরবানি সার্থক হবে।

আইন পাসের এখনই সুযোগ, হেলায় সুযোগ হারাবেন না

একটি দূর্ঘটনা নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন দাবীর চিত্রটাই বদলে দিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎই চেষ্টা করা হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন পাসের। কিন্তু আইনে কঠোর কিছু থাকলেই বেকে বসতেন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী যে কিনা একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা। পরিস্থিতি তার অনুকুলে না দেখলেই ধর্মঘটের ডাক দিতেন। দেশ হতো অচল। অগত্যা সরকার আইন পাস করা থেকে সরে আসতে বাধ্য হতো। দূর্ঘটনার পর সেই মন্ত্রী কাম শ্রমিক নেতার একটি নির্লজ্জ হাসি দেশের পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। তাই এখনই সময় সড়ক পরিবহন আইন পাসের, হেলায় এই সুযোগ হারানো ঠিক হবে না। 
পরিবহন শ্রমিকদের কাছে দেশবাশী অনেকটা জিম্মি। যাদের কালো টাকা নেই বা কালো টাকা কামানোর সুযোগ নেই তাদের এক বা একাধিক গাড়িও নেই। সেই সব সৎ ও নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য গণপরিবহনই একমাত্র ভরসার জায়গা। কোন অযুহাতে যদি গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয় তাহলে অনেক মানুষের জীবণ যাত্রা অনেকটা থমকে যায়। আর শ্রমিক নেতা সেই সুযোগটাই সবসময় ব্যবহার করছিলো এতোদিন। এখন যা পরিস্থিতি তাতে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তার পশ্চাদ দেশের নিচে আর ক্ষমতাধর চেয়ারটা থাকবে না। শ্রমিকদের খিস্তিখেউর শোনা সহ্য করতে পারবে কিন্তু মন্ত্রীত্বের চেয়ারটা হারানোর ব্যথা সহ্য করতে পারবে না। তাই এখনই সময়।
দেশে সড়ক নিরাপত্তা বাস্তবায়নে শুধু গণপরিবহণ শ্রমিকরাই একা দায়ী নয়। সেই সাথে দায়ী অন্য গাড়ির মালিক-চালকরাও। যেমন, মটর সাইকেল মালিকরা যেখান দিয়ে ছিদ্র পায় সেখান দিয়েই ঢুকে পড়ে। আমাদের দেশের প্রভাবশালীরা উল্টো রাস্তায় চলতে খুব পছন্দ করে, এতে আমি একটা হনু হনু ভাব থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিক্সাও একটা সমস্যা। রিক্সাওয়ালারা কোন শৃঙ্খলা মানতে নারাজ। সর্বপরি আমরা জনগণতো আছিই। ফুট ওভার ব্রিজ থাকলেও আমরা ব্যবহার করি না, জেব্রা ক্রসিং থাকলেও যেখান দিয়ে মন চায় হাত উঠিয়ে রাস্তা পার হই, নির্ধারিত স্টপেজ মানি না যেখানে নামা প্রয়োজন সেখানেই বাসের গায়ে থাপ্পর দিয়ে বলে বসি ‘ওস্তাদ একটু ব্রেকে পাও দেন’। ফুটপাত দিয়ে হাটতে ইচ্ছে করে না। ফুটপাথ দিয়ে না হাটার কিছু কারনও আছে যেমন, ফুটপাথ হকারদের দখলে থাকে সবসময়, যেখান দিয়ে ফাকা সেখানে থাকে ময়লার স্তুপ। তবে সবথেকে বেদনাদায়ক বিষয় হলো আমাদের আইন না মানার মানসিকতা।
প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। খসড়া আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় হলো-ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। আগে যেখানে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজনই ছিল না। শুধু রং চিনলে এবং গরু ছাগল চিনলেই লাইসেন্স দেয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হত। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। গাড়ির হেলপার বা কন্ডাক্টরের (ভাড়া আদায়কারী) লাইসেন্স থাকাও বাধ্যতামূল। হেলপার ও কন্ডাক্টরের যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, তাকে লিখতে ও পড়তে পারতে হবে। হেলপার বা কন্ডাক্টরের লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের কারাদন্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সংরক্ষিত নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নির্ধারিত আসনে বসতে না দিয়ে কেউ ওই আসনে বসলে এক মাসের কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। চালক মোবাইল ফোন বা এরূপ কোনও ডিভাইস ব্যবহার করলে এক মাসের জেল বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড, বেপরোয়া গাড়ি চালালে ২ বছরের কারাদন্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড, বেপরোয়া গাড়ি চালানোয় দুর্ঘটনা ঘটলে তিন বছরের কারাদন্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধার রাখা হয়েছে, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত নিহতের ঘটনা ঘটলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং আমলযোগ্য অপরাধে বিনা পরোয়ানায় আটকের বিধান রাখা হয়েছে। নতুন আইনে ৬ মাসের কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকার বেশি জরিমানা হলে সেটি জামিন অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবে অপরাধীকে। আর অতিরিক্ত ওজন বহনে মালিক ও চালকের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে আইনে। পাঁচ টনের ট্রাক যদি ১৫ টন ওজন বহন করে সে ক্ষেত্রে তিন বছরের কারাদন্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড, জাল লাইসেন্স ব্যবহার করলে চালক ও হেলপারের দুই বছরের কারাদন্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালালে সর্বোচ্চ তিন মাসের জেল (কারাদন্ড) এবং ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা। মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে চালক ও সহযাত্রীর দুজনেরই হেলমেট থাকতে হবে, গাড়ীর সামনে ও পেছনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে কোনও কিছু বহন করা যাবে না, চলন্ত অবস্থায় প্যাসেঞ্জার ওঠা-নামা করানো যাবে না, সাইড করে গাড়ি রেখে যানজট সৃষ্টি করা যাবে না, উল্টো পথে বা রং সাইট দিয়ে মোটর সাইকেল চলাচল করতে পারবে না।
আইন পাস নাহয় হলো। এবার প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ ও আইন মানার অভ্যাস গড়া। আমাদের দেশে আইন প্রয়োগ একটা বড় সমস্যা। যারা আইন প্রয়োগ করবেন তাদের মধ্যে চাদাবাজীর প্রবণতা বেশি। গাড়ি থামিয়ে কালেকশন করবেন না আইন মানতে বাধ্য করবেন? দুটি তো একসাথে চলতে পারে না। আর আইন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা হচ্ছে ক্ষমতা। আমাদের ধরলেই পরিচয় দেই আমি সাংবাদিক, আমি আইনজীবী, আমি শিক্ষক, আমি ডাক্তার, আমি অমুক নেতার শালার চাচতো ভাইর বন্ধু, আমি পুলিশ কর্তার দুঃসম্পর্কের নিকট আত্মীয় ইত্যাদি। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাছবিচার করতে করতে কম্বলের মত পশমই থাকে না। আর যাদের উপর প্রয়োগ হয় তাদের কোন ক্ষমতা নেই বা অন্যায়টাকে টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে ফেলেন। 
তবে যে যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আইন পাস হলে কিছুটাতো কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করা হবে। দু-চার জন ক্ষমতা ও চাতুরতা দিয়ে বেরিয়ে গেলেও কিছু ফল পাওয়া যাবে। তাই এখনই সময় আইন পাস করার এবং আইন ব্যবহার করার। আবারও বলছি, হেলায় সুবর্ণ সুযোগ হারাবেন না, প্রিয় রাষ্ট্রযন্ত্র।

Wednesday, August 15, 2018

কোরবানির পশুবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি রোধে চাই যুদ্ধ

সম্প্রতি একটা স্লোগান দিয়ে দেশে একটা যুদ্ধ হয়ে গেলো। স্লোগানটা ছিলো মাদকের বিরুদ্ধে চল যাই যুদ্ধে। সেই যুদ্ধে নেমে বিনা বিচারে অনেককেই হত্যা করা হয়েছে। আমি এধরনের হত্যাকান্ডের বিরোধী ছিলাম এখনও আছি। তবে যুদ্ধটাকে আমি সমর্থন করি অন্যভাবে। যুদ্ধটা হওয়া উচিত শত্রুদের বিচারের মুখোমুখি করার, মাদক নির্মূল করার। মাঝে মাঝে এ ধরনের যুদ্ধের প্রয়োজন আছে। এখন এমনই একটি যুদ্ধ প্রয়োজন কোরবানির পশুবাহী ট্রাক-ট্রলারে চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে। তবে এ যুদ্ধে চাঁদাবাজ ও তাদের গডফাদারদের ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করা হোক, ক্রসফায়ারের নামে হত্যাকান্ড নয়। 

এবার কোরবানির ঈদ ২২ আগষ্ট। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে দেশে এবার ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৭১ লাখ। ২০১৬ সালে দেশে সব ধরনের পশু মিলিয়ে কোরবানির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩ লাখ। ২০১৭ সালে পশু কোরবানি হয় ১ কোটি ৫ লাখ। সে হিসাব অনুযায়ী এবার ৫ বা ১০ ভাগ কোরবানি বেশি হলেও ১ কোটি ১৬ লাখ পশু যথেষ্ট বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এ বিশাল সংখ্যার পশু দেশের নানান জায়গায় কৃষকরা পেলে পুষে বড় করেছে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় হাটে নিয়ে বিক্রি করলে কৃষকরা ভালো দাম পাবে। সেই আশায় কৃষকরা পশুগুলো ট্রাকে করে সড়ক পথে ও ট্রলারে করে নদীপথে নিয়ে যাবে বিভিন্ন হাটে। দেশের চাঁদাবাজরা সেই সুযোগেরই অপেক্ষায় ওৎ পেতে আছে। কৃষকদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের পশুবাহী যানের পথ রোধ করবে। গুণতে হবে মোটা অংকের টাকা নইলে এগুতে দিবে না। গাড়ির সাথে চাঁদাবাজরা দেশকেও এগুতে দেয় না। দেশে চাঁদাবাজির সঠিক পরিসংখ্যান হয়তো কারো কাছেই নেই। কিন্তু কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজরা কালেকশন করে বিনা পরিশ্রমে আয় করে ভাগবাটোয়ারা করবে।

চাঁদাবাজির সাথে যোগ হবে ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরি। সারা বছর হারভাঙ্গা পরিশ্রম করে কৃষক যে টাকা আয় করবে মূহুর্তের মধ্যে তা ম্লান করে দেবে এই অশুভ শক্তি। এই অশুভ শক্তির কারনে বাড়বে পশুর দামও। তাই চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, চোর, ডাকাত রুখতে চাই একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে জয়ী হতে পারলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালি হবে, কৃষকের হাত শক্তিশালী হবে, দেশ হবে সমৃদ্ধ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত হবে এবার অশুভ এ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার। তবে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা নয়, আইনের আশ্রয়ে এনে বিচার করাই হবে সঠিক কাজ। আমাদের যোদ্ধারা চাইলেই পারে। দেখিয়ে দিক তাদের দেশপ্রেম, যোগ্যতা।    

Tuesday, August 14, 2018

নদী শুধু ভূমি-বাড়িই নয় ভাঙ্গছে হৃদয়ও

নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশ। দেশের নদী বেষ্টিত জেলাগুলোর মধ্যে শরীয়তপুর একটি। নদী আছে তাই পানি আছে, পানি আছে তাই স্রোত আছে, স্রোত আছে তাই ভাঙ্গনও থাকবে। কিন্তু ভাঙ্গনের তীব্রতাই বিবেচ্য বিষয়। শরীয়তপুর জেলায় পদ্মা নদী নড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা দীর্ঘদিন যাবৎই ভাঙ্গছে। কিন্তু সম্প্রতি ভাঙ্গনের তীব্রতা এতটাই বেড়েছে যে তা সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। পদ্মা যখন ভাঙ্গে তখন শুধু ভূমি-বাড়িই ভাঙ্গছে না, ভাঙ্গছে হৃদয়ও।
শরীয়তপুর জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত নড়িয়া ও জাজিরায় পদ্মা নদী ভাঙনে ২০ হাজার ৮৯০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর গৃহহীন হয়েছে ৩ হাজার ৮৯০ পরিবার। পাঁচ বছরে ফসলি জমি বিলীন হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০টি, উচ্চ বিদ্যালয় ছয়টি, সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য স্থাপনা। জাজিরার কলমিরচর বাজার, কায়ুম খার বাজার, দুর্গারহাট বাজার, পালেরচর বাজার, নড়িয়ার ওয়াপদা বাজার, বাঁশতলা বাজার, চন্ডিপুর বাজার পুরো বিলীন হয়ে গেছে। সুরেশ্বর বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে এবং হচ্ছে।
সরকারী তথ্য থেকেই বুঝাযায় ভাঙ্গনের তীব্রতা কতটা প্রবল। আমরা সবাই জানি সরকারের তথ্য ভান্ডারে সবসময় সব তথ্য পৌছায় না। সে হিসাবে ভাঙ্গনের পরিসংখ্যান আরো অনেক বড়। পদ্মার ভাঙ্গনে শরীয়তপুর জেলার হাজার হাজার হেক্টর ভূমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভূমির সাথে গেছে বাড়ি ঘর, গাছপালা, মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট, বাজার, লঞ্চঘাট, কবরস্থান। অনেকেই আছেন যারা অন্যত্র বাড়ি করতে পারবেন এবং করেছেনও। কিন্তু পিতার কবর, সন্তানের কবর, স্বজনের কবর কি আর ফিরে পাবেন? মানুষ নিঃস্ব হয়ে সব বিক্রি করে দিলেও কখনো তার স্বজনের কবরের জায়গাটুকু বিক্রি করে না। তাইতো বাড়ি ঘর অন্যত্র সড়িয়ে নেয়ার সময় স্বজনের কবর ধরে আর্তনাত করতে দেখা যায় ভাঙ্গন কবলীত মানুষকে।
একটি বাড়ি শুধু রাত্রি যাবনের একটি আবাসই নয়। এর সাথে জড়িত অনেক কিছু। একটি উঠান, একটি রান্না ঘর, একটি গোয়াল ঘর, একটি কাচারি ঘর, একটি বাগান মানুষের বড় হওয়ার সাথে জড়িত। যে উঠানে আছাড় খেয়ে শিশুটি হাটতে শিখেছে, যে ঘরটিতে গৃহিনী প্রতিদিন রান্নায় ব্যস্ত থাকতো, যে কাচারি ঘরটিতে মেহমানদের আনাগোনায় মুখরিত থাকতো, যে বাগানের ফল খেয়ে কিশোর-কিশোরিরা দুরন্তপনায় মেতে থাকতো, যে ঘরটিতে ভাই-বোন একসাথে বড় হয়েছে সেই ঘরটি, সেই আঙ্গিনা, সেই বাগান নদী ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। নদী কি শুধুই ভূমি-বাগান ভেঙ্গে নিচ্ছে, ভাঙ্গছে কত মধুর স্মৃতি, কত মায়া কত মমতা। তাইতো আক্ষেপ করে অনেকেই বলছে, আগুন লাগলে ঘর পোড়ে, ভিটাটা থাকে কিন্তু ভাঙ্গনে কিছুই থাকে না।
ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়লে শুরুহয় দৌড়ঝাপ। বাড়ে আন্তরিকতা, বাড়ে বরাদ্দ। কিন্তু টেকসই পরিকল্পনা না থাকলে এ ভাঙ্গন কি থামবে? ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন। রেমিটেন্স প্রেরণে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলা দেশের দ্বিতীয় স্থানে আছে। নড়িয়াবাসী যেহেতু সরকারের জন্য এতকিছু করছে সেখানে সরকারেরও অনেক কিছু করার আছে। সর্বহারা মানুষগুলোর পাশে সরকারের এখনই দাড়ানো উচিত। নইলে সর্বহারা মানুষগুলোর অভিষাপ থেকে বাঁচতে পারবে না সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা।

Sunday, August 12, 2018

দশদিন নয়, ট্রাফিকের হোক সারা বছর

সারা দেশে একযোগে গত ৫ অগাস্ট থেকে শুরু হয় ট্রাফিক সপ্তাহ যা সাতদিন পর শনিবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন দিন সময় বাড়িয়ে ১৪ আগষ্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। বিদেশে যেখানে ৯৮ শতাংশ মানুষ আইন মানে বাংলাদেশে সেখানে ৯০ শতাংশ মানুষই আইন মানেনা। এই ৯০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাত বা দশ দিন কেন, সাত মাসও যথেষ্ট নয়। আসলে দশদিন নয়, এই কার্যক্রম সারা বছর এবং বছর বছরই অব্যাহত রাখা উচিত। এতে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসতে পারে, আসতে পারে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও আইন মানার প্রতি দায়িত্ববোধ বোধ।

ট্রাফিক সপ্তাহের মাত্র সাত দিনে মামলা হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৪টি আর জরিমানা আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯ হাজার ২২৩ টাকা। এ সময় ৪৬ হাজার ৭২৩ জন চালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও তিন হাজার ৭৭৭টি যানবাহন আটক করা হয়েছে যা আমাদের আইন না মানা ও আইনের প্রতি অবজ্ঞারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। 

আমাদের দেশের রাস্তার অপ্রশস্ততার কারনে, প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি হওয়া, রাস্তা দিয়ে অনিয়ন্ত্রিত যাত্রী পারাপারের কারনে, বাস স্টপেজের অপ্রতুলতা, যত্রতত্র গাড়ি রাখায় এবং অনেক বেশি মোটরসাইকেল চলাচল করায় সড়কে সর্বদা বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। সেই সাথে আছে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি, সড়কের পাশে কমিউনিটি সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বড় বড় বিপনীবিতান, বাজার, পেট্রোল পাম্পের মত স্থাপনার কারনেও রাস্তায় বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। এত সব অপ্রতুলতার কারনে আমরা যদি হাত গুটিয়ে বসে থাকি তাহলেতো চলবে না। সীমিত সম্পদের সদ্যবহার করার মানসিকতা গড়ে তুলতে পারলেই আমাদের রাস্তায় শৃঙ্খলা আসতে পারে। 

মাত্র সাত দিনে বিশাল সংখ্যায় মামলা, বিপুল পরিমান টাকা আদায়ের কারনে এ কয়দিন রাস্তায় অবৈধ গাড়ি চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। সাজা ও জরিমানার ভয়ে এখন অবৈধ চালকরা গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছে না। ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন কিশোর-যুবক শ্রেণীর মোটর বাইক চালকরা রাস্তায় নামতে ভয় পাচ্ছে। ফলে রাস্তায় আগের চেয়ে অনেক বেশি শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। তার মানে অনেকেই এখন আইনকে ভয় পাচ্ছে, ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ছে। এই শ্রদ্ধাবোধ অব্যাহত থাকবে যদি সারা বছর পুলিশ রাস্তায় অবস্থান করে সকলকে আইন মানতে বাধ্য করে, কোন প্রকার পেশি শক্তি, ক্ষমতা ও অবৈধ প্রস্তাবকে প্রশ্রয় না দিয়ে। 

তাই দশদিন নয়, পুলিশের হোক সারা বছর। আর আমাদেরও হোক সারা বছর। পুলিশ যেমন সারা বছর গাড়ি ধরবে, মামলা দিবে, জরিমানা করবে, শাস্তি দিবে তেমনি আমরাও সারা বছর পুলিশের সক্রিয়তার কারনে আইন মানবো। তবেই দেশে শান্তি ফিরে আসবে, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল ছোট হতে হতে নাই হয়ে যাবে। অন্য দেশ আমাদের দেশ নিয়ে গর্বের সাথে বলবে, দেখ, বাংলাদেশের মানুষ আইন মানে, আইনকে শ্রদ্ধা করে, ওরা কত সভ্য। 

Wednesday, August 1, 2018

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভাষাগুলো কার । এ ভাষা আমাদের সন্তানের হতে পারে না!

সম্প্রতি ঢাকার এয়ারপোর্ট সড়কে একটি মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে যায়। যদিও এটাকে দূর্ঘটনা বলা ঠিক হবে না। একদল অদক্ষ চালক একে অপরের সাথে প্রতিযোগীতায় মেতে একটি বাস রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা স্কুল থেকে বাসয় যাওয়ার জন্য অপেক্ষারত শিক্ষার্থীদের উপর তুলে দেয়। এতে দুটি তাজা প্রাণ ঝড়ে যায় মূহুর্তের মধ্যে। আরো অনেকেই আহত হয়।

সহপাঠীদের হারিয়ে শোকে কাতর ছাত্র-ছাত্রীরা নেমে আসে রাস্তায়। শুরু হয় এক অভাবনীয় আন্দোলন যাতে সমর্থন দেয় বিবেকবান সকল মানুষ। আর আন্দোলনের আগুনে এক বালতি হাসিমাখা ঘি ঢেলে দেন শ্রমিক ফেডারেশন নেতা মন্ত্রী শাহজাহান খান। তার হাসিতে যা হবার তাই হলো। আন্দোলন হলো আরো বেগবান। এই পর্যন্ত যা ঘটছে তার সবই ঠিক আছে। কিন্তু কিছু ছাত্র-ছাত্রী দেখলাম হাতে লেখা পোষ্টার নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আবার কেউ কেউ রাস্তায় লিখে রেখেছে। কি লিখে রেখেছে সেটা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য।
মন্ত্রীর হাসি যেমন আন্দোলনে ঘি ঢেলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করিয়েছে তেমনি ছাত্র-ছাত্রীদের এমন লেখা এবং এমন ভাষা আন্দোলনে পানি ঢেলে দিয়েছে, ঘৃণার পাত্র-পাত্রী হয়েছে।
আসলে অনেকেই ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছেন। আবার আমার এই লেখাটা যারা পড়ছেন তাদের অনেকেই হয়তো দেখেননি। তাই তাদের উদ্দেশ্যে কিছু শব্দ উজ্জ রেখে লিখছি-
এক ছাত্রীর হাতে একটা কাগজে লিখা-পুলিশ কোন চ্যা... বা...
একদল ছাত্রের হাতে-কমরেড, রাজনীতি মেধায় লাথি মারছে....রাজা আছে নীতি নাই....নেতা চো.. টাইম নাই।
এক ছাত্রী হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে, তাতে লেখা-লাঠির ভয় দেখাবে না....লাঠি একদম ভরে দেব..
কিছু ছাত্র-ছাত্রী দাড়িয়ে আছে আবার কেউ কেউ লিখছে। সেখানে লেখা আছে-লাঠি চার্জ চু... না...।আরেক জায়গায় লেখা-পুলিশ কোন চ্যা...বা....
এক ছাত্র কাগজে লেখা পোষ্টার নিয়ে বসে আছে। লেখা-মদ খাবা আর পুলিশ চো...বা..

এবার বলুন এই ভাষা কি আমাদের সন্তানের হতে পারে! আমাদের সন্তানরা স্কুল-কলেজে গিয়ে কি শিখছে? এর দায়ই বা কার। এর দায় হতে আপনি, আমি কি এড়িয়ে যেতে পারি। এগুলোকি ছাত্র-ছাত্রীদের ভাষা হতে পারে? তারা শিক্ষা নিচ্ছে। যে পর্যায়ে আছে তাতে তারা শিক্ষিত। কেউ কেউ এখান থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে, কেউ হবে শিক্ষাবিদ, কেউ হবে বিজ্ঞানী, কেউ হবে লেখক। তাদের যে ভাষা তা এখন অসভ্য লোকেরাও ব্যবহার করে না। আমরাতো তাদের সভ্য জগতের লোক ভাবি, তারাইতো আগামীর সভ্য জাতি। কিন্তু তাদের হাতের লেখা দেখে খুবই হতাশ হতে হয়। আরেকটা কথা না বললেই নয়। হাতের লেখার শ্রী ও ভালো না। যদিও ভালো ছাত্র হতে, ভালো মানুষ হতে হাতের লেখা ভালো হতে হয় না। তবুও তাদের লেখার চর্চা দেখে মনে হচ্ছে তাদের মেধার জোরও কম। নইলে এমন লেখা কিভাবে লেখে?

আমি কোন ভাবেই ছাত্রদের এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে নই। তবে তাদের এমন আচরন দেখে হতাশ। এর ভেতর আমরা ভালো ছাত্রদের কর্মকান্ডও দেখেছি। অনেক ছাত্র হাতে ঝাড়ু নিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা কাচের টুকরো সরাচ্ছে, রাস্তা পরিস্কার করছে। অনেকে ভালো ভালো কথা লিখে দাড়িয়েছে, যেমন-‘যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ। যদি তুমি রুখে দাড়াও, তবে তুমি বাংলাদেশ’। এমন কথা দেখলে মনে সাহস জাগে, ভালো লাগে। আসলে ভালো ছাত্রগুলোর শান্তিপূর্ণ আচরণ, ভালো কর্মকান্ডই তাদের আন্দোলনকে সকলের কাছে পৌছে দিবে এবং সমর্থন কুড়াবে।