ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Saturday, March 28, 2015

শোক সংবাদ
মাহমুদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদারের ইন্তিকাল : আজ দাফন

শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমেরিকা প্রবাসী মোঃ সেলিম আহমেদ ও মেজবাউর রহমান উজ্জলের পিতা মোতাহার হোসেন তালুকদার গত বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকালে আমেরিকায় ইন্তিকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। মৃত্যুকালে দুই পুত্র, এক কন্যা, স্ত্রীসহ বগু গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। আজ সোমবার বাদ আছর মরহুমের মাহমুদপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে দাফন করা হবে। সকল ধর্মপ্রাণ স্বজন-শুভাকাংখিদের জানাজায় অংশ নেয়ার জন্য বিনীত ভাবে আহবান জানানো হলো।

Monday, March 23, 2015

আমার মায়ের ডাক ও মুখ

মা... মা... মা...। পৃথিবীতে যত কিছু আছে মায়ের সাথে কোনটারই তুলনা করা যায় না। পৃথিবীতে যত কথা, যত শব্দ আছে মা শব্দের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন শব্দ খুজে পাইনি। এত মধুর, এত সুরেলা, এত মমতা মাখা, এত আবেগী একটা শব্দ যে মা ডাকাতেই তার স্বাদ পাওয়া যায়। অন্য কোন ডাকে বা অন্য কোন শব্দ উচ্চারনে এত প্রশান্তি লাভ করা সম্ভব নয়। 
রওশননারা বেগম ১৯৪৭-২০১২
আমার মা নেই। বিগত ৩০ মার্চ ২০১২ তারিখে আমার মা আমাদের চির বিদায় দিয়ে পৃথিবী থেকে চলে গেছে। কোন শান্তনাই মায়ের অভাব পুরন করতে পারেনি। কোন ডাকেই মায়ের মমতা মাখা আবেগ পূর্ন করতে পারেনি। কোন কিছুতেই মন শান্ত হয় না, আজও শান্ত হয়নি, আর হবেও না জানি। কারন মা তো আর ফিরে আসবে না। মায়ের কাছে শত আব্দার করেছি ফেরায়নি কোন আব্দারই। কত অভিমান করেছি মা মনে রাখেনি। শত রাগের পরেও খাবার সময় ঠিকই রাগ ভেঙ্গে ডাক দিয়েছে। বাড়িতে ফিরতে দেরি হলে খোঁজ নিয়েছে। মুখ ভারি দেখলে শান্তনা দিয়েছে। ভিতরে হিংসা দেখলে উপদেশ দিয়েছে। এমন উদার গর্ভধারিনী জননী ছাড়া আর কে হতে পারে? এমন নির্লোভ ভালবাসা মা ছাড়া আর কে দিতে পারে? সবই উপলব্ধি করতে পারছি এখন যখন মা আর কাছে নেই। মায়ের জন্য কিছুই করতে পারিনি-অপরাধবোধ কাজ করে প্রতিনিয়ত। কিন্তু মার কোন দিন কোন চাওয়া ছিল না আমার কাছে। কোন দিন কিছু চায়ওনি। আর মায়েরা কোনদিন কিছু চায়ও না, শুধুই দেয়। দিতে দিতে নিঃশেষ হয়ে যায় তবুও দেয়া ফুরায় না। মাকে আর কিই বা দিব, কিই বা দেয়ার আছে আমাদের। মায়ের মুখের মধুর ডাক এখনও কানে বাজে। আমার মা আমাকে বাবা বলেই ডাকতো। কি মধুর সে ডাক। এখন আর ডাকে না কিন্তু প্রতিনিয়ত প্রতিধ্বনি বাজে কানে। এখনও সমাধির পাস দিয়ে যাওয়ার-আসার সময়, নিরবে নিভৃতে থাকার সময়, একলা পথ চলার সময় শুনি সেই মধুর বাবা ডাক। আমার মা আমাকে এতটাই বাবা ডেকেছে যে মায়ের মৃত্যুতে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি মা হারাইনি আমার আদরের সন্তান হারিয়েছি। মা হারিয়ে প্রথমে ডুকরে ডুকরে কেদেছি দেখে অনেকেই শান্তনা দিয়েছে। আস্তে আস্তে ডুকরে কাদা থেমে গেছে। এখনও কাদি। তবে নিরবে নিভৃতে। বুকের ভিতর মা হারানোর ব্যাথা যে কত কষ্টের তা পরিমাপের কোন যন্ত্র নেই, প্রকাশের কোন ভাষা নেই। এখন আর চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়ে না। মুখ ফ্যাকাশে হয় না। কিন্তু বুকের ভিতর চিন চিন ব্যাথা হয়, কথা জড়িয়ে যায়, অনুভব করি তখন গর্ভধারিনী মা আর নেই, আর আসবে না। সব ব্যাথা ভুলে যাওয়া যায় না। আঘাতের ব্যাথা সেরে যায়, বন্ধুদের দেয়া কষ্ট মুছে যায়, মা হারানোর ব্যাথা শত চেষ্টায়ও ভুলে থাকা যায় না। ভুলবই বা কি করে? মায়ের যে অবদান, মায়ের যে আত্ম ত্যাগ, মায়ের যে ভালবাসা, মায়ের যে উদারতা, মায়ের যে মমতা তার সাথে তো কোন কিছুরই তুলনা করা যায় না! তাই মা হারানোর ব্যাথা কখনো যায় না, যাবেও না। এখন দুঃখ পেলে মায়ের দেয়া শান্তনাগুলো কানে বাজে, এখনো কষ্ট পেলে মায়ের কথাগুলো মনে পরে, এখনও মনে হিংসা-ক্রোধ দানা বাধলে মায়ের উপদেশগুলো কানে বাজে, শান্ত হয়ে যাই, উদার হতে চেষ্টা করি। একজন মা এতটা উদার, মমতাময়ী কি করে হয় ভেবে পাই না। তাই মনে মনে ভাবি, মা ছিল, মা থাকবে। লোকচক্ষুর আড়ালে গেলেও মায়ের অস্তিত্ব টের পাই, দেখানো পথে হাটতে চেষ্টা করি। চিরদিন যেন মায়ের দেখানো পথে হাটতে পারি আল্লাহর কাছে সেটাই চাই। মায়ের দোয়াতেইতো আজকের আমি, আমার অবস্থান, আমার সবকিছু।  
দেখতে দেখতে অনেকটা বছর কেটে গেল। আমিও বাবা হলাম আবার। গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ আমি বাবা হয়েছি। আল্লাহর কাছে আমি একটা মা’ই চেয়েছিলাম। মহান আল্লাহ আমার মনের কথা শুনেছেন। আমাকে একটা কন্যা সন্তান দিয়েছে সৃষ্টিকর্তা। আমার মায়ের বিদায়ে আমি কেদেছি। আবারও কাদলাম আমার নতুন মায়ের কান্নার শব্দে, নতুন মাকে কোলে নিয়ে। আমার কন্যার নামও রেখেছি মায়ের নামের সাথে মিল রেখে। আমার মায়ের নাম ছিল রওশনারা বেগম। আমার কন্যার নাম রওশন আসাদ প্রিয়ন্তী। প্রিয়ন্তী একটু একটু করে বড় হচ্ছে। সে আস্তে আস্তে বিভিন্ন শব্দ করতে শিখছে। বুঝে কোন শব্দ করে না জানি। কিন্তু প্রিয়ন্তীর মুখে প্রথমেই সেই মায়ের ডাক। আমার মা আমাকে সবসময় বাবা বলেই ডাকতো। প্রিয়ন্তী মুখ দিয়ে আব্বু আব্বু শব্দ উচ্চারন করে! সকল শিশুই শুরুতে দাদা, দাদি, বু শব্দ উচ্চারন করে। আমার কন্যা স্পষ্টই আব্বু শব্দ উচ্চারন করে! আমি অভিভূত হই, অবাক হই না। আল্লাহ আমার মাকে নিয়ে আবার আমাকে মা দিয়েছে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের অভাব বোঝেন। তাই আমার কন্যা আমাকেই ডাকছে। কন্যার মুখে আব্বু শব্দ শুনে আমি মহান স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার মায়ের গায়ের রং ছিল কালো কিন্তু অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জন্মেছিল। তার জ্ঞান গরিমায় তাকে মরহুম ফজলুর রহমান কোতোয়ালের মেয়ে না বলে অনেকে ছেলে বলতো!! আমার মায়ের গায়ের রং আমি পেয়েছি। আমার কন্যার গায়ের রং তার মায়ের মত। কিন্তু প্রিয়ন্তী মুখের গড়ন পেয়েছে আমার মায়ের মত। আমার মায়ের মুখ গোলাকার, সর্বদা হাসি মাখা। রাগলেও কখনো ধরা দিত না। শত কষ্ট, অভাব-অনটন আমার মায়ের মুখে ছাপ ফেলতে পারেনি। গোলাকার হাসিমাখা মায়ের সে মুখ আমি ভুলতে পারি না। সর্বদা আমার চোখের সামনে ভাষে। আমার মেয়ের গোলাকার হাসিমাখা মুখ দেখে আমি মায়ের মুখের সাথে মিলিয়ে ফেলি। প্রিয়ন্তীর মুখের দিকে তাকালে আমি আমার মায়ের কথা মনে করি। তাই প্রিয়ন্তীকে আমার নাম ধরে ডাকা হয়না। আমি মা বলেই ডাকি। আমি বাড়ি ফিরলে যেমন আমার মায়ের মুখ উজ্জল হয়ে যেত। কন্যার মুখেও তেমনি আমি বাড়ি ফিরলে হাসি ঝড়ে পরে। আমার বাড়ি ফেরার পর সে ঘুমে থাকলেও জেগে ওঠে। 
আমার মায়ের অনেক আচরণই আমি আমার কন্যার মধ্যে খুঁজে ফিরি। কিছু কিছু মিলে যায়। আমি দেখে আনন্দ পাই। আমি সবসময় বলি, আমার কন্যা যেন আমার মায়ের মত বুদ্ধি পায়, মেধা মননে যেন মায়ের মত হয়। সে যেন আমার মায়ের মত উদার, মমতাময়ী হয়। সে যেন সকলের প্রশংসা কুড়ায়। আমি আমার কন্যার ভিতর আমার মায়ের মুখ ও ডাক ফিরে পেয়েছি। সেই ডাক ও মুখ ফিরে পাই, কখনো বেশি পাই। কিন্তু মাকে ভুলতে পারি না, পারবোও না। ভাল থাকুক আমার নতুন মা, শান্তিতে থাকুক আমার মা.............

আসাদুজ্জামান জুয়েল
এডভোকেট 
জেলা জজ আদালত, শরীয়তপুর। 
asadjewel@gmail.com