ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Thursday, October 25, 2018

শরীয়তপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্তরে এসব কি হচ্ছে? আমার প্রতিবাদ

বুধবার সকালে চেম্বারে আসার সময় শরীয়তপুর জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্তর দেখি বেশ সরগরম ও সুসজ্জিত। প্যান্ডেল ঘেরা, সুদৃশ্য গেট। গেটে ব্যানার লেখা ‘টিভিএস মেগা কেয়ার ক্যাম্প, আপনাদের মুখের হাসিই আমাদের অর্জন’! ভিতরের কাম কাইজ দেখে বুঝলাম মটর সাইকেল সার্ভিসিং হচ্ছে মনে হয়।
মটর সাইকেল কোম্পানি ফ্রিতে হোক আর টাকা নিয়ে হোক সার্ভিস দিচ্ছে সেটা খুবই ভালো কথা। তারা তাদের গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনে নানা চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক হলো স্থান নির্বাচন।
সব জেলাতেই একটা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থাকে। শরীয়তপুরেও একটা আছে। শহীদ মিনার হলো সকল আন্দোলনের, আবেগের, শ্রদ্ধার, ভালোবাসার প্রতীক। এখানে কেউ প্রতিবাদ করতে আসে, কেউ আশে অপ্রাপ্তির কথা জানাতে, কেউ আসে প্রাপ্তির কথা জানাতে, কেউ দেয় সাহিত্য আড্ডা, কেউ দেয় শুধুই আড্ডা, কেউ করে অনশন। সেখানে মটর সাইকেল সার্ভিসিং হচ্ছে বিষয়টা একটু কেমন যেন হয়ে গেলো না?
শরীয়তপুর জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ডিজাইন করেছিলেন আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন একজন মানুষ ভাস্কর শহীদুজ্জামান শিল্পী স্যার। দীর্ঘ পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের ফসল আজকের এই শহীদ মিনার। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় জায়গা অপ্রতুল তবুও এই শহীদ মিনারকে সুন্দর করতে তিনি স্বল্প জায়গায়, স্বল্প বাজেটে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
একটি শহীদ মিনারের সৌন্দর্য রক্ষা ও বৃদ্ধির জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ কত কিছুই না করে। দেয়াল রং করে, বেষ্টনি দেয়, গাছ লাগায়, চত্তরে ঘাস লাগায়, পানি ঢালে এমন শত তালিকা উপস্থাপন করা যায়। আর এসবই করা হয় শ্রোদ্ধাবোধ থেকে, শহীদ মিনারের প্রতি ভালোবাসা থেকে।
শরীয়তপুর পৌরসভার সামনে আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কি একটা অভিভাবকহীন বেওয়ারিশ শহীদ মিনার, এ প্রশ্ন মাঝে মাঝেই আমার মাথায় ঘুরপাক খায়। আর প্রশ্নটা মনে আসার কারন একটাই, এ শহীদ মিনার চত্তরে মানুষ গরু চড়ায়, বাস মালিকরা বাস রেখে দেয়, রিক্সা, ভ্যানতো হরহামেশাই রাখা থাকে। একটা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের এমন যথেচ্ছা ব্যবহার কেন হয় এ প্রশ্ন আমার মতো হয়তো অনেকেরই আছে।
এবার আসি মূল বিষয়ে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের চত্তরে সবুজ ঘাসের উপর চলছে টিভিএস কোম্পানির মটর সাইকেল সার্ভিসিং। লোহা লক্করের ঝনঝনানি, তেল মবিলের ছড়াছরি করে চলছে কর্মযজ্ঞ। এতে ঘাসের বারোটা বেজে যাচ্ছে। মানুষ শহীদ মিনার চত্তরে সবুঝ ঘাস লাগায়, পানি ছিটিয়ে ঘাস বাঁচায়, বড় হলে ছেটে দেয়। এ সবই করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষে এবং আগত মানুষের সুবিধার জন্য। মানুষ যেন শহীদ মিনার চত্তরে বসে দু’দন্ড সময় কাটাতে পারে, মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে, প্রতিবাদ করতে পারে, সাহিত্য চর্চা করতে পারে, বসে তর্ক বিতর্ক করতে পারে, তবে ঝগড়া নয়। যেভাবে সার্ভিসিং চলতে তাতে তেল মবিল পড়ে এবং লোহা লক্করের যন্ত্রাংশের চাপে ঘাসগুলো বাঁচবে বলে মনে হয় না।
শহীদ মিনারে এমন একটি উৎসব করার জন্য কি কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েছে। নিশ্চই অনুমোদন নিয়েছে। নইলে কোম্পানির এত সাহস হতো না এমন স্পর্শকাতর একটি জায়গায় এমন আয়োজন করার। আর যারা অনুমোদন দিয়েছে তারাই বা কেমন বেকুব, গাধা যে এখানে অনুমতি দিলো? তাদের সার্ভিসিং যারা পেতে আগ্রহী সেই গ্রহকরা চাঁন্দের দেশেও যদি আয়োজন করা হয় সেখানেই যাবে। প্রধান সড়কের পাশে শহীদ মিনারেই করতে হবে এমন তো কোন কথা নেই।
দেশে সুশিল সমাজ বলতে একটা কথা আছে। সরকার যদি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজনে একটা গাছ কাটে তবে অনেক সুশিল সমাজের
ব্যক্তি তার প্রতিবাদ করে, গাছ ধরে কান্নাকাটি করে, যদি কোন পুকুর ভরাট করে তবে পুকুরের পাড়ে মানব বন্ধন করে প্রতিবাদ জানায় জলাশয় ভরাটের জন্য। কিন্তু আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমন একটি কাজ হচ্ছে অথচ কেউ কোন টু শব্দ করতে দেখলাম না। অন্তত জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একটা লাইন দেখলাম না যে কেউ নিন্দা করেছে। তাহলে কি আমাদের বিবেক আসলে মরে গেছে না আমাদের বিবেকের উপর কুকুরে পেশাব করে ভিজিয়ে দেয়ায় নিস্তেজ হয়ে গেছে, এমন প্রশ্নে হয়তো অনেকে বিব্রত হবেন। কিন্তু আমি বিব্রত করার জন্য বলছি না। আমাদের উচিত প্রতিবাদ করা। আর প্রতিবাদ করার অনেক মাধ্যম আছে এখন। ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে কিছু করতে না পারলে নাকি মনে মনে ঘৃনা করতে হয়। আসুন আমরা কিছুই যদি করতে না পারি তবে একটু ঘৃনা করে প্রতিবাদ জানাই। টিভিএস কোম্পানির সার্ভিসিং হয়তো শেষ হয়ে যাবে, আবার নুতন কোন আয়োজন হবে যে আয়োজনে শহীদ মিনারের সৌন্দর্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। তবে যাতে ভবিষ্যতে যেন এধরনের কর্মকান্ডকে কর্তৃপক্ষ শহীদ মিনারে বা চত্তরে প্রশ্রয় না দেয়। আমার মত সাধারণ নিরিহ মানুষের জন্য এটাই হলো প্রতিবাদ।

No comments:

Post a Comment