ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Sunday, October 28, 2018

মা ইলিশ নিধন নয় চলছে হত্যাযজ্ঞ

নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ সুদীর্ঘ কাল থেকেই। বলা যায় নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি সৃষ্টির শুরু থেকেই আগ্রহ। আর এই আগ্রহ কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষের বেশি, কোন কোন ক্ষেত্রে নারীর। যেমন নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি প্রথম যে লোভ বা আগ্রহটা দেখিয়েছেন তিনি হলেন নারী। বর্তমান সময়ে নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি নারী পুরুষ সমান হারেই আগ্রহী। 

একসময় ফেনসিডিল ছিলো কাশির ঔষধ। হাসপাতাল থেকে ফাও পাওয়ার পরও অনেকে খেতে চাইতো না। আস্তে আস্তে যখন মানুষ বুঝলো এটা খেলে নেশা হয় তখন বোতল চেটে খাওয়া শুরু করলো। বিষয়টা যখন কর্তাব্যক্তিদের ভাবিয়ে তুললো তখন করা হলো নিষিদ্ধ। অমনি আগ্রহ বেড়ে গেলো সবার। 

আমাদের দেশ হলো ইলিশের দেশ। সারা বছরই কম বেশি ইলিশ মাছ পাওয়া যায় বাজারে। কখনো দাম বেশি কখনো দাম কম। যখন বেশি থাকে তখন সাধারণ মানুষ হয়তো কিনে খেতে পারে না কিন্তু বিত্তবানরা ঠিকই কিনে খেতে পারে। আগে নদীতে মাছ আর পানি প্রায় সমান সমান ছিলো বলতো মুরব্বিগণ। তখন বাজারে মাছ বিক্রি করতে না পেরে ফেলেও দিতে হতো। সেই ইলিশ মাছ ধরতে ধরতে যখন তলানিতে এসে পৌচেছে তখনই কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়লো। আগে ধরার কোন মৌসুম ছিলো না। যে যখন জাল ফেলতো তখনই মাছ নিয়ে ফিরতে পারতো। যখন সংকট দেখা দিলো তখন প্রজননের মৌসুমে মা ইলিশ ও ঝাটকা ধরা নিষিদ্ধ করলো সরকার। 

বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় মা ইলিশ ধরা এবং প্রজনন শেষে একটু বেড়ে উঠা ঝাটকা ধরা নিষিদ্ধ করার পর দেখা গেলো ইলিশের উৎপাদন বেড়ে গেছে অনেক গুন। একটা সময় গেছে যখন জেলেরা ভরা মৌসুমেও কাঙ্খিত ইলিশ না পেয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতো। মা ইলিশ ও ঝাটকা ধরা বন্ধ রাখতে বাধ্য করার পর দেখা গেছে তাদের মুখে হাসির ঝিলিক। কিন্তু ঐযে নিষিদ্ধ ফলের প্রতি আগ্রহটাই কাল হয়ে দাড়িয়েছে। 

গত বছর মা ইলিশ ও ঝাটকা ধরা কড়াকড়ি ভাবে নিয়ন্ত্রন করায় এবছর নদীতে নাকি পানি সমান মা ইলিশ ঘুরছে। জাল ফেলে টেনে তুলতে পারছে না জেলেরা। কিন্তু জেলেরা এটা চিন্তা করছে না, এবার নাহয় ধরলো, কিন্তু পরবর্তী মৌসুমে যখন খালি জাল টেনে তুলবে তখন কি তাদের ভালো লাগবে? 

সম্প্রতি চাঁদপুরের এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যর বাড়ি থেকে সাড়ে সাতশ মন মানে ত্রিশ হাজার কেজি মা ইলিশ মজুত অবস্থায় উদ্ধার করেছে প্রশাসন। এটাতো একজন মেম্বারের কাহিনী। এমন হাজারো মেম্বার আছে পদ্মা-মেঘনার তীর জুড়ে। আর অভিযোগ আছে, নদীতে ট্রলার নিয়ে যেতে হলে ট্রলার প্রতি টাকা দিয়েই নদীতে নামছে জেলেরা। টাকাটা কাকে দিতে হচ্ছে তা আমি আর প্রকাশ করলাম না, কারন সবাই জানেন বলেই আমার বিশ্বাস। মা ইলিশ শুধু মেম্বারদের কাছেই না, খুঁজলে পাওয়া যাবে নিধন নিয়ন্ত্রনকারী কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মীসহ ক্ষমতাধর সবার বাড়িতে। এমন কোন বাড়ি পাওয়া যাবে না যার ফ্রিজে খালি জায়গা আছে। যার বাড়িতে মা ইলিশ ঢুকেনি তার বাড়িতে বিবাদ শুরু হয়ে গেছে। 

আসলে এবার নিরাপত্তা ও তল্লাশি ব্যবস্থা কিছুটা শিথিল করার কারনে মা ইলিশ নিধন বেড়ে গেছে। যদি পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা কড়াকড়ি হতো তবে নদী থেকে মা ইলিশ ধরেও লাভ হতো না। কারন ধরে যদি বিক্রিই করতে না পারে তবে এতো মাছ দিয়ে কি করবে। কতটাই বা খাওয়া যায়! 

এবার নিয়ন্ত্রনকারী কর্তৃপক্ষের শিথিলতার সুযোগে মা ইলিশ নিধন নয় চলছে হত্যাযজ্ঞ। এ হত্যাযজ্ঞে জড়িত জেলেরা, পুলিশ, প্রশাসন, আপনার আমার মত ক্রেতা, মজুতদার। আমরা সবাই জড়িত মা ইলিশ হত্যাযজ্ঞে। এর ফল পাওয়া যাবে আগামী মৌসুমে। বাজারে যখন ইলিশ শুন্যতা দেখা দিবে তখন জেলেদের পরবে মাথায় হাত, পেটে হাত, চোখের জল, আমাদের পরবে জিভের জল।     

No comments:

Post a Comment