ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Saturday, October 13, 2018

জান মালের উপর ভরসা করা কঠিন!!

।১।
আকাশ মনি আর বাতাশ কুমার খুব ভাল বন্ধু। দুজনেই এবার জিপিএ ফাইভ পেয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিলো ‘আই গট জিপিএ ফাইভ’! দুজনেই ভর্তি হয়েছে একই কলেজে! আগে দুজনে দুই স্কুলের বাসিন্দা ছিল। আকাশ মনি পড়তো জেলা সরকারী গার্লস স্কুলে আর বাতাশ কুমার পড়তো জেলা সরকারী বয়েজ স্কুলে। গার্লস স্কুলের সম বয়সী ইয়ারমেটদের প্রতি বয়েজদের একটু আগ্রহ থাকে বেশি, ঠিক তেমনি বয়েজ স্কুলের ইয়ারমেটদের প্রতি গার্লসদের আগ্রহ দেখা যায়। স্কুলটা ছুটি হলে বয়েজরা ইনিয়ে বিনিয়ে গার্লস স্কুলের পাশ দিয়ে বাড়ি ফেরার শেষ রাস্তাটা খুজে পায়। আর গার্লসরা বয়েজ স্কুলের ছাত্রদের দেখলে একদম গুটিয়ে যায়। যা হোক, সমবয়সী সহপাঠিদের মধ্যে মেয়েরা নিজেদের একটু ছোট ভাবতেই পছন্দ করে। গার্লস স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বয়েজ স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভাইয়া বা ভাইজান বলে। এসএসসি পাস করার পর আকাশ মনি ও বাতাশ কুমার দুজনে একই কলেজে একই বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুবাদে এখন বেশ কাছে এসেছে। পূর্বের পরিচিত এখন ক্লাসমেট, সম্পর্কের উন্নতি হতে থাকে জ্যামিতিক হারে। প্রথমে ভাইয়া ভাইয়া ডাকলেও সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে হয়ে যায় ভাইজান ভাইজান। কয়েকদিনের মধ্যে এক সাথে কলেজে আসা, একসাথে যাওয়া, একসাথে ক্যান্টিনে খাওয়া। এর বিল ও দেয়, ওর বিল এ দেয়। বেশ জমিয়ে ফেলেছে আকাশ আর বাতাশ। দুজনে ক্লাস ফাকি দিয়ে মাঝে মাঝেই কলেজের পাশের শীতল ছায়া ঘেরা বাগানে ঘুরে বেরায়, সবুজ ঘাসে বসে একটু গল্প সল্প করে। আকাশ মনি ঘাসের ডগা ছেড়ে, বাতাশ কুমার গাছের পাতা কচলায়।

এভাবে কখন যে একে অপরকে আপন করে নিয়েছে কেউ বুঝতে পারেনি। ভাইয়া থেকে দোস্ত আর দোস্ত থেকে ভাইজান ডাকে মেয়েটা ছেলেটাকে। দেখতে দেখতে ভাইজান থেকে ভাই শব্দটা যে কোথায় উড়ে গেল দুজনের কেউই বুঝতে পারলো না। এখন একজন আরেকজনকে জান জান বলে পাগল প্রায়। জান তুমি কি কর? জান তুমি কি খাও? জান তুমি কোথায় এমন হাজারো প্রশ্নের বন্যা।

আস্তে আস্তে চলতে থাকে জান জান ডাকা। আর সময় ও স্রোত কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না তা তো আমরা সবাই জানি। আকাশ বাতাশের সময়ও বসে নেই। দুজনেরই পরীক্ষা ঘনিয়ে আসছে। দেখতে দেখতে কলেজের প্রায় সময়টাই চলে গেছে। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। জান জান খেলায় পরীক্ষার প্রস্তুতির অবস্থা দুজনেরই খারাপ। পরীক্ষার পর রেজাল্ট বের হলো, কিন্তু আজব এক কারিশমায় দুজনে আবার ‘জিপিএ ফাইফ গট’!! ভর্তি পরীক্ষার চাপে দুজনেই বেসামাল। আকাশ মনিকে তার বাবা উপায়ান্ত না দেখে একটা বেসরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে দিলো। আর ছেলেটা চলে গেলো ফিলিপাইনে মেরিন সাইন্স পড়ার জন্য। আজ দুজনের দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেকে...

তার পর দীর্ঘ দিন চলে গেলো। দেশে এসে বাতাশ কুমারের সাথে দেখা আকাশ মনির। আকাশ মনির হাতে ফুটফুটে একটা মেয়ে! আকাশ মনি তার মেয়েকে বললো, মামনি এটা তোমার একটা আংকেল। বাতাশ কুমার তার পাশে দাড়ানো মেয়েটিকে আকাশ মনির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো তোমার ভাবি!! আমরা দুজন একসাথে পড়তাম! ইত্যাদি!! 

।২। 
এক দেশে এক প্রধানমন্ত্রী ছিল। সেই প্রধানমন্ত্রীর এক আস্থাভাজন বিত্ত মন্ত্রী ছিল। সে শুধু মালের হিসাব রাখতো। মালের হিসাব রাখতে রাখতে তার নাম হয়ে গেছে মাল বাবু। কোথায় কত মাল খরচ করতে হবে, কোথা হতে মাল আনা যাবে। কোথায় কত শুল্ক ধরলে দেশ মালে মালামাল হয়ে যাবে, কারা কারা মাল চুরি করলে কিছু বলা যাবে না বরং মাল চুরির সময় যদি মনে ব্যাথা পায় তবে কিভাবে শান্ডার তেল দিয়ে মালিশ করতে হবে এ বিষয়ে তার বিস্তর জ্ঞান। জ্ঞানী মানুষের চোখ ফাকি দেওয়া সহজ। আবার জ্ঞানী মানুষ অপকর্ম করিয়া বেরালেও তাহা ঢাকিতে বেশ ওস্তাদ। মাল বাবুর দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু দুষ্ট লোক লক্ষাধিক কোটি স্বর্ণমূদ্রা নিয়ে বিদেশ পলায়ন করিল তাহা মাল বাবু টেরই পেল না। তাহাকে জিজ্ঞাস করায় সে বললেন, এ তেমন কোন মুদ্রা না। এর চেয়ে তাজ মহল বানিয়ে চুন সুরকি ‘রাবিশ’ খরচ করে অনেক মুদ্রা নষ্ট করা হয়েছে।

বাজেটের সময় হয়ে গেছে। দূর দর্শন খুললে বাজেট নিয়ে দেখি বাজে টক করছেন জ্ঞানী গুনি বুদ্ধিজীবীরা। মালবাবু একদা এক রাতে বাজেট চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়লেন। চিন্তা করে বের করলেন মানুষের উপর করের বোঝা বাড়াতে হবে। মূল্যের উপর আরো মূল্য সংযোজন করতে হবে। তবে তার মাথায় সবচেয়ে যে নিষ্টা বুদ্ধিটা এলো সেটা হলো সঞ্চীত মুদ্রার উপর শুল্ক কাটা। মুদ্রা সঞ্চীতি সাধারণত বৃদ্ধ বা সিনিয়র সিটিজেনদের আর প্রবাসীদের কাজ। শেষ জীবনের সঞ্চয় কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রেখে মুনাফা ভেঙ্গে ভেঙ্গে খাওয়া। দেশে যারা অবস্থান করে তারা টাকা সঞ্চয়ের সময়ই পায় না, হাতে আসে আর খরচ করে। মাল বাবু বিষয়টা খেয়াল করলো। সঞ্চীত মুদ্রার উপর মুনাফা আসবে তা দিয়ে আরামে বসে খাবা সেটা তো হতে পারে না। তাতে অলসতা বাড়বে, মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাবে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নয় ছয় হয়ে গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া প্রায়, কোষাগার গুলো শুন্যের কোঠায় অবস্থান করছে। এই অবস্থায় তাদের তহবিল টইটুম্বুর করতে হবে। সে টাকা কে দেবে! জনগন আছে না! তাই বাজেটে সে ঘোষণা দিলো যে প্রতিষ্ঠান গুলো চুরি-লুটের কারনে ফান্ড সংকটে পড়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে মুদ্রা দিয়ে ফান্ড ভরে রাখতে হবে। কারন পরবর্তীতে চোর ডাকাতরা আবার যখন হানা দিবে তখন কি তারা খালি হাতে যাবে? আর ওরা যদি খালি হাতে যায় আমাকে কমিশন বাবদ কি দেবে, লবডংকা? তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা জমালে উক্ত টাকার উপর শুস্ক শুল্ক দিতে হবে। দেশে তো এ নিয়ে তুলকালাম কান্ড। নিজের ভাই বেরাদাররা পদত্যাগ দাবী করলো মাল মন্ত্রীর। কেউ কেউ ক্রিমিনাল চার্য গঠনের দাবী জানালো। কিন্তু যারা এত দাবী জানালো তারা তো জানে না মাল কোথায় উঠে বসে আছে। মাল যে কোথা উঠেছে তা জানে শুধু মালে। রাবিশ কোথাকার, ওরা মালের পাওয়ার সম্পর্কে জানেই না!!

।৩।
বাতাশ কুমার বিদেশে পড়াশুনার পাশাপাশি জব করতো। পড়াশুনা যখন শেষ হয় তারপরেও বেশ কিছুদিন চাকুরি করে বেশ টাকা কামিয়ে দেশে এসেছে। দেশে এসে চিন্তা করলো টাকা গুলো কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রেখে আবার বিদেশ চলে যাবে। এখান থেকে যে লাভের টাকা আসবে তা দিয়ে বাবা মায়ের স্বাচ্ছন্দে চলে যাবে। দেশে এসে দেখা হলো আকাশ মনির সাথে হাতে তার ফুটফুটে মেয়ে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখবে জমা তাও দেখে শুল্ক নামের বিষ পিপড়ার থাবা। মালের থিওরিতে মুদ্রা সঞ্চয় করে লাভের পরিবর্তে দেখা গেলো লস হবে। বাতাশ কুমার নিজেই বির বির করে বললো, জান আর মালের উপর কোন ভরসা নাই... জান চলে গেছে আরেকজনের সাথে আর মাল খাবে মাল বাবু........ 

ধার করা একটা কৌতুকঃ 
এক যুবককে পুলিশে ধরেছে। বিচারক যুবককে বলো
-তোমার বিরুদ্ধে দেশের অর্থ মন্ত্রীকে বেকুব বলার জন্য চার্জ গঠন করা হলো
যুবক-আমি কোন দেশের অর্থ মন্ত্রীকে বেকুব বলেছি তাতো বলি নাই! আমিতো উগান্ডার অর্থ মন্ত্রীকে বেকুব বলেছি। 
বিচারক-কোন দেশের অর্থ মন্ত্রী বেকুব আমরা জানিনা মনে করো? আমাদের কে দেখে কি তোমার আবুল মনে হয়??

No comments:

Post a Comment