ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Friday, August 31, 2018

কয়লা ধুলে সিস্টেম লস হয়!


কয়লা ধুলেও নাকি ময়লা যায় না। কিন্তু কয়লা ধুয়ে ধুয়ে আমাদের দেশে যে পরিমান কমে তাকে সিস্টেম লস বলা হয়!

কয়লার অভাবে গত জুলাই মাসে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কয়লা উধাও হওয়ার বিষয়টি নিয়ে শোরগোল তৈরি হয়। বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা দিয়েই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চলত

কয়লা উধাওয়ের ঘটনায় গত ২৪ জুলাই খনির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৯ জনকে আসামি করে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমানপ্রাথমিক তদন্তে এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার প্রমাণ পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলার ১৯ আসামিসহ পেট্রোবাংলার ৩২ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেমামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে যে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করে ২৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেনকিন্তু মামলার আসামি সাবেক এমডি হাবিব সাংবাদিকদের বলেন, আমি শুরু থেকেই বলে এসেছি, কয়লা চুরি বা দুর্নীতি হয়নিযেটুকু কয়লা গায়েব হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, সেটুকু প্রকৃত অর্থে সিস্টেম লস। আমাদের এখানে যেটুকু কয়লা উবে গেছে, তার পরিমাণ দশমিক শতাংশের বেশি হবে না, অথচ আন্তর্জাতিকভাবে থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সিস্টেম লস গ্রহণযোগ্য।



চোরের মায়ের বড় গলা শুনেছি। কিন্তু চোরের গলা এত বড় আগে কখনো দেখিনি শুনিওনি। ২৩০ কোটি টাকার কয়লা বিক্রি করে খেয়ে কিভাবে যে বলে কয়লা উবে গেছে! আসলে কয়লা উবে গেছে না আমাদের নীতি নৈতিকতা, আদর্শ, বিবেক উবে গেছে সেটাই এখন বিবেচ্য বিবেচ্য বিষয়। কয়লা উত্তোলনের পর থেকে বছর বছর কি পরিমান কয়লা উবে গেলো তার হিসাব বছর বছরই করা এবং কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিৎ ছিল। এত পরিমান কয়লা উধাউ হওয়ার পর যদি বলা হয় কয়লা উবে গেছে তা সরকার বুঝুক বা না বুঝুক জনগণ কি বুঝবে?   

আমাদের অর্থনীতির আমানতস্থল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখান থেকে রিজার্ভের টাকা চুরি হয়ে যায়, কোষাগারে জাল টাকা ধরা পরে, স্বর্ণের পরিমানে ও কোয়ালিটিতে ঘাটতি ধরা পরে। এ নিয়ে কয়েকদিন মাতামাতি হয়। এরপর হয় সরকার তার পিঠ বাঁচাতে যেন তেন একটা তদন্ত করে অথবা অভিযুক্তরা খোয়া যাওয়া সম্পদের ভাগ দিয়ে তদন্ত ধামাচাপা দিয়ে দেয়। আমরা যারা আম জনতা তারা কয়েকদিন সমালোচনা করে আবার নতুন কোন ইস্যূ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরি। অবশ্য এছাড়া আমাদের আর কিছু করণীয়ও থাকে না। আমাদের করনীয় যেটা সেটাইতো আমরা যথাসময়ে যথাযথ ভাবে করতে পারি না। আমরা ব্যর্থ হই নেতা নির্বাচনে, আমরা ব্যর্থ হই জবাবদিহিতা আদায়ে, আমরা প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হই প্রতিবাদে।

আমাদের উচিত সিস্টেমকে পরিবর্তন করা এবং সিস্টেমকে আপগ্রেড করা। যে সিস্টেমের কারনে ২৩০ কোটি টাকার কয়লা উবে যায় বা সিস্টেম লস হয় সেই সিস্টেমের পরিবর্তে নতুন সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন যাতে লুট হয়ে না যায়। যে সিস্টেমের কারনে সোনায় খাদ পাওয়া যায় সে সিস্টেম চাই না। যে সিস্টেমের কারনে রিজার্ভের টাকা গায়েব হয়ে যায়, যে সিস্টেমের করনে রিজার্ভে জাল টাকা পাওয়া যায় সেই সিস্টেম বদলানো এখন জরুরী। রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিনীত অনুরোধ, সিস্টেম বদলান, নয়তো আপনারাই একদিন বদলে যাবেন! জনগন সব বোঝে, তারা বোকা নয়, তাদের চোখে ধুলা দিবেন না, চোখ থেকে ধুলা একসময় সরবেই। তখন আর কোন উপায় থাকবে না। কথাগুলো শুধুযে রাষ্ট্রযন্ত্রকে জনগন বলছে তা কিন্তু নয়, যারা রাষ্ট্রের চালকের আসনে বসতে চান বা স্বপ্ন দেখেন তারাও সতর্ক হন। অতীতে যা করেছেন তার ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে, ভবিষ্যতে কি করবেন তা ভালো ভাবে ভেবে চিন্তে তবেই স্বপ্ন দেখুন। আর ভুলে গেলে চলবে না, কয়লার গর্ভে আছে আগুন। আগুন সবাকিছুকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে।

No comments:

Post a Comment