ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Tuesday, August 14, 2018

নদী শুধু ভূমি-বাড়িই নয় ভাঙ্গছে হৃদয়ও

নদী মাতৃক দেশ বাংলাদেশ। দেশের নদী বেষ্টিত জেলাগুলোর মধ্যে শরীয়তপুর একটি। নদী আছে তাই পানি আছে, পানি আছে তাই স্রোত আছে, স্রোত আছে তাই ভাঙ্গনও থাকবে। কিন্তু ভাঙ্গনের তীব্রতাই বিবেচ্য বিষয়। শরীয়তপুর জেলায় পদ্মা নদী নড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা দীর্ঘদিন যাবৎই ভাঙ্গছে। কিন্তু সম্প্রতি ভাঙ্গনের তীব্রতা এতটাই বেড়েছে যে তা সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। পদ্মা যখন ভাঙ্গে তখন শুধু ভূমি-বাড়িই ভাঙ্গছে না, ভাঙ্গছে হৃদয়ও।
শরীয়তপুর জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত নড়িয়া ও জাজিরায় পদ্মা নদী ভাঙনে ২০ হাজার ৮৯০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর গৃহহীন হয়েছে ৩ হাজার ৮৯০ পরিবার। পাঁচ বছরে ফসলি জমি বিলীন হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০টি, উচ্চ বিদ্যালয় ছয়টি, সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য স্থাপনা। জাজিরার কলমিরচর বাজার, কায়ুম খার বাজার, দুর্গারহাট বাজার, পালেরচর বাজার, নড়িয়ার ওয়াপদা বাজার, বাঁশতলা বাজার, চন্ডিপুর বাজার পুরো বিলীন হয়ে গেছে। সুরেশ্বর বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে এবং হচ্ছে।
সরকারী তথ্য থেকেই বুঝাযায় ভাঙ্গনের তীব্রতা কতটা প্রবল। আমরা সবাই জানি সরকারের তথ্য ভান্ডারে সবসময় সব তথ্য পৌছায় না। সে হিসাবে ভাঙ্গনের পরিসংখ্যান আরো অনেক বড়। পদ্মার ভাঙ্গনে শরীয়তপুর জেলার হাজার হাজার হেক্টর ভূমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভূমির সাথে গেছে বাড়ি ঘর, গাছপালা, মসজিদ, মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট, বাজার, লঞ্চঘাট, কবরস্থান। অনেকেই আছেন যারা অন্যত্র বাড়ি করতে পারবেন এবং করেছেনও। কিন্তু পিতার কবর, সন্তানের কবর, স্বজনের কবর কি আর ফিরে পাবেন? মানুষ নিঃস্ব হয়ে সব বিক্রি করে দিলেও কখনো তার স্বজনের কবরের জায়গাটুকু বিক্রি করে না। তাইতো বাড়ি ঘর অন্যত্র সড়িয়ে নেয়ার সময় স্বজনের কবর ধরে আর্তনাত করতে দেখা যায় ভাঙ্গন কবলীত মানুষকে।
একটি বাড়ি শুধু রাত্রি যাবনের একটি আবাসই নয়। এর সাথে জড়িত অনেক কিছু। একটি উঠান, একটি রান্না ঘর, একটি গোয়াল ঘর, একটি কাচারি ঘর, একটি বাগান মানুষের বড় হওয়ার সাথে জড়িত। যে উঠানে আছাড় খেয়ে শিশুটি হাটতে শিখেছে, যে ঘরটিতে গৃহিনী প্রতিদিন রান্নায় ব্যস্ত থাকতো, যে কাচারি ঘরটিতে মেহমানদের আনাগোনায় মুখরিত থাকতো, যে বাগানের ফল খেয়ে কিশোর-কিশোরিরা দুরন্তপনায় মেতে থাকতো, যে ঘরটিতে ভাই-বোন একসাথে বড় হয়েছে সেই ঘরটি, সেই আঙ্গিনা, সেই বাগান নদী ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। নদী কি শুধুই ভূমি-বাগান ভেঙ্গে নিচ্ছে, ভাঙ্গছে কত মধুর স্মৃতি, কত মায়া কত মমতা। তাইতো আক্ষেপ করে অনেকেই বলছে, আগুন লাগলে ঘর পোড়ে, ভিটাটা থাকে কিন্তু ভাঙ্গনে কিছুই থাকে না।
ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়লে শুরুহয় দৌড়ঝাপ। বাড়ে আন্তরিকতা, বাড়ে বরাদ্দ। কিন্তু টেকসই পরিকল্পনা না থাকলে এ ভাঙ্গন কি থামবে? ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন। রেমিটেন্স প্রেরণে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলা দেশের দ্বিতীয় স্থানে আছে। নড়িয়াবাসী যেহেতু সরকারের জন্য এতকিছু করছে সেখানে সরকারেরও অনেক কিছু করার আছে। সর্বহারা মানুষগুলোর পাশে সরকারের এখনই দাড়ানো উচিত। নইলে সর্বহারা মানুষগুলোর অভিষাপ থেকে বাঁচতে পারবে না সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা।

No comments:

Post a Comment