ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Monday, August 26, 2019

বাঙ্গালির তেলবাজী! তেল কচলিয়ে তেলচিটচিটে...

তেল এমন একটা অপরিহার্য দ্রব্য যা আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হয়। তেল নিয়ে বহু লেখা প্রথিতযশা লেখকরা লিখে তেল বিষয়টাকেই তেলতেলে করে ফেলেছেন। আমি কচলিয়ে আরেকটু তেলচিটচিটে করলে কী দোষ! উপযুক্ত যোগ্যতা না থাকা স্বত্বেও সমাজে অনেকে অনেক ভালো জায়গায় অবস্থান করছে। সেটা সম্ভব হচ্ছে তেলানোর গুনে। একুশ শতকে এসে তেলানোটা একটা শিল্প মনে হচ্ছে। যে যত ভালো তেল মালিশ করতে পারবে সে তত উপরে অবস্থান করবে। আর আপনি যদি একবার উপরে বসে তেলাতে পারেন তাহলে যোগ্য-অযোগ্য কেউ আর উপরে উঠতে পারবে না, কারন আপনি আগেই তেলিয়ে তেলতেলে করে রেখেছেন। সেই সাথে আগন্তুকের পিছনে থাকবে বিশাল লাইন। যতটা উঠার চেষ্টা করবে, কিছুদুর উঠার পরে দেখবেন একজনের পা ধরে আরেকজন, আরেকজনের পা ধরে আরেকজন এভাবে ঝুলছে। একপর্যায়ে আগন্তুকরা ঠিকই পতিত হবে আপনি থাকবেন বহাল তবিয়তে। তেলের গুরুত্ব যারা বুঝতে পারে তাও যথাসময়ে সে’ই চূড়ায় অবস্থান করে। হাতে তেল থাকলেই হবে না, তেল সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায়, সঠিক পদ্ধতিতে মাখতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বেশি পিচ্ছিল করলে আপনিও পিছলে না পরেন। তেলিয়ে পিচ্ছিল করলে তেলও আপনাকে ক্ষমা করবে না। তেলের কাজই উপরে উঠানো এবং সুযোগ পেলে পিছলে ফেলা।
তেল নিয়ে এত কথা বলার আগে তেলকে একটু তেলিয়ে নেয়া উচিত। তেলের প্রশংসা, তেলের উৎপত্তি, তেলের প্রকারভেদ জানা থাকলে আপনি তেলিয়ে মজা পাবেন, যাকে মাখবেন সেও মজা পাবে। তাই আগে তেলকে ভালোভাবে জানুন। তেল এমন কোন বস্তু যা সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে। এটি পানির সাথে মেশে না; অথচ জৈব দ্রাবকের সাথে মিশে যায়। তেলে উচ্চমাত্রার কার্বন এবং হাইড্রোজেন রয়েছে। বিভিন্ন প্রকারের তেল হয়, যেমন: উদ্ভিজ্জতেল, ঔষধি তেল এবং অপরিহার্য উদ্বায়ী তেল প্রদত্ত সাধারণ সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। সবধরণের তেলই আদিতে জৈব পদার্থ থেকে উৎসরিত। তেলের নামকরণঃ বাংলায় তেল শব্দটি এসেছে তৈল থেকে। তেলের ইংরেজি Oil এর ব্যবহার প্রথম লক্ষ্য করা যায় ১১৭৬ সালে যা পুরাতন ফরাসি শব্দ oile থেকে আসে। oile এসেছে লাতিন oleum থেকে। অলিয়াম এসেছে গ্রীক ἔλαιον (এলায়ন) থেকে যার অর্থ জলপাই তেল আর এলাইয়া অর্থ জলপাই গাছ বা ফল।
প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করলে কালি ও কলম শেষ হবে প্রকারভেদ লেখা শেষ হবে না। তবে উল্লেখযোগ্য কিছু তেলের কথাতো বলাই যায়। যেমন খনিজ তেলঃ খনিজ তেল ভূ-অভ্যন্তরের সচ্ছিদ্র পাথরের স্তরে পাওয়া যায়। এই খনিজতেল বিভিন্ন জৈব পদার্থ, যেমন আদিকালে সমুদ্র তলদেশে জমে থাকা মৃত প্লাংকটন, থেকে উৎপন্ন হয়েছে। ভূ-অভ্যন্তরে এভাবে জমা থাকা অবস্থায় বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে এসব বস্তু খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়ামে রূপান্তরিত হয়েছে। এসব তেলকে খনিজ তেল হিসাবে শ্রেনীভুক্ত করার কারণ মানবজাতির উদ্ভবেরও বহু আগে এই তেল সৃষ্টি হয়েছে এবং এগুলো ভূগর্ভের বিভিন্ন স্থান যেমন: পাথরের স্তর, বালুর স্তর বা ফাপা স্থান থেকে আহরিত হয়। এসব ছাড়ারও অন্য অনেক ধরণের তৈলাক্ত পদার্থ প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হল পীচ। এটি স্বাভাবিক ভাবেই মাটির নিচে বা আলকাতরার খনির যেখানে ফাটল আছে সেখানে পাওয়া যায়। পেট্রোলিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ তেল (যা পেট্রোকেমিকেল নামেও পরিচিত) বর্তমান সময়ে মানব সভ্যতার জন্য এতই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদে পরিনত হয়েছে যে, এগুলোকে সর্বব্যাপী শুধুমাত্র তেল নামেই অভিহিত করা হয়। জৈব তেলঃ জৈব তেল গুলোও উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অন্যান্য জীব থেকে জৈবিক প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় এবং এসব তেলের প্রকারভেদ অনেক। রাসায়নের পরিভাষায় তেল একটি অস্পষ্ট শব্দ। পক্ষান্তরে তেল, চর্বি, মোম, কোলেষ্টরেল এবং জীব ও জীব নিসৃত তরল থেকে প্রাপ্ত অন্যান্য তৈল জাতীয় পদার্থকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় লিপিড বা চর্বি জাতীয় পদার্থ (ইংরেজি: Lipid)। লিপিড গুলিকে (যা মোম থেকে স্টেরয়েড পর্যন্ত হতে পারে) নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দিয়ে বর্ণনা করা কঠিন। তবে একটি দিক থেকে এদের মধ্যে মিল রয়েছে, আর তা হল-এসকল পদার্থ কখনো পানিতে মেশে না বা দ্রবীভূত হয় না অথচ সহজেই অন্য লিপিডের সাথে মিশে যায়। এসব পদার্থের মধ্যেও উচ্চমাত্রার কাবর্ণ ও হাইড্রোজেন থাকে তবে অক্সিজেনের পরিমাণ অন্যান্য জৈব যৌগ বা খনিজ থেকে কম। সিনথেটিক তেলঃ সিথথেটিক তেল একধরণের পিচ্ছিলকারক যা কৃত্রিমভাবে পেট্রোলিয়াম নয় এমন ধরণের রাসায়নিক যৌগ দ্বারা প্রস্তুত করা হয়। সিনথেটিক তেল পেট্রোলিয়াম থেকে পরিশোধিত পিচ্ছিলকারকের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। কারণ এতে খনিজ তেল থেকে ভালমানের যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। প্রচলিত ভাষায় আরো অনেক তেল আছে যা উল্লেখিত তেলেরই বংশধর বা রূপ, যেমন-ষান্ডার তেল, কটুতেল, পাম তেল ইত্যাদি।
আমরা দৈনন্দিন জীবনে উপরে উল্লেখিত সব তেলই কমবেশি ব্যবহার করি। তবে একশ্রেণীর মানুষ যে তেল ব্যবহার করে সেই তেলের কোন রং নেই, বর্ণ নেই, সংজ্ঞা বা বৈজ্ঞানীক ব্যাখ্যাও নেই। এই তেল মুখ থেকে নিসৃত হতে পারে, আচার আচরনে হতে পারে। আজকের দিনে মানুষ জৈব বা খনিজ অথবা উদ্ভিজ তেলের চেয়ে মুখ নিসৃত তেলই বেশি ব্যবহার করে। মুখ নিসৃতি বা আচার আচরনের যে গুনটাকে আমরা তেল বলি সেটা অনেকটা সিনথেটিক তেলের মত কাজ করে। মানুষ এমন সব আচার আচরন করে যে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে তার কোন অসুবিধা হয় না। অযোগ্য মানুষ স্রেফ তেলের কারনে সমাজে এখন নামী-দামী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠছেন। লেখালিখি না করেও লেখক হন, সাংবাদিকতার ‘সা’ না বুঝলেও বিশিষ্ট সাংবাদিক হন, সম্পাদকের ‘স’ না বুঝেও সম্পাদক বনেযায়, তেলের গুণে হয়ে ওঠেন একাধিক সংগঠনের কর্তাব্যক্তি। রাজনীতিতে তেলের মহিমা কত তা বাঙ্গালিকে আর বলে বুঝাতে হবে না। আমাদের রাজনীতিকরা তেলবাজদের কারনে ঠিকমত পথও চলতে পারে না। পারবেই বা কিভাবে, তাদের চলার পথ যে পিচ্ছিল করে রেখেছে। তাইতো অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যরাও তৈলবাজী করতে বাধ্য হয় নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে।
তবে প্রসিদ্ধ তেলবাজ সেই হয় যে পরিমিত তেল দিয়ে একবার সাফল্যের চূড়ায় উঠে বসে পথটাকে তেল দিয়ে পিচ্ছিল করে রাখেন। এবার আপনি চূড়ায় বসে সুবিধাদী ভোগ করবেন আর কেউ যাতে সেখানে পৌছাতে না পারে সেই জন্য তেল দিয়ে পথটাকে পিচ্ছিল করে রাখলে দেখবেন নতুন যারা উঠতে চাইছে তারা উঠতে পারবে না, পিছলে পড়ে যাবে। তার মধ্যেও আপনার মত চতুর ধান্ধাবাজ যারা থাকবে তারা চেষ্টা করবে উঠতে, অনেকে সফলতার দাড় গোড়ায়ও পৌছে যাবে। তবে পারবে না, কারন কি জানেন? একটা গল্প প্রচলিত আছে, সকল নরকে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে শুধু একটা বাদে। একজন জিজ্ঞেস করলো যে ঐ নরকটায় কেন পাহারা বসানো হলো না, ওখান থেকে যদি কোন নরকবাসী উঠে এসে স্বর্গে ঢুকে যায়? তখন অধিকর্তা বললো-কোন সমস্যা নেই, ওখানে আছে বাঙ্গালিরা। তখন আগ্রহী ব্যক্তি বললো, বাঙ্গালিরা কি এত ভালো যে তারা উঠে আসবে না? তখন অধিকর্তা বললেন, আসবে। তারা চেষ্টাও করবে। একজন যখন একটু উঠবে তখন ঐ ব্যক্তির পা ধরে আরেকজন উঠার চেষ্টা করবে, এভাবে তার পা ধরে আরেকজন, একপর্যায়ে প্রথম ব্যক্তিটি আর ভার সহ্য করতে না পেরে হাত ফসকে পড়ে যাবে। তাই আমরা নিশ্চিন্তে থাকি যে ওখান থেকে একা কেউ উঠে আসতে পারবে না। তাই চূড়ায় আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন তবে খেয়াল রাখবেন আপনার তেলে যেন আপনি নিজেই পিছলে না যান।

No comments:

Post a Comment