ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Tuesday, January 8, 2019

চমকে ভরপুর মন্ত্রীসভা, মন্ত্রীদের চমক টিকবেতো?

এবারের মন্ত্রীসভা চমকে ভরপুর। নতুন মন্ত্রীসভায় পুরনো মন্ত্রীসভার ৩৭ জনই বাদ পড়েছে আর যুক্ত হয়েছেন ৩১ নতুন মুখ। হিসাবে গরমিল হতে পারে, কারন তথ্যটা অনলাইন থেকে নেয়া। পুরনো মন্ত্রীরা অনেকতো সেবা দিলেন জাতিকে! এবার তাদের বিশ্রাম দেয়াটা খুবই জরুরি ছিলো, যা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। চমকে ভরপুর মন্ত্রীসভার মন্ত্রীরা নিজে নিজেও চমক দেখাচ্ছেন কম না। বাসে চড়ে স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনে যাওয়া, কেউবা নিজ অফিস ঝাড়ু দেয়া, কেউ মোটর বাইকে চড়ে সচিবালয়ে যাওয়া, কেউ উপহার-উপঢৌকন এড়িয়ে চলার ঘোষণা দেয়া সহ নানান কর্ম করছেন বা ঘোষণা দিচ্ছেন। চমক দেয়ার খবরগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন মিডিয়ায় বেশ প্রচার পেয়েছে। এর সত্যতা কতটুকু নিশ্চিত না হলেও চমকগুলো নিয়ে আশাহত হওয়ার কিছু নেই। বিষয়গুলো দেখে খুবই ভালো লাগছে এবং আশায় বুক ফুলে ফেপে উঠছে। তাঁরা প্রতিদিনই এভাবে বাসে চড়ুক, ঝাড়ু দিক তা আমরা চাই না, প্রত্যাশা করাটাও হবে বোকামী। প্রথম প্রথম প্রতীকি কাজগুলো ভালো কাজের, সেবার আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে ইতিবাচক ভাবে দেখতে চাই। তবে কথা হচ্ছে, কতটা ধরে রাখতে পারবেন নিজেদেরকে সেটাই এখন দেখার বিষয়। আমরা একটি সোনালী ভবিষ্যৎ দেখার জন্য চাতক পাখির মত চেয়ে রইলাম। 
এবারের মন্ত্রীসভায় অন্যতম চমক ছিলো তর্কিত-বিতর্কিত মন্ত্রীদের বাদ দেয়া। অনেক মন্ত্রী যারা নিজেকে হেভী ওয়েট, ঝানু হিসেবে ভাবতেন তারা বাদ পড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময়ে তাদের বাদ দিয়েছেন যখন গাল ফুলানো ছাড়া তাদের তেমন কিছু করারও নেই। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। নতুন মন্ত্রীসভায় বাদ পড়েছেন যেমন অনেক ঝানু ঝানু মন্ত্রী তেমনি অনেকেই যুক্ত হয়েছেন যারা নতুন-কাচা। নতুনদের মেধা, উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনা কাজে লাগিয়ে দেশ কতটা এগোতে পাড়ে তা দেখার জন্য পুরো জাতি অপেক্ষা করছে। 
নতুন মন্ত্রীসভার অনেক সদস্যই ব্যক্তিগত ও দলগত ভাবে চমক দেখাচ্ছেন যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। এমনই এক চমক হচ্ছে-নতুন সরকারের শপথের পরদিন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যান বাসে চড়ে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য বরাদ্দ পতাকাওয়ালা গাড়ি শপথের আগেই তাদের ঠিকানায় পৌঁছে গিয়েছিল। তবে সাভারে যাওয়ার সময় সেই গাড়ি সঙ্গে নেননি তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া মন্ত্রিসভার বাকি ৪৬ সদস্যকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সাভারে নিয়ে যাওয়া হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চারটি মিনিবাসে করে। স্মৃতিসৌধ থেকে বাসে করেই তারা ঢাকায় ফিরে সংসদ ভবনে নামেন। আসন সঙ্কুলান না হওয়ায় বাসের দুই সারি আসনের মাঝে ফাঁকা জায়গায় বাড়তি আসন জুড়েও বসতে হয় কয়েকজনকে। যেমনটা বাসের মাঝ গলিতে বাসের কন্ডাকটর আমাদের মোড়া নিয়ে বসিয়ে দেয়! আশার কথা এখানেই। এতজন মন্ত্রীর গাড়ি, তাদের প্রটোকল, সাথের আমলা-ফইলারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গেলে রাস্তা জ্যাম হয়ে যায় আর তাতে ভোগান্তি বাড়ে আম-জনতা, ভোটারের, যাদের ভোটে পাস করে আজ তারা মন্ত্রী। বাংলাদেশের মন্ত্রীরা প্রটোকলের সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে গিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। মন্ত্রিসভার সব সদস্যের একসঙ্গে বাসে চড়ে কোথাও যাওয়ার এমন ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। আর এধরনের সময়োপযোগী জনবান্ধব কর্মসূচী তারা কতটুকু মেনে চলবেন ভবিষ্যতই তা বলে দেবে।
নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রথম দিন সচিবালয়ে গেলেন মোটর বাইকে চড়ে। যদিও একজন আইন প্রনেতা হয়ে হেলমেড ছাড়া বাইকের পিছনে বসে সচিবালয়ে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় বইছে। নিন্দুকেরা এটা করবেই এবং করার মতই বিষয়। যেমনটা ভালো ভাবে দেখিনি আমি নিজেও! তবে মাঝে মাঝে আইন মেনে গাড়ির বহর ছেড়ে যদি জনতার কাতারে এসে সাধারণ মানুষের মত জীবনযাপন করে তবে তা অনুকরণীয় হয়েই থাকবে।

আরেক চমক দিলেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরদিন নিজেই দপ্তর পরিষ্কার করলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্ব নেয়া মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। যদিও প্রকাশিত ছবিটি নিয়ে বিতর্ক আছে। ছবিটা তার বাসগৃহের ছবি বলছেন অনেকে। তবুও যদি অফিস ঝাড়ু দেয়ার ছবি হয়ে থাকে তবে তা মন্দ কিছু নয়। মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে প্রবেশ করেই ঝাড়ু দিয়ে নিজ কক্ষ পরিষ্কার করেন তিনি। প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনগণ ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছে। তারা বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা তাদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করব। এ ছাড়া সামনে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন প্রয়োজন হলে, তা করা হবে। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারের ২১ অঙ্গীকারের মধ্যে শিক্ষার মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি অন্যতম। এই চ্যালেঞ্জ সারাবিশ্বেই আছে। সেগুলোর জন্য আমরা কাজ করে যাবো। সমালোচনা থাকলে তা আমরা দুজনে গুরুত্ব সহকারে নেবো।’ মন্ত্রীর ঝাড়ু হাতে শুধু নিজ অফিসের বা নিজ গৃহের ধুলা পরিস্কার করলেই হবে না। পরিস্কার করতে হবে মন্ত্রনালয়ে জমে থাকা দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাগুলোও। যদি ঠিক মত ঝাড়ু দিতে পারেন মানুষ মাথায় তুলে রাখবে আজন্ম, স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আর তাতে ব্যর্থ হলে মানুষ মন থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করবে এটাও নিশ্চিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চমকপূর্ণ এক স্টাটাস দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন-‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে আমার কিছু অনুরোধ-অনুগ্রহপূর্বক আমাকে কোনো ক্রেস্ট, ফুলের তোড়া, নৌকা, রূপা বা পিতলের তৈরি নৌকার রেপ্লিকা, কোট পিন, কোনো মানপত্র বা উপঢৌকন প্রদান করবেন না। মানপত্রের লেখা শব্দ ডাহা মিথ্যা কথা, হাস্যকর। মানপত্রে যেসব তোষামোদপূর্ণ বাক্যের বর্ণনা থাকে তার ৯৫ ভাগই মিথ্যা, ভিত্তিহীন। আমার জন্য রাস্তায় শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। করলে আমি সেই অনুষ্ঠান বয়কট করবো এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবো। স্বাগত জানিয়ে গেট বা তোরণ নির্মাণ, অবৈধ কাজের তদবির, বিপুল অর্থ ব্যয় করে স্টেজ বানানো, রকমারি খাবারের আয়োজন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখবেন, আমি আপনাদের সেবক। জনগণের দয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধি। আপনারা সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে আমাকে সংসদে পাঠিয়েছেন বলেই আমি আজ প্রতিমন্ত্রী। দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে শপথ গ্রহণ করেছি। দোয়া করবেন, আমি যেন আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে পারি।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন অবশ্য আগেই একটা স্টাটাস দিয়েছিলেন যে স্টাটাসের কথাগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান তার স্টাটাসে দিয়েছেন। দুজনের স্টাটাস প্রায় একই। তিনিও উপহার, উপঢৌকন, মানপত্রের বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছেন। তোষামোদি, চাটুকারি করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে এবং তিনি প্রজাতন্ত্রের জনপ্রতিনিধি, জনগনের দয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধি, দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে শপথ গ্রহণ করেছেন। তিনি প্রভু বা জমিদার নয় সেই বিষয়টা কাজ শুরুর আগেই নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
নতুন শপথ নেয়া মন্ত্রী-সাংসদরা যে স্টাটাস দিচ্ছেন বা মিডিয়ায় যা বলছেন তা খুবই আশা জাগানিয়া কথা। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সকল মন্ত্রী-সাংসদদের মনের কথা এটাই হোক। তারা যদি বুঝতে পারে যে তারা প্রভু বা জমিদার নয় জনগনের দয়ায় প্রতিনিধি হয়েছেন এবং দায়িত্ব পেয়ে শপথ পাঠ করেছেন তবেই তারা তাদের কাজটা সঠিক ভাবে করতে পারবেন। একজন সাংসদ যে উচ্চতায় পৌছান সেখান থেকে অর্থ বিত্তের লোভে নিচে নেমে আসাটা ঠিক হবে না কারোরই। জনসেবা করার এমন সুযোগ মহান সৃষ্টিকর্তা সবাইকে দেন না, যাদের দিয়েছে তারা যেন সে সুযোগটা হাতছাড়া না করে সেই প্রত্যাশা রইলো। চমকের পর চমক দেখতে চাই। তবে চমক হতে হবে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে, মাটি ও মানুষের জন্য, দুর্নীতি, অনিয়ম, সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জন্য নয়। আশার ফল কেমন হবে, তিতা না মিঠা তা একমাত্র সময়ই বলে দেবে। 

No comments:

Post a Comment