ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Tuesday, January 22, 2019

গু এবং গাডির মধ্যে পার্থক্য বুঝা কঠিন!

 গু এবং রান্না করা গাডি (কচুর মুখি) দেখতে অনেকটা একই রকম। কিন্তু দুটির পার্থক্য বিস্তর। গাডি হজম হওয়ার পর যা থাকে তা গু হয়ে যায় কিন্তু গু কখনো পাতে তোলার যোগ্য নয়। গু গু’ই। ওটা দেখতে যতই গাডির মত হোক না কেন যদি কেউ ভুল করে তবে পস্তানো ছাড়া কিছু করার থাকে না। তাই গু থেকে সাবধান হওয়া উচিত।
গাডি অনেকের কোছে অপরিচিত মনে হতে পারে। স্থান, কালভেদে প্রতিটি বস্তুর নামের কিছু পার্থক্য থাকে। কচুর মুখি বা ছড়া একটি উৎকৃষ্টমানের খাদ্য আমাদের তথা সারা দেশের মানুষের কাছে। কেউ মাছের সাথে ঝোল করে, কেউ কেউ মাংসের সাথেও রান্না করে খায়। তবে ভর্ত্তা করে অনেকেই খেতে পছন্দ করে যেমন আমি করি। সেই কচু মুখিকে আমাদের এলাকায় গাডি নামেই চেনেন সবাই। তবে আমার লেখার যে গাডি সেটা এই আধুনিক সমাজের গাডি বা কচু মুখি নয়। আমাদের দেশে আগে সবই ছিলো কাচা রাস্তা আর রাস্তার পাশে ছিল খাল। শীতের মৌসুমে রাস্তার পাশের খাল শুকিয়ে যেত। রাস্তার পাশে প্রচুর কচু জন্মাতো। শীতের সময় সেই কচু গাছগুলো মরে শুকিয়ে যেত। গ্রামের লোকজন রাস্তার পাশের সেই কচুর গোড়া কোদাল দিয়ে খুড়ে মোথা বা কচুর মুখি বের করে আনতো। এইগুলোকে আমাদের এলাকায় গাডি নামেই চেনে। মুল থেকে যে মুখি গুলো হতো তাকে বলা হতো আডাগাডি। এই গাডিগুলোকে সংগ্রহ করার পর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে সিদ্ধ করে আবরণ ছাড়িয়ে তার পর পানি, লবন, হলুদ, মরিচ দিয়ে জ্বাল দিলে একদম ঘন করে রান্না ডালের মত দেখতে হতো। এই গাডি খেলে প্রচুর গলা চুলকায় তাই কাচা তেতুল দেয়া হতো চুলকানি কমার জন্য। রান্না করা গাডি ভাতের সাথে, মুড়ির সাথে, রুটির সাথে খেতে বেশ সুস্বাদু লাগতো। গাডির রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুন। গাডিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ‘এ´ এবং লৌহ থাকে। গ্রামের এমন কোন বাড়ি পাওয়া যেতো না যে বাড়িতে শীতকালে গাডি রান্না হতো না। রান্না করা গাড়ি দেখতে অনেকটা অল্প পাতলা গুয়ের মতোই ছিলো।
গু কারো কাছেই অপরিচিত নয়। গু বা মল বা বিষ্ঠা হল কোন প্রাণীর পরিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ যা পায়ূ পথে দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়। এই নিষ্ক্রমণ প্রক্রিয়াকে মলত্যাগ বলা হয়। জীবন ধারণের জন্য প্রাণী খাদ্যগ্রহণ করে যা পরিপাক ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শরীরে হজম হয়। যে অংশ হজম হয় না তা মল বা বিষ্ঠা হিসাবে শরীর থেকে বর্জিত হয়। তবে উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাণীর মল দীর্ঘ সময় থাকলে তাতে ব্যকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটে এবং পঁচন শুরু হয় ফলে বিভিন্ন গ্যাস ও দুর্গন্ধের কারণে পরিবেশের দূষণ ঘটে। প্রাণীর মল পানিতে মিশলে পানিকে দূষিত করে ঐ পানি পানে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বিভিন্ন রোগ হতে পারে। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগ, যেমন কলেরা, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের জীবাণু মলের সাথে দেহের বাহিরে বের হয়। পাণ্ডুরোগ বা জন্ডিসের অন্যতম কারণ জণ্ডিস রোগীর মল শুষ্ক হয়ে বাতাসে মিশে মুখপথে মানুষের শরীরে প্রবেশ। মল বা বিষ্ঠার রয়েছে আরো নানান ক্ষতিকর দিক। আমাদের গ্রাম্য ভাষায় এটাকে বলে গু।
আমাদের সমাজে অনেকেই আছে গুয়ের মত। দেখতে অনেকটা গাডির রূপ নিয়ে সমাজে চলে। কিন্তু তাদের কার্যকলাপ দেখলেই অনুমেয় যে সেটা কি। সমাজে এরা রংচোরা স্বভাবের হয়। কথা ও কাজ দেখে কেউ বুঝতে পারবে না এরা কতটা ভন্ড। নিজের স্বার্থের জন্য এরা সব ত্যাগ করতে পারে। এরাই আসল ত্যাগী। নিজের প্রয়োজনে সব কিছু ত্যাগ করে শুধু নীতি আর আদর্শ ছাড়া, কারন নীতি আর আদর্শ তাদের কখনোই ছিলো না তাই ত্যাগের প্রশ্নই আসে না। নিজের স্বার্থের কারনে কাউকে চোর বানায়, কাউকে বুকে টেনে নেয় আবার কাউকে দুরে ঠেলে দেয়। তার স্বার্থটাকেই সে বড় করে দেখে। নিজেরটা ষোল আনা বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত এরা নীতিবাগীশ। যেমন গু এর বর্ণ একেক সময় একেক রকম। টাটকা অবস্থায় এক রূপ, শুকনা অবস্থায় আরেক রূপ। তাইতো মানুষ বলে গুয়ের কোন পিঠই ভালো নয়, সেটা শুকনা পিঠ হোক বা কাচা পিঠ। স্বার্থবাদী মানুষগুলো কখনোই ভালো মানুষ হতে পারে না। একান্ত আত্মকেন্দ্রীক হওয়ায় তারা মানুষের আত্মসম্মানবোধকে মূল্য দিতে জানে না, শ্রদ্ধা-ভালোবাসাকে দুর্বলতা ভাবে, নিজের জন্য কর্মীদেরকে জলাঞ্জলি দিতে সিদ্ধহস্ত।
তাই সর্বোপরি বলবো, আসুন আমরা গু আর গাডির মধ্যে পার্থক্যটা অনুধাবন করি। গু কখনো মানুষের আপন হতে পারে না। গাডির মত দেখতে হলেই সেটা গাডি হবে এমন কোন কথা নয়। দেখে, শুনে, বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গু আর গাডির মধ্যে বিস্তর ফারাক, সেটা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

No comments:

Post a Comment