ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Sunday, February 25, 2018

পিতার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ ও পুত্র হিসাবে আমি গর্বিত

আমার পিতা আবদুর রশিদ খান। বয়সের ভারে নানা সমস্যার কারনে আজ সে সজ্জাসায়ী প্রায়। বিছানা থেকে উঠে বসতে পারে, খাওয়া দাওয়া নিজেরটা নিজেই করতে পারে, আবার নিজে নিজেই শুতে পারে। এতটুকু পারাটাকেই ভালো আছেন বলে আমি নিজেকে শান্তনা দেই। সর্বপরি বাবা আমাদের মাঝে আছেন এটাই সবচাইতে বড় প্রাপ্তি। মা দীর্ঘদিন হলো আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। বাবা আছেন, আমাদের বটবৃক্ষের মত ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে নানান পরামর্শ দিচ্ছেন, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিচ্ছেন, উদার হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত যে শিক্ষাটা আমাদের মা দিয়ে গেছেন মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত। আমরা ভাই বোনেরা এখন বাবাকে ঘিরেই মিলে মিশে আছি, সবাই দোয়া করবেন যেন চিরদিন মিলে মিশেই থাকি।

আমার বাবা একজন প্রচার বিমূখ মানুষ। জীবণে কখনো দেখিনি কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করতে, কারো সাথে রূঢ় আচরণ করতে, কারো মনে ব্যাথা দিতে। একজন সাদামাটা, সহজ সরল, প্রচার বিমূখ, শান্ত, ভদ্র মানুষ হিসাবে আমার বাবা আমার কাছে একজন আদর্শ পিতা। একজন শিক্ষিত মানুষ হিসাবে যে যে গুণাবলী থাকা উচিত আমি আমার বাবার মধ্যে তা শত ভাগ দেখেছি। সন্তানের জন্য ভালোবাসা, পরিবারের জন্য ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ, সমাজের জন্য উপকারী, নির্লোভ, নিরহংকার, সদালাপী, পরোপকারী এমন হাজারো গুণ উল্লেখ করতে পারি যা আমার বাবার মধ্যে বিরাজমান।


১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের সময়ে জেলায় জেলায় যে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিলো সেই আন্দোলনে আমার বাবাও একজন অংশিদার ছিলেন তাতে আমি আজ গর্বিত। ভাষা আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী ভাষা সৈনিকদের নিয়ে দেশে তেমন একটা প্রচার প্রচারণা হয়না বললেই চলে। যা একটু প্রচার প্রচারনা বা মূল্যায়ন হয় তা ঐ ঢাকা কেন্দ্রীক ভাষা সৈনিকদের নিয়েই হয়। জেলা পর্যায়ে যারা আন্দোলনে, সংগ্রামে সমর্থন জুগিয়েছেন, মিছিল মিটিং করেছেন, গ্রেফতার হয়েছেন, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, পুলিশের রোষাণলে পড়েছেন এমন সৈনিকদের তেমন একটা কেউ মনে রাখেনি। আর জেলা পর্যায়ের ভাষা সৈনিকরা প্রচার বিমূখতার কারনে জাতি তাদের সম্পর্কে তেমন একটা জানেনও না। বর্তমানে ভাষা সৈনিক জীবিত আছেন এমন সংখ্যাও কম।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন জেলার তেমনি জীবিত ভাষা সৈনিকদের খোজ খবর নেয়া শুরু করেছেন। ভাষা সৈনিকদের সম্মাননা দিচ্ছেন জেনে খুবই ভালো লাগলো। দীর্ঘদিন পরে হলেও ভাষা সৈনিকদের খোজ খবর নেয়া শুরু হয়েছে, মূল্যায়ন করছে, সম্মাননা দিয়ে সম্মানিত করছেন এটা একটা আশার কথা।

২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন মহান ভাষা আন্দোলনের শরীয়তপুরের ভাষা সৈনিকদের সম্মাননা হিসাবে একটি ক্রেষ্ট ও পাঁচ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড দিয়ে সম্মানিত করেছেন। আমার বাবা আবদুর রশিদ খান অসুস্থতা জনিত কারনে ২১ ফেব্রুয়ারী শরীয়তপুর জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হতে সম্মাননা গ্রহণ করতে পারেননি। আজ ২৫ ফেব্রুয়ারী শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সেই সম্মাননা আমার হাতে তুলে দিলেন, খোজ খবর নিলেন কেমন আছেন ভাষা সৈনিক। বাবার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করে আমি গর্বিত ও কৃতার্থ। একটি ক্রেষ্ট বা প্রাইজবন্ড বড় কথা নয়। সম্মান প্রদর্শনটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। আমি গর্বিত আমি একজন ভাষা সৈনিকের সন্তান।


No comments:

Post a Comment