ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Friday, January 19, 2018

রাজীতিক ও আমাদের শিক্ষা

রাজনীতি করলেও কিছুটা পড়াশুনা যে করা উচিত সম্প্রতি হারে হারে টের পেলাম এবং গভীর ভাবে অনুভব করলাম! আমাদের শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির এক শ্রদ্ধাভাজন বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী ইন্তেকাল করলে তাঁর জানাজায় অংশ নিয়ে দাড়িয়েছি। এক নেতা মাইকে বক্তৃতায় ব্যস্ত। কোন এলাকা থেকে কে এসে উপস্থিত হলো, কোন নেতা কতটা সংগ্রামী। কোন নেতার বিশেষত্ব কি, রাজনৈতিক ভঙ্গিমায় জোরালো ও সংগ্রামী কন্ঠে প্রচার করে যাচ্ছে। এর ফাকে ফাকে বার বার বলে যাচ্ছে, শরীয়তপুর বার কাউন্সিলের বার বার বিনা পতিতায় নির্বাচিত সভাপতি! কথাটা বলার তার কাছাকাছি উপস্থিত অনেক সংগ্রামী নেতারাও দাড়িয়ে ছিলো কিন্তু কোন সংশোধনী দিচ্ছেন না। অনেকের মনেই প্রশ্নের জন্ম হলো, বিনা পতিতায় কথাটার মানে কি আমি নিজেও বার বার চেষ্টা করে ধরতে পারলাম না! আর শরীয়তপর বার কাউন্সিলই বা কবে গঠন হলো!! যারা কিছুটা জানে তারা সবাই বোঝে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বার বার নির্বাচিত হওয়া যায়, কথাটা তাই হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু তাকে এটা কে বোঝাবে? আর জেলায় জেলায় বার এসোসিয়েশন আছে। জেলা সদর ছাড়াও উপজেলা বা এর বাইরে চৌকি বার বলে একটা কথা আছে, এগুলো সবই বার এসোসিয়েশন বা সমিতি।
বার কাউন্সিল বলতে বুঝি ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ৪৬ নং আদেশ)-এর অধীনে গঠিত একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন যা Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order and Rules 1972 এর অনুচ্ছেদ ৩(১), অনুচ্ছেদ ৩(২) এবং অনুচ্ছেদ ১০ মতে আইনজীবিদের স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এই আইনের অধীন সকল কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে। এক কথায় বার কাউন্সিলকে আইনজীবি সম্প্রদাযের অভিভাবক বলা যায়। এটা সমগ্র বাংলাদেশ আইনজীবিদের পেশাগত কার্যক্রমের একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আর বার এসোসিয়েশন বলতে বিভিন্ন জায়গায় আইনজীবীগণ পেশাগত কাজের সুবিধার্থে একত্রিত হয়ে যে সমিতি গঠন করে এবং এর সদস্য অর্ন্তভূক্ত হয়ে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে সেটাই বার এসোসিয়েশন বা আইনজীবী সমিতি।
এমনই আরেক নেতার জানাজা নামাজের অংশ নিতে গিয়েছেন এক বন্ধু। সেখানেও মাইকে এক নেতা বার বার ঘোষণা দিচ্ছে ‘আর মাত্র অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আপনারা এদিক সেদিক ঘোরাফিরা না করে মাঠে চলে আসুন, আমাদের জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ করুন।
এমন আরেক নেতা দেখেছি যে কিনা সারাজীবনেও একটা শব্দকে সঠিক ভাবে বলতে পারে নাই। শব্দটা হলো সাংবাদিক। সে সবসময় সাম্বাদিক ভাই বলেই সম্বোধন করেন। সেই নেতার স্কুল জীবনের শিক্ষক তাকে অনেক বার বুঝিয়েছে যে ওটা সাম্বাদিক না হবে সাংবাদিক। কিন্তু কে শোনে কার কথা? অনেকে পড়ে না, ক ল আকারে লা ক্যালা। অনেকটা সেই কিসিমের ছাত্র!
পড়াশুনা নিয়ে একটা গল্প বলে শেষ করছি। এক পীর এসেছে এলাকায়। তাহার মুরিদগণ এসেছে পীর বাবার সাথে দেখা করতে। বাবার সাথে দেখা করবে আর তাকে নজরানা, সালামী দেবে না তা তো হয় না। কয়েকজনের হাত হতে পীর বাবা সালামী নেয়ার পর ক্লান্ত হয়ে গেলেন। অতঃপর সে একটা পথ বাতলে দিলেন। পীরের চ্যালাকে বললেলন, তুমি বলো, সবাই টাকার গায়ে যার যার নাম লিখে এই বাক্সে রাখুন। আমি পরে তাদের নাম ঘোষণা করবো।
যথারীতি চ্যালা মাইকে ঘোষণা দিলো, আপনারা ভির করবেন না, টাকার গায়ে নাম লিখে এখানে জমা দিন। পরে নাম ঘোষণা করা হবে।
এর কিছুক্ষণ পর শুরু হলো নাম বলা। একটা করে টাকা তুলছে আর নাম ঘোষণা করছে,
-এই যে মোঃ করিম, বাবাকে সরমান করে এক হাজার টাকার নোট দিয়েছে, এই যে আবুল বাবাকে পাঁচশত টাকা দিয়ে সরমান করেছে। এই যে দেখেন, মরাবক বাবাকে পাঁচশত টাকা দিয়ে সরমান করেছেন, দেখছেন মরাবকও বাবাকে কতটা সম্মান করেন!
পীর বাবা আর টিকতে না পেরে চ্যালার কান টেনে বললেন,
-কইছিলাম ভালো ভাবে পড়াশোনাটা কর, তাতো শুনলি না! ওটা মরাবক না, মোবারক! বল, মোবারক টাকা দিছে।
আমাদের দেশে এখন এমন মরাবক পড়ার নেতাই বেশি। মাইক পাইলে আর ছাড়তে চায় না। যা মন চায় বলে যায়। লজ্জা শরমের বালাই নেই, শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। তাই ভয়ও নেই।

No comments:

Post a Comment