ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Tuesday, February 6, 2018

দাদুর নির্বাচনী গল্প

দাদুর কাছে নাতি নাতনীদের আবদার খুব একটা বেশি নয়। আগে গ্রাম গঞ্জে দুই মাথা বাকা অনেকটা ইংরেজী এস অক্ষরের মত দেখতে বিস্কুট পাওয়া যেত যার নাম ছিলো কুকিজ। তখনকার দিনে ছোট দোকানগুলোতে বয়ামে ভরে চানাচুর, নাবিস্কোর লজেন্স, সুপার বিস্কুট, বাতাশা বিক্রি করতো। নাতি নাতনীদের আবদারের মধ্যে দাদুর কাছে ঐ কুকিজ, চানাচুর বা লজেন্সই ছিলো। আর ছিলো গল্প যাকে গ্রামে কিচ্ছা বলে তা শোনার আবদার।
একদিন দাদুকে নাতি নাতনীরা জোর ধরা ধরেছে, দাদু কিচ্ছা শুনবো, কিচ্ছা বলো।
দাদুও নাতি নাতনীদের প্রচন্ড ভালোবাসে। ওদের আবদার ফেলার ইচ্ছা তার কখনোই মনে আসেনি। আজও ফেলবে না চিন্তা করে শুরু করলেন-
-তবে শোন, সে অনেক কাল আগের কথা। তোমাদের বাবারা ছিলো তখন অনেক ছোট। তখন আমাদের হাটে একটা সমিতি ছিলো।
ছোটদের সৎগুন আর বদগুন যাই বলিনা কেন একটা গুন আছে সেটা হলো প্রশ্ন করার গুন। অমনি প্রশ্ন শুরু হয়ে গেলো। একজন বললো-
-দাদু কোন হাটে?
দাদুরও ওদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বেশ ভালোই লাগে। এতে একটা সুবিধা হলো কিচ্ছাটা দীর্ঘায়িত করা যায় এবং বেশি সময় ওদের ব্যাস্ত রাখা যায়।
ওদের প্রশ্নের উত্তরে দাদু তখন বললো-
-আমাদের গ্রামের পাশে একটা খাল আছে না?
অমনি প্রশ্ন শুরু হলো-
-কোন খাল দাদু?
-আরে ঐযে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ডান দিকে যে সরু নদীটা আছে না? ঐ রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলে একটা ছোট্ট সাকো পার হই না আমরা? সরু নদী থেকে একটা চিকন খাল বাম দিকে বেরিয়ে গেছে যার উপর সাকোটা। ঐ সরু খাল যাকে দামরার খাল বলে। ঐ খাল পার হয়ে কিছুদূর গেলেইতো হাট। কতবার নিয়ে গেছি তোদের মনে নাই?
নাতি নাতনীদের উত্তর-
-হ্যা দাদু মনে পরেছে, মনে পরেছে। ঐ হাটে হারান দাদুর দোকান থেকে খাজুর আর রসগোল্লা কিনে দাও আমাদের ঐ হাট না?
দাদু বললো,
-হ্যা, হ্যা, ঐ হাটই। ঐ হাটে একটা সমিতি আছে। সমিতির নাম।
-নাম বলা লাগবে না দাদু, পরে কি তা বলো।
-পরে ঐ সমিতি চালাতে হলে কমিটি গঠন করতে হয়। আর কমিটি গঠন করতে হলে সমিতির সদস্যদের ভোটে কমিটি নির্বাচিত হয়। সমিতির নির্বাচন হয় তিন বছর পর পর। তো, ঐ সমিতির একজন সদস্য আছে যে কিনা প্রতি নির্বাচনেই সম্পাদক পদে নির্বাচন করতো আর ফেল করতো।
-তার নাম কি দাদু?
-বলছি, দাড়া। তো একবার হলো কি, সবাই দয়াপরবস হয়ে তাকে সাপোর্ট দিলো। কিন্তু বাদ সাধলো অন্য এক প্রার্থী তার মনোনয়ন উঠাইলো না। মনোনয়ন বোঝো তো? মনোনয়ন হলো নির্বাচনে দাড়াতে হলে একটা ফরম আছে তা ফিলাপ করে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা লোক যাদের নির্বাচন কমিশনার বলে, তাদের কাছে জমা দিতে হয়। যদি কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকে তাহলে ঐ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়ে যায় আর যদি মনোনয়ন না উঠায় তাহলে ঐ পদে ভোট গ্রহণ ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
-দাদু, মনোনয়ন না উঠালে সমস্যা কি? ভোট হলেই বা সমস্যা কি? আর বার বার নির্বাচনে দাড়ানোর লোকটার নাম বললা নাতো দাদু?
-সমস্যা আছে, সবাই যাকে দাড় করিয়েছে সেই প্রার্থী ছিলো মাথাফুলা। তার নাম ছিলো জহরি লাল কুন্ডু। মাথাফুলা বোঝো? একটু আবাল কিসিমের আরকি। আমাদের গাবুর মোকলেছ আছে না? ওর মত মাথাফুলা। সবাই তাকে মাথাফুলা জহরি বলে ডাকতো। 
-পরে কি হলো দাদু?
-আর কি হবে? গোপনে ভোটাভুটি হলে জহরি লাল কুন্ডু যে পাস করবে না তা সবাই বুঝে গেছে। জহরি লাল কুন্ডুর হাটুর বয়সী প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করেও চিন্তায় সবার মাথার ঘাম পায়ে পড়া শুরু হয়ে গেছে। তাই উপায়ন্ত না দেখে গায়ের জোরে সেই মাথাফুলারে প্রকাশ্যে ভোট দিয়া পাস করান লাগছে।
-তার পর দাদু।
-তার পর আবার একবার নির্বাচনে সেই মাথাফুলায় দাড়াইছে।
-সেইবারওকি প্রকাশ্যে ভোট দেওয়া লাগছে দাদু?
-না, সেই বার প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ছিলো বেশ জনপ্রিয় প্রার্থী। সারা মাস জহরি লাল ভোটারদের সাথে কথা বলে আর গুনে দেখে সে বিশাল ব্যবধানে পাস করবে। কিন্তু ভোটের দিন ভোট গণনার পর দেখা গেলো সেই প্রার্থীর সাথে মাথাফুলায় হেরে গেছে। পরের বারও যখন ভোট এলো আবার দাড়ালো। আবারও মাথাফুলা জহরি ফেল করলো!
-বলো কি দাদু? বার বার ফেল করার পর দাড়ায় কেন, লজ্জা নাই?
-লজ্জা? লজ্জা বলতে একটা জিনিস আছে সেটা জহরি জানেই না। আবার নিয়ম মতো নির্বাচন এলো। সেই নির্বাচনেও দাড়িয়ে গেলো। নির্বাচন এলেই জহরির পায়ের নিচে খোটায় তাই দাড়িয়ে যায় নির্বাচনে।
-সেবার কি পাস করেছে? প্রকাশ্যে ভোট নেয়া লাগছে দাদু? 
-আরে না, প্রত্যেক বার কি এক পদ্ধতিতে আকাম করা যায়? এই বার ভিন্ন পদ্ধতি খাটান লাগছে।
-ভিন্ন পদ্ধতিটা কি দাদু?
-এই বার নির্বাচনের কাজে যারা দায়িত্বে ছিলো তাদেরকে হাত করে ব্যালট পেপার আগেই কয়েকটা সরাইয়া রাখছে। পরে সেগুলায় সিল মাইরা বাক্সে ভরছে। সেইবার ছল চাতুরি করে জয়লাভ করে নির্বাচন কমিশনারদের দিয়ে তরিঘরি করে ব্যালট পুরিয়ে ফেলছে।
-তারপর দাদু?
-তারপর আবার নির্বাচন আইছে। সেইবারও মাথাফুলা জহরি লাল কুন্ডু দাড়াইছে। আগের বারের চালাকি এইবার আর করতে না পাইরা ফেল করছে।
-প্রতি বারই নির্বাচনে দাড়ায় আর ফেল করে, মাত্র দুইবার পাস করলো তাও ছলচাতুরি করে, তাহলে দাড়ায় কেন নির্বাচনে? তার পরে কি হলো দাদু?
-এইবার ফেল কইরা মনে হয় একটু সরম লজ্জা জালাইছে। পরের বার নির্বাচনে আর দাড়াইতে গিয়া গিড়ায় বল পায়নাই। আগের বার যার কাছে হারছে এইবারের নির্বাচনে তারে নিয়া মাঠে নামছে।
-বলো কি দাদু? আগের নির্বাচনে যার কাছে হারলো পরের নির্বাচনে তাকে নিয়েই মাঠে নামলো। কিভাবে সম্ভব এটা?
-সম্ভব রে দাদুরা সম্ভব। আগের বার প্রতারনা করে জিতছে। পরের বার প্রতারনা করতে ব্যার্থ হয়ে ফেল করায় চিন্তা করছে, যার কাছে হারলাম সে মনে হয় অনেক জনপ্রিয়। জনপ্রিয় লোকটা নিশ্চই এবারও জিতবে। তাই জিতা পার্টির সাথে থেকে কিছু টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার ধান্দা আরকি! মাথাফুলা জহরি লাল কুন্ডুর কিছু বদ অভ্যাস ছিলো।
-কি বদ অভ্যাস দাদু?
-একটু পাগলা পানির অভ্যাস ছিলো। বাদ দে, ওটা তোরা বুঝবি না।
-তার পর দাদু?
-তারপর আর কি? নির্বাচন শুরু হলো। সহজ সরল বেটার কাছ থেকে টাকা নেয় আর পাগলা পানি খাইয়া উল্টা পাল্টা কথা বলে। রাস্তা দিয়া হাটে আর সরল মানুষটাকে বুঝায়। সাহস দিয়ে বলে-‘বা....কাটতে কুড়াল লাগে নাকি।’ আবার কতক্ষণ বলে, ‘রাখ বেটা, কুড়াল কাটতে বা...... লাগে নাকি?’
-দাদু বা... কি?
-ওটা তোদের না জানলেও চলবে। ওটুকু সেন্সর করে দিলাম। বড় হলে একদিন বুঝবি কথাটার মানে কি? তো একদিন বাজারে ভোটারদের দাওয়াত দিয়ে নির্বাচনী মিটিং করলো। মিটিংয়ে পাগলা পানি খেয়ে জহরি লাল কুন্ডু বক্তৃতা দিতে দাড়িয়ে বলতে শুরু করলো, ‘আপনারা জানেন, পাগলা পানি ভালো না। অথচ খোজ নিলে দেখবেন আমাদের প্রতিপক্ষের লোকজন পাগলা পানি খাচ্ছে। ওরা ভালো না। (মনে মনে বলে, আমি এত অপকৌশল করি তার পরেও এবারের প্রার্থীর সাথে জিততে পারি না। দুইবার জিতছি তাও নানান অপকৌশল করে, পীর বাবার হাত পা ধরে।) ভাইসব, এবার আমরা একটা জবাব দিয়ে দেবো। কি বলেন আপনারা? সবাই ভদ্রতার খাতিরে তার সাথে সায় দিলো। কিন্তু মনে মনে ভোটের ব্যাপারে দিবে কচু!
-তার পর কি হলো দাদু?
-সেবার জহরি লাল কুন্ডুর সমর্থকের বিরুদ্ধে যে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছিলো সে ভোটারদের সবসময় খেয়াল রাখতো। সারা বছর ভোটারদের সুখ দুঃখের খোজ খবর রাখায় তার প্রতি ভোটারদের ভালোবাসাটাও ছিলো গভীর। আর সেই প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ভোটের রাজনীতি করে সারা বছর। ভোটারদের সুখ-দুঃখে ছুটে যেত যখন তখন। ভোটারদের আপন ভাইয়ের মত ¯েœহ করতো, ভালোবাসতো। তা দেখে জহরি লাল কুন্ডুদের গা জ্বলতো। আর মাথাফুলা জহরি লাল কুন্ডু ও তার লোকজন ভোটারদের খোজখবর নিতো শুধু নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে। ফলে তাকে কেউ মন থেকে ভোট দিতো না। ভোট নিতো জোর করে প্রকাশ্যে, অপকৌশলে।
-তারপর দাদু?
-আগের বার যার কাছে হারলো এবার তাকে নিয়ে নানা অপকৌশল করেও আর জিততে পারলো না। ব্যালট পেপার নিয়ে অপকৌশল করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়, পীর বাবার দয়াও পায়নি। পীর বাবা বুঝে গেছে, মাথাফুলা আবালের জন্য নিজের ইমেজটাতো আর নষ্ট করা যায় না! আমাকে সবাই ভালোবাসে, মাথাফুলার জন্য কেন আমি সকলের কাছে ঘৃনার পাত্র হবো। তাই পীর বাবা এবার কোন সাপোর্ট না দিলো না। ফলে বিশাল ব্যবধানে হেরে গেলো।
-বলো কি দাদু?
-হ্যারে, বিশাল ব্যবধানে জহরি লালের দল হেরে গেলো। হেরেই ক্ষ্যান্ত দিলো না। এবার শুরু করলো আরেক ভন্ডামি।
-নির্বাচনে হেরেছে। এর পর আর কোন ভন্ডামি বাকি রাখলো, লজ্জা সরম কি ধুইয়া খাইছে দাদু?
-বাকি ছিলোরে, বাকি ছিলো। নির্বাচনের পর হেরে গেলে বিজয়ী কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হয়। কিন্তু এবার দায়িত্ব দিচ্ছে না। হারার পরে নতুন ধুয়া তুলছে, নির্বাচন ঠিক মতো হয় নাই, মামলা করুম, দায়িত্ব দিমু না, সংবিধান ঠিক করতে হবে, টাকা খাইয়া ভোটাররা ভোট দিছে, আমাদের যারা ভোট দিছে তারা ভালো, ওদের যারা ভোট দিছে তারা হাজী হলেও পাজি, সব বিক্রি হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। জহরি লাল কুন্ডু নিজে যে টাকা খাইছে তা ভুলেই গেছে!
-বলো কি দাদু? ঝামেলা থাকলে নির্বাচনে গেলো কেন? মনোনয়ন দেয়ার আগে ঝামেলা আছে সেটা কি বুঝতে পারে নাই? আর হারার পরেই বা এমন আবোল তাবোল বকছে কেন?
-কারন আছে রে দাদুরা। তবে শোন। জহরি লাল কুন্ডু যাকে নিয়ে নির্বাচনে নেমেছে তার কিছুটা স্বচ্ছতা ছিলো, জনপ্রিয়তাও ছিলো। আগের বার যেই লোকটা তার নির্বাচন করেছে তার সাথে বেইমানী করে আগের বারের প্রতিদ্বন্দির সাথে আতাত করে নির্বাচন করেছে। আর জহরি লাল ওর সাথে যোগ দিয়েছে কেন জানিস? সেই লোকটাকে ভোটারদের কাছে স্থায়ী ভাবে খারাপ বানাতে পারলে জহরি লাল কুন্ডুর লাভ হয়। সরল লোকটার পাছায় সিরা ভরাইয়া দিলো। সিরা ভরান নিয়া আজ আর কোন প্রশ্ন করবি না, আরেক দিন সিরা ভরানির কিচ্ছা বলবো। জহরি লাল কুন্ডু ভবিষ্যতে যাতে চান্স নিতে পারে সেই অপকৌশল করে লোকটাকে পচানোর ধান্ধা শুরু করলো। আর ক্ষমতার লোভ হয়তো পেয়ে বসেছিলো ভালো লোকটাকে। তাই সেও ঐ উপদেষ্টাদের কথায় নাচতে শুরু করলো।
-উপদেষ্টাদের মানে? জহরি লাল কুন্ডু ছাড়াও কি আরো উপদেষ্টা ছিলো সরল লোকটার সাথে?
-হ্যা, ছিলো, এমন অনেক উপদেষ্টা ছিলো যারা নিজের দোকানে বসে গল্প করে না কারন আলো জ্বালালে তেল খরচ হবে, চা-পান খাওয়ানো লাগবে সেই খরচের ভয়ে। অন্যের দোকানে বসে গল্প চাটামি করতো। কারো মুখে কোনদিন চা-পান না দিলেও নির্বাচন এলে একটা পুরান কট কাপড়ের প্যান্ট পড়ে মুখে একটা পান পুরে দাত দিয়ে শুপারি কাটতে কাটতে ভোট চাইতে, পরে যখন ভোটাররা তার ভন্ডামি বুঝে ফেলেছে তখন সেই উপদেষ্টা আস্তের উপর সরে পড়েছে! এমন চাটা, কৃপন অনেক আছে ঐ হাটে।
-আরও আছে এমন উপদেষ্টা দাদু?
-হ্যা, আছে তো। এক উপদেষ্টা আছে এমন কৃপন যে আশি টাকা হাতে এলে বিশ টাকা ধার করে একশ টাকা বানিয়ে রেখে দিতো। ধার্মিক ভাব নিয়ে চলতো কিন্তু কুটনার হদ্দ ছিলো। আরেক উপদেষ্টা গজিয়েছে তাকে হালিম চাটা বলেই সবাই ডাকতো। জাতীয় ছাত্রলীগ বললেই সবাই চিনে। কথা শুরু করলেই গল্প শুরু করে দিতে সে জাতীয় ছাত্রলীগ করা নেতা, অমুক করেছে, তমুক করেছে। গ্রামের থেকে উঠে আসা ফহিন্নির পুত, ভাব ধরেছে জমিদারের। সব বাইনচোদের দল। বড় হলে ওদের সম্পর্কে জানতে পারবি, এখন কিচ্ছা শোন।
-তার পর দাদু?
-তারপর আর কি? ভালো লোকটাকে গুয়ের মত পচিয়ে ছেড়ে দিলো। নিয়ম অনুসারে ক্ষমতা তো আর না দিয়ে পারলো না। কয়েকদিন ঘুরিয়ে পেচিয়ে পরে ক্ষমতা দিতে বাধ্য হলো।
-তাহলে ঐ খারাপ জহরি লাল কুন্ডুদের কথা লোকটা শুনলো কেন দাদু?
-শোন, ভালো মানুষও মাঝে মাঝে শয়তানের ফাদে পা দেয়। লোভে পড়ে ভালো মানুষটা হয়তো শয়তানগুলোর ফাদে পা দিয়েছে। গল্পের ভিতরেই আরেকটা গল্প বলি শোন। এই গল্পে একটা শিক্ষনীয় বিষয় আছে। ধরতে পারলে তোদের কুকিজ কিনে খাওয়াবো, সাথে লজেন্সও দেব।
-বল দাদু, দেখি ধরতে পারি কি না?
-এক দেশে জহরি লাল কুন্ডুর মতো এক মাতাল ছিলো। সেই মাতাল পাগলা পানি একটু বেশিই পছন্দ করতো। একদিন পাগলা পানি খেতে খেতে একটু বেশিই মাতাল হয়ে পড়েছে। অন্ধকার রাতে, টলতে টলতে বাড়ি যাচ্ছিলো। হাতে ছিলো একটা বোতল। বাড়িতে গিয়ে আবারও খাওয়ার জন্য বোতলে করে কিছুটা পাগলা পানি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলো। হঠাৎ হাত থেকে পাগলা পানির বোতল পড়ে গেলো। এখন অন্ধকারের মধ্যে বোতলতো খুজে পাচ্ছে না। তখন নিরুপায় হয়ে মা কালির সাহাহ্য চাইলো। বললো, মা কালি, তুমি যদি আমার বোতলটা খুজে দাও তবে তোমার নামে জোড়া পাঠা বলি দেব। মা কালি জহরি লাল কুন্ডুর কথায় প্রসন্ন হলেন। খুশি হয়ে মা কালি বোতলটা পায়ের একদম কাছে এনে বুড়ো আঙ্গুলে ছোয়ালেন। এবার মাতাল হাত দিয়ে বোতলটা তুললো। পরের দিন জোড়া পাঠা বলি না দেয়ায় মা কালি স্বপ্নে আবির্ভূত হলো। এসে বললো, কিরে জোড়া পাঠা দিবি বললি কই? তখন ঘুম থেকে উঠে জহরি বললো, মা হাতের অবস্থা ভালো না, দুইটা পাঠা দিতে পারবো না, যাও, একটা পাঠা দিব। পরের দিন সেই একটা পাঠা দিবে বলে তাও দিলো না। মা কালি এসে আবার বললো, কিরে একটা দিবি বললি দিলি নাতো। এবার বললো, মা, সত্যিই হাতের অবস্থা ভালো না, পাঠার যা দাম দিতে পারবো না, যাও, একটা মোড়গ দিব। পরের দিন সেই মোড়গও দিলো না জহরি। মা কালি এসে বললো, কিরে মোড়গ কই? এবার জহরি বললো, মা হাতের অবস্থা খুবই খারাপ, মোড়গ কেনার পয়সাও নেই, পাগলা পানি খাওয়ার পয়সা জোটানোই দায় হয়ে পড়েছে মোড়গ কিনবো কেমনে? যাও, একটা চড়–ই পাখি দিব। পরের দিন চড়–ই পাখি না দেয়ায় মা কালি এসে বললো, কিরে আর কত ঘুরাবি, কথা তো রাখলি না, চড়–ই পাখি কই? এবার বললো, মা বিশ্বাস করো, আমার হাতের অবস্থাতো ফিরছেই না, চড়–ই পাখি ধরতেও পারছি না, যাও, একটা ফরিং বলি দিবো, এবার কথার আর নরচর হবে না। পরের দিন সেই ফরিংও দিলো না। এবার মা কালি এসে বললো, কিরে ফরিং কই? তখন জহরি বললো, মা তুমি কি পাগল হইছো? তুমি একটা মাতালের কথাও বিশ্বাস করো? আর কত ফরিং ঘাসের আগায় উড়াউড়ি করে, একটা ধইরা খাইলেই পারো, এইটার জন্য আবার আসা লাগে?
-এবার বল, কি শিখলি?
দাদু, আসলে মাতালের কথা বিশ্বাস করতে নাই!
-একদম ঠিক কথা। ধরতে পেরেছিস। আমি কিন্তু আমার কথা রাখবো। আর যা বলেছি তাই হবে, কুকিজ আর লজেন্স সবই পাবি। বোনাস হিসাবে পাবি হাটের হারান দা’র দোকান থেকে খাজুর আর রসগোল্লা।

No comments:

Post a Comment