পথের পদ্য - ০১
জোকের তেল তাবিজ হালুয়া আর কত কাল?
॥ ০১ ॥
নিয়াজ সাহেব ফুটপাত দিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ থেমে গেলেন।
তার চোখ আটকে গেলো একটি লাল প্লাস্টিকের বড় বলের দিকে। বল ভর্তি তরতাজা জোক কিলবিল করছে। কৌতুহল নিয়ে দাড়িয়ে গেল। দেখলো বল একটি নয় পাঁচটি। প্রতিটি বলে হাজার হাজার জোক। কিলবিল করছে। কোনোটা বল বেয়ে বেয়ে উঠে যেতে চাইছে বাইরে। যেই উঠতে চাইছে অমনি এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে বলের কাধে বাড়ি দিচ্ছে। আর উঠতে থাকা জোকগুলো ঝর ঝর করে পড়ে গেল বলে রাখা পানিতে। ছোট খাট একটি জটলা। একজন লোক একটি প্লাস্টিকের মোড়াতে বসা। হাতে একটি লাঠি। বসে লেকচার দিচ্ছে। তাদেরকে সবাই লেকচারার বলেই ডাকে।
না, এই ব্যাক্তি পিএসসির মাধ্যমে বিসিএস দিয়ে লেকচারার হননি। ইনি রাস্তার লেকচারার। রাস্তায় লেকচার দিতে দিতে লেকচারার হয়েছেন। কথায় আছে না? বকতে বকতে হয় বক্তা, আর পিটাতে পিটাতে হয় তক্তা! উনি বকতে বকতে বক্তা অর্থাৎ লেকচারার হয়েছেন।
তো লেকচারার সাহেব বসে আছেন লাঠি হাতে। বলগুলি ভর্তি জোক। চতুর্দিকে সারি সারি বয়াম। বয়াম ভর্তি বড় সাইজের জোক। এক একটি জোকের সাইজ হবে আট থেকে দশ ইঞ্চি। দেখলে মনে হবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে জোকগুলো।
নিয়াজ সাহেব দাড়িয়ে পড়লো জোকগুলো দেখে। জোক দেখে তার গা ঘিন ঘিন করতে লাগলো। তবুও দেখার ও শোনার ইচ্ছা সংবরণ করতে পারলো না। লেকচারার সাহেব তার লেকচার শুরু করলো-
: ভাই সাব। জীবনে অনেক চিকিৎসা করেছেন। কোন ওষুধে কাম হয় নাই। আমার কাছে আজ শুনে যান কিভাবে সফল হবেন। ওষুধ কিনতে হবে না। শুনলে কিনতে হয় না, দেখলে ও কিনতে হবে না। কেনা না কেনা আপনার ব্যাপার! নিয়মটা শুনে যান কিভাবে বানাইবেন আর কিভাবে ব্যবহার করবেন। এই জোকের তেল ব্যবহার করলে ---শক্ত মজবুত হবে। ব্যাথা বেদনা দুর হবে।
তার চোখ আটকে গেলো একটি লাল প্লাস্টিকের বড় বলের দিকে। বল ভর্তি তরতাজা জোক কিলবিল করছে। কৌতুহল নিয়ে দাড়িয়ে গেল। দেখলো বল একটি নয় পাঁচটি। প্রতিটি বলে হাজার হাজার জোক। কিলবিল করছে। কোনোটা বল বেয়ে বেয়ে উঠে যেতে চাইছে বাইরে। যেই উঠতে চাইছে অমনি এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে বলের কাধে বাড়ি দিচ্ছে। আর উঠতে থাকা জোকগুলো ঝর ঝর করে পড়ে গেল বলে রাখা পানিতে। ছোট খাট একটি জটলা। একজন লোক একটি প্লাস্টিকের মোড়াতে বসা। হাতে একটি লাঠি। বসে লেকচার দিচ্ছে। তাদেরকে সবাই লেকচারার বলেই ডাকে।
না, এই ব্যাক্তি পিএসসির মাধ্যমে বিসিএস দিয়ে লেকচারার হননি। ইনি রাস্তার লেকচারার। রাস্তায় লেকচার দিতে দিতে লেকচারার হয়েছেন। কথায় আছে না? বকতে বকতে হয় বক্তা, আর পিটাতে পিটাতে হয় তক্তা! উনি বকতে বকতে বক্তা অর্থাৎ লেকচারার হয়েছেন।
তো লেকচারার সাহেব বসে আছেন লাঠি হাতে। বলগুলি ভর্তি জোক। চতুর্দিকে সারি সারি বয়াম। বয়াম ভর্তি বড় সাইজের জোক। এক একটি জোকের সাইজ হবে আট থেকে দশ ইঞ্চি। দেখলে মনে হবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে জোকগুলো।
নিয়াজ সাহেব দাড়িয়ে পড়লো জোকগুলো দেখে। জোক দেখে তার গা ঘিন ঘিন করতে লাগলো। তবুও দেখার ও শোনার ইচ্ছা সংবরণ করতে পারলো না। লেকচারার সাহেব তার লেকচার শুরু করলো-
: ভাই সাব। জীবনে অনেক চিকিৎসা করেছেন। কোন ওষুধে কাম হয় নাই। আমার কাছে আজ শুনে যান কিভাবে সফল হবেন। ওষুধ কিনতে হবে না। শুনলে কিনতে হয় না, দেখলে ও কিনতে হবে না। কেনা না কেনা আপনার ব্যাপার! নিয়মটা শুনে যান কিভাবে বানাইবেন আর কিভাবে ব্যবহার করবেন। এই জোকের তেল ব্যবহার করলে ---শক্ত মজবুত হবে। ব্যাথা বেদনা দুর হবে।
এভাবে প্রায় অর্ধশত রোগের নাম বললো যা কিন্তু অনেক এমবিবিএস ডাক্তাররাও ভাল করার কথা বলতে পারে না। সেই সব রোগের জন্য লেকচারার সাহেব শতভাগ গ্যারান্টিসহ চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিলেন।
একটু দম নিয়ে লেকচারার সাহেব আবার শুরু করলেন-
: আমার ওষুধ আপনাদেরকে কিনতে হবে না। নিয়মটা শুনে যান। আর ওষুধ বানানের পদ্ধতিটা জেনে যান। নিজে বানাইয়া ব্যবহার করবেন। ভাল না হলে মুখের উপরে ছুড়ে মারবেন। এই দেহেন, এরকম দুইটি মোটা জীবন্ত জোক নিবেন। জোক দুটির মুখে লবন দিয়ে মেরে একটি ঝুনা নারিকেল (পাকা নারিকেল) নিবেন। নারিকেলের মুখ ছিদ্র করে পানি ফেলে দিবেন। চাইলে পানিটা খেতেও পারেন। পানি ফেলার পর এই জোক দু'টাকে ভিতরে ভরবেন। এর সাথে ভরবেন পারদ, ---- সহ ---। এর পর নারিকেলের মুখটা বন্ধ করে আমাবষ্যা-পূর্ণিমার মাঝামাঝি রাতে কালিঘাটে গিয়ে এক নিশ্বাসে মাটির নিচে পুতে রাখবেন। রাতটা যেন শনিবার হয়। এর পর তিন মাস পরে আবার শনিবার রাতে তুলে আনবেন। হাতল ছাড়া দা দিয়ে এক কোপে কেটে নারিকেল দুই ভাগ করে ফেলবেন। কাটার পরে দেখবেন ভিতরে কাদার মত হয়ে গেছে। সেই কাদার মত বস্তু এক নিশ্বাসে তুলে একটি মাটির পাতিলে এক পোয়া সরিষার তেল, এক পোয়া তিলের তেল, ----- দিয়ে মাটির পাতিলে মাটির চুলায় তেতুলের লাকরি (চলা কাঠ) দিয়ে ভাল করে জাল দিতে হইবো। এর পর যেই তেল হবে সেই তেল ছেকে মালিশ করবেন। ঘা, প্যাচরা, দাউদ, একজিমায় লাগাইবেন। রাতে খাউজাইয়া রাতেই লাগাইবেন সকালে কইতে পারবেন না কোন খানে খাউজাইছেন আর কোন খানে লাগাইছেন। এত ভাল কাজ করবো। ইনশআল্লাহ। ভাল নিয়ত করে লাগাইবেন। দেখবেন সকল রোগ ভাল হয়ে গেছে। তবে ভাই একটা কথা আমার ওষুধ মনের ব্যাথা হলে লাগাইবেন না। এ ওষুধ মনের ব্যাথা সারে না। কিন্ত আমি জানি আপনারা এত কিছু জোগার করতে পারবেন না। একটা যদি ভুল হয় তবে ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই আমি আপনাদের কথা ভেবে তৈরী করে রেখেছি। মূল্য এক দাম পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু প্রচার পাবলিসিটির জন্য আজ পঞ্চাশ টাকা নেব না। একে দুই ভাগে ভাগ করে এক ভাগ ফেলে দিলাম। হাতে থাকে কত? জোরে বলুন।
পাঁচ-ছয়জন লোক বলে উঠলো-
: পচিশ টাকা।
: পচিশ টাকাকে পাঁচ ভাগ করে দুই ভাগ ফেলে দিলাম। থাকে কত?
: পনের টাকা।
: হ্যা! পনের টাকা দিয়ে এখন সর্ব প্রথম যে ভাই আমারে সরমান (সম্মান) করবেন আমি তাকে এমন একটা সরমান করবো যা আপনি ভাবতেও পারছেন না।
প্রথম একজন হাত তুলতেই একে একে দশ-বার জন হাত তুলে দাড়িয়ে গেল। বেশ ভালই বিক্রি হলো। নিয়াজ সাহেব হতাশ হয়ে চলে গেল তার কাজে।
একটু দম নিয়ে লেকচারার সাহেব আবার শুরু করলেন-
: আমার ওষুধ আপনাদেরকে কিনতে হবে না। নিয়মটা শুনে যান। আর ওষুধ বানানের পদ্ধতিটা জেনে যান। নিজে বানাইয়া ব্যবহার করবেন। ভাল না হলে মুখের উপরে ছুড়ে মারবেন। এই দেহেন, এরকম দুইটি মোটা জীবন্ত জোক নিবেন। জোক দুটির মুখে লবন দিয়ে মেরে একটি ঝুনা নারিকেল (পাকা নারিকেল) নিবেন। নারিকেলের মুখ ছিদ্র করে পানি ফেলে দিবেন। চাইলে পানিটা খেতেও পারেন। পানি ফেলার পর এই জোক দু'টাকে ভিতরে ভরবেন। এর সাথে ভরবেন পারদ, ---- সহ ---। এর পর নারিকেলের মুখটা বন্ধ করে আমাবষ্যা-পূর্ণিমার মাঝামাঝি রাতে কালিঘাটে গিয়ে এক নিশ্বাসে মাটির নিচে পুতে রাখবেন। রাতটা যেন শনিবার হয়। এর পর তিন মাস পরে আবার শনিবার রাতে তুলে আনবেন। হাতল ছাড়া দা দিয়ে এক কোপে কেটে নারিকেল দুই ভাগ করে ফেলবেন। কাটার পরে দেখবেন ভিতরে কাদার মত হয়ে গেছে। সেই কাদার মত বস্তু এক নিশ্বাসে তুলে একটি মাটির পাতিলে এক পোয়া সরিষার তেল, এক পোয়া তিলের তেল, ----- দিয়ে মাটির পাতিলে মাটির চুলায় তেতুলের লাকরি (চলা কাঠ) দিয়ে ভাল করে জাল দিতে হইবো। এর পর যেই তেল হবে সেই তেল ছেকে মালিশ করবেন। ঘা, প্যাচরা, দাউদ, একজিমায় লাগাইবেন। রাতে খাউজাইয়া রাতেই লাগাইবেন সকালে কইতে পারবেন না কোন খানে খাউজাইছেন আর কোন খানে লাগাইছেন। এত ভাল কাজ করবো। ইনশআল্লাহ। ভাল নিয়ত করে লাগাইবেন। দেখবেন সকল রোগ ভাল হয়ে গেছে। তবে ভাই একটা কথা আমার ওষুধ মনের ব্যাথা হলে লাগাইবেন না। এ ওষুধ মনের ব্যাথা সারে না। কিন্ত আমি জানি আপনারা এত কিছু জোগার করতে পারবেন না। একটা যদি ভুল হয় তবে ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই আমি আপনাদের কথা ভেবে তৈরী করে রেখেছি। মূল্য এক দাম পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু প্রচার পাবলিসিটির জন্য আজ পঞ্চাশ টাকা নেব না। একে দুই ভাগে ভাগ করে এক ভাগ ফেলে দিলাম। হাতে থাকে কত? জোরে বলুন।
পাঁচ-ছয়জন লোক বলে উঠলো-
: পচিশ টাকা।
: পচিশ টাকাকে পাঁচ ভাগ করে দুই ভাগ ফেলে দিলাম। থাকে কত?
: পনের টাকা।
: হ্যা! পনের টাকা দিয়ে এখন সর্ব প্রথম যে ভাই আমারে সরমান (সম্মান) করবেন আমি তাকে এমন একটা সরমান করবো যা আপনি ভাবতেও পারছেন না।
প্রথম একজন হাত তুলতেই একে একে দশ-বার জন হাত তুলে দাড়িয়ে গেল। বেশ ভালই বিক্রি হলো। নিয়াজ সাহেব হতাশ হয়ে চলে গেল তার কাজে।
॥ ০২ ॥
বিশিষ্ট আলেম মানুষ। চারমুষ্ঠি দাড়ি। কাঁচা-পাকা দাড়িতে মেহেদী দেয়ায় বেশ ভালই লাগছে। নূরানী চেহারা দেখলেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করবে। সামনে নানান রকম জিনিস নিয়ে বসে আছেন। একটা করে ধরেন আর একদমে বলে যান-
: এটা ধনেশ পাখির ঠোট, একটু দিয়ে দিলাম; এটা মহা সমুদ্রের কট মাছের কাটা, একটু কেটে দিলাম; এটা বনরুই এর ছাল, একটু কেটে দিলাম; এটা কুলুকুলু গাছের ছাল, একটু কেটে দিলাম; এটা ফাঁসির দড়ি, একটু কেটে দিলাম; এটা জারজ মানুষের হাড়, একটু কেটে দিলাম; ---------- ।
এভাবে প্রয় পঞ্চাশ ধরনের জিনিস একটু কেটে দিলাম-একটু কেটে দিলাম বলে কেটে দিলো। এরপর কিছু কাগজ পেচিয়ে একটা তাবিজ তৈরী করলো। একটা মাদুলিতে ভরে বলে-
: ভায়েরা। নিজের চোখে দেখলেন কতগুলি আইটেম একটু করে কেটে দিয়ে দিলাম। এর হাদিয়া যদি হাজার টাকাও ধরা হয় তবে এর মূল্য দেয়া হবে না। শুধুমাত্র আপনাদের কথা ভেবে এর হাদিয়া নেব দশ টাকা চার আনা। এক দাম এক রেট। কোন দামাদামি নেই। এটা তেলে চুবাইয়া গায়ে মাখবেন, গায়ের রং ফর্সা হবে। পানিতে চুবাইয়া পানি খাইবেন পেটের সকল ওষুক ভাল হইবো। গলায় বাধবেন- ভাল গান গাইতে পারবেন, হাতে বাধবেন- হাতে শক্তি বাড়বো। কিন্তু মাজায় বাধবেন না। যে যেই নিয়ত করে বাধবেন ভাল হয়ে যাবে ইনশআল্লাহ। একশত ভাগ গ্যারান্টি। ভাল হয় নাই এমন প্রমান এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারে নাই। দিতে পারলে মূল্য ফেরৎ। আর আমি জানি কেউ দিতে পারবেও না।
এখানেও একজন প্রথম ‘সরমান’ করার জন্য দাড়িয়ে গেলো। এর পর আর ক্রেতার অভাব হলো না। সরলমতি-কোমলমতি সাধারণ লোকের কান্ড দেখে হতাশ নিয়াজ সাহেব দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে চলে গেল।
॥ ০৩ ॥
বিশাল একটি লাল ত্রিপল বিছিয়ে তার উপর চলচ্চিত্রের ফিল্ম রাখার বক্সে ভরা বিভিন্ন শুকনা দ্রব্য। এক একটা দেখাচ্ছে, তার নাম ও গুনাগুন বলছেন হাকিম সাহেব। না। এই হাকিম কোন হুকুম করার হাকিম না। ইনি ইউনানী দাওয়াখানার চিকিৎসক বিশিষ্ট হারবাল গবেষক! হেকিম আবদুল কুদ্দুস মিয়া। পাত্রে সাজানো দুই শতাধিক দ্রব্য দেখিয়ে পাশে রাখা দশ-বারটি হরলিকস এর বয়াম ভর্তি গুরা একটা চকচকে স্টিলের বলে রাখলো। সেই সাথে কিছুটা মধু, ঘি, কিসমিস দিয়ে মাখালেন। এর পর নাম না জানা অপরিচিত কিছু গুরা দিলেন। দেয়ার সময় এক একটি দেখিয়ে বললেন-
: এটার নাম বাতাসের আগা, আর এটার নাম রৌদ্রের গুরা। আর এখন দিচ্ছি কিছু পাহাড়ের ঘাম।
এই সব মিশিয়ে তৈরী হলো এক অনন্য হালুয়া। যা দেখতে অনেকটা চাটনির মতো। হাকিম সাহেব ঘোষনা দিলেন এই হালুয়া খেলে নব্বই বছরের বুড়ার বয়স মনে হবে আটাশ কি উনিশ। আর বার বছরের কিশোর খেলে বিশ কি বাইশ বছরের যুবকের মত উন্মাদ হয়ে যাবে। ওষুখ থাকলেও খাবেন আর না থাকলেও খাবেন। যতবড় কোষ্ঠকাঠিন্যই হোক না কেন এটা খেলে বাথরুমে যেয়ে কোৎনা দিতে হবে না। শুধু পিছনের কাপড়টা তুলে বসলেই হবে। দেখবেন ওষুধের কেরামতি। খেয়ে আপনি রাতে ঘুমাবেন কিন্তু আমার ওষুধ ঘুমাবে না। আমার ওষুধ সমানে কাজ করবে।
চটকদার কথা শুনে রিক্সা চালক, শ্রমজীবি টাইপের লোকজন ত্রিশ টাকা, পঞ্চাশ টাকা মূল্যের বিভিন্ন ফাইল কিনে নিলো। সর্ব রোগের মহাঔষধ মাত্র ত্রিশ টাকা-পঞ্চাশ টাকা। এ সুযোগ হাত ছাড়া করাটাই যেন বোকামি!
নিয়াজ সাহেব বোকা বনে গেলেন। হায়রে বোকার দল! এগুলো খেলে এমনিতেই পেট খারাপ হয়ে পেট নেমে যাবে। কষাতো থাকবেই না নির্ঘাৎ ডায়রিয়া হয়ে যাবে।
প্রিয় পাঠক। উপরের তিনটা ঘটনা কোন গাল গল্প নয়। আমাদের দেশের পথের ধারের বাস্তব ঘটনা। এভাবেই প্রশাসনের নাকের ডগায় আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সকল রোগের ঔষধ হিসেবে ফুটপাতের লেকচারারদের পাতা ফাঁদ থেকে কিনে নিচ্ছে নানান তেল-মালিস করার জন্য, নিচ্ছে তাবিজ, খাচ্ছে হালুয়া আপদ-বালা-মুসিবত থেকে ভাল হবার জন্য।
সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কেনই বা তারা এসব কিনে নিচ্ছে। ব্যবহার করে অপ চিকিৎসার শিকার হচ্ছে। আসলে অজ্ঞতা, অশিক্ষার সাথে সাথে সরকারের অবহেলা কি নাই। আছে। সরকার যদি যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারতো। চিকিৎসক নামের একশ্রেণীর কিছু কষাই এর হাতে যদি রোগিকে জবাই হতে না হতো তবে কেউ এই সর্টকাট চিকিৎসায় উৎসাহী হতো না। আমাদের যেমন শিক্ষার অভাব আছে। আছে অবকাঠামোর অভাব। তেমনি আছে চিকিৎসকদের মানসিকতার অভাব। চিকিৎসকদের সুচিকিৎসা এখন সেবা নয় পন্য হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা যদি অজ্ঞ, সহজ, সরল রোগিদের হাসপাতালমুখি করে সঠিক চিকিৎসা নিতে উৎসাহী না করে তবে তারা হাসপাতাল বিমুখ থেকেই যাবে। আর রাস্তায় দাড়িয়ে কিনবে জোকের তেল, তাবিজ আর হালুয়া।
আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের? আসুন সবাই মিলে সচেতন হই। অসুখ বিসুখ হলে চিকিৎসকের সরনাপন্ন হই। সকল চিকিৎসকই খারাপ না। এখনো অনেক চিকিৎসক আছে যারা সমাজকে দিয়ে যাচ্ছে। অপ চিকিৎসা থেকে দুরে থাকি এবং সবাই মিলে অপ চিকিৎসা থেকে দুরে থাকি এবং সবাই মিলে অপচিকিৎসকদেরও মানসিক চিকিৎসা করাই।
ছেঁড়া দুই টাকার নোট .....
কেমন আছেন?জাবেদ সাহেব রিভলবিং চেয়ারে বসা। চোখ আধ বোজা, একটু একটু দোল খাচ্ছিল। প্রশ্নটা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলেন। একগাল অরেঞ্জ ফ্লেভারের হাসি হেসে উত্তর দিলেন-: ভাই ছেঁড়া দুই টাকার নোটের মত।উত্তরটা শুনে একটু অবাকই হলাম। এটা আবার কেমন ভাল থাকা ! জিজ্ঞেস করলাম-: তার মানে ?: মানে? মানে বাসে বলেন, দোকানে বলেন, যেখানেই যাবেন ছেঁড়া ফাটা দুই টাকার নোটের অবস্থা খারাপ হলেও চলছে। আমার অবস্থা অনেকটা তাই। ভাল না হলেও জীবন চলে যাচ্ছে একরকম।কথাটা জাবেদ সাহেব মন্দ বলেননি। দুই টাকার নোটের যা অবস্থা ! ছেঁড়া, ময়লা, দেখলেই মনে হবে বাংলাদেশের এই দুই টাকার নোটের উপর দিয়ে সিডর বয়ে গেছে বার বার। ধ্বংসের ছাপটা তাই স্পষ্ট।দুই টাকার নোটের মূল্যমান যদিও দুই টাকা অর্থাৎ দুই শত পয়সা এটা সবারই জানা। যে বিষয়টা না জানেন সে হয় শিশু নয় পাগল। কিন্তু দুই টাকার একটি নোট জোড়া দিতে অনেক সময় দেখা গেছে পচাত্তর পয়সার আঠা, পচিশ পয়সার স্কচ টেপ, কখনবা কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে। দুই টাকার একটি নোটে দুই থেকে দুই দশে বিশটি জোড়া তালি পেলে অবাক হওয়ার কোন কারন নেই। বরং কোন দুই টাকার নোটে যদি জোড়া তালি না পাওয়া যায় তবে ভাবতে হয়;হায়! দেশের জালিয়াত চক্রের মাথা বুঝি গেছে! দুই টাকার মত মূল্যমানের নোটেরও কি শেষ পর্যন্ত জাল ছেপে নিলো? হ্যাঁ! নতুন দুই টাকার নোট দেখলে জাল কিনা সেটাই চিন্তা করে প্রথম!!তবে নোট যতই ছেঁড়া বা ফাটা হোকনা কেন তার কদর আছে। বাসের কণ্ট্রাক্টরকে যতই ছেঁড়া-ফাটা নোট দেন কোন সমস্যা হবে না। মামা ডেকে প্লাস্টিকের হাসি হেসে সাদরে গ্রহন করবে টাকাটা। আবার যখন ভাংতি দেবে তখন ঐ দুই টাকার ছেঁড়া-ময়লা নোটই আপনাকে ধরিয়ে দেবে। যদি নিতে না চান তবে হাসি মাখা মুখে বলবে-: মামা নেন। না চললে আমারে ফেরৎ দিয়েন।: তোমাকে পাব কোথায়?: গাড়ির নাম্বারটা লেইখা লন! কোন সমস্যা হইবো না।: তোমার তো সমস্যা নাই, সমস্যা তো আমার।: মামা আমারতো সমস্যা নাই, আপনারও সমস্যা হইবো না।তবে সত্যিই কোন সমস্যা নাই। যাকে দেই তাকেই বলি সমস্যা নাই। যে দেয় সেই বলে সমস্যা নাই। সত্যিই এক সময় ছেঁড়া দুই টাকার নোট এতটা ‘চল’ হয়ে গেল যে কয়েন পকেট থেকে পড়ে যাবে ভেবে মানুষ ছেঁড়া দুই টাকার নোট চেয়ে নেয়া শুরু করে।ছেঁড়া টাকার কথা বলতে বলতে ছেঁড়া টাকা নিয়ে তৈরী করা একটা বিজ্ঞাপন চিত্রের কথা মনে পড়লো।এক ভদ্র মহিলা বাজারে গিয়ে দোকানির কাছ থেকে কিছু তরি-তরকারি, শাক-সবজি কিনলেন। যার মূল্য হলো-ধরুন আটানব্বই টাকা। দোকানিকে ভদ্র মহিলা একশত টাকার একটি তরতাজা কচকচে নতুন নোট দিলেন। দোকানি ভদ্র মহিলাকে দিল ছেঁড়া দুই টাকার একটা নোট। তা আবার যেন তেন নোট নয় সিডরে বিধ্বস্ত দুই টাকার নোট! নোট দেখে ভদ্র মহিলাতো ক্ষেপে গেলেন। রাগে ক্ষোভে গজরাতে গজরাতে বললেন-: আরে! আপনাকে এত সুন্দর একটা নতুন নোট দিলাম। অথচ আপনি আমাকে এমন একটা ছেঁড়া ফাটা নোট দিলেন? বদলে ভাল একটা নোট দেন। এটা চলবে না।দোকানি বললো-: কন কি আফা! চলবো। দুই টাহার নোট আবার অচল আছে নাকি? লাম্বারটা আছে কিনা হেইডা খালি দেখবেন।: না না এটা চলবে না। আমায় টাকা বদলে দিন।দোকানি আর ভদ্রমহিলা চেচামেচি শুরু করে দিলো। ‘চলবে আর চলবে না’ এ কথা নিয়ে শুরু হয়েছে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি। দুজনে ঝগড়া চলছে ফাটাফাটি। এমন সময় এক অতি বুদ্ধিমান মহিলা এসে বললেন-: দেখি টাকাটা চলবে কিনা?দোকানি একটু হালে পানি পেল। ভদ্র মহিলাকে টাকাটা দেখিয়ে বললো-: দেহেন তো মেডাম! টাহাডা বোলে চলতো না?: হুম!! দেখছি, চলে কি না?এই বলে ভদ্র মহিলা টাকাটা তার হাতে নিয়ে সবজির ঝুড়িতে ফেলে হাত ইশারা করে বলেন-: আসো সোনা, আসো, এদিকে আসো।ঝুড়িতে পড়ে থাকা টাকা আগের মতই পড়ে রইলো। কোন নড়াচড়া করলো না। এবার একটু ধমকের সুরে-: আয়, আয় বলছি। এদিকে আয়।এতেও যখন টাকা নড়লো না তখন জোড়ে ধমক দিয়ে বললো-: আয়, আয় বলছি। নইলে দেব মার।যথারিতি রেজাল্ট আগের মতই। অসুস্থ, ক্লান্ত দেহে নিথর হয়ে পড়ে রইল দুই টাকার নোটটি। এত ডাকাডাকির পরও যখন টাকাটা ভদ্র মহিলার কথা মত আসলো না। একটু নড়লোও না। যেখানে রয়েছে সেখানেই পড়ে রইলো। তখন ভদ্র মহিলা দোকানিকে বললো-: নাহ! দেখুন ভাই, কত বললাম। টাকাটা চললো না। মনে হয় চলবে না!ক্রেতা ভদ্র মহিলা ফিক করে হেসে দিলো কান্ড দেখে।দোকানি নোটটা রেখে দুটি কয়েন ধরিয়ে দিলো। দোকানিকে বোকা বানিয়ে গেল। এটা দোকানি বুঝতে পারলেও কিছু যে বলার নেই তাও বুঝতে পারলো।বোকা বনে কয়েন দিলেও দুই টাকার নোট ছেঁড়া হোক, ফাটা হোক এর কদর যে আছে এটা কেউ অস্বীকার করবে না।দেশের অবস্থা কি? রাজনীতির অবস্থা কি? অর্থনীতির অবস্থা কি? সামাজিক অবস্থা কি? খেলাধুলার অবস্থা কি? শিক্ষা-সংস্কৃতির অবস্থা কি? বাজারের অবস্থা কি? আয়ের অবস্থা কি? ব্যায়ের অবস্থা কি? সাধারণ মানুষের অবস্থা কি? এভাবে প্রশ্ন করলে প্রশ্নের অভাব হবে না।এসব প্রশ্নের উত্তরে যদি বলা হয় যে, দুই টাকার নোটের মত, তবে কি ভুল হবে। সব কিছুরই অবস্থা ছেঁড়া, ফাটা, জোড়া তালি দেয়া, ক্ষয়িষ্ণু তবুও চলছে, চলে এবং চলবে।আসলে ছেঁড়া দুই টাকার নোট কেন চলে? সাধারণ হিসাব এটা। যখন ভাংতি দেয়ার জন্য নতুন নোটের চাহিদা মোতাবেক যোগান থাকে না, তখনইতো চলে! দেশে যখন সুস্থ রাজনীতির অভাব, সুস্থ সংস্কৃতির অভাব, সুশাসনের অভাব, হাল ধরার যোগ্য লোকের অভাব দেখা দেয় তখন ছেঁড়া দুই টাকার মত চাহিদার যোগান হিসেবে চলে আসে অযোগ্য অপশক্তি। তাই দেশে দরকার সুস্থ রাজনীতির ধারা, গণতন্ত্রের ধারা, পরিকল্পিত অর্থনীতির ধারা। নইলে ছেঁড়া ফাটা নোট যেমন ঘুরে ফেরে হাতে হাতে আর শাসনের ভারও চলে যাবে ছেঁড়া ফাটা লোকের হাতে। যার পরিনাম ভাল হবে না।
নগরীর উৎপাত : লিফলেট বিলি
॥ ০১ ॥
রফিক সাহেব ব্যস্ত ব্যবসায়ী। মতিঝিল ব্যাংক পাড়া থেকে কাজ সেরে দ্রুত বেড়িয়েছেন মিরপুর যাবেন বলে। মিরপুরগামী বাসের টিকেট কেটে বসেছেন জানালার ধারে। ভয়ংকর সীসা ও কার্বনডাই অক্সাইড মেশানো ফুরফুরে বাতা আসছে জানালা দিয়ে। বসে বসে ভাবছেন ব্যবসার কথা। হঠাৎ একটি ভিজিটিং কার্ড সাইজের শক্ত কাগজের টুকরো ক্ষেপনাস্ত্রর গতিতে এসে আঘাত করলো রফিক সাহেবের কপালে। আৎকে উঠলেন! দ্রুত জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন, নেকাবে মুখ ঢাকা বোরকা পড়া এক মহিলা। হাতে অনেকগুলো ভিজিটিং কার্ড নিয়ে জানালা দিয়ে ক্ষেপনাস্ত্র বা রকেট লাঞ্চার এর গতিতে ছুড়ে ছুড়ে মারছে যাত্রীদের দিকে। অনেকেই রফিক সাহেবের মত আৎকে উঠে তাকাচ্ছে জানালার দিকে।
জানালা ছেড়ে অতঃপর ছুড়ে মারা কার্ডটির দিকে তাকালেন রফিক সাহেব। দেখেন একটি রুহানী দরবার শরীফ ও দাওয়াখানা’র বিজনেস কার্ড। কার্ডটিতে বড় বড় হরফে লেখা আছে ‘চিশতিয়া রুহানীয়া হুজুরীয়ার ওপেন চ্যালেঞ্জ। সাপ্তাহের সব দিন খোলা। চিঠির মাধ্যমেও দাওয়াই দেয়া হয়। দেশে থাকুন আর বিদেশে থাকুন আমাদের ওপেন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। বিফলে মূল্য ফেরত পাবেন। সফল হলে আস পাশের আরো দু’একজন রুগি পাঠাবেন ইনশাল্লা। আমরা অত্যন্ত যতেœর সাথে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। যে যে রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়-প্রেমে ব্যর্থতা, ব্যবসায় উন্নতি হয়না, পার্টনারের সাথে মনমালিন্য, স্ত্রীর সাথে অমিল, স্ত্রী অন্যের পরকীয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে, স্বামীকে বস করতে চান (গাধা বানতে চান), বিদেশ যাত্রায় বাধা, পাওনা টাকা নিয়ে টালবাহানা, রাজনীতিতে ব্যর্থতা, পুরাতন হাপানি, গ্যাষ্ট্রিক, আলসার, পড়াশুনায় অমনোযোগ। যেকোন সমস্যার জন্য চলে আসুন’।
কার্ডটি পড়ে রফিক সাহেব নিজের অজান্তেই হেসে ফেললেন। লোকে বলে সব সম্ভবের দেশ আমার সোনার বাংলাদেশ! তাইতো মনে হচ্ছে এদের কথায়! কি না পারো এরা? আমাদের এতো সমস্যা!! আমাদের দেশের নেতা নেত্রীরা হিমসীম খাচ্ছে। কর্মকর্তা কর্মচারীরা দিন রাত খেটে যাচ্ছে। সমাজ কর্মীরা বিভিন্ন ফরমুলায় সমাজকে বদলাতে চাইছেন। চিকিৎসকরা চেষ্টা করে যাচ্ছে রোগ শোক সারানোর জন্য। অথচ এদের যদি আমরা নিয়োগ করে আমাদের সমস্যা গুলি তাদের হাতে ধরিয়ে দেই তবে কত সহজেই তারা সমাধান করে দিতে পারত!! এতে সময়ও বাঁচবে আবার অর্থও বাঁচবে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা, আমাদের বিশাল জনশক্তি অন্যকাজে সময় দিতে পারবে!!
রফিক সাহেব কথাগুলো ভাবে আর মনে মনে হাসে। আহ্ কি বিচিত্র এই দেশ!!
॥ ০২ ॥
মহসিন সাহেব মেয়েকে নিয়ে মতিঝিল এসেছিলেন। থাকেন নারায়নগঞ্জে। মেয়ে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দেবেন। ইন্টারভিউ শেষে নারায়নগঞ্জের বাসে রওয়ানা দিয়েছেন বাসায় যাবেন বলে। বাসে বসে মেয়ের কাছ থেকে ইন্টারভিউ সম্পর্কে খোজ খবর নিচ্ছেন।
বাস যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে থামার সাথে সাথে বাসের জানালা দিয়ে মেয়ের কোলে এসে পড়ল একটি রঙ্গীন ফোল্ডিং লিফলেট। তাকাতেই দেখাগেল লিফলেটের উপরে একটি রঙ্গীন ছবি যাতে এক যুবক এক যুবতীকে আলীঙ্গন করে আছে। তাকিয়ে বাবা ও মেয়ে দুজনই বিব্রত। লিফলেটটি একটি ইউনানী দাওয়াখানার।
এই লিফলেটেও একই ধরনের লেখা। যেখানে লেখা আছে- যৌন চিকিৎসা সহ সকল রোগের চিকিৎসা ১০০% নিশ্চয়তার সাথে করা হয়। হেপাটাইটিস এ-বি-সি-ডি তেকে জেড পর্যন্ত, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, এইচ আইভি-এইডস সহ সকল রোগ। তারা ছবি দেখেও রোগ নির্ণয় করে ঔষধ দিতে পারে। আবার বিদেশ থেকে নির্ধারিত ফি পাঠিয়ে দিলে তারা পোষ্ট যোগে ঔষধ পাঠিয়ে দেয়। ভাল হওয়ার বিষয়ে কোন চিন্তা করার প্রয়োজন নেই!! ১০০% নিশ্চয়তাতো আছেই।
রফিক সাহেব বা মহসিন সাহেবের মত বিব্রতকর অযাচিত বিড়ম্বনায় আমরা সকলেই পরি। এটা বর্তমানে একটি নগরের উৎপাতে পরিণত হয়েছে। নগরির যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, মতিঝিল, গুলিস্থান, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, ফার্মগেট, মহাখালীসহ অটো ট্রাফিক সিগনালের অথবা যে কোন বাস স্টপেজের কথাই বলুন না কেন এ উৎপাদ আপনাকে সহ্য করতেই হবে।
খোজ নিলে দেখতে পাবেন এক শ্রেণীর ইউনানী দাওয়াখানা ও ঝারফুকদাতা ভন্ড হুজুরগন এসব বিজ্ঞাপন প্রচার করে সহজ সরল মানুষকে আকৃষ্ট করে। এসব দাওয়াখানা ও দরবার শরীফগুলোতে সাধারণত যৌন রোগকেই প্রাধান্য দেয়া হয় বেশী। এছাড়া সংসারে অমিল, প্রেমে ব্যর্থতা, বিদেশ যাত্রায় বাধা, শত্রুকে বধ করা, ক্যান্সার, গ্যাসট্রিক, আলসার, হেপাটাইটিস বি সহ সকল রোগের ব্যাপারে ১০০% নিশ্চয়তার সাথে কাজ করার প্রলোভন দেখায়।
এই প্রচার কার্ড বা লিফলেটগুলো বিলি করার কাজে এক শ্রেণীর হত দরিদ্র মহিলা ও যুবকদের ব্যবহার করা হয়। সামান্য পারিশ্রমিক দিয়ে এদের কাজ করানো হয়। এই কাজে নিয়োজিত যুবক ও মহিলারা অনেক সময় পকেট মারার কাজেও ব্যস্ত থাকে।
আপনি বাসে উঠছেন, সুযোগ বুঝে দক্ষ হাতে পকেট থেকে কখন যে মানিব্যাগটা নিয়ে নিয়েছে আপনি তা টেরও পাবেন না। আবার জানালার পাশে মোবাইলে কথা বলছেন। হঠাৎ মোবাইল টান মেরে উধাও!! আপনি শত চেচামেচি করেও আর মোবাইল ফিরে পাবেন না। শশুর বাড়ি থেকে নতুন ঘড়ি উপহার পেয়েছে! হাতে দিয়ে ঢাকায় এসেছেন। বাসে উঠে আনমনে বসে আছেন জানালার কাছে হাত দিয়ে। দেখবেন কেউ খুলে বিয়ে গেছে। ধরার কোন সুযোগই পাবেন না। শুধু হাত থেকে মোবাইল বা ঘটিড়ই নয়, কান থেকে দুল কানসহ ছিড়ে নিয়ে দৌর মারে এসব দৌরবিদেরা!!!! আপাত দৃষ্টিতে দেখতে লিফলেট বিলিকারী মনে হলেও এরা সময়-সুযোগ মত হয়ে যায় ছিনতাই কারী, পকেটমার।
এ বিষয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির উপরে গবেষণা করেন এমন কয়েক বন্ধুর সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, এ সকল ভন্ড চিকিৎসক, ফকির, হুজুর, কবিরাজ আমাদের দেশের কোমলমতি মানুষের মনের স্পর্শকাতর বিষয়ে আঘাত করে তাদের উদ্দেশ্য সফল করে। অজ্ঞতার কারনে স্পর্শকাতর বিষয়ে কাউকে বলতে পারে না সাধারণ লোকজন। গোপন সমস্যা বা গোপন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকদের সাথে অনেকেই কথা বলতে চায়না এবং লজ্জা বোধ করেন। অনেক শিক্ষিত লোকও তার সমস্যা নিয়ে সবসময় যথাযথ বিশেষজ্ঞর সাথে আলাপ করেন না, লজ্জাবোধের কারনে। ফলে ঐসব ভুয়া লোকের চটকদার কথায় সাধারণ মানুষ পটে যায়।
চিকিৎসকদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করার জন্য এসব চটকদার বিজ্ঞাপন বিলি করা হয়। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার জন্য সাধারণ মানুষ এদের কাছে গিয়ে প্রতারিত হয় প্রতিনিয়ত। তারা যে ঔষধ দেয় তাতে কোন রোগ ভালতো হয়ই না বরং অনেক সময় বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নিজেদের সমস্যার কথা তো বলতেই পারে না আবার প্রতারিত হওয়ার কথাও বলতে পারে না। এসকল প্রতারকদের হাত থেকে দুরে থাকাই ভাল। শিক্ষাই পারে এ সকল প্রতারণার থেকে আমাদের রক্ষা করতে। আর প্রশাসন একটু হস্তক্ষেপ করলেই আমরা বিব্রতকর এসব লিফলেট বিলিকারীদের হাত থেকে বাঁচতে পারি, সাধারণ মানুষও প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে পারে।
রফিক সাহেব ব্যস্ত ব্যবসায়ী। মতিঝিল ব্যাংক পাড়া থেকে কাজ সেরে দ্রুত বেড়িয়েছেন মিরপুর যাবেন বলে। মিরপুরগামী বাসের টিকেট কেটে বসেছেন জানালার ধারে। ভয়ংকর সীসা ও কার্বনডাই অক্সাইড মেশানো ফুরফুরে বাতা আসছে জানালা দিয়ে। বসে বসে ভাবছেন ব্যবসার কথা। হঠাৎ একটি ভিজিটিং কার্ড সাইজের শক্ত কাগজের টুকরো ক্ষেপনাস্ত্রর গতিতে এসে আঘাত করলো রফিক সাহেবের কপালে। আৎকে উঠলেন! দ্রুত জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন, নেকাবে মুখ ঢাকা বোরকা পড়া এক মহিলা। হাতে অনেকগুলো ভিজিটিং কার্ড নিয়ে জানালা দিয়ে ক্ষেপনাস্ত্র বা রকেট লাঞ্চার এর গতিতে ছুড়ে ছুড়ে মারছে যাত্রীদের দিকে। অনেকেই রফিক সাহেবের মত আৎকে উঠে তাকাচ্ছে জানালার দিকে।
জানালা ছেড়ে অতঃপর ছুড়ে মারা কার্ডটির দিকে তাকালেন রফিক সাহেব। দেখেন একটি রুহানী দরবার শরীফ ও দাওয়াখানা’র বিজনেস কার্ড। কার্ডটিতে বড় বড় হরফে লেখা আছে ‘চিশতিয়া রুহানীয়া হুজুরীয়ার ওপেন চ্যালেঞ্জ। সাপ্তাহের সব দিন খোলা। চিঠির মাধ্যমেও দাওয়াই দেয়া হয়। দেশে থাকুন আর বিদেশে থাকুন আমাদের ওপেন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। বিফলে মূল্য ফেরত পাবেন। সফল হলে আস পাশের আরো দু’একজন রুগি পাঠাবেন ইনশাল্লা। আমরা অত্যন্ত যতেœর সাথে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। যে যে রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়-প্রেমে ব্যর্থতা, ব্যবসায় উন্নতি হয়না, পার্টনারের সাথে মনমালিন্য, স্ত্রীর সাথে অমিল, স্ত্রী অন্যের পরকীয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে, স্বামীকে বস করতে চান (গাধা বানতে চান), বিদেশ যাত্রায় বাধা, পাওনা টাকা নিয়ে টালবাহানা, রাজনীতিতে ব্যর্থতা, পুরাতন হাপানি, গ্যাষ্ট্রিক, আলসার, পড়াশুনায় অমনোযোগ। যেকোন সমস্যার জন্য চলে আসুন’।
কার্ডটি পড়ে রফিক সাহেব নিজের অজান্তেই হেসে ফেললেন। লোকে বলে সব সম্ভবের দেশ আমার সোনার বাংলাদেশ! তাইতো মনে হচ্ছে এদের কথায়! কি না পারো এরা? আমাদের এতো সমস্যা!! আমাদের দেশের নেতা নেত্রীরা হিমসীম খাচ্ছে। কর্মকর্তা কর্মচারীরা দিন রাত খেটে যাচ্ছে। সমাজ কর্মীরা বিভিন্ন ফরমুলায় সমাজকে বদলাতে চাইছেন। চিকিৎসকরা চেষ্টা করে যাচ্ছে রোগ শোক সারানোর জন্য। অথচ এদের যদি আমরা নিয়োগ করে আমাদের সমস্যা গুলি তাদের হাতে ধরিয়ে দেই তবে কত সহজেই তারা সমাধান করে দিতে পারত!! এতে সময়ও বাঁচবে আবার অর্থও বাঁচবে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা, আমাদের বিশাল জনশক্তি অন্যকাজে সময় দিতে পারবে!!
রফিক সাহেব কথাগুলো ভাবে আর মনে মনে হাসে। আহ্ কি বিচিত্র এই দেশ!!
॥ ০২ ॥
মহসিন সাহেব মেয়েকে নিয়ে মতিঝিল এসেছিলেন। থাকেন নারায়নগঞ্জে। মেয়ে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দেবেন। ইন্টারভিউ শেষে নারায়নগঞ্জের বাসে রওয়ানা দিয়েছেন বাসায় যাবেন বলে। বাসে বসে মেয়ের কাছ থেকে ইন্টারভিউ সম্পর্কে খোজ খবর নিচ্ছেন।
বাস যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে থামার সাথে সাথে বাসের জানালা দিয়ে মেয়ের কোলে এসে পড়ল একটি রঙ্গীন ফোল্ডিং লিফলেট। তাকাতেই দেখাগেল লিফলেটের উপরে একটি রঙ্গীন ছবি যাতে এক যুবক এক যুবতীকে আলীঙ্গন করে আছে। তাকিয়ে বাবা ও মেয়ে দুজনই বিব্রত। লিফলেটটি একটি ইউনানী দাওয়াখানার।
এই লিফলেটেও একই ধরনের লেখা। যেখানে লেখা আছে- যৌন চিকিৎসা সহ সকল রোগের চিকিৎসা ১০০% নিশ্চয়তার সাথে করা হয়। হেপাটাইটিস এ-বি-সি-ডি তেকে জেড পর্যন্ত, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, এইচ আইভি-এইডস সহ সকল রোগ। তারা ছবি দেখেও রোগ নির্ণয় করে ঔষধ দিতে পারে। আবার বিদেশ থেকে নির্ধারিত ফি পাঠিয়ে দিলে তারা পোষ্ট যোগে ঔষধ পাঠিয়ে দেয়। ভাল হওয়ার বিষয়ে কোন চিন্তা করার প্রয়োজন নেই!! ১০০% নিশ্চয়তাতো আছেই।
রফিক সাহেব বা মহসিন সাহেবের মত বিব্রতকর অযাচিত বিড়ম্বনায় আমরা সকলেই পরি। এটা বর্তমানে একটি নগরের উৎপাতে পরিণত হয়েছে। নগরির যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, মতিঝিল, গুলিস্থান, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, ফার্মগেট, মহাখালীসহ অটো ট্রাফিক সিগনালের অথবা যে কোন বাস স্টপেজের কথাই বলুন না কেন এ উৎপাদ আপনাকে সহ্য করতেই হবে।
খোজ নিলে দেখতে পাবেন এক শ্রেণীর ইউনানী দাওয়াখানা ও ঝারফুকদাতা ভন্ড হুজুরগন এসব বিজ্ঞাপন প্রচার করে সহজ সরল মানুষকে আকৃষ্ট করে। এসব দাওয়াখানা ও দরবার শরীফগুলোতে সাধারণত যৌন রোগকেই প্রাধান্য দেয়া হয় বেশী। এছাড়া সংসারে অমিল, প্রেমে ব্যর্থতা, বিদেশ যাত্রায় বাধা, শত্রুকে বধ করা, ক্যান্সার, গ্যাসট্রিক, আলসার, হেপাটাইটিস বি সহ সকল রোগের ব্যাপারে ১০০% নিশ্চয়তার সাথে কাজ করার প্রলোভন দেখায়।
এই প্রচার কার্ড বা লিফলেটগুলো বিলি করার কাজে এক শ্রেণীর হত দরিদ্র মহিলা ও যুবকদের ব্যবহার করা হয়। সামান্য পারিশ্রমিক দিয়ে এদের কাজ করানো হয়। এই কাজে নিয়োজিত যুবক ও মহিলারা অনেক সময় পকেট মারার কাজেও ব্যস্ত থাকে।
আপনি বাসে উঠছেন, সুযোগ বুঝে দক্ষ হাতে পকেট থেকে কখন যে মানিব্যাগটা নিয়ে নিয়েছে আপনি তা টেরও পাবেন না। আবার জানালার পাশে মোবাইলে কথা বলছেন। হঠাৎ মোবাইল টান মেরে উধাও!! আপনি শত চেচামেচি করেও আর মোবাইল ফিরে পাবেন না। শশুর বাড়ি থেকে নতুন ঘড়ি উপহার পেয়েছে! হাতে দিয়ে ঢাকায় এসেছেন। বাসে উঠে আনমনে বসে আছেন জানালার কাছে হাত দিয়ে। দেখবেন কেউ খুলে বিয়ে গেছে। ধরার কোন সুযোগই পাবেন না। শুধু হাত থেকে মোবাইল বা ঘটিড়ই নয়, কান থেকে দুল কানসহ ছিড়ে নিয়ে দৌর মারে এসব দৌরবিদেরা!!!! আপাত দৃষ্টিতে দেখতে লিফলেট বিলিকারী মনে হলেও এরা সময়-সুযোগ মত হয়ে যায় ছিনতাই কারী, পকেটমার।
এ বিষয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির উপরে গবেষণা করেন এমন কয়েক বন্ধুর সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, এ সকল ভন্ড চিকিৎসক, ফকির, হুজুর, কবিরাজ আমাদের দেশের কোমলমতি মানুষের মনের স্পর্শকাতর বিষয়ে আঘাত করে তাদের উদ্দেশ্য সফল করে। অজ্ঞতার কারনে স্পর্শকাতর বিষয়ে কাউকে বলতে পারে না সাধারণ লোকজন। গোপন সমস্যা বা গোপন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকদের সাথে অনেকেই কথা বলতে চায়না এবং লজ্জা বোধ করেন। অনেক শিক্ষিত লোকও তার সমস্যা নিয়ে সবসময় যথাযথ বিশেষজ্ঞর সাথে আলাপ করেন না, লজ্জাবোধের কারনে। ফলে ঐসব ভুয়া লোকের চটকদার কথায় সাধারণ মানুষ পটে যায়।
চিকিৎসকদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করার জন্য এসব চটকদার বিজ্ঞাপন বিলি করা হয়। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার জন্য সাধারণ মানুষ এদের কাছে গিয়ে প্রতারিত হয় প্রতিনিয়ত। তারা যে ঔষধ দেয় তাতে কোন রোগ ভালতো হয়ই না বরং অনেক সময় বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নিজেদের সমস্যার কথা তো বলতেই পারে না আবার প্রতারিত হওয়ার কথাও বলতে পারে না। এসকল প্রতারকদের হাত থেকে দুরে থাকাই ভাল। শিক্ষাই পারে এ সকল প্রতারণার থেকে আমাদের রক্ষা করতে। আর প্রশাসন একটু হস্তক্ষেপ করলেই আমরা বিব্রতকর এসব লিফলেট বিলিকারীদের হাত থেকে বাঁচতে পারি, সাধারণ মানুষও প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে পারে।
No comments:
Post a Comment