ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Thursday, May 24, 2018

পাঁচ বছর পূর্ণ করে আজ ষষ্ঠ বছরের প্রথম দিন

আজ চব্বিশে মে। তেইশে মে ২০১৩ মুনমুন সুলতানা লুনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পাঁচটি বছর পূর্ণ করে ফেলেছি। পাঁচ বছরে কাটিয়েছি মধুর দিনগুলি। বৈবাহিক জীবন অনেক সুখ, দুঃখ, টানাপোড়েনের মধ্যে চলে। কিন্তু আমার বেলায় শুধু সুখের বিষয়টিই আছে এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। মধুর দিনগুলো কাটিয়ে সামনের দিনগুলোও যেন মধুরই হয় সেই চেষ্টাই সর্বদা করি আমরা দুজন। ভালো আছি, ভালো থাকতে চাই। চাওয়ার পরিমান কম হলে সংসারে কোন সমস্যাই হয় না এটা আমি হারে হারে বুঝেছি এতদিনে। চাওয়ার পরিমান কম আর পাওয়ার পরিমানই বেশি। যার ফলাফল দাম্পত্য জীবনে শান্তি।

আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন সেই ২০১২ সালের ৩০ মার্চ। মায়ের শেষ দিনগুলো কেটেছে আমাকে নিয়ে চিন্তা করে করে। অনেক চেষ্টা করেছে আমাকে বিয়ে করারনোর জন্য। না। অন্য কোন সমস্যা ছিলো না। মায়ের পছন্দ মত মেয়ে খুজে পাচ্ছিলো না। আমার নিজস্ব কোন পছন্দ অপছন্দ ছিলো না। আমার ইচ্ছা ছিলো মায়ের পছন্দেই বিয়ে করার। মা যখন কিছুটা চলাফেরা করতে পারতো তখন যেখানেই মেয়ের সন্ধান পেয়েছে বা কারো কাছে শুনেছে অমনি ছুটে গেছে বোনদের নিয়ে। এর পর যখন মা আর চলাফেরা করতে পারেনি তখন আমার বন্ধুবান্ধব, শুভাকাংখি যাদেরই পেয়েছে তাদেরই বলেছে একটি মেয়ে খুজে দেয়ার জন্য। কিন্তু মায়ের শেষ ইচ্ছে পুরাণ হয়নি। কোন ভাবেই মেয়ে পছন্দ করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ছোট্ট ইচ্ছাটা বুকে ধারণ করেই মা শেষ বিদায় নিয়েছিলো।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। আজকে যে আমার সহধর্মীনি তার সম্পর্কেও একসময় খোজ খবর নেয়া হয়েছিলো। কোন এক অজানা কারনে তার বিষয়ে কথা আগায়নি। অবশ্য কারনটা যা যেনেছি তা হলো তখন নাকি তার গ্রোথ বা শারীরিক অবস্থা বিবাহ যোগ্য ছিলো না। এর পর দীর্ঘ দিন কেটে যাওয়ার পর ঘুরে ফিরে সেই মুনমুন সুলতানা লুনাই আমার ঘরে এলো কিন্তু মা তখন আর নাই।
পারিবারিক ভাবে পরবর্তীতে আমার বিয়ের দায়িত্ব বর্তায় আমার দুই বোনের উপর। তারা এবার মায়ের চেয়েও বেশি উদগ্রীব হয়ে উঠলেন আমাকে বিয়ে করানোর জন্য। এবার তারা সফল হলেন। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো। প্রকৃতি এতটাই বিরুপ আচরন করলো যে বিয়ে এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হলো। পরে ২৩ মে ২০১৩ তারিখে বিবাহ সম্পন্ন করে লুনা আমার ঘরে আসলো। পাঁচ বছরের সংসার জীবনে আমার প্রাপ্তি অনেক। বিয়ের পর পুরুষ মানুষের পায়ে নাকি অনেকটা শিকল পড়ানোর মত অবস্থা হয়। আমার বেলায় সেটা হয়নি। আমি ব্যাচেলর জীবনের মতই জীবন উপভোগ করি এখনও। এই ক’বছরে আমার প্রাপ্তিতে যোগ হয়েছে আমার শরীরের স্থুলতা। এটাই শুধু আমার অনাকাঙ্খীত প্রাপ্তি। আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমার একমাত্র কন্য রওশন আসাদ প্রিয়ন্তী। মা হারা একটা ছেলে নতুন করে একটা আপন মায়ের মত মা পাওয়া এর চেয়ে আর বড় প্রাপ্তি কি হতে পারে জীবনে?

নিঃসংকোচে বলতে পারি, সংসার জীবনে চাওয়ার পাওয়ার হিসাবটা বড় জটিল। তাই চাওয়া যদি হয় ক্ষুদ্র তখন প্রাপ্তিটা হয়ে যায় বিশাল। আমার বেলায়ও তাই ঘটেছে। আর লুনার চাওয়া পাওয়ার বিষয়টা বিস্তারি বললে এই লেখাটা পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তার মানে এই নয় যে তার চাওয়ার তালিকাটা অনেক বড়। বরং তার চাওয়ার তালিকাটা এতটাই ছোট এবং না চাওয়ার তালিকাটা এতটাই বড় যে বলে শেষ করা যাবে না। পাঁচ বছরে আমি তাকে কোন কিছুই চাইতে দেখিনি। কোন কিছু না দিতে পারলেও তার মধ্যে আশাহত হওয়ার কিছু দেখিনি। যখন যা দিয়েছি তাতেই সে আকাশসম খুশি হয়েছে। না দিতে পারলেও কোনদিন কষ্ট পেতে দেখিনি। কোন বিষয়ই একা সিদ্ধান্ত নিতে দেখিনি এবং আমিও কোন বিষয়ে একা সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করিনি। দুজনে মিলে যেহেতু সংসার তাই দুজনে মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে একে অপরকে যুক্তি দিয়েছি, যুক্তি গ্রহণ যোগ্য হলে গ্রহণ করেছি, সেও গ্রহণ করেছে।

চলাফেরা নিয়ে আমার বিষয়ে তার কোন অভিযোগ নেই, নেই আমারও। খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোন অভিযোগ বা আক্ষেপ নেই, চাওয়া পাওয়া নিয়ে নেই কোন আক্ষেপ। এক কথায় আমার চাওয়ার সাথে এতটা মিল সেটা ভাবা যায় না। আমি চিন্তায় সহজ সরল, চেয়েছিলামও এমন সহজ সরল একজনকে। সৃষ্টিকর্তা তেমনি একজনকে আমার সাথে বেধে দিয়েছে পাঁচ বছর আগে।
সংসার জীবনে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি, সামনেও যেন এমনি ভাবে চলে আমাদের সংসার জীবন সেই চেষ্টাই করি। সেও যেন এমনই চিন্তা চেতনা ধরে রাখে সেই শুভ কামনাও করি।

একটা কৌতুক বলি, এক লোক একদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ক্যালেন্ডারের পাতার দিকে তাকিয়ে অঝরে চোখের পানি ফেলছে দেখে তার স্ত্রী এসে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কাদছো কেন? স্বামী বললো, আজকের দিনটাকে স্মরণ করে কাদছি। স্ত্রী খুশি হলো শুনে, বললো, আমাদের আজ বিবাহ বার্ষিকী! তুমি কত সুইট! দিনটাকে তুমি ভুলোনি তাই না? স্বামী বললো, আমি সেই খুশিতে কাদছি না! স্ত্রী বললো, তাহলে কেন কাদছো? স্বামী বললো, পাঁচ বছর আগে এই দিনে তোমার বাবা আমায় বলেছিলো, আমার মেয়েকে বিয়ে কর নইলে পাঁচ বছরের জন্য জেলে যাও! স্ত্রী হাসতে হাসতে বললো, ওহ! ঐ কথা!! স্বামী বললো, হ্যা, আজ যদি তোমার বাবার কথায় আমি তোমাকে বিয়ে না করে পাঁচ বছরের জেল মেনে নিতাম তবে আজ আমার মুক্তি হতো, আজ আমি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে স্বাধীন জীবন ফিরে পেতাম!!!!


আমার কাছে কিন্তু এমনটা মনে হয় না কখনোই। আমি পাঁচ বছর আগেও যেমন স্বাধীন ছিলাম, আজও তেমন স্বাধীন আছি, স্বাধীনতার মত সুখ ভোগ করছি। এভাবেই কাটুক আমার প্রতিটি বছর। মুনমুন সুলতানা লুনা তোমাকে ভালোবাসি, ভালো বাসবো। তুমিও ভালো বেসো। সকলের কাছে দোয়া চাই যেন আমরা এভাবেই কাটিয়ে দিতে পারি আমৃত্যু।

No comments:

Post a Comment