ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Friday, February 23, 2018

ডানপন্থীর চেয়ে বামপন্থীই ভালো!

ডান এবং বাম কথাটা শুনলে আমাদের সামনে যে বিষয়টা ভেষে উঠে তা হলো ডানপন্থী আর বাম পন্থী। ডানপন্থী আর বামপন্থী শব্দ দুটি সম্পর্কে আমরা বেশ অবগত। ডান বা ডানপন্থী সম্পর্কে আমাদের সামনে পুজিবাদ, সা¤্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, ধর্মান্ধ, শোষণ পিড়ন রাজনীতির অবয়ব চোখের সামনে চলে আসে। আর বাম বা বামপন্থী বলতে, সমাজতন্ত্রী, সাম্যবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, পুজিবাদ বিরোধী রাজনীতির কথা মনে করিয়ে দেয়। যদিও বামেরা এখন আর বামে নেই, অনেকেই ডানে, সামনে, পিছনে চলে গেছে। সে বিষয়টা নিয়ে এখন চিন্তা না করাই ভালো। রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি শব্দগুলোর সাথে একজন মানুষ যখনই পরিচিত হতে থাকে তখনই ডানপন্থী আর বামপন্থী শব্দ দুটি সম্পর্কে ধারনা জন্মাতে থাকে এবং জানার আগ্রহ বাড়তে থাকে। আমিও এর বাইরের কেউ নই। আমারও পন্থা দুটি সম্পর্কে ব্যাপক আগ্রহ আছে। যেহেতু শব্দ দুটি আমার লেখার আজকের শিরোনাম তাই পন্থা দুটি সম্পর্কে আমার কিছু ধারনা নেয়া প্রয়োজন। পাঠক বন্ধুরা হয়তো আগেই শব্দ বা পন্থা দুটি সম্পর্কে সম্যক ধারনা নিয়ে রেখেছেন, তবুও নিজের সাথে মিলিয়ে দেখার জন্য উল্লেখ করলাম। 
ডানপন্থী রাজনীতি সম্পর্কে একটু খোজ খবর নিলে জানাযায়, রাজনীতিতে ডানপন্থা বা ডানপন্থী বিশেষণগুলো ব্যবহৃত হয় এমন মতাদর্শের ক্ষেত্রে, যা মানুষের অর্থনৈতিক বা ঐতিহ্যগত বা সামাজিক শ্রেণীগত বিভেদ বা ধাপবিন্যাসকে সমর্থন করে। ভিন্ন ভিন্ন ডানপন্থী রাজনৈতিক দল বিভিন্ন মাত্রায় বামপন্থী রাজনীতি সমর্থিত সাম্যবাদের বিরোধিতা করে থাকে, এবং সার্বিক সাম্য চাপিয়ে দেওয়াকে সমাজের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করে থাকে।
ডানপন্থা এবং বামপন্থা শব্দগুলো রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রথম প্রচলিত হয় ফরাসি বিপ্লবের সময়। ফরাসি সংসদে ভিন্ন মতধারার মানুষেরা যেসব দিকে আসন গ্রহণ করতেন, সেই দিকের নামানুসারে মতগুলোকে নির্দেশ করতে এই শব্দগুলো ব্যবহার শুরু হয়। রাষ্ট্রপতির ডানপাশে উপবিষ্ট মানুষেরা সাধারণভাবে পূর্বতন অভিজাত শাসনব্যবস্থা, রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এবং প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম তথা চার্চ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সমর্থক ছিলেন। ১৮১৫ সালে রাজতন্ত্রের পুর্নপ্রতিষ্ঠার পরে ডানপন্থা বলে উগ্র-রাজতন্ত্রীদের নির্দেশ করা হত। যদিও ফ্রান্সে ঐতিহ্যগত রক্ষণশীলদের নির্দেশ করতে 'ডানপন্থা' ব্যবহৃত হত, পরবর্তীতে ইংরেজীভাষী দেশগুলোতে এই বিশেষণের অর্থ আরও বিস্তৃত হয়ে উদারপন্থী রক্ষণশীল, ঐতিহ্যগত উদারপন্থী এবং উদারবাদী রক্ষণশীল দের, এবং পাশাপাশি খ্রিষ্টীয় গণতান্ত্রিক এবং কিছু জাতীয়তাবাদীদের নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। ডানপন্থী সম্পর্কে এটুকুই ধারনা পেলাম বিশ্ব তথ্য ভান্ডার থেকে।
আর বামপন্থী রাজনীতি সম্পর্কে ধারনা নিতে একটু হাত বাড়ালেই চলে আসবে নানান তথ্য।
বামপন্থী রাজনীতিঃ বামপন্থী রাজনীতি (ইংরেজিঃ খবভঃ-রিহম ঢ়ড়ষরঃরপং) হচ্ছে সেই রাজনৈতিক অবস্থান বা কর্মকান্ড যা সামাজিক অসাম্য ও সামাজিক ক্রমাধিকারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সামাজিক সাম্যকে গ্রহণ বা সমর্থন করে। এই রাজনীতি বিশেষভাবে জডিত থাকে সমাজে যারা অন্যের তুলনায় কম পায় বা সুযোগহীন থাকে তাদের ব্যাপারে এবং পূর্বধারনা করে যে অসাম্যের অবিচার কমানো বা বিলুপ্ত করা উচিত।
বামপন্থী রাজনীতির ব্যুৎপত্তি ও ইতিহাসঃ ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় 'খবভঃ' শব্দটির উৎপত্তি হয়। তখন পার্লামেন্টের ডানদিকে বসতেন শাসকদল এবং সভাপতির বাঁ পাশের আসনগুলোয় বসতেন বিরোধীদল। বাঁ দিকে বসার জন্য তাদের বলা হতো বামপন্থী বা খবভঃরংঃ. সমাজতন্ত্রী ও প্রগতিশীলদেরই এখন সাধারণভাবে বামপন্থী বলা হয়। পরবর্তীকালে ফ্রান্সের অনুকরণে অন্যান্য দেশের আইনসভায়ও বিরোধী দলের সদস্যদের বামদিকে বসার রীতি চালু হয়।
বামপন্থী রাজনীতির কর্মসূচিঃ বিশ শতক পরবর্তীকালে বামপন্থী হতে হলে যে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তা হচ্ছে বামপন্থিদের সা¤্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদবিরোধী হতে হবে। এছাড়াও বামপন্থি হতে হলে তাদের অবশ্যই সামন্তবাদবিরোধী তথা সামন্ততন্ত্রের অবশেষ উচ্ছেদের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে; সবরকম সম্ভাব্য আকার ও রূপে বিরাজমান ভূমিদাস প্রথার জেরগুলো, যেমন বর্গাপ্রথার উচ্ছেদ করে ভূমিসংস্কার করতে হবে। তৃতীয়ত রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল আইন বা বিধিবিধানকে তারা সমর্থন করবে না। চতুর্থত, তারা উগ্র-জাতীয়তাবাদের বিরোধী অবস্থানে সুদৃঢ় থাকবে।
বামপন্থী অর্থনীতিঃ বামপন্থী অর্থনীতি মুলত কেইন্সীয় অর্থনীতিতে বিশ্বাস করে এবং কারখানা গণতন্ত্র ও সামাজিক বাজারের মাধ্যমে কল্যাণ রাষ্ট্রে অর্থনীতির জাতীয়করণে এবং কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় একটি নৈরাজ্যবাদী/সিন্ডিক্যালবাদের পক্ষে স্বব্যবস্থাপনার নৈরাজ্যবাদী সাম্যবাদের পক্ষে দাঁড়ায়। শিল্প বিপ্লবের সময় বামপন্থীরা ট্রেড ইউনিয়নকে সমর্থন করত। বিশ শতকের শুরুতে, অনেক বামপন্থী অর্থনীতিতে সরকারের শক্তিশালী হস্তক্ষেপের পক্ষে দাঁড়ান।
এক কথায় ডানপন্থী আর বামপন্থী সম্পর্কে মূল যে ধারনা পাওয়া যায় তাতে স্পষ্টই বোঝা গেলো যে যারা ডান দিকে বসতো তারা ডানপন্থী আর যারা বাম দিকে বসতো তারাই বামপন্থী। আমার লেখার বিষয়টাও ঐ ডান দিকে বসা আর বাম দিকে বসা নিয়ে, আসন গ্রহণকারীর রাজনীতি নিয়ে নয়।
আমাদের দেশে নি¤œ আয়ের মানুষগুলো যে যানবাহনে চড়ে তাতে আসন সংখ্যা কম, যত্রতত্র পাওয়া যায়, ভাড়াও কম। এই যানবাহনগুলো চালায়ও অজ্ঞ, অসিক্ষিত, কান্ডজ্ঞানহীন, সাধারণ নি¤œ আয়ের লোকেরাই। যেমন, রিক্সা, ভ্যান, বেবি, টেম্পু, সম্প্রতি যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ চালিত ইজি বাইক বা অটোরিক্সা। এই যানবাহনগুলো সহজলভ্য হলেও রাস্তায় এরা বেশ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। এরা হরহামেশাই দূর্ঘটনায় পতিত হয় বা দুর্ঘটনার কারন হয়েদাড়ায়।
এই যানবাহনগুলোতে বসার ক্ষেত্রে আসন বিন্যাসটা হচ্ছে চালকের ডান দিকে আর বাম দিকে। এখানে ডানপন্থী আর বামপন্থী হিসাবে কেউ না বসলেও যখন যে আসন পায় সেই আসনেই বসতে হয়। কখনো ডানপন্থী লোক চালকের বাম দিকটায় বসে বা চালকের পিছনের বাম দিকটায় আবার কখনো বামপন্থী লোক চালকের ডান দিকটায় বসে। যারা বাম দিকটায় বসে তারা বেশ ভাগ্যবান। অনিচ্ছা থাকলেও তারা নিয়ম মেনেই যানবাহন থেকে নামে। কিন্তু যারা চালকের ডান দিকটায় বসে তারা সাধারণত ডান দিক দিয়ে নামে। চালকের ডান দিক দিয়ে নামায় মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যয় এমনটি কিন্তু নয়। ছোট এই যানবাহনগুলোতে যারা চলাচল করে তারা সাধারণত ভাড়া পরিশোধ করে গাড়ি থেকে নেমে। আর বিপত্তিটা হয় ওখানেই। একজন যাত্রী ডান দিক দিয়ে নেমে যদি সে দ্রুত নিরাপদে বাম দিকে রাস্তার ফুটপাতে গিয়ে দাড়ায় তাতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তা না করে যাত্রীরা সাধারণত ডান দিক দিয়ে নেমে ব্যাস্ত রাস্তার উপর দাড়িয়ে কেউ বুক পকেট থেকে, কেউ সাইড পকেট থেকে আবার কেউ পিছনের পকেটে থাকা মানিব্যাগটা বের করে ডান দিকে দাড়িয়ে থেকে ভাড়া পরিশোধ করে। আর মহিলারা তাদের ভ্যানেটি ব্যাগ বা অন্য কোন ব্যাগ থেকে টাকা বের করে ভাড়াটা পরিশোধ করে। এতে যে সমস্যাটা হয় তা হলো, ব্যাস্ত রাস্তায় দ্রুতগামী যানবাহনগুলো চলাচলে বিঘœ ঘটে। কখনো কখনো দ্রুতগামী যানবাহন অনাকাঙ্খিত ভাবে রাস্তার উপর দাড়িয়ে ভাড়া প্রদানরত যাত্রী দেখে নিয়ন্ত্রণ হারায়, বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটায়। এতে ভাড়া প্রদানরত যাত্রী বা বড় গাড়ির যাত্রী উভয়েই ঝুকির মধ্যে পড়ে।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা ইচ্ছে করলেই এই দুর্ঘটনা এড়াতে পারি। আমরা যদি যানবাহন থেকে নেমে দ্রুত ফুটপাতে এসে দাড়াই এবং ভাড়া পরিশোধ করি তাতে নিজেদের যেমন লাভ তেমনি রাস্তার শৃঙ্খলাটাও ঠিক থাকে। এ কাজটা করার জন্য কারো রকেট সাইন্স জানার প্রয়োজন নেই। একটু জনসচেতনতা, সামাজিক মূল্যবোধ, দায়িত্বশীলতা এবং নিজের ইচ্ছেই পারে রাস্তার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং আমাদের মূল্যবান সম্পদ ও জীবণ বাঁচাতে।
ছোট যানবাহনগুলো আরো একটা বিরক্তিকর কাজ করে। বিভিন্ন সংযোগ সড়কের সামনে দাড়িয়ে যাত্রী তোলার কাজটা করে। এ সময় সংযোগ সড়ক থেকে মূল সড়কে উঠার সময় মূল সড়কের দ্রুতগামী যানবাহনগুলো দেখা যায় না। এর ফলে অনেক সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটে। কিন্তু মূল সড়কের সাথে সংযোগ সড়কগুলোর মোড় থেকে তারা যদি তাদের যানবাহনগুলো একটু এগিয়ে পিছিয়ে রাখে তাহলেই সংযোগ সড়ক হতে মূল সড়কে উঠতে যাওয়া গাড়িগুলো সহজেই দেখতে পারে রাস্তা কতটা ব্যস্ত এবং উঠা কতটা নিরাপদ।
এ কাজগুলো করার জন্য প্রয়োজন চালকদের নূন্যতম জ্ঞান। রিক্সা-ভ্যানের চালক বিভিন্ন সমিতির কাছ থেকে টাকা ধার করে সহজেই ইজিবাইক বা অটো রিক্সা কিনে রাস্তায় নেমে পড়ে। নেই কোন প্রশিক্ষণ, নেই তেমন শিক্ষা, দীক্ষা, নেই সামাজিক দায়িত্ববোধ। বিশেষ করে ইজি বাইক চালকদের জ্ঞান কান্ড এতটাই কম যে, কেউ রাস্তায় দাড়িয়ে যদি বগল চুলকায়, অমনি সামনে এসে দাড়িয়ে যায় তোলার জন্য। ছোট যানবাহনগুলো যেখানে সেখানে পার্কি করে, ব্যাস্ত রাস্তার মাঝ দিয়ে চলে, ক্ষমতার চাইতে বেশি দ্রুত চলাচল করে এমন আরো অনেক কারন আছে যার কারনে ইজিবাইক দুর্ঘটনা ঘটে বেশি বা দুর্ঘটনা ঘটায় বেশি।
ছোট যানবাহনগুলোতে যারা বাম দিকে বসে, যারা বাম দিকে নামে, যে যানবাহনগুলো বাম দিকে চেপে পার্কিং করে, মোড়ে বাম দিকে চেপে দাড়ায় তাদের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কম ঘটে। সেই ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে বামপন্থীরা ডানপন্থীদের চাইতে অনেক ভালো।    
তাই রাজনীতিতে আমরা ডান পন্থা বা বাম পন্থা যে পন্থাই অনুসরণ করি না কেন, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে একটু বাম পন্থা অনুসরণ করার চেষ্টা করলে নিজের জন্য, অপরের জন্য ভালো হবে। তাতে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে, মূল্যবান জীবন বাঁচবে, সম্পদ বাঁচবে। আমরা সবাই মিলে একটি বাসযোগ্য সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রাখতে পারি। সরকার রাস্তায় আমাদের সবসময় নজরদারীতে রাখতে পারবে না। আমরা যদি নিজেরা সচেতন ও সতর্ক হই তাহলেই এটা সম্ভব। আমাদের মনে রাখা উচিত, সময়ের চেয়ে জীবণের মূল্য অনেক বেশি। আর একটা দুর্ঘটনা আপনার পরিবারের সারা জীবণের কান্না হয়ে বেঁচে থাকবে। দুর্ঘটনায় হয়তো আপনি মরে বেঁচে গেলেন কিন্তু পরিবার গুলোকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে রেখে গেলেন।  
পাঠের বন্ধুরা, লেখার শুরুতে যে কথাগুলো লিখেছি তা পড়ে হয়তো অনেকেই বলবেন যে আমি ধান ভানতে শীবের গীত গাইছি। তবে ধান ভানার ফাকে যদি একটু গীত শোনা যায় তাতে কি এমন ক্ষতি হবে বলেন? আর শীবের গীত নিয়ে নাহয় অন্য দিন লিখবো।

1 comment: