ভালবাসি প্রকৃতি

Friday, January 19, 2018
রাজীতিক ও আমাদের শিক্ষা
Saturday, January 13, 2018
আপা নিয়ে চাপাচাপি
সাংবাদিক সাহেব তাকে আপা বলে কি খুব অপরাধ করে ফেলেছেন? আপা বলাটা কি তাকে যথাযথ সম্মান দেখানো হয় নি? উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে বা কি? একজন মানুষ তার শিক্ষা জীবন শেষ করে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে প্রশাসনের ক্যাডার হয়েছেন। সহকারী কমিশনার উপাধী নিয়ে কর্ম জীবন শুরু করে আস্তে আস্তে এ দপ্তর, ও দপ্তর পার হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হয়েছেন। পরে তার কর্মের বিভিন্ন ধাপে সে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে আসীন হয়েছেন। দীর্ঘ কর্ম জীবনে সে অনেক ঘাত প্রতিঘাত দেখেছেন। কাজের ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম মেনেছেন, অনেক অনিয়মও করেছেন। বাস্তবে আসলে সে কি? সাধারণ মানুষের কাছে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী ছাড়া আর কিছুই নয়। সে হয়তো একটু বড় মাপের কর্মচারী, পিয়ন হয়তো ছোট মাপের কর্মচারী। এর বাইরে তো কিছু না। দুজনেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আর জনগণ প্রজাতন্ত্রের মালিক। প্রজাতন্ত্রের মালিক তাকে আপা বলেইতো অনেক সম্মান করে ফেলেছে, স্যার তো তারই বলা উচিত ছিলো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজের মধ্যে একটা অহংকার বোধ লালন করছেন। তিনি বেতন পান প্রজাতন্ত্রের আম জনতার দেয়া করের টাকায় সেটা তার খেয়াল ছিলো না। তিনি আপা বলায় এতটা ক্ষেপে যাবেন সেটা ভাবা যায়? তিনি তো কারো না কারো সন্তান, কারো না কারো বোন। তাকে আপা বলায় এতটা অপমানিত হওয়ার কিছু ছিলো না। তবুও সে অপমানিত বোধ করলেন। জোর করে কি সম্মান পাওয়া যায়? আপা মনে হচ্ছে জোর করে সম্মান আদায় করতে চায়। কিন্তু সম্মান ভূমি কর বা কোন ফি নয় যে আদায় করবেন। সম্মান আসে হৃদয়ের গহীন থেকে, কাজের মূল্যায়ন থেকে। এমন কি করে ফেলেছেন যে আপনাকে সম্মান করতেই হবে।
একজন উপজেলা নির্বাহীর কাজ কি? তার কাজ তো উপজেলার জনগনের কাছ থেকে স্যার-ম্যাডাম শোনা না। উপজেলার সাধারণ জনগনের প্রশাসনিক কার্যকলাপ সমাধান করা, অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রন করা, শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সিটিজেন চার্টার অনুযায় জনগনকে সেবা দেয়া। আর কাজগুলো করবে জনগনের জন্য। সেই জনগন কেউ এসে যদি মা বলে, কেউ যদি বোন বলে, কেউ আপা বলে তাতে ক্ষতি কি? একজন লোক কতটা আপন জেনে তাকে আপা বলেছে সেই দিকটা বিবেচনায় কি নেয়া উচিত ছিলো না? কজন অফিসার সাধারণ মানুষের আপন হতে পারে! অনেক অফিসার আছেন যারা বদলি হলে মানুষ কাদে। যাওয়ার সময় মানুষের কান্নাটাই আসল প্রাপ্তি, ঘুষ-দূর্নীতির টাকাটা কোন প্রাপ্তি নয়।
একজন সাংবাদিক তাকে আপা বলেছে, এতে সে অপমানিত বোধ করেছেন। সাংবাদিকের অবস্থান কি সেটা হয়তো তার জানা নেই। অবশ্য এখন সমাজে অপসাংবাদিকতার ছড়াছড়ি চলছে। কোথাও গেলেই সেখানকার মানসিক ভাবে দুর্বল, অপরাধ প্রবন মানুষ, ঘুষখোর, সুবিধাবাদীদের কাছ থেকে তেলের টাকা চয়। হাত পেতে দেয়, চাটুকারী করে অনেক সাংবাদিক। ঘরে কন্যা আত্মহত্যা করেছে, পিতাকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখায়, নিউজ করার কথা বলে টাকা হাতায় এমন সাংবাদিকও আছে যাদের আমরা হলুদ সাংবাদিক বলি। হলুদ সাংবাদিকদের প্রতি আমার ঘৃণা আছে। তবে নির্ভীক সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আমারই নয় সবারই আছে, থাকবে। আর সেই নির্ভীক সাংবাদ কর্মীরা আছে বলেই সমাজটা টিকে আছে। তারা সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণ কাজ করে যাচ্ছে।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা স্বীকৃত চারটি স্তম্ভের ওপর দাড়িয়ে থাকে। আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম। এ জন্য রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদ মাধ্যমকে বিবেচনা করা হয় গুরুত্বের সাথে।
গণমাধ্যম শক্তিশালী হলে রাষ্ট্রযন্ত্র সঠিকভাবে পরিচালিত হতে বাধ্য হয়। সংবাদ মাধ্যম জনগণের প্রত্যাশা, অর্জন, চাহিদা, জনমত সৃষ্টি ও সমাজের ভালোমন্দ তুলে ধরে। তাইতো সাংবাদ মাধ্যমকে সমাজের দর্পন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গণমাধ্যমকে উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের প্রতিনিধিও বলা চলে। মানবজীবন ও সমাজ উন্নয়নের একমাত্র মাধ্যম হলো গণমাধ্যম। গণমাধ্যম দ্বারা সমাজের বাস্তব প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেন সাংবাদিক।
আর তৃণমূল পর্যায়ে একজন সংবাদকর্মীর চোখ থাকে সমাজের ঘটে যাওয়া ছোট থেকে বড়, ভালোমন্দ, সমস্যা-সম্ভাবনা সবকিছুতে। একজন ভালো সাংবাদিক নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে রাতদিন জীবনের সোনালী সময় ব্যয় করে গণমানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনার খোঁজে কান পেতে থাকেন।
একজন নির্ভিক সংবাদকর্মী হলেন সমাজের নির্মাতা। সে গণমানুষের চাহিদা ও স্বপ্নকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন তার লেখনির মাধ্যমে। সংবাদ কর্মীর লেখালিখি সরকারের নজরে আসে, অতঃপর সরকার সেই আশা, আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করে। একটি অবহেলিত জনপদের খরব লেখনির মাধ্যমে সভ্যতার উচ্চতায় নিতে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ভূমিকার বিকল্প নেই। নিজের স্বার্থ না দেখে গণমানুষের জন্য নিঃস্বার্থে কাজ করাই একজন নির্ভিক সংবাদকর্মীর কাজ। গণমাধ্যম সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করে। সুবিধাবঞ্চিত জনপদের নাগরিকদের অধুনিক উন্নত সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত করে। একমাত্র গণমাধ্যম পারে মানুষকে নতুন নতুন চিন্তা, ধারণা ও পদ্ধতি সম্পর্কে প্রতিনিয়ত তথ্য সরবরাহ করে উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিকা রাখে।
আজকের যুগে গণমাধ্যম শিক্ষা, যোগাযেগ, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, লাইফ স্টাইল, রেসিপি, চিকিৎসা, প্রযুক্তি, আইসিটি, চাষাবাদ, ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে নাগরিক জীবনের প্রয়োজনীয় সব চাহিদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করছে। নানা সীমাবদ্ধতা আর সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি সত্ত্বেও গণমাধ্যম সমাজের উন্নয়ন নিশ্চিত করছে। সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমের কার্যকর অংশগ্রহণ ছাড়া রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা সবাই জানি-যে দেশে গণমাধ্যম স্বাধীন-শক্তিশালী সে দেশে গণতন্ত্র উন্নত এবং শক্তিশালী।
এ ছাড়াও বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির স্বর্ণযুগে গণমাধ্যমের কল্যাণে এসিড সন্ত্রাস, ইভটিজিং, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, ভেজালের বিরুদ্ধে মানুষকে প্রতিনিয়ত সচেতন করে যাচ্ছে গণমাধ্যম। আর এর মাধ্যমে দেশ ও সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সমাজ দেহে যে বোধের জায়গা তৈরি হচ্ছে এর পেছনে গণমাধ্যমের ভূমিকাই প্রধান। গণমাধ্যম সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে থাকে। গণমাধ্যম ছাড়া কোনোভাবেই সরকার ও জনগণের মধ্যে জনগণ কি ভাবছে, সরকার কি করছে তা প্রকাশ পাওয়া সম্ভব না।
গণমাধ্যম সমাজের জন্য এত কিছু করে বলেই তাদের অবস্থানটা একটু ভিন্নধর্মী। সমাজ তাদের সমীহ করে ব্যক্তি হিসাবে নয় তাদের কাজের কারনে। রাজধানীতে যারা সংবাদ কর্মী হিসাবে কাজ করে, বিশেষ করে সম্পাদক থেকে প্রতিবেদক সবাইকে সকল সেক্টরের কর্তাব্যক্তিরা সমীহ করে তাদের কাজের কারনে। আমাদের দেশের প্রধাম মন্ত্রীকে মহিলা, বিরোধী দলীয় নেত্রী মহিলা। সংবাদকর্মীরা তাদের আপা সংম্বোধন করে কথা বললে তারা তো কিছু মনে করে না। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যেখানে তাদের ম্যাডাম ম্যাডাম বলে মুখে ফেনা তোলেন সেখানে সংবাদ কর্মীরা আপা বলে কথা বলছে। তাদের যদি আতে ঘা না লাগে তাহলে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমন কি হয়ে গেছেন যে তাকে স্যার বা ম্যাডাম বলতে হবে।
একসময় আমাদের দেশ তথা গোটা ভারত বর্ষ বিট্রিশদের শাসন কয়েম ছিলো। তখন ব্রিটিশ কর্তাব্যক্তিদের সমিহ করে চলতে হতো। ইউর এক্সিল্যান্সি, ইউর এক্সিল্যান্সি বলে মুখে ফেনা তুলতে হতো। শাসনের নামে তারা আমাদের যে শোষন করেছে তা আজও জাতি ভুলে নাই, হাজার বছর পার হলেও কোন প্রজন্মই ভুলবে না। তাদের এ অঞ্চল থেকে বিতারিত করা হয়েছিলো, সম্মানের সাথে যায়নি। কথাটা নিশ্চই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যারা তাদের অজানা নয়। বর্তমানেও যদি কেউ মনে করে তিনি বড় কর্মকর্তা, তাকে ইউর এক্সিল্যান্সি, ইউর এক্সিল্যান্সি করতে হবে তাহলে ভুল করবে। বর্তমান কর্তাব্যক্তিদের তো আর বিতারিত করার প্রয়োজন হবে না, কিন্তু তারা তাদের অবস্থানে থাকতে পারবে না। তাদের জন্য বিপ্লবীদের প্রয়োজন নেই, জাগ্রত সংবাদ কর্মীরাই যথেষ্ট।
একটি গল্প বলি। একদা এক রাষ্ট্রপতি এক সম্পাদককে বলেছিলো রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের একটা স্তর তৈরী করতে। সম্পাদক মহোদয় রাষ্ট্রপতিকে প্রথম অবস্থানে রেখে বাকি পদের নাম অবস্থান অনুযায় লিখে রাষ্ট্রপতির হাতে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি তালিকায় সম্পাদকের অবস্থান দেখতে না পেয়ে সম্পাদক মহোদয়কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার অবস্থান কোথায় লিখেননি কেন? প্রশ্নের জবাবে সম্পাদক মহোদয় বলেছিলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমার অবস্থান যদি লিখতে হয় তবে লিখতে হবে Above President ! তাই আমি আমার অবস্থানটা নিজ হাতে লিখিনি।
আমি সিনেমার ভক্ত। সুযোগ পেলেই সিনেমা দেখি। সিনেমার ম্যাডাম নিয়ে আরেকটা গল্প মনে পড়ে গেল। হঠাৎ বৃষ্টি চলচ্চিত্রটা হলে মুক্তি না পেয়ে টেলিভিশনে মুক্তি পায়। ছবিটা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। সেখানে অমল বোসের একটা চরিত্র ছিলো। অমল বোসের মিষ্টির দোকন যার নাম ছিলো ভোলার মিষ্টান্ন ভান্ডার! দোকানে একটা টেলিফোন সেট ছিলো। আশেপাশের সকলের কল আসতো, অনেকে কল করতো। ভোলা বাবুর দোকানে মালামাল ছিলো কম। তিনি তার টেলিফোন সেটটাকে পূজো দিয়ে বেচাকেনা শুরু করতো। একদিন একজন এসে তাকে ভোলা দা বলে ডাক দেয়ায় সে বেশ অপমানিত বোধ করেছিলো। তখন ভোলা বাবু বলেছিলো, আমাকে শ্যের অথবা মেডম বলতে পারিস না! ভোলা বাবুরও ইচ্ছে হয় স্যার অথবা মেডম ডাক শোনার। কিন্তু ইচ্ছে হলেই কি এমন মধুর ডাক শোনা যায়!!
Friday, January 12, 2018
পাগল নিয়ে পাগলামী
তবে কিছু পাগল আছে তাদের পাগলামির সাথে আমার এ লেখার কোন সম্পর্ক নাই। যারা মানসিক ভারসাম্যহীন তারাতো সত্যিকারের পাগল। তাদের জন্য আমার সমবেদনা আছে। মহান সৃষ্টিকর্তা তাদের মানুষ করে পৃথিবীতে পাঠিয়েও কেন মানসিক ভারসাম্যতা কেড়ে নিয়েছেন তা তিঁনি নিজেই ভালো জানেন। তবে আমার মনে হয়েছে মানুষ একেক বয়সে একেক রকম পাগল। এই পাগল মানেই মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ নয়। সম্পূর্ণ রক্ত মাংসের মানুষ হয়ে, মানসিক ভারসাম্য থাকা স্বত্বেও যে ধরনের পাগলামি করে আমি সেসব পাগলের পাগলামির নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
ছোট শিশু। কিছুই বুঝে না। কোলে-বিছানায় মল মুত্র ত্যগ করে, বলতেও পারে না। খিদে লাগলেও বলতে পারে না। তবে কিছু না বুঝলেও খিদের জ্বালা বোঝে। কিছু বলতে না পারলেও খিদের কথা বলতে পারে তার নিজস্ব প্রকাশ ভঙ্গি দিয়ে। যখনই একটা শিশুর খিদে পায় তখনই সে কেদে উঠে। শিশুটি বুঝে না কানলে মায়ও দুধ দেয় না তাই খুধা অনুভব করলেই কান্না শুরু করে। কান্না তখনই থামে যখন তার মুখে খাবার তুলে দেয়। শিশুর খাবার হলো দুধ। তাই মুখে দুধ দিলেই সে শান্ত হয়ে যায়। আসলে সে দুধের পাগল।
দুধের পাগল সন্তানটা যখন একটু বড় হয় তখন তাকে নিয়ে বাবা মায়ের কত চিন্তা। পড়াশুনা করাতে হবে, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাতে হবে, বড় হয়ে জজ, ব্যরিষ্টার হতে হবে। কোন পিতা-মাতা অবশ্য ছোট থাকতে কখনো ভাবে না আমার সন্তান বড় হয়ে রাজনীতিবিদ হবে! তাই কোথায় ভর্তি করা যায়, কাকে টিউটর রাখলে রেজাল্ট ভালো হবে এ নিয়ে অভিভাবকের চিন্তার শেষ নাই। অবশেষে তাকে ভর্তি করা হলো স্কুলে। এতদিন ভালোই কেটেছিলো জীবন। খাওয়া দাওয়া, খেলাধুলা, দুষ্টমি করেই সময় চলে গেছে। ক্লান্ত হয়ে পড়লেই ঘুম। এক স্বর্গীয় জীবন শিশুকাল, যদিও শিশুরা সেটা বোঝে না, বড় হওয়ার পর যেমনটা আমরা বুঝতে পারছি। শিশুটির পড়াশুনা শুরু করার পরই হলো বিপত্তি। একগাদা বইপত্রের পাহাড় পিঠে বয়ে নিয়ে স্কুলে যাওয়া, ক্লাস শেষে বাসায় এসে টিউটরের কাছে পড়া, সুযোগ পেলে একটু খেলা। এর পরে সন্ধা হলেই পিতা-মাতার হাকডাক পড়তে বসো! পড়তে বসলেই ঘুম আসে। হয়ে গেলো ঘুমের পাগল।
যেভাবেই হোক কাজ একটা জুটে গেছে। গদবাধা জীবণ এখন। চাকুরী হলে ঘড়ি ধরা সময়ের বাইরে যেতে পারবে না। শ্রম দিলে, নিয়োগ কর্তার কড়া নজরদারী। নির্দিষ্ট কাজটা শেষ করতেই হবে। এখন আর কাজ ভালো লাগে না। মন চায় একটু ঘুরে বেরাতে, একটু এদিক ওদিক উকি ঝুকি দিতে। কিন্তু সে সুযোগ কই? এখন সে ফাঁকির পাগল। কখন কাজে ফাঁকি দেয়া যায়, কখন মুক্ত হওয়া যায় সেই আশায় তীর্থের কাকের মত তাকিয়ে থাকে, সুযোগ খোজে। অবশেষে সে এখন কাজ ফাকির পাগল।
জীবনে বেঁচে থাকার নিয়ামক হলো খাবার। আমরা এক বেলা, দু’বেলা না খেয়ে থাকতে পারি। কখনো কখনো তিন বেলাও খাওয়া হয় না। খুব বীরত্ব দেখাই যে, না খেয়ে ছিলাম। কিন্তু এর চেয়ে বেশি অভুক্ত থাকলে জীবণ যায় যায়। একজন অভুক্ত মানুষ তখন খাবার পাগল হয়ে যায়। তাই মানুষ কখনো কখনো খাবার পাগল। খুধার জ্বালায় তখন মানুষ কি না করে? যা পায় তাই খায়।
জীবন জীবিকার সাথে আছে টাকার সম্পর্ক। মানুষ তার প্রয়োজন মিটাতে কোন না কোন ভাবে টাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। টাকা ছাড়া জীবন চলে না। কথায় বলে, মহিলাদের বল তার স্বামী আর পুরুষের স্বামী টাকা। প্রতিটা মানুষ স্বপ্ন দেখে তার অনেক টাকা থাকবে। যার শত টাকা আছে সে ভাবে কবে হাজার টাকা হবে, যার হাজার টাকা আছে সে ভাবে কবে লাখ টাকা হবে আর যার লাখ টাকা আছে সে ভাবে কবে কোটি টাকা হবে। আর কোটি পতির কথা বলে লাভ নেই। সেও ভাবে, কবে কোটি কোটি টাকা হবে। যে করেই হোক টাকা রোজগার করতে হবে। আর এ চিন্তা থেকে মানুষ যে কোন পথ মাড়াতে পারে। বৈধ-অবৈধ সকল পথই বেছে নেয়। সাদা হোক আর কালো হোক টাকাটাই চায়। এক পর্যায়ে মানুষ টাকার পাগলও হয়ে যায়। তবে অর্থ অনর্থের মূল কথাটা মনে রাখতে হবে। কিন্তু টাকার পাগল সে কথাটা বেমালুম ভুলে যায়।
শ্রমে-ঘামে, সুপথে-কুপথে টাকাতো অনেক হলো। টাকা যে মানুষকে শান্তি দিতে পারে না সেটাও বুঝা গেল। এখন একটু হাত খুলে খরচ করতে মন চায়। দান খয়রাত দিয়ে, মানুষের পিছনে খরচ করে একটু যদি নাম ফুটানো যায়! টাকা খরচ করে অনেকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে। কেউ কেউ টাকা দিয়ে লেখক ভাড়া করে লিখিয়ে নিজের নামে তা ছেপে নাম ফুটায়। আবার কেউ কেউ টাকা খরচ করে দানবীর হিসাবে পরিচিতি পেতে ব্যস্ত থাকে। আসলে টাকাওয়ালা এবার নামের পাগল হয়ে যায়। যেভাবেই হোক টাকার বিনিময়ে নাম কামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
নানান ধরনের মানুষ আছে আমাদের এই সমাজে। কেউ টাকার পাগল, কেউ কাজের পাগল, কেউ খাবার পাগল। এছাড়া কেউ কেউ আছে ভাবের পাগল। তার নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে ধারনা থাকুক বা না থাকুক তবুও ভাব নেয়। পকেটে ফুটো কড়ি নেই তবুও ভাব নেয় সে ধনি মানুষ। মাথায় জ্ঞান নেই, ভাব নেয় সে খুব জ্ঞানী পন্ডিত। ছ্যাবলা-বাচাল ব্যক্তি কিন্তু ভাব নিবে সে খুব ব্যক্তিত্ববান মানুষ। এগুলো আসলে ভাবের পাগল। তবে সত্যিকারের ভাবের পাগল আবার অন্য জিনিষ। যেমন কেউ লালন ভক্ত, সে লালনের ভাব শিষ্য। সে লালনের ভাবের পাগল। এধরনের ভাবের পাগলের বিষয়ে আমার শ্রদ্ধা-ভক্তি আছে। তাদের বিষয়ে আমার কোন বিদ্বেষ নাই।
শিক্ষা জীবন হোক আর সাধারণ জীবন একটা সময় মানুষ প্রেমিক হয়। কেউ বইয়ের প্রেমিক, কেউ সিনেমার প্রেমিক, আবার ঘরের বউ টিভির প্রেমিক। প্রেমিক পুরুষ প্রেমিকার জন্য পাগল, প্রেমিকা প্রেমিক পুরুষের জন্য পাগল। কেউ প্রেমের জন্য এতটাই পাগল হয় শেষ পর্যন্ত টিকতে না পারলে বলে, একসাথে বাঁচতে যদি না পারি, চলো একসাথে মরতে তো পারবো! আবার যাদের মরার সাহসও নেই তারা চুল, দাড়ি রেখে দেবদাস হয়ে যায়, তাদের আমরা প্রেমের পাগলও বলি। অনেক ভালো ভালো বিষয় আছে যার প্রতি আসক্তির কারনে ঐ বিষয়ে পাগল বললেও সেসব পাগল মন্দ নয়।
পুত্র শুয়ে আছে পাশের রুমে। মাঝ রাতে ঠুক ঠাক শব্দে পিতা মাতার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পিতা মাতা গিয়ে দেখে পোলা খাট কুপিয়ে কাটছে। জিজ্ঞেস করে, কিরে খাট কাটিস কেন? ছেলে উত্তর দেয়, এত বড় খাট লাগে নাকি। তাই কেটে ফেলছি। পিতা মাতার বুঝতে বাকি থাকে না ছেলেকে বিয়ে করাতে হবে। যুয়ান পোলা বিয়ার পাগল! মেয়েরাও কম যায় না। তবে নারীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের বিষয়ে কিছু বললাম না।
দেখতে কুৎসিত। গায়ের রং কালো। তবুও চেষ্টার কমতি নেই। বোটানিক এ্যারোমা থেকে শুরু করে ফেয়ার এন্ড লাভলী পর্যন্ত কি না ব্যবহার করেছে? কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। সৃষ্টিকর্তা যে রুপ লাবন্য দিয়ে পাঠিয়েছেন ঘষে মেজে তার চেয়ে ভালো হওয়া কখনেই সম্ভব হয় না জেনেও চেষ্টার ত্রুটি রাখে না। তারা আসলে রুপের পাগল। বাহ্যিক রুপটাকে প্রাধান্য দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যায়। রুপের পাগল ছেলেদের থেকে মেয়েরা একটু বেশিই হয়ে থাকে।
অনেকের অনেক রকম নেশা আছে। কারো বই পড়ার নেশা, কারো স্কুল পালানো নেশা, কারো কাজের নেশা, কারো ঘুমের নেশা, কারো রাত জাগার নেশা, কারো মদের নেশা, কারো গাজার নেশা, কারো টাকার নেশা, কারো চুরির নেশা, কারো লুচ্চামির নেশা। তবে এখন নতুন এক নেশায় আসক্ত আমরা সেটা হলো ফেসবুকের নেশা, মোবাইলের নেশা। গাজাখোরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে গাজার নেশা ধরে, তখন সে পগলের মত হয়ে যায়। নেশার জন্য চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে অবলীলায়। মদখোর মদের জন্য পাগল। সময় হলেই পাগলামী শুরু করে দেয়।
কেউ কেউ আছেন সংসারের পাগল। সবসময় সে তার সংসার নিয়ে ভাবেন। সংসার ছাড়া কিছু বোঝেন না। পরিবারের সবাইকে খুশি রাখতে তাদের প্রাণপণ চেষ্টা। তবে সংসারের পাগল ভালো পাগলই বলতে হয়। এই পাগলামিতে কারো কোন ক্ষতি হয় না। একজন সংসার পাগল মানুষ পরিবারের সবাইকে আষ্টেপিষ্টে রাখতে পারেন।
অনেকেই আছে গান পছন্দ করে। গান শুনতে দূর দূরান্তে চলে যায়। আমাদের দেশে শীতের দিনে পালা গানের আসর বসে। সারা রাত গান চলে। শীতের দিনেই এই আয়োজনটা বেশি হয়। বিভিন্ন তরিকার পীর ফকির আছে যাদের আখড়ায় বাৎসরিক উরস উপলক্ষে গানের আসর বসায়। গ্রামের মাঠে প্রচন্ড শীত সহ্য করে গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে আউশ ধানের নারার উপর বসে রাত ভর গান শোনে। কোথাও গানের আয়োজন হয়েছে শুনলেই পাগলের মত ছুটে যায় গান শুনতে। এমন পাগলকে আমরা গানের পাগলই বলেথাকি।
কেউ কেউ আছে নাচের পাগল। অবশ্য অনেকে নাচের চেয়ে নাচাতে ভালোবাসে। আবার কেউ কেউ নাচতে ভালোবাসে। নাচাতে বা নাচতে যাই করুক না কেন তাদের নাচের পাগল বলা চলে।
একটু সময় পেলেই অনেকে বেড়িয়ে পড়ে। দেশে কিংবা বিদেশে সুযোগ পেলেই ঘুরতে চলে যায়। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বার বার ঘুরতে যায়। এমন ভ্রমন পিপাসুদের ভ্রমন পাগল বলা যেতে পারে।
অনেকে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ি চালাতে পারে। বিরামহীন ভাবে গাড়ি চালানোর পরেও কোন ক্লান্তি আসে না। গাড়ির আরোহীরা ক্লান্ত হয় কিন্তু চালক পাগল হয় না। এমন পাগলও আছে নেহায়েত কম নয়।
ধর্ম নিয়ে বরাবারি না করাই ভালো। তবে অনেকেই আছে পীর মুরশিদের পাগল। এমন পাগলের সংখ্যা আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়। নানান নামে চতুর কিছু লোকজন আখড়া খুলে বসে। ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষগুলো তাদের টার্গেট। কিছু নীতিকথা শুনিয়ে এমন ভাবে মগজ ধোলাই করে যে বাবা মাকে ভাত দেয় না কিন্তু বছরের বিশেষ দিনে পীরের বাড়ি চলে যায়। বাড়িতে বিবি বাচ্চাদের বছরে একদিন ভালো ভাবে গোস্ত খাওয়াতে পারে না। কিন্তু পীর বাবার জন্য টাকা জমিয়ে গরু কিনে নিয়ে যায় গাড়ি ভরে। বাবারাও কম চতুর না! আমি এমন এক পীর বাবাকে চিনি যে কিনা ওড়সের তিন দিন আমিষ খায় না। গরু, ছাড়ল, হাস, মোড়গ রাখার জন্য বাবার আলাদা আলাদা খোয়ার আছে। সেই খোয়ারে প্রচুর পশু জমা পড়েছে। কিন্তু ওড়সের তিন দিন পশু জবাই করে না। জানতে চাইলে বাবা বলেন, তিন দিন আমরা নিরামিষ খাই। পরে চিন্তা করে দেখলাম, তিন দিন নিরামিষ খাওয়ার কারন কি। আসলে গরীব মুরিদরা পশু আনতে পারে না। তারা আনে নিজের খেতের ফসল, গাছের লাউ, কুমড়া, মুলা, গাজর, আলু, পিয়েচ। এগুলো হলো পচনশীল দ্রব্য। বেশি দিন রাখা যাবে না। তাই বুদ্ধি করে পচনশীল পন্যগুলো তিন দিনের ওড়সে চালিয়ে দেন। ওড়স মাহফিল শেষে পশুগুলো বিক্রি করে ঢাকায় চলে যায় আরাম আয়েশ করতে।
অনেকে আছে স্মৃতির পাগল। তারা পুরাতন জিনিসপত্র ফেলতে চায় না। তাদের মায়া মমতা বেশি। সব কিছুই আকড়ে ধরে রাখতে পছন্দ করে। তারা স্মৃতির পাগল। এধরনের পাগলা খারাপ না।
অনেকে আছে খেলাধুলার পাগল। আমি অবশ্য অন্য খেলার কথা বলছি না। জুয়া খেলার কথাই বলছি। জুয়া যারা খেলে তারা সর্বস্ব বাজি রেখে খেলতে পারে। শত চেষ্টায়ও জুয়ার পাগল ভালো করা যায় না। আজ পুলিশে ধরবে, ছাড়া পেয়ে কালই বসে পড়বে। সহায় সম্পদ বিক্রি করে হলেও জুয়া খেলবে এই পাগল। পয়সা না থাকলে জুয়ার কোটে আরেক জুয়ারীর পাশে বসব, পরামর্শ দিবে, তবুও বসতে হবে। এক মা তার ছেলেকে বললো বাবা জুয়া খেলা ভালো না, আজ জিতলে কাল হারতে হয়। ছেলে বললো, মা, আমি তাহলে একদিন পর পর খেলবো! তবে আসল জুয়ার পাগলরা প্রতিদিনই বসতে পছন্দ করে।
অনেকে আছে খেলাধুলার পাগল। ছাত্র জীবনে সকাল বিকাল নেই। সবসময়ই খেলার মাঠে থাকতে পছন্দ করে। খাওয়া নেই, নাওয়া নেই খেলা আর খেলা। পত্রিকা পড়লে খেলার পাতা, টিভি দেখলে খেলার চ্যানেল। গায়ে দিবে পছন্দের খেলোয়ারের জার্সি। খেলতে খেলতে অনেকেই ভালো খেলোয়ার হয়ে যায়। আবার পড়া রেখে খেলতে খেলতে ভালো খেলোয়ার না হতে পেরে জীবনের বাকে হারিয়েও যায়।
কেউ চুল বড় রাখতে পছন্দ করে, কেউ দাড়ি বড় রাখতে পছন্দ করে। অনেকে ধর্মীয় কারনে চুল দাড়ি বড় রাখে তাদের বিষয়টা আলাদা। কেউ নখ বড় রাখে। এটা মেয়েদের ক্ষেত্রেই বেশি ঘটে। জুল দাড়ি না কেটে, নখ বড় রেখে অনেক ভালো মানুষ, সুস্থ্য মস্তিস্কের মানুষ পাগল পাগল ভাব নেয়।
তবে সত্যিকারের পাগল হিসাবে আমরা যাদের চিহ্নিত করি তারা হলো মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ। কোন কোন মানুষের মুদ্রদোষ কিংবা ছোটখাট পাগলামি থাকে। কোন কোন মানুষের চরিত্রের ব্যক্তিত্বে এমন কোনো ঘাটতি বা খুঁত ছিল, যার কারণে মানুষজন তাকে সিরিয়াসলি নেয় না। তখন ‘পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়’ বলে তার কথা উড়িয়ে দেওয়া হয়। ভবে মানসিক ভারসাম্যহীন পাগলের মধ্যে নানান রকম পাগল আছে। কেউ হার্মলেস পাগল, কেউ উদ্দাম পাগল, খিঁচুনি লাগা পাগল, মারধোর করা পাগল ইত্যাদি। তবে পাগল কথাটার মানে কী, আর পাগলামিই বা কী বস্তু? ওটা কি কোনো রোগ না বিকার? পাগলামি কি ভালো হয় এমন নানা প্রশ্ন আছে আমাদের মনে।
মেয়ে ছেলের জন্য বর-কনে খুঁজতে গিয়ে আগের আমলে লোকে খোঁজ করত, বংশে কোনো ‘সুইসাইড' বা পাগল আছে কিনা। যেন পাগলামিটা বংশগত! যদি অভিনয় কিংবা গানের গলা বংশগত না হয়, তবে পাগলামিই বা বংশগত হতে যাবে কেন? আসলে একটা মানুষ তার পারিপার্শ্বিকের আর পাঁচটা মানুষের মতো ব্যবহার না করে, আচার-আচরণ না করে, একটু উদ্ভুটে ব্যবহার, আচার-আচরণ করছে। সেই উদ্ভুটে আচার-আচরণ বুঝতে গেলে তার ব্যক্তিগত ইতিহাস, আশা-আকাঙ্খা, আশাভঙ্গ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হয়। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের বড় একটি অংশ মানসিক রোগীদের প্রতি এখনো সহানুভূতিশীল হয় না। তারা মানসিক রোগীদের ‘পাগল’ বলে অভিহিত করেন। মানসিক রোগীকে পাগল বলা সামাজিক অপরাধ হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ২০১১ সালে একটা জরিপ হয়েছিলো। তাতে দেখা গেছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৮ বছরের নীচে যাদের বয়স তাদের মধ্যে শতকরা ১৮.১ ভাগ এবং ১৮ বছরের উপরে যাদের বয়স তাদের মধ্যে ১৬.১ ভাগ কোনো না কোনোভাবে মানসিক রোগী। মোট জনসংখ্যার সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানসিক রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, সারা বিশ্বের প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে একজন মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন। তবে গুরুতর মানসিক রোগ যদি বিবেচনা করা হয় তাহলে তা মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭ ভাগ। আশার কথা হলো যে কোনো মানসিক রোগীই চিকিৎসা পেলে পুরোপুরি সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। কিন্তু আমি উপরে যে পাগলের কথা বলেছি তারা সাধারণত ভালো হয় কম।
মানসিক রোগের অনেক কারন থাকতে পারে। তবে চিকিৎসকদের মতে বাংলাদেশে যারা মানসিক রোগে আক্রান্ত হন, তাদের একটি অংশ আক্রান্ত হন বায়োলজিক্যাল এবং জেনেটিক কারণে। কিন্তু বড় একটি অংশ আক্রান্ত হন পারিবারিক এবং সামাজিক কারণে। নানা চাপ, দারিদ্র্য, সামাজিক এবং পারিবারিক অসঙ্গতি এর অন্যতম কারণ। বলা বাহুল্য, মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য ওষুধের পাশাপাশি কাউন্সেলিং ও সঠিক সেবা যতœ জরুরি। সামাজিকভাবে মানসিক রোগীদের হেয় করে দেখা হয় এটা ঠিক নয়।
বাংলাদেশে সাড়ে তিন কোটির বেশি মানসিক রোগী আছে। দরিদ্রতা, পারিবারিক অশান্তি, কর্মসংস্থান ও ধর্মীয় শাসনের অভাবের মতো আরো বিষয়কে মনের অসুখ হওয়ার নানা কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই বিশ্বের সবাই নাকি পাগল, কেউ কম আর কেউ বেশি। পারিবারিক সচেতনতার অভাবেই মানসিক রোগের শুরু। পরিবারে মা-বাবারা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে শিশুদের সামনে ঝগড়া বিবাদ করে। অহেতুক গালাগাল, দোষারোপ, দুর্ব্যবহার করে, যা শিশুদের ছোট মনে ছোট ছোট বিষণ্যণতার জন্ম দেয়, আর শিশুরা বড় হবার সাথে সাথে এই বিষণ্যতা ধীরে ধীরে মানসিক চাপে পরিণত হয়। এই মানসিক চাপ কেউ সহ্য করতে পারে আর কেউ না পেরে হয়ে যায় রোগী।
তবে শেষ কথা হলো সুস্থ্য সাভাবিক মানুষ যখন পাগলামি করে তাদের পাগল বলা ঠিক কি বেঠিক সেটা পাঠক নির্ধারণ করবে। কিন্তু প্রকৃত ভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে কেই পাগল না বলাই ভালো। প্রকৃত পাগলের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, তাদের মানসিক সাহস দিন, ভালো আচরন করুন। তারাও সমাজের কেউ। চাইলেও আমরা তাদের ফেলে দিতে পারবো না। তারা আমাদেরই সন্তান, ভাই, বোন, পিতা, মাতা, আত্মীয়।
Tuesday, January 9, 2018
রাজা
সংসার আমার ভাল্লাগে না
ভাল্লাগে না কাজ
তবুও ভাবতে ভালো লাগে
আমি মহারাজ।
অলস আমায় বলে সবাই
অলসতা মোর সাথী
ভালো লাগে ঘুমকে আমার
ঘুমাই দিবস রাতি।
কারো ক্ষতি করি না ভাই
লাগিনা কারো কাজে
তবুও দেখি অনেকেই আমায়
ডাকে মাঝে সাজে।
পারলে কারো কাজে লাগি
লাগি না পিছনে
সহজ সরল মনটা আমার
কালি নাই তো মনে।
ব্যাথা দিলে সহ্য করি
নিরবে যাই সয়ে
প্রতিঘাত করি না কভু
প্রতিবাদী হয়ে।
মনে হয়তো প্রশ্ন তোমার
আমি কোথার রাজা?
নিজের একটা ভূবন আছে
তারই মহারাজা।
তুমি
তোমার আশায় থাকি বসে
তুমি থাকো কই?
তুমি আমার পরান পাখি
তুমিই প্রিয়া সই।
মেলিলে চোখ তোমায় দেখে
বুজিলেও তুমি
গভীর ঘুমে থাকিলেও
সামনে থাকো তুমি
চোখের পাতায় বিরাজ কর
বাস করো যে মনে
চোখের আড়াল হবে তুমি
মানতে চায় না মনে।
কাজের মাঝে, সকাল সাঝে
দুপুর কিংবা গভীর রাতে
চাই তোমাকে নিরবে নয়
সরব হয়ে আমার সাথে
তুমি কাছে না থাকিলে
মনে ছবি না আকিলে
আদর শাসন না করিলে
হাতটা আমার না ধরিলে
মান অভিমান না ভাঙ্গিলে
আবার ভালো না বাসিলে
হৃদয় আমার যায়য়ে পুরে
তুমি দূরে গেলে চলে।
এত কিছু, সবই জানো
বুঝার পরে তুমিই মানো
তার পরেও দূরে কেন?
মনে কেন দুঃখ আনো
তোমায় আমি চাইযে কাছে
সকাল, দুপুর, সন্ধা, সাঝে
তুমি থাকো চোখের তারায়
হৃদয়েরই গহীন মাঝে।
Sunday, January 7, 2018
শীত
চায় নাতো আমার মন
তার পরেও জীবিকার টানে
বাইরে যায় কত জন
লেপ মুড়ি দিয়ে রিমোটটা নিয়ে
শুয়ে শুয়ে দেখি শুধু টিভি
কারো কারো ঘরে না খেয়ে বসে
আছে তার বাচ্চা ও বিবি
জড়ো সড়ো হয়ে কাপি বসে আমি
উঠে রিক্সার সিটে
কনকনে শীত চালকের লাগে
বুকে, গায়ে আর পায়ে-গিটে
অভাবের তাড়নায় তীব্র শীতেও
ঘাম নয় ঝড়ে পড়ে রক্ত
দুমুঠো ভাতের অভাবে নামে রাস্তায়
আমার কাছে কাজটা শক্ত
নাইটগার্ট আবু ভাই, পৌষ আর মাঘ নাই
করে চলে জীবনের ডিউটি
ঠোট, গাল ফেটে যায়, তকটা টানে
ভাবে না সে কিসে হবে বিউটি
আড়তে মাল আসে গভীর রাত করে
বাবুদের চাহিদা মেটাতে
মাল নামে ঘাড়ে চড়ে, শ্রমিকের ঘাম ঝড়ে
সংসারের মুখে হাসি ফোটাতে
কারো আছে সুয়েটার, শাল আর মোটা কোট
বিছানায় লেপ আর বিদেশী কম্বল
কারো ছেড়া গেঞ্জি, পুরাতন লুঙ্গি, লেপ নেই
ছেড়া মোটা কাথাটাই সম্বল
গভীর রাতে কেউ ল্যাম্পপোষ্টের নিচে
দাড়িয়েছে খদ্দেরের আশায়
কেউবা ঠাটে বাটে, চলে গেছে পাজেরোতে
ক্লায়েন্টের দামী ফ্ল্যাট বাসায়
কারো ঘড়ে বইছে হিটারে উষ্ণতা
এটাও মনে হয় কম পাওয়া
কারো ঘড়ে বইছে বেড়ার ফুটো দিয়ে
উত্তরের কনকনে হিমেল হাওয়া
এভাবেই চলছে ধনী আর গরীবের
জীবন আর জীবিকা
কারো ঘড়ে রাশি রাশি পড়ে আছে ধন
কারো ঘর একদম ফাঁকা
বৈশম্যহীন সমাজটা গড়তে
কেউ কেউ ধরে নানা স্লোগান
সন্ধা ঘনিয়ে এলে স্লোগান পিছে ফেলে
চিয়ার্স বলে শুরু করে পান
জুয়েল বলে,
শীতের তীব্রতা কমাতে চাইলে
তাকাও একে অপরের দিকে
নয়তোবা সমাজটা একদিন ঠিকই
হয়ে যাবে একদম ফিকে।
রাস্তা
যায় বাজারে, যায় যে হাটে
চলে গাড়ি, চলে লড়ি
নানান পণ্য ভরি ভরি
অ্যাম্বুলেন্স আর বিয়ের গাড়ি
বরযাত্রি সাড়ি সাড়ি
গরু বোঝাই, ময়লা নিয়ে
যায়যে সবাই রাস্তা দিয়ে।
রাস্তায় পড়ে মরে কত
রাস্তাই বাঁচায় জীবণ শত
রাস্তা ছাড়া জীবন চলা?
সেই কথা আর লাগে বলা!
রাস্তা তোমায় পথ দেখাবে
গন্তব্যে পৌছে দিবে
রাস্তা ধরেই যাবে চলে
মাভৈ মাভৈ বলে বলে
রাস্তা যদি না হয় ভালো
জীবণ হয়ে উঠবে কালো
রাস্তার তাই যতœ নিও
ভেঙ্গে গেলে জোড়া দিও।
জুয়েল বলে,
রাস্তা, এখন আর রাস্তা নাই
চললে মনে হয় নদী দিয়ে যাই!
উথাল পাথাল ঢেউ কোমড় করে ব্যাথা
কার কাছে বলি বলো এ দুঃখের কথা?