ভালবাসি প্রকৃতি

Saturday, July 18, 2009
আমার যত ভাবনা (কলাম)
এটি নির্মানাধিন। সহযোগীতার জন্য ধন্যবাদ। যথা দ্রুত এই বিভাগে পোষ্ট প্রকাশের আশা রাখছি।
সবাইকে আবারো ধন্যবাদ
........................
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
--------------------------------
Friday, July 10, 2009
বর্ষার গান

এখন বর্ষা কাল!
আম-কাঁঠালে চলছে বেশ খাওয়া-দাওয়া তাইনা?
‘আম’ নামটা শুনলেই জিভে জল এসে যায়। কত নামে আমাদের সামনে আবির্ভাব হয় এই আম। তবে আষাঢ়ের ফজলি আম যার কথা না বল্লেই নয়। সেই সাথে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, মোহনভোগ, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাচাঁমিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা ইত্যাদি নানান নামে আমাদের রসনা তৃপ্ত করছে আম। স্বাদের দিক থেকে আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশের আম কিন্তু সেরা!!
আর কাঁঠাল? রসালো ফল কাঁঠাল বাঙ্গালীর রসনা মেটাতে অনেক ভূমিকা রাখে। কেবলই কাঁঠাল? কাঁঠালের শুস্ক বিচি ভাজা, বিচি দিয়ে রান্না করা তরকারি খেলে স্বাদ মুখে লেগে থাকে।
কাঁঠাল নিয়ে উইকিপিডিয়াতে লেখা পড়লেই বোঝাযাবে আমাদের প্রিয় কাঁঠালের গুনাগুন। ‘কাঁঠাল এক প্রকারের ফল। এটি বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এই ফলের কাঁচা অবস্থায় নাম এঁচোড়। (‘এঁচোড়-পাকা’ মানে কিন্ত কাঁঠাল নয়, এটা অকালপক্ব- বেশী পাকামি মারা। শিশুদের উপর প্রযোয্য বিশেষণ।) এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আকৃতির ফল। এটি ৮-৩০ ইঞ্চি বা তার ও বড় হতে দেখা যায়। ওজন ৩-৭ কেজি স্বাভাবিকভাবে হয়ে থাকে, এর বেশি ও হতে দেখা যায়। সাধারণতঃ লাল মাটিতে ও উচু এলাকায় বেশি দেখা যায়। গাছের কাঠ হলুদ রংএর, উন্নত মানের দামি কাঠ বলে সমাদৃত।
অসংখ্য হলুদ রং এর ছোট রসালো কোষ একত্রে মোথার চারদিকে ঘিরে থাকে। প্রতিটি কোষে বীজ থাকে। ঐ বীজ থেকে গাছ হয়। মিষ্টি এবং বেশ পুষ্টিকর। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফুল হয় এবং মে-জুন নাগাদ পাকে। কাচা অবস্থায়ও তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। এর প্রায় পুরো অংশই কাজে লাগে, ফল খাওয়ার পর এর উচ্ছিষ্ট অংশ গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। বীজ শুকিয়ে আলুর বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায় সিদ্ধ করে, আবার বাদামের মত বালুতে ভেজেও খাওয়া যায়। এছাড়া এর বীজ প্রজনন মতা বৃদ্ধিকারক বলে মনে করা হয়।’
এবার বুঝুন কাঁঠালের কত গুন? তাই বর্ষায় প্রকৃতি আমাদের উপর কত উপাদেয় খাবারই না বর্ষণ করে।
সেই সাথে ইলিশ।
ইলিশ ভাজি, ইলিশ ভাপা, সরষে ইলশ, ইলিশ ভর্তা, ইলিশ ভবানী, ইলিশের দোপেয়াজা---উফ!! জিভে জল আসা সব রেসিপি তাইনা?
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি-মন কি চায়?
একমাত্র ইলিশ খিচুরিই এই চাওয়া মেটাতে পারে! !
ইলিশ সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে লেখা হয়েছে-‘সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, কড়া ভাজা, দোপেয়াজা এবং ঝোল খুবই জনপ্রিয়, কচুর পাতা এবং ইলিশ মাছের কাটা, মাথা ইত্যাদির ঘন্ট একটি বিশেষ রান্না। ডিম ভর্তি ইলিশ মাছ এবং সুগন্ধি চাল দিয়ে বিশেষ একরকম রান্না করা হয় যা ভাতুরী বা ইলিশ মাছের পোলাও নামে পরিচিত। এটি বর্ষাকালের একটি বিশেষ রান্না।’
এখন সময়ইতো আম-কাঁঠাল-ইলিশ খাওয়ার কি বলো? অবশ্যই খাব তবে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে সেটাও মনে রাখতে হবে। এখন বর্ষা মৌসুম। গাছ লাগানোর এখনই সময়। কাঠের গাছের সাথে বিভিন্ন ফলের গাছ লাগাতে হবে। বাড়ির আঙ্গিনায় আগে যে পরিমান গাছ দেখেছেন তা কি এখনও আছে, একবার বিবেককে প্রশ্ন করুন। বাড়ির পাশে যে ঘন বাগান দেখেছেন সেটা কি আর বাগান আছে? ঘন থাকাতো দুরের কথা। তাই ফল খেতে হলে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। পরিবেশ যেভাবে দূষিত হয়ে যাচ্ছে তাতে খাওয়া-দাওয়া আর কিছুই ভাল লাগবে না। বাঁচবেনই না খাবেন কি করে!! তাই গাছ লাগাতে হবে বাঁচার জন্য, গাছ লাগাতে হবে পরিবেশের জন্য, গাছ লাগাতে হবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য, গাছ লাগাতে হবে আমাদের পৃথিবীর জন্য, গাছ লাগাতে হবে পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য।
আর ইলিশ? একদিন যে সাইজের ইলিশ খেয়েছেন আজ কি সেই সাইজের ইলিশ পান? টাকা হলেও পাওয়া যায় না। কেন পাওয়া যায় না? নদী-সমুদ্র কি ভরাট করে রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে, নাকি নদী-সমুদ্রের পানি সেচে ফেলেছে যে বড় বড় মাছ পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। একবার ভেবে দেখুন, আমরা নিজেরা নিজেদের হাতে আমাদের পায়ে কিভাবে কুঠাড় মারছি? নদ-নদী দূষিত করে মাছের প্রজনন, বসবাস অযোগ্য করেফেলেছি। নদী ভরাট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করছি, নদীতে ময়লা বর্জ ফেলে নদীকে মেরেফেলছি। যাও একটু আছে তা সময়ে অসময়ে ধরে ফেলছি। যখন ইলিশের পেটে ডিম থাকে তখন ধরছি। আবার যখন জাটকা মাছটি বড় হয়ে পূর্ণাঙ্গ ইলিশ হবে তখন সেই জাটকা ধরছি। আপনার হয়ত মনে হচ্ছে-–আমি তো জাটকা ধরি না, জেলেরা ধরে। কিন্তু আপনি কেনেন কেন? কিনে জেলেকে উৎসাহ দিচ্ছেন।
তাই আসুন আমরা একটু পরিবেশের উপর সদয় হই।
নিজের জন্য, নিজের জন্য, নিজের জন্যই সদয় হই।
যদি অন্য কাউকে ভালবাসি তার জন্যও পরিবেশের উপর সদয় হই।
পরিবেশ না বাঁচলে আপনি বাঁচবেন না। আপনার ভালবাসা বাঁচবে না।
Thursday, July 9, 2009
পরিবেশ বাঁচাই, গাছ লাগাই
Tuesday, July 7, 2009
কবিতার খাতা.................
এটি নির্মানাধিন। সহযোগীতার জন্য ধন্যবাদ। যথা দ্রুত এই বিভাগে পোষ্ট প্রকাশের আশা রাখছি।
সবাইকে আবারো ধন্যবাদ
........................-----------------------------
---------------------
----------
Sunday, July 5, 2009
আমার যত ছবি......


নাতী নামেই বেশি পরিচিত! দেখলেই মনে হয় সম্প্রতি হ্জ্ব করেছে তাই না????

সর্বদা দুর্ঘটনা এড়িয়ে থাকতে চাইলেও তার হাতের কনুই তলে দুর্ঘটনা ধরা দেয়!!




>>> আমার আইডি কার্ড (সাবেক)

>>> আমি এবং বন্ধু সোহেল

>>> পিআইবি আয়োজিত ফরিদপুরে সাংবাদিকতায় “নারী ও শিশু” বিষয়ক এক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের সাথে আমি।

>>> পিআইবি আয়োজিত ফরিদপুরে সাংবাদিকতায় “নারী ও শিশু” বিষয়ক এক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের সাথে আমি।

>>> আমরা তিন বন্ধু। বাম দিকে আমি এর পর মোস্তাফিজুর রহমান নয়ন শেষে মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন।

>>> আমি নিজেই!

>>> আমি নিজেই!
>>> আমি নিজেই!

>>>বন্ধু শামীম আজিজ, নানা নামেই ডাকি।
অদম্য এক পরিশ্রমী যুবক। নিজের দুঃখ চেপে রেখে অন্যের দুঃখ যে ভাগ করে নেয়।

>>> প্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
নিজের বাড়ি মাদারীপুর এসে ঘুরে গেছেন শরীয়তপুর। সেই প্রিয় লেখকের সাথে একদিন।

>>> প্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
নিজের বাড়ি মাদারীপুর এসে ঘুরে গেছেন শরীয়তপুর। সেই প্রিয় লেখকের সাথে একদিন।
Thursday, June 11, 2009
পরিবেশ বাঁচান
রাজধানীতে বায়ুদূষণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রতি বছর এ কারণে মারা যাচ্ছে কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ। গতকাল পরিবেশ অধিদফতর এ তথ্য জানায়। সূত্র জানায়, ধুলাবালি, গাড়ির কালো ধাঁয়া, কারখানার বর্জ্য ও কালো ধোঁয়া, নির্মাণ শিল্পের বর্জ্য এবং অতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ঢাকার বায়ুকে দূষিত করছে। এ কারণে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এরই ভয়াবহ প্রভাবে মারা যাচ্ছে মানুষ। প্রতিদিন গাড়ি থেকে ১০০ কিলোগ্রাম সিসা, ৬০ টন কার্বন মনোক্সাইড, ১৬ টন নাইট্রোজেন, দেড় টন সালফার ডাইঅক্সাইড, ১ টন হাইড্রো কার্বন এবং সাড়ে ৩ টন অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ বাতাসে নির্গমন হয়। বিশ্বব্যাংক জানায়, ঢাকায় বায়ুদূষণে সৃস্ট রোগের চিকিৎসায় বছরে ব্যয় হয় ১৩২ থেকে ৫৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।উপরের সংবাদটা পড়ে কি মনে হচ্ছে? আমরা কি পরিবেশের মধ্যে বাস করি! আমাদের কি কিছুই করার নাই? আমাদের বাঁচার কি কোন উপায় থাকবে না? অনুন্নত দেশের চেয়ে উন্নত দেশ, অভাবী মানুষের চেয়ে বিত্তবানরা সর্বদা পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। আমাদের এখনই সিন্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি করব।
Sunday, June 7, 2009
গল্প : পথের পদ্য
তার চোখ আটকে গেলো একটি লাল প্লাস্টিকের বড় বলের দিকে। বল ভর্তি তরতাজা জোক কিলবিল করছে। কৌতুহল নিয়ে দাড়িয়ে গেল। দেখলো বল একটি নয় পাঁচটি। প্রতিটি বলে হাজার হাজার জোক। কিলবিল করছে। কোনোটা বল বেয়ে বেয়ে উঠে যেতে চাইছে বাইরে। যেই উঠতে চাইছে অমনি এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে বলের কাধে বাড়ি দিচ্ছে। আর উঠতে থাকা জোকগুলো ঝর ঝর করে পড়ে গেল বলে রাখা পানিতে। ছোট খাট একটি জটলা। একজন লোক একটি প্লাস্টিকের মোড়াতে বসা। হাতে একটি লাঠি। বসে লেকচার দিচ্ছে। তাদেরকে সবাই লেকচারার বলেই ডাকে।
না, এই ব্যাক্তি পিএসসির মাধ্যমে বিসিএস দিয়ে লেকচারার হননি। ইনি রাস্তার লেকচারার। রাস্তায় লেকচার দিতে দিতে লেকচারার হয়েছেন। কথায় আছে না? বকতে বকতে হয় বক্তা, আর পিটাতে পিটাতে হয় তক্তা! উনি বকতে বকতে বক্তা অর্থাৎ লেকচারার হয়েছেন।
তো লেকচারার সাহেব বসে আছেন লাঠি হাতে। বলগুলি ভর্তি জোক। চতুর্দিকে সারি সারি বয়াম। বয়াম ভর্তি বড় সাইজের জোক। এক একটি জোকের সাইজ হবে আট থেকে দশ ইঞ্চি। দেখলে মনে হবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে জোকগুলো।
নিয়াজ সাহেব দাড়িয়ে পড়লো জোকগুলো দেখে। জোক দেখে তার গা ঘিন ঘিন করতে লাগলো। তবুও দেখার ও শোনার ইচ্ছা সংবরণ করতে পারলো না। লেকচারার সাহেব তার লেকচার শুরু করলো-
: ভাই সাব। জীবনে অনেক চিকিৎসা করেছেন। কোন ওষুধে কাম হয় নাই। আমার কাছে আজ শুনে যান কিভাবে সফল হবেন। ওষুধ কিনতে হবে না। শুনলে কিনতে হয় না, দেখলে ও কিনতে হবে না। কেনা না কেনা আপনার ব্যাপার! নিয়মটা শুনে যান কিভাবে বানাইবেন আর কিভাবে ব্যবহার করবেন। এই জোকের তেল ব্যবহার করলে ---শক্ত মজবুত হবে। ব্যাথা বেদনা দুর হবে।
একটু দম নিয়ে লেকচারার সাহেব আবার শুরু করলেন-
: আমার ওষুধ আপনাদেরকে কিনতে হবে না। নিয়মটা শুনে যান। আর ওষুধ বানানের পদ্ধতিটা জেনে যান। নিজে বানাইয়া ব্যবহার করবেন। ভাল না হলে মুখের উপরে ছুড়ে মারবেন। এই দেহেন, এরকম দুইটি মোটা জীবন্ত জোক নিবেন। জোক দুটির মুখে লবন দিয়ে মেরে একটি ঝুনা নারিকেল (পাকা নারিকেল) নিবেন। নারিকেলের মুখ ছিদ্র করে পানি ফেলে দিবেন। চাইলে পানিটা খেতেও পারেন। পানি ফেলার পর এই জোক দু'টাকে ভিতরে ভরবেন। এর সাথে ভরবেন পারদ, ---- সহ ---। এর পর নারিকেলের মুখটা বন্ধ করে আমাবষ্যা-পূর্ণিমার মাঝামাঝি রাতে কালিঘাটে গিয়ে এক নিশ্বাসে মাটির নিচে পুতে রাখবেন। রাতটা যেন শনিবার হয়। এর পর তিন মাস পরে আবার শনিবার রাতে তুলে আনবেন। হাতল ছাড়া দা দিয়ে এক কোপে কেটে নারিকেল দুই ভাগ করে ফেলবেন। কাটার পরে দেখবেন ভিতরে কাদার মত হয়ে গেছে। সেই কাদার মত বস্তু এক নিশ্বাসে তুলে একটি মাটির পাতিলে এক পোয়া সরিষার তেল, এক পোয়া তিলের তেল, ----- দিয়ে মাটির পাতিলে মাটির চুলায় তেতুলের লাকরি (চলা কাঠ) দিয়ে ভাল করে জাল দিতে হইবো। এর পর যেই তেল হবে সেই তেল ছেকে মালিশ করবেন। ঘা, প্যাচরা, দাউদ, একজিমায় লাগাইবেন। রাতে খাউজাইয়া রাতেই লাগাইবেন সকালে কইতে পারবেন না কোন খানে খাউজাইছেন আর কোন খানে লাগাইছেন। এত ভাল কাজ করবো। ইনশআল্লাহ। ভাল নিয়ত করে লাগাইবেন। দেখবেন সকল রোগ ভাল হয়ে গেছে। তবে ভাই একটা কথা আমার ওষুধ মনের ব্যাথা হলে লাগাইবেন না। এ ওষুধ মনের ব্যাথা সারে না। কিন্ত আমি জানি আপনারা এত কিছু জোগার করতে পারবেন না। একটা যদি ভুল হয় তবে ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই আমি আপনাদের কথা ভেবে তৈরী করে রেখেছি। মূল্য এক দাম পঞ্চাশ টাকা। কিন্তু প্রচার পাবলিসিটির জন্য আজ পঞ্চাশ টাকা নেব না। একে দুই ভাগে ভাগ করে এক ভাগ ফেলে দিলাম। হাতে থাকে কত? জোরে বলুন।
পাঁচ-ছয়জন লোক বলে উঠলো-
: পচিশ টাকা।
: পচিশ টাকাকে পাঁচ ভাগ করে দুই ভাগ ফেলে দিলাম। থাকে কত?
: পনের টাকা।
: হ্যা! পনের টাকা দিয়ে এখন সর্ব প্রথম যে ভাই আমারে সরমান (সম্মান) করবেন আমি তাকে এমন একটা সরমান করবো যা আপনি ভাবতেও পারছেন না।
প্রথম একজন হাত তুলতেই একে একে দশ-বার জন হাত তুলে দাড়িয়ে গেল। বেশ ভালই বিক্রি হলো। নিয়াজ সাহেব হতাশ হয়ে চলে গেল তার কাজে।
রফিক সাহেব ব্যস্ত ব্যবসায়ী। মতিঝিল ব্যাংক পাড়া থেকে কাজ সেরে দ্রুত বেড়িয়েছেন মিরপুর যাবেন বলে। মিরপুরগামী বাসের টিকেট কেটে বসেছেন জানালার ধারে। ভয়ংকর সীসা ও কার্বনডাই অক্সাইড মেশানো ফুরফুরে বাতা আসছে জানালা দিয়ে। বসে বসে ভাবছেন ব্যবসার কথা। হঠাৎ একটি ভিজিটিং কার্ড সাইজের শক্ত কাগজের টুকরো ক্ষেপনাস্ত্রর গতিতে এসে আঘাত করলো রফিক সাহেবের কপালে। আৎকে উঠলেন! দ্রুত জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন, নেকাবে মুখ ঢাকা বোরকা পড়া এক মহিলা। হাতে অনেকগুলো ভিজিটিং কার্ড নিয়ে জানালা দিয়ে ক্ষেপনাস্ত্র বা রকেট লাঞ্চার এর গতিতে ছুড়ে ছুড়ে মারছে যাত্রীদের দিকে। অনেকেই রফিক সাহেবের মত আৎকে উঠে তাকাচ্ছে জানালার দিকে।
জানালা ছেড়ে অতঃপর ছুড়ে মারা কার্ডটির দিকে তাকালেন রফিক সাহেব। দেখেন একটি রুহানী দরবার শরীফ ও দাওয়াখানা’র বিজনেস কার্ড। কার্ডটিতে বড় বড় হরফে লেখা আছে ‘চিশতিয়া রুহানীয়া হুজুরীয়ার ওপেন চ্যালেঞ্জ। সাপ্তাহের সব দিন খোলা। চিঠির মাধ্যমেও দাওয়াই দেয়া হয়। দেশে থাকুন আর বিদেশে থাকুন আমাদের ওপেন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। বিফলে মূল্য ফেরত পাবেন। সফল হলে আস পাশের আরো দু’একজন রুগি পাঠাবেন ইনশাল্লা। আমরা অত্যন্ত যতেœর সাথে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। যে যে রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়-প্রেমে ব্যর্থতা, ব্যবসায় উন্নতি হয়না, পার্টনারের সাথে মনমালিন্য, স্ত্রীর সাথে অমিল, স্ত্রী অন্যের পরকীয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে, স্বামীকে বস করতে চান (গাধা বানতে চান), বিদেশ যাত্রায় বাধা, পাওনা টাকা নিয়ে টালবাহানা, রাজনীতিতে ব্যর্থতা, পুরাতন হাপানি, গ্যাষ্ট্রিক, আলসার, পড়াশুনায় অমনোযোগ। যেকোন সমস্যার জন্য চলে আসুন’।
কার্ডটি পড়ে রফিক সাহেব নিজের অজান্তেই হেসে ফেললেন। লোকে বলে সব সম্ভবের দেশ আমার সোনার বাংলাদেশ! তাইতো মনে হচ্ছে এদের কথায়! কি না পারো এরা? আমাদের এতো সমস্যা!! আমাদের দেশের নেতা নেত্রীরা হিমসীম খাচ্ছে। কর্মকর্তা কর্মচারীরা দিন রাত খেটে যাচ্ছে। সমাজ কর্মীরা বিভিন্ন ফরমুলায় সমাজকে বদলাতে চাইছেন। চিকিৎসকরা চেষ্টা করে যাচ্ছে রোগ শোক সারানোর জন্য। অথচ এদের যদি আমরা নিয়োগ করে আমাদের সমস্যা গুলি তাদের হাতে ধরিয়ে দেই তবে কত সহজেই তারা সমাধান করে দিতে পারত!! এতে সময়ও বাঁচবে আবার অর্থও বাঁচবে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা, আমাদের বিশাল জনশক্তি অন্যকাজে সময় দিতে পারবে!!
রফিক সাহেব কথাগুলো ভাবে আর মনে মনে হাসে। আহ্ কি বিচিত্র এই দেশ!!
॥ ০২ ॥
মহসিন সাহেব মেয়েকে নিয়ে মতিঝিল এসেছিলেন। থাকেন নারায়নগঞ্জে। মেয়ে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দেবেন। ইন্টারভিউ শেষে নারায়নগঞ্জের বাসে রওয়ানা দিয়েছেন বাসায় যাবেন বলে। বাসে বসে মেয়ের কাছ থেকে ইন্টারভিউ সম্পর্কে খোজ খবর নিচ্ছেন।
বাস যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে থামার সাথে সাথে বাসের জানালা দিয়ে মেয়ের কোলে এসে পড়ল একটি রঙ্গীন ফোল্ডিং লিফলেট। তাকাতেই দেখাগেল লিফলেটের উপরে একটি রঙ্গীন ছবি যাতে এক যুবক এক যুবতীকে আলীঙ্গন করে আছে। তাকিয়ে বাবা ও মেয়ে দুজনই বিব্রত। লিফলেটটি একটি ইউনানী দাওয়াখানার।
এই লিফলেটেও একই ধরনের লেখা। যেখানে লেখা আছে- যৌন চিকিৎসা সহ সকল রোগের চিকিৎসা ১০০% নিশ্চয়তার সাথে করা হয়। হেপাটাইটিস এ-বি-সি-ডি তেকে জেড পর্যন্ত, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, এইচ আইভি-এইডস সহ সকল রোগ। তারা ছবি দেখেও রোগ নির্ণয় করে ঔষধ দিতে পারে। আবার বিদেশ থেকে নির্ধারিত ফি পাঠিয়ে দিলে তারা পোষ্ট যোগে ঔষধ পাঠিয়ে দেয়। ভাল হওয়ার বিষয়ে কোন চিন্তা করার প্রয়োজন নেই!! ১০০% নিশ্চয়তাতো আছেই।
রফিক সাহেব বা মহসিন সাহেবের মত বিব্রতকর অযাচিত বিড়ম্বনায় আমরা সকলেই পরি। এটা বর্তমানে একটি নগরের উৎপাতে পরিণত হয়েছে। নগরির যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, মতিঝিল, গুলিস্থান, শাহবাগ, প্রেসক্লাব, ফার্মগেট, মহাখালীসহ অটো ট্রাফিক সিগনালের অথবা যে কোন বাস স্টপেজের কথাই বলুন না কেন এ উৎপাদ আপনাকে সহ্য করতেই হবে।
খোজ নিলে দেখতে পাবেন এক শ্রেণীর ইউনানী দাওয়াখানা ও ঝারফুকদাতা ভন্ড হুজুরগন এসব বিজ্ঞাপন প্রচার করে সহজ সরল মানুষকে আকৃষ্ট করে। এসব দাওয়াখানা ও দরবার শরীফগুলোতে সাধারণত যৌন রোগকেই প্রাধান্য দেয়া হয় বেশী। এছাড়া সংসারে অমিল, প্রেমে ব্যর্থতা, বিদেশ যাত্রায় বাধা, শত্রুকে বধ করা, ক্যান্সার, গ্যাসট্রিক, আলসার, হেপাটাইটিস বি সহ সকল রোগের ব্যাপারে ১০০% নিশ্চয়তার সাথে কাজ করার প্রলোভন দেখায়।
এই প্রচার কার্ড বা লিফলেটগুলো বিলি করার কাজে এক শ্রেণীর হত দরিদ্র মহিলা ও যুবকদের ব্যবহার করা হয়। সামান্য পারিশ্রমিক দিয়ে এদের কাজ করানো হয়। এই কাজে নিয়োজিত যুবক ও মহিলারা অনেক সময় পকেট মারার কাজেও ব্যস্ত থাকে।
আপনি বাসে উঠছেন, সুযোগ বুঝে দক্ষ হাতে পকেট থেকে কখন যে মানিব্যাগটা নিয়ে নিয়েছে আপনি তা টেরও পাবেন না। আবার জানালার পাশে মোবাইলে কথা বলছেন। হঠাৎ মোবাইল টান মেরে উধাও!! আপনি শত চেচামেচি করেও আর মোবাইল ফিরে পাবেন না। শশুর বাড়ি থেকে নতুন ঘড়ি উপহার পেয়েছে! হাতে দিয়ে ঢাকায় এসেছেন। বাসে উঠে আনমনে বসে আছেন জানালার কাছে হাত দিয়ে। দেখবেন কেউ খুলে বিয়ে গেছে। ধরার কোন সুযোগই পাবেন না। শুধু হাত থেকে মোবাইল বা ঘটিড়ই নয়, কান থেকে দুল কানসহ ছিড়ে নিয়ে দৌর মারে এসব দৌরবিদেরা!!!! আপাত দৃষ্টিতে দেখতে লিফলেট বিলিকারী মনে হলেও এরা সময়-সুযোগ মত হয়ে যায় ছিনতাই কারী, পকেটমার।
এ বিষয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির উপরে গবেষণা করেন এমন কয়েক বন্ধুর সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, এ সকল ভন্ড চিকিৎসক, ফকির, হুজুর, কবিরাজ আমাদের দেশের কোমলমতি মানুষের মনের স্পর্শকাতর বিষয়ে আঘাত করে তাদের উদ্দেশ্য সফল করে। অজ্ঞতার কারনে স্পর্শকাতর বিষয়ে কাউকে বলতে পারে না সাধারণ লোকজন। গোপন সমস্যা বা গোপন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকদের সাথে অনেকেই কথা বলতে চায়না এবং লজ্জা বোধ করেন। অনেক শিক্ষিত লোকও তার সমস্যা নিয়ে সবসময় যথাযথ বিশেষজ্ঞর সাথে আলাপ করেন না, লজ্জাবোধের কারনে। ফলে ঐসব ভুয়া লোকের চটকদার কথায় সাধারণ মানুষ পটে যায়।
চিকিৎসকদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করার জন্য এসব চটকদার বিজ্ঞাপন বিলি করা হয়। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার জন্য সাধারণ মানুষ এদের কাছে গিয়ে প্রতারিত হয় প্রতিনিয়ত। তারা যে ঔষধ দেয় তাতে কোন রোগ ভালতো হয়ই না বরং অনেক সময় বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নিজেদের সমস্যার কথা তো বলতেই পারে না আবার প্রতারিত হওয়ার কথাও বলতে পারে না। এসকল প্রতারকদের হাত থেকে দুরে থাকাই ভাল। শিক্ষাই পারে এ সকল প্রতারণার থেকে আমাদের রক্ষা করতে। আর প্রশাসন একটু হস্তক্ষেপ করলেই আমরা বিব্রতকর এসব লিফলেট বিলিকারীদের হাত থেকে বাঁচতে পারি, সাধারণ মানুষও প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে পারে।