ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Friday, July 10, 2009

বর্ষার গান

বর্ষা আমাদের আশীর্বাদ। আসুন নেই বর্ষার স্বাদ !!
কেমন আছেন বন্ধুরা?
এখন বর্ষা কাল!
আম-কাঁঠালে চলছে বেশ খাওয়া-দাওয়া তাইনা?
‘আম’ নামটা শুনলেই জিভে জল এসে যায়। কত নামে আমাদের সামনে আবির্ভাব হয় এই আম। তবে আষাঢ়ের ফজলি আম যার কথা না বল্লেই নয়। সেই সাথে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, মোহনভোগ, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাচাঁমিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা ইত্যাদি নানান নামে আমাদের রসনা তৃপ্ত করছে আম। স্বাদের দিক থেকে আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশের আম কিন্তু সেরা!!
আর কাঁঠাল? রসালো ফল কাঁঠাল বাঙ্গালীর রসনা মেটাতে অনেক ভূমিকা রাখে। কেবলই কাঁঠাল? কাঁঠালের শুস্ক বিচি ভাজা, বিচি দিয়ে রান্না করা তরকারি খেলে স্বাদ মুখে লেগে থাকে।
কাঁঠাল নিয়ে উইকিপিডিয়াতে লেখা পড়লেই বোঝাযাবে আমাদের প্রিয় কাঁঠালের গুনাগুন। ‘কাঁঠাল এক প্রকারের ফল। এটি বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এই ফলের কাঁচা অবস্থায় নাম এঁচোড়। (‘এঁচোড়-পাকা’ মানে কিন্ত কাঁঠাল নয়, এটা অকালপক্ব- বেশী পাকামি মারা। শিশুদের উপর প্রযোয্য বিশেষণ।) এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আকৃতির ফল। এটি ৮-৩০ ইঞ্চি বা তার ও বড় হতে দেখা যায়। ওজন ৩-৭ কেজি স্বাভাবিকভাবে হয়ে থাকে, এর বেশি ও হতে দেখা যায়। সাধারণতঃ লাল মাটিতে ও উচু এলাকায় বেশি দেখা যায়। গাছের কাঠ হলুদ রংএর, উন্নত মানের দামি কাঠ বলে সমাদৃত।
অসংখ্য হলুদ রং এর ছোট রসালো কোষ একত্রে মোথার চারদিকে ঘিরে থাকে। প্রতিটি কোষে বীজ থাকে। ঐ বীজ থেকে গাছ হয়। মিষ্টি এবং বেশ পুষ্টিকর। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফুল হয় এবং মে-জুন নাগাদ পাকে। কাচা অবস্থায়ও তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। এর প্রায় পুরো অংশই কাজে লাগে, ফল খাওয়ার পর এর উচ্ছিষ্ট অংশ গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। বীজ শুকিয়ে আলুর বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায় সিদ্ধ করে, আবার বাদামের মত বালুতে ভেজেও খাওয়া যায়। এছাড়া এর বীজ প্রজনন মতা বৃদ্ধিকারক বলে মনে করা হয়।’
এবার বুঝুন কাঁঠালের কত গুন? তাই বর্ষায় প্রকৃতি আমাদের উপর কত উপাদেয় খাবারই না বর্ষণ করে।
সেই সাথে ইলিশ।
ইলিশ ভাজি, ইলিশ ভাপা, সরষে ইলশ, ইলিশ ভর্তা, ইলিশ ভবানী, ইলিশের দোপেয়াজা---উফ!! জিভে জল আসা সব রেসিপি তাইনা?
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি-মন কি চায়?
একমাত্র ইলিশ খিচুরিই এই চাওয়া মেটাতে পারে! !
ইলিশ সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে লেখা হয়েছে-‘সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, কড়া ভাজা, দোপেয়াজা এবং ঝোল খুবই জনপ্রিয়, কচুর পাতা এবং ইলিশ মাছের কাটা, মাথা ইত্যাদির ঘন্ট একটি বিশেষ রান্না। ডিম ভর্তি ইলিশ মাছ এবং সুগন্ধি চাল দিয়ে বিশেষ একরকম রান্না করা হয় যা ভাতুরী বা ইলিশ মাছের পোলাও নামে পরিচিত। এটি বর্ষাকালের একটি বিশেষ রান্না।’
এখন সময়ইতো আম-কাঁঠাল-ইলিশ খাওয়ার কি বলো? অবশ্যই খাব তবে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে সেটাও মনে রাখতে হবে। এখন বর্ষা মৌসুম। গাছ লাগানোর এখনই সময়। কাঠের গাছের সাথে বিভিন্ন ফলের গাছ লাগাতে হবে। বাড়ির আঙ্গিনায় আগে যে পরিমান গাছ দেখেছেন তা কি এখনও আছে, একবার বিবেককে প্রশ্ন করুন। বাড়ির পাশে যে ঘন বাগান দেখেছেন সেটা কি আর বাগান আছে? ঘন থাকাতো দুরের কথা। তাই ফল খেতে হলে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। পরিবেশ যেভাবে দূষিত হয়ে যাচ্ছে তাতে খাওয়া-দাওয়া আর কিছুই ভাল লাগবে না। বাঁচবেনই না খাবেন কি করে!! তাই গাছ লাগাতে হবে বাঁচার জন্য, গাছ লাগাতে হবে পরিবেশের জন্য, গাছ লাগাতে হবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য, গাছ লাগাতে হবে আমাদের পৃথিবীর জন্য, গাছ লাগাতে হবে পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য।
আর ইলিশ? একদিন যে সাইজের ইলিশ খেয়েছেন আজ কি সেই সাইজের ইলিশ পান? টাকা হলেও পাওয়া যায় না। কেন পাওয়া যায় না? নদী-সমুদ্র কি ভরাট করে রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে, নাকি নদী-সমুদ্রের পানি সেচে ফেলেছে যে বড় বড় মাছ পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। একবার ভেবে দেখুন, আমরা নিজেরা নিজেদের হাতে আমাদের পায়ে কিভাবে কুঠাড় মারছি? নদ-নদী দূষিত করে মাছের প্রজনন, বসবাস অযোগ্য করেফেলেছি। নদী ভরাট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করছি, নদীতে ময়লা বর্জ ফেলে নদীকে মেরেফেলছি। যাও একটু আছে তা সময়ে অসময়ে ধরে ফেলছি। যখন ইলিশের পেটে ডিম থাকে তখন ধরছি। আবার যখন জাটকা মাছটি বড় হয়ে পূর্ণাঙ্গ ইলিশ হবে তখন সেই জাটকা ধরছি। আপনার হয়ত মনে হচ্ছে-–আমি তো জাটকা ধরি না, জেলেরা ধরে। কিন্তু আপনি কেনেন কেন? কিনে জেলেকে উৎসাহ দিচ্ছেন।
তাই আসুন আমরা একটু পরিবেশের উপর সদয় হই।
নিজের জন্য, নিজের জন্য, নিজের জন্যই সদয় হই।
যদি অন্য কাউকে ভালবাসি তার জন্যও পরিবেশের উপর সদয় হই।
পরিবেশ না বাঁচলে আপনি বাঁচবেন না। আপনার ভালবাসা বাঁচবে না।

No comments:

Post a Comment