ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Wednesday, July 4, 2018

আমার এডমিট কার্ড আছে ॥ আমি এর গুরুত্ব বুঝি

চেম্বার থেকে বাড়ি ফেরার পর প্রতিদিনই আমি একটু দেরি করে বের হই। বিকাল তিনটা থেকে সাড়ে চারটার দিকে চেম্বার থেকে বেরিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা দেই। সেটা শুক্রবার হোক আর রবিবার। সপ্তাহের প্রতিটি দিনই আমার বের হওয়ার সূচী এক। তবে মাঝে মাঝে সেই সূচী যে হারে হারে মেনে চলি তা কিন্তু নয়।
আবার চেম্বার থেকে বাসায় ফেরার পর বাসা থেকেও বের হই একটু দেরিতে। সন্ধা ছয়টা থেকে সাতটা এমনকি মাঝে মাঝে আটটা নয়টাও বেজে যায়। দেরি হোক আর আগে, বের হবই, এটা নিশ্চিত থাকে। প্রতিদিনের রেওয়াজ ভেঙ্গে আজ বাসা থেকে একটু আগে আগেই বের হলাম। অর্থাৎ বিকাল চারটার দিকে বের হয়ে গেলাম। আজকে আগে আগে বের হওয়ার কারন বন্ধু শামীম তার কাজের সাইট দেখতে গোপালগঞ্জ যাবে। বন্ধু শামীমের বদগুন আর সৎগুন যাই বলি তা হলো সে একা চলতে, একা থাকতে পছন্দ করে না। কোথাও গেলে সাথে দুই তিনজন বন্ধু ডেকে নিয়ে যাবে। যদি তার অফিসে থাকে তবে বন্ধুদের ডেকে এনে আড্ডা দিবে।
বাসা থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে বের হয়েছি। মোটর সাইকেল থানার সামনে দিয়ে ক্রস করে যাওয়ার সময় হঠাৎ আমার চোখ আটকে গেলো থানায় ঢোকার রাস্তার সামনে মূল সড়কে। থানায় ঢোকার মুখে পিচঢালা পথে একটা কাগজ দেখে। দ্রুত গতিতে থাকার কারনে গাড়ি ব্রেক করতে করতে অনেকটা এগিয়ে গেছে। গাড়ির গিয়ার নিউট্রলে এনে চালু রেখেই আমি পা দিয়ে ঠেলে ঠেলে পিছনের দিকে গেলাম। আমার ধারনা যা ছিলো তাই হলো। কাগজটা তুলে দেখি একটা এডমিট কার্ড। ২০১৮ সালের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর এডমিট কার্ড। পরম যতেœ কার্ডটা তুলে পরিস্কার করে নিয়ে নিলাম। 

বন্ধু শামীমের অফিসে এসে ছবি সবার সাথে বিষয়টা শেয়ার করলাম। সবাই পরামর্শ দিলো ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে দিতে যাতে কারো না কারো নজরে আসলে ছেলেটা তার হারানো কার্ডটা ফেরৎ পেতে পারে। আমি কার্ডের কয়েকটা ছবি তুললাম। ছবি তুলে ছেলেটার নাম, বাবা-মায়ের নাম, স্কুলের নাম দিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে দিলাম।
ফেসবুকে পোষ্ট করার চার ঘন্টা পরে মোঃ ফরহাদুজ্জামান নামে আমার এক ফেসবুক বন্ধু কমেন্টস করে জানালো এডমিট কার্ডটি তার এলাকার এক ছোট ভাইর। ছেলেটি এবার এসএসসি পাস করেছে। মোঃ ফরহাদুজ্জামান ছেলেটার সাথে যোগাযোগ করেছে এবং আমার মোবাইল নাম্বার দিয়েছে যাতে এডমিট কার্ডটি সংগ্রহ করতে পারে। 
এডমিট কার্ডের ছবিসহ ফেসবুকে পোষ্ট দেয়ার পর দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত আমার অনেক ফেসবুক বন্ধু শেয়ার করে পোষ্টটা ছড়িয়ে দিয়েছে যাতে সকলের নজর কাড়ে। অতঃপর রাত নয়টার দিকে এডমিট কার্ডের মালিক আমাকে ফোন করে জানালো কলেজে ভর্তি হতে এসেছিলো। যাওয়ার পথে কার্ডটা পথে হারিয়ে গেছে। শনিবার আমার চেম্বারে এসে নিয়ে যাবে।
কার্ডটা কতক্ষণ রাস্তায় পড়ে ছিলো আমি জানি না। তবে কার্ডের উপর দিয়ে উপর্যুপরি রিক্সা, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য গাড়ির চাকা ডলা দিয়ে গেছে তার চিহ্ন রয়ে গেছে।
ছাত্র জীবণ শুরু করার পর থেকে শেষ সময় পর্যন্ত এমনকি এখনও এডমিট কার্ড পাই। একজন ছাত্রের জন্য একটি এডমিট কার্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার এডমিট কার্ড আছে তাই আমি বুঝি একটি এডমিট কার্ডের মূল্য কি। বিভিন্ন কাজে এডমিট কার্ডের প্রয়োজন হয়। 
দীর্ঘক্ষণ কার্ডটা থানার সামনে পড়েছিলো কারোরই চোখে পড়লো না? আমার মনে হয়, এটা যদি এডমিট কার্ড না হয়ে এক হাজার টাকার নোট হতো তবে অনেকেরই চোখে পড়তো। হয়তো কাড়াকাড়ি পড়ে যেত, কার আগে কে দেখেছে আর কে তুলে নেবে!!
একটা গল্প বলি। এক শিক্ষক তার ছাত্রকে প্রশ্ন করলো, 
-আচ্ছা, তোমার সামনে যদি এক কোটি টাকা আর জ্ঞান দেয়া হয় এবং বলা হয় যে কোন একটি বেছে নাও। তবে তুমি কোনটা নেবে? 
ছাত্র উত্তর দিলো, স্যার, আমি টাকাগুলো নেব। 
কথাটা শুনে শিক্ষক অত্যন্ত দুঃখ পেলো। মনে মনে বললো, এতটুকু ছাত্র, সেও কিনা টাকা চিনে গেছে! দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে শিক্ষক বললো, 
-আমি হলে কিন্তু জ্ঞানটাই নিতাম। 
ছাত্র উত্তর দিলো, স্যার, যার যেটার অভাব। আমার টাকার অভাব তাই আমি টাকাই নিতাম।
গল্প হলেও এটাই বর্তমান সমাজের বাস্তব রূপ। টাকার গুরুত্বই সকলে বোঝে। শিক্ষার গুরুত্ব এখানে নগণ্য। টাকা হলে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকতো না, এডমিট কার্ড বলেই এটা দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় পড়েছিলো, কারো নজর কাড়তে পারেনি।

No comments:

Post a Comment