ভালবাসি প্রকৃতি

ভালবাসি প্রকৃতি

Friday, June 3, 2011

শরীয়তপুরের রাজনীতি-০২ : বিএনপি
শরীয়তপুরে বিএনপির কমিটি কমিটি খেলা !!

আসাদুজ্জামান জুয়েল, শরীয়তপুর
কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুর বিএনপিতে চলছে গৃহবিবাদ। কমিটি নিয়ে দলীয় টানাপড়েন এখানে এতই তুঙ্গে যে এ পর্যন্ত তিনটি কমিটি জমা পড়েছে পার্টির হাই কমান্ডে। ফলে এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
জানা যায়, ২০১০ সালের ৯ জুন দেশব্যাপী ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি গঠন করার সময় শরীয়তপুর জেলায়ও আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় অ্যাডভোকেট জামাল শরীফ হিরুকে। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য কে এম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ, শফিকুর রহমান কিরণ, শহিদুল হক লিটু সিকদার, মাহফুজুর রহমান বাচ্চু সরকার, রাজিয়া সুলতানা, সুবর্ণা সিকদার, ডা. কামাল উদ্দিন, আসমাউল হুসনা, শাহাদাত হোসেন স্বপন মজুমদার ও সামসুন্নাহার ইয়াকুবকে। এরপর গত বছরের ২৫ নভেম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুর রহমান কিরণের ঢাকার অফিসে বসে আহ্বায়ক কমিটির কয়েকজন সদস্য থানা ও পৌর কমিটির সভাপতি-সম্পাদকদের উপস্থিতিতে অ্যাডভোকেট জামাল শরীফ হিরুকে সভাপতি, শফিকুর রহমান কিরণকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে সাবেক সভাপতি টি এম গিয়াস উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালুসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাদ দেওয়া হয়। ফলে এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পরে সাবেক সভাপতি টি এম গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে সভাপতি ও সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালুকে সাধারণ সম্পাদক করে আরেকটি কমিটি এবং সরদার নাসির উদ্দিন কালুকে সভাপতি ও শফিকুর রহমান কিরণকে সাধারণ সম্পাদক করে আরো একটি কমিটি গঠন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দাখিল করা হয়।
জেলা বিএনপির একাংশের দাবি ২০১০ সালের ২ এপ্রিল জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার বালারবাজার মাঠে প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। এ প্রতিনিধি সভা আয়োজনকে কেন্দ্র করে প্রধান অতিথি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া কমিটি অনুমোদনবিহীন শরীয়তপুর প্রতিনিধি সভায় যোগদানে সম্মত না হওয়ায় পরে দলীয় তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন খুব কম সময়ের জন্য অ্যাডভোকেট জামাল শরীফ হিরুকে সভাপতি ও শফিকুর রহমান কিরণকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রতিনিধি সভা সফল করার দায়িত্ব দেন। বর্তমানে অ্যাডভোকেট জামাল শরীফ হিরুর কমিটিই বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত আকারে পালন করছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউই অনুমোদিত কমিটি দেখাতে পারেনি। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও কমিটি নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। জেলা বিএনপির কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী কার্যালয় নেই। ফলে নেতাদের বাড়িতে ও বিভিন্ন জায়গায় বসে দলীয় আলোচনা, কর্মকাণ্ড সারতে হচ্ছে। সম্প্রতি শরীয়তপুরে বিএনপির দুটি গ্র“প পৃথকভাবে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছে। সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালুর বাসায় এক গ্র“প এবং ধানুকার রাজিয়া সিনেমা হলে অপর গ্র“প জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে।
টি এম গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে দাখিল করা কমিটির সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন স্বপন মজুমদার বলেন, আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়করা লিখিতভাবে টি এম গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে সভাপতি এবং সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালুকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি দাখিল করা হয়েছে। এ কমিটির প্রতি পাতায় তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার স্বাক্ষর করে চেয়ারপারসনের কাছে পাঠিয়েছেন। আর অ্যাডভোকেট জামাল শরীফ হিরুর কমিটি অনুমোদন হয়নি। তাঁদের প্রতিনিধি সভা সফল করার জন্য সাময়িকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মাত্র।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীয়তপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সরদার এ কে এম নাসির উদ্দীন কালু বলেন, কমিটি নিয়ে দ্বন্দের কারণে দলের কার্যক্রম স্তিমিত। শরীয়তপুর জেলার জন্য বিএনপির কোনো কমিটিকেই কেন্দ্র অনুমোদন দেয়নি। জামাল শরীফ হিরুকে একটি সম্মেলন করার জন্য প্রয়াত মহাসচিব সাময়িক দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই কাগজ আমাদের কাছে আছে। আমি জিয়াকে ভালোবাসি, তাই আমার বাড়িতে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছি।
অ্যাডভোকেট জামাল শরীফ হিরু বলেন, আমাকে সভাপতি এবং শফিকুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো অনুমোদন হয়নি। চৌরঙ্গীতে আমাদের একটি পার্টি অফিস ছিল। আওয়ামী লীগের কর্মীরা তা ভেঙে দিয়েছে। ধানুকায় আমরা পার্টি অফিসের জন্য জায়গা কিনেছি। সেখানে স্থায়ী অফিস করা হবে। দলের সব কর্মসূচিই আমরা পালন করি। আমরা ধানুকায় রাজিয়া সিনেমা হলে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার কর্মসূচি দিয়েছি।

No comments:

Post a Comment